#অনুতাপ
#ষষ্ঠ_প্রহর
#Yasira_Abisha (#Fatha)
চুপ করে বিয়ে করেছিলাম, এখন বাসায় পরিচয় কিভাবে করাই এই টেনশনে আমার কলিজার পানি একদম শুকিয়ে গিয়েছিলো। তার ওপরে আমার পারিবারিক অবস্থান আর ওর অবস্থানে ছিলো অনেক তফাৎ, আমি ধনী পরিবারের মেয়ে আর সে মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। তবুও মনে সাহস নিয়ে ফোন করলাম এবং শুরু থেকে সব বললাম,
পাপা ফোন কেটে দিয়ে কিছুক্ষণ পরে আমাকে টেক্সট করেছিলেন,
– ফ্লাইট বুকিং দিয়েছি রাতে আসছি, ছেলের সাথে দেখা করবো।
রাতে পাপা আসলেন আমার শ্বশুর বাড়িতে
ইরাদ ও খুব নার্ভাস ছিলো, আর আমিও
এতোদিন পরে পাপাকে দেখে আমি কেদে দেই, পাপাও আমাকে দেখে তার চোখে পানি চলে আসে। সবার সাথে পরিচিত হবার পরে উনি বলেন
– আমি ছেলের সাথে কিছু কথা বলতে চাই।
ইরাদ পাপাকে নিয়ে হল রুম থেকে আমাদের বেডরুমে চলে যান
আমি গেটের বাইরে পায়চারি করছিলাম, হাত পা একদম কাপছিলো, মনে মনে ভাবছিলাম যদি পাপাকে ইরাদ ইম্প্রেস করতে না পারে তাহলে আজকে সব শেষ। পাপা ছাড়া মা বাবাকে আর কেউ রাজি করাতে পারবেন না। আজকে ছোট মা কে খুব মনে পড়ছিলো উনি থাকলে হয়তো পাপাকে রাজি করানো সহজ হতো। মা আপনি এতো তাড়াতাড়ি কেনো চলে গেলা? আমাদের ছোট রুহির তোমাকে দরকার ছিলো, আজকে আমার তোমাকে অনেক দরকার ছিলো
.
প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে পাপা আর ইরাদ ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। আমি তাদের দুইজনের চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম, ভিতরে কি হয়েছে বুঝার জন্য। কিন্তু সেই মুহূর্তে কেউই আমাকে কিছু বললেন না, পাপা শুধু বললেন
-আমি এখন চলে যাচ্ছি মা
আমার শাশুড়ি বললেন,
-বেয়াই সাহেব কিছু খেয়ে যান
-আপা আমার জরুরী একটা মিটিং আছে, সেটা শেষ করে আবার চিটাগাং চলে যাব অন্য কোনোদিন অবশ্যই।
তবে আমার ভয় কিন্তু কমে নি,
ভিতরে কি হয়েছে পাপা কিছুই বললেন না কিন্তু যখন সে বিদায় নিয়েছিলেন তখন আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন
– আমাদের মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গিয়েছে মাশাআল্লাহ খুব ভালো ছেলে পছন্দ করেছো, আমরা এরকম একজন উদার মনের ছেলেই খুজতাম তোমার জন্য
আমিই তোমার আম্মুর সাথে কথা বলব।
তখন খুব খুশি হয়ে গিয়েছিলাম,
যাক পাপা তো আমাকে অন্ততপক্ষে সাপোর্ট করল।
পরদিন সকাল বেলা পাপা আমার জন্য টিভি এসি আর বাকি যা যা ঘরে আসবাবপত্র প্রয়োজনীয় ছিল সব কিনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তখন আমরা কলেজে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম, এমন সময় এগুলো আসে
সবকিছু দেখে আমি খুব খুশি হয়ে যাই। কিন্তু আমার মনে হলো আমার শ্বশুরবাড়ির কারো এই জিনিসটা পছন্দ হয়নি এরা ধারণা।
যখন গেটে এসব কিছু আসে তখন ইরাদ বলে,
– আমরা অর্ডার করিনি। আপনি বোধহয় ভুল ঠিকানায় এসেছেন
– না স্যার ঠিকানা এটাই
– আমি তখন পেছন থেকে মুচকি হেসে বলি আরে কি করছো?
এগুলো পাপা পাঠিয়েছেন আমার জন্য। আমি একদম সিউর
-এইসব কেন মেঘা আমাদের তো এগুলো দরকার নেই?
-কে বলেছে ইরাদ?আমাদের এগুলো দরকার নেই?
ইরাদ আমার দিকে অবাক চোখে তাকায়।
পরে আমি আবার বলতে শুরু করি।
-এরকম গরমে থাকা যায় ইরাদ? আমি সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছি।
সবার সামনে কথাটা বলায় বোধহয় ইরাদ লজ্জা পেলো,
আমার কাছে এসে আমার গালে হাত দিয়ে বলল, -আমাকে আর কয়টা দিন সময় দাও আমি তোমাকে এসি এনে দিচ্ছি কিন্তু এগুলো নিও না।
তখন আমি তার আচরণে রাগ হয়ে গেলাম।
তার হাত আমার গাল থেকে সরিয়ে বললাম।
-ঠিক আছে দিও আমি যখন গরমে সিদ্ধ হয়ে মরে যাব তারপরে দিও।
বাসায় তখন কেউ আমাকে কিছু বলেনি কিন্তু ইরাদ জিনিসগুলো নেয়নি এবং সে ফিরিয়ে দিয়েছিলো তারপরে আমি তার সাথে খুব রাগ হয়েছিলাম আমি কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
ঠিক দুই দিন পর সে আমার রুমে একটা এসি লাগিয়ে দেয়,
তখন আমি খুব খুশি ছিলাম।
সেদিন বিকেলেই মা আমাকে ফোন করে।
-কি করছো মেঘা?
-মা এই তো ঘুম থেকে উঠলাম।
দরজা খোলো আমি তোমার বাসার নিচে।
-মা মা তুমি ঢাকায় এসেছো।
আমি যেন থর থর করে কাঁপতে শুরু করলাম।
-মা মানে আমিতো এখন বাসায় নেই।
-তুমি এখন যেই বাসায় থাকতো সেই বাসায় আমি এসেছি।
মা সব জেনে গেছে তাহলে পাপাই বলেছে, আমার কলিজার পানি একদম শুকিয়ে যায়।
ইরাদ তখন বসে পড়ছিল আমি দৌড়ে ওকে গিয়ে বললাম।
-আ আ আম আমার…..
-কি হয়েছে মেঘা তুমি এরকম করছ কেন?
-আমার মা এসেছে তোমাদের বাসার নিচে।
ইরাদ সাথে সাথে গিয়ে আমার মাকে বাসায় নিয়ে আসলেন।
মাম আমাকে দেখে একটুও খুশি হলেন না।
তিনি শুধু চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে পরিবেশ দেখলেন আর আমাকে দেখলেন।
সামনে এসে আমার গালে কষে একটা চড় বসালেন।
চরের টাল সামলাতে না পেরে আমি দুই কদম পিছনে চলে যাই।
ইরাদ বলে
– মা কি করছেন আপনি?
-মা বলে সম্বোধন করোনা আমাকে।
তুমি একটা খারাপ ছেলে তুমি যদি ভালোই হতে তাহলে আমার মেয়েকে এভাবে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করতে না।
-মা তুমি আমাদের ভুল বুঝছো।
-তুই আর একটা কথাও বলবি না।
এই দিন দেখার জন্য তোকে আমি জন্ম দিয়েছিলাম?
তোর বাবাকে আমি কিভাবে জানাবো আমি সমাজে কিভাবে মুখ দেখাবো?
সঞ্জীব চৌধুরীর মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছে এটা বলব আমি সমাজে? তাও কাকে একটা মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির বেকার ছেলেকে?
তখনই ইরাদের মা বললেন
– অনেক হয়েছে বেয়াইন সাহেব, আমরাও তো আপনার মেয়েকে মেনে নিয়েছি, আপনি এখন এই ধরনের ব্যবহার করতে পারেন না। আপনি আমার ছেলেকে নিয়ে যা তা বলছেন অনেকক্ষণ ধরে।
-আপনার ছেলেকে নিয়ে এর থেকে ভালো আর কি বলব? আর আপনারাও কি ধরনের পরিবার ধনী লোক দেখে মেয়েকে একসেপ্ট করে নিয়েছেন যাতে আপনার ছেলে সারাজীবন বসে বসে খেতে পারে।
-আপনি আমাদের নামে কি ধরনের অপবাদ দিচ্ছেন?
আপনার মেয়ে তো আমার ছেলেকে বিয়ে করার জন্য বাধ্য করেছে।
-আমার মেয়ে বাধ্য করেছে যদি এটা সত্যি হয় তাহলে আজকে আমি আপনাদের সামনে আমার মেয়ের গলা কেটে ওকে মেরে ফেলবো।
মায়ের অনেক রাগ ছিল, আমি তখন ভয়ে শুধু থর থর করে কাঁপছিলাম।
-তখন ইরাদ বলল,
-যে না আমি ওকে ইচ্ছে করে বিয়ে করেছি, মেঘার কোন দোষ নেই।
মা তখন বললেন,
– আজকে থেকে এই মেয়ে আমার জন্য মরে গেছে আমার আর তোর সাথে কোন সম্পর্ক নেই। যেদিন তুই বুঝবি সেদিন আমাকে ফোন করিস নিতে আসবো, ততদিন এভাবেই থাক, যখন নিজের লাইফ স্টাইল আর লিড করতে পারবি না, তখন তোর দমবন্ধ হয়ে আসবে আর থাকতে পারবি না সেদিন মায়ের কথা মনে পরবে এবং বুঝতে পারবি কি ভুল করেছিলি, কারণ অভাবে থাকলে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়।
এভাবে করে আস্তে আস্তে দুই মাস পার হয়ে। মায়ের কোন যোগাযোগ ছিল না আমার সাথে, আমার মনে হচ্ছিলো আমি দিনদিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। ইরাদের ভালোবাসাটা আমার কাছে তখন বিষের মতো লাগতে শুরু করে ও আমার খুব কেয়ার করত, কিন্তু ওর মায়ের ব্যবহার সেদিনের পর থেকে আমার সাথে চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল সে আমাকে আর স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছিলেন না। আর আমিও কেন যেন তাদেরকে সহ্য করতে পারছিলাম না। কথায় কথায় আমি ইরাদের সাথে ঝগড়া করতাম, সে আমাকে একটা স্বাভাবিক কথা বললেও আমি কেন যেন নিতে পারতাম না। শুধু মায়ের একটা কথাই কানে বাজতো “অভাব যখন আসবে তখন ভালবাসা জানলা দিয়ে পালাবে”
একটা জিনিস আমি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলাম আসলে যে যেভাবে থেকে অভ্যস্ত সে চাইলেও নিজের লাইফ স্টাইল টা বদলাতে পারে না।
এই তিন চার মাসে আমি এটা খুব ভালোভাবে এখন বুঝতে পারছি, ইরাদের প্রতি আমার যে অনুভুতি টা ছিল সেটা সম্পূর্ণ আবেগ ছিল। সেটা ভালোবাসা ছিল না। আর আবেগ তো ক্ষণস্থায়ী হয়। আর বিবেক হয় চিরস্থায়ী ,
আমি আমার বিবেক দিয়ে চিন্তা করে আর পারছিলাম না
একবার মন বলছিল ইরাদ তোকে অনেক ভালোবাসে ইরানের সাথে থেকে যা। আরেকবার মন বলছিল না, এভাবে সারাটা জীবন আসলেই কাটাতে পারব না। কারণ গত দুই মাস ধরে মা আমাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, যদিও ইরাদ আমাকে বলেছে মা বাবার কাছ থেকে টাকা নিতে না কিন্তু আমি তারপরেও চুপ করে তাদের টাকা খরচ করতাম। গত দুই মাসে আমি মাত্র নতুন দুইটা জামা কিনতে পেরেছি, যেখানে আমি প্রতিদিন নতুন গহনা নতুন জামা কিছু-না-কিছু আমার কেনা পরতো, এটা আমার শখ ছিল। আগে আমার একটা লোশন অর্ধেক শেষ হওয়ার পরই আরেকটা লোশন বের করতাম ইউজ করার জন্য, আমার কাছে বিয়ের আগে কত কসমেটিকস ছিল, সব কিছুই ছিল আর এখন একটা লোশান আমার বোতলের ভিতর থেকে কাচিয়ে খুচিঁয়ে বের করে শরীরে মাখতে হয়।
আমি মেঘা এই জীবনে অভ্যস্ত ছিলাম না, খাওয়ার কষ্ট, থাকার কষ্ট, তাদের বাসায় আমাকে এসি ঠিকি লাগিয়ে দিয়েছে ইরাদ কিন্তু এখানে এসিটা আমি সারাক্ষণ ছেড়ে রাখতে পারি না শুধু রাতের বেলা ছাড়তে পারি। আর দিনের বেলা কিছু সময়ের জন্য, এভাবে তো আমি থাকতে পারিনা
তার আমাকে বাথরুম থেকে করে দিয়েছে হাই কমোড লাগানোর সাধারন একটা বাথরুম টাইলস বসানো। কিন্তু তারপরেও আমার বাসায় এরকম বাথরুম ছিলনা, আমার বাসার কাজের মেয়েরা এর চেয়ে উন্নত মানের বাথরুম ব্যবহার করত।
আমার কষ্ট গুলো হয়তো মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য কষ্ট নয় কিন্তু আমি আমার জীবনের ২০-২১ টা বছর যে ভাবে কাটিয়ে এসেছি আমার জন্য এখন সম্পূর্ণ নতুন জীবনে আসা খুবই কষ্টকর।
সেদিন সারারাত আমি ঘুমাই নি বাইরে খুব ঝড় হচ্ছিল। ইরাদ ঘুমিয়ে ছিল আমি আস্তে আস্তে বসে বসে আমার পুরো ব্যাগ প্যাক করেছিলাম। সকালবেলা ইরাদ ঘুম থেকে উঠার পরে আমি ওকে বললাম
– ইরাদ ফ্রেশ হয়ে আসো
তোমার সাথে কিছু কথা আছে
ইরাক ফ্রেশ হয়ে এলো
– কি হয়েছে মেঘা বল?
-আমি চলে যাচ্ছি।
-কোথায় যাচ্ছো?
-আমার বাসায় যাচ্ছি।
-তুমি তো তোমার বাসায় আছো।
– এটা তোমার বাসায় আমি আমার বাসায় যাচ্ছি।
আমি মাকে ফোন করে দিয়েছিলাম রাতে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মা চলে আসবেন।
-মা আসবেন? মা আসলে তো তোমাকে নিয়ে চলে যাবেন মেঘা,,
একেবারের জন্য।
-হ্যাঁ, আমি তো একেবারের জন্য চলে যাচ্ছি ইরাদ। আমি চলে গেলে কষ্ট পেওনা।
এই বলে আমি রুম থেকে আমার লাগেজ নিয়ে বের
হতে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখনই সেই রাত পেছন থেকে আমার বাম হাতটা টেনে ধরে।
-যেওনা মেঘা।
-একটা বার ভাবো
আমাদের সম্পর্কটাকে আর একটা বার সুযোগ দাও।
-না, ইরাদ আর সম্ভব না,আমি আর পারছিনা একটা সম্পর্ক শুধু ভালোবাসা দিয়েই হয় না একটা সম্পর্কের সাথে চাওয়া-পাওয়া ত্যাগ সবকিছু থাকে। চাওয়া-পাওয়া ত্যাগ ভালোবাসা সবকিছু সংমিশ্রণে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়, টিকে থাকে।
বিশ্বাস করবে কি না আমি অনেক ত্যাগ করেছি, হয়তো তোমার দিক থেকে আমার একটা লাগবে না কিন্তু আমি সত্যিই অনেক ত্যাগ করেছি।
তুমি এভাবে থেকে অভ্যস্ত কিন্তু আমি তো এভাবে থেকে অভ্যস্ত না,
ইরাদ তুমিই একটাবার ভাবো একটা অট্টালিকা তে থাকা মেয়ে কি করে এভাবে এসে বসবাস করতে পারে?
বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ছোট করার জন্য কথাগুলো বলছি না,
আমি আসলে পারছিনা এভাবে আর থাকতে
তখন ইরাদ সাথে সাথে বলে
– আমাকে একটু সময় দাও মেঘা,
আমি কোন কথা বলি না আমি সামনের দিকে পা বাড়াই তখন সে আবার আমার পায়ে ধরে ফেলে
এবং বলে
– মেঘা প্লিজ আমাকে একটু সময় দাও। আমি তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করব, তুমি যেভাবে থাকতে চাও তোমাকেও ওভাবেই রাখব, শুধু আমার একটু সময়ের প্রয়োজন।
তখন আমার চোখ দিয়ে আপনি আপনি পানি পড়তে থাকে,
আমাদের পুরনো স্মৃতিগুলি মনে হতে থাকে।
-প্লিজ আমাকে আর রিকোয়েস্ট করব না কারণ আমি তোমার এই রিকুয়েস্ট টা রাখতে পারব না, জানো আমি যখন তোমাদের বাসা থেকে নিচে নামি তখন অনেকখানি পথ হাঁটা লাগে গলির মুখ পেরুতে, এর পর আমাকে রিকশা ধরতে হয় কোথাও যাওয়ার জন্য , আমি রিক্সায় উঠতে পারিনা তারপরেও আমি রিকশায় উঠে কোথাও যাই। আবার সেটুকুর জন্যে ও আমার দাম দরাজ করা লাগে, আমি গুনে গুনে টাকা খরচ করতে পারিনা ইরাদ, আমার অভ্যাস নেই
ইরাদ কাদঁছিলো আর আমার পা ধরে রেখেছিলো যখন আমার কথাগুলো শুনে ও এরপর
সে আমার পা ছেড়ে দাঁড়ায়,
আমার চোখে চোখ রাখে তার চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল ,
তখন দুই হাত দিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দেয় ,আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে।
-যাও মেঘা তুমি আজকে থেকে মুক্ত।
তোমার চলে যাওয়া আমি দেখতে পারবো না মেঘা কিন্তু তুমি ভালো থেকো।
বলেই ও হনহন করে ছাদের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেল
আমি তখন একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম ইরাদ তুমি বাল আজকের এই অবস্থাটা বুঝতে পারবে না
আমি যে সময়ে কাটগড়ায় দাঁড়ানো একজন আসামি ।
আমি ফিরে আসতে চাইলেও আর পারব না ।
শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ও বলছিল যে যেওনা একটু ভাবো, আল্লাহ সুবহানা’হু তায়ালা ডিভোর্স পছন্দ করেন না কিছুক্ষনের ভিতর মা চলে আসেন।
ফাহাদ ভাই আমাকে বলেন
-একটা বার ভাবো বোন, এভাবে যেওনা আমার ভাইটা থাকতে পারবে না।
তার কথায় আমার খুব খারাপ লাগে, আমি কিছু বলি না কাউকে
আমি মা-বাবাকে সালাম করলাম।
ফাহাদ ভাইকে সালাম দিলাম ইরাদের ছোট বোনকে জড়িয়ে ধরলাম তারপর বাড়ির মেন গেট থেকে রাস্তায় বের হয়ে গেলাম।
অনেকটা পথ হাঁটার পরে পিছন দিকে তাকিয়ে দেখি ইরাদ ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।
উল্টো দিকে মুখ করে,
আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, আমি তার পেছনটা দেখতে পাচ্ছিলাম।
আকাশটা তখন মেঘলা ছিল, ইরাদের হাতে একটা জলন্ত সিগারেট
বাইরে খুব বাতাস, ডাব গাছের পাতাগুলো বাতাসে খুব দোল খাচ্ছিল। আর সেই বাতাসে ইরাদের ঝরঝরে চুলগুলো উড়ছিল, সাদা রঙের একটা শার্টে ইরাদকে খুব সুদর্শন দেখাচ্ছিলো।
আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে আনমনে চোখ দুটো নামিয়ে নিয়ে আস্তে করে সামনের দিকে অগ্রসর হলাম।
আমি জানি এখন ও কাদঁছে খুব করে কাদঁছে
কিছু দূর হাঁটার পরে সামনে চায়ের টং দোকান থেকে “মান্না দে” এর একটা গান ভেসে আসছে।
“তুমি আর ডেকো না।
তুমি আর ডেকো না।
পিছু ডেকো না
আমি চলে যাই শুধু বলে যাই
তোমার হৃদয়ে মোর স্মৃতি রেখো না।।
আঁখি জল কভু ফেলো না
নীবির আঁধারে একা।
নেভা দ্বীপ আর জ্বেলো না
পথ আর চেয়ে থেকো না।।
জানি মোর কিছু রবে না
তোমার আমার দেখা এ জীবনে আর হবে না
আমার এ চলে যাওয়া চেয়ে দেখো না
অকারণে ব্যথা পেয় না না।
অকারণে ব্যথা পেয় না
হারালে যাহারে আজ
তারে আর ফিরে চেয় না
বেদনায় হাসি ঢেকো না।।”
(চলবে..