তুমি আমার প্রেয়সী ৩ পর্ব -০৫

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ৩
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৫

মাথা নিচু করে এলিনা রুম থেকে বের হয়ে যায়। আদিয়াত রাগে জুড়ে জুড়ে শ্বাস নিচ্ছে। কণা নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। সে এখন কিছু বললেই আগুনেই ঘি ঢালার মতো কাজ করবে আর সে এই মেয়ের পক্ষ হয়ে কিছু বলতেও যাবে না। নিজে যেচে কেউ নিজের বিপদ ঢেকে আনে। কণার মতে এসব কাল নাগিনী টাইপ মেয়ে আদিয়াতের থেকে দূরে থাকায় ভালো। সে এতো মহান না যে, যে তার সংসার ভাঙতে চেয়েছে তাকে ক্ষমা করে দিবে।

৭৮

আম্মু আমি এখন বিয়ে করবো না।

কেনো বিয়ে করবি না?

বিয়ে করবো না এটা তো বলি নাই। বলেছি এখন বিয়ে করবো না। দেখো আমার বিয়ে করার ইচ্ছে হলে আমি নিজেই তোমাকে বলবো। প্লিজ আমাকে এসব নিয়ে ডিস্টার্ভ করো না।

এখন বিয়ে করবি না তো কবে করবি? বয়স তো কম হলো না। তোর বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গেছে। কণা মেয়েটা কী সুন্দর নিজের সংসার গুছিয়ে নিয়েছে। স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ী নিয়ে সংসার করছে। আর তুই? আম্মু এখন বিয়ে করবো না। কেনো করবি না? তোর সমস্যাটা কী?

আম্মু আমি এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারি না তাই সোজাসুজি বলছি আমার এই ছেলে পছন্দ হয়নি। কী যেনো ছেলেটার নাম? ও হ্যাঁ অমিত। দেখো অমিত নামের ছেলেটাকে আমার মোটেও পছন্দ হয়নি।

কেনো পছন্দ হয়নি? ছেলেটার মাঝে কীসের কমতি আছে? দেখতে শুনতে সবদিক দিয়েই পারফেক্ট। দেখতে কি সুন্দর। টাকা পয়সার কোনো কমতি নেই।

আম্মু আমি কী সুন্দর ধুয়ে পানি খাব? টাকা থাকলেই কী মানুষ সুখে থাকে। আম্মু আমি ঐ লোকটার সাথে সংসার করবো ঐ লোকের টাকা পয়সা বা সৌন্দর্যের সাথে না। আম্মু ঐ লোকটাকে পছন্দ হয়নি। যাকে আমার পছন্দ না তার সাথে আমি সারাজীবন কাটাবো কী করে? আম্মু তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো।

আমি এত কিছু বুঝতে চাই না। আমার আর তোর বাবার বয়স হয়েছে। আজ আছি তো কাল নেই। এভাবে জোয়ান মেয়েকে তো ঘরে বসিয়ে রাখতে পারি না। আর মরার আগে তোর আর আভিয়ানের সুখের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে যেতে চাই। তোর বিয়ের পর পরই আভিয়ানকেও বিয়ে করিয়ে দিব। তার পরেই আমি ঝারা হাত পা। আমার আর তোর বাবার কোনো চিন্তা থাকবে না। পরে মরেও শান্তি। তুই নিজেকে বিয়ের জন্য তৈরি করে নে। এখানেই তোর বিয়ে হবে। যদি তোর একান্ত পছন্দ থাকতো তাহলে সেটা আলাদা ব্যাপার ছিল।

কথাগুলো বলতে বলতে অহির মা রুম থেকে বের হয়ে যায়। অহি নির্বিকার তাকিয়ে আছে তার মায়ের যাওয়া পানে। অহি বেশ বুঝতে পারছে তার মাকে কিছু বলে লাভ নেই। তার মা অমিতের সুরে গান গাইছে। অহি বুঝতে পারে মা তার মা এমন কেনো? কেউ একটু ভালো করে কথা বললেই গলে জল হয়ে যায়।

অহির এখন একমাত্র ভরসা তার ভাই আভিয়ান। তার বাবাকে কিছু বলা যাবে না। তার বাবা এমনিতেই অসুস্থ। এসব বিষয় যত না জানবে ততই ভালো। অহি তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে পা বাড়ায় আভিয়ানের রুমের দিকে।

আভিয়ানের রুমের সামনে এসে দেখে দরজা ভিতর থেকে লক করা। অহি বেশ কয়েক বার দরজায় নক করার পর আভিয়ান টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে এসে দরজা খুলে দেয়। আভিয়ান অহির দিকে না তাকিয়ে বলে,

আম্মু তোমাকে না আমি বললাম আমি গোসল করতে যাচ্ছি। এখন ডাকাডাকি করো না। তুমি কী ভুলে যাও নাকি? তোমার সব ইম্পর্টেন্ট কথা আমি যখন গোসল করি তখনি মনে পড়ে। আমি বললামই তো গোসল করে এসে তোমার কথা শুনছি।

আমি তোর আম্মু না তোর বোন।

আভিয়ান চোখ বড় বড় করে অহির পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে দেখে বলে, তুই সত্যিই অহি নাকি অহির ভূত?

দেখো একদম ফাজলামো করবে না।

আরে না আমি ফাজলামো করছি না আমি সিরিয়াস। আজকাল তো তোকে বাসায় দেখা যায় না। সারাদিন চড়কির মতো বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াস। তোর তো নতুন একটা বন্ধু হয়েছে তাই না? কী যেনো নাম?

আভিয়ান একটু ভাবার অভিনয় করে বলে, ও হ্যাঁ মনে পড়ছে সাফাত। আই মিন সাফাত স্যার।

সাফাতের নামটা শুনেই অহির চোখ দুটো টলমল করে ওঠে। অহির চোখের দিকে তাকিয়ে আভিয়ান থমকে যায়। আভিয়ান স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে অহির চোখ দুটো অশ্রুতে টই টু্ম্ভুর। অহি হঠাৎ করেই আভিয়ানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।

ও ভাইয়া আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। কিছুতেই অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। তুমি কিছু একটা কর। তুমি তো সবই জানো। প্লিজ কিছু কর।

অহির কোনো কথায় আভিয়ানের বোধগম্য হচ্ছে না। কার সাথে কার বিয়ে কিছুই বুঝতে পারছে না। আভিয়ান অহিকে নিয়ে বিছানায় বসায়। অহির দুই গালে হাত রেখে বলে,

আমার ছোট্ট পরিটা কাঁদছে কেনো? কী হয়েছে? পিচ্চি পরিটা কী ভাইয়াকে সবকিছু খুলে বলবে না?

ভাইয়া আম্মু আমার বিয়ে ঠিক করেছে। অমিত নামের একটা ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে। কিন্তু আমি কিছুতেই ঐ ছেলেকে বিয়ে করতে পারবো না। তুমি তো জানো আমি সাফাতকে ভালোবাসি।

সাফাত ভাইয়া কী তোকে ভালোবাসে?

জানি না।

সাফাত ভাইয়া যদি তোকে ভালোবাসে। তাহলে কারো সাধ্য নেই তোকে অমিতের সাথে বিয়ে দেওয়ার। আমি নিজের হাতে তোকে সাফাত ভাইয়ার হাতে তুলে দিয়ে আসবো। আর যদি সাফাত ভাইয়া তোকে না ভালোবাসে। তাহলে আমার মতে তোর অমিতকেই বিয়ে করে নেওয়া উচিত।

অহি করুন সুরে বলে, ভাইয়া।

দেখ অহি আমি সবটাই জানি। ঐ দিন ভার্সিটিতে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা আমি শুনেছি। কিন্তু তোকেও বুঝতে হবে যে তোকে চায় না তার অপেক্ষা থেকে কোনো লাভ নেই। জীবন কখনো কারো জন্য থেমে থাকে না। জীবন নিজ গতিতেই চলতে থাকে। যে তোকে ভালোবাসে না। তার মনে তো তুই জোড় করে নিজের জন্য ভালোবাসা তৈরি করতে পারবি না। বরং তার উল্টোটা হবে। তুই তাকে যতো বেশি জোড় করবি সে তোকে তত বেশিই ঘৃণা করবে।

কিন্তু আমি তো তাকে ভালোবাসি।

তুই ভালোবাসলেই তো হবে না। তাকেও তোকে ভালোবাসতে হবে। তুই গিয়ে সাফাত ভাইয়ার সাথে কথা বল। দেখ সে কী বলে। যদি তার আন্সার পজিটিভ হয়। তাহলে জেনে রাখিস তোর থেকে কোনো অংশে আমি কম খুশি হবো না। প্রত্যেকটা ভাই তার বোনকে সুখী দেখতে চায়।

৭৯

অহি অনুভূতি শূন্য হয়ে বসে আছে। তার মাথা কাজ করছে না। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না? মাথায় শুধু একটা কথায় ঘুরছে সে কিছুতেই অমিতকে বিয়ে করতে পারবে না। সে তো সাফাতকে ভালোবাসে। একজনকে ভালোবেসে আরেক জনকে কী করে বিয়ে করবে? তার সাথে কী করে সংসার করবে? মনে এক মুখে আরেক নিয়ে সে কিছুতেই সংসার করতে পারবে না। এভাবে জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে একেবারে মরে যাওয়া ভালো।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here