অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা পর্ব -১৭

গল্প: #অপত্যাশিত_ভালোবাসা
লেখক:#কাব্য_মেহেরাব
পর্ব :#১৭

প্রবীশ বাবু: তাহলে তুমি এখনো যাওনি…….? আমি তো ভেবেছিলাম….…..

মেঘা: চলেই তো গেছিলাম । কিন্তু টাকা তুলতে গিয়ে দেখি আপনার দেওয়া পিনকোড টি ভুল।

প্রবীশ বাবু: পিন কোড ভুল 😒😒……..?(আমার রাগী ফেস দেখে তিনি নিজেও কনফিউজ হয়ে গেছেন, মুখের ভাবটা এমনই ছিল !)

মেঘা: টাকা নেই বা টাকা দিবেন না বললেই তো হলো। তাই বলে এইভাবে একটা অসহায় মেয়েকে পাবলিকের পিটানি খাওয়াতে চান….?

প্রবীশ বাবু:.দেখ….……(কিছু বলার সুযোগই পাচ্ছেন না তিনি)

মেঘা: কি দেখতে বলছেন বলুন …..? না আমি শুনতে চাই আপনি কি বলতে চান?

প্রবীশ বাবু: আগে আমা………

মেঘা: রাখেন আপনার কথা! পকেটের টাকা নাই ,আর ভাব নেন যেন কারোল প্রাতি ……(ব্যঙ্গ করে বলল)

অমিত বাবু:😳😳😳😳………..(প্রবীশ বাবু এবং আমার কথা বলার ভাবভঙ্গি দেখে তার মুখটা জাস্ট দেখার মতন ছিল,যেন চোখের কৌটা থেকে মণি গুলো বেরিয়ে আসতে চাইছে।)

আমি অমিত বাবুর সামনে গিয়ে বুতের কার্ট টা আমিত বাবুর হাতে ধরিয়ে দিলাম। তিনি আমার দিকে ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছেন। যেন এখনই আমার কথার বর্ষণ গুলো তার উপরে পড়বে। অনেক কষ্টে আমার হাসি চেপে রেখে তার এমন মুখোভঙ্গি দেখে আমি বললাম _

মেঘা: টাকা না থাকলে আপনার স্যারকে বলতে বলবেন যে তার কাছে টাকা নেই। শুধু শুধু গোটা চারেক কার্ড নিজের কাছে রেখে নিজেদের কে কোটিপতি দেখাবেন না।

অমিত বাবু:………….(ফেল ফেল করে আমার দুই চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন বাচ্চাদের মতো করে)

মেঘা: আমার কাছে টাকা না থাকলে গায়ের রক্ত বিক্রি করে টাকা দিতাম,তাই বলে একটা অসহায় মানুষকে এইভাবে বোকা বানাতাম না। চলি……(কথাটি বলে লম্বা লম্বা পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে চলে আসলাম)

প্রবীশ বাবু: (চিল্লিয়ে পিছন থেকে আমাকে ডাকছেন )মেঘা……মেঘা আমার কথা…….

তার কথায় কোনো কর্ণপাত না করে আমি সোজা আমার রুমে চলে আসলাম। দরজা টা খুব জোরে শব্দ করে বন্ধ করে দিলাম।যেন প্রবীশ বাবু মনে করেন তার মুখের উপর আমি দরজা টা বন্ধ করেছি। মুখ চেপে হাসছি আর ভাবছি ,আজ যে সাহস তাকে আমি দেখালাম ও মাই গড। রেগে গিয়ে না আমার উপর আবার টর্নেডো শুরু করে দেয়।জানালার কাছে গিয়ে হালকা ফাঁকা করে দেখলাম সে কি করে।

নাকের পাতা ফুলিয়ে প্রবীশ বাবু পিছনে ঘুরে অমিতের দিকে তাকাতেই দেখলো অমিত বাবু চোখ বড় বড়😳😳 করে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। গেল তার মেজাজ টা আরো বিগড়ে।

প্রবীশ বাবু: মাথা খারাপ হয়ে গেছে এই মেয়েটার….বলে কি…..? (রাগে ফুঁসছে আর বলছে)আমি ফাঁকা বুতকাড নিয়ে ঘুরি…..? কোটিপতির ভাব নিয়ে ঘুরি….?

অমিত বাবু: না তা নয়! সবই ঠিক আছে কিন্তু আপনি তাকে ভুল পিনকোড কেন দিয়েছেন? (অতি আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলেন তিনি)

প্রবীশ বাবু:…….. (রেগে গিয়ে চোখ বন্ধ করে হাতের মুঠ শক্ত করে ধরে যেন কয়েক হাজার অক্সিজেন নিজের মধ্যে টেনে নিলেন)

অমিত বাবু:(প্রবীশ বাবু কে বোঝানোর ভঙ্গি তে বললেন) না মানে হতেও তো পারে…..? আপনি একটা কাডের পিনকোড আরেকটা কার্ড ভেবে বলেছেন……?বা ঐ কাডে টাকা ফুরিয়ে গেছে। মানে….

প্রবীশ বাবু: লাইক সিরিয়াসলি……! তোমার এটা মনে হয়…..? এতদিন এই চিনলে আমাকে…..?

প্রবীশ বাবু র এমন কাটকাট কথা শুনে অমিত বাবু ভয়ে নিজের দুই ঠোঁট চেপে গলাটা ভিজিয়ে নিলেন। অতি আগ্রহে তিনি ভুলেই গেছেন কাকে কি বলছেন।

রামু চাচা ঘাড় থেকে গামছা নিয়ে নিজের মুখের হাসি ঢেকে নিলেন। মাথা নিচু করে কিচেন এর দিকে চলে গেলেন। রামু চাচার এমন প্রস্থান দেখে প্রবীশ বাবু দাঁতে দাঁত চেপে ধরলেন। মনে হলো কেউ তাকে সহজ ভাষায় অপমান করে গেল।আর এরা তার মজা নিচ্ছে।

প্রবীশ বাবু রাগী চোখ নিয়ে আবার অমিত বাবুর দিকে তাকাতেই অমিত বাবু গলা খাকারি দিয়ে বললেন ,এক্সকিউজ মি স্যার !আমার একটু ওয়াশ রুমে যেতে হবে। ক্যান আই গো…..(গলা ঝেরে বলল) আসছি……(বলে লাকেস নিয়ে তিনি তার রুমে র দিকে চলে গেলেন)

ঠাই দাঁড়িয়ে আছে প্রবীশ । মনে মনে বলছেন, ঐ টুকু একটা মেয়ে এইভাবে সবার সামনে অপমান করল? একটু বেশি ভালো ব্যবহার করছি কি না?? কিভাবে সবার সামনে জিঘাংসা করতে হয় এতোটুক কমন সেন্স নাই। আর এই মেয়েটার জন্য ই কিনা আমি সারারাত ড্রাইভ করে নিজেই জেচে অপমানিত হতে বাসায় আসলাম। আমার ই ভুল হয়েছে মিটিং ক্যানসেল করে । ধ্যাত ভাল্লাগেনা……

নিজে নিজে কথাগুলো ভেবে প্রবীশ নিজের গায়ের কোট টা সোফা থেকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে ঢুকলো।

জানালার পর্দাটা সরিয়ে আমি একা একা হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছি। অনেকদিন পর মন খুলে হাসছি। শেষ কবে এই হাসিটা এসেছে মনে পড়ছে না। কথা টা ভাবতেই বিষন্নতায় মন ছেয়ে গেল। আনমনে ই কতো গুলো কথা মনে এসে বলল_

দিনের শেষ হয়ে
এলো বুঝি বিষণ্নতার কামড়-
রোদেলা দিনের অনেক স্মৃতি ভাসে;
কোনটা রঙিন, কোনটা মলিন
মোড়ানো চাদর,
কোনটায় ছিটে-ফোঁটা বৃষ্টির জল,
কোনটা আঁধার ভাঙা চাঁদের আলো-
মনে পড়ে,পা-দোলানো আম্র-কানন;
সত্যি, বড় বিষণ্নতা আজ চেপে ধরেছে
সীমাহীন অন্ধকারে।
কাঁদবার ইচ্ছেটুকু থাকলেও
কাঁদতে পারি না,
সব জল শুকিয়ে গেছে সে-বেলায়।
কবে কার প্রেমের নেশায় উন্মুখ হয়ে
ডুব দিয়েছিলাম,এই তো!
তার সমাপ্তি ঘটেছে।
দিনের শেষে, আমি বড় একা ,
শূন্য আকাশে একটি গাঙচিলের মতো;
ক্লান্ত হয়ে ফিরলেও বলার জায়গা নেই সে-কথা,
সবই ধোঁয়ায় সফেদ, রঙহীন ধূসর কুয়াশা-
আশাহীন দীপশিখা চেয়ে রয়েছে,
ক্লান্তির ঘুমে ঢলে পড়া
আমার চোখের পাতায়।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here