তুমি আমার প্রেয়সী ৩ পর্ব -০৬

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ৩
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৬

তুই ভালোবাসলেই তো হবে না। তাকেও তোকে ভালোবাসতে হবে। তুই গিয়ে সাফাত ভাইয়ার সাথে কথা বল। দেখ সে কী বলে। যদি তার আন্সার পজিটিভ হয়। তাহলে জেনে রাখিস তোর থেকে কোনো অংশে আমি কম খুশি হবো না। প্রত্যেকটা ভাই তার বোনকে সুখী দেখতে চায়।

অহি দ্রুত পায়ে আভিয়ানের রুম ছাড়ে। উদ্দেশ্য নিজের রুম যাওয়া। নিজের রুমে গিয়েই সে সাফাতকে ফোন দিবে।

৭৯

অহি নিজের ফোন খুঁজছে। কিন্তু কোথাও খোঁজে পাচ্ছে না। বিছানার ওপরে, বালিশের নিচে, বইয়ের নিচে সব জায়গায় খুঁজেও ফোন পায় না। অহির মাথায় শুধু ঘুরছে।

মাথায় শুধু একটা কথায় ঘুরছে সে কিছুতেই অমিতকে বিয়ে করতে পারবে না। সে তো সাফাতকে ভালোবাসে। একজনকে ভালোবেসে আরেক জনকে কী করে বিয়ে করবে? তার সাথে কী করে সংসার করবে? মনে এক মুখে আরেক নিয়ে সে কিছুতেই সংসার করতে পারবে না। এভাবে জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে একেবারে মরে যাওয়া ভালো।

দৌড়ে বেলকনিতে যায়। কার্পেটের ওপর ফোন পড়ে আছে। অহি দ্রুত ফোনটা তুলে নেয় আর সাফাতকে কল দেয়। একবার রিং হতেই ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হয়। সাফাতকে কিছু বলতে না দিয়ে অহি সোজা সাপটা প্রশ্ন করে বসে,

আমাকে ভালোবাসো তুমি?

অহির প্রশ্ন সাফাতে কর্ণকুহর হতেই চমকে যায়। অহির প্রশ্ন শুনে সাফাত নির্বিকার। তার মাথা আসছে না অহি হঠাৎ এমন প্রশ্ন করছে কেনো? সে অহির সাথে বন্ধুত্ব করার আগেই বলে নিয়েছিল অহি যেনো এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন না করে। এতদিন তো এসব বিষয়ে অহি কোনো কথা তুলেনি। তাহলে আজ কেনো? সাফাতকে নিশ্চুপ হয়ে থাকতে দেখে অহির ধৈর্যের বাধ ভেঙে যায়। অহি চিৎকার করে বলে,

কী হলো তুমি চুপ করে আছো কেনো? কিছু বলছো না কেনো? আজো তুমি নিশ্চুপ হয়ে থাকবে? দিবে না উত্তর আমার প্রশ্নের? বলো না তুমি ভালোবাসো আমাকে?

অহি তুমি কী পাগল হয়ে গেছো? এভাবে চিৎকার করে কথা কেনো বলছো? আর কীসব উল্টা পাল্টা কথা বলছো? সারাদিন আজে বাজে চিন্তা করতে করতে তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নাও তারপরে আমাকে ফোন দিও।

সাফাত ভাইয়া আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।

সাফাত ফোন কেটে দিতে যাচ্ছিল অহির কথা শুনে থমকে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,

ওহ কংগ্রেস। দোয়া করি তোমার বিবাহিত জীবন সুখের হোক। শুভকামনা রইল তোমার জন্য।

অহি কান্না মিশ্রিত গলায় বলে, সাফাত ভাইয়া আমি এই বিয়েটা করতে চাই না। চাই না অমিত নামের ঐ ছেলেটাকে বিয়ে করতে। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। পারবো না তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো।

অহি তোমাকেও বুঝতে হবে আমি তোমাকে ভালোবাসি না। আমি পারবো না তোমাকে বিয়ে করতে। যে তোমাকে ভালোবাসে না তার
পিছনে কেনো পড়ে আছো? প্লিজ আমার পিছনে পড়ে থেকো না। ভুলে যাও আমাকে আর নিজের মতো করে নিজের জীবনটা গুছিয়ে নাও। বিয়ে করে ফেলো তুমি।

সাফাত ফোন কেটে দেয়। অহি নিষ্পলক তাকিয়ে আছে ফোনের দিকে। অহি বার কয়েক বার সাফাতের বলা লাস্ট কথাটা আওড়ায়।

বিয়ে করে ফেলো তুমি।

অহির মস্তিষ্কে একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে বিয়ে করে ফেলো তুমি। অহি অনুভূতি শূন্য হয়ে বসে আছে। তার মাথা কাজ করছে না। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না? অমিতকে বিয়ে করে নিবে? নাকি সাফাতের ভালোবাসা পাবার জন্য অপেক্ষা করবে?

পরমুহূর্তেই অহির তীব্র আত্মসম্মান বোধ জেগে ওঠে। অহির তীব্র ব্যক্তিত্ব বোধ বলছে,

কেনো ছ্যাচড়ার মতো পড়ে আছিস সাফাতের পিছনে? বেহায়ার মতো কেনো নিজের ভালোবাসা ব্যক্ত করিস? যে তোকে চায় না তার জন্য তুই নিজের পরিবারকে কষ্ট দিবি? নিজের মাকে কষ্ট দিবি?

অহি নিজের চোখের পানিটা মুছে নেয়। নিজের মনে মনে আওড়ায়।

করে নিবো বিয়ে। আর কোনোদিন তোমার কাছে যাব না নিজের ভালোবাসা ব্যক্ত করতে, আর কোনোদিন তোমাকে বিরক্ত করবো না। হারিয়ে যাব তোমার কাছ থেকে অনেক দূরে। কোনোদিন তুমি আমাকে খোঁজে পাবে না।

৮০

না চাইতেও অহিকে অমিতের সাথে শপিংয়ে যেতে হচ্ছে। না পারছে কাউকে না করতে আর না পারছে মুখ বুজে সবকিছু সহ্য করে নিতে। নিজের জীবনের ওপর তিক্ততা চলে এসেছে। তবু ঠোঁটের কোণে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবাইকে বুঝাতে চাইছে সে কতো খুশি। কিন্তু আভিয়ান জানে তার বোনের মনের অবস্থা। কিন্তু তার হাতে যে কিছু নেই। ইচ্ছে থাকলেও কিছু করতে পারবে না।

আর চারদিন পরেই অমিত আর অহির বিয়ে। বিভিন্ন রঙের ফুল আর লাইটিংয়ে সজ্জিত হয়েছে অহিদের বাড়ি। সবার মাঝে উপচে পড়া খুশি। অহির মার মুখ থেকে তো হাসি সরছেই না। অহিও সবার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

সকাল সকাল অমিত এসে অহিদের বাড়িতে হাজির। অহিকে নিয়ে শপিংয়ে যাবে। বিয়ের শপিং প্রায় কমপ্লিট শুধু অহির বিয়ের লেহেঙ্গাটা কেনা বাকি। তাই আজকে অমিত অহিকে নিয়ে শপিংয়ে যাবে। অহির মন সায় দিচ্ছে না অমিতের সাথে শপিংয়ে যেতে। সবার সামনে তো আর এভাবে অমিতের মুখের ওপর না করে দেওয়া যায় না যে আমি তোমার সাথে যাব না। অগ্যতা অহিকে অমিতের সাথে যেতে হচ্ছে।

_____________

অমিত ড্রাইভ করছে আর তার পাশে ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে অহি। অমিত বক বক করেই যাচ্ছে, থামার নাম নেই। অমিতের বকবকানিতে অহি বোরিং হয়ে গেছে। তার ইচ্ছে করছে অমিতের মুখ সুই সুতো দিয়ে সেলাই করে দিতে। অহি এই প্রথম কোনো ছেলেকে এতো বক বক করতে দেখলো। অমিতকে না দেখলে তার বিশ্বাসই হতো না যে, একটা ছেলেও এতো কথা বলতে পারে। গাড়িটা শপিংমলের সামনে এসে দাঁড়াতেই অহি হাফ ছেড়ে বাঁচে। দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে শপিংমলের ভিতর ঢুকে যায়।

৮১

আজকে অহির আর অমিতের বিয়ে। বিয়ের সাজে সেজে ওঠেছে অহিদের বাড়ি। আভিয়ান নিজের বোনের বিয়েতে কোনো কমতি রাখেনি। ঐ দিন পর অহির আর সাফাতের কথা হয়নি। অহি কল দেয়নি আর না দিয়েছে সাফাত। কণা সাফাতের সাথে কথা বলতে গেলে, সাফাত সাফ সাফ মানা করে দেয় তাকে যেনো এই বিষয় নিয়ে কোনো কথা না বলা হয়। অহির বিয়েতে কণা আসেনি। অহি অনেক জোড় করেছিল কিন্তু কণা আসতে নারাজ।

কনের সাজে সেজে ওঠেছে অহি। মেহেদী ভরা হাতের দিকে তাকিয়ে আছে অহি। হাতে অমিতের নামটা ঝল ঝল করছে। নামটা দেখে অহি ডুকরে কেঁদে ওঠে। সাফাত যদি তাকে ভালোবাসতো তাহলে আজকে অমিতের জায়গায় সাফাতের নাম থাকতো। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হলো না। সে সাফাতকে পেলো না।

অহি ঝটপট নিজের চোখের জলটা মুছে ফেলে। একটু পরে তার বিয়ে। সে এভাবে অন্য কারো কথা ভাবতে পারে না। এটা ঠিক না। সে আর সাফাতের কথা ভাববে না। এখন থেকে তার ভাবনা চিন্তা হবে আমার ভবিষ্যৎ, অমিত আর তার পরিবার আর কিছু না।

অহিকে স্টেজে নিয়ে গিয়ে অমিতের পাশে বসানো হয়। একটু পরেই বিয়ে পড়ানো শুরু হবে। দুজনের মাঝখান পর্দা দেওয়া। কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে। অহি রোবটের মতো বসে আছে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here