অনুতাপ পর্ব -৩৮

#অনুতাপ
#অষ্টত্রিংশ_প্রহর #Yasira_Abisha (#Fatha)

ইরাদ আর রুহি চিটাগং গিয়ে একটা হোটেলে উঠে, এদিকে সকাল থেকেই মেঘা ব্যাস্ত কিভাবে রুহি আর ইরাদকে ডিভোর্স করানো যায় এটা ভেবে। মেঘা এতটুকু নিশ্চিত যে পাপা যদি রুহিকে বুঝায় ইমোশনালি বুঝাতে পারে তবে ইরাদকে সে ছেড়ে দিবে তাই মেঘা উকিলের সাথে কথা বলে রেখেছে, উকিল কাগজপত্র সব কিছু রেডি করে রাখবে। রুহি এলেই সাইন করিয়ে নিবে ওকে দিয়ে মেঘা। ইরাদ মেঘার প্রাক্তন স্বামী সেই সুবাদে কোনোদিনই ইরাদের প্রতি মেঘার আর শুভকামনা কাজ করে না। আর নিজের ছোটো বোনের বর হিসেবে ইরাদকে মেঘা কোনো মতেই মেনে নিতে পারবে না, তাই তো যদি রুহিকে জোর ও করতে হয় তবুও মেঘা তাই করবে কিন্তু ইরাদের সাথে কোনো মতেই রুহির সংসার মেঘা রাখতে দিবেনা।

এদিকে ইরাদ রুহিকে হোটেলে উঠিয়ে দিয়ে লাঞ্চ করে নেয় এরপর বলে,
– আমার একটু বেড় হতে হবে
রুহি সাথে সাথেই চেহারাটা একদম মলিন করে ফেলে
তখন ইরাদ নিজ থেকেই বলে,
– রুহি আপনি থাকেন রেস্ট নেন, আমি হসপিটালে এই গেলাম আর এই আসলাম ওকে?
– কতক্ষন লাগবে?
– বেশিক্ষন না। ২ ঘন্টা?
– তাড়াতাড়ি আসবেন ওকে?
– হুম আমার কিছু কথা আছে আপনার সাথে
রুহি সাথে সাথে চিন্তিত হয়ে ইরাদের হাতটা ধরে জিজ্ঞেস করে
– কি কথা?
ইরাদ বুঝতে পারে এখন কিছু বললে রুহি অনেক বেশি টেনশন করবে
তাই মজার ছলে ইরাদ বলে,
– আমার বউটাকে নিয়ে কোথায় ঘুরা যায় তাই ভাব্বো ফিরে এসে
– আচ্ছা এখন যান তাড়াতাড়ি আর ফিরে আসেন তাড়াতাড়ি।
– হুম আর আপনি এখন ঘুমাবেন ওকে?
– কেনো?
– প্লিজ ঘুমান রুহি আর একটা কথা মোবাইলটা বন্ধ রাখেন আমি এলে পাপাকে কল দিয়েন এখন আর কারো কল রিসিভ করেন না,
– আপুকে একটা কল দিই?
– নাহ এখন না, আমি আসি এরপর
– কিন্তু কেনো?
– কারণ কে কি বলে বসে ঠিক আছে? আমি আসি এরপর কথা বলি। আর চিন্তা করবেন না কিছু নিয়ে ওকে আমার জানপাখি?
– ওকে।
ইরাদ রুহির কপালে একটা চুমু দিয়ে বেড় হয়ে যায়।
রুহি ফ্রেশ হয়ে ফোনটা সাইলেন্ট করে ঘুম দেয় একটা।

.

হাসপাতালে যাওয়ার পরে যথারীতি সবাই ইরাদকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে, আজকে এই হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে অর্ধেকের মতো ডাক্তার এবং স্টাফরা ছুটিতে আছেন। ব্যাপারটা ইরাদের কাছে খুব একটা ভালো লাগে না, কারণ একটা হাসপাতাল মানেই রোগীর যত্ন করতে হবে নাকি বড় ডাক্তারকে প্রাধান্য দিতে হবে। কিছু সময়ের মধ্যে ইরাদ নিজের সব কাজ শেষ করে যখন হাসপাতাল থেকে বেড় হয়ে নিচে আসে তখনই লক্ষ্য করে ২টা লোকের অবস্থা খুব খারাপ তাদেরকে নিয়ে বেশ কিছু মানুষজন হাসপাতালে এসেছেন। ইমার্জেন্সিতে ডক্টর ও নেই। ইরাদ সাথে সাথে নার্সদের নিয়ে নিজেই তাদের চিকিৎসার জন্য ভেতরে নিয়ে যায়। প্রথমে নার্স বলে
– আগে ফর্ম ফিলাপ করতে হবে এরপর চিকিৎসা, আমাদ্ব্র রুলস এটা।
তখন ইরাদ তাদেরকে ধমক দেয়,
— আপনারা মানুষ? আমি জানি আমাদের কিছু রুলস থাকে কিন্তু এখানে একজন হার্ট এট্যাকের পেশেন্ট আর একজনের সেভার ইঞ্জুরী হয়েছে, এমন অবস্থায় তাদের দ্রুত ট্রিটমেন্ট করাতে হবে নাহয় বড় কোনো প্রব্লেম হতে পারে।

.

প্রায় ঘন্টা খানিক লাগলো তাদেরকে ট্রিটমেন্ট দিতে, ইরাদ নিজে থেকেই সব কিছু দেখা শোনা করলো। বাইরে দাঁড়ানো সব গুলো মানুষ ইরাদকে দেখলো। একদিনেই জেনো সবাই ইরাদের নীতি আদর্শ সম্পর্কে। একটা মানুষ দেখতে যেমন সুদর্শন তেমনি তার জ্ঞান বুদ্ধি সব মিলিয়ে কিছু সময়ের মধ্যেই সবাই ইরাদের ভক্ত হয়ে গেলো। আর হবেই না কেনো? ধনী, গরিব, বা অন্য কোনোকিছুরই বিচার ইরাদ করে না। ইরাদ শুধুই মানুষের সুস্থতা কামনা করে তার চিকিৎসার মাধ্যমে। সব কাজ শেষ করে ইরাদ হোটেলে ফিরে আসে। এসেই দেখে রুহি সোফায় বসে কফি খাচ্ছে,
– চলে এসেছেন?
– সরি লেইট হয়ে গেলো আজকে ওটি ছিলো।
– ইটস ওকে। ফ্রেশ হন তাড়াতাড়ি আমি খাবার অর্ডার করেছি মাত্র।
– এখনো খান নি?
রুহি ইরাদের কাছে গিয়ে নিজের বাহুডোরে ইরাদের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– জামাইকে ছাড়া খাওয়া যাবে না পেটে, তাই খাইনি।
আমি অনেক বেশি মিস করেছি আপনাকে,
ইরাদ বুঝতে পেরেছে রুহি ইরাদের কাছে কি চাইছে।
ইরাদ রুহির গালে একটা চুমু একে দিয়ে বলে,
– পাঁচটা মিনিট বসেন আমি শাওয়ার নিয়ে আসি
– হুম
রুহি আর ইরাদ খাওয়া শেষ করে,
এরপর ইরাদ বলে
-আপনার সাথে আমার অনেক জরুরি কথা আছে,
– আমারো
– আপনি আগে বলুন
– বাবা কল দিয়েছিলো আজকে যেতে বলেছেন, একটু পরই। কি যেনো জরুরি কথা আছে।
– আমার ও একটা জরুরি কথা আছে।
– বলুন
ইরাদ কিছুটা নার্ভাস হয়ে আছে কারণ এই কথা গুলো কিভাবে রুহি নিবে ইরাদ জানে না। তবে অন্য কারো মুখের থেকে শোনার চেয়ে ইরাদের মুখে বলাটাই ভালো। আর রুহি ও কি ইরাদকে ভুল বুঝবে? কারণ যত যাই হোক মেঘা রুহির বোন। আজকে এতো বড় একটা কথা ইরাদ জানাতে যাচ্ছে রুহিকে এতে ওর মনের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। ইরাদ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বলে,

– আমার প্রাক্তন স্ত্রী কে আপনি কোনোদিন জানতে চান নি। আমি আজকে আপনাকে সবটা বলতে চাই। আমার জীবনে পুরোটা অতীত, অতীতের মানুষটা কে? এসব কিছুই আপনার জানা দরকার।
ইরাদের কথা গুলো শুনে রুহি চমকে উঠলো, আজকে বিয়ের পরে কেনো এসব বলছে ইরাদ? কেনো কালো দিনের কথা গুলো ইরাদ বার বার মনে করছে? এতে যে রুহির খুব কষ্ট লাগে..
রুহি কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই গেটে নক পরে।
রুহি- আমি দেখে আসি
ইরাদ- হুম
– ইরাদ ঘরে আসুন আমার বাবা এসেছেন।
কথাটা শুনে ইরাদের মনের ভিতর একটা যেনো পাহাড় এসে ভর করলো,
“রুহিকে তো নিজে কিছুই বলতে পারলাম না, তাহলে আজকে এখানেই আমার রুহির সাথে বিচ্ছেদ হয়ে যাবে?”
(চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here