#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ৩
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৭
অহিকে স্টেজে নিয়ে গিয়ে অমিতের পাশে বসানো হয়। একটু পরেই বিয়ে পড়ানো শুরু হবে। দুজনের মাঝখান পর্দা দেওয়া। অহি রোবটের মতো বসে আছে। চারপাশে সবাই অনেক হাসাহাসি করছে। অমিতের বন্ধুরা অমিত আর অহিকে নিয়ে ফাজলামো করছে। যাকে নিয়ে অনুষ্ঠান, হাসাহাসি তারই সেদিকে হুশ নেই। অহি সামন দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
অহির মন বলছে সাফাত আসবে। সাফাত এসে তার বিয়েটা ভেঙে দিয়ে তাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু তেমন কিছু হলো না। অহির ভাবনা চিন্তাকে ভুল প্রমাণিত করে দিল সাফাত না এসে। অহির মন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। হাত -পা অসাড় হয়ে আসছে। কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিল। আবেগ অনুভূতিহীন রোবটের ন্যায় নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে অহি।
অমিতকে কবুল বলতে বলা হলেই সে গড়গড় করে কবুল বলে তার দিলে। কবুল বলার জন্য এক সেকেন্ড সময়ও বেশি ব্যায় করলো না। যেনো দেরি করে বললেই বিশাল বড় ঝামেলা হয়ে যাবে। অহিকে কবুল বলতে বললে অহি চুপ করে থাকে। ঐশি এসে অহিকে জড়িয়ে ধরে। অহির চোখ থেকে টুপ করে এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। অহি কবুল বলতে যাবে তখনি কণার ডাক শুনে থেমে যায়।
অহি সামনে তাকিয়ে দেখে কণা, আদিয়াত আর পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশ দেখে অমিত অনেকটাই ঘাবড়ে যায়। কপালে জমছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। টিস্যু দিয়ে বার বার কপালে ঘাম মুছে নিচ্ছে।অমিতের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। কণাকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে অমিত শুকনো গলায় ঢোক গিলে।
পুলিশের পিছন থেকে সাফাত বেরিয়ে আসে। অহি সাফাতের দিকে তাকায় সাফাতও তাকায়। দুজনের তাকানো একসাথে হয়। অহির চোখে চোখ পড়তেই সাফাত দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। বন্যা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাফাতের দিকে। এটা দেখে নোমানের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। বুকে চিন চিন ব্যথা অনুভব করে। কিন্তু তার কিছু করার নেই। চাইলেও সে বন্যাকে কিছু বলতে পারবে না। এতো দিনের ভালোবাসা এতো সহজে তো ভোলা যায় না। তবু বন্যা তো যথাসাধ্য চেষ্টা করছে তার সাথে মানিয়ে নেওয়ার। সাফাত এখনো বন্যাকে খেয়াল করেনি।
কণা গিয়ে অমিতের সামনে দাঁড়ায়। অমিত আরো বেশি ঘাবড়ে যায়। কিন্তু অমিত সেটা কণাকে বুঝতে দিতে চাইছে না। অহির মা এগিয়ে এসে বলে,
কী হয়েছে কণা? কোনো সমস্যা? এভাবে বিয়ে আটকে দিলে কেনো? বিয়ে বাড়িতে পুলিশ নিয়ে এসেছো কেনো?
আন্টি বিরাট বড় সমস্য। বিয়ে আটকে দিলাম না বিয়ে ভেঙ্গে দিলাম। কী অমিত সাহেব আপনি বলবেন নাকি আমি বলবো?
অমিত আমতা আমতা করে বলে, আমি কী বলবো? তুমি আমাকে কী বলার কথা বলছো?
আপনি আপনার অপকর্মের কথাগুলো বলবেন। আমি আপনাকে আপনার কুকর্মের কথা স্বীকার করার কথা বলছি।
অপকর্ম, কুকর্ম কীসব বলছো? আমি তো তোমার কোনো কথায় বুঝতে পারছি না।
আহালে ছোট খোকাটা কিছুই বুঝতে পারছে না। আবুটা অপকর্ম কুকর্ম বুঝে না। ফিডার খাবা/ নাকি লুতা খাবা?
অমিতের পাশ থেকে হেলাল রহমান গম্ভীর গলায় বলে, এই মেয়ে কে তুমি? তোমার সাহস হয় কী করে আমার ছেলেকে অপমান করার?
হেলাল রহমান অহির বাবার দিকে তাকিয়ে বলে, আপনি যদি এখনো কিছু না বলেন বা এই মেয়েকে এখান থেকে বের করে না দেন, তাহলে কিন্তু আমি আমার ছেলেকে এখান থেকে নিয়ে যেতে বাধ্য হবো।
আপনার ছেলেকে তো এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হবেই। তবে আপনি নিয়ে যাবেন নাহ। পুলিশ নিয়ে যাবে।
আমার ছেলেকে পুলিশ কেনো নিয়ে যাবে? আমার ছেলে কী করেছে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
আংকেল আপনি কিছু বুঝতে না পারলেও আপনার ছেলে অমিত সবই বুঝতে পারছে। আপনার ছেলে আমার ভাইকে খুন করার চেষ্টা করেছে, আমাকে বার বার কিডন্যাপ করেছে, আমার ভাইয়ের বুয়া রিপোর্ট তৈরি করেছে, আমার স্বামীর ওপর প্রাণঘাতী হামলা করেছে। এই যে দেখছেন এসিডে ঝলসে যাওয়া মুখ এটার পিছনে শুধু আপনার মেয়ে ছোঁয়া একা দায়ী নয় আপনার ছেলেও দায়ী। ছোঁয়ার থেকে কোনো অংশে কম নয়। আপনার ছেলের অপরাধ এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। আপনার ছেলের অপরাধ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। আপনার ছেলে নারী পাচারের সাথে জড়িত। তো আপনিই বলুন এগুলোই কী যথেষ্ট নয় আপনার ছেলেকে পুলিশে দেওয়ার জন্য?
কণার কথা শুনে হেলাল রহমান মাথা নিচু করে ফেলে। উনি ভাবতেও পারছেন নাহ উনার ছেলে মেয়েদের এতো অধঃপতন হয়েছে। উনার ছেলে মেয়ে মিলে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। উনি নিজের হাতে আজকে আরেকটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে যাচ্ছিল নিজের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে। ছোঁয়ার ঘটনাটা শোনার পর উনি ভেবেছিলেন উনার ছেলে হয়তো ভালো। কিন্তু না উনার ধারনা এবারও ভুল প্রমাণিত হলো উনার ছেলে উনার মেয়ের থেকেও খারাপ।
অমিত নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য রুক্ষ কন্ঠে বলে, এসব কিছু মিথ্যা। সবকিছুই কণার প্লেন করা। কণা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। বাবা বিশ্বাস করো আমি এসব কিছু করিনি। সব মিথ্যা।
আপনি চিৎকার করলেই সত্য মিথ্যা হয়ে যাবে না। আপনি চিৎকার করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবেন নাহ মি. অমিত। আমার কাছে আপনার বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমাণ আছে আর পুলিশ নিশ্চয়ই প্রমাণ ছাড়া আপনাকে গ্রেপ্তার করতে আসেনি।
অমিত এবার চুপসে যায়। কণা এতক্ষণ শান্ত থাকলেও ভিতরে ভিতরে রাগে ফেটে পড়ছিল। শুধু পারছিল না অমিতের গলা টিপে দিতে। কণা রাগে চিৎকার করে বলে,
এভাবে চুপসে গেলেন কেনো? এখনো চিৎকার করে বলুন আপনি কিছু করেননি। আমার এই ঝলসানো মুখের জন্য আপনি দায়ী নন। আমার ভাইয়ের জীবন নষ্ট করার জন্য আপনি দায়ী নন। কী হলো? চুপ করে আছেন কেনো? কেনো করলেন আপনি আমাদের সাথে এরকম? কী ক্ষতি করেছিলাম আমরা আপনার? আমি আর ভাইয়া তো আপনাকে চিনিও না। কী শত্রুতা আপনার আমাদের সাথে যায় জন্য আপনি ওঠে পড়ে লেগেছেন আমাদের জীবন নষ্ট করার জন্য?
তোমাদের সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই। ইনফ্যাক্ট আমি তো তোমাদের চিনতামও না। আমার শত্রুতা তোমার বাবার সাথে। তোমার বাবার অপরাধের জন্যই আমাকে তোমাদের চিনতে হলো। আমি খারাপ ছিলাম নাহ। তোমার বাবার জন্য আমাকে খারাপ হতে হয়েছে। তোমার বাবার জন্য আমার জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেছে। তোমার বাবার জন্য আমি এতোটা খারাপ হয়েছি। আমি বরাবরই শান্ত শিষ্ট ছিলাম। প্রত্যেকটা ক্লাসেই একটা করে হাবা গোবা ছেলে থাকে আর আমাদের ক্লাসের সেই ছেলেটা আমি ছিলাম। কেউ আমাকে মেরে গেলেও আমি কিছু বলতাম না। উল্টে তার গায়ে কখনো হাত তুলিনি। তুমি ভাবতে পারো তোমার বাবা কতোটা অন্যায় করার পর সেই ছেলেটা আজকের এই অমিত হয়েছে।
কণা অমিতের দিকে অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে আছে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না তার বাবার জন্য কারো জীবন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তার বাবার জন্যও কেউ খারাপ হয়ে যেতে পারে। অমিত কণার তাকানোর মানে বুঝতে পেরে বলে,
কী বিশ্বাস হচ্ছে না? বিশ্বাস না হওয়ারই কথা। কারণ তিশান আহম্মেদ তো সবার সামনে একটা ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে থাকে। আর তোমাদের চোখে তো একটা পর্দা ফেলে রেখেছে। তোমরা তো নিজের বাবার প্রতি অন্ধ ভক্ত।
সাফাত এগিয়ে এসে অমিতের কলার ধরে বলে, দেখ অনেকক্ষণ ধরে তোর এসব কথা শুনে চলেছি। আমার সাথে যা করেছিস তার জন্য ক্ষমা করে দিলেও। আমার বাবার নামে আর একটা খারাপ কথা বললে আমি তোকে এখানেই মেরে পুঁতে দিবো।
চলবে……..