সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব -০৪

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ০৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

সাদা রঙের একটা খাম নিয়ে বসে আসে কায়াসা।সে চিন্তা করছে খামটা খুলবে কি খুলবেনা।কায়াসা যখন আদ্রিকের বাড়িতে থেকে নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে এসেছিল তখন দরজার সামনে সে এই সাদা খামটা পাই।অবশেষে অনেক চিন্তাভাবনা করে সাবধানে খামটা খুলে কায়াসা।খাম খেলেই তাতে একটা সাদা কাগজ দেখতে পাই সে।কাঁপা কাঁপা হাতে কাগজটা খুলে কায়াসা।সাদা কাগজে লাল কালি দিয়ে কিসব যেন লেখা।কায়াসা শুরু থেকে চিঠিটা পড়তে থাকে।

প্রিয় সুঁই,

নিশ্চয়ই ‘সুঁই’ নামটা দেখছে চমকে গিয়েছো?এই অদ্ভুত তবে সুন্দর নামটা কিন্তু তোমারই।কেমন আছো তুমি?শরীর কেমন আছে তোমার?নিজের শরীরের যত্ন নিচ্ছো তো?তুমি নিশ্চয় এখন ভাবছো এই লোকটা কে?তবে বলি তুমি আমাকে চেনোনা তবে আমি তোমাকে এ কয়েকদিনে অনেকটাই চিনে নিয়েছি।

আমি জানি তোমার মাথায় এখন কোন প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে।এটাই তো যে ওই তিনটা ছেলেকে কে মেরেছে?আমি ঠিক বলছিনা?তাহলে শোন সুঁই ওই তিনটা ছেলে আমিই মেরেছি।কারণ ওরা আমার জিনিসের দিকে নজর দিয়েছিল।তুমি হয়তো ভাবছো আমি সাইকো,আমি পাগল।তুমি ঠিকই ধরেছো,আমি পাগল,সাইকো তবে তা তোমার জন্য।আমি বেঁচে থাকতে তোমার কোন ক্ষতি হতে দেবোনা।

আর এই বিষয় নিয়ে এতো বেশি চিন্তা করোনা।যতবেশি চিন্তা করবে বিষয়টা ততবেশি জটিল হয়ে যাবে।এটাকে একটা নরমাল বিষয়ের মতো নাও।আর ভেবোনা এই বিষয়ে তোমার নাম আসবেনা।নিজের যত্ন নিও সুঁই।

ইতি
তোমার প্রেমে পাগল সুতো

চিঠি এতোটুকুতেই শেষ।তবে চিঠির শেষে লাল রঙের কালি দিয়ে আকারে বড় করে কিছু লেখা আছে।কায়াসা এবার সেটা পড়ে।

” আচ্ছা সুঁই তুমি জানো আমি চিঠিটা কি দিয়ে লিখেছি?ও আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তোমাকে আমি না বললে তুমি জানবে কেমন করে?আচ্ছা শোন তাহলে আমি এই চিঠিটা কিন্তু লাল রঙের কলমের দিয়ে নয় বরং ওই তিনটা জানোয়ারের রক্ত দিয়ে রেখেছি।খুব সুন্দর লেখাগুলো তাইনা?তুমি কি জানতে চাও আমি ওদের কিভাবে মেরেছি?আচ্ছা সেটা নাহয় পড়ে কোনদিন বলবো।”

রক্ত দিয়ে চিঠিটা লেখা হয়েছে পড়ে তাড়াতাড়ি কাগজটা ফেলে দেয় কায়াসা।কয়েক সেকেন্ড পর কায়াসা দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে আসে,আর বমিট করতে থাকে।অনেকক্ষণ বমিট করার পর চোখে মুখে পানি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে কায়াসা।এসেই সে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।বমিট করার কারণে অনেকটা ক্লান্ত লাগছে তার,তাই সে একটু চোখ বন্ধ করে কিন্তু কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়েছে সে নিজেও জানেনা।

অন্যদিকে,

কায়াসার ঘুমন্ত ছবির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কেউ,এই কেউটা হচ্ছে কায়াসার সেই পাগল প্রেমিক সুতো।

” কি আছে তোমার এই মুখে সুঁই?কেন আমি তোমার প্রতি এতো আসক্ত হয়ে পড়েছি?কেন তোমাকে না দেখে,তোমার কথা না ভাবে আমি এক মুহূর্তও থাকতে পারিনা বলতে পারবে তুমি?”

” এশান স্যার।”

সুতো মানে এশান ফোনটা অফ করে তার সামনের লোকটার দিকে তাকাই।

” কাজ হয়ে গিয়েছে?”

” জ্বি স্যার,আপনার চাওয়া জিনিসটা চলে এসেছে।”

” ওকে,তাহলে জিনিস যেন সেইফভাবে নিজের জায়গায় পৌঁছে যায়।”

” ওকে স্যার।”

লোকটা চলে যায়।এশান আবারো কায়ার ছবি দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
.
.
.
ঘুম থেকে উঠে কায়াসা দেখে অলরেডি সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।সে তাড়াতাড়ি উঠে চুলায় রাতের খাবার রান্নার জন্য দিয়ে দেয়।আজো তার টিউশন মিস হয়ে গেলো।কায়াসা ফোন করে স্টুডেন্টকে বলে দেয় সে আজও আসতে পারবেনা।রান্না শেষ করে ঘরের বাকি কাজগুলো করে টিভি দেখতে বসে কায়াসা।টিভি খুলতেই তার সামনে আবারো পড়ে ওই বিবস্ত খুনের খবর।কায়াসা তাড়াতাড়ি চ্যানেল চেঞ্জ করে একটা কার্টুনের চ্যানেল দেয়।কার্টুন দেখতে দেখতে কায়াসা সেই রক্ত লেখা চিঠি আর খুনের কথা অল্প সময়ের জন্য ভুলে যায়।

রাতে খাবার খেয়ে রুমে এসে শোয়ার প্রস্তুতি নেয় কায়াসা তবে যে যখন বারান্দায় দরজা বন্ধ করতে যাবে তখন তার চোখ পড়ে সেই রক্ত দিয়ে লেখা চিঠিটাতে।এটা দেখে কায়াসার গা ঘুলিয়ে উঠে,যার ফলে সে আবারো ওয়াশরুমে চলে যায় বমিট করার জন্য।অনেকক্ষণ বমিট করে বেরিয়ে আসে কায়াসা।সে একটা লাঠি দিয়ে কাগজটাকে রান্নাঘর পর্যন্ত দিয়ে যায় আর জ্বালিয়ে দেয়।কাগজটা জ্বালানোর পর কায়াসা অনেকটা শান্তি অনুভব করে তবে তার মনের ভয় এখনো কাটেনি।
__________________________________________

রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করছে কায়াসা।তাড়াহুড়ো করে টিউশনে চলে আসার ফলে তার ছাতা আনতে মনে ছিলনা।যার কারণে মাঝরাস্তায় সে বৃষ্টিতে আটকা পড়ে গিয়েছে।কায়াসা অনেক চেষ্টা করছে রিকশা নেওয়া কিন্তু কোন রিক্সাই যাওয়ার জন্য রাজি হচ্ছে না।

” এইযে মিস ইডিয়েট এখানে কি করছো?”

কায়াসা ঘাড় ঘুরিয়ে বাম পাশে তাকিয়ে দেখে একটা কালো রঙের ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিক।আদ্রিককে হঠাৎ করে দেখে ঘাবড়ে যায় কায়াসা।

” এই রাক্ষসটা এখানে কি করছো?আর ইনি এখানে এলেনিই বা কখন?উনি কি কোন ভুত নাকি?হায় আল্লাহ এখন আমার কি হবে?” মনে মনে বলে কায়াসা।

” কি হলো মিস ইডিয়েট?কি করছো এখানে?”

” বৃষ্টি যেহেতু পড়ছে আর দেখতে পাচ্ছেন যে হাতে ছাতা নেই তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন বৃষ্টিতে আটকা পড়েছি।” বিরক্ত নিয়ে বলে কায়াসা।

” আচ্ছা চলো আমি তোমাকে তোমার বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি।”

” না তার দরকার নেই।আমি নিজেই চলে যে পারবো।”

” ওকে তাহলে দাঁড়িয়ে থাকো।”

আদ্রিক রাস্তার অপর পাশে থাকা কালো রঙের গাড়িটাতে উঠে পড়ে।কায়াসা ভাবলেশহীনভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।কিন্তু আদ্রিক চলে যায় না,সে গাড়ি ঘুড়িয়ে আবারো কায়াসার কাছে আছে।

” গাড়িতে উঠো।”

” বললাম তো দরকার নেই।আমি ম্যানেজ করে নেবো।”

” দেখো আমি বেশি কথা বলা পছন্দ করিনা।বাইরে কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্ধকার হয়ে যাবে।এসময় তোমার বাইরে থাকা আমার মতে সেভ না।আমি তোমাকে শেষবারের মতো বলছি গাড়ি বসো।”

” আমি……”

” আমাকে যদি জোর করে তোমাকে গাড়ি তুলতে হয় তাহলে সেটা কিন্তু তোমার জন্য মোটেও ভালো হবেনা।আমার কথা অমান্য করার শাস্তিটা কিন্তু আগেরবারের শাস্তি থেকেও বেশি কঠিন হবে।”খুবই গম্ভীর গলায় কথাগুলো বলে আদ্রিক।আদ্রিকের কথা শুনে ইচ্ছে না থাকার স্বত্তেও কায়াসা গাড়িতে উঠে বসে।কায়াসা গাড়িতে উঠে সিটবেল্ট লাগানোর আগেই আদ্রিক গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দেয়।যার কারণে কায়াসা সিটের সাথে খুব জোরে ধাক্কা খায়,ধাক্কায় খাওয়া ফলে সে মাথার পেছনেও কিছুটা ব্যথা পাই।মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে চোখ-মুখ কুচকে কায়াসা আদ্রিকের দিকে তাকাই।

” এইযে আপনি দেখতে পাননি যে আমি সিট বেল্ট পড়িনি?”

” হ্যাঁ দেখেছি।তো আমি কি করবো?” সামনের দিকে তাকিয়ে উওর দেয় আদ্রিক।

” তো কি করবেন মানে?আপনি গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগে একবার আমাকে বলবেন না।এখন যে আমি মাথায় ব্যথা পেলাম।”

” তো এতে আমার দোষটা কোথায়?তুমি সিট বেল্ট লাগাওনি এটা তোমার দোষ।”

” বেয়াদব লোক।কালো ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার ছেলে।এনাগন্ডার বাচ্চা ডাইনোসর।” বিরবির করে বলে কায়াসা।”

” আমি ডাইনোসর না।তুমি হয়তো ভুলে গিয়েছো ডাইনোসর বর্তমানে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত।আর এনাগন্ডার বাচ্চা ডাইনোসর না এনাগন্ডাই হয়।বাই দ্যা ওয়ে তোমার সাহস তো কম না যে তুমি আমাকে এনাগন্ডার সাথে তুলনা করছো।” কায়াসার দিকে তাকিয়ে রেগে বলে আদ্রিক।

” আল্লাহ এই রাক্ষস কি মনে মনে কথা বললেও শুনে নাকি?” চোখ বড় বড় করে আদ্রিকে দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবে কায়সা। “আবার এটা নাতো এই ভরসন্ধ্যায় ওনার মধ্যে কোন মরা মানুষের আত্মা ঢুকেছে।না…..”

” এতো ভেবোনা।তুমি যেভাবে ঠোঁট নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথাগুলো বলছিলে,আমি এমনিতেই বুঝতে পেরেছি।”

” আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?”

” যদি বলি জিজ্ঞেস করবেনা তাহলে কি তুমি চুপ করে থাকবে?আমার তো মনে হয়না সেটা।”

” বেশি কথা বলেন আপনি।” মুখ ফুসকে বলে ফেলে কায়াসা।

” কি বললে তুমি?আরেকবার বলো তো।আমি না ঠিক করে শুনতে পাইনি।”

” (আ….নেকা।)কিছুনা।গাড়ি থাম।”

” কিন্তু তোমার বাড়ি তো আরেকটু আগে।”

“সমস্যা নেই আমি চলে যেতে পারবো।” গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে বলে কায়াসা।চলে যেতে নিলেও কায়াসা আবারো পেছন ফিরে আসে।”আর লিফট দেওয়ার জন্য নো থ্যাংকস।কারণ আমি নিজ থেকে আসিনি বরং আপনি আমাকে জোর করে নিয়ে এসেছে।” কথাটা বলে মুখ ভেঙিয়ে চলে যায় কায়াসা।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here