সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব -০৬

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ০৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

প্রিয় সুঁই,

কেমন আছো তুমি?আশা করি হয়তো তোমার ভালো ঘুম হয়েছে।কিন্তু তুমি কি জানো যে তুমি কারো নির্ঘুম রাতের কারণ হতে পারো?তুমি তো খুব শান্তিতে ঘুমাও কিন্তু আমি যে তা পারিনা।চোখ বন্ধ করলেই তোমার কথা মনে পড়ে।আচ্ছা সেসব বাদ দাও অভিনন্দন তোমাকে।তুমি তোমার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে আরো একধাপ এগিয়ে গিয়েছো।আমি আশাকরি তুমি তোমার স্বপ্ন পূরণের বাকি ধাপগুলোও পেরিয়ে তোমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।আর তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।অপেক্ষা করো খুব তাড়াতাড়িই সেটা পাবে।

ইতি
সুঁইয়ের সুতো

সকাল সকাল এরকম একটা চিঠি পড়ে কায়াসার মাথা গরম হয়ে যায়।সে চিঠিটা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।

” পুরান পাগলে ভাত পায়না আবার নতুন পাগলের আমদানি।যতসব ফাউল বেটা।”

রাস্তায় পাশে দাঁড়িয়ে রিকশার অপেক্ষা করছে কায়াসা।সে আজ তার কলেজে যাচ্ছে ভর্তি সম্পর্কিত কোন কাজে।কিন্তু রাস্তায় এসে সে একটাও খালি রিকশা পাচ্ছেনা।বিরক্ত নিয়ে কায়াসা হাঁটতে শুরু করে।কায়াসা হাঁটছে তখনি একটা সাদা রঙের গাড়ি এসে তার পাশে দাঁড়ায়।হঠাৎ গাড়ি দাঁড়ানোতে ভয় পেয়ে কায়াসা দূরে সরে যায়।

” আরে কায়াসা যে।কোথায় যাচ্ছো?”

” আরে ইফাদ ভাইয়া তুমি।এইতো কলেজ যাচ্ছিলাম।একটু কাজ ছিল।”

” এতো তাহলে আমি তোমাকে ড্রপ করে দিচ্ছি।”

” আরে না না ভাইয়া তোমার এতো কষ্ট করতে হবেনা।আমি চলে যেতে পারবো।”

” আরে আসোতো।কিসের কষ্ট?তুমি আর ইতি আমার কাছে সমান।তো?এসো বসো।”

ইফাদ গাড়ির দরজা খুলে দেয়,কায়াসাও আর কোন কথা না বলে গাড়িতে বসে পড়ে।

সন্ধ্যাবেলা,

বই পড়ছে কায়াসা,তখনি তার কাছে কারোর ফোন আসে।কায়াসা ফোনটা তুলে দেখে ইতি ফোন করেছে।

” হ্যাঁ ইতি বল।”

” কায়ু তুই প্লিজ তাড়াতাড়ি “……” এই হসপিটালে চলে আয়।”

” হঠাৎ হসপিটালে কেন?”

” কায়ু ইফাদ ভাইয়ের খুব বড় এক্সিডেন্ট হয়ে গিয়েছে।”

” কি বলিস?কখন হয়েছে এসব?আমাকে তো সকালেই ভাইয়া কলেজে ড্রপ করে দিলো।”

” আমি কিছু জানি নারে।ভাইয়া অনেক ব্লাড লস হয়ে গিয়েছে।তোর আর ভাইয়ার ব্লাড গ্রুপতো একিই তাইনা।প্লিজ তুই তাড়াতাড়ি হসপিটালে চলে আয় বোন।প্লিজ আমার ভাইয়াকে বাঁচা।” কান্না করতে করতে বলে ইতি।

” ইতু তুই প্লিজ শান্ত হ।আমি আসছি এখুনি আসছি।তুই চিন্তা করিস না।ভাইয়ার কিছু হবেনা।”

কায়াসা পার্স আর মোবাইলটা নিয়ে তাড়াতাড়ি হসপিটালের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে।

অন্যদিকে,

” আমি ছাড়া অন্যকোন ছেলের সাথে ঘোরাফেরার করার শাস্তি এটাই।ওকে তো দিলাম কিন্তু এখনো তোমার শাস্তিটা বাকি আছে।” টিভির স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বলে কথাগুলো বলে এশান।স্ক্রিনে কায়াসার বাসার ড্রয়ংরুম,রান্নাঘর,বেলকনিসহ বেডরুমে ছাড়া প্রত্যেকটা জায়গার চিত্র শোভা পাচ্ছে এশানের সামনে টিভিটাতে।

এদিকে,

হসপিটালে এসে রিসেপশন থেকে ইফাদের রুমটা জেনে নেয় কায়াসা।রুমের সামনে এসে কায়াসা দেখে চিন্তিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে ইতির বাবা-মা আর ইতি।কায়াসাকে দেখে ইতি দৌড়ে তার কাছে আসে।

” কায়ু,এসেছিস তুই।”

” ইফাদ ভাই কেমন আছে এখন?”

” মোটেও ভালো নেইরে।অনেক কাঁচ গেঁথে গিয়েছে ভাইয়া শরীরে।অনেক রক্তক্ষর হয়েছে।”

” তুই আমাকে নিয়ে চল আমি রক্ত দেবো।”

ইতি কায়াসাকে নিয়ে নার্সের কাছে যায়।নার্স প্রথমে কায়াসার ব্লাড টেস্ট করাই।যখন দেখে তার সবকিছু ঠিক আছে তখন নার্স কায়াসা থেকে রক্ত নিয়ে ইফাদকে দেয়।

রক্ত দিয়ে কিছুক্ষণ আগেই বেরিয়ে এসেছে কায়াসা।এই প্রথম সে রক্ত দিয়েছে।কায়াসা এখন বসে আছে সেই ডাক্তারের কেবিনের সামনে যার আন্ডারে ইফাদের ট্রিটমেন্ট চলছে।দরজায় লাগানো নেইম-প্লেটটাতে থাকান নামটা পড়ে কায়াসা। “আদ্রিক আহসান” আদ্রিক নামটা দেখে কায়াসা চমকে উঠে।

” আদ্রিক!এটা আবার ওই রাক্ষস আদ্রিকটা নয়তো?না না উনি কেমন করে হবেন।ধুর আদ্রিক কি শুধু ওনার নাম আছে নাকি?আরো কতজনের নাম আছে।হায়….মাথাটা এতো কেন যে ঘুরছে।”

দেয়ালে মাথা লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে কায়াসা।ইতি এতোক্ষণ তারপাশেই ছিল।নার্স ডেকেছে তাই সে নার্সের সাথে চলে গিয়েছে।

” এই নিন ম্যাডাম,এই ডাবের জলটা খেয়ে নিন।”

কায়াসা চোখ খুলে দেখে তার সামনে সাদা এপ্রোন পড়া,মুখে মাস্ক লাগানো আর গলায় স্টেথোস্কোপ ঝোলানো একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে লোকটা ডাক্তার।প্রথমে কায়াসা ভাবে ইনি ওকে কেন ডাবের জল দিচ্ছে?কিন্তু পরেভাবে হয়তো এই হসপিটালে রক্ত দিলে তাদের সবাইকে দেওয়া হয়।এটা ভেবে কায়াসা ডাবের জলটা নিয়ে নেয়।অনেকক্ষণ ধরে কায়াসার পিপাসা পেয়েছিল তাই সে ডাবের জলটা খেয়ে নিজের পিপাসা মিটিয়ে নেয়।

ডাক্তারটা কায়াসার পাশে বসে।ডাক্তারকে বসতে দেখে কায়াসা কিছুটা হেজিটেশন ফিল করে আর কিছুটা দূরে সরে যায়।

” তা হঠাৎ এখানে কি মনে করে মিস ইডিয়েট?”

” (ইডিয়েট?এটা কেন যেন শোনা শোনা মনে হচ্ছে।আরে এটা তো আমাকে ওই রাক্ষসটা বললো।তারমানে উনি…..।)আপনি কে বলুন তো?আপনি আপনার ওই কিডনি বিক্রিকরা আদ্রিক নন তো?”

ডাক্তারটা মাস্ক খুলে ফেলে।ডাক্তারের মুখ দেখে কায়াসা থ।আরে এটা তো সেই রাক্ষস আদ্রিক।

” কি মনে হয় এবার?”

” আপনি!আপনি ডাক্তার?আপনি ডাক্তার?রিয়েলি?” কায়াসা বিশ্বাসই করতেই পারছেনা যে আদ্রিক একজন ডাক্তার।

” আমারই কেবিনের সামনে বসে আমাকেই জিজ্ঞেস করছো আমি ডাক্তার কিনা।ওয়াও সো নাইস।”

” এটা আপনার কেবিনের?” সামনে থাকা কেবিনটাতে ইশারা করে প্রশ্ন করে কায়াসা।

” আমি তো এদিন জানতাম এটা আমারিই কেবিন।”

” তার মানে আপনিই ডাক্তার আদ্রিক আহসান?”

” জ্বি ম্যাডাম।”

” ও মাই গড।আপনি ডাক্তার এটা আমার কেন জানিনা বিশ্বাস হচ্ছে না।আপনার মতো একজন অর্গান ব্যবসায়ী কি করে ডাক্তার হতে পারে?হাউ?”

” তোমার সাথে কথা বলার থেকে গাধার সাথে কথা বলা আমার মতে বেশি বেটার।তুমি বসে বসে চিন্তা করতে থাকো আমি কিভাবে ডাক্তার হলাম।আমার অনেক কাজ আছে।আর শোন বাড়িতে গিয়ে কিছুক্ষণ ঘুমাবে।প্রথমবার রক্ত দিয়েছো একটু সাবধানে থাকবে।”

কথাগুলো বলে আদ্রিক চলে যায় কিন্তু কায়াসার মাথায় এখনো এটাই চলছে আদ্রিক কিভাবে ডাক্তার হতে পারে।হঠাৎ করে কায়াসার মাথায় আদ্রিকের বলা শেষ কথাগুলো আসে।

” কি আমার সাথে কথা বলার থেকে গাধার সাথে কথা বলা বেটার।আমাকে গাধার সাথে তুলনা করছেন উনি?হাউ ডেয়ার হি?আমি গাধা হলে উনি কি?উনি তো রাক্ষস,এনাগন্ডার বাচ্চা ডাইনোসর।”

রাতে,

কায়াসার পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে এশান।সে জানে কায়াসার ঘুম খুব গভীর।তাই তো সে নির্ভয়ে কায়াসার পাশে বসে আছে।এশান একদৃষ্টিতে কায়াসার বাম হাতে দিকে তাকিয়ে আছে।

” তুমি খুব বড় হয়ে গেছো সুঁই যে আজ কাউকে রক্ত দিলে।কিন্তু যাকে রক্ত দিলে তাকে তো আমিই মারেছি।তাহলে আমার মারার তো কোন লাভই হলোনা।সুঁই তোমার শাস্তির খাতায় কিন্তু আরো একটা শাস্তি পাওয়া যোগ হলো।”

পরেরদিন সকালে,

রক্ত দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই কায়াসা বাড়িতে চলে এসেছিল।সকালে ইতি ফোন করে জানিয়েছে ইফাদের নাকি জ্ঞান ফিরেছে।তাই বাড়িতে সব কাজ শেষ করে কায়াসা হসপিটালে চলে আসে।

” কেমন আছো ভাইয়া?”

” আরে কায়াসা,এসো বসো।আগে বলো তোমার শরীর কেমন আছে?শুনলাম তুমিই নাকি আমাকে রক্ত দিয়েছো।কোন সমস্যা হচ্ছে নাতো?আর তুমি পিচ্চি মেয়ে কেন আমাকে রক্ত দিতে গেলে বলোতো?”

” ভাইয়া ভাইয়া শান্ত হও।আমি ঠিক আছি আর আমার শরীরও ঠিক আছে।আর আমি মোটেও পিচ্চি না ১৮ বছর আমার বয়স।”

” বাহ্ বাহ্ ছোট কায়াসা দেখি অনেক বড় হয়ে গিয়েছে।”

” হুম অনেক আগে।সেসব বাদ দাও এখন এটা বলো এসব কিভাবে কি?আমি তো জানি যে তুমি খুব সাবধানে গাড়ি চালাও তাহলে কি করে এসব?”

” জানিনারে।আমি তো সাবধানেই চালাচ্ছিলাম কিন্তু কোথা থেকে হঠাৎ করে একটা ট্রাক এসে ধাক্কা দিয়ে দিলো।”

” হুম বুঝতে পেরেছি।আচ্ছা চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে।তুমি রেস্ট নাও আমি আজ আসছি।ইতি তুইও টেনশন নিসনা আর আঙ্কেল আন্টির খেয়াল রাখিস।”

” হুম সাবধানে যাস।”

লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে লিফটের আসার অপেক্ষা করছে কায়াসা।অবশেষে অনেকটা সময় পর লিফট আসে।কায়াসা তাড়াতাড়ি লিফটে উঠে যায় কিন্তু যখন লিফটের দরজা বন্ধ হতে যাবে তখন কেউ হাত দিয়ে দরজা বন্ধ হওয়া থেকে আটকিয়ে দেয়।এতে কায়াসা ব্যক্তিটার উপর প্রচুর বিরক্ত হয়।লিফটের দরজা খুলে গেলে ব্যক্তিটা তাড়াতাড়ি লিফটে ঢুকে পড়ে।কায়াসা নিজের পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তিটাকে দেখে আরো বিরক্ত হয় কারণ তার পাশে আদ্রিক দাঁড়িয়ে আছে।কায়াসা কিছু বলেনা,আদ্রিকও আগ বাড়িয়ে কোন কিছু বলেনা কায়াসাকে।সে ফোন বের করে ফোনে কিছু করতে থাকে।

লিফট এসে থামে গ্রাউন্ড ফ্লোরে।কায়াসা তাড়াতাড়ি লিফট থেকে বেরিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে থাকে।

” এইযে মিস ইডিয়েট।”

কায়াসা জানে একটা আদ্রিক তাই সে বিরক্ত নিয়ে পেছনে তাকাই।তারপর একটা নিশ্বাস নিয়ে গটগট করে আদ্রিকের সামনে এসে দাঁড়ায়।

” এই কি মিস ইডিয়ট?হ্যাঁ কিসের মিস ইডিয়েট?শুনুন আমার একটা সুন্দর নাম আছে নিশাত জাহান কায়াসা।নাম ধরে ডাকতে পারলে ডাকবেন নয়তো ডাকবেন না।যাকেই দেখিনা কেন সে নিজের ইচ্ছে মতো নামে ডাকে।কেউ ডাকে ইডিয়েট তো কেউ সু…….” কায়াসা এতক্ষণে খেয়াল হয় সে কি বলতে কি বলে ফেলেছে।

” সু…… কি?”

” কিছু না।আপনাকে যেটা বলছি সেটা শুনুন।আমার নাম ধরে ডাকবেন।বুঝতে পেরেছেন?”

” জ্বি ম্যাডাম বুঝতে পেরেছি বাট আই এম নট ইন্টারেস্ট মিস ইডিয়েট।”

” আপনি…..”

” বাইরে পরিস্থিতি এখন ভালোনা তো সাবধানে থাকবে।আর অপরিচিতদের সাথে বেশি মিশবেনা।কেউ কিছু দিলে অনেক ভেবেচিন্তে খাবে।বুঝতে পেরেছো?”

” আমি জানি বলতে হবেনা।এই আপনি না আমার অপরিচিত তাহলে আমি আপনার সাথে কথা বলছি কেন?”

” আমি ছাড়া বুঝতে পেরেছো?আর আমার সাথে বেশি পাকনামি করলে না কুকির সাথে তোমার ফ্রী টুর হয়ে যাবে।গুড বাই।” কথাগুলো বলে এটিটিউট নিয়ে আদ্রিক চলে যায়।এদিকে কায়াসা আদ্রিকের বলা কথাগুলোই ভাবছে।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here