গল্প : #অপত্যাশিত_ভালোবাসা
লেখক : #কাব্য_মেহেরাব
পর্ব : ১৬
বন্ধুত্বের খাতিরে অনেক সময় এই বাড়িতে আনা গোনা ছিল মেঘার। মেঘা তার বন্ধু বান্ধব নিয়ে এই বাড়িতে এসে পার্টি করত। সবকিছু ব্যয় বহন করত প্রবীশ বাবা। আস্তে আস্তে মেঘা যখন জানতে পারে এই সব কিছুর একমাত্র মালিকানা প্রবীশ বাবা? তখন তার সাথে মিথ্যা ভালোবাসার সম্পর্কে জড়াই। বড় বাড়ি গাড়ি,বিসাল বিজনেস এই সব দেখে লোভ সামলাতে পারেনা। পারবে কি করে? বাবা মায়ের অবাদ্ধ বিগড়ে যাওয়া মস্তিষ্কের মানুষ ছিল যে সে।
আর আমার প্রবীশ বাবা মেঘার ঐ সবকিছু অভিনয় ছলনা কে সত্যি মনে করেছিল। একই ক্লাসমেট হওয়া সূত্র পাতে আমিত জানতে পারে মেঘার পরিকল্পনা । কারণ কোন এক ইহুদির ছেলের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল মেঘার। অমিত প্রবীশকে তা জানাই, কিন্তু প্রবীশ বাবা তা বিশ্বাস করে না। বিশ্বাস করবে কি করে ?মেঘার প্রতি তার অন্ধ বিশ্বাস জন্মে ছিল ততদিনে। তবুও অমিতের কথা রাখতে মেঘাকে জিজ্ঞাসা করায়, মেঘা ওই ছেলেটাকে নিজের বন্ধু পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল প্রবীশেরর সাথে।প্রবীশের বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয় মেঘার প্রতি।
আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মেঘা প্রবীশ কে নিজের ব্যবসা সামলাতে উৎসাহ দেয়।যাতে প্রতিনিয়ত নিজের অসহায়ত্বের অভিনয় করে প্রবীশের কাছ মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে পারে। হলো ও তাই । মেঘা তার ঐ ছেলে বন্ধুর সাথে হাত মিলিয়ে প্রবীশ কে বলে, তার বাবা মা প্রবীশের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে জানতে পারায় তাকে জোর করে বিয়ে দিতে চাই। প্রবীশ কে তার বাবা মা কিছু তেই মানতে পারছেন না ।কারণ প্রবীশের কেউ নেই।
প্রবীশ বাবা মেঘার বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে চেয়েছিল কিন্তু মেঘার মনে তো অন্য কিছু চলছিল। সে নানানভাবে তাকে এটা বুজিয়েছিল যে,সে এটা করতে পারবে না। তারা কিছুতেই এই সম্পর্ক মেনে নেবে না।
একদিন তো মেঘা ব্যাগ পত্র গুছিয়ে চলে আসে। প্রবীশ কে জানাই, সে প্রবীশ কে ছাড়া বাঁচতে পারবে না। তার অন্য কোথাও বিয়ে হলে সে সুসাইড করবে। প্রবীশ বাবা ও তার ভালোবাসা অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নিজের একাকী জীবনে একমাত্র বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে গিয়েছিল ততদিনে মেঘা। তাইতো কোনো কিছু না ভেবেই বিবাহ বন্ধনে জড়িয়ে ছিল তারা।( রামু চাচা এবার থামলো)
মেঘা: ( আমি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম কথাগুলো। রামু চাচা থেমে যাওয়ায় আমার কপালে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠল। ধৈর্য ধরতে না পেরে আমি জিজ্ঞেস করলাম_) তারপর কি হলো রামু চাচা….?
রামু চাচা: বিয়ের পর কিছু দিন খুব ভালোই কাটছিল তাদের। ১৫ থেকে ১৬ দিনের মাথায় মেঘা বায়না ধরেছিল হানিমুন যাওয়ার। প্রবীশবাবার মন তখন ব্যবসার খাতিরে সায় না দিলে ও নতুন পরিবেশে মেঘার কথা ভেবে রাজি হয়ে যায়। আমিত এর বাবা সব কিছুর ব্যবস্থা করে দেয়। ততদিনে অমিত ও প্রবীশের অফিসে জয়েন হয়।
হানিমুনে যাওয়ার আগের দিন রাতে মেঘা প্রবীশকে রুমে আসতে দেখে ফোনে প্রবীশ কে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে_
মেঘা:হ্যাঁ আমি ঠিকই বলছি! প্রবীশ আমাকে কোনদিন ও ধোঁকা দিবে না। প্রবীশ আমাকে নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসে। আমার জন্য সব কিছু করতে পারে সে। আমি জানি।
আর রইলো কথা আমার ভবিষ্যতের? আমি যদি একবার বলি না,প্রবীশকে তার পুরো প্রপার্টি ই আমার নামে লিখে দেবে। এতটাই বিশ্বাস করি আমি তাকে। আর তুমি কি না বলছো…….
পিছনে ঘুরে প্রবীশ কে দেখার অভিনয় করে ঘাবড়ে যায় আর বলে_
মেঘা: ত… ততুমি কখন এলে….?
প্রবীশ:(আস্তে আস্তে মেঘার সামনে এসে ঘাড়ে হাত রেখে কপালে চুমু খেয়ে চোখে চোখ রেখে বলল) এতটাই বিশ্বাস করো তুমি আমাকে…? আমি কোনোদিন ভাবতে ও পারিনি আমার জীবনে আমি তোমার মত কাউকে পাব। সত্যি আজ আমার আনন্দের শেষ নেই। আমি কথা দিচ্ছি হানিমুন থেকে এসে আমি আমার প্রপার্টির ৫০ শতাংশ তোমার নামে করে দিবো। তার পর তোমার ফোনের ঐ পাশে যে আছে তাকে বলে দিও প্রবীশ তার মেঘার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সব কিছুই করতে পারে।
মেঘা:( চোখের পানি মুছার অভিনয় করে বলল) সত্যিই আমি খুব ভাগ্যবতী তোমার মতো এমন স্বামী পেয়ে।
রামু চাচা আবার ও থেমে গেলেন। তার এই বারবার কথার মাঝে থেমে যাওয়ায় যেন আমার বিরক্তটা বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমি তোকে আবার জিজ্ঞাসা করলাম।
মেঘা: একটা মানুষ এতটা খারাপ কি করে হতে পারে? শুধুমাত্র সম্পত্তির লোভে মানুষের ভালোবাসা নিয়ে এইভাবে ছিনিমিনি কি করে খেলতে পারে? একটা মন ভাঙ্গা, মসজিদ ভাঙ্গার সমান। এত বড় পাপ কি করে জেনে শুনে কেউ করতে পারে?? তারপর কি হলো রামু চাচা বলো……? থামলে কেন…..?
রামু চাচা:( আমাকে অধৈর্য হতে দেখে একটু হেসে তিনি বললেন_)প্রবীশ বাবা তার কথা রেখেছিলো। তার নামের অর্ধেক প্রোপার্টি মেঘা বৌরানীর নামে করে দিলেন। আর এতোটুকু পেতেই মেঘার আসল রূপ দিন দিন বেরিয়ে আসতে লাগলো। দিনের পর দিন বাড়িতে পরপুরুষ আনা, রাত বিরাতে একলা ক্লাবে পার্টি করা। মাতাল হয়ে ছেলে মানুষের সাথে রাত বিরাতে বাড়িতে ফেরা, কোন কিছুই বাদ রাখেনি। প্রবীশ বাবা এই সব নিষেধ করাই তার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করতে শুরু করে।
ভালোবাসার কাঙাল ছিল আমার প্রবীশ বাবা।মেঘার এমন ব্যবহার মেনে নিতে না পারলে ও আশা ছাড়িনি । অনেক চেষ্টা করেছিলো মেঘা বৌরাণীকে ভালো পথে আনার জন্য। কিন্তু বিগড়ে যাওয়া মন আর মস্তিষ্কের মানুষ কোনদিনও ভালো হবার নয়।
এভাবেই কেটে যায় একটা বছর। প্রবীশ বাবা সবকিছু মানিয়ে নিতে আর মেনে নিতে নিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে একদিন অফিসের কোনো এক ফাইল খুঁজতে খুঁজতে কাবাড থেকে একটি ফাইল খুঁজে পায়। যেটা তার কাছে যেন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে #অপ্রত্যাশিত_ভালোবাসা পাওয়ার আশার আলো দেখতে পায়। মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। সারাবাড়ি আনন্দে মাথায় তুলে রাখে। এইবার হয়তো মেঘা নিজেকে শুধরে নিবে। প্রবীশের জন্য না হলেও নিজের সন্তানের জন্য তাদের সম্পর্কটা আরো দৃঢ় হবে। এমনি ধারনা ছিল তার।
কিন্তু কথায় আছে না সুখ কি আর সবার কপালে সয়? মেঘা বাসায় ছিল না।প্রবীশ বাবা মেঘা কে ফোন করে। কিন্তু ফোন রিসিভ করে তার বন্ধু। মেঘা কে ফোন দিতে বলাই সে প্রবীশ কে জানাই মেঘা ডান্স করছে ক্লাবে। রেগে যায় প্রবীশ, অপেক্ষা করে মেঘার জন্য।না খেয়ে অপেক্ষা করে মেঘার জন্য। কিন্তু মেঘা বাসায় ফিরে রাত 11 টা 45 মিনিটের পর। প্রবীশ সোফায় ই বসে ছিল দরজার দিকে তাকিয়ে।
ঠুলতে ঠুলতে অন্য কারোর সাহায্যে মেঘা বাসার ভিতরে প্রবেশ করে। প্রবীশের সামনে দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে দরজার সামনে যাই। মেঘার বন্ধু তাকে ছেড়ে রুমে সামনে দিয়ে সিঁড়ির কাছে চলে আসে। মেঘা হাত দিয়ে তাকে ফ্লাইং কিস করে। তার বন্ধু ও সেম কাজ টাই করে।
প্রবীশ যে নিচে বসে ছিল তার কোন উদ্দিশ যেন তাদের নেই। মেঘার বন্ধুটি চলে যায়। প্রবীশ নিজের চোখে এগুলো নতুন দেখছে না। তবে আজকের এটা তাকে ভিন্নভাবে ভাবাচ্ছে।প্রবীশ ধীর পায়ে উঠে সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে যায়। সটান হয়ে উবুর হয়ে শুয়ে আছে বেডে মেঘা।
মেঘা:……….(আমার হাত দিয়ে অটোমেটিক নিজের মুখ চেপে ধরলাম।) কোন হাসবেন্ড কি এটা সহ্য করতে পারে….?
রামু চাচা:( স্মিত হেসে বলে) অন্যদিন হলে হয়তো এটা মেনে নিত প্রবীশ বাবা।কিন্তু সেদিন তাকে ওই ফাইলটা নিজেকে বাবা হওয়ার অনুভূতি জাগিয়েছিল।
সেদিনের পর থেকে মেঘাকে বাইরে বের হতে দেয়নি প্রবীশ বাবা। মেঘা নেশায় বুঁদ হয়ে ছিল তাই রাতে তাকে কিছুই বলেনি প্রবীশ বাবা। মেঘার নেশা কেটে গেলে সকালে প্রবীশ জিজ্ঞেস করায় জানতে পারে মেঘা অলরেডি চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা তবে সে এই বাচ্চাটা রাখবে না। সেদিন প্রথম প্রবীশ বাবা তার গায়ে হাত তুলছিল।প্রবীশ বাবা জানাই আজ থেকে তার বাইরে বেরোনো নিষেধ।
মেঘা বাচ্চাটা না চাইলে ও প্রবীশ বাচ্চাটাকে আঁকড়ে বাঁচতে চাই ।সে মনে করে বাচ্চাটা যদি একবার পৃথিবীর আলো দেখতে পায় তাহলে মেঘা নিজেকে বদলে ফেলতে পারে। মেঘার প্রতি অনেক বেশি কেয়ারিং শুরু করে দেয়। তবে তা মেঘার কাছে যেন তিক্ততার রুপ নেয়।
মেঘা নিজেকে সবসময় ফিট রাখতে চায়। এই সব পরিবার রিতি নিতি তার কাছে বোঝা লাগতো।মেঘার জেদ ধরে বসে এই বাচ্চাটা সে কিছু তেই রাখবে না। বাচ্চাটা না রাখার জন্য সে অনেক কিছুই করে কিন্তু প্রবীশ তার নিজের সর্বস্ব দিয়ে বাচ্চাটাকে সেভ রাখার চেষ্টা করে।
কথায় আছে না,জোর করে খাঁচায় পাখি বন্দি করলে, সেই পাখি কি আর পোষ মানায়? একদিন প্রবীশ অফিসের কাজে বাইরে যাই সুযোগ বুঝে মেঘা বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যায়।
বাসায় ফিরে এসে প্রবীশ যখন জানতে পারে মেঘা বাড়িতে নেই। তখন নিজের ঘরের সব কিছু ভাংচুর করে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ,মেঘা তার সেই ইহুদি বন্ধুর সাথে তার ফ্লাটে আছে।
মেঘা পরের দিন ফোন করে প্রবীশ কে যে, কাল এবরশন করাবে। প্রবীশ সেদিন পাগলের মতো ছুটে গিয়েছিল মেঘার কাছে। অনেক আকুতি মিনতি করার পরেও মেঘার মনটা সেদিন গলেনি। প্রবীশ বাবা এমন কি এটাও বলে আমি সারা জীবন তোমার গোলামী করে যাব তবুও তুমি এই বাচ্চাটাকে এবরশন কোরো না। মেঘা সেদিন প্রবীশ কে সাফ সাফ বলে যে, সে কিছু তেই এই বাচ্চা রাখবে না।
সেদিন ই জানতে পারে মেঘা প্রবীশকে বিয়ে করেছিল শুধু সম্পত্তির লোভে। সে তো ভালবাসে শুধু এই জারিফ কে। এমনকি কয়েকদিনের ভিতরে সে ডিভোর্স দিয়ে দিবে প্রবীশ কে।প্রবীশের মন সেদিন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। নিজেকে সামলিয়ে নিতে ফিরে আসে নিজের বাসায়।
পরে নানান ভাবে মেঘাকে বোঝাতে চেষ্টা করে। কিন্তু মেঘার একই কথা সে এই বাচ্চাটা নষ্ট করবে এবং তাকে ডিভোর্স দিবে । অনেক ভেবেচিন্তে প্রবীশ সিদ্ধান্ত নেয় মেঘার যদি এতোই লোভ, সম্পত্তির ।তাহলে প্রবীশ তার বাকি ৫০ শতাংশ মেঘার নামে করে দিবে।
সব ব্যবস্থা করে ফেলেছিল দুই দিনে।ফাইল পত্র গুছিয়ে মেঘাকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বেরোলেই দেখে নিজের জন্য একটি পার্সেল এসেছে। আমি ই রিসিভ করে ছিলাম সেই পার্সেল টা।প্রবীশ বাবা কে ডাকতে উপরে যেতেই দেখি সে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে।
অনেক হাসিখুশি দেখাচ্ছিল তাকে যেন এই ফাইলটা মেঘাকে দিলেই মেঘা তার বাচ্চাকে অন্তত নষ্ট করবে না। ভেবে রেখেছিলো এই ফাইল দেওয়ার পর ও যদি মেঘা বাচ্চাকে না রাখতে না চায় ।তাহলে সে বলবে, বাচ্চাটাকে জন্ম দিয়ে সে যদি না থাকতে চাই । তাহলে তাই হবে। তবুও সব কিছুর বিনিময়ে সে এই বাচ্চাকে চেয়েছিলো।তার বাবার মতো সেও অন্তত যেন ঐ বাচ্চাটাকে নিয়ে বাঁচতে পারে।
মেঘা: …..(পরের কথা টা কি তাই শোনার অধীর আগ্রহে জানতে চাইলাম আমি)কি ছিল রামু চাচা ঐ পার্সেলে…?
রামু চাচা: একটি চিঠি, একটি ডিভোর্স পেপার সাথে…….
মেঘা: সাথে কি……..?( আমি জানতে চাইলাম)
রামু চাচা: একটি পলিথিনে ভরা ছোট শরীরের কয়েকটি টুকরো ছিল।
মেঘা:..…😳😳তার মানে….?( আবাক হয়ে জানতে চাইলাম)
রামু চাচা:…… ঠিকিই ধরেছো…. মেঘা বৌরাণী বাচ্চাটা এবরশন করিয়েই ফেলে ছিল। চিঠিতে লিখেছিল তোমার জন্য সারপ্রাইজ।প্রবীশ বাবার মুখ টা সেদিন যদি একবার দেখতে ? ( জোরে একটা শ্বাস ছাড়লো রামু চাচা) সেদিন থেকেই মেয়েদেরকে সহ্য করতে পারে না সে।
মেঘা: ………(কখন যে আমার চোখ থেকে পানি ঝরছিল আমি টের ও পাইনি)
রামু চাচা:…. (আমার দিকে তাকিয়ে বললেন) প্রবীশ বাবার জীবনে যে কয়টি নারী চরিত্র এসেছে সবাই কে একই রূপে বারবার ফিরে পেয়েছে। সেই মানুষটার মনে নারী সম্পর্কে এর থেকে আর কি ভাল ধারণা হতে পারে বলো? সেজন্য তোমার সাথে বার বার ওমন ব্যবহার করেছিল। তার ধারণা ছিল সব মেয়ে এক রকম। আমি ভেবেছিলাম হয়তো তুমি তার। ধারণা টা পাল্টে দিবে….
তুমি আমার মেয়ের মতন কথাটা আমি বলতে চাইনি ।তবুও যেহেতু তুমি চলে যাচ্ছো, তাই বলছি_যেই বাচ্চাটার জন্য তুমি এমন ভেঙে পড়েছো! বড় হলে তার বাবার পরিচয়টা তুমি কি দিতে? একবারও কি ভেবে দেখেছো? বলতে পারো , যে দিন বাচ্চাটা তার বাবার পরিচয় জানতে চাইবে তুমি কি বলতে পারবে সেদিন ?সে যে তোমাকে দোষারোপ করবে না এমন গ্যারান্টি তুমি দিতে পারবে? আমার মনে হয় না। আমাকে তোমার বাবার মতন মনে করলে আমি বলব, ভালোই হয়েছে বাচ্চাটা পৃথিবীর আলোর মুখ না দেখতে পেরে ।
বাচ্চাটাকে পৃথিবীর বুকে আনতে না পেরে যতটা কষ্ট পাচ্ছ বাচ্চাটা আনার পরে হয়তো এর থেকেও তিনগুণ বেশি কষ্ট তুমি পেতে ।সে জন্যই ভগবান হয়তো এটা চাইনি। তুমি তাকে জন্ম দেও।
সে যাই হোক ,কথায় কথায় অনেক গল্প করে ফেলেছি । দেখছো সকাল থেকে বিকাল হয়ে গেছে। দুপুরের খাওয়াটা ও এখনো হলো না। এক কাজ করো চটজলদি আমি কিছু রান্না করে নেই, সেটা খাওয়ার পর তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসব আমি নিজেই। (আমার কোন উত্তর শোনার অপেক্ষা না করেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে আসে।)
মেঘা: বসা থেকে উঠে আমি ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। একটু এগিয়ে গিয়ে প্রবীশ বাবুর ছবির দিকে তাকিয়ে আছি। একটা মানুষের মনে এত কষ্ট সে কিভাবে সহ্য করে আছে? আমি তো তাও কাব্যর ভালোবাসা পেয়েছি। মায়ের ভালোবাসা পেয়েছি ।কিন্তু এই মানুষটা বাবা ছাড়া কাউকে কাছে পাইনি ।
মেঘা: আচ্ছা আমার বাচ্চাটা হলে সে কি ভবিষ্যতে আমাকে এমন প্রশ্ন করত??? অবশ্যই করতো! তাহলে আমি কি জবাব দিতাম তাকে? (মাথাটা ব্যথা করছে আর ভাবতে পারছিনা)
বিকালে খাবার পর রাতে আর খাবার খেতে মন চাই নি। রামু চাচা কথাই ঠিক, এই মানুষটার মনের ভিতরে মেয়েদের সম্পর্কে যে ভুল ধারণা সেটা হয়তো আমি পাল্টাতে পারি বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে। তাছাড়াও আমারও যাওয়ার কোন জায়গা নাই। আর প্রবীশ বাবু মানুষটা অতটাও খারাপ নয়। সিদ্ধান্ত নেই আমি এই বাড়ি থেকে যাব।
বসে বসে প্রবীশ বাবুর কথা ভাবছি। হঠাৎ করেই চোখটা লেগে এসেছে। কিন্তু কেমন যেন মনে হচ্ছে ঘুমের মাঝে প্রবীশ বাবু আমার সামনে এসে বসে, আমার দিকে তাকিয়ে বলছে_
আমি উড়ো চিঠি হব
মেঘেদের বাড়ি যাব
পাখিদের ভীড়ে হারাবো
যদি তুমি চাও।
তোমার জানালা দিয়ে আসা আলো হব
তোমার বাগানের ফুল হব
তোমার ফেলে রাখা কলম হব
যদি তুমি চাও।
তোমার না বলা কথা হব
তোমার না গাওয়া গান হব
তোমার হাসির কারন হব
যদি তুমি চাও।
তোমার উদাসী মনের মাঝি হব
তোমার নিঃচুপ চোখের চাওনি হব
তোমার না লেখা গল্পের শিরোনাম হব
যদি তুমি চাও।
যদি তুমি চাও তবে
ওই আকাশে জোসনা রবে
তোমার ঠোটে হাসির দেখা ফেলে
অজানাতেও দেব পাড়ি সব দুঃখ ভুলে।
হুড়মুড় করে ঠেলে উঠলাম। এ আমি কি দেখলাম ? প্রবীশ বাবু আমাকে এই কথাগুলো বলছে কেন? তাড়াতাড়ি উঠে পাশের টেবিলের জগ থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে হড়হড় করে এক নিঃশ্বাসে খেয়ে নিলাম। আমার এই দুই তিনটা বছরের মধ্যে এই প্রথম কাব্য বাদে আমি অন্য কোনো পুরুষ কে স্বপ্নে দেখছি। ছি ছি এটাও আমি কি ভাবছি? নিজেই নিজেকে বকা দিয়ে লাইট বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়লাম ।মুহূর্তে আবার ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলাম আমি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে যাবো তার আগে দেখি উপর থেকেই রামু চাচা দরজা খুলে দিলো। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে দেখি প্রবীশ বাবু দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে। তার না এখনো দুই দিন পরে আসার কথা ছিল তাহলে?
প্রবীশ বাবু নিজের গায়ের থেকে কালো কোট টি খুলে একপাশে রেখে দিল ।ধপ করে বসে মাথা টা সোফার পিছনে এলিয়ে দিলো। ।মনে হচ্ছে প্রচুর ক্লান্ত সে। কিন্তু এই সাতসকালে সে এখানে কি করে আসলো? তার তো চিটাগং থাকার কথা। আমি নিজের দুই হাত দিয়ে নিজের দু চোখে ভালো করে ডলে নিলাম। ভুল দেখছি কি না তার জন্য। নাহ সত্যিই সে এসেছে।
কিছু একটা মনে করে এক ভ্রু উঁচু করে একটা শয়তানী হাসি দিলাম। অনেক টা সাহস নিয়ে একটা মজা করতে মন চাইলো দেখা যাক প্রবীশ বাবুর মুখের রিএকশন টা কেমন হয়…..
ঘর থেকে প্রবীশ বাবু র দেওয়া বুতের কার্ড এনে সোজা রাগি রাগি মুখ নিয়ে তার সামনে দাঁড়ালাম।
দরজা দিয়ে অমিত বাবু লাকেজ নিয়ে ভেতরেই ডুকছিলেন। লাকেজ রাখার শব্দ পেয়ে প্রবীশ বাবু মাথা উঁচু করে দিতেই আমাকে ভূত দেখার মত সামনে পেলেন। মুখে একটু হাসি ভাব এনেই মুহূর্তে গম্ভির ভাব নিয়ে বললেন_
প্রবীশ বাবু:(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে) তাহলে তুমি এখনো যাওনি… ? আমি তো ভেবেছিলাম…..
মেঘা: চলেই তো গেছিলাম। কিন্তু টাকা তুলতে গিয়ে দেখি আপনি যে পাসওয়ার্ডটি দিয়েছিলেন তা সম্পূর্ণ ভুল।
প্রবীশ বাবু:…..😒😒😒পিন কোড ভুল..?
#চলবে……