চরিত্রহীনা পর্ব ৪

‘চরিত্রহীনা’ পর্ব-৪
.
লেখক : Mahian Khan
.
আগের তিন পর্বের লিঙ্ক কমেন্টে দেওয়া হবে।
.
জাভেদ বাসা থেকে চলে গেল। ছেলেটার মুখে হাসিটা বেশ স্পষ্ট । টাকাগুলো পেয়ে তিন্নির খুশির কোনো সীমা নেই। কিন্তু তবুও বেশ শোকাহত মনে হচ্ছে তিন্নিকে। হয়ত একাকিত্ব ভাললাগে না।
.
– আরো একটা রাত আমাকে একা কাটাতে হবে। কে জানে এরকম আরো কত রাত এভাবে কাটাতে হবে? কিন্তু একা শব্দটা কি ঠিক? আমার সাথে তো আরো একটা জীবন আছে। আমি তো ভুল করেছি আমিতো আমার ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছি কিন্তু তবুও তিনি এতটা রেগে আছে কেন আমার উপর? আমি কী এতটা খারাপ? আজকে ভাড়ার টাকাটা কোনোরকম পেয়েছি হয়ত এক মাস কেটে যাবে কিন্তু তারপর? ঘরে মাত্র ১৫০০-১৬০০ টাকা আছে কীভাবে কাটবে আমার জীবন? যদি আমি একা হতাম তাহলে হয়ত যেকোনো ভাবে কাটিয়ে দেওয়া যেত কিন্তু আমার সাথে তো আরেকটা জীবন জড়িত।
.
নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসাহয় মনেহয় তিন্নির। সিগারেট টানতে বেশ ইচ্ছা করে । দির্ঘ দিনের অভ্যাস আজকে প্রায় ২-৩ দিন সিগারেট স্পর্শ করেনি, আজকে সিগারেটের প্রচুর টান উঠেছে। কিন্তু চোখ যায় নিজের পেটের দিকে। পেটে হাত বুলাতে থাকে।
.
– নাহ! সিগারেট দরকার নেই।
.
কি অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য ! নিজের পেটে হাত বুলাতে বুলাতে প্রায় কেদে দেয় তিন্নি।
.
– নাহ! আমি একা না আমার সাথে তো আমার বেস্টফ্রেন্ড আছে।
.
বেশ অদ্ভুত দৃশ্য! একটা এত অল্পবয়স্ক মেয়ের পক্ষে এরকম ভয়ানক সময়ে এরকম ভাবাটা কীভাবে সম্ভব? হয়ত কথাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিন্নির মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসেছে। নাহ! স্বয়ংক্রিয়ভাবে না হয়ত কোনো অকৃত্রিম ভালোবাসার টানে কথাগুলো বলেছে। হয়ত নিজের মাতৃত্বের মূল্য তিন্নি বেশ ভালোভাবেই বোঝে। হয়ত নিজের পেটে থাকা সেই অঙ্গ একজন তরুণীকে নারীতে রুপান্তর করে।
.
নিজের দু:খ, ভয়কে ভুলে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে তিন্নি।
.
– নাহ! আমি একা না।
.
(১২)
.
সারারাত বারবার সেই মেয়েটার কথা জাভেদের মাথায় ভাসে যার ফলে রাতে খুব একটা ঘুম হয়নি।
ঘুম হয়নি তাই বলে এখন চোখে কোনো ঘুম নেই। এখনো মাথায় তিন্নির চেহারাটা ঘুরপাক খাচ্ছে।
.
– কত কষ্ট করতে হচ্ছে মেয়েটাকে। মেয়েটার ভবিষ্যৎ কি? পরিবারের কাছেই তো যেতে পারে, এরকম কষ্ট করে থাকার কী কোনো মানে হয়? বাবা মায়ের সাথে সামান্য এই টিনেজ প্রেম নিয়ে রাগ করার কোনো মানে হয়?
.
.
– স্যার
.
– হু?
.
– কিছু ভাবতেছেন স্যার?
.
– না। তোর অঙ্ক করা শেষ হইসে?
.
– না, অল্পকিছু বাকি আছে।
.
-তাড়াতাড়ি কর।
.
– স্যার, আজকে আপনাকে বেশ অন্যমনস্ক মনেহচ্ছে।
.
– কিছু না একটু টেনশনে আছি।
.
– টেনশন না কোনো মেয়ের উপর ক্রাশ?
.
– মাইর খাওয়ার ইচ্ছা আছে? ৩-৪ টা অঙ্ক দিসি আধা ঘন্টা বইস্যা করতে পারে নায় । উনি ক্রাশ নিয়া কথা কয়। মাইর‍্যা চামড়া উঠাইয়্যা দিমু ব্যাটা।
.
বেশ ভয়ের সাথে ছেলেটা অঙ্ক করতে ব্যস্ত হয়ে যায়।
.
– ক্লাস সিক্সে পড়ে ছেলে ক্রাশ নিয়া কথা বলে। আল্লাহ আমি বাইচ্যা আছি কেন?
.
.
স্টুডেন্টদের অঙ্ক বুঝানো আর অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করা কোনোটাই একে অপরের চেয়ে কম কঠিন না। জাভেদের মাথা ঘুরতে থাকে। আকাশে রোদের পরিমাণ অস্বাভাবিক। হাটতে ভাললাগে না বাধ্য হয়ে চায়ের দোকানের ছাউনিতে আশ্রয় নিতে হয়।
.
এক কাপ চা আর হাতে একটা সিগারেট নিয়ে বেশ মহাসুখে সিগারেট টানতে থাকে।
.
– মামা চা জোস হইসে!
.
অসাধারণ এক কাপ চা পান করে উঠে দাড়ায় জাভেদ। সিগারেট টানা এখনো বাকি তাই সিগারেটের বাকি অংশটুকু বেশ মনদিয়ে টানতে থাকে।
.
চায়ের দোকান থেকে একটু দূরে রাস্তার ওপার চোখ যেতেই তিন্নিকে দেখে হাতে একটা সুন্দর নিল রঙের ছাতা। ছাতা হাতে মেয়েটাকে একেবারে ছোট বাচ্চা মনেহয়। সিগারেটটা তারাহুড়া করে নিচে ফেলে দেয়।
.
– তিন্নি কি আদৌ আমাকে এই অবস্থায় খেয়াল করেছে? যদি খেয়াল করে কী মনে করবে?
.
তিন্নি একা সাথে কেউ নেই।
.
– এই দুপুরে কেউ রাস্তায় কি কারণে একা হাটতে পারে? জিজ্ঞেস করব না মাইন্ড করবে? ধুর চইল্যা যাইতেছে এর চেয়ে জিজ্ঞেস করি।
.
জাভেদ বেশ দ্রুত দৌড়ে রাস্তাটা পার করে। আহারে! মেয়েটা চলে না যায়।
.
– এই যে ম্যাডাম, এই যে।
.
– আপনি! কেমন আছেন?
.
– এইতো ভালো আছি। এই দুপুরে একা একা হাটতেছেন, কোনো কারণ?
.
– কেন কারণ ছাড়া কী হাটা যায় না?
.
মেয়েটার উত্তর প্রায় সময় একটু বাকা প্রকৃতির।
.
– না এমনি জিজ্ঞেস করলাম। এই রোদে কি কেউ ঘর থেকে বের হয়? তাই জিজ্ঞেস করলাম।
.
– এক বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলাম। রোদ লাগবে কেন? হাতে ছাতা আছে না?
.
– জ্বী আছে, এমনিতেই কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
.
– ঠিক আছে কিন্তু আপনি দুপুরে এখানে কী করেন?
.
– এক স্টুডেন্টের বাসায় এসেছিলাম আর কিছু না।
.
– ওহ! সামনে যাবেন নাকি?
.
– জ্বী ঐ রাস্তা দিয়েই যাব।
.
– চলুন তাহলে।
.
– আপনার শরীর তো প্রায় সময় খারাপ থাকে, তারপরও রোদে বের হলেন?
.
– ছাতা হাতে আছে, দেখতে পান না?
.
– পেয়েছি কিন্তু তবুও যে গরম পড়েছে, আল্লাহ!
.
– বাবা জ্বালাচ্ছেন কেন?
.
– সরি ঠান্ডা হন আপনি অল্পতে রাগ হয়ে যান কেন?
.
– ঠিক আছে সরি। বললাম তো সেদিন, ইদানিং আর কিছু ভাললাগে না।
.
– আচ্ছা ঠিক আছে, কিছু বলব না।
.
– রাগ করলেন নাকি? বলুন অসুবিধা নেই।
.
– না বরং চুপ থাকি। চুপচাপ আপনার বান্ধবীর বাসা পর্যন্ত যাই।
.
– আচ্ছা বাবা সরি। ঠিক আছে পার্কে যাবেন?
.
– এই দুপুরে! আর তাছাড়া বান্ধবীর বাসায় যাবেন না?
.
– নাহ! ইচ্ছা করে না। আর বারবার দুপুর দুপুর! রোদ, রোদ কেন করতেছেন?
.
– আচ্ছা সরি।
.
– ঠিক আছে কিন্তু হেটে যাবেন না রিক্সায়?
.
– এই রোদে কেউ এতদূর হেটে যাবে?
.
তিন্নির মুখ থেকে ‘রোদ’ শব্দটা শুনে জাভেদের চোখ কপালে ওঠে। থাক এই রোদ নিয়ে আর বিতর্কে জড়াতে চায় না।
.
– এই যে রিক্সা যাবেন?
.
ছাতাটা বন্ধ করে বন্ধ করে গুছিয়ে নেয়। তিন্নির ছাতা গুছিয়ে নেওয়ার দৃশ্য জাভেদ বেশ মনযোগ দিয়ে খেয়াল করে।
.
– ছাতা হাতেই মেয়েটাকে বেশী সুন্দর দেখাত।
.
– মামা কোথায় যাবেন?
.
হঠাৎ অন্যমনস্ক জাভেদ রিক্সাওয়ালার কথা শুনে চমকে ওঠে।
.
– এই তো একটু সামনে যাব।
.
– তিন্নি, আপনি আগে ওঠেন।
.
বেশ দ্রুত তিন্নি রিক্সায় ওঠে।
.
– মেয়েটা কি অদ্ভুত চঞ্চল!
.
– কি ব্যাপার ওঠেন না কেন?
.
– উঠতেছি।
.
জাভেদের এখনো নিজ চোখে বিশ্বাস হয় না। এই পরির মত সুন্দরি আর ফরিঙের মত চঞ্চল একটা মেয়ের সাথে সে রিক্সায় উঠেছে। এটা কী বাস্তব না স্বপ্ন?
.
– একটা জিনিস উত্তর দেন তো।
.
– কি?
.
– আপনি ২ মিনিট পর পর এরকম অন্যমনস্ক হয়ে যান কেন? এত কিসের চিন্তা করেন?
.
– কৈ? না তো !
.
– তাহলে আমার চোখে ডিস্টার্ব?
.
– এত রেগে যান কেন, সবকিছুতে?
.
– বারবার এক উত্তর দিতে ভাললাগে না।
.
এই রোদে বেশ জোরালো বাতাস বয়ে যেতে থাকে। তিন্নির লম্বা চুলগুলো বাতাসে উড়তে থাকে। চুলগুলো জাভেদের মুখ ছুয়ে যায়। কি অদ্ভুত গন্ধ তিন্নির চুলের! যেকোন মানুষকে বেহুঁশ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
.
– নাহ! এটা স্বপ্ন না, স্বর্গ।
.
(চলবে…..)
.
(পর্ব ছোট করার জন্য দু:খিত।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here