টুকরো স্মৃতির অতলে পর্ব -০৭

#টুকরো_স্মৃতির_অতলে❤
#পর্ব_০৭
লেখনীতেঃআহানিতা

আকাশে লাল রংয়ের আভা।চারদিকে ঠান্ডা ফিনফিনে বাতাস।সূর্যটা ডুবুডুবু তখন।রাস্তার একধারে অর্কভাই আর ইহান ভাই দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির পাশে।গাড়িতে মেঘা বধূবেশে বসে।আমি হাঁপাতে হাঁপাতে জোরে জোরে পা ফেলে তাদের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম।উনাদের সামনে গিয়েই কপাল কুঁচকে বলে উঠলাম,

‘ আপনারা এমন চালাকি করলেন কেন?’

উনারা কোন উত্তর না দিয়ে নিজেদের মতোই দাঁড়িয়ে থাকলেন।অর্কভাই ঘড়ি দেখে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে বলে উঠলেন,

‘ আমাকে যেতে হবে ইহান।তোরা কখন বের হবি?’

ইহান ভাই মৃদু হাসলেন।সামনের দিকে তাকিয়ে সবাইকে দেখলেন একবার।উনার আত্নীয় সহ, বোন ভাই সবাই এখনো ওখানেই ব্যস্ত।তাদের জন্য রওনা হতে হতেও হচ্ছে নাহ গাড়িটা।মেঘা ফিটফিট চোখে জানালার বাইরে মাথা বের করে তাকাল।মুখে তৃপ্ত হাসি।আমি মৃদু হাসলাম ওর হাসি দেখে।ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার আনন্দটা বোধ হয় এরকমই।মেঘার সাথে ইহান ভাইয়েরই বিয়ে হয়েছে আজ। ওর চাচাতো ভাইয়ের তো বিয়ে হয়ে বাচ্চাও আছে।সবই আমাকে আর মেঘাকে মিথ্যে বলা।কিন্তু মিথ্যে বলল কেন?আজব!আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই ইহান ভাই অর্কভাইয়ের দিকে তাকিয়েই বললেন,

‘ এত তাড়া কেন তোর?বন্ধুর বিয়েতে এসে বন্ধুকে রেখেই চলে যাবি?’

অর্কভাই ব্যস্ততার সাথেই বললেন,

‘ যেতে হবে। বাবার আদেশ।শুধু আমিই নই।আহিকে সহ।’

আমি তৎক্ষনাৎ ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলাম,

‘ আহি আমার সাথে এসেছে।তো আমার সাথেই যাবে।’

উনি বিরক্ত নিয়েই বলে উঠলেন,

‘ তুই চুপ থাক।কথা বলতে বলেছি তোকে?’

‘ আপনি বললে তবে কথা বলব আমি?অনুমতি নিতে হবে কথা বলতে আমাকে?’

উনি ভাব নিয়েই বললেন,

‘ হ্যাঁ অবশ্যই।সবকিছুই অনুমতি নিয়ে করবি তুই।এবার গিয়ে আহিকে খুঁজে আন।পারবি?’

আমি মাথা নাড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গে বললাম,

‘ নাহ!আপনার সাথে যেহেতু যাবে খুঁজে নেওয়াটা তো আপনার দায়িত্ব তাই না?’

‘তোর উপর কোন কাজের দায়িত্ব দেওয়া যায় কিনা। আমি তো এমনিই বলে দেখছিলাম পারিস কিনা।যা ফুট।’

কথাটা বলেই উনি পা বাড়ালেন সামনের দিকে।আমি মেঘার দিকে দু পা বাড়িয়েই কানে ফিসফিস করে বলে উঠলাম,

‘ তুই জানতি কি তোর বিয়েটা ইহান ভাইয়ের সাথে হচ্ছে?’

মেঘা মাথা বাম থেকে ডানদিক করে ডুলাল।যার অর্থ সে ও জানত নাহ।আমি মুখ কালো করেই বললাম,

‘ তবে কে জানত?’

ও মৃদু কন্ঠেই বলল,

‘ বাবা মা আর উনারা।আমি তো কিছুই জানতাম নাহ।শুধু জানতাম বিয়ে তাও কোন এক কাজিনের সাথে।’

‘ আর আমি ভেবেছিলাম তোর চাচাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে।অর্কভাই বলল তোর চাচাতো ভাইয়ের ছবি আর ঠিকানা দিতে।তাই ভেবে নিয়েছিলাম বিয়েটা তোর চাচাতো ভাইয়ের সাথে হচ্ছে।কিন্তু এখানে এসে দেখলাম তোর চাচাতোভাইয়ের বিয়ে প্লাস বাচ্চাও হয়ে গিয়েছেরে। কি ডেঞ্জারাস বিষয় ভাব।’

আমার কথায় পেছন থেকে হেসে উঠলেন ইহান ভাই।হাসতে হাসতেই বলে উঠলেন,

‘ বাহ!বাহ!ভাবি আপনি দেখি প্রচুর ফার্স্ট ভাবেন।আসলে ওর চাচাতো ভাইয়ের সাথে দেখা করার ছিল তাই ছবি আর ঠিকানাটা চাওয়া।আমি চাইলে বুঝে যেতেন তাই অর্ক চেয়েছে।’

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।ইহান ভাইয়ের দিকে পেছন ঘুরে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে রেখেই বললাম,

‘ ভাবি বললেন?’

‘ হু।কেন?’

আমি একইভাবে তাকিয়ে থেকেই বললাম,

‘ আগে বলতেন নাহ।এখন হঠাৎ ভাবি ডাকলেন তাই আর কি।আচ্ছা বাদ দিন,আমি একটা প্রশ্ন করলাম।উত্তর দিলেন নাহ তো।এই চালাকিটা কেন করলেন ইহান ভাই?মেঘা আপনাকে ভালোবাসত জানতেন নাহ আপনি?তবে এতো লুকোচুরি খেললেন কেন?’

উনি মুচকি হাসলেন।কপাল চুলকে বললেন,

‘ তুমি না শালিকা?বুঝতে পারছো নাহ কেন লুকোচুরি খেললাম?সারপ্রাইজ। ভালোবাসার সারপ্রাইজ।’

আমি বিরক্ত হলাম।এটা আবার কেমন সারপ্রাইজ?আমি মেঘাকে দিনের পর দিন কষ্ট পেতে দেখেছি ইহান ভাইয়ের জন্য।এমনকি বিয়ে হবে জেনেও ও খবরটা ইহান ভাইকেই দিতে বলল।নিশ্চয় ভালোবাসত বলেই।

‘ ইহান? ও জীবনে কাউকে ভালোবেসেছে তুই ভালোবাসার সারপ্রাইজ বোঝাচ্ছিস ও কে?আজব!’

পেছন থেকে অর্কভাইয়ের বিরক্তভরা কন্ঠ শুনেই পেছন ঘুরে তাকালাম।পকেটে হাত গুঁজে হেঁটে আসছেন উনি। তার পেঁছন পেছনই রায়হান আর আহি।রায়হান আর আহির মাঝে সম্পর্কটা বেশ ভালোই গড়ে উঠেছে।দুইজনে হাসতে হাসতেই এগিয়ে আসছিল তখনই মনে পড়ল রায়হানের বিচ্ছেদের কথা।ওর প্রেয়সী কে মেঘা জানে কিনা তা জিজ্ঞেস করতে যাব তখনই ইহান ভাই বললেন,

‘ অর্ক!ভাবিকে পঁচাচ্ছিস কেন বল তো?’

‘ ও আবার ভাবি হলো কবে থেকে তোর?আজব!’

ইহান ভাই হাসলেন।অর্কভাইয়ের কাছে গিয়ে কানে কানে কিছু ফিসফিসিয়ে বলতেই হেসে উঠল দুই বন্ধু।অর্কভাই হাসতেই হাসতেই বলে উঠল,

‘ সিক্রেট রাখ।সারপ্রাইজ।’

আমি ড্যাবড্যাব করে তাকালাম।কি সিক্রেট?পরমুহুর্তেই মস্তিষ্ক থেকে ভাবনাটা বাতিল করে মেঘার দিকে এগিয়ে গেলাম।ফিসফিসিয়ে বললাম,

‘ এই?রায়হান প্রেম করত মেঘা?বা কারোরে পছন্দ করত কি?’

মেঘা মৃদু কন্ঠে বলল,

‘ কেন? ‘

আমি পুরো ঘটনার বর্ণনা করলাম ওর সামনে। তারপরই মেঘা বলে উঠল,

‘ হ্যাঁ, তোকে পছন্দ করত।ভালোবাসত কিনা জানা নেই।’

আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম এবার।আমাকে?আমাকে পছন্দ করত রায়হান?অলওয়েজ ঝগড়া, মারপিট থাকত আমাদের মাঝে।আর ও আমাকে পছন্দ করত? মানা যায় কথাটা?আমি অবিশ্বাসের সঙ্গে বলে উঠলাম,

‘ কি বলছিস তুই?মাথা ঠিক আছে?রায়হানের সাথে আমার সম্পর্কটা ফ্রেন্ডের থেকে বেশিকিছু হওয়ার কথাই নয় মেঘা। ‘

মেঘা হেসেই বলল,

‘ সেটা তো রায়হান জানে।আচ্ছা ওকে ওর মতো গুঁছিয়ে নিতে দে। আশা করি ও খুব শীঘ্রই নিজের জীবন গুঁছিয়ে নিবে।দেখিস। ‘

আমি হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কেবল।রায়হান আমাকে পছন্দ করত?কথাটা কি আধো মানা যায়?

.

রাত একটা কি দুটো।মেঘার বিয়ে হয়েছে আজ তিনদিন।সেইখান থেকে ফেরার পর অর্কভাইয়ের সাথে আমার আর দেখা মেলেনি।আহিও অনাকাঙ্খিতভাবে আগে আগেই চলে গেল আমাদের বাসা থেকে।রাতের অন্ধকারে মৃদু আলোয় আমি ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছি। হিসেব করলে রাত বারোটার পর আজকে সেই তারিখটাই যে তারিখটা আমার জীবনে খুব স্মরনীয় দিন।এই দিনটা কি ভোলা যায়?চাইলেও কি ভুলতে পারব আমি এই দিনটা?বছর দুই আগে এই দিনটাতে আমার আর অর্কভাইয়ের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।দুই বাড়িতে তখন বিয়ে নিয়ে বেশ আমেজ।কাজকর্মের তোড়জোড়ে এক একজনের কতই নাহ ব্যস্ততা।তারপর আচমকাই খবর এল অর্কভাই বিয়েটা করবেন নাহ।উনি কোম্পানির নতুন একটা ক্লাইন্টের মিটিংয়ে নাকি দেশের বাইরে গিয়েছিলেন।সবাই মোটামুটি ওটাই বুঝেছিলেন এবং জেনেছিলেন যে অর্কভাইয়ের কাজকর্মের জন্যই বিয়েটা স্থগিত রাখা হয়েছে।কিন্তু আমি জানতাম খুব ভালো করে অর্কভাই আমাকে ভালোবাসতেন নাহ তাই জন্যই উনি বিয়েটা করতে চাননি।বিয়ের দিনে ক্লাইন্টের অযুহাতে দেশের বাইরে যাওয়া তো একটা নাটক মাত্র।উনি তো আসলে আমাকে বিয়ে করতে চান না তাই এমনটা করলেন।অন্য একজনকে ভালোবেসে আমায় বিয়ে করাটা এতটা সহজ নাকি উনার পক্ষে? আমি সেইদিনও অতোটা কষ্ট পাই নি যতটা নাহ তার পরেরদিনের ঘটা ঘটনাটায় পেয়েছিলাম।সেই সাংঘাতিক ঘটনা!ভার্সিটি থেকে প্রতিদিনের মতোই বাসায় ফিরছিলাম আমি।রাস্তার মোড়ে আসতেই হঠাৎ ঐ তিন তিনটে অচেনা মুখ এসে আমার মুখ চেপে ধরল।তৎক্ষনাৎ যেন চোখ ঝাপসা হয়ে এলো আমার।তারপর মুখ চেপে কোথায় নিয়ে গিয়েছিল তা আমার জানা নেই তবে যখন চোখ খুললাম তখন একটা অন্ধকার রুমে নিজেকে আবিষ্কার করেছিলাম।ধুলোবালির অন্ধকার রুমে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপায় যখন তখনই সামনের দরজা দিয়ে এক ফালি আলো এসে পড়ল ফ্লোরে।একটা লোক ঘটঘট করে ডুকেই আমাকে পরীক্ষন করলেন।চোখ দিয়ে তীক্ষ্ণ চাহনিতে তাকিয়ে থেকেই কাউকে কল দিয়েছিলেন।গাঢ়, গম্ভীর কন্ঠে মোবাইলের ওপাশের লোকটাকে বলে উঠল,

‘ আরেহ চিন্তা করিস নাহ।বিয়েটা একেবারেই ভেঙ্গে যাবে শিউর।অর্ক আর ওর জীবনেও বিয়ে হবে নাহ আমি শিউর।এমনকি বিয়ে হওয়ার প্রশ্নই উঠবে নাহ দেখিস।এই সমাজে ধর্ষিতাদের বিয়ে করতে দেখেছিস কাউকে?মেহুল মেয়েটার সাথে এক রুমে আধ ঘন্টার মতো তিনজন ছেলে ছিল শুনলে মানুষ কি ভাববে বল তো।কিছু কি হয়নি ভাববে?ধর্ষিতা ছাড়া আর কিছু কি ভাবতে পারে বল?আর তোর মনে হয় অর্কের বাবা মা ও ধর্ষিতা জানার পর বিয়ে দিবে ওর সাথে?’

আমি কেঁপে উঠেছিলাম সেইবার কথাগুলো শুনেই।লোকটার কুৎসিত কন্ঠে কথাগুলো আমার শরীরে কম্পন শুরু করে দিয়েছিল ভয়ে।লোকগুলোকে আমি কোথাও অর্কভাইয়ের সাথেই দেখেছিলাম কোথাও।অর্কভাই আমায় বিয়ে করবেন নাহ সেটুকুইতো ঠিক ছিল কিন্তু বিয়ে করবেন নাহ বলে আমাকে ধর্ষিতা বানানোর প্ল্যান কষলেন?এতটা নিচু উনি!সেইদিন এই ভাবনাগুলো ভেবেই কান্না করেছিলাম আমি।চোখে পানি যেন শেষই হচ্ছিল নাহ।তারপর যখন রুমটা থেকে বের করে গাড়িতে করে আবারও কোথাও নিয়ে যাচ্ছিল নমি কৌশলেই পালিয়ে এসেছিলাম কোনভাবে।

কথাগুলো ভেবেই লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি।চোখ টলমল করে উঠল তৎক্ষনাৎ।ঠিক তখনই পেঁছনে এসে দাঁড়াল কেউ একজন।এতরাতে ছাদে কেউ আসে না সচারচর।কারো পায়ের শব্দে তাই ভয়ে পেছন ঘুরে তাকালাম আমি।পেছন ঘুরে অর্কভাইকে দেখেই কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলাম আমি।এতরাতে? আমাদের ছাদে?উনি কোথায় থেকে কিভাবেই বা এলেন এতরাতে আমাদের ছাদে?আজব!আমি ভ্রু জোড়া কুঁচকে টলমলে চোখে তাকালাম। দুইবছর আগের ঘটনা মনে করতেই কান্না গুলো দলা পাকিয়ে আসছে যেন গলায়।সেইদিন যদি আমি ওদের গাড়ি থেকে পালিয়ে আসতে না পারতাম তবে?তবে কি আজ আমি সত্যিই ধর্ষিতা হতাম?অর্কভাইকে আমাকে ধর্ষিতা বানানোর মতো এই বিশ্রী প্ল্যানটাই কেন করতে হলো?আমি তো উনাকে ভালোবাসতাম।উনার এই কাজটার জন্যই উনার প্রতি জম্মেছিল আমার তীব্র থেকে তীব্র ঘৃণা।সেইদিন থেকে কতদিন যে আমি কেঁদেছি তা আমি জানি নাহ। তবে কেঁদেছি আমি উনার এই কাজ, এই বিশ্বাসহীনতার জন্যই।আমি অাবারও দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।সামনে উনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে উঠলাম,

‘ আপনি?এতরাতে আমাদের ছাদে আসলেন?ওহ!আজকের দিনটা আপনারও মনে থাকে?মনে রাখেন?তাই কি শুকনো ঘা টাকে তরতাজা করে দেওয়ার জন্য আমার সামনে এসে হাজির হলেন অর্কভাই?’

অর্কভাই চুপ রইলেন।দু পা বাড়িয়ে আমার সামনে আসতেই আমি আবারও বললাম,

‘ আচ্ছা অর্কভাই?সেদিন আমার নামের পাশে ধর্ষিতা শব্দটা বসে নি বলেই আমায় আপনি বিয়ে করতে চাইছেন। আর যদি সেদিন সত্যি সত্যিই আমার নামের পাশে ধর্ষিতা শব্দটা বসত তবে কি আপনার শত স্বার্থ থাকলেও আপনি বিয়ে করতেন আমায়?নিশ্চয় না।তাই না?’

অর্কভাইয়ের চোখজোড়া হঠাৎ ঐ রক্তলাল হয়ে উঠল।ফর্সা মুখ লাল হলো।কপালের রগও ফুলে উঠল।আমার দিকে ক্ষুদ্ধ চাহনিতে একনজন তাকিয়েই সামনের গোলাপের টবটায় জোরে লাথি মারলেন উনি।সঙ্গে সঙ্গে গোলাপের টবটা রেলিংয়ের শক্ত প্রান্তে ধাক্কা খেয়ে ভেঙ্গে গেল।গোলাপ গাছটা বাঁকা হয়ে পড়ে রইল সেখানেই। আমি শুকনো ঢোক গিলে আবারও বললাম,

‘ রাগ দেখাচ্ছেন আপনি?কার সাথে দেখাচ্ছেন রাগ? কেনই বা দেখাচ্ছেন?’

উনি শীতল কন্ঠেই বললেন,

‘ আর কিছু?মূল কথাটাও বলেই ফেল। পরে আর শুনতে পারব নাহ।’

আমি চোখের দৃষ্টি উপরে করে তাকালাম উনার দিকে।পরে আর শুনতে পারবেন নাহ কেন?গলা এত শান্তই বা শোনাল কেন?টলমল করে উঠল চোখজোড়া।মূল কথাটা তো বলতেই হবে।আমি টলমলর চোখজোড়া নিয়েই বলে উঠলাম,

‘ বিয়েটা আমি করতে চাই নাহ।আর আপনাকে আমি স্বামী হিসেবে কোনভাবেই মেনে নিতে পারব নাহ।আমি চাই না আপনি আমার জীবনসঙ্গী হোন।ঘৃণা করি আমি আপনাকে।শুধু এবং শুধু ঘৃণা করি।’

উনি আমার দিকে তাকিয়েই মুচকি হাসলেন।আগের মতোই শান্ত কন্ঠে বললেন,

‘এখন আর ভালোবাসিস না দুইবছর আগের মতো?’

কথাটা শুনেই লোমকূপ কেঁপে উঠল আমার।স্তব্ধ চোখে উনার দিকে চেয়েই কাঁপা কন্ঠে বললাম,

‘ এ্ এ্ এই প্রশ্ন কেন?’

উনি মুচকি হাসলেন।ঘন চুল গুলোতে হাত চালিয়ে বললেন,

‘ বিয়েটা করতে চাস নাহ তাই তো?ওকে!তোর কথাটাই রইল।বিয়েটা হবে নাহ।মানে হচ্ছে নাহ।খুশি মেহুলতা?’

লাস্টের লাইনটা শুনেই হৃদয় কেমন করল।উনার এমন শীতল কন্ঠ ঠিক বিশ্বাস্য হয়ে উঠছিল নাহ যেন।আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েই বললাম,

‘ সত্যিই বলছেন?নাকি মিথ্যে বলে আশা দিচ্ছেন?’

উনি তাচ্ছিল্যভরা হাসি হাসল।তারপরই বললেন,

‘ এতটা অবিশ্বাস?প্রথমে ঘৃণা, তারপর অবিশ্বাস আরো কি কিছু বাকি আছে?অথচ তুই আমায় ভালোবাসিস।অদ্ভুত!আচ্ছা যাক বাদ দিলাম ঐ বিষয়, হ্যাঁ সত্যিই বলছি।বিয়েটা তো সেদিনই ভেঙ্গে গিয়েছে যেদিন তুই বাবাকে বলে দিয়েছিলি বিয়েটা করতে চাস নাহ।বাবা কি কখনো তোর মতের বিরুদ্ধে আমার সাথে তোর বিয়ে দিবে?শত হোক তার বন্ধুর মেয়ে তুই।এনিওয়েজ আজকে এত রাতে এইখানে দেওয়াল টপকে উঠার একটিই কারণ, তোকে শেষবার দেখে যাওয়া।অনাকাঙ্খিতভাবে তোকে ছাদে জাগ্রত অবস্থায় পেয়ে যাব ভাবিই নি।আমাদের দেখাটা হয়তো আর হচ্ছে নাহ, তোকে জ্বালানোও হচ্ছে নাহ তাহলে।শান্তি এবার বল?’

আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এল যেন।শেষবারের দেখা বলতে?উনার সাথে আর কি দেখা হবে নাহ?দ্বিধাভরা চাহনিতে উনার দিকে তাকাতেই উনি হেসে বললেন,

‘ কি হলো? খুশি হস নি তুই?তবে কি বলতো আজ বিয়ে হোক চাইছিস নাহ তো তুই।হুট করে একবছর পর কোনএকদিন আমি তোর সামনে এসে হাজির হব। সেইদিন তুইই বলবি বিয়েটা হোক তুই চাস।আমি জানি তুই এমনটা বলবি।আর ঠিক এই কথাটার জন্যই আমি আবার তোর সামনে ফিরে আসব।’

আমি স্থিরভাবে তাকিয়ে রইলাম।উনার চোখে কি একটু হলে ও কষ্ট ভেসে উঠল?গলায় কি একটু বেদনা প্রকাশ পেল?কেনই বা এতটা শীতল আচরণ উনার?কেনই বা এত শান্ত গলা?আমি মৃদু কন্ঠে সেভাবে তাকিয়েই বললাম,

‘ কি সব বলছেন আপনি?’

উনি উত্তর দিলেন নাহ।মৃদু হেসে আমার কাছে এগিয়ে এলেন।আমার একদম সামনে দাঁড়িয়ে দুইহাত দিয়ে আমার মাথা ধরে এগিয়ে ধরলেন উনার মুখের সামনে।উনার নরম ঠোঁটজোড়া আমার কপালে ছুঁয়ে দিয়েই ফিসফিসিয়ে বললেন,

‘ এভাবে মাঝে মাঝে রাতে ছাদে এসে দাঁড়িয়ে থাকবি মেহুল?আমি তো সরেই যাচ্ছি তোর জীবন থেকে।এটুকু করতে পারবি তুই?’

আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কেবল।উনি উত্তরের আশা না রেখেই আবারও পিছু হাঁটলেন।রেলিংয়ের কাছে গিয়ে টপকে নামতে লাগলেন।আমি কেবল তাকিয়ে রইলাম সেদিক পানে।শরীর যেন জমে আছে আমার।কি হলো এসব?উনি কি বলে গেলেন এসব?সব মাথায় ঘুরছে কেবল।

#চলবে…

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here