চরিত্রহীনা পর্ব ২

‘চরিত্রহীনা’ পর্ব-২
.
লেখক : Mahian Khan
.
আগের পর্ব : কমেন্টে লিঙ্ক দেওয়া হবে
.
নিজের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে খুব একটা কষ্ট হয় না তিন্নির। এতদিন সমাজে অসভ্য হিশেবে পরিচিত থাকলেও এখন নি:সন্দেহে তিন্নি একজন চরিত্রহীনা। পৃথিবীতে হয়ত এর চেয়ে ভয়াবহ অপরাধ তিন্নির পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। সমাজ হয়ত একজন খুনিকে মেনে নিতে পারবে কিন্তু তিন্নিকে কিভাবে মেনে নিবে? তিন্নির চোখের পানিগুলো বেশ উত্তপ্ত। চোখের পানিগুলো চোখ থেকে নেমে তিন্নির নরম গালকে যখন স্পর্শ করে তার নরম গাল যেন পুড়ে ওঠে। তিন্নির অস্থির মন পাগলের মত শুধু রনিকে খোজে। একবার শুধু রনিকে জোরে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রেখে চিৎকার দিয়ে কাদতে চায় তিন্নি। রনির উপর তার অগাধ বিশ্বাস। রনি তাকে কথা দিয়েছিল বিয়ে করার, পুরো জীবন তিন্নির হাতে হাত রেখে পথ চলার আশ্বাস দিয়েছে, আজকে প্রায় দেড় বছর, রনি নামক মানুষটা তার বেচে থাকার কারণ। এত সহজে তাকে অবিশ্বাস করা তিন্নির পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু প্রবল আতঙ্ক তিন্নিকে গ্রাস করতে থাকে। ৫০-৬০ বার রনিকে ফোন দিয়েছে কিন্তু রনির মোবাইলটা এখনো বন্ধ। হাতের মোবাইলাটা জোরে ছুড়ে মারে। হয়ত ভেঙে গিয়েছে, মোবাইলের জন্য সামান্য কষ্ট অনুভব হয় না, একবার মোবাইলটা তুলেও দেখে না। নিজের মনের সব রাগ, অভিমান নিরীহ মোবাইলকে অত্যাচারের মাধ্যমে একটু কমাতে চায়। কিন্তু কোনোভাবে তা কমে না।
.
– আমি কোথায় যাব? হে আল্লাহ আমাকে মাফ করে দেও। আর কষ্ট দিও না আমাকে একবার রনিকে ফিরিয়ে দাও। আমার উপর দয়া কর। আমি কি করব?
.
হয়ত সৃষ্টিকর্তা এখন তার একমাত্র বন্ধু। এই বন্ধুর কাছে সাহায্য চাওয়া ব্যতীত কোনো উপায় নেই তিন্নির।
.
মোবাইলটা এখনো নিচে পড়ে আছে, মোবাইলের প্রতি কোনো মায়া নেই তিন্নির, কিন্তু রনিকে ফোন দেওয়ার জন্য আবার ছটফট করতে থাকে তার মন। বাধ্য হয়ে মোবাইলটা আবার হাতে নেয়।
.
ঝামেলা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে মোবাইলের স্ক্রিন বাজে ভাবে ভেঙে গিয়েছে। মোবাইলকে কোনোভাবে আর অন করা যাচ্ছে না। নিজেকে গালি দিতে থাকে তিন্নি। এরকম অসহ্য সময় তার জীবণে কখনো তাকে কাটাতে হয়নি। মনের আতঙ্কগুলো আরো শক্তিশালী হতে থাকে। আতঙ্কগুলো যেন তাকে চারদিক থেকে ঘিরে আক্রমণের প্রস্ততি নিতে থাকে কিন্তু তবু বিশ্বাসের মশাল নিয়ে লড়াই চালাতে থাকে তিন্নি। যদিও এই যুদ্ধের ফলাফল তার অজানা।
.
(৬)
.
রোদে জাভেদের শরীর প্রায় পুড়ে গিয়েছে। সকাল থেকে ২-৩ জায়গায় টিউশনি করানো হয়েছে, দুপুরের কড়া রোদ আর সহ্য হয় না। শেষমেশ রিক্সা করতে বাধ্য হল। বাসায় গিয়ে আবার দুপুরের ভাত রান্না করতে হবে। এত কষ্ট আর সহ্য হয় না জাভেদের।
.
– মা কত ভালো ছিল! দুপুরে পড়া শেষ করে আরামে যখন সোফায় শুয়ে টিভি দেখতাম, দিন দুনিয়ার কোনো হুশ থাকত না। সময় মত মা চা খেতে ডাক দিত। চা খাওয়া শেষ হলে ২-৩ ঘন্টা পর আবার সময় হলে ভাতের জন্য ডাকত, আহারে মা! আর এক বার যদি যেতে পারতাম তোমার কাছে, আজকে কত দিন!
.
এর মধ্যে রিক্সা বাসার সামনে চলে এসেছে। তারাহুড়া করে রিক্সা থেকে নেমে যায়। মানিব্যাগের মধ্যে থেকে রিক্সা ভাড়াটা বের করতে গিয়ে অদ্ভুত এক কন্ঠ শুনতে পায় জাভেদ।
.
– এই রিক্সা যাবে।
.
কন্ঠটা অদ্ভুত সুন্দর। এরকম অদ্ভুত নারী কন্ঠ জাভেদ খুব কম শুনেছে। বাধ্য হয়েই পিছনে ফিরে তাকায়।
.
গতকালকে যে সুন্দরি মেয়েকে দেখেছিল তার প্রেমিকের সাথে, সেই সুন্দরি মেয়েটা। কিন্তু আজকে মেয়েটাকে কেমন জানি ভিন্ন মনেহয়। গতকালের মত চঞ্চলতা আর আনন্দ আজকে তার মধ্যে নেই, কেন জানি বেশ কাহিল আর শোকাহত মনেহচ্ছে মেয়েটাকে। চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা দীর্ঘ সময় কান্নাকাটি করেছে।
.
– কী ভাই টাকাটা দিবেন না।
.
– ওহ! সরি ভাই। এই আপনার টাকাটা নেন।
.
মেয়েটার সামনে বেশ লজ্জা পায় জাভেদ। মেয়েটার চেহারা আর মানসিক অবস্থা বিশ্লেষণ করতে করতে কিছুক্ষণ যেন বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিল। তারাহুড়া করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। তালাটা খুলে বাসার ভিতরে ঢুকে ফ্যান ছেড়ে শার্ট খুলে সোফায় শুয়ে পড়ে। সারা সকাল কষ্টের পর সোফায় শুয়ে যেন স্বর্গীয় সুখ অনুভব করে জাভেদ। কিন্তু মাথা থেকে এখনো সেই সুন্দরি মেয়ের চিন্তা নামেনি।
.
– মেয়েটা এরকম শোকাহত ছিল কেন? হয়ত বয়ফ্রেন্ডের সাথে বাজাবাজি হয়েছে আর কি! হয়ত বয়ফ্রেন্ড আবার মাফ চেয়ে, পা ধরে আবার মেয়েটার মুখে হাসি আনবে। ধুর জীবনে কোনো মেয়ের মুখে হাসি আনার যোগ্যতা হল না, কাঁদানোর যোগ্যতাও হল না।
.
সোফা থেকে আবার উঠে দাড়ায়, সব চিন্তা, স্বর্গীয় সুখ সব কিছুকে গুলি মেরে রান্নার জন্য প্রস্ততি নিতে থাকে। যদিও শরীর বেশ কাহিল, কাজ করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই জাভেদের,কিন্তু পেটের ক্ষুধার কাছে পরাজিত, বাধ্য হয়েই রান্নাঘরে যেতে হয়।
.
(৭)
.
প্রায় ২ ঘন্টা ধরে তানিয়ার বাসায় বসে আছে তিন্নি। তানিয়া বাইরে কোথায় জানি গিয়েছে। শুধুমাত্র রনিকে একবার ফোন করার উদ্দেশ্যে এরকম ধৈর্য ধরে বসে আছে। তিন্নির আবার মাথাব্যাথা শুরু হয়। এত কষ্ট আর সহ্য হয়না তিন্নির। হঠাৎ তার জীবন এরকম অদ্ভুত ভাবে পরিবর্তন হল কিভাবে? এই প্রশ্ন তিন্নির মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে।
.
– কী এমন পাপ করলাম আমি? ও আল্লাহ আর কষ্ট দিয়ো না। আমাকে ক্ষমা কর।
.
এর মধ্যে তানিয়া দরজাটা খুলে ভিতরে ঢোকে। তিন্নিকে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে তানিয়া।
.
– তুই কেমন আছ দোস্ত?
.
– এইতো আছি।
.
– কী ব্যাপার শরীর খারাপ?
.
– না, একটু মাথাব্যাথা। দোস্ত একটু হেল্প করতে পারবি?
.
– কি হেল্প?
.
– তোর মোবাইলটা একটু দে প্লিজ।
.
– কেন?
.
– আমার মোবাইলটা ভেঙে গিয়েছে। প্লিজ একটু দে। ইমার্জেন্সি একটু লাগবে।
.
– ইমার্জেন্সি না রনি?
.
-ইয়ার্কি করিস না। একটু দে প্লিজ।
.
-আচ্ছা নে।
.
হাতে কিছু জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে যায় তানিয়া। হয়ত পোষাক পরিবর্তন করবে।
.
প্রচুর আশা নিয়েই মোবাইলটা হাতে নেয়। নাম্বারটা লিখতে বেশ ভয় হয়। কী ফলাফল হবে তা অজানা। কিন্তু মনে প্রবল আশা, রনি ফোনটা ধরবে, ফোনটা ধরে তিন্নির কান্নার শব্দ শুনে অস্থির হয়ে উঠবে আর অস্থির হয়ে ফিরে আসবে তিন্নির কাছে। নাম্বারটা বেশ দ্রুত লিখে ফেলে কিন্তু কল দিতে বেশ ভয় হয়। কিন্তু নিজের ভয়কে মনের প্রবল বিশ্বাসের কাছে হার মানিয়ে শেষ পর্যন্ত কল বাটনে চাপ দেয়।
.
বেশ আশা নিয়ে কলটা দিয়েছিল তিন্নি কিন্তু আবারো নারীকন্ঠে সেই একই কথা শুনতে পায়,
.
“দ্যা নাম্বার ইউ আর ট্রাইং ইজ কারেন্টলি আনরিচাবল। ”
.
এই কন্ঠের উপর তার প্রবল ঘৃণা হয়ে যায়। হয়ত এই নারীকে সামনে পেলে তাকে খুন করে ফেলত। প্রবল প্রত্যাশা নিয়ে আরো ২-৩ বার ফোন দেয় রনির নাম্বারে কিন্তু ফলাফল একই। রাগে ফোন ভেঙেচুড়ে ফেলতে ইচ্ছা করে তিন্নির কিন্তু হয়ত নিজের বান্ধবীর ফোন বলেই নিজেকে সংযত রাখে।
.
তানিয়া বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে।
.
– মোবাইল নে।
.
– এর মধ্যে তোর কথা বলা শেষ?
.
– হুম শেষ।
.
– এই কয় মিনিটে কী এমন ইম্পর্টেন্ট কথা বললি?
.
– ধুর! মোবাইলটা নিবি নাকি?
.
তিন্নির আচরণে অদ্ভুত পরিবর্তন দেখে বেশ অবাক হয়ে যায় তানিয়া। তিন্নির দিকে বেশ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মোবাইলটা হাতে নেয়।
.
– আচ্ছা তোর কী হইসে বলবি?
.
– কিছু না।
.
– তোর মন কী খারাপ? কোনো সমস্যা হয়েছে?
.
– আরে বাবা! বললাম তো না।
.
– এরকম রাগ হয়ে যাও কেন? আমি তো তোকে রাগের কিছু বলি নাই।
.
– ওকে সরি।
.
তিন্নির মন যে বেশ খারাপ তা বুঝতে তানিয়ার খুব একটা সময় লাগে না। তাই অযথা তিন্নিকে আর বিরক্ত করে না।
.
– আজকে রাতে খাবার খেয়ে যাবি?
.
তিন্নির আগুনে পুড়ে যাওয়া মন যেন হালকা মৃদু বাতাসের স্পর্শ পেল তানিয়ার কথা শুনে। এখন বাসায় যেতে তিন্নির সামান্য ইচ্ছাও নেই। হয়ত বাসায় একা থাকতে তিন্নির ভয় লাগে। কোনো ভুতের ভয় না, বরং নিজেকেই ভয় লাগে, নিজের মস্তিষ্কের মধ্যে উদ্ভট সব চিন্তাগুলোকে ভয় লাগে,নিজের ভয়াবহ অপরাধের কথা মনে পড়লে ভয় লাগে। এখানে থাকলে যে এই চিন্তাগুলো থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবে তা না। কিন্তু অন্তত পক্ষে নিজের বান্ধবীর কাছে থেকে মনটা হালকা ভালো থাকবে। মাথাব্যাথা আরো সাংঘাতিক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু ব্যাথাগুলোকে নিজের মধ্যে চেপে রাখে। নিজের কষ্ট প্রকাশ করতে চায় না। হয়ত, নিজের কষ্ট প্রকাশ করে অন্যকে দুশ্চিন্তায় রাখতে চায় না। বরং নিজের অপরাধের শাস্তি নিজেই ভোগ করতে চায়।
.
(৮)
.
রাত প্রায় সোয়া দশটার মত বাজে, বেশ ধীর গতিতে হাতে সিগারেট নিয়ে হাটতে থাকে জাভেদ। আজকের মত তার ছুটি, বাসা গিয়ে ভাত রান্নার টেনশন নাই। এক স্টুডেন্টের বাসায় এমনিতে পোলাও-মাংস খেয়ে এসেছে। পেটে আর কিছু ঢুকানোর মত জায়গা নেই। তাই, বেশ নিশ্চিন্তে মনের সুখে সিগারেট টানতে টানতে বাসার দিকে যেতে থাকে যদিও বাসা স্টুডেন্টের বাসা থেকে খুব একটা দূরে না তাই একেবারে ধীর গতিতে হাটলেও সর্বোচ্চ ১৫ মিনিটের বেশি সময় লাগবে না। সিগারেট শেষ হয়ে গিয়েছে, সিগারেটের শেষ অংশটুকু ডাস্টবিনে ফেলে হাটতে থাকে। বাসার একেবারে কাছে এসে গেছে, নতুন বাসায় এমনিতে উদ্ভট আইন, রাত পৌনে এগারটার মধ্যে দদরজা আটকানো হবে। আগের বাসায় সাড়ে এগারটায়ও দরজা আটকানো হত না।
.
গেট আটকিয়ে দেওয়ার ভয় নেই, তাই বেশ নিশ্চিন্তে এবং বীরদর্পে গেটের ভিতর ঢোকে জাভেদ, গেট দিয়ে ঢোকা মাত্র ফোনটা বেজে ওঠে, পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে, আতিক ফোন দিয়েছে। যদিও ফোন ধরার আগে ফোন কেটে দিয়েছে। সহজ ভাষায় ‘মিসড কল’
.
– হে হে হালায় ভাবছে কল ব্যাক দিমু। মর শালা,টাকা কি গাছে ধরে!
.
হঠাৎ পিছন থেকে হাটার শব্দ শুনতে পায়। পিছনে ফিরে দেখে, সেই সুন্দরি মেয়েটা। মেয়েটাকে দেখে বেশ অবাক হয়ে যায়। কী অদ্ভুত পরিবর্তন! দেখে যেন চেনা যাচ্ছে না। নাক মুখ সম্পুর্ন শুকিয়ে গিয়েছে, হাটতেও যেন কষ্ট হয়। চোখ প্রায় নিভু নিভু। মেয়েটার এরকম অদ্ভুত অবস্থা দেখে, এক দৃষ্টিতে জাভেদ তাকিয়ে থাকে।
.
সিঁড়ি দিয়ে উঠবার সময় জাভেদ বেশ অদ্ভুত ভাবে লক্ষ্য করে, মেয়েটার গতি খুব কম। প্রতিটা সিঁড়ি এমন ভাবে পার করছে যেন একেকটা সিঁড়ি এক তলা বিল্ডিং এর সমান, শরীরে যেন শক্তি বলে কিছুই নেই মেয়েটার।
.
মেয়েটার এরকম অবস্থা দেখে জাভেদের বেশ করুণা হয়,কিন্তু অযথা মেয়েটাকে ডিস্টার্ব করে না বরং এমন ভান করছে যেন মেয়েটাকে সে খেয়াল করেনি। তারাহুড়া করে উপরে গিয়ে তালা খুলে ফেলে জাভেদ কিন্তু তালা খুলে ভিতরে ঢোকে না,তালাটাকে দড়জার সিটকানির সাথে ঝুলিয়ে রাখে। বরং মেয়েটার অপেক্ষায় থাকে। এখনো উপরে ওঠেনি কী হল মেয়েটার! জাভেদের যখন তাল খুলে প্রায় ২০-৩০ সেকেন্ড অতিবাহিত করা শেষ আর মেয়েটা মাত্র উপরে উঠল। কিন্তু মেয়েটার অবস্থা বেশ গুরুতর। সিঁড়ি থেকে উঠবার সময় যে রকম ছিল তার থেকেও গুরুতর। মেয়েটা যেন সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।জাভেদ সব কিছু খেয়াল করা সত্ত্বেও এমন ভাবে অভিনয় করছে যেন সে তালা খোলায় ব্যস্ত।
.
ব্যাগ থেকে চাবিটা বের করতে যাবে এর মধ্যে মেয়েটা যেন শরীরের সব শক্তি হারিয়ে ফেলে আর নিজেকে দাড়া করিয়ে রাখতে পারে না। ঠাস করে পড়ে যায় মাটিতে, ব্যাগটাও হাত থেকে পড়ে যায়। চাবিটাও পড়ে গিয়েছে। মেয়েটার এরকম অবস্থা দেখে দৌড়ে জাভেদ কোনোরকম মেয়েটাকে দাড় করায়। কোনোরকম হাতে ব্যাগ আর চাবিটা নেয়। নিচে শব্দ শোনা যাচ্ছে অবশ্যই কেউ উপরে আসছে। এখন ৬-৭ টা চাবির মধ্যে থেকে চাবি বের করে তালা খুলে মেয়েটাকে বাসায় দিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব। আর কেউ যদি এই অবস্থায় দেখে তাহলে লঙ্কাকাণ্ড হয়ে যাবে। তাই বাধ্য হয়ে মেয়েটাকে নিজের ঘরের মধ্যে নিয়ে আসে। কোনোরকম খাটের উপর শুইয়্যে দিতে সক্ষম হয়। প্রায় কোনো হুশ নেই মেয়েটার। বাধ্য হয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে আসে জাভেদ। মেয়েটার চেহারার দিকে জাভেদের নজর যায় বারবার।
.
কী অদ্ভুত সুন্দরি! কী মায়াবী চেহারা! সারাদিন তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে মেয়েটার দিকে, গ্লাস থেকে হালকা পানি হাতে নিয়ে মেয়েটার মুখে ছিটিয়ে দেয়। হুশ খুব একটা আসেনি হালকা চোখ নড়ে উঠেছে। এবার বাধ্য হয়ে অনেক খানি পানি হাতে নিয়ে মুখে ছিটিয়ে দেয়। এবার মেয়েটার চোখ খুলে গিয়েছে, নাক মুখ পানিতে ভিজে আছে। অদ্ভুত সুন্দরি লাগে মেয়েটাকে। কিন্তু মেয়েটা বেশ দুর্বল,শরীরে কোনো শক্তি অবশিষ্ট নেই। কিন্তু হঠাৎ বিছানার পাশে অন্য একজনকে দেখে বেশ তারাহুড়া করে উঠে বসে।
.
– আস্তে, আস্তে। ভয় পাবেন না। আপনি বাহিরে বেহুশ হয়ে পড়েছিলেন তাই বাধ্য হয়ে ভিতরে নিয়ে এসেছি। আপনাকে বাইরে ওভাবে কেউ পড়ে থাকতে দেখলে ঝামেলা হত তাই ভিতরে নিয়ে আসলাম, গামছাটা নেন।
.
মেয়েটা অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে, জাভেদের দিকে না অন্যকোনো কিছুর দিকে, হয়ত কোনো গভীর চিন্তায় মগ্ন। কোনোরকম গামছাটা নিয়ে মুখটা মুছে চুপচাপ উঠে দাঁড়ালো বিছানা থেকে। জাভেদকে প্রায় কোনো পাত্তা দিল না।
.
– আপনার ব্যাগ আর চাবি।
.
– ধন্যবাদ।
.
মেয়েটার মুখ থেকে ধন্যবাদ শুনে বেশ গর্ববোধ হয় জাভেদের।
.
– যাক মেয়েটা শেষমেশ অল্প হলেও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করল।
.
– বাসায় একা যেতে পারবেন তো?
.
– পারব।
.
হালকা মুচকি হাসি ফুটে ওঠে মেয়েটার মুখে। অদ্ভুত হাসিটা! যেন বেশ কষ্ট করে হাসিটা দিয়েছে। আসলে তার সমগ্র মুখ মন্ডলে শোকের ছাপ স্পষ্ট।
.
– কী সুন্দরি মেয়ে! কী মায়াবী চেহারা কিভাবে কেউ তাকে আঘাত দিতে পারে! কিসের এত কষ্ট মেয়েটার মনের মধ্যে?
.
জাভেদের কৌতূহল বৃদ্ধি পেতেই থাকে
.
– কী কষ্ট করে হাটতে থাকে মেয়েটা?
যদি হাতটা ধরে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসতে পারতাম! কিন্তু সেটা হয়ত অনৈতিক।
.
মেয়েটার দিক থেকে চোখ ফিরানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে থাকে কিন্তু কোনোভাবে ফিরানো সম্ভব না।
.
– আহ! কী অদ্ভুত সুন্দরি। কিন্তু তার নামটা পর্যন্ত আমি জানি না।
.
(চলবে……)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here