সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব -০৫

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ০৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

বাসায় এসে মাত্র ব্যাগটা সোফায় রেখে রান্নাঘরের দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়িয়েছে কায়াসা তখনিই তার বাড়ির বেল বেজে উঠে।এই অসময়ে বেল বাজার কারণে কায়াসা কপাল কুচকে যায়।সে অনেক আগ্রহ নিয়ে দরজা খুলে।দরজা বাইরে আদ্রিক দাঁড়িয়ে আছে,তার হাতে সেই কালো ছাতাটাও শোভা পাচ্ছে।

” (এ আবার এখানে কেন এলো?)আপনি এখানে?”

” তুমি কি তোমার কোন কিছু ফেলে এসেছো?”

” নাতো।”

” ঠিক করে মনে করে দেখো।”

” নাতো আমার তো সেরকম কিছু মনে পড়ছেনা।”

” ওকে।তাহলে এই ফোনটা হয়তো অন্য কারো।”

আদ্রিকের কাছে নিজের ফোন দেখে অবাক হয়ে যায় কায়াসা।সে আদ্রিকের হাত থেকে ফোনটা নিতে গেলে আদ্রিক হাত সরিয়ে ফেলে।

” ফোন দিন আমার।”

” দেবো তবে এতো তাড়াতাড়ি না।ফোন পাওয়া জন্য কিছু দিতে হবে।”

” আমি কেন কিছু দেবো?এটা আমার ফোন,আমি কেন তার বিনিময়ে কিছু দেবো?”

” তাহলে ফোনটাও পাবেনা।”

” না না।আচ্ছা বলুন কি চান?”

” যদি বলি আমার গালে একটা কিস করো।করবে?” কায়াসার দিয়ে ঝুঁকে কথাটা বলে আদ্রিক।কায়াসা চোখ-মুখ কুচকে পেছনে সরে আসে।

” আপনার হলে এবার আসতে পারেন।”

” ফোনের দরকার নেই নাকি?”

” দরকার নেই।ওটা আপনি নিজের কাছে রেখে দিতে পারেন।”

আদ্রিক কিছুক্ষণ কায়াসার দিয়ে তাকিয়ে থেকে তারপর তাকে হাত দিয়ে সরিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে।

” আরে আরে কোথায় যাচ্ছেন?”

আদ্রিক এসে সোফায় বসে।আদ্রিকের পেছন পেছন কায়াসাও ভেতরে চলে আসে।

” যাও তো একটা কফি নিয়ে এসো।”

” আমি কি আপনার বিয়ে করা বউ নাকি যে আপনার অর্ডার মানবো?”

” কফি আনবে নাকি এখন কফি খাওয়ার জন্য তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো?আর তুমি হয়তো জানোনা আমি নিজের জন্য কিন্তু সব করতে পারি।”

আদ্রিকের কথা শুনে কায়াসা ভয়ে পেয়ে যায় আর চুপচাপ কফি করতে চলে যায়।

কফি নিয়ে এসে কায়াসা আদ্রিককে ড্রয়ং রুমে পাইনা।কায়াসা কফির মগটা নিয়ে এদিক-ওদিক খুঁজতে থাকে।যখন কায়াসা নিজের রুম ক্রস করছে তখন সে দেখতে পাই আদ্রিক তার রুমে মধ্যে জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করছে।

” এই এই আপনি এখানে কি করছেন?”

” ও তাহলে তোমার নাম তাহলে নিশাত জাহান কায়াসা।নট বেড।”

” আমি কি আপনার থেকে আমার নাম নিয়ে কোন কমপ্লিমেন্ট চেয়েছি?চাইনি তো?তাহলে এতোকিছু বলতে হবেনা।এবার চুপচাপ কফিটা খান আর আমার ফোনটা দিয়ে তাড়াতাড়ি বিদেয় হন।” বিরক্ত নিয়ে বলে কায়াসা।

কায়াসার হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে আদ্রিক আড়াম করে বিছানায় বসে।

” বাহ্ তোমার বিছানাটাতো খুবই সফট।”

” সেটা আমি জানি।এবার তাড়াতাড়ি কফিটা শেষ করে জানতো।”

” যদি না যায় তো কি করবে?”

” আমি চিৎকার করে সবাইকে ডাকবো।”

” তারপর?”

” তারপর সবাই এসে যখন আপনাকে গণধোলাই দেবে তখন বুঝবেন মজা।”

কায়াসার কথা শুনে মুচকি এসে আদ্রিক কফির মগে চুমক দেয়।

” আসলেই না তুমি একটা ইডিয়েট।তুমি যদি এখন চিৎকার করো আর সবাই এসে জড়ো হয় তো তখন আমার কিছু হবেনা বরং তোমার সম্মান যাবে।কারণ সবাই চোখের দেখাকেই বিশ্বাস করে।আমি বললে সবাই সেটা বিশ্বাস করে নেবে।কারণ আমি বানিয়ে অনেক কিছু বলতে পারি যা সবার চোখে ঠিক মনে হবে আর সবাই তোমাকেই ভুল বুঝবে।তাই ভবিষ্যতে এরকম ভুল করোনা।অন্যের কাছে সাহায্যের আশা না করে নিজেই কিভাবে নিজেকে বাঁচানো যায় সেটাই চিন্তা করবে।বুঝতে পেরেছো?”

” হুম।(লোকটাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটাও খারাপ না।তবে যাইহোক এই রাক্ষসটাকে ভরসা করা ঠিক হবেনা।হতেও তো পারে নিজের মিষ্টি মিষ্টি কথায় আমাকে ভোলাচ্ছে।—-মনে মনে)

” আচ্ছা তুমি তখন গাড়িতে কি জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলে?”

” আচ্ছা আপনি কি সত্যিই ইলিগালভাবে অর্গান পাচার করেন?” ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে কায়াসা।

” তুমি কিসের ভিত্তিতে বলছো কথাটা?তুমি কি সিউর?”

” কেন?সেইদিনই তো শুনলাম আপনি ফোনে কাউকে বলছেন যে কিডনি বের করা হয়ে গিয়েছে কিনা।তার মনে তো এটাই দাঁড়ায় যে…..।”

” হ্যাঁ করি,তো?”

” সত্যি!” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে কায়াসা।

” তোমার কিডনি বের করে দেখাবো নাকি?” অদ্ভুত দৃষ্টিতে কায়াসার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে আদ্রিক।আদ্রিকের তাকানো দেখে কায়াসা ঘাবড়ে যায়।সে এদিক-ওদিক তাকিয়ে এমন একটা ভাব করছে যেন কিছুই হয়নি।ততক্ষণে আদ্রিকের কফি শেষ হয়ে যায়।মগটা পাশের টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়ায় আদ্রিক।

” ফ্ল্যাটে একা থাকো বুঝি?”

” হ্যাঁ।”

” বাড়িতে কে কে আছে তোমার?”

” আব্বু।”

” আম্মু কোথায় তোমার?”

” জানিনা।তবে আব্বু আর ফুফি বলেছে আমার আম্মু নাকি আকাশের তাঁরা হয়ে গিয়েছে।সেসব বাদ দিন।এবার বলুন আপনার কে কে আছে?নিশ্চয়ই আপনার কাছে আব্বু-আম্মু আছে?” শেষের কথাটা কিছুটা মন খারাপ করে বলে কায়াসা।

” না কেউ নেই আমার।সেসব বাদ দাও।আমি এলাম।সাবধানে থেকো।আর কোন সমস্যা হয়ে আমাকে ফোন করতে পারো।চেষ্টা করবো তোমাকে সাহায্য করার জন্য।”

” আচ্ছা।(হু…..আপনার মতো রাক্ষসকে কেন বলতে যাবো আমি?আমি নিজের কাজ নিজে করবো।)

ঘুমে আচ্ছন্ন কায়াসা তবে ঘুমের মধ্যে কেন যেন তার মন হচ্ছে কেউ তাকে দেখছে।কিন্তু ঘুমের কারণে সে চোখ খুলতে পারছেনা।কায়াসা অনুভব করছে কেউ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।হাত বুলিয়ে দেওয়ার কারণে কায়াসার ঘুম আরো গভীর হয়ে যায়।

রুমের মধ্যে জ্বলছে ড্রিম লাইট।আসলেই কেউ কায়াসার পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।একসময় সে কায়াসার একটা হাত নিজের দু’টো হাতে মুঠোয় নেয়।

” আজকের কাজটা তুমি একদম ঠিক করোনি সুঁই,একদম না।আমি এতো তাড়াতাড়ি তোমার কাছে আসতাম না কিন্তু তুমি আজ যা করেছো তার জন্য আমার আসতে হলো।তুমি একটা অপরিচিত ছেলে ঘরে ঢুকতে দিয়ে মোটেও ভালো করোনি।তার থেকেও বড় কথা তুমি থাকে নিজের হাতে কফি করে দিয়েছো।কেন তাকে কফি করে দিলে?কেন সে তোমার হাতের বানানো জিনিস খাবে?তোমার হাতে তৈরি খাবার খাওয়া অধিকার শুধু আমার আছে আর কারো নেই।ভুল যখন করেছো এবার এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।”

সুতো মানে এশান মাথা নিচু করে মুখটা কায়াসার হাতের কাছে নিয়ে আসে আর হঠাৎ করেই হাতে কামড় দিয়ে দেয়।ব্যথায় কায়াসা হালকা নড়েচড়ে উঠে কিন্তু এশান মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার কারণে সে আবারো ঘুমের দেশে চলে যায়।

কায়াসার সাদা হলদেটে রঙের হাতটা অনেকটাই লাল হয়ে গিয়েছে।দাঁতের ছাপও হাতের মধ্যে বসে গিয়েছে।হাতের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে এশান।জ্যাকেটের পকেট থেকে একটা মলম বের করে এশান।তারপর সেটা সযত্নে কামড় দেওয়া জায়গাটাতে লাগিয়ে দেয় সে।

” সরি জান কিন্তু কি করবো বলো তুমি আজকের কাজটা তো মোটেও ভালো করোনি।এরজন্য তো তোমাকে শাস্তি পেতেই হতো।কিন্তু তুমি চিন্তা করোনা তোমাকে শাস্তিও দেবো আমি আবার তোমার যত্নও আমিই নেবো।”

মলম লাগানো শেষ হলে আরো কিছুটা সময় বসে রাতের আঁধারে মিলিয়ে যায় এশান।

পরেরদিন সন্ধ্যাবেলা,

টিউশন থেকে কিছুক্ষণ আগেই ফিরেছে কায়াসা।সে এখন রাতের খাবার রান্না করার তোরজোর করছে।হঠাৎ করেই কায়াসার চোখ যায় তার হাতের দিকে।জায়গাটা কেমন যেন তার কাছে লাল লাল মনে হচ্ছে।কায়াসা হাতটা দেখছে তার মাঝেই সে শুনতে পাই তার ফোন তাকে ডাকছে মানে ফোনটা রিং হচ্ছে।চুলার আঁচটা কমিয়ে দিয়ে কায়াসা রুমে চলে আসে।স্ক্রিনে ‘ইতু’ নামটা জ্বলজ্বল করছে।

” হ্যাঁ ইতু বেপি বল।”

” রাখতো বেপি।এই তুই কি মরে গিয়েছিস?শোন মরলে চল্লিশার দাওয়াত দিয়ে যাস কিন্তু।”

” আমি মরলে তোর সাথে ফোনে কথা বলে কে?আর তুই আমার বান্ধবী নাকি শত্রু?যে আমার চল্লিশার দাওয়াত খাওয়ার জন্য এতো এক্সাইটেড।”

” সে যাইহোক মরলে চল্লিশার দাওয়াত দিস কিন্তু।”

” হ্যাঁ মারা যাওয়ার পর আমার ভুত এসে তোকে দাওয়াত দিয়ে যাবে।এবার বল কেন ফোন করেছিস?”

” তোর কি কোন খবর আছে আজ কি?”

” আজ কি?কোন বিশেষ কিছু আছে নাকি?”

” তুই সত্যিই ভুলে গেলি!ও মাই আল্লাহ,এতো বড় বিষয়টা তুই কিভাবে ভুলতো পারলি?”

” আরে বেপি প্লিজ এতো না পেছিয়ে বলতো আজ কি?আমার অনেক টেনশন হচ্ছে।”

” বেপি আজ ডাক্তারি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে।”

” কি?হায় আল্লাহ!আরে হ্যাঁ আজই তো পরীক্ষার রেজাল্ট দেওয়ার কথা ছিল।এই তুই রেজাল্ট দেখেছিস?”

” হ্যাঁ সেই কবে বিকালে দেখেছি।যখন দেখলাম সন্ধ্যা হয়ে গেলো কিন্তু তোর ফোন এলোনা তখন তোকে ফোন দিলাম।”

” আমারটা দেখেছিস?”

” হ্যাঁ আমি দুজনেরটাই দেখেছি।”

” এই ইতু বল না আমি কি চান্স পেয়েছি?নাকি কোথাও পাইনি?কি হলো চুপ করে আছিস কেন?বল।”

” কায়ু তুই….তুই….”

” প্লিজ বল।আমার টেনশন হচ্ছে।” কায়াসা প্রায় কান্না করে দিয়েছে।

” বেপি তুই আর আমি দুজনেই মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়ে গিয়েছি তাও একি কলেজে।”

” সত্যি বলছিস?নাকি আমাকে মিথ্যা ভরসা দিচ্ছিস?”

” আমি এই সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কেন মজা করবো বলতো?আমি সত্যি বলছি।জানিস আমার না খুব আনন্দ হচ্ছে।আমারো আবারো একসাথে পড়তে পারবো।”

” আমারো।দাঁড়া কথা আমি আব্বুকে বলি।তারপর তোকে আবারো ফোন দিচ্ছি।”

” হুম আচ্ছা।”

কায়াসা ফোন কেটে তার আব্বুকে ফোন দেয় আর খবরটা বলে।মেয়ে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছে জেনে কায়াসার আব্বু কেঁদে দেয়।আব্বুর কান্না দেখে কায়াসাও কান্না করে দেয়।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here