সুখতারার খোঁজে পর্ব -১৮

#সূখতারার_খোজে🧚‍♀️
#লেখক:আর আহমেদ
পর্ব ১৮

-‘মেয়ে দেখলেই কি চুলকায় নাকি আপনাদের? হুটহাট ধাক্কা মারেন? সুন্দরী মেয়ে দেখলে বুক নিশপিশ করে ধাক্কাধাক্কি করবার জন্য না?’

কবিতা একটানে বলে উঠলো সামনের সুট-বুট পড়া লোকটাকে। তজ্জব বনে তাকিয়েই রইলো অপরিচিত লোকটি। এদিকে কবিতা রাগে দুঃখে নিজের চেয়াল নিজেই চাবিয়ে খাচ্ছে। ধাক্কা মারার পর নিষ্পাপ মুখ বানিয়ে রেখেছে। মনে মনে ‘বেয়াদপ’ বললো কবিতা। লোকটি ভ্রুযুগল কিঞ্চিৎ কুচঁকে বললো,

-এক্সকিউজ মি…

-ওয়াট এক্সকিউজ?নো এক্সকিউজ মাই সামনে। সং এর মতো দাড়িয়ে না থেকে সাইড কাটুন। যেতে মি, ইয়ে মানে লিভ মি!

লোকটি হাত উঁচিয়ে নিজের চাপদাড়ির কোনা ঝাড়লো। অতঃপর বললো,

-আপনার জানা আছে আমি কে?

উত্তরে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো কবিতা। বললো,

-ইউ জানো আমি হু?

-হু? হাহ্! হু আর ইউ?

বলেই এক পা একপা করে এগোতে লাগলো লোকটি। কবিতা ভরকে গিয়ে পেছোতে লাগলো। আটকানো গলায় বললো,

-এ..এটা ঠিক হচ্ছে না কিন্তু মিস্টার।

এগোতে এগোতেই বললো লোকটি,

-তো?তো কোনটা ঠিক শুনি? না জেনে না বুঝে কাউকে কুশ্রী ভাষায় গালি গালাজ করা? ইডিয়ট!

‘ইডিয়ট’ শব্দিটি কানের তালুতে পৌছাতেই মুখে কিংকর্তব্যমিঢ় এর ছাপ ফেলতে হা হয়ে উঠলো কবিতার। চোখদুটি ডিমের মতো বড় বড় করে বললো,

-আমি ইডিয়ট? আপনি আমায়…

একপা সটাং জোরে এগিয়ে থেমে গেলো লোকটি। কবিতা ভরকে গিয়ে পিছিয়ে দাড়ালো দু’পা। চেয়াল খিচে কোমরে হাত গুজে মনেমনে চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলো। লোকটি বুঝতে পারলো তাকে বিরবির করে গালি দিচ্ছে মেয়েটি। সে দু হাত কোলে গুজে আয়েশের স্বরে বললো,

-শকুনের দোয়ায় গরু মরে না।

এতে যেন আগুনে ঘি ঢাললো লোকটি। কবিতা জোরপায়ে হেটে সামনে এলো লোকটার। বললো,

-কোন সাহসে আমায় শকুন বললেন আপনি?

-আমি না জানি আপনার নাম আর নাই’বা আপনাকে সম্মোধন করে বলেছি। আপনার গায়ে কেন লাগলো বুঝলাম না।

-তাইইই বুঝি? যেই দেখলেন আমায় পটাতে পারছেন না অমনি না? শুনে…

কথা বলার আগেই পাশের সাদা গাড়িতে দু হাত চেপে ধরলো লোকটি। রাগে কপালে ভাজ পড়লো কয়েকটা। ঠোঁটে ঠোঁট চেঁপে বললো,

-অর্নব ইরফানের জন্য মেয়ের লাইন পড়ে আছে ইউ বাস্কেট! এটা জাস্ট এক্সিডেন্ট ছিলো। কাউকে হঠাৎ ধাক্কা লাগতেই পারে। ইউ নো? আমার আজ মুড ঠিক আছে দেখে ছেড়ে দিলাম। পরের বার…

বলেই হাত ছেড়ে দিলো অর্নব। কবিতা কোনমতে নিজেকে সামলে অর্নবের থেকে দু পা পিছিয়ে গেলো। ভয়ক্লিষ্ট কন্ঠে বললো,

-আ..আজ আমারো তাড়া আছে। মোর বান্ধুবী বিয়ের দাওয়াত দেয় নাই। তাই ছ..ছেড়ে দিলাম।

কিছুটা দম নিলো কবিতা। হাতের বক্সটি সর্বশক্তি দিয়ে খিচে নিলো। এবার তাকে দৌড়োতে হতে পারে।নিজেকে আগলে নিয়ে সশব্দে ‘জর্কশ মিয়া’ বলে দিলো ছুট। অর্নব শুনতেই দু পা এগিয়েও এগোলানা। মনে মনে বললো,

-আরেকবার খালি পাই।

___________

সায়নের মুখে যেন কেউ লাল মরিচ ঘষেছে। টকটকে লাল বর্ন ধারন করেছে লজ্জায়। কাজির এক কথায় ‘কবুল কবুল কবুল’ বলার পর যখন সকলে হাসলো তখনি সে বুঝলো সে কতটা নির্লজ্জের মতো কাজ সে করেছে। কাজিও হাসলো ফিক করে। তিনি এতটা তড়িঘড়ি করে আর হাসি ফুটিয়ে কাউকে কবুল বলতে দেখেছেন কিনা ভাবলে কয়েক মুহুর্ত! না! দেখেন নি। সায়নের মনে হচ্ছে বিয়ে মানেই লজ্জা,আর লজ্জা মনেই বোধহয় বিয়ে। লজ্জা কত প্রকারের তা ঠাউর করলো সে।এদিকে তারা নিজের হাসি দমিয়ে রেখেছে খুব কষ্টে। গাল ফেটে হাসি আসছে তারার। কাজি এবারে তাকালো তারার দিকে। বললো,

-এবার কন্যা কবুল বলবে।

তারা এখন মুখ খুললেই হাসির বিশ্রী শব্দের রহুরি খেলবে। দমালো অবশেষে নিজেকে। সকলে ভাবলো হয়তো কষ্ট হচ্ছে মেয়েটার। কিন্তু তারার কষ্ট তো তখনি মুছরালো যখন লাল টুকটুকে বর’কে পাশে দেখলো। ছেলে মানুষের অতটা লজ্জাই এখন হাসির কারন তারার।

-কবুল,কবুল,কবুল!

কাজি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়ে বিয়ে সম্পন্ন করলেন। দোয়া ও হয়ে গেলো। শেষ সময়ে হাজির হলো কবিতা। ভির ঠেলে হুমড়ে গিয়ে দাড়ালো বৈঠকের সামনে। তারা মাথা নত করে থাকায় বুঝলো না। মুরব্বিরা খেতে চলে গেলো। চেঁচিয়ে বললো কবিতা,

-তুই আমায় রেখে রোমান্টিক মৌশুমে বিয়ে করে নিলি?একটি বারও বললি না?

কবিতার আওয়াজ পেতেই চোখ তুলে তাকায় তারা। মেয়েটা ঘেমে গেছে, হয়তো বড্ড তাড়াহুড়ো করেছে। সাবিহা পাশেই ছিলো। উঠে গিয়ে বললো,

-কবিতা ভাবি না? অভ্র ভাইয়া কোথায়?

তেজ যেন ফুরিয়ে এলো ‘ভাবি’ ডাকটি শুনে। কিন্তু এখন মুড খারাপ করবে না বলেই সাবিয়ার প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বসে পড়লো ছোট্ট স্টেজটায়। পাশেই নির্লিপ্ত ভঙ্গিমায় বসে সায়ন। তারা কবিতাকে দেখেই চলেছে। কবিতা রাগি কন্ঠে আরোপ করলো,

-তুই এত হিংসুটে হীনমন্য তারা?

তারা আকুল কন্ঠে বললো,

-আমি তো নিজেই…

-হ্যা তোর তো নিজেরই বিয়ে না? আমি কি নাক্ষসী? সব গান্ডে পিন্ডে গিলবো?

-আমি সেভাবে বলছি না তুই..

-না না না। তুই সেভাবে মানে? বল সেটাই মনে করে ইনভাইট করিসনি। আর এইযে দুলাভাই, আপনি তো পারতেন একটা ইনভাইট করতে।একটা কল করতে? করেননি কেন?

শেষের বাক্যটুকু বেশ রেগেই বললো কবিতা। উত্তরে সায়ন করুন কন্ঠে বললো,

-সবটা খুব’ই তারাতাড়ি হয়েছে। তাই আর…

-তাই,না বলে বিয়ে করে নিবেন? তাও এই গুলুমুলু টার সাথে?

গুলুমুলু তারার আদুড়ে ডাক। স্কুল লাইফে তারাকে এই নামে ক্ষেপাতো কবিতা। আজ অনেকদিন পর সে ডাকলো সেই নামে। আজ মোটেই ক্ষেপলো না তারা। ভালো লাগে বেশ।

-তাহলে জানলে কিভাবে?

কবিতা নিজের চুলগুলো স্টাইল করে বললো,

-সাবিহা বলেছে। বেস্টফ্রেন্ড ডাকলো না, আজ আমার দুঃখের সাথি এই বনুটাই।

সাবিহা ফিক করে হেঁসে ফেললো।

__________

‘নিজের মেয়ে নয়তো কি? আজ তারাকে নিয়ে যাওয়া হবে অন্য বাড়িতে। কলিজা চিনচিন করছে ইলিমার। যেন বুকের এক খন্ড কেউ ছিঁড়ে নিয়ে যাবে খানিক বাদে। মুখ ভরে গাঢ় চুম্বনে ভরিয়ে ফেললেন ইলিমা। তারা হু হু করে কেঁদে ফেললো। না পেরে সশব্দে কেঁদে ফেললেন ইলিমা। পাশে তনয়া ও কাদঁছে নিঃশব্দে। পাশে কবিতা ছলছল নয়নে তাকিয়ে।’

ইলিমা শীতল স্পর্শ করলেন তারার গালে। চোখের কাজল একটু ছড়িয়েছে।তিনি আঁচল দিয়ে গাল মুছে দিলেন। এরপর কাজল ঠিক করে বললেন,

-ভালো থাকিস কেমন? সবার কথা শুনবি।

বলেই মুখে কাপড় গুজলেন ইলিমা। তার বুক কেউ ফালাফালা করে দিচ্ছে যেন। তিনি নিজেকে যথাসম্ভব সামলে বললেন,

-বাধ্য হয়ে থাকিস! সায়নের সমস্ত কথা মানবি।

তারা মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো তারা। এরপর ধির পায়ে হেঁটে গেলো তনয়ার কাছে। বললো,

-চাচীর সমস্ত কথা শুনবি কেমন? কাপড়গুলো নিয়ম করে তুলবি। কাজে সাহায্য করিস। সাথে সাথে কাজও করবি বলে দিলাম।

তনয়া চিৎকার ছেড়ে কেঁদে দিলো। বুক হুমড়ি খেয়ে পড়লো তারার। কাঁদতে কাঁদতে বললো,

-আপা আমায় মাফ করে দিবি না? ও আপা মাফ করবি না আমায়?

তারা চোখ এদিক ওদিক করে পানিটুকু আটকালো চোখের। আদুরে গলায় বলে,

-যাহ্ পাগলি। তোকে তো সেদিনই মাফ করে দিয়েছি মনেমনে। এখনো এসব মনে পুষে রেখেছিস তুই?

তারা বলেই তাকালো এখতেয়ারের দিকে। এখতেয়ার অস্রুশিক্ত নয়নে তাকিয়ে তারার দিকে। তারা তনয়াকে ছেড়ে এগিয়ে গেলো এখতেয়ারের কাছে। এখতেয়ার ও এগিয়ে এসে বললেন,

-ভালো থাকিস কেমন?

-জ্বি চাচা।

চোখের পানি মুছে ফেললো তারা।একটু এগিয়েই দেখলো কবিতা মুখ বাঁকিয়ে রয়েছে। হয়তো রাগ করে আছে। তারা বললো,

-তুই দানী বুড়ী হয়ে যাবি না?

ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে বললো কবিতা,

-আমি??

-হু।

-সরি। আমি পারবো না।

তারা এগিয়ে কবিতার হাত ধরে বললো,

-দেখা হবে কেমন?

কবিতা সায়নের দিকে তাকিয়ে ব্যাঙ্গ করে বললো,

-দেখা হবে না মানে? যে আটকাবে তাকে খালি আমায় দেখিয়ে দিবি। তার ব্যাবস্হা আমি করবো।

দূর থেকে তাকিয়ে দেখলেন সবটা সায়নের মা। আজকাল এমন দৃশ্য আর দেখা যায় না সহজে।

গাড়িতে উঠে পড়লো সকলে। মোট তিনখানা গাড়ি এসেছিলো ও বাড়ি থেকে। তারা গাড়ির জানালা দিয়ে সকলের কান্নারত মুখখানা দেখলো। তার বুক ঝলসে খাক হয়ে যাচ্ছে। গাড়ি চলতে লাগলো। বেশ কিছুটা যেতেই তারার বুক ভার হয়ে আসতে লাগলো। আখি পানিতে টইটুম্বুর।

কারো উষ্ঞ ছোয়া পেতেই তারা তড়িৎ গতিতে চোখের পানি আড়াল করে তাকালো তার দিকে। সায়ন তার হাত স্পর্শ করেছে।

-খারাপ লাগছে?

ঠোঁট কামড়ে বললো তারা,

-হুম!

____

আধঘন্টা হলো ফুলে সজ্জিত বাসর ঘরে বসে আছে তারা। সায়নের মা দুধ হাতে একটিবার এসেছিলো। এরপর আর সায়নের কোন দেখা নেই। হঠাৎ দরজা বন্ধের আওয়াজ কানে আসতেই বুক ধুক করে উঠলো তারার। চকিত দৃষ্টিতে সায়নের দিকে তাকাতেই উদয় হলো জম কঠিন প্রশ্ন। সায়ন হাসিমুখে এগিয়ে আসতেই উদিত প্রশ্ন বলে উঠলো তারা,

-আপনার বাবাকে দেখলাম না? তিনি কোথায়?

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here