সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব -০৩

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ০৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

সকালে নরমালি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ নিচে নেমে আসে কায়াসা।কায়াসা সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে দেখে আদ্রিক একটা কুকুরে খাওয়াচ্ছে।কুকুর দিকে কায়াসা সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে পড়ে।

” এই ইডিয়েট মেয়ে,এদিকে এসো।”

” আমি ইডিয়েট না।আপনি ইডিয়েট।” মুখ ভেঙিয়ে বলে কায়াসা।

” কি বললে?” রাগী ফেইস করে কায়াসার দিকে তাকাই আদ্রিক।তবে কায়াসা সেদিকে পাত্তাই দেয়না।

” আমি বাড়ি যাবো।”

” আমার জন্য একটা ব্ল্যাককফি করে নিয়ে এসো।” কায়াসার কথা না শুনে বলে আদ্রিক।

” আপনাকে কি বলেছি শুনতে পাননি?”

” আমি কি বলেছি সেটা তুমি শুনতে পাওনি?”

” আমি কি আপনার চাকর নাকি বিয়ে করা বউ যে এভাবে হুকুম দিচ্ছেন?পারবোনা আমি।দরকার হলে নিজে বানিয়ে খেয়ে নিন।”

” মনে হচ্ছে কারো এই বাড়িতে থাকার অনেক ইচ্ছে আছে।সমস্যা নেই আমি আমার কুকির সাথে তাকে রাখবো।কি কুকি তোমার রুম শেয়ার করবে তো?আরে আমার কুকি।”

” যাচ্ছি যাচ্ছি।”(বেডা রাক্ষস,এনাগন্ডার বাচ্চা ডাইনোসর,আজ তোর কফি খাওয়ার শক আমি জন্মের মতো মিটিয়ে দেবো।—মনে মনে)

ধপধপ করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে রান্নাঘরে চলে যায় কায়াসা।কায়াসার বিরবির করা দেখে মুচকি হাসে আদ্রিক।

কিছুক্ষণ পর কফি করে এসে ধপ করে টি-টেবিলে রাখে কায়াসা।তবে অনেক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও আদ্রিক মগটা তুলে নেয় না।সে নিজের মতো কুকি নামের কুকুরটার সাথে খেলতে ব্যস্ত।কায়াসা কপাল কুচকে আদ্রিকের কান্ড দেখছে।

” কি হলো কফি এনেছি,খাচ্ছেন না কেন?”

” কোথাই আমি তো দেখতেই পাইনি।”

” এতো বড় মগটা আপনার চোখে পড়ছেনা।”

” যতক্ষণ না মগ আমার হাতে আসছে আমি তো মগ দেখি না।”আদ্রিক চোখের ইশারায় মগটা তার হাতে দিতে বলে।কায়াসাও মুখ বাঁকা করে গরম মগটা একদম আদ্রিকের হাতের তালুতে রেখে যায়।

” এবার তাড়াতাড়ি কফিটা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন জনাব।”

” এতো মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলছো।কফিতে কিছু মেশাওনি তো?”

” না জনাব কিছু মেশাইনি।আপনি খেয়ে দেখুন।”

” এই ইডিয়েট মেয়ে সত্যি করে বলোতো কি মিশিয়েছো?আমি যদি উল্টাপাল্টা কিছু দেখি তো আজ আবারো কুকির সাথে বন্ধ করে রাখবো।”

” ধুর বাবা বললাম তো কিছু মেশাইনি।এবার চুপচাপ খানতো না হলে ফেলেদিন।যা ইচ্ছে করুন আই ডোন্ট কেয়ার বাট আমি বাড়ি যাবো।”

আদ্রিকের ভ্রু-কুচকে কফির মগে চুমুক দেয়,না সব ঠিক আছে।

” ব্রেকফার্স্ট করে নাও।তারপর তোমাকে তোমার বাড়ি দিয়ে আসবো।”

কথাটা শোনা মাত্র কায়াসা ডাইনিং টেবিলে বসে পড়ে আর তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে ফেলে।

” চলুন।”

কায়াসার এক্সাইটমেন্ট দেখে আদ্রিক একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়।আদ্রিক গাড়ি নিয়ে আসলে কায়াসা দৌড়া গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে।কায়াসা রাস্তা বলে দেয় আর আদ্রিক সেই অনুযায়ী কায়াসার বাড়িতে চলে আসে।

বাড়ির কাছে আসতেই গাড়ির দরজা খুলে দৌড়ে নিজের ফ্ল্যাটের কাছে চলে আসে কায়াসা।সে একবারের জন্যও আদ্রিকের দিকে ফিরে তাকাইনি।কায়াসাকে এতো লাফাজাফি করতে দেখে বিরক্ততে আদ্রিকের কপাল কুচকে যায়।

বাড়িতে এসে প্রথমে তাড়াতাড়ি একগ্লাস পানি খাই কায়াসা।

” আ…..এতোক্ষণে ওই রাক্ষসপুরী আর ওই শান্ত রাক্ষসটার থেকে মুক্তি পেলাম।আ….আব্বু কি শান্তি।”

কায়াসা প্রথমে নিজে ফোনটা সার্জে দেয় তারপর কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

রাতে,

” কি আম্মু,আব্বু ভুলে গেলে বুঝি?”

” আরে আব্বু তুমি এসব কি বলছো?তোমাকে কি আমি কখনো ভুলতে পারি বলো?”

” তাহলে সেই যে দু’দিন আগে ফোন দিলে এরপর তো আর ফোনই দাওনি।”

” আব্বু তোমাকে আমি কেমন করে বলি তোমার মেয়ে একটা রাক্ষসের রাক্ষসপুরীতে ছিলি এই দুইদিন।ফোন ছিলনা তার কাছে,তাহলে কিভাব৷ ফোন করতো সে?” (মনে মনে)

” কি হলো আম্মু কিছু বলো।”

” আসলে আব্বু আমার ফোনের চার্জ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।আজই চার্জার আনলাম।(মিথ্যা বলার জন্য সরি আব্বু– মনে মনে)”

” আচ্ছা আম্মু তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে।আর ঘুমানোর আগে দরজা জানালাম ভালো করে চেক করবে।”

” আচ্ছা আব্বু,তুমিও সাবধানে থেকো।”

কায়াসা ফোন কেটে রান্নাঘরে চলে যায়।কায়াসার এই পৃথিবীতে শুধু তার আব্বুই আছে।কায়াসা যখন ছোট ছিল তখনই নাকি তার আম্মু মারা যায়।কায়াসা কখনো তার আম্মুকে দেখেনি,সে ওনার সম্পর্কে যা শুনেছেন সব ওর আব্বু আর ফুফির থেকেই শুনেছে।এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া পরেই কায়াসা ঢাকায় চলে এসেছিল।কলেজে থাকাকালীন সে একটা হোস্টেলে ছিল।কিছুদিন আগেই সে ডাক্তারির পরীক্ষা দিয়েছে।পরীক্ষাটা দেওয়া পরেই কায়াসা হোস্টেল ছেড়ে একটা ফ্ল্যাটে ওঠে।বর্তমানে ফ্ল্যাটে কায়াসা একাই থাকে।

পরেরদিন সকালে,

দুপুরের খাবার চুলায় দিয়ে টুকটাক কাজ শেষ করে নেয় কায়াসা।ভাতের পাত্রটা চুলায় দিয়ে টিভি ছাড়ে সে।চ্যানেল চেঞ্জ করতে করতে হঠাৎ করেই একটা চ্যানেলে চোখ আটকে যায় কায়াসার।টিভির সাইড বড় করে দিয়ে সে শুনতে থাকে রিপোর্টার কি বলছে।

” শহরের পাশে একটা নিজর্ন নদীর পাশে পাওয়া গিয়েছে দুজন যুবকের লাশ।সেইসাথে তাদের থেকে কিছুটা দূরে পাওয়া গিয়েছে গুরুতর আহত আরেকজন যুবকে।মৃত দুই যুবকের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কিছু ভাঙা মদের বোতল।পুলিশ আসা করছেন নেশাগ্রস্ত হওয়ার কারণেই তারা একজন আরেকজনকে মেরে ফেলেছে।তবে এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না আসলে তাদের মৃত্যু কিভাবে হয়েছে।এই হচ্ছে সেই তিনজন যুবক।পরবর্তীতে আরো কিছু জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।….”

কায়াসা টিভিটা বন্ধ করে ধপ করে সোফায় বসে পড়ে।কায়াসা চোখ বন্ধ করে কিছু চিন্তা করতে থাকে আর কিছুক্ষণ পরেই চট করে চোখ খুলে ফেলে।সে তিনটা ছেলেকেই চিনতে পেরেছে।এরাই সে ছেলেগুলোর মধ্যে তিনজন যারা তার সাথে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করেছিল।আকাশ-পাতাল সবকিছু ভাবছে তখন কায়াসার নাকে কিছু পুড়ে যাওয়া গন্ধ আসে।গন্ধ আসতেই কায়াসা দৌড়ে রান্নাঘরে চলে যায় তবে এবারো খালি হাতেই পাত্রটা ধরতে গিয়ে হাতে গরম আঁচ লাগে।কায়াসা তাড়াতাড়ি হাতটা সরিয়ে নেয় আর পানিতে ভিজিয়ে রাখে।হঠাৎ করেই কিছু একটা মনে পড়ে কায়াসার।

কায়াসা সোফায় এসে বসে আর মাথায় হাত দিয়ে কিছু চিন্তা করতে থাকে।একসময় কায়াসা উঠে নিজের রুমে চলে যায় আর রেডি এসে কোথাও বেরিয়ে যায়।

আদ্রিকের বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কায়াসা ভাবছে সে ভিতরে যাবে কি যাবে।অনেক ভেবেচিন্তে যে ভিতরে ঢুকে পড়ে।বেল দেওয়ার পর একটা মেয়ে এসে দরজা খুলে দেয়,মেয়েটার পড়নে সাদা আর কালোর মিশ্রণে একটা ড্রেস।

” মিস্টার আদ্রিক আছেন?”

” জ্বি ম্যাডাম স্যার আছেন।আপনি ভেতরে এসে বসুন।”

কায়াসা ভেতরে ঢুকে সোফায় বসে।

” আপনি বসুন ম্যাডাম।আমি স্যারকে ডেকে আনছি।”

কায়াসা আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়।

” বাহ্ আজ মিস ইডিয়েট নিজেই আমার বাড়িতে এসে হাজির হয়ে দেখছি।আমার বাড়িটা পছন্দ হয়েছে বুঝি?মিস করছিলে নাকি আমার এতো সুন্দর বাড়িটাকে?” উপর থেকে নামতে নামতে বলে আদ্রিক।আদ্রিকের পেছন পেছন তার কুকি নামের কুকুরটাও আসে।আদ্রিককে দেখে কায়াসা দাঁড়িয়ে পড়ে।

” আরে আরে দাঁড়াতে হবেনা।বসো বসো।”

কায়াসা এটা ওটা না বলে সরাসরি আদ্রিককে জিজ্ঞেস করে,” ছেলেগুলো কি আপনি মেরেছেন?”

” কি ছেলে?”

” সত্যিই কি জানে না?নাকি না জানার ভান করছেন?”

” আরে তুমি আমাকে বুঝি বলেইনা আমি বুঝতে পারবো।”

” টিভির রিমোট কোথায়?”

আদ্রিক টিভির রিমোট খুঁজে কায়াসার হাতে দেয়।কায়াসা তাড়াতাড়ি টিভি ছেড়ে নিউজ চ্যানেল দেয়।

” এবার বুঝতে পেরেছেন?এবার বলুন ছেলেগুলোকে কি আপনি মেরেছেন?”

” আমার কি আর কোন কাজ নেই নাকি?আমি কেন মারবো?আর ছেলেগুলো কে?তোমার পরিচিত কেউ নাকি?” ডোন্ট কেয়ার ভাবে নিয়ে কুকির মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে আদ্রিক।

” থ্যাংকস ফর ইউর ইনফর্মেশন।আর বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।”

” ব্রেকফার্স্ট করে যাও।”

” নো থ্যাংকস।”

” আচ্ছা তাহলে দাঁড়াও আমি তোমাকে তোমার বাড়ি পর্যন্ত ড্রপ করে দিচ্ছি।”

” না তারও দরকার নেই,আমি নিজেই চলে যেতে পারবো।”

রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কায়াসা চিন্তা করতে থাকে ছেলেগুলো কে বা কারা মেরেছে।এটা কি আসলেই কোইন্সিডেন্স নাকি অন্যকিছু বুঝতেই পারছেনা কায়াসা।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here