#গল্পঃভালোবাসার_রংধনু
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৯
ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই আলেয়া ভানু লাঠিতে ভর দিয়ে নিচে নেমে আসেন।গলা উঁচিয়ে নিহাদের বাবাকে ডাকে।কিন্তু উনারা বাবা ছেলে একজনও বাসায় নেই।এখনো মসজিদ থেকে ফেরেনি।শোভা নামায শেষ করেছে মাত্র।আলেয়া ভানুর চেঁচামেচিতে নিচে নেমে আসলো।উনাকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলল,কি হয়েছে দাদি?
মিসেস সেলিনা আর মিলিও একটুপর নিচে নেমে আসে।
আলেয়া ভানু শোভার হাত ঝাড়া মেরে বলল,দূর হ ছেমড়ি।আমার নাতির মাথা বইসা বইসা গিলা নিছস।দূর হইয়া যা।আমার পোলারে ডাক।ক এহনই আমারে গেরামের বাইত্তে দিয়াইতে।আমি আর এইহানে থাকতামনা।মিসেস সেলিনা আলেয়া ভানুর পাশে বসে গায়ে হাত বুলিয়ে বলে,আম্মা আপনি আর রাগারাগি করবেন।আপনিতো জানেনই আপনার বড় নাতির রাগ বেশি।ও ছোট থাকতে আপনি নিজেইতো বলেছেন পুরুষ মানুষের গোস্সা হবে নাতো কার গোস্সা বেশি হবে?এখন আপনি ভুল বুঝতেছেন কেনো আপনার নাতিকে।
আলেয়া ভানু খেমটি মেরে বললেন,আমার নাতি আমার লগে এরম করতোনা।মিলির দিকে আঙ্গুলের ইশারায় দেখিয়ে বলে,এই ছেড়ির লাইগা আমারে এতগুলান কথা হুনাইছে।
মিলি আলেয়া ভানুর হাত চেপে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল,আমি কি করেছি দাদি?আপনি কেনো আমাকে সবসময় দোষ দেন?আমার সন্তান হচ্ছেনা এটাতো আল্লাহর ইচ্ছা।এখানে আমার দোষটা কোথায় দাদি?আমি চাই সবাই মিলেমিশে সুখে দিন কাটাক।দয়া করে আপনি এখন যাবেননা।
মিলির চোখের পানি দেখে আলেয়া ভানুর মন কিছুটা নরম হলো।উনি মিলির কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে বলল,ঠিকাছে ঠিকাছে আমি যাইতামনা।আসলে উনার নিজেরও এখন যাওয়ার ইচ্ছে নেই।যতই নিজের ছেলের বউ,নাতির বউদেরকে কথা শুনাকনা কেনো?এই তিন নারী যে উনার কোনো যত্নে কমতি রাখেনি,কখনো মুখ খুলে উনার কথার জবাব দেয়নি সেটা উনি ভালোই জানেন।তবুও গ্রামের মানুষ হওয়ায় উনার মাঝে আদি ধ্যান ধারণা রয়ে গেছে।সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বিড়বিড় করে বললেন,এরম কাইন্দা কাইটা আমার নাতিরে হাত করছে।হেইডা কি আমি বুঝিনা?এই আলেয়া ভানুর চুল কি এমনি পাকন ধরছে নাকি?
মিসেস সেলিনা মিলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মুচকি হাসলেন।শোভা রান্নাঘরে চলে গেলো চা বসাতে।চায়ের পানি বসিয়ে পাশ ফিরতেই দেখলো মিলিও রান্নাঘরে এসেছে।
মিলি শোভাকে বলল,তোমাকে একটা কথা বলি শোভা?মনে কিছু নিওনা,তোমাদের জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র তোমাদের।
শোভা মিলির দিকে ফিরে বলল,কি বলবেন ভাবি বলুননা।
একটা লম্বা শ্বাস ফেলে মিলি বলল,এই সংসারে এতবছর আছি।আমি জানি সবাই চায় বাড়িতে একটা ফুটফুটে বাচ্চা আসুক,এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে বেড়াক।কিন্তু আমিতো সবার চাওয়া পূরণ করতে পারিনি।জানিনা কোনোদিন পারবো কিনা?তারপর শোভার হাত চেপে ধরে বলল,তুমিতো পারবে তাইনা?তুমি সবাইকে একটা বাবু উপহার দাওনা।জানো একটা বাচ্চার জন্য আমার মন হাহাকার করে ওঠে।আমি সব করবো বাচ্চার তোমাকে কিছু করতে হবেনা।তুমি শুধু একটা বাচ্চা দাওনাগো!
শোভা অস্বস্তিতে পড়ে যায় মিলির কথায়।কি বলবে বুঝে উঠতে পারেনা।
এদিকে নিহাদরা মসজিদ থেকে ফিরেছে।ওর বাবা ডেকে বলল,আম্মাজানরা আজ কি চা পাবোনা?
দিচ্ছি বাবা বলে শোভা তাড়াতাড়ি হাত চালায়।মিলিও কাপ নিয়ে সামনে রাখে।শোভা চা নিয়ে দিয়ে আসে আহাদ আর তার বাবাকে।নিহাদ এতক্ষণে ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।উনাদেরকে চা দিয়ে শোভা আলেয়া ভানুর জন্য চা নিয়ে গেলো।আলেয়া ভানু ঢুলে ঢুলে জিকির করছেন।শোভা নিয়ে চা দিতেই বলল,এইহানে আইসা চা খাওনের অনেক মজা পাইছি।গেরামে তোমার চাচি শাশুড়ী কি চা বানায় খাইতেই মন চায় না।শোভা হেসে দিয়ে বলল,দাদি তাহলে একেবারে এখানে চলে আসছেননা কেনো?এখন থেকে এখানেই থাকবেন।আমরা চার রমনী মিলে গল্প করবো,আপনাকে এভাবে স্বাদের চা বানিয়ে খাওয়াবো।
আলেয়া ভানু ভ্রু কুচকে বলল,চারখান রমনী কই পাইলা?তোমার শাশুড়ী কি এহন আর রমনী আছে?রমনীতো আমরা তিনজনাই আছি।আলেয়া ভানুর কথায় শোভা ফিক করে হেসে দিলো।আলেয়া ভানু আবার বললেন,হুনো মাইয়া তুমি যে আমারে এইহানে একলগে চইলা আইতে কও?আমি ক্যামনে আমু?আমার সোয়ামি হইলো গিয়ে আমার সব।হের বাড়ি,হের শেষ স্মৃতি রাইখা এইহানে আইলে আমার মন টিকবোনা।গেরামে থাকলে মনে হয় মানুষটা আমার লগেই আছে।আইচ্ছা তুমি যাও তোমার কামে যাও।
শোভা নিচে চলে আসে।সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে শোভা ঘরে আসলো নিহাদকে ডেকে দিতে।আজ থেকে অফিস যেতে হবে।ঘরে ঢুকে দেখলো নিহাদ আগেই উঠেছে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে।খাটের উপর অফিস যাওয়ার জন্য ড্রেস বের করে রেখেছে।হঠাৎ মিলির কথাগুলো মনে পড়তেই শোভা লজ্জায় গুটিয়ে গেলো।নিহাদ শোভার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,তুমি এভাবে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?কিছু বলবা?
শোভা এদিক ওদিক মাথা নাড়িয়ে বলল,নাহ আপনাকে খেতে ডাকতে এসেছি।তারপর দ্রুত পা চালিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।নিহাদের কপালের ভাঁজ আরো গভীর হলো।
সকালের নাস্তা সেরেই নিহাদ ব্যাগ নিতে রুমের দিকে এগোলো।তার আগেই শোভা নিহাদের অফিসের ব্যাগ হাতে নিয়ে নিচে নেমে আসলো।নিহাদ কপাল চাপড়ে বিড়বিড় করে বলল,কোথায় ভেবেছিলাম ব্যাগ আনার নাম করে বউকে রুমে ডেকে একটু চুমু টুমু দিয়ে অফিসে যাবো সেটা আর হলোনা।আমার আশায় একসমুদ্র পানি ঢেলে দিলো এই মেয়ে।
শোভা আগেই এরকম কিছু আন্দাজ করেছে তাই নিজেই ব্যাগ নিয়ে নিচে নেমে আসলো।একয়দিন দেখেছে নিহাদ শোভার কাছাকাছি আসতে চায় কিন্তু শোভার কাছে পাত্তা পায়না।
শোভা দাঁত কেলিয়ে ব্যাগ বাড়িয়ে দিতেই নিহাদ মুখটা পানশে করে ব্যাগ হাতে নিলো।তারপর আড়চোখে শাসিয়ে বুঝালো বাসায় আসি তারপর তোমার খবর আছে।শোভা মুখ ভেংচি কাটলো।
আজ দুপুরে খাবার সময় আলেয়া ভানু আর কোনো ঝামেলা করেননি।চুপচাপ খেয়ে উঠে গেছেন।আসলে উনি বুঝতে পারছেননা কি করবেন।শহরের মেয়েরা ভালো হয়না এই ধারণা থেকে উনি কিছুতেই বের হতে পারছেননা,আবার এদের মাঝে খারাপ কিছুও আবিষ্কার করতে পারছেননা।দোটানায় পড়ে এখন চুপচাপ থাকাটাই শ্রেয় মনে করলেন।
মিলি আর শোভা রান্নাঘরে সব গুছিয়ে মিলির ঘরে বসে দুই জা গল্প করছিলো।
বিকাল চারটায় ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায়।তখন নিহাদের ডিউটি শেষ।বাসায় এসে ঘর ফাঁকা দেখলো।শোভা ঘরে নেই,দুপুরের পর যে মিলির ঘরে গেলো আর আসেনি।নিহাদ ফ্রেশ হয়ে দাদির ঘর চেইক করে মিলির ঘরে গেলো।শোভা আর মিলি বসে হাসাহাসি করছে।নিহাদ শোভাকে ডাকলো কিন্তু শোভা উঠে গেলোনা।নিহাদের প্রচুর রাগ লাগছে।সকালে একবার এই মেয়ে বাজিগরি করলো।এখন আবার উঠে আসছেনা।জেদ করে ঘরে গিয়ে পায়চারি করতে লাগলো।মিলি শোভাকে ঠেলে দিয়ে বলল,যাও ঘরে যাও।নিহাদ রাগ করে আছে যাও।বেচারা অনেকক্ষণ ধরে বউয়ের সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টা করছে।শোভা যেতে চাইলোনা।মিলি হাই তুলে বলল,আমি এখন ঘুমাবো তুমি যাও।শেষমেষ শোভা ঘরের দিকে এগোলো।দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই নিহাদের পায়চারি থেমে গেলো।সোজা বারান্দায় চলে গেলো।ভেবেছিলো শোভা বুঝি ওর রাগ ভাঙাতে আসবে,কিন্তু নাহ শোভা আসলোনা উল্টো ফোন নিয়ে বসে পড়লো।এতে নিহাদের রাগ বেড়ে দশগুন হলো।মেয়েটা ভালো করেই জানে নিহাদ মেয়েটাকে পছন্দ করে ফেলেছে তবুও দূরে দূরে থাকার ধান্দা খোঁজে।নিহাদ আর নিজ থেকে শোভার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবেনা।
রাতের খাবার শেষ হয়ে গেলো নিহাদ একটিবার ও শোভাকে আর ডাকলোনা।তাকিয়েও দেখলোনা।ব্যাপারটায় শোভার খারাপ লাগলো পরোক্ষণে নিজেকেই দোষ দিলো।সে অযথাই বেশি বাড়াবাড়ি করেছে নিহাদের সাথে।রুমে গিয়ে কয়েকবার নিহাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু নিহাদ পাত্তা দেয়নি।অন্যদিন শোভা একপাশে কাত হয়ে ঘুমালেও নিহাদ শোভার দিকেই মুখ করে শুতো কিন্তু আজ নিহাদই অন্যদিকে মুখ করে শুয়েছে আর শোভা নিহাদের দিকে ফিরে।শেষে শোভা নরম সুরে ডাকলো,শুনছেন?আবুল-বাবুলের আব্বা!নিহাদ চুপ করে রইলো।শোভা নিহাদের পিঠে হাত দিয়ে বলল,কথা বলবেন না আপনি?নিহাদ তখনো চুপ।শোভা গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলল,কথা না বললে থাক।আপনি থাকুন আপনার বিছানায় আমি যাচ্ছি বলে বালিশ হাতে নিয়ে নামতে গেলে নিহাদ গমগমে গলায় বলল,কেউ যদি এখন খাট থেকে নামে তবে তার পা কেটে রেখে দেবো আমি।শোভা শুনলোনা পা বাড়াতে গেলেই নিহাদ শোভার হাত চেপে ধরে খাটে ফেলে দিলো।দুইহাত চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,তোমার কিসের এতো রাগ হুঁ?আমার এইটুকু রাগ ভাঙাতে পারোনা উল্টো নিজে রাগ করে বসে আছো।শোভা ঢোক গিলে চোখ বন্ধ করে নেয়।হাতে ব্যথা পেয়ে চোখের কার্ণিশ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।নিহাদের রাগ পানি হয়ে যায়।শোভার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,একদম কাঁদবেনা তুমি।আমি তোমায় মেরেছি?অত্যাচার করি?শোভা মাথা নেড়ে না বোঝায়।
তাহলে কেনো কাঁদছো বলে শোভার কপালে অধর জোড়া ছুঁইয়ে দিয়ে শক্ত করে বুকে আগলে নেয়।শোভাও দুহাতে নিহাদকে আকড়ে ধরে।
————————————————————★
কিছুক্ষণ আগে প্রচন্ড ঝড় তার তান্ডব চালিয়ে ক্ষান্ত হয়।বৃষ্টি হওয়ার পূর্বে আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেলো।তারপরই ধরনির বুক কাঁপিয়ে ঝপঝপিয়ে বৃষ্টি নামে।বৃষ্টি তার তান্ডব চালিয়ে এখন শান্ত হয়ে গেছে।আকাশে রংধনু দেখা দিয়েছে।কি সুন্দর এই রংধনু আকাশকে নানা রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে।শোভা নিহাদের জীবনে আসার পর প্রতিনিয়ত,প্রতিটি মুহূর্ত ওর জীবনকে শোভার ভালোবাসার রংধনু দিয়ে রাঙিয়ে তুলেছে।আজ শনিবার ছিলো তাই আজ আর অফিস যাওয়ার কাজ নেই।তাছাড়া এমন বৃষ্টির দিনে বের হতেও মন চায়না।নিহাদ বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো।শোভা গেছে কফি বানিয়ে আনতে।
নিহাদ আর শোভার সম্পর্ক একটা স্বাভাবিক দম্পতির মতো হয়ে উঠলেও ওদের দুজনের যুদ্ধ থামার নেই।দুজনে কে কখন কাকে কিভাবে প্যাঁচে ফেলবে সেই ফন্দি এঁটে বসে থাকে।মিলি আবারও কনসিভ করেছে।এখন পাঁচমাস চলে।ডাক্তার খুব সাবধানে থাকতে বলেছে।সংসারের সব কাজ এখন বলতে গেলে শোভা একা হাতেই সামলায়।
দুকাপ কফি হাতে নিয়ে বারান্দায় আসলো শোভা।এসে গেছে গরম গরম কফি।নিহাদ বলল,নাও খাওয়া শুরু করো।শোভা একহাতে নিহাদকে এককাপ কফি দিয়ে অন্যকাপে নিজে চুমুক দিয়ে বাইরে দৃষ্টি মেললো।নিহাদ শোভার কাছ থেকে শোভার কাপ কেড়ে নিয়ে ওর কাপ শোভাকে দিলো।পরপরই শোভার কাপে চুমুক দিয়ে পূনরায় শোভাকে তার কাপ ফেরত দিলো।শোভা মুচকি হেসে নিহাদের কাছ থেকে নিজের কাপ নিয়ে চুমুক দিলো।নিহাদ বাঁকা হেসে বলল,খাও এবার তুমিও থুতু খাও শত্রু বউ।শোভা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই নিহাদ বলল,তুমি যে আমার কফির কাপে নিজের থুতু মিশিয়েছো সেটা আমার অজানা নয়।তাই তোমার ট্রিকস আমি কাজে লাগালাম।তুমি আমার কাপে প্রতিদিন থুতু মিশাও আর আমি তোমার কাপে।
শোভা বামহাতে নিহাদকে কিল-থাপ্পড় মেরে পরোক্ষণে হেসে ফেললো।নিহাদ ও শোভার সাথে যোগ দিয়েছে হাসির খেলায়।
———————————————★
কয়েকবছর পর★
নিহাদ অফিস থেকে ফিরে তার প্রিন্সেস নিশিতাকে কোলে নিয়ে আদর করছে।নিশিতা নিহাদ আর শোভার মেয়ে।দু’বছর বয়স নিশিতার।আহাদ আর মিলিরও একটা মেয়ে হয়েছে।সে নিশিতার এক বছরের বড়।নিশিতা ফর্সা হয়নি।অভিকল বাবার মতো হয়েছে।চেহারা গায়ের রং সব নিহাদের মতো হয়েছে।নিহাদ নিশিতাকে চোখে হারায়।কেউ যখন বলে এত মায়া কেনো তোমার এই মেয়ের জন্য?ও তো ফর্সা না কালো।
আজকাল মানুষ শ্যামলা হলেও তাকে কালোই বলে।
যখন সবাই এসব কথা বলে তখন নিহাদ উত্তর দেয়,আমার মেয়ে কালোনা,ও আমার জীবনের রংধনু,আমার জান্নাত।তাছাড়া যে মেয়ে বাবার মতো হয় সে অনেক ভাগ্যবতী হয়।তখন আর লোকে কিছু বলার সুযোগ পায়না।সবাই আহাদ আর নিহাদের মেয়ে দুজনকেই সমানভাবে ভালোবাসে।ওদের সংসারে এখন সুখের জোয়ার।প্রতিটি কানায় কানায় ভালোবাসায় পূর্ণ।আলেয়া ভানু গত হয়েছেন একবছর হলো।
নিহাদ নিশিতাকে আদর করে দিয়ে দোলনায় শুইয়ে দেয়।মিসেস সেলিনা এসে নিশিতাকে নিয়ে গেলেন।বিকাল হলেই উনারা স্বামী স্ত্রী দুই নাতনিকে নিয়ে খেলেন।শোভা নিহাদের জন্য কফি বানিয়ে ঘরে আসার সময় ঝাড়ুর দিকে নজর পড়তেই হেসে ফেলে।ঝাড়ু তুই আমার সংসারের মুল ভিত্তি।এই ঝাড়ুর বাড়ি দিয়েই আমার সংসার শুরু হয়েছে।
নিহাদকে কফি দিয়ে শোভা ছাদ থেকে জামাকাপড় আনতে যাওয়া ধরতেই নিহাদ শোভার কোমর চেপে ধরে বলে,এভাবে পালাই পালাই করো কেনো?
শোভা তাড়া দেখিয়ে বলল,আমি জামাকাপড় আনতে যাচ্ছি সরুন।নিহাদ আকুতি করে বলল,একটা চুমু না দাও প্লিজ!
শোভা নিহাদকে সরিয়ে দিয়ে বলল,চুমু না ঝাড়ুর বাড়ি দেবো।নিহাদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,আচ্ছা তো ঝাড়ুর বাড়িই দাও।শোভা সত্যি সত্যি ঝাড়ু বের করে নিহাদকে এক বাড়ি লাগিয়ে দিলো।নিহাদ দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে।
শোভা সরু চোখে চেয়ে বলল,কি?শিক্ষা হয়নি ঝাড়ুর বাড়ি খেয়ে?সারাদিন চুমু চুমু করেন?
নিহাদ এগোতে এগোতে বলল,ভাবছি ঝাড়ুর বাড়ি যেহেতু খেয়েছি গোসলতো করাই লাগবে তাহলে এক কাজে দুই কাজ…..
শোভা পেছাতে পেছাতে বলল,এই একদম এগিয়ে আসবেননা বলে দিলাম।আপনার মতলব ভালোনা।সামনে আসলে আরেকটা বাড়ি খাবেন।নিহাদ হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে খপ করে শোভার হাত চেপে ধরলো।শোভা ঝাড়ু দিয়ে আরেকটা বাড়ি লাগিয়ে দিলো।
#সমাপ্ত