#দখিনা_হাওয়া
#মারিয়া_আক্তার
[০৬]
রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে একা একা বকবক করছে ফারিন। কাকে যেন মোবাইলে ট্রাই করছে সে। কিন্তু কিছুতেই তাকে লাইনে পাচ্ছে না। এতে তার রাগ আরো বেশি হয়ে যায়।
– শাঁকচুন্নি, পেত্নী, একবার তোরে সামনে পাই দেখিস তোরে কি করি। একেবারে শিমের মত সেদ্ধ কইরা পাটায় বাইট্টা ভর্তা করমু। সেই কখন থেকে ট্রাই করতাছি,মহারানী রিসিভ করার সময়ই পাচ্ছেন না।
– আরে ফারিন,তুমি এখানে?
ফারিনের বকবকানির মাঝেই কেউ একজন পিছন থেকে তার নাম ধরে ডাকে। তাই লোকটা কে তা দেখার জন্য সে পিছনে ফিরে। লোকটাকে দেখে তার চোখ চকচক করে ওঠে। আরে এতো আরান।
– আপনি?
ফারিন খানিকটা লজ্জা নিয়ে বলে ওঠে। আরান মুচকি হেসে বলে,
– হুম আমি। এমনিই হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। আমার বাসাতো সামনেই। তা তুমি এ সময়ে এখানে কেন?
– শপিং করবো বলে বেরিয়েছিলাম। অনেক্ষণ থেকে আমার বেস্টফ্রেন্ডের জন্য ওয়েট করছি কিন্তু তার আসার নাম গন্ধই নেই। ফোনটাও রিসিভ করছে না।
– ওহ আচ্ছা। লাইনে যখন পাচ্ছো না তাহলে এখন বাসায় চলে যাও। কিছুক্ষণ পরইতো মাগরিবের আজান দিয়ে দিবে।
ফারিন চারদিকে তাকিয়ে দেখে সত্যিই তো মাগরিবের আজানের সময় হয়ে গেছে। হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে আর বিশ মিনিট সময় আছে। কাল কলেজে গিয়ে ইশরাতের খবর করবে। আজ আসবে বলে মেয়েটা আসলোই না।
– আচ্ছা ভাইয়া আমি আসি।
আরান আবারো মুচকি হাসে। হাসার সাথে সাথে আরানের দু’গালে দু’টো গর্তের সৃষ্টি হয়। ফর্সা গালে টোলদু’টোতে খুব মানিয়েছে আরানকে। ফারিন একবার তাকিয়েই দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। আরান নিজের গায়ের জ্যাকেটটাকে একটু টেনে নিয়ে বলে,
– চলো আমি তোমায় এগিয়ে দিই।
ফারিনের মনে মনে লাড্ডু ফুটলেও ভদ্রতার খাতিরে আরানকে নাকোচ করে বলে,
– না,না, আমি একাই যেতে পারবো। আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না।
আরান এবার ঠোঁট প্রসারিত করে দাঁত বের আওয়াজবিহীন হাসে। ফারিন এবারও তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
– পিচ্ছি মানুষ, কখন কোথায় হারিয়ে যাও। তাই ভাবলাম এগিয়ে দিই।
ফারিন এবার চটে যায়। এতক্ষণ ছেলেটার ওপর ফিদা হলেও এখন তার রাগ লাগছে। আরান আড়চোখে ফারিনকে পর্যবেক্ষণ করে। ফারিনকে পিচ্ছি বললে সে খুব রেগে যায় এটা আরান জানতো, বিন্দু বলেছিল তাকে। তাইতো মেয়েটাকে রাগাতে সে পিচ্ছি বললো। ফারিন রাগে ফোঁসফোঁস করে নাকটাকে ফুলাচ্ছে। যা খুব উপভোগ করছে আরান। এত বড় একটা মেয়ের এমন বাচ্চামোতে তার খুব হাসি পাচ্ছে।
– কি হলো পিচ্ছি? চলো তোমায় এগিয়ে দিই।
এবার যেন ফারিনের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। পুনরায় নাকটাকে ফুলিয়ে বলে,
– এই,এই আপনি আর একবার আমায় পিচ্ছি বলেন দেখেন। দুইটা পাউরুটির মাঝখানে রেখে চ্যাপ্টা করে একেবারে স্যান্ডউইচ বানিয়ে দেবো।
আরান গোলগোল চোখ করে ফারিনের দিকে তাকিয়ে আছে। বিন্দুর কাছে শুনেছে ফারিন খুব দুষ্টু তবে এতটা দুষ্টু এটা ভাবে নি। আরান গলা খাঁকারি দিয়ে ফারিনের উদ্দেশ্যে বলে,
– তুমিতো দেখছি খুব ড্যাঞ্জারাস আছো। বাবাগো বাবা,একেবারে স্যান্ডউইচই বানিয়ে দেবে। খুব ভয় পেয়ে গেলাম আমি।
প্রথমে ভয় পাওয়ার অভিনয় করলেও পরে বেশ শব্দ করে হেসে দেয় আরান। রাগে ফারিন নাকের সাথে সাথে গালটাকেও ফুলিয়ে রেখেছে।
– আপনি একটা শয়তান। আমি একাই বাসায় যাবো। আমার পিছন পিছন আসার একদম চেষ্টা করবেন না উল্লুক কোথাকার।
ফারিন হনহন করে হেঁটে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আরান দৌঁড়ে এসে ফারিনের পাশাপাশি হাঁটে।
– আচ্ছা,তুমি যেন এখন কোন ক্লাসে? নাইন নাকি টেইন? তাও মনে হয় হবে না। তোমাকে আরও পিচ্ছি লাগে।
আরান জেনেও ফারিনকে রাগানোর জন্যে জিজ্ঞেস করে। ফারিন হাঁটা থামিয়ে আরানের দিকে তাকায়। তারপর বুকে দু’হাত গুঁজে বলে,
– আমাকে কোন অ্যাঙ্গেল থেকে আপনার কাছে পিচ্ছি মনে হয়?
আরানও ফারিনের দেখাদেখি বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ায়। তারপর ফারিনের দিকে কিছুটা অগ্রসর হয়ে বলে,
– সবদিক থেকেই ছোট লাগে। দেখতেও কথাবার্তাও।
– আমি এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। কিছুদিন পর আমার এইট্টিন হবে। আর আপনি আমায় পিচ্ছি বলছেন।
– এইট্টিন? তাহলে তো পিচ্ছি বড় হয়ে গেছে। বিন্দুকে বলতে হবে,তোর বোন বড় হয়ে গেছে একে এবার বিয়ে দিয়ে দে। জানোতো ফারিন,আমার কাছে না ভালো পাত্রও আছে। আমাদের দারোয়ান কাকার একটা ছেলে আছে,বাদাম বিক্রি করে। বলছি এখনতো দেখছোই বাদাম বিক্রেতা কেমন সেলিব্রেটি হয়ে যাচ্ছে। দারোয়ান কাকার ছেলের সাথে বিয়ে হলে তুমিও সেলিব্রেটি হয়ে যাবে,বাদামওয়ালার বউ।
কথাটা শেষ করে উচ্চস্বরে কিছুক্ষণ হাসে আরান। তারপর ফারিনের দিকে তাকিয়ে তার হাসি অটোম্যাটিক্যালি বন্ধ হয়ে যায়। ফারিন তার দিকে অগ্নিমূর্তি রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখগুলো দিয়ে যেকোনো মুহূর্তে আরানকে ভস্ম করে দিবে। ফারিন এদিক ওদিক তাকিয়ে কি যেন খুঁজে,তারপর তার থেকে কিছুটা দূরে একটা ইটের টুকরা খুঁজে পায়। তা হাতে নিয়েই সে আরানকে ধাওয়া করে। আরানকে আর পায় কে সেও ভোঁ দৌঁড়।
_______________
ধীর গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে আরাধ। রাস্তায় এখন তেমন কোনো যান নেই। শুনশান রাস্তা। নদীর পাড় থেকে এসে এখনো বাসায় ফিরে নি আরাধ। মাথায় তার হাজারো চিন্তা। কি করে বাবাকে বলবে তানিয়ার ব্যাপারটা? বাবা কেমন রিয়েক্ট করবে? খুব কি কষ্ট পাবে? বাবাকে বলা কি আদৌ ঠিক হবে? না, আরাধ আর কিছু ভাবতে পারছে না। তার মাথা ধরে আসছে। এ কোথায় এসে ফেঁসে গেছে সে? একদিকে বাবা অন্যদিকে ভালোবাসা। কোনটা বেঁচে নেবে? তারওপর তানিয়ারও খোঁজ জানে না সে। আরাধের ভাবনার মাঝেই কেউ দৌঁড়ে তার গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। হঠাৎ এমন হওয়াতে আরাধ তাল সামলাতে না পেরে জোরে ব্রেক কষে। আরাধ রেগে মেগে গাড়ি থেকে বের হয়। কোন গাধা তার গাড়ির সামনে এসে পড়লো? কিছু হয় নি তো আবার? এক ঝামেলার মধ্যে আরেক ঝামেলা। আরাধ মুখ দিয়ে ‘চ’ সূচক শব্দ উচ্চারণ করে বিরক্তি প্রকাশ করে।
আর এদিকে ফারিনের দৌঁড়ানি খেয়ে আরান কারো গাড়ির সামনে এসে পড়ে। রাস্তার মধ্যে চিৎপটাং হয়ে পড়ে আছে সে। আরানের থেকে দু’হাত দূরে একহাতে ইট ধরে অন্যহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে আছে ফারিন। তার ক্রাশবয়ের একি অবস্থা?
– তুই? তুই আমার গাড়ির সামনে এসে পড়েছিস?
বিস্ময় নিয়ে বলে আরাধ। আরান আরাধকে দেখে ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। তাড়াহুড়ো করে গা ঝাড়তে শুরু করে দিলো। আরাধ দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,
– তুই এখানে এভাবে কেন? এমন ধামড়ার মত দৌঁড়াদৌঁড়ি করেছিস কেন?
আরান ঝাড়া থামিয়ে একবার ভাইয়ের দিকেতো আরেকবার তার পাশে দাঁড়ানো ফারিনের দিকে তাকায়। আজ তার ভাই ফারিনের সামনে তার আর ইজ্জত রাখলো না। আরান মুখটাকে ছোট করে বলে,
– এটা কি ভাই? মানুষের সামনে এসব কি নামে ডাকছিস তুই?
আরাধ ঘাড়টাকে কিঞ্চিৎ ঘুড়িয়ে পাশে তাকায়। দেখে পাশে ফারিন ফারিন বিস্ময় নিয়ে আরাধের দিকে তাকিয়ে আছে। আরাধ এবার কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। নিজেকে সে সবার সামনে একভাবে প্রেজেন্ট করে না। ভাইয়ের সাথে দুষ্টামি করে অনেক কিছুই বলে সে কিন্তু এখানে যে ফারিন আছে সেটা আগে খেয়াল করলো না কেন? আরাধ গলা খাঁকারি দিয়ে ফারিনের উদ্দেশ্যে বলে,
– কেমন আছো? কি নাম যেন তোমার?
ফারিন কিছুক্ষণ হ্যাবলার মত আরাধের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর ক্যাবলাকান্তের মত হেসে বলে,
– আমার নাম ফারিন। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?
ফারিনের সাথে আরাধের অনেকবার দেখা হলেও কথা তেমনভাবে হয় নি।
– আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।
আরাধ এবার আরানের দিকে তাকায়। তারপর বলে,
– তুই এভাবে দৌঁড়ে এসেছিস কেন? আর এখানে ফারিনই বা কি করে?
আরাধের প্রশ্নে আরান মুখটাকে ছোট করে ফেলে। সে একবার ফারিনের দিকেতো আরেকবার আরাধের দিকে তাকায়। এখন কি বলবে সে, যে ফারিনের দৌঁড়ানি খেয়ে এখানে এসেছে? তাহলে আজ তার আর মানসম্মান থাকবে না।
_______________
বিন্দু বিছানার ওপর শুয়ে শুয়ে মোবাইল স্ক্রল করছে। আরাধের সাথে দেখা হয়েছিল দু’দিন আগে। এখনো বিয়ের বিষয়টা নিয়ে বিন্দু কিছু বলেও নি বা কিছু ভাবেও নি। বিন্দুর মোবাইল স্ক্রলের মধ্যেই নুশরাতের নাম্বার থেকে কল আসে বিন্দুর ফোনে। বিন্দু আড়মোড়া ভেঙ্গে ফোনটা রিসিভ করে।
– কিরে শাঁকচুন্নি কি খবর?
– এইতো পেত্নী ভালো। এই তুই তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আয়তো। আমি আর মীম তোর বাসার কাছেই আছি। আইসক্রিম খাবো তিনজন মিলে।
– নারে, আমার এসব ভালো লাগে না। তুই আর মীম মিলে খা না।
– না, সেসব শুনছি না। তাড়াতাড়ি নিচে আয়।
বিন্দুর বিছানা ছেড়ে উঠতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছা করছে না। তাও জোর করে উঠে মাথায় ওড়নাটা চাপিয়ে নেমে পড়ে বাসা থেকে। বিন্দুর বাসা থেকে খানিকটা দূরে মীম আর নুশরাত দাঁড়িয়ে আছে। বিন্দু হাঁটতে হাঁটতে ওদের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর তিনজন কথা বলতে বলতে সামনে এগোয়। মীম হঠাৎ ফুচকার ভ্যান দেখে লাফিয়ে উঠে। বলে,
– আইসক্রিম ক্যান্সেল। চল ফুচকা খাই।
মীমের কথায় নুশরাত হ্যাঁ জানায়। বিন্দু কিছুই বলে না। ফুচকার প্রতি তার ইন্টারেস্ট খুবই কম। আইসক্রিমও তেমন পছন্দের না বিন্দুর। তবুও এখন ওদের সাথে খেতে হবে। তিনজন ফুচকার ভ্যানের কাছে গিয়ে ফুচকা খেতে লাগলো। সাধারণত মেয়েরা ঝাল বেশি খেতে পারে কিন্তু বিন্দুর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উল্টো। বিন্দু ঝাল একেবারেই খেতে পারে না। ফুচকায় ঝাল খুব, তাই বিন্দু দুই তিনটা ফুচকা খেয়ে না করে দেয়। আর সে খাবে না। মীম আর নুশরাত খানিকক্ষণ জোরাজুরি করে, তাও বিন্দু খেতে রাজি হয় নি। মীম আর নুশরাত ফুচকা খাচ্ছে। বিন্দু ভ্যানটার একপাশে এসে দাঁড়ায়। চারদিকে উঁকিজুঁকি মারে। আবার মীমদের দিকে তাকায়। কিন্তু সাথেসাথে আবার তার ডানদিকে তাকায়। তার মনে হল সে আরাধকে দেখেছে। হ্যাঁ ঠিক, এখনটায় আরাধই দাঁড়িয়ে আছে। ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে। কথা বলতে বলতে বিন্দুর দিকে চোখ যায় আরাধের। সাথে সাথে কথা বলা অফ করে দেয়। কিছুক্ষণ পর কলটা কেঁটে দিয়ে বিন্দুর কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। বিন্দুর পরণে একটা সবুজ জামা। জাম কালার ওড়নাটা মাথায় ভালোভাবে পেছিয়ে নেওয়া। মুখে কোনো প্রসাধনী নেই। একদম সাদামাটা মেয়েটা। আরাধ সবসময় বিন্দুকে এমনভাবেই দেখেছে। বিন্দুকে সাজতে দেখেনি কখনো। মেয়েটা কি সাজতে ভালোবাসে না? প্রশ্নটা মনে মনে করে আরাধ মৃদু হাসে।
– তুমি এখানে? এ সময়?
মুচকি হেসে প্রশ্ন করে আরাধ। বিন্দুও ভদ্রতার খাতিরে মুচকি হাসে। তারপর মীম আর নুশরাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
– ওদের সাথে বেরিয়েছিলাম।
আরাধ উঁকি দিয়ে ওদের দিকে তাকায়।
– ওরা ফুচকা খাচ্ছে, তুমি খাচ্ছো না কেন?
– আমি ঝাল বেশি খেতে পারি না। তারপরও দুই একটা খেয়েছি। আপনি খাবেন?
আরাধ সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলে,
– খাওয়াই যায়।
বিন্দু অবাক হয়ে আরাধের দিকে তাকিয়ে থাকে। বিন্দু জানে ছেলেরা এসব ফুচকা খায় না, মূলত পছন্দ করে না। তাই ভেবেছে আরাধও খাবে না। এমনিই খাবে কিনা জিজ্ঞেস করলো। কিন্তু আরাধতো দেখে উল্টো। সে ফুচকা খাবে। বিন্দু মুচকি হেসে বলে,
– আসুন। আপনিও ওদের সাথে ফুচকা পার্টিতে জয়েন করুন।
আরাধও মৃদু হেসে সামনে এগিয়ে যায়। আরাধকে দেখে মীমের চোখ চকচক করে উঠে।
– আরে আপনি এখানে?
আরাধও হেসে হেসে ওদের সাথে কথা বলে কিছুক্ষণ। মীম, বিন্দু আর নুশরাত পুরোই অবাক আরাধের ব্যবহারে। আরাধকে মূলত তারা একটু এটিটিউডওয়ালা ভেবেছিল কিন্তু আরাধ পুরো উল্টো। তারা তিনজন জমিয়ে ফুচকা খাচ্ছে। বিন্দু একসাইডে দাঁড়িয়ে তাদের খাওয়া দেখছে। আরাধ বিন্দুকে দুই একবার সাধলো। বিন্দু নাকোচ করলো এতে।
– তুমি মেয়ে হয়ে ঝাল খেতে পারো না, ব্যাপারটা কেমন না?
– আরে ও এমনই। কখনো ঝাল খাবে না। ঝাল খেলে নাকি পেটে সমস্যা হয়। শুধু কি ঝাল? আইসক্রিম খাওয়ার কথা বললে বলবে, ঠান্ডা লাগবে। চকলেট খাওয়ার কথা বললে বলবে, এসব খেলে দাঁতে পোঁকা হয়।
বিন্দু কিছু বলার আগে মীম বলে উঠে। মীমকে এবার বিন্দু থামিয়ে দিয়ে বলে,
– বইন, মাফ চাই। এবার থাম। আর কিছুর বর্ণনা দেওয়া লাগবে না। অনেক হইছে।
আরাধ ওদের কান্ড দেখে হাসে।
– আচ্ছা আমি যতদূর জানি, ছেলেরা স্ট্রিট ফুড পছন্দ করে না। এসব তেমন খায়ও না। আপনি ছেলে হয়ে উল্টো হলেন কেন?
আরাধ ফুচকা মুখে পুড়ে ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে সকলের ফুচকার বিল দিয়ে এসে বিন্দুর পাশে দাঁড়ায়।
– আমি ছোটবেলা থেকেই এসব খুব পছন্দ করি। আম, বরই, চালতা, জলপাই এসবের আঁচাড়, ফুচকা, চটপটি, বিরিয়ানি, আইসক্রিম এসব আমার খুব পছন্দের। ছেলে বলে কি এসব খেতে পারবো না?
– না, অবশ্যই খেতে পারেন। কেন খেতে পারবেন না?
বিন্দু মুচকি হেসে বলে। আরাধও মৃদু হেসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
চলবে…