তুই আমার প্রেমময় নেশা পর্ব -১৩

#তুই_আমার_প্রেমময়_নেশা
#মিফতা_তিমু
১৩.

দীর্ঘ ছয়মাস পর মানুষটা কে দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারছিনা।বারবার মনে হচ্ছে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরি তাকে কিন্তু সেই পরিস্থিতিতেও আমি নেই এখন।আমার সামনে নিভ্র ভাইয়া বসে আছেন।উনার চোখ দুটো আমায় দেখে যেন কোটর ছেরে বেরিয়ে আসছেন। এমডি ফ্যাশন হাউসের ক্লাসিক্যাল ডিজাইনার হিসেবে আমায় দেখবেন সেটা মনে হয় উনার ধারণারও অতীত ছিল।উনি হতভম্ব দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

আমাদের দুজন কে একে অপরের দিকে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে এমডি স্যার অবাক হচ্ছেন বুঝতে পেরে গলা খাকারি দিয়ে নিভ্র ভাইয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
নিদ্রা: ওয়েলকাম টু দ্যা ফ্যাশন হাউজ অফ এমডি ফ্যাশন মিস্টার হোসেন।আমি জান্নাতুল তিরানা নিদ্রা, এমডি ফ্যাশন হাউসের ওয়ান অফ দ্যা ক্লাসিক্যাল ডিজাইনার।

নিভ্র ভাই যেন এখনও ঘোরের মাঝে আছেন।উনি অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি উনাকে দেখে বললাম,
নিদ্রা: সরি মিস্টার হোসেন।এনি প্রবলেম…
এবার নিভ্র ভাইয়ের সম্বিত ফিরলো।উনি আমার দিকে হকচকিয়ে তাকিয়ে আমার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে বললেন,
নিভ্র: ওহ সরি। একচুয়ালি আই ওয়াস আউট অফ মাইন্ড।আপনাকে দেখে খুব কাছের একজনের কথা মনে পড়ে গেলো । আপনার সঙ্গে আমার খুব কাছের একজনের অনেক মিল।সরি মিস্টার এমডি।
এমডি স্যার নিভ্র ভাইয়ের কথায় মুচকি হেসে বললেন,
এমডি: ইটস ওকে মিস্টার হোসেন। ওকে যেই দেখে সেই এরকম বলে যে তার পরিচিত একজনের সঙ্গে মিল আছে। ও কোম্পানিতে জয়েন করার পর থেকে আমাদের আরও দুটো ক্লায়েন্ট এরকম কথা বলেছে অ্যান্ড শি ইজ আওয়ার লাকি চার্ম। ও যখন থেকে জয়েন করেছে তখন থেকে আমরা অনেক লাভের মুখ দেখেছি অ্যান্ড আই অ্যাম শিওর আমাদের সাথে ডিল করলে আপনাদেরও অনেক প্রফিট হবে। শি ইজ ভেরি প্রফিটেবল।

নিভ্র ভাই আমার দিকে তাকিয়ে থমথমে গলায় বললেন,
নিভ্র: সেটাই মনে হচ্ছে।
এমডি: সরি কিছু বললেন?
নিভ্র: আমি মানুষ চিনি মিস্টার এমডি।উনি আমাদের জন্য অনেক ফায়েদামান হতে পারেন সেটা আমার ধারণা আছে তবে সেটা উনাকে প্রমাণ করতে হবে।উনি যদি প্রমাণ করতে পারেন তবেই আপনাদের সঙ্গে আমি ডিল করবো কারণ আমি ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির ওনার আর আমার কোম্পানি থেকে কোনো প্রোডাক্ট লঞ্চ হলে সেটা ফিট অ্যান্ড ফাইন আর বেস্ট হতে হবে নাহলে আমার কোম্পানির বদনাম হবে আর মেহেরহান হোসেন নিভ্র তার নিজের ইমেজ আর তার কোম্পানির ইমেজ নিয়ে অনেক কনসার্ন।আপনি নিশ্চই বুঝতে পারছেন যে বেস্ট ডিজাইন নাহলে আমার কাছে কারোর কোনো দাম নেই। সো ফারদার কথা না বলে আমরা মেন টপিকে যাই কারণ এমনিতেই আপনার বেস্ট ডিজাইনারের জন্য আমাকে থার্টি মিনিটস ওয়েট করতে হয়েছে।

নিভ্র ভাইয়ের কথা শুনে এমডি স্যারের মুখ থমথমে হয়ে গেলো কারণ এতক্ষণে উনি বুঝে গেছেন নিভ্র ভাই কাজ নিয়ে বড্ড খুঁতখুঁতে আর সন্দেহবাতিক।আমি ভাইয়ার এরকম আচরণে অবাক হলাম না কারণ আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি মানুষটা আমার উপর রেগে আছে কিন্তু মানুষটা তো একান্তই আমার তাই আমি যেকোনো সময় তার রাগ ভাঙাতে পারব।

ভাইয়ার কাছে ক্ষমা চেয়ে ভাইয়া কে নিজের করে নিবো।এবার নাহয় একটু স্বার্থপর হলাম।অনেক তো দেখলাম অন্যের স্বার্থ এবার নাহয় নিজের স্বার্থ দেখি।এই পৃথিবীতে কেউই নিজ স্বার্থ বিনা অন্যের স্বার্থ দেখেনা তাই আমি যদি নিজের কথা ভেবে স্বার্থপরের খাতায় নাম লিখাই তাহলে ক্ষতি কোথায়?

এমডি স্যার অপ্রস্তুত হেসে বললেন,
এমডি: ডোন্ট ওয়ারী মিস্টার হোসেন। আই এম শিওর আপনার নিদ্রার ডিজাইন পছন্দ হবে।আপনি শুধু একবার ওর ডিজাইন দেখুন।আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি আপনার ওর ডিজাইন ভালো লাগবে বলে আমার কাছে ডিজাইনের ফাইল চাইলেন এমডি স্যার।আমি উনাকে ইসারায় আশ্বস্ত করে ফাইলটা এগিয়ে দিলাম। এমডি স্যার উনার চেয়ারে বসে ফাইলটা নিভ্র ভাইয়ের দিকে এগিয়ে দিলেন।

ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ফাইলে চোখ দিলো। ফাইলের দিকে চোখ দিতেই ভাইয়া বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ফাইলের দিকে।আমি ভাইয়ার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে ভ্রু কুচকে তাকালাম ভাইয়ার দিকে।ভাইয়া এখনো সম্মোহনের মত তাকিয়ে আছে ফাইলের দিকে।

এমডি স্যার ভাইয়া কে এভাবে তাকাতে দেখে গলা খাকারি দিয়ে বললেন,
এমডি: এনি প্রবলেম মিস্টার হোসেন?
নিভ্র ভাই উনার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর ভঙ্গিতে বললেন,
নিভ্র: আই ডোন্ট নো উনার এরকম ডিজাইন নিয়ে কি করে উনি আপনার কোম্পানিতে টিকে আছেন? আপনার কোম্পানীর জন্য উনার এই ডিজাইন ওয়ার্থি না।

ভাইয়ার কথায় আমি অসহায় দৃষ্টিতে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।তাহলে ভাইয়া কে বলা সেই কথার প্রতিশোধ ভাইয়া এভাবে নিচ্ছে। এমডি স্যারও ভাইয়ার দিকে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
এমডি: আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন মিস্টার হোসেন? আপনার কি নিদ্রার ডিজাইন ভালো লাগেনি? না লাগলে বলতে পারেন কিন্তু এভাবে ওর ডিজাইনের যোগ্যতার ওপর প্রশ্ন আপনি তুলতে পারেন না।

নিভ্র ভাই বাঁকা হেসে বললেন,
নিভ্র: আমি যা বলছি ঠিকই তো বলছি। মিস নিদ্রার ডিজাইন তো আপনার ফ্যাশন হাউজ কে ওয়ার্থ করে না বরং এই ডিজাইন আরও বড় ফ্যাশন হাউজ বা কোনো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির জন্য তৈরি হয়েছে যেমন আমার নীরহান ফ্যাশন হাটের মত ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি ।উনার জায়গা আপনার কোম্পানিতে নয় বরং আমার কোম্পানিতে।

উনি যেইরকম ডিজাইন করেছেন সেরকম ডিজাইন আমি খুব কমই দেখেছি।একদম সিম্পল এর মধ্যে অসাধারণ ডিজাইন।আর ওয়েস্টার্ন ড্রেস গুলো আমার মন ছুঁয়ে গেছে। ওয়েস্টার ড্রেস গুলো কোনো অংশে বাঙ্গালীর ঐতিহ্য শাড়ির থেকে কম নয়।

এতক্ষণে হাজার কষ্টের মাঝে আমার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।আমি অশ্রু ভরা চোখে মুচকি হাসলাম।আমায় হাসতে দেখে আমার দিকে নিভ্র ভাই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি ওর দৃষ্টি এড়ানোর ক্ষমতা কোনো কালেই পায়নি।আমিও বাঁধা পড়লাম তার কাজল কালো চোখে।

এমডি স্যার মুচকি হেসে বললেন,
এমডি: আমি নিদ্রা কে বলেছি যে কোনো বড় মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে এপ্লাই করতে কিন্তু ও শুনলে তো।ওর এক কথা যে আমি ওর বাবার বন্ধু আর আমার কোম্পানিতে ও যেরকম সুযোগ সুবিধা আর আনন্দ পাবে কাজে সেটা অন্য কোম্পানিতে পাবে না তাই ও এই জব কিছুতেই ছাড়বে না।

নিভ্র ভাই ঠোঁট বাঁকিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে হেসে বললেন,
নিভ্র: impressive…
এমডি: তাহলে ডিলটা কনফার্ম তো?
নিভ্র: মেহেরহান হোসেন নিভ্র কখনো কোনোকিছুর প্রশংসা করে না আর যখন করে তখন সেটা তার চাই সে যেভাবেই হোক।এখন এই ডিজাইন আমার চাই সে এর জন্য যদি আমায় মিস নিদ্রা কে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে আমার কোম্পানিতে রেখেও দিতে হয় তাও করবো কিন্তু এই ডিজাইন আমার চাই। মেহেরহান হোসেন নিভ্রর যেটা চাই সেটা তার চাই আর না পেলে ছিনিয়ে নিবো।

এমডি: সেটার দরকার পড়বে না।আমরা আপনার সঙ্গেই ডিল করার জন্য মুখিয়ে আছি কারণ আপনাদের মত বড় বড় কোম্পানীর সাথে ডিল করা মানে আমাদের জন্য হাতে চাঁদ পাওয়া।আপনাদের মাধ্যমে আমাদের বাইরের দেশে পরিচিতি বাড়বে তাই এই সুযোগ আমরা হাতছাড়া করবো না।এখন শুধু আপনি কনফার্ম করলেই আমরা কাজ শুরু করবো। ম্যাক্সিমাম ফিফটিন ডেস লাগবে সবটা রেডি করতে।

নিভ্র: অ্যাকসেপ্টেড।আমি এর জন্য ডাবল পেমেন্ট দিবো তবুও আপনারা আমাকেই এই ডিজাইন দিবেন আর ড্রেস ডিজাইন লঞ্চ হওয়ার পর এই ডিজাইন নীরহান গ্রুপস এর নামে পেটেন্ট করে নিবো যাতে এই ডিজাইন আপনি আর কাউকে দিতে না পারেন।তারজন্য আমরা প্রয়োজনীয় কাগজও রেডি করেছি।

এমডি: আপনি অনেক সন্দেহবাতিক তাইনা?
নিভ্র: ইয়েস ইউর রাইট।সকলে আমার এই অভ্যাসটাই ঘৃণা করে।
এমডি: সন্দেহবাতিক হওয়া খারাপ নয় কারণ আজকাল দুনিয়ায় কাউকেই সহজে বিশ্বাস করা যায়না। যাই হোক তাহলে আমরা এগ্রিমেন্ট সাইন করে ফেলি?
নিভ্র ভাই মাথা নেড়ে সায় দিলে দুই কম্পানির মধ্যে এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে চুক্তি হয়ে গেলো।

সাইন করে নিভ্র ভাই এমডি কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
নিভ্র: তাহলে মিস্টার এমডি আজ আসি।দেখা হবে পনেরো দিন পর।আল্লাহ হাফেজ।
এমডি: আল্লাহ হাফেজ ডিয়ার…
নিভ্র ভাই বেরিয়ে যেতেই আমি তাড়াহুড়ো করে স্যার কে কিছু না বলেই ভাইয়ার পিছু নিলাম।
ভাইয়া দ্রুত গতিতে হাঁটছে।আমি বারবার ডেকেও ওকে যখন থামাতে পারলাম না তখন ওর পিছন পিছন আমার গাড়িতে উঠে ড্রাইভার কে বললাম,
নিদ্রা: ড্রাইভার ফলো দ্যা কার…ফাস্ট… হারি আপ…

ভাইয়া সাধারণ গতিতেই গাড়ি চালাচ্ছে। অবশেষে কিছুক্ষণ পর ভাইয়ার গাড়ি একটা ফাইভ স্টার হোটেলের সামনে এসে দাড়ালো।ভাইয়া সেখানেই গাড়ি থেকে নামলো।আমিও দ্রুত গতিতে ভাইয়ার পিছন পিছন গেলাম।ভাইয়া সোজা লিফট দিয়ে বারো তলায় চলে এল।ভাইয়ার সঙ্গে ভাইয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট আর কিছু গার্ডস আছে।আমি এমনভাবে চলাফেরা করছি যেন ভাইয়া আমায় না দেখে কিন্তু অবাক হলাম এটা দেখে যে ভাইয়ার অ্যাসিস্ট্যান্টও আমায় চিনলনা। ব্যপারটা অদ্ভুত তাইনা?

লিফট বারো তলায় আসতেই ভাইয়া নেমে গেলো সেই সাথে ভাইয়ার অ্যাসিস্ট্যান্টও।আমি ভাইয়ার পিছু নিলাম।আমি বুঝতে পারছিনা ভাইয়ার মত এত তুখোড় বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এখনও বুঝতে পারলো না কেউ তার পিছনে আছে।

ভাইয়া 288 রুমের সামনে এসে কি দিয়ে দরজা খুলতেই রুমের দরজা খুলে গেল আর ভাইয়া ভিতরে চলে গেলো। ভাইয়ার অ্যাসিসট্যান্ট ভাইয়া ঘরে ঢুকতেই চলে গেলো।দরজা তখনও খোলা তাই সুযোগ বুঝে আমিও ভাইয়ার পিছন পিছন ভাইয়ার রুমে ঢুকে গেলাম আর দরজার পাশে থাকা বড় কাবার্ডে ঢুকে গেলাম।কিছুক্ষণ পর দরজা খট করে লাগানোর শব্দ পেলাম।

ভাইয়া এখনো আমি ভাইয়ার পিছনে বুঝতে না পারার পিছনে এটাও কারণ হতে পারে যে লোকের ভিড়ে আমায় দেখেনি কারণ লিফটে আর ভাইয়ার এই রুম অব্দি আসা পর্যন্ত ভাইয়ার পিছনে অনেক লোক ছিল।হয়তো তাই দেখেনি।ঘরে ভাইয়ার হাঁটাহাঁটিরও শব্দ পাচ্ছিনা।তাহলে কি ভাইয়া ঘরে নেই?

আমি কাবার্ডের দরজা একটু ফাঁক করে দেখার সাথে সাথেই আবার ধপ করে লাগিয়ে দিলাম।বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছি।আরেকটু হলেই ধরা পড়ে যেতাম কারণ ভাইয়া শুধু একটা ট্রাউজার পরে ঘরে ঘুরছে।ভাইয়ার চুল দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে।ভাইয়ার শরীরে পানির ছিটা তারমানে ভাইয়া গোসল সেরে বেরিয়েছে।ভাইয়ার সঙ্গে কথা কি করে বলবো? ভাইয়া আমাকে দেখে আবার ঘর থেকে বের করে দিবে নাতো?

নিভ্র সারা ঘরে কয়েকবার পায়চারি করে হুট করে গিয়ে কাবার্ডের সামনে গিয়ে দাড়ায়।তারপর হঠাৎ বাঁকা হেসে দরজা খট করে খুলে দেয় আর ওর গায়ের উপর পরে যায় নিদ্রা।

আমি আর ভাইয়া দুজনে নিচে পড়ে আছি।ভাইয়া নিচে আর আমি উপরে।ভাইয়া আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ভাইয়ার দৃষ্টিতে শুধুই মুগ্ধতা আর আমার দৃষ্টিতে আড়ষ্টতা।এমন নয় যে ভাইয়া কে এরকম হট লুকে আগে কখনো দেখিনি কিন্তু এখন কেন জানি বুকটা ধকধক করছে।ভাইয়া শুভ্র রঙ্গা দেহে পানির ছিটা যেন ভাইয়ার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

‘ তুই কি উঠবি নাকি এখন তোকে আছার দিবো ‘

এতক্ষণ ঘোরের মধ্যে থাকলেও এখন ভাইয়ার এই কথা শুনে তাড়াহুড়ো করে উঠে গেলাম। তাড়াহুড়োয় উঠতে গিয়ে আবারও পরে গেলাম ভাইয়ার উপর।ভাইয়া চোখ বন্ধ করে বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে কিছু একটা বিড়বিড় করে বললো।আমি নিশ্চিত আমার এত ভারের জন্য আমায় মোটা বা হাতি বলছে।আমি ভাইয়ার উপর থেকে উঠে গিয়ে বিছানার এক কোণে বসলাম।ভাইয়া কাবার্ড থেকে টিশার্ট নিয়ে পরে ফেললো। তারপর আমার সামনে দাড়িয়ে ভ্রু কুচকে বললো,
নিভ্র: আপনি এখানে আমার বেডরুমের কি করছেন মিস নিদ্রা সেটা কি জানতে পারি? আর আপনি আমার পিছুই বা কেন নিচ্ছিলেন?

ভাইয়ার কথায় আমি ভাইয়ার দিকে বিস্ফারিত চোখে তাকালাম। তারমানে ভাইয়া বুঝতে পেরেছিল আমি ভাইয়ার পিছু নিচ্ছি।তাহলে আমায় জেরা করলো না কেন? আমার কথার মাঝে বাধা দিয়ে নিভ্র ভাইয়া বলল,
নিভ্র: আপনি কাইন্ডলি আপনার ভাবনার শেষ ঘটিয়ে আমায় বলুন যে আপনি আমার বেডরুমে কি করছেন? কোনো জরুরি কথা? নাহলে তো আপনার আমার রুমে আসার কথা না।

আমি হুট করে উঠে গিয়ে নিভ্র ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরলাম।ভাইয়ার বুকে মুখ গুঁজে কাদতে লাগলাম।নিদ্রা কে এভাবে হুট করে কাদতে দেখে নিভ্র অসস্তিতে পড়ে গেলো।এতদিন পর মেয়েটা কে দেখলো তাও এরকম বিদ্ধস্ত অবস্থায় যেটা নিভ্র একেবারেই মেনে নিতে পারছে না।তার দূরে সরে আসা যে নিদ্রা কে এভাবে ভেঙে দিবে সেটা জানলে সে কখনোই দূরে সরে যেত না।নিদ্রার মাথায় খানিক হাত বুলিয়ে নরম গলায় নিভ্র বললো,
নিভ্র: রাত আর কত কাদবি? কাদিস না… তোকে কাদতে দেখলে আমার যে বড্ড খারাপ লাগে।

ভাইয়ার কথায় আমি আরও জোড়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগলাম। নিভ্র ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আবারও বললো,
নিভ্র: কান্না থামাতে বলেছিত রাত…

নিভ্র ভাইয়ার কথায় আমি চুপ করে গেলাম তবুও আমার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে চলেছে।আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কান্না ভেজা গলায় বললাম,
নিদ্রা: কেন চলে গিয়েছিলে নিভ্র ভাইয়া আমায় সবার মাঝে একা করে? তুমি জানো তোমার কথা আমার কত মনে পড়েছে? দিন রাত শুধু তোমায় বলা সেই কটু কথার কথা ভেবে দগ্ধ হয়েছি।তোমার চলে যাওয়া আমার হৃদয় কে গভীর ভাবে দহনে দগ্ধ করেছে।আমি এতটাই ভেঙে পড়েছি যে এখন আমার হৃদয়ের শুধুমাত্র কিছু অনুভূতি ছাই হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে।কেন চলে গেলে আমায় ছেড়ে?

নিভ্র: তুইই তো আমায় বাধ্য করেছিলি নিদ্রা।আমায় সবকিছু ছেরে চলে যেতে বাধ্য করেছিলি।আমার আচরণে তুই ক্লান্ত হয়ে গেছিলি তাইতো তোকে সবকিছু থেকে মুক্তি দিতে এত দূরে চলে এসেছিলাম।আমার কাছে আর উপায় ছিলনা। তাও তো ছয়মাস পর সেই আবার তোর মুখোমুখি হলাম।

নিদ্রা: একবারও বাড়ির কারোর কথা ভাবলে না।তুমি জানো তোমায় বলা সেই কথাগুলোর জন্য তুমি চলে গিয়েছ জেনে আমি আজও কারোর সঙ্গে চোখ মিলাতে পারিনা।তোমার ভালোবাসার মানুষ নীরা আপুর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারিনি।তোমায় ভালোবেসে নিজেকে নিজের চোখে ছোটো করে ফেলেছি।ভালোবাসায় এত কষ্ট জানলে কখনো এই জান্নাতুল তিরানা নিদ্রা কখনোই আপনার প্রেমে পড়তো না মিস্টার নিভ্র।

নিভ্র নিদ্রার কথা শুনে ভ্রু কুচকে বলে,
নিভ্র: অনেকদিন আমার হাতের মার খাস নী তাই উল্টাপাল্টা বকছিস। সেদিনও কলেজে নিরা কে আমার গার্লফ্রেন্ড বলছিলি আর আজকেও ওকে আমার ভালবাসার মানুষ বলছিস।তোর কি হয়েছে? কে বলেছে তোকে যে নিরা আমার গার্লফ্রেন্ড বা ভালোবাসার মানুষ?

আমি কাদতে কাদতে বললাম,
নিদ্রা: তাহলে পনেরো বছর আগে বৃষ্টিতে দাড়িয়ে ছাদে কেন আপু কে জড়িয়ে ধরেছিলে? কেন ওকে বলেছিলে তুমি ওকে ভালোবাসো?কেন বলেছিলে #তুই_আমার_প্রেমময়_নেশা?#তুই_আমার_প্রেমময়_নেশা তো আমার শোনার কথা ছিল নিভ্র ভাই।কেন আপু কে বলেছিলে? কখনও কি আমার চোখে তোমার জন্য ভালোবাসা দেখনি?

আমার কথা শুনে নিভ্র ভাই যেন খেই হারিয়ে ফেলেছেন।কিছু বলার অবকাশই পাচ্ছেন না।চুপ করে গেছেন।হয়তো ভাবছেন আমি কোন ঘটনার কথা বলছি।সেই ঘটনা কি এতটাই নগণ্য তার কাছে? ভালোবাসার প্রকাশের কি কোনোই মূল্য নেই ভাইয়ার কাছে?

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here