সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব -০৭

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ০৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

এখান প্রায় মধ্যরাত।চারিদিক নিরব,শুনশান।সবাই আপন নীড়ে ফিরে গিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে।

ঘন জঙ্গলের মাঝে দেখা যাচ্ছে একটা বাড়ি।তার মধ্যে থেকে হালকা হালকা আলো বেরিয়ে আসছে।বাড়িটার একটা ঘরে চিৎকার করছে দু’জন ছেলে।
দুজনেরই হাত পা বাঁধা।তারা গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করছে তবে তাদের চিৎকারে কারো কিছু যায় আসছেনা।
ছেলে দুটো নিজেদের মধ্যে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করছে তাদের এখানে কেন নিয়ে আসা হয়েছে।তখন দরজা খুলে ঘরটাতে প্রবেশ করে কেউ।এই কেউটা আর কেউ নয় বরং এশান।উপর থেকে নিচ পর্যন্ত কালো কাপড়ে আবৃত সে।মাথায় ক্যাপ যেটা দিয়ে সে নিজের চেহারা ঢেকে রেখেছে।এশান এসে ছেলে দুটোর সামনে বসে।

” এই কেরে তুই?তুই জানিস আমরা কারা?”

” ভালোই ভালোই ছেড়ে দে আমাদের।নয়তো তোর লাশও খুঁজে পাওয়া যাবেনা।”

” লাশ তো তোদের খুঁজে পাওয়া যাবেনা।” কথাটা বলে উঠে দাঁড়ায় এশান।তা আস্তে আস্তে হেঁটে সাইডে রাখা টেবিলটার কাছে যায়।তারপর একটা বক্স খুলে তার থেকে একটা প্লাস বের আনে।

” তোরা অনেক মেয়ের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলিস।অনেক মেয়ের দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকিয়েছিস,অনেক মেয়েকে নিজের নোংরা হাতে স্পর্শ করেছিস,আরো অনেক খারাপ কাজ করেছিস তোরা।কিন্তু দুঃখ আইন তোদের প্রমাণের অভাবে শাস্তি দিতে পারেনি তাই তোরা এতোদিনেও বেঁচে আছিস।কিন্তু আমি এতো সবকিছু করবোনা।আমার না লাগবে কোন প্রমাণ আর না প্রয়োজন কোন সাক্ষীর।আমি তোদের আমার স্টাইলে শাস্তি দেবো।” কথাগুলো বলতে বলতে এশান ছেলেগুলো সামনে এসে দাঁড়ায়। ” তোরা আমার নজরে না পড়লে হয়তো আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতি।কিন্তু তোরা আমার জানের দিকে চোখ দিয়ে অনেক বড় ভুল করেছিস।তাই তো তোরা আমার নজরে পড়লি।আর আমার নজরে যারা পড়ে তাদের আমি এতো সহজে ছাড়িনা।”

” কি করবি আমাদের?কিছু করতে পারিনা তুই আমাদের।”

” ও রিয়েলি?হা….হা….হা…..তোরা হয়তো ভুলে গিয়েছিস কিছুদিন আগে তোদের তিন বন্ধুর বিভৎস লাশ পাওয়া গিয়েছিল।জানিস ওদের কে মেরেছে?তাহলে শোন ওদের এতো সুন্দর করে আমি মেরেছি।এবার তোদের পালা।অনেকদিন বেঁচে নিয়েছিস তোরা।এবার তোদের কষ্ট পাওয়ার পালা।”

এশান প্লাসটা নিয়ে একটা ছেলেদের সামনে দাঁড়ায়।

” তুই তোর এই হাত দিয়ে আমার জানকে ধরেছিলেন না?” এটা বলে একটা ভয়ংকর হাসি দেয় এশান।তার হাসি শুনে ছেলে দুটোর গায়ে কাটা দিয়ে উঠে।এশান প্লাসটা আস্তে আস্তে ছেলেটার হাতের কাছে আনে।

” এখান আমি তোর সব নক তুলে ফেলবো।” এটা বলেই এশান প্লাস দিয়ে ছেলেটা একটা নক তুলে ফেলে।ব্যথায় ছেলেটা চিৎকার দিয়ে উঠে।ছেলেটার চিৎকার শুনে এশান আরো আনন্দ পাই।সে হাসতে হাসতে ছেলেটার বাম হাতের সবগুলো নক তুলে ফেলে।রক্তে ছেলেটার হাতটা পুরো ভিজে গিয়েছে।তার হাত থেকে টপটপ করে রক্ত নিচেও গড়িয়েছে পড়ছে।ছেলেটার এই অবস্থা দেখে অন্যছেলেটাও ভয় পেয়ে যায়।

” কি খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি?এই রকমই কষ্ট সেইসব মেয়েদেরও হয় যখন তোরা তাদের ধর্ষণ করিস,তাদের বাজে কথা বলিস,হ্যারাজ করিস।না না এরকম কষ্ট না এরথেকেও হাজার গুণ বেরিয়ে কষ্ট হয় তাদের।” কথাগুলো বলতে বলতে এশান ছেলেটা অন্যহাতের নকগুলোও তুলে ফেলে।এদিকে ব্যথায় ছেলেটা অনেক আগেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।এশান এবার অন্যছেলার দিকে তাকাই।

” তুই ভয় পাসনা তোকে এরকম কিছু করবোনা বরং আরো বেশি টর্চার করবো।”

এবার এশান একটা গরম সিক নিয়ে আসে।সে ছেলেটা জামাকাপড় সব ছিড়ে ফেলে।তারপর সেই গরম সিকটা ছেলেটা হাত,পা,পিঠ,গাল সব জায়গায় লাগিয়ে দেয়।আঁচ লেগেছে ছেলেটার বিভিন্ন জায়গা পুড়ে যেতে থাকে
ব্যথায় ছেলেটা চিৎকার করতে থাকে কিন্তু এতো যেন এশান আরো আনন্দ পাচ্ছে।অনেক্ষণ ধরে এশান এটা করতে থাকে কিন্তু যখন দেখে ছেলেটা অজ্ঞান হচ্ছে না তখন এশান কিছুটা অবাক হয়।সে সিকটা সাইডে রেখে ছেলেটার সামনে এসে বসে।

” বাহ্ বেটা তোর তো দেখি গায়ে অনেক এনার্জি আছে।এতো ছেঁকা খেয়েও তুই অজ্ঞান হলেনিনা।ও আচ্ছা তার মানে তুই আরো বেশি কিছু চাস।ওকে জাস্ট এ মিনিট।”

এবার এশান লবণ,মরিচ গুড়ো আর পেঁয়াজের রস মিশিয়ে নিয়ে আসে আর ছেলেটার পুড়ে যাওয়া জায়গাটাগুলোতে লাগাতে থাকে।যন্ত্রণা ছেলেটা ছটপট করছে কিন্তু এশানে সেদিকে কোন মাথাব্যথা নেই।সে নিজের মতো কাজ করেই যাচ্ছে।এরসময় জ্বালা সহ্য করতে না পেরে ছেলেটাও অজ্ঞান হয়ে যায়।

চোখে পানি দিয়ে ছেলে দুটোর জ্ঞান ফেরা এশান।

” পানি….পানি….”

” ও…..আপনি খাবেন স্যার?ওকে….”

এশান বোতলটা ছেলে দুটোর সামনে নিয়ে যায় তবে তাদের খেতে না দিয়ে নিজে খেয়ে নেয় পানিটা।

” কি খুব কষ্ট হচ্ছে না পানি না পেয়ে?এবার বুঝতে পেরেছিস একফোঁটা পানির মূল্য কত?তোরা ওই অসহায় মেয়েগুলোকে ধর্ষণ করার পর তাদেরকেও এভাবে পানি না দিয়ে কষ্ট দিতিস।তখন তারাও এভাবেই একফোঁটা পানির জন্য চটফট করতো।”

এবার এশান একটা ছুড়ি নিয়ে যে ছেলেটার নক সে তুলে ফেলেছিস তার সামনে আসে।তারপর ছুরিটা দিয়ে আস্তে আস্তে তবে খুব গভীরভাবে ছেলেটার গায়ে ছুরি চালাতে থাকে এশান।ছেলেটার হাত আবারো রক্তে ভরে গেলো,ছেলেটা অসহ্য রকমের ব্যথায় চিৎকার করেই চলেছে।এবার এশান আরেকটা ছেলেটার কাছে যায় এবং ছুরি দিয়ে তার গায়ের চামড়া তুলতে শুরু করে।এই ছেলেটাও ব্যথায় চিৎকার করে কান্না করতে থাকে কিন্তু তাদের চিৎকার শুনে এশান আরো পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করছে।

পরেরদিন সকালে,

চুলায় ভাত বসিয়ে সবকাজ গুছিয়ে টিভি ছাড়ে কায়াসা।সে বসে বসে চ্যানেল চেঞ্জ করছে তখন তারপর ডোরবেল বাজে।কায়াসা রিমোট রেখে দরজা খুলে কিন্তু দরজা খুলে কাউকে সে দেখতে পাইনা।কায়াসা যখন দরজা বন্ধ করতে যাবে তখন তার চোখ পড়ে দরজার সামনের পাপোসটাতে একটা খাম রাখ।কায়াসা খামটা উঠিয়ে উল্টো পাল্টে দেখে।তারপর সিঁড়ি দিয়ে নিচে উঁকি মেরে দেখে কেউ আছে কিনা কিন্তু না সে কাউকে দেখতে পাইনা।তাই কায়াসা হাজারো চিন্তা ভাবনা করতে করতে খামটা নিয়ে ঘরে চলে আসে।কায়াসা যখন খামটা খুলতে যাবে তখন টিভিতে থেকে আসা শব্দগুলো তার কানে আসে।সে তাড়াতাড়ি টিভির দিকে তাকিয়ে।

” আজ শহরের বাইরে একটা নিজর্ন জায়গায় পাওয়া গিয়েছে আরো দুটো লাশ।লাশের অবস্থা খুবই খারাপ।তাদের চোখ তুলে নেওয়া হয়েছে।সেইসাথে হাতের নক এবং শরীরের কয়েকটা জায়গা থেকে চামড়া তুলে নেওয়া হয়েছে।এছাড়াও ভারী কিছু দিয়ে তাদের পুরুষাঙ্গ থেতলে দেওয়া হয়েছে।কেউ জানেনা এরা কিভাবে মারা গিয়েছে কিন্তু খুনের ধরণ দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা খুন এবং তাদের খুব টর্চার করে মারা হয়েছে।”

এতটুকু খবর শুনে কায়াসার জান যায় যায় অবস্থা।ফ্যান চলছে তাও সে ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছে।কায়াসা এবার কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছে খামটা কে দিয়েছে আর তার ভিতর কি থাকতে পারে।কায়াসা কাঁপা কাঁপা হাতে খামটা খুলে চিঠিটা বের করে।কায়াসা ভয়ে আছে না জানি এবারো রক্ত দিয়ে লিখেছে।কায়াসা একচোখ বন্ধ করে চিঠিটা আস্তে আস্তে খুলে।না এবারের লেখা কালো খালি দিয়ে লেখা,এটা দেখে কায়াসা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।তারপর সে চিঠিটা পড়তে শুরু করে।

প্রিয় সুঁই,

কেমন আছো তুমি সুঁই?আশা করি ভালোই আছি।আজ অনেক দিন পর তোমাকে চিঠি লিখলাম।মিস করেছিলে আমাকে?জানি করোনি,তুমি তো আমিটাকে মনে না করলেই বাঁচো।কিন্তু আমি তো তা হতে দেবোনা।আমি প্রতিনিয়ত আমিটাতে তোমায় মনে করিয়ে দেবো।

আমি জানি তুমি এতোক্ষণে টিভিতে নিউজ শুনে নিয়েছো আর তুমি ঠিকই ধরেছে ওদের আমি মেরেছি।কিন্তু কেন মেরেছি তা এখন না পড়ে কোন দিন সময় হয়ে বলবো।জানো ওদের যখন কষ্ট দিচ্ছিলাম তখন ওরা চিৎকার করে কান্না করছিল কিন্তু জানো ওদের চিৎকার শুনে আমার অনেক আনন্দ লাগছিল।আচ্ছা আজ আর কিছু লিখবোনা।তবে তুমি সাবধানে থেকে আর অন্যছেলেদের সাথে মিশবেনা আর যদি আমার কথা না শোন তাহলে তো জানোই কি হতে পারে।না না ভয় পেওনা তোমাকে আমি মারবোনা কিন্তু যার সাথে তুমি ঘোরাফেরা করবে তার খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।তাই সাবধানে থেকো।

চিঠিটা এখানেই শেষ।চিঠিতে পড়ে কায়াসার গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে যায়।আগের বারের চিঠির মতো এবারের চিঠিতেও একদম নিচে কিছু লেখা আছে।কায়াসা এবার সেটা পড়ে।

” সুঁই তুমি জানো আমি এই চিঠি কি দিয়ে লিখেছি?তুমি কি ভেবেছিলে আমি একটা কলম দিয়ে লিখেছে?হাহাহা….না সুঁই এটা আমি লিখেছি ওইদুটো ছেলের হাতের নক দিয়ে।” এরপর কয়েকটা লাল ফোঁটা।কায়াসার বুঝতে অসুবিধে হলোনা যে এই লাল রঙের ফোঁটাগুলো আসলে রক্তের।চিঠিটা পড়ে কায়াসার বমি পাচ্ছে।সে চিঠি নিচে ছুঁড়ে মেরে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

চলবে…….

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here