ইস্ক সাহেবান পর্ব -১০

#ইস্ক_সাহেবান
#হীর_এহতেশাম

||পর্ব-১০||

★———আমি কি বলেছিলাম? সে যেন কোনো ভাবেই উত্তেজিত না হয়ে পড়ে, তার ব্রেইনে যেন প্রেসার না পড়ে, তারপরও এসব কি করে হলো? কোথায় ছিলেন আপনি? এতোটা কেয়ারলেস কি করে হলেন? আমি নিষেধ করার পরও কেন এসব হলো? হোয়াই আনসার মি….. ইবাদের ধমকে কেঁপে উঠলো নার্স। দিদার মাহসান, নাহিদা বেগম, জাফর এহতেশাম সবাই তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। চেহারায় কাঠিন্যতা, কন্ঠে তীক্ষ্ণতা, আর দৃষ্টিজোড়া ভয়ংকর লাল হয়ে আছে তার। নার্সকে চুপ থাকতে দেখে এগিয়ে এক’কদম সামনে আসতেই দিদার মাহসান থামিয়ে দিলেন,

—এবারের মত ছেড়ে দে দাদুভাই। হুট করেই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলো ইফতি। দিদার মাহসানের কথা শুনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পেছনে ফিরে তাকালো ইবাদ। তার দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা দেখে দিদার মাহসানও যেন কেঁপে উঠলো। নার্সের দিকে তাকিয়ে বলল,

—–ভুলের ক্ষমার আমি করে দিলেও অন্যায়ের করবো না। এর পর এমন অন্যায় হলে তার পরিণতি খুব খারাপ হবে। আর একটা কথা..! কোন সাহসে আপনি তাকে পাগলের মত ট্রিট করছিলেন? তার সাথে ধস্তাধস্তি কেন করছিলেন? শেষ বার বলছি, সে পাগল না। তাকে যদি পাগল ভেবে থাকেন তাহলে অনেক বড় ভুল করবেন। আমি তা মেনে নেব না বলে দিলাম। যান এখান থেকে…. ইবাদের ধমক শুনে নার্স চুপচাপ বেড়িয়ে গেল। নার্সের সাথে সাথে দিদার মাহসান সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। সবাইকে নিচে যেতে বলে তিনি দরজার আড়ালে এসে দাঁড়ালেন। ইবাদ চোখ বন্ধ করে কয়েকবার শ্বাস টেনে নিলো। নিজেকে শান্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে সে ইফতির বিছানার পাশে থাকা চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসে পড়লো। মেয়েটির মুখের দিকে তাকাতেই তার ভেতর শুকিয়ে গেল। এক হাত বাড়িয়ে মুখের উপর ছড়িয়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিলো। গালে লাল হয়ে আছে আঁচড়ের দাগ। দাগটাতে আলতোভাবে হাত বুলিয়ে মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। চেয়ার ছেড়ে উঠে বিছানায় বসে দু-হাত ইফতির দুপাশে রেখে ইফতিকে দু’হাতের মাঝে আবদ্ধ করে নিল। একটু ঝুকে বলল,

—-পছন্দের ফুলে দাগ পড়লে কলিজা পুড়ে। সমস্ত শিরা উপশিরায় টান পড়ে সাহেবান। বড্ড যন্ত্রণা হয়..
কখনো অনুভব করেছেন? বলেই ইবাদ চুপ করে রইলো। কিছুক্ষণ মৌনতা পালন করে বলল,

—-হারিয়ে যাবেন না সাহেবান। আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো। আপনি’ই যে আমার একমাত্র…. থেমে গেল ইবাদ। নিজের কথা শেষ করলো না। কাকে বলছে সে? যে শুনতেই পাচ্ছে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে চলে গেল সে…

দিদার মাহসান এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। ইবাদের বলা প্রতিটি কথা কেমন যে অচেনা মনে হলো। এইতো কিছুদিন আগেই সে না করেছিলো, ইরফানের সাথে জোড়া লাগানোর তুমুল চেষ্টা করেছিল, তাহলে আজ? ইফতিকে সাহেবান বলে কেন সম্বোধন করলো ইবাদ? ইবাদ কী তবে ইফতিকে পছন্দ করে? নাকি আগে থেকেই……
তারের মত পেঁচিয়ে গেল দিদার মাহসানের মস্তিষ্ক। একের পর এক দৃশ্য যেন ভাবিয়ে তুলছে। যে ছেলে কখনো রেগে কথা বলে নি, তার এই রুপ দেখে তিনি অবাক!

★ হাসপাতালের বোর্ডরুমে বসে আছে ইবাদ। দু’জন ডাক্তার আছে দুইপাশে। আর একজন আসবে তার জন্যই ইবাদ অপেক্ষা করছে। একহাতে নিজের মাথার চুল ধরে রেখেছে। চেহারায় চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। এতটা চিন্তিত এর আগে তাকে কেউ কখনো দেখে নি। দরজা খোলার শব্দে বাকি দুজন ডাক্তার উঠে দাঁড়িয়ে গেল। ইবাদ এখনো বসেই আছে। লোকটি এসে ইবাদের পাশে দাঁড়ালো,

—-হ্যালো মি. মাহসান। হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল লোকটি।

ইবাদ চমকে তাকালো। মৃদু হেসে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলো,

—হ্যালো মি. ফায়াজ। লোকটি পাশে বসে পড়লো।

—–কি মি. এত চিন্তিত যে? কোনো কেসে তো আমি আপনাকে এত চিন্তিত দেখি নি।

—-ঠাট্টা বাদ দে। কাজে ডেকেছি তোকে।

—সেটাই তো ভাবছি, কি এমন সমস্যায় পড়লো ইবাদ মাহসান যে তার পরম শত্রু ইশাল ফায়াজ কে তলব করেছে। দুষ্টু হাসি হেঁসে বলল ইশাল।

—-একটা জটিল কেসে আটকে গেছি দোস্ত। এক মনে হ্যাঁ বলছে দশ মনে না বলছে, সাহস পাচ্ছি না।

—-কি কেস শুনি?

ইশাল কে ফায়াজ সবটা বলার পর ইশাল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,

—-দেখ তোর দশ মনে না কেন বলছে আমি জানি না। তবে আমি বলবো যে এক মনে হ্যাঁ বলছে তার দিকেই যা। এক মনের সম্মতি থেকেই দশ মন সম্মতি দিতে বাধ্য হবে ব্রো!

—-কিন্তু ইশাল….

—-কী ইশাল ইশাল? পেশেন্টই তো? চল দেখে আসি।

—-হসপিটালে নেই।

—-হসপিটালে নেই মানে? ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো ইশাল।

—আমার বাড়িতে…

—-তোর রিলেটিভস নাকি?

—-হুম তেমনই!

—-আচ্ছা চল তোর বাড়িতেই যাই!

—. চল……

★সারা রুমে বেলুন দিয়ে ভরে আছে। লাল রঙের হার্ট শেপের বেলুন। বিছানায় বসে বসে ইফতি তা নিজে ফুলিয়েছে। বেচারী নার্স এককোনায় বসে বসে তালে তাল মেলাচ্ছে। পুরো রুমে পা রাখার জায়গাও নেই। ইবাদ ইশালের সাথে কথা বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করলো। পায়ের কাছে বেলুন দেখতে পেয়ে সে কথা থামিয়ে দিলো। ঝুকে বেলুন তুলে নিয়ে ইশালের দিকে তাকালো। ইশাল ইশারায় সামনে দেখিয়ে দিলো। সামনে তাকাতেই দেখলো ইফতি বেলুন ফোলাচ্ছে। চোখ দুটো ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ইবাদের দিকে তাকিয়ে বেলুন ফোলাতে ফোলাতে কখন যে বেশি বড় হয়ে গেল তা খেয়াল করে নি। ইবাদ চোখজোড়া বড় বড় করে নিলো। দু’পাশে মাথা নেড়ে অস্ফুটস্বরে বলল,

—–নো, নো,নো…. বলে দু-হাত দিয়ে কান চেপে ধরতেই ইফতির মুখে থাকা বেলুন ফেটে গেল। ইফতি নিজেও হতভম্ব হয়ে গেল। ইবাদ কান থেকে হাত সরিয়ে ইফতির দিকে তাকিয়ে ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। পা দিয়ে বেলুন সরাতে সরাতে সামনে এগিয়ে গেল। বিছানায় বসে একহাত বিছানায় রেখে ভর দিয়ে একটু ঝুকে জিজ্ঞেস করলো,

—-এসব কি?

—আজ ওনার জন্মদিন তাই। ইবাদ ভ্রু কুঁচকে ইফতির ইশারায় দেখানো দিকে তাকালো। অসহায় মুখ করে বসে আছে নার্স। ইবাদ ইফতির দিকে তাকিয়ে বলল,

—আজ যে ওনার জন্মদিন আপনাকে কে বলেছে?

—-ওমা, ওনাকে সবাই উইশ করছিলো তো আমি শুনেছি।

ইবাদ নার্সের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—-উনি কি বলছে?

—-আসলে স্যার..

—-সত্যি?

নার্স হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে বোঝালো যে ও যা বলছে তা সত্যি। ইবাদ কিছু না বলেই বেরিয়ে যাওয়ার জন্য দরজা পর্যন্ত গিয়ে থেমে গেল। পেছনে ফিরে ইশাল কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,

—-তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

ইবাদের কথায় ইশালের ঘোর কাটলো। এতক্ষণ কোথায় যেন হারিয়ে গেছিল সে। কিছুক্ষণের জন্য অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছে। দ্রুত ইবাদের পাশে এসে দাঁড়ালো,

—-চল…

দুজনে বেরিয়ে গেল একসাথে।

★বাহির থেকে বিশাল বার্থডে কেক, বার্থডে ক্যাপ, ক্যান্ডেল, এসব নিয়ে ইবাদ আর ইশাল ফিরে এলো। ইফতির রুমে প্রবেশ করতেই ইফতি ইবাদ কে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। হাতের জিনিসপত্র টেবিলে রেখে ইবাদ বলল,

—-আমরা আজ ওনার বার্থডে সেলিব্রেট করবো, ঠিক আছে?

—-সত্যিইই? উচ্ছ্বসিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো ইফতি।

—-হ্যাঁ সত্যি। আপনাকে একটা কাজ করতে হবে।

—জলদি বলে ফেলুন….

—-আপনি চুপচাপ এখানে বসে থাকবেন, ঠিক আছে?

ইফতির মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেল। মলিন মুখে বলল,

—-আমি একটু সাহায্য করি?

ইবাদ ইশালের দিকে তাকাল। ইশাল ও তাকিয়ে আছে তার দিকে।

—-ঠিক আছে আপনি এক কাজ করুন বেলুন গুলো আমাদের গুছিয়ে দিন ঠিক আছে?

—ওক্কে! বলে ইফতি একে একে সব বেলুন তুলে নিতে থাকে। ইবাদ ইশাল কে ইশারায় সাজাতে বলে। তিনজনে মিলে পুরো রুম সাজিয়ে ফেলে। নার্স কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। এক হাতে মাথা চেপে এককোনায় বসে আছে বেচারী। এমন পেশেন্ট এই প্রথম দেখছে। যাকে হ্যান্ডেল করতে গিয়ে নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছে প্রচুর।

★রুম সাজানো শেষ!! নার্সকে যখন কেক কাটতে ডাকলো তখন ইফতি এক চিৎকার দিলো।

——এই এই দাঁড়ান….

ইবাদ আর ইশাল চমকে তাকালো,

—-কি হলো?

—উনি এভাবে কেক কাটবেন?

—-তো? ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে ইশাল। ইফতি ইশালের দিকে ফিরে ইশালের হাতে এক চড় বসিয়ে দেয়। ইশালের চোখে বিস্ময়।

—-এত কিছু এনেছেন উনি। আপনি একটা ড্রেস আনতে পারলেন না? আপনি কি পাগল?

—-না আমি পাগল না… মৃদু স্বরে বলে ইশাল।

—–আপনি আমার মুখে মুখে তর্ক করেছেন? ইফতি কে চিৎকার করতে দেখে ইবাদ বলে,

—-আরে না। ও তো পাগল! কত করে বললাম একটা ড্রেস কিনতে ও কিনলো না। পাগল তো তাই…

ইবাদের কথা শুনে ইশাল ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ইবাদ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ইশাল নার্সকে ইশারা দিতেই নার্স বললো,

—–আমার তো ড্রেস আছে। এটা তো নতুন। আর লাগবে না।

—-তোমার জন্য আমি ওনাদের মাফ করেছি। এসো আমরা কেক কাটি। বলেই নার্স কে নিয়ে কেক কাটলো। একে একে সবাইকে খাইয়েও দিলো। ইফতি কেক হাতে নিয়ে দুজনের দিকে তাকালো,

—-আগে কাকে দেব?

ইবাদ আর ইশাল একে অপরের দিকে তাকালো।

—-আমাকে আগে দিন। ইশাল হা করে করে একটু ঝুকে দাঁড়ালো। ইফতি ভ্রু কুঁচকে বলল,

—-একদম না। আমি আপনাকে কেকই দেব না।

—সেকী কেন?

—-আপনি ওনার জন্য ড্রেস আনেন নি তাই। তাছাড়া কোনো পাগলের জায়গা আমার এখানে নেই।

—-ওহ্ আচ্ছা। বলেই ইবাদের দিকে তাকালো ইশাল। ইবাদ ঠোঁট চেপে হাসছে।

—-আপনি হাসছেন কেন হা করুন।

ইবাদ হা করতেই ইফতি কেক খাইয়ে দিলো।

এক ডোজে যে এতটা শান্ত হয়ে যাবে ইবাদ ভাবে নি। চোখের সামনে যেন ইফতির সুস্থতা ভাসছে। মনের ভেতর উথাল-পাতাল ভয়ংকর রুপ টা যেন শান্ত হয়ে আসছে ইবাদের। একরাশ স্বস্তি ইবাদকে ঘিরে ধরলো।

রুম ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নার্স ইবাদকে পিছু ডাকলো। ইবাদ আর ইশাল দুজনেই দাঁড়িয়ে গেল,

—-কিছু বলবেন?

—-আসলে স্যার…..

—-বলুন…

—-আজ আমার বার্থডে ছিলো না। চোখ মুখ কুঁচকে কথাটা বলেই দিলো নার্স।

ইবাদ আর ইশালের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। কণ্ঠে বিস্ময় নিয়ে দুজনেই বলে উঠলো,

—কি??

নার্স চোখ খিচে বন্ধ করে রইলো।

চলবে…??

||অপ্রত্যাশিত কারণে লিখতে পারি নি। তার জন্য আমি দুঃখিত। কেমন হয়েছে জানাবেন। বাই দ্যা ওয়ে আজ আমার বার্থডে 😁….||

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here