ভালোবাসার রংধনু পর্ব -০৪

#গল্পঃভালোবাসার_রংধনু
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৪

সকালে নাস্তার পরেই নিহাদ আর শোভা বেরিয়ে পড়ে শোভার বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
গাড়িতে চড়ে দুজনে বসে আছে চুপচাপ।নিহাদ ফোন ঘাটছে আর শোভা জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে।চোখেমুখে ছড়িয়ে আছে একরাশ মুগ্ধ করা হাসি।বাবার বাড়ি মনে হয় মেয়েদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা।বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা মনে পড়লে এমনিতেই মন ভালো হয়ে যায়।নিহাদ অনেকক্ষণ পর ফোন রেখে শোভার দিকে তাকালো।মেয়েটাকে কি খুশি দেখাচ্ছে।যাই হোক বলে নিহাদ জানালার বাইরে তাকালো।গাড়ি এসে থামলো শোভাদের বাড়ির সামনে।নিহাদকে রেখেই শোভা আগে আগে গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে চলে গেলো।
নিহাদ বোকার মতো চেয়ে রইলো।ওকে ফেলে রেখেই মেয়েটা ভেতরে চলে গেলো?

শোভা বেল বাজাতেই প্রভা এসে দরজা খুলে দিলো।শোভাকে দেখে চিৎকার করে আপু বলে ঝাপটে ধরে প্রভা।দুই বোনের হাসাহাসি শুনে মিসেস অনামিকা রান্না ছেড়ে বেরিয়ে এলেন।শোভাকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমু দিয়ে বললেন,কেমন আছিস মা?
জামাই কই?
শোভা মুখ ফুলিয়ে বলল,এতদিন পর মেয়েকে দেখেছো।এখন মেয়েকে পর করে জামাই জামাই করছো?আসছেন উনি।
মিসেস অনামিকা হেসে উঠে শোভার গালে হাত রেখে বললেন,নিজের স্বামীকে কেউ হিংসে করে?

নিহাদ পেছন থেকে বলে উঠলো আপনার মেয়ে সবাইকেই হিংসে করে মা।দেখুন না আপনার আদর খেতে আমাকে রেখে আগে আগেই চলে এসেছে বাসার ভেতর।নিহাদের হাত ভর্তি বাজার।কিছু কিছু ড্রাইভারের হাতে।এগুলো রেখে মিসেস অনামিকার দিকে এগিয়ে গিয়ে সালাম দেয়।মিসেস অনামিকা হাসিমুখে সালামের উত্তর দিয়ে বললেন,বেঁচে থাকো বাবা।আর এসব কেনো আনতে গেলে?শুধু শুধু ঝামেলা।নিহাদ বলল,কিসের ঝামেলা।
তারপর প্রভার দিকে তাকিয়ে বলল,কেমন আছো শালিকা।প্রভা এতক্ষণ নিহাদের ডাকের অপেক্ষায় ছিলো।বাসায় কেউ আসলে আগে ও কথা বলেনা।যে আসবে সে আগে কথা বলতে হবে।পরে প্রভা নিজেই সবার মাথা নষ্ট করে ফেলে।প্রভার সাথে কথা বলা শেষে মিসেস অনামিকা প্রভাকে বললেন,যাহ নিহাদকে শোভার রুম দেখিয়ে দে।
প্রভা মায়ের কথামতো নিহাদকে নিয়ে শোভার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো।রুমে ঢুকে নিহাদ দেখলো শোভা আলমারি থেকে জামা নিচ্ছে পড়ার জন্য।
নিহাদ ট্রলি থেকে তোয়ালে বের করে শোভাকে বলল,তোমার ওয়াশরুম কোনদিকে?শোভা হাতে ইশারায় দেখাতেই নিহাদ ফ্রেশ হতে চলে গেলো।কিছুক্ষণ পর ঠাস করে কিছু পড়ার আওয়াজ হতেই শোভা দৌঁড়ে ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে দেখলো দরজা খোলা।কিন্তু নিহাদ নিচে চিৎ হয়ে পড়ে আছে।চোখমুখ খিঁচিয়ে ব্যথা হজম করছে।
শোভা মুখ টিপে হেসে বলল,কি হলো পড়লেন কিভাবে?তারপর চেঁচিয়ে বলল,মা!প্রভা আমার ওয়াশরুমে শ্যাম্পুর পানি কে ঢেলেছে?এখন দেখো উনি পড়ে ভালো করে ব্যথা পেয়েছে।

শোভার চিৎকার শুনে মিসেস অনামিকা আর প্রভা দৌঁড়ে এলো।জহিরুল ইসলাম সবে বাজার নিয়ে ফিরে আসলেন।তিনিও শোভার রুমের দিকে পা বাড়ালেন।নিহাদ চোখ বন্ধ রেখেই প্রভার চুল টেনে দিয়ে বলল,এসব তুমি করেছো।এজন্যই আগে আগে রুমে ঢুকেছো।
আহ!বলে শোভা চুল ছাড়িয়ে নেয়।সবাই দৌঁড়ে আসতেই নিহাদ শোভাকে ধরে উঠার চেষ্টা করে।জহিরুল ইসলাম এসে নিহাদকে ধরলেন। জহিরুল ইসলাম চিন্তিত স্বরে বললেন,বেশি ব্যথা পেয়েছো বাবা?নিহাদ জোর পূর্বক হেসে বলল,নাহ তেমন ব্যথা পাইনি।মিসেস অনামিকা প্রভাকে ধমকাতে লাগলেন ওয়াশরুমের ফ্লোর ভিজলো কিভাবে।প্রভা সব কিছু কেনো দেখে রাখলোনা।প্রভা মাথা নিচু করে বলল,মা সবতো ঠিকঠাকই ছিলো।একদম চুপ বলে মিসেস অনামিকা আফসোস করে বললেন,ছেলেটা বিয়ের পর আজ এই বাড়িতে আসতে না আসতেই বিপদ হতে হলো?
জহিরুল ইসলাম ডাক্তার ডাকার কথা বলতেই নিহাদ না করে দেয়।সে বলল,কিছুক্ষণ পর ঠিক হয়ে যাবে।
শোভা সবাইকে বলল,তোমারা যাও আমি এখানে আছি।প্রভা আগেই বেরিয়ে গেছে।মিসেস অনামিকা আর জহিরুল ইসলাম বেরিয়ে গেলেন।

শোভা হেলেদুলে হাটছে।নিহাদ রাগে ফেঁটে পড়ছে।পড়ার সাথে সাথে মনে হয়েছে হাড়গোড় সব ভেঙে গিয়েছে।দাঁত কিড়মিড় করে বলল,এই শোধ আমি তুলবো,তুমি দেখে নিও।
এসব যে তুমি করেছো সেটা আমার জানা হয়ে গেছে।
শোভা মুখটাকে ইনোসেন্ট করে বলল,খুব লেগেছে না আপনার?পরপরই রূপ পরিবর্তন করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,সেদিন আমারও খুব লেগেছে।এখন শোধবোধ।আপনি আমার নিরবতাকে একদম দুর্বলতা ভাববেন না।আমার প্রতিশোধ আমি সুযোগ বুঝে নিয়ে ছাড়ি।শোভা ওয়াশরুমে সাবধানে পা ফেলে ভালো করে ফ্লোর মুছে নিয়ে পড়নের শাড়ি চেঞ্জ করে একটা জামা পড়ে নেয়।
নিহাদ এখন উপলব্ধি করতে পারছে সেদিন শোভা কতটা ব্যথা পেয়েছিলো।নিহাদ ভেবে নিয়েছে শোভা যখন সাথে সাথে কিছু বলেনি তাই হয়তো আর কিছু বলবেনা।কিন্তু না মেয়েটা সুযোগ বুঝে ঠিকই রিভেঞ্জ নিয়েছে।
প্রভা নাস্তার ট্রে নিয়ে এসেছে।নিহাদকে অনুনয়ের স্বরে বলল,সরি ভাইয়া!আমার আরেকটু খেয়াল রাখা উচিত ছিলো।নয়তো আপনি পড়ে গিয়ে ব্যথা পেতেন না।তারপর ফিসফিস করে বলল,এই কাজ আপু ছাড়া আর কেউ করেনি।হয়তো আপনার উপর অনেক কিছুর রাগ একসাথে ঝেড়েছে।আগে রাগ হলে আমাকে চড় মেরে রাগ কমাতো।আপনি আবার এসব আপুকে বলবেননা যেনো।
নিহাদ হেসে উঠে বলল,আমি জানি এটা তোমার আপুর কাজ।তোমার আপু শর্টটেম্পার তাইনা?
প্রভা তাল মিলিয়ে বলল,একদম!সেরা লেভেলের ত্যাড়া।তবে আমার আপুর মনটা অনেক ভালো।
শোভা দরজা খুলে বেরিয়ে আসে।বেডসাইড টেবিলে নাস্তা দেখে বলল,আমার জন্য আদা দিয়ে এককাপ চা নিয়ে আয়তো?উনার জন্য কফি নিয়ে আসিস।প্রভা মাথা নেড়ে চলে গেলো।শোভা একটা জগে করে পানি এনে তোয়ালে নিয়ে নিহাদকে দিয়ে বলল,হাত মুখ মুছে নিন।নিহাদ কথা না বাড়িয়ে হাতমুখ মুছে নিলো।শোভা নাস্তার ট্রে নিহাদের দিকে বাড়িয়ে বলল,খাওয়া শুরু করেন।পানির জগ ওয়াশরুমে রেখে শোভা নিজেও নিহাদের পাশে বসে একটা পিঠা মুখে দিলো।

প্রভা চা আর কফি দিয়েই চলে গেলো।শোভা ড্রয়ার থেকে ব্যথার ঔষধ বের করে নিহাদকে দিয়ে বলল,এটা খেয়ে নিন,ব্যথা কমে যাবে।নিহাদ কথা না বাড়িয়ে টেবলেট নিয়ে খেয়ে নিলো।শোভা হেসে দিয়ে বলল,আপনিও কি বোবা হয়ে গেছেন?কালতো আমাকে বললেন আমি নাকি বোবা হয়ে গেছি।
নিহাদ চোখ গরম করে বলল,কথা বলবেনা তুমি।শোভা নিহাদকে ঘরে রেখেই বেরিয়ে গেলো।রান্নাঘরে গিয়ে মায়ের পাশে দাঁড়ালো।মিসেস অনামিকা বললেন,জামাই এখন কেমন আছে?
এখন কিছুটা ঠিক আছে।রেষ্ট নিলে ব্যথা একেবারে সেরে যাবে।মিসেস অনামিকা নিশ্চিন্ত হয়ে রান্নায় মন দিলেন।মায়ের পাশ থেকে উঠে বাবার সাথে কথা বলে ছাদে পা বাড়ালো।প্রভার ফুলের বাগান আছে।ছাদের একপাশে ছোট্ট করে সে ফুলের বাগান করেছে।মেয়েটা প্রচুর খাটে ফুল গাছ গুলোকে নিয়ে।শোভা ফুলগাছ গুলো দেখে ছাদের অন্যপাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

নিহাদ নাস্তা করে ঘন্টা দুয়েকের একটা ঘুম দিলো।এখন ব্যথা অনেকটা কমে গিয়েছে।জহিরুল ইসলাম মাঝে একবার এসে দেখে গেছেন নিহাদকে।নিহাদ ঘুমাচ্ছিলো তাই উনি ফিরে গেছেন।ঘুম থেকে উঠে আস্তে আস্তে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।একটু হাঁটাহাঁটি করাতে এখন কিছুটা ভালো লাগছে।
শোভা ঘরে এসে দেখলো নিহাদ বিছানায় নেই।বারান্দায় উঁকি দিয়ে নিহাদকে দেখে মোবাইল নিয়ে বসলো।যাওয়ার সময় ওর মোবাইল নিয়ে যাবে।
সেদিন নিহাদের শুয়ে বসেই কেটেছে।

শোভার বাবার বাড়িতে একদিন থেকেই শোভা নিহাদ বাসায় ফিরে এসেছে।নিহাদ ব্যাংকে চাকরি করে।বিয়ে উপলক্ষে,সাথে হানিমুন সহ দশদিনের ছুটি নিয়েছে।আজসহ চারদিন শেষ আর বাঁকি ছয়দিন।এরপরই ব্যাংকে এটেন্ড করতে হবে।
বিকালে নিহাদ বাইরে থেকে এসেই শোভাকে বলল,ব্যাগ গোছাতে ওরা কয়েকদিনের জন্য ঘুরতে যাবে।পছন্দের সব জামাকাপড় যেনো নিয়ে নেয়।ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে শোভা মনে মনে বেশ খুশি হলো।নিহাদের সুবুদ্ধি হয়েছে।শোভার বাসায় পড়ে ব্যথা পাওয়ার পর থেকে নিহাদ আর তেমন বাড়াবাড়ি করেনি।শোভা মনে মনে খুশি হলেও মুখে বলল,কিন্তু বাবা মা কিছু বলবেন না।
নিহাদ নিজের জামা প্যান্ট সব বের করতে করতে বলল,সবাইকে বলে রেখেছি কেউ কিছু বলবেনা।শোভা মনের আনন্দে সব জামাকাপড় ঘুছিয়ে নিলো।সন্ধ্যায় বের হবে।

বাইরে রিকশা দাঁড় করিয়ে রেখে নিহাদ শোভাকে তাড়া দিলো তাড়াতাড়ি আসতে।শোভা শশুর-শাশুড়ী আর মিলির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসে।চারদিকে সন্ধ্যা নেমেছে।পুরোপুরি অন্ধকার নামেনি।শোভা রিকশায় উঠে বসতেই নিহাদ অপর পাশে উঠে বসলো।একে অপরের সাথে মিশে বসে আছে।শোভার কিছুটা অস্বস্তি হতেই সে হালকা সরে বসে।নিহাদ বিরক্তিকর মুখে বলল,পড়ে যাবে এদিকে এসে বসো।শোভার হাত ধরে টেনে আনতে গিয়ে দেখলো শোভা শীতে হালকা কাঁপছে।
নিহাদ ধমক দিয়ে বলল,তোমার সোয়েটার কই?এই ঠান্ডার মধ্যে সোয়েটার না পড়ে বেরিয়েছো?তাড়াতাড়ি সোয়েটার বের করে পড়ে নাও।শোভা মিনমিন করে বলল,শোয়েটার নিতে ভুলে গেছি।আসার সময় পড়ে নেবো বলে খাটের উপর রেখেই বেরিয়ে গেছি।
নিহাদ কপাল চাপড়ে বলল,খুব ভালো করেছো।এখন ঠান্ডা মরো।শোভা দুহাতে বাহু জড়িয়ে বসে রইলো।
নিহাদের কল আসতেই সে রিসিভ করে বলল,হ্যাঁ বেরিয়েছি তোরা জায়গামতো দাঁড়িয়ে থাকিস।তারপর লাইন কেটে দিয়ে রিকশা একটা শপিংমলের দিকে নিতে বলল,
শোভা কৌতুহল নিয়ে বলল,আমরা কোথায় ঘুরতে যাবো?নিহাদ সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,গেলেই দেখতে পাবে।ধরে নাও তোমার জন্য সারপ্রাইজ।
শোভা চুপ করে রইলো।রিকশা শপিংমলের সামনে আসতেই নিহাদ নেমে মলের ভেতর হাঁটা ধরলো।পরে আবার কি মনে করে চারদিকে তাকিয়ে দেখলো আশেপাশে অনেক ছেলেমানুষ আছে।আবার পেছনে এসে রিকশাওয়ালাকে দাঁড়াতে বলে শোভাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো।একটা চাদর কিনে নিয়ে শোভার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,নাও পড়ে নাও।তোমারতো আবার ঠান্ডার সমস্যা আছে।
শোভা মনে মনে খুশি হচ্ছে যাক নিহাদ তাহলে একটু একটু করে পাল্টাচ্ছে।বউয়ের দিকেও একটু আধটু নজর রাখছে।নিহাদ বিল মিটিয়ে শোভাকে নিয়ে একটা বাসার সামনে নামলো।শোভা কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,এটা কার বাসা?
নিহাদ কথা না বলে হাঁটতে লাগলো।শোভাও নিহাদের পিছু পিছু সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলো।একটা ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে বেল বাজাতেই নিহাদের বয়সি একটা মেয়ে দরজা খুললো।মেয়েটা হাসিমুখে বলল,আয় ভেতরে আয়।
নিহাদ শোভার দিকে তাকিয়ে ইশারায় ভেতরে আসতে বলল।শোভাকে এবার খুব করে ভাবাচ্ছে নিহাদের মনে কি চলছে?এখানে কার বাসায় নিয়ে আসলো?কেনো নিয়ে আসলো?

শোভাকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেয়েটা বলল,কি হলো ভেতরে আসো।শোভা মুখে হাসি ফুটিয়ে ভেতরে ঢুকলো।শোভাকে বসতে বলে নিহাদ মেয়েটাকে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে কি কি বলছে।শোভা সেদিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কি বলছে?কিন্তু বুঝতে পারলোনা।
মেয়েটা নিহাদের ফ্রেন্ড।স্বামী দেশের বাইরে থাকে।এই ফ্ল্যাটে নিজের বাচ্চাকে নিয়ে থাকে।কিছুদিন পর স্বামীর কাছে চলে যাবে।
নিহাদ বলল,শোন শোভার যাতে কোনো অসুবিধা না হয় খেয়াল রাখবি।আমি তোর কাছে তোকে ভরসা করে রেখে যাচ্ছি।তিনদিন পর আমি এসেই নিয়ে যাবো।মেয়েটা বলল,বউকে যেহেতু নিবিনা,বন্ধুরা আড্ডা দিতে যাচ্ছিস তাহলে মেয়েটাকে আনলি কেনো?
নিহাদ বলল,ওকে না আনলে বাসা থেকে বের হতে দিতোনা বাবা।আমি ওকে এখানে রেখে যাচ্ছি এটা ও জানেনা।আমি পরে কল দিয়ে বলে দেবো।তুই একটু খেয়াল রাখিস ওর দিকে।

মেয়েটা বলল,বউয়ের জন্য এত চিন্তা তাহলে সাথে নিয়ে যা।দূরে কেনো রাখছিস।তুই বেশি কথা বলিস বলে নিহাদ মনে মনে বলল,দেখো ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তোমাকে কেমন জব্দ করি।ঠোঁটে বাঁকা হাসি।নিহাদ বেরিয়ে যাওয়ার আগে একবার শোভার দিকে তাকালো।ওমা মেয়েটা কোথায় গেলো?ব্যাগ ও তো দেখছিনা।তারপর ভাবলো হয়তো কোনো রুমে গিয়ে বসেছে।নিহাদ আবারো তার বান্ধবীকে শোভার খেয়াল রাখার কথা বলে বেরিয়ে গেলো।
নিচে নেমে বন্ধুদের কল দিলো।ওরা গাড়ি নিয়ে আসবে।রাহুলের বাবার ঢাকার বাহিরে একটা বাড়ি আছে গ্রাম এলাকার দিকে।ওরা সবাই তিনদিন সেখানে গিয়েই থাকবে।চিল করবে।ফোন কানে নিয়ে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলো শোভা ট্রলি হাতে দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে নিহাদের দিকে।নিহাদ চমকে উঠে বলল,তুমি নিচে নামলো কেনো?
শোভা ঢং করে বলল,ওমা আমি আমার হাজবেন্ডের সাথে ঘুরতে যাবো তাকে ছাড়া থাকা চলে নাকি?নিহাদ আর তার বান্ধবীর দুই একটা কথা শোভার কানে আসতেই সে এতটুকু আন্দাজ করতে পেরেছে নিহাদ ওকে এখানে রেখে চলে যাবে তাই আগেই ব্যাগ হাতে নিয়ে নিচে নেমে গেলো।

নিহাদ বলল,যাও উপরে যাও।আমি একটু পরে আসছি একটা কাজ সেরে।শোভা দাঁত কিড়মিড় করে বলল,হুম?কাজ সেরে আসবেন।তা কাজ সারতে কয়দিন লাগবে?কয়দিন পর আমাকে নিতে আসবেন?
নিহাদ থতমত খেয়ে বলল,কিসের কয়দিন পর?
শোভা বলল,মিথ্যে বলবেননা।আমি সব শুনেছি।এখন যেখানে যাবেন আমাকে নিয়ে যাবেন।নয়তো আমি আপনার বাবা মার কাছে ফোন করে জানিয়ে দেবো সব কিছু।
শোভার কথা শুনে নিহাদ ভেবেছে শোভা হয়তো সত্যিই সব শুনে নিয়েছে।এখন ওকে সাথে নিয়েই যেতে হবে।কিন্তু এতগুলো ছেলের মাঝে শোভা একা একটা মেয়ে তাই নিহাদ চিন্তিত মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলো।যতই নিহাদ থাকুক তারপরও অন্য একটা মেয়ে থাকলে ভালো হতো।তাই নিহাদ আশিককে ফোন লাগিয়ে বলল,রিনিকে যে করেই হোক রাজি করাতে ওদের সাথে যেতে।
আশিক কারণ জিজ্ঞেস করতেই নিহাদ পরে জানাবে বলে কল রেখে দিলো।এদিকে ওর বান্ধবী উপর থেকে নেমে আসলো শোভাকে দেখতে না পেয়ে।নিহাদ মুখ পানশে করে বলল,সাথেই নিয় যাচ্ছি তোর আর খেয়াল রাখতে হবেনা।মেয়েটা হেসে উপরে চলে গেলো।

নিহাদ কোমরে হাত দিয়ে শোভার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,এমন মেয়ে আমার বাপ,দাদা,নানা কারো চৌদ্দ গোষ্ঠী দেখেনি।
শোভা দাঁত বের করে হাসছে আর ঘাড় একবার এক দিকে ঘুরাচ্ছে।
#চলবে………

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।হ্যাপি রিডিং।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here