তোমার নেশায় পর্ব -০৫

# তোমার_নেশায় !
.
.
(০৫)
,
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
.
.
.
কিছুক্ষন পর পশুটা আমায় ছেড়ে দিল। দুজনেই হাপাতে লাগলাম। রাগে ঘৃন্নায় আমার চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। কখন ও ভাবতে পারিনি যে লাইফে এমন এক বাজে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হবে তাও তার সাথে যাকে এই মুহুরতে সবচেয়ে বেশি ঘৃন্না করি। ইচ্ছা করছে কষে একটা থাপ্পর দেই কিন্ত বাবার কথা মনে পড়তেই হাত পিছিয়ে এলো। আমি নিরুপায়! কিন্তু সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষরুপি পশুকে অনেক টা শান্ত মনে হচ্ছে। সে তার ঠোট মুছে আমার দিকে তাকালো তারপর বলল,
.
:– নেক্সট টাইম যদি এমন ভুল আবার হয় তবে তোমায় এইভাবেই ক্ষতিপুরন দিতে হবে। এই বলে সে আবার বেরিয়ে পড়ল। আমার মাথায় কিছুই ধরছেনা। আমার আর সহ্য হচ্ছেনা ওই জানোয়ার কে। ইচ্ছা করছে এখুনি ছুটে পালাই কোনো এক নিরব দেশে যেখানে কোনো অফিসের টেনশান থাকবেনা আর এই ধরনের পশুকে ও দেখতে হবেনা। তবে বাবার কি হবে? আমি যদি এই বাড়িতে থাকি তাহলে প্রতিদিন ওর এই অত্যাচার গুলা মুখ বুজে সহ্য করতে হবে। বিজনেসের যা হওয়ার হোক আমি বাবাকে নিয়ে এখান থেকে অনেক দুরে চলে যাব। এই ভেবে দরজার দিকে পা বাড়ালাম। তখনই একটা স্মৃতি চোখের পাতায় ভেসে উঠল,
,
:– বাবা!
,
:– কি হয়েছে মামনি?
,
:— বাবা আমি তোমার ছেলে তাইনা?
,
:- হুম তুই আমার টাইগার ছেলে।
,
:– হুম বাবা, তোমার এই টাইগার ছেলে তোমার জন্য সব করতে পারবে। সব কষ্ট সহ্য করতে পারবে কিন্তু তোমার খুশি রাখবে। প্রমিস!
,
:–আই লাভ ইউ ডিয়ার।
,
:– আই লাভ ইউ টু বাবা।
,
চোখের কোন থেকে এক ফোটা অশ্রু জরে পড়ল। আমি এই কি করছিলাম বাবা আমায় টাইগার মনে করেন আর আমি কিনা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলাম। বাঘ কখন ও যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালায় বরং শত্রু পক্ষকে পালাতে বাধ্য করে। আমি ও তাই করবো, পালাবো না এই বাসা ছেড়ে রুপাঞ্জন খান আমায় কত কষ্ট দিতে পারে আমি ও দেখে নেব। কিন্তু আমার বাবার আশা ভরসা এইভাবে ভেঙে যেতে দেবোনা। আমায় পারতে হবে বাবা! তোমার জন্য সব পারবো আমি। এইভাবে ১ মাস কেটে গেল পশুটার সাথে। কিন্তু সে আগের মতই আমাকে কষ্ট দেয় এখন অনেকটা সহ্য করে নিয়েছি কষ্ট গুলা। তবে এই একমাসে ফুফির সাথে অনেক ভাব হয়ে গেছে আমার। ফ্রি হলেই আমি ওনার সাথে গিয়ে আলাপ জমাই। কিন্তু উনি শুধু আমার দিকে তাকিয়ে চোখের পলক ফেলেন। আমি ওতেই বুঝতে পারি কি বলছেন উনি। আমি জানি ফুফি একদিন ঠিক সুস্থ হবেন। আজ ও আমি রান্না করতে এসেছি। এখন আমি অনেক টা শিখে গেছি রান্না বান্না। রুপাঞ্জন ইচ্ছা করেই আমায় এমন কিছু রান্না করতে বলে যেটা আমি পারবোনা তবুও আমি চেষ্টা করি কারন আমি হাত গুটিয়ে বসে থাকার মানুষ না। অনেক চেষ্টা করি রুপাঞ্জন কে একবার জিজ্ঞাস করতে ডিলের ব্যেপার টা কিন্তু তাতে ও রেগে জিনিস ভাঙচুর করে। আজ শুক্রবার তাই রুপাঞ্জনের অফিস বন্ধ। ও রুমে বসে কাজ করছে আমায় ডাক দিল। ও হ্যা উনি বলেছেন আমি যেন ওনাকে স্যার বলে ডাকি। কারন আমি ওনার হোম মেড বা ছাকরানি। আমি ওনার রুমে গিয়ে দরজায় নক করলাম,
:– ইয়েস কাম ইন!
,
:– কিছু লাগবে স্যার!
,
:– হুম এক কাপ কফি করে দাও, তাড়াতাড়ি!
,
:– ওকে স্যার!
.
.
আজ কফি খাওয়ানোর ফাকে ডিলের কথা জিজ্ঞাস করেই নেব এতো ভয়ে পেলে চলবে নাকি। কিচেনে গিয়ে কফি চুলায় বসালাম। তখনই আমার ফোন বেজে উঠল, আমার পুরোনো কলেজ ফ্রেন্ড সোহান ফোন দিয়েছে। অনেকদিন পর কথা হচ্ছে ও বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছে। টুকিটাকি কথা বলতে বলতে কফি মগে ডালছিলাম। আমি সোহানের সাথে অনেক হেসেই হেসেই কথা বলছিলাম ও অনেক মজার মানুষ তো তাই। আমি খেয়াল করিনি যে রুপাঞ্জন এর কফি দিতে লেইট হয়ে যাচ্ছে আর ও কিচেনের দরজায় দাড়িয়ে আছে। ওর দিকে চোখ পড়তেই আমার অন্তর কেপে উঠল। ওর চোখ আগুনের মতো লাল হয়ে আছে। আমি তাড়াতাড়ি ফোন রেখে দিলাম। তখনই রুপাঞ্জন গর্জন করে উঠল,
,
:–how dare you miss, rupsha chowdhury!! এটা আমার বাসা কোনো প্রেম করার জায়গা না। আর আপনি আমার কফি না দিয়ে চুটিয়ে প্রেম করছেন?? এতো সাহস….
,
:– স্যার আসলে ও.. অনেক…
,
:– কি হ্যা??? প্রেমিক কে অনেক ভালোবাসেন বুঝি?
,
:– না.. মানে
কিছু বুঝে উঠার আগেই রুপাঞ্জন টেবিলের উপর রাখা গরম কফি আমার হাতে ছুড়ে মারল। আমি প্রচন্ড ঝন্ত্রনায় আর্তনাদ করে উঠলাম। আমার পুরো হাতে ফোস্কা পড়ে গিয়েছে। অস্য যন্ত্রনায় যেন এক্ষুনি আমার প্রান বেরিয়ে যাবে। উনি এতো নিষ্ঠুর কি করে হতে পারলেন। আমায় এই অবস্থায় রেখে উনি রাগে হন হন করে বেরিয়ে গেলেন। আমি দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে বসে পড়লাম আমার হাতের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। আমার চিৎকার যে কেউ শুনতে পাবেনা। আমি যে ঝন্ত্রনায় পাগল হয়ে যাব। কাঁদতে কাঁদতে মাথা টা ঝিম ঝিম করে উঠল। মনে হচ্ছে আমি জ্ঞান হারাচ্ছি! আর কিছু মনে নেই। চোখ খুলে দেখলাম আমি আমার রুমের বিছানায় শুয়ে আছি। আমার যতটুকু মনে পড়ে আমি তো বাথরুমে ছিলাম তাহলে আমায় কে আনল এখানে। আর আমার হাত…. হাতের দিকে চোখ পড়তেই আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম, সয়ং রুপাঞ্জন খান আমার হাতে মলম লাগিয়ে ড্রেসিং করে দিচ্ছেন। আমি কি সপ্নে দেখছি। আমার নড়াচড়া দেখে উনি আমার দিকে তাকালেন। ওনার চোখের এই চাহনি টা বড় অচেনা আমার। উনি তো সবসময় কঠিন চোখে তাকাতেন আমার দিকে। ওনার ভাবনায় ডুবে ছিলাম তখন উনার কথায় বাস্তবে ফিরলাম,
,
:– তোমায় উঠতে হবেনা, রেস্ট নাও!আর টেবিলের উপর তোমার জন্য মেডিসিন রেখে দিয়েছি সময় মত খেয়ে নিবে আর যতদিন হাত ভালো না হয় কাজ করতে হবেনা,আর……
,
:–স্যার! একটা কথা বলবো?
,
:– হুম।
,
:– একটা সাধারন হোম মেডের জন্য এতো কেয়ার?
,
আমার এই প্রশ্নের জন্য হয়ত উনি প্রস্তুত ছিলেন। কিছুটা অবাক হলেন হয়ত নিজেই নিজের কান্ড দেখে, তারপর বললেন,
,
:– দেখ এটাকে অন্য কিছু ভেবোনা। এটা আমার মানবতা! তোমার প্রতি যাস্ট একটু দয়া দেখিয়েছি কারন দোষ টা আমার ছিল। আর হ্যা, তোমার জায়গায় এখন রাস্তার কোনো ভিক্ষিরি থাকলেও আমি তাই করতাম। হাত ঠিক হলে,Get back to work!
,
কি বলে গেলেন উনি, আমি আর রাস্তার ভিক্ষিরি এক হলাম?? আমি তো ওনার………..
না থাক এই সমপর্কের কোনো ভিত্তি নেই। তাই এটা বলাও বাহুল্য। উনি তো আমাকে কষ্ট দিতেই এখানে এনেছেন আর সেটাই করছেন। এখানে অভিযোগের কিছু নেই। কিন্তু যতই বলে বেড়াই এটা নরমাল, বুকের বাম পাশে একটা চিনচিন ব্যেথা অনুভব করছি। এটার কারন কি? জানিনা! হয়তো কখনই জানতে পারবোনা। অনেক ক্ষন হলো এইভাবে বসে আছি, খুব ক্ষিদে পেয়েছে। কিছু একটা বানিয়ে খেতে হবে। আমি কিচেনে গেলাম আস্তে আস্তে। গিয়ে তো আমি অবাক রুপাঞ্জন স্যার রান্না করছেন। ওনার ও হয়ত ক্ষিদে পেয়েছে বাট উনি ও রান্না করতে পারেন জানতাম না। না বাবা উনি আমাকে দেখার আগেই কেটে পড়ি। ওনার রান্না শেষ হলেই আমি রান্না করব। এখন একটু ফুফির কাছে যাই। আমি ফুফির রুমে ডুকলাম। আগের মতই উনার সাথে কথা বলছি কিন্তু আজ ফুফির দৃষ্টি আমার দিকে নয়, আমার হাতের দিকে স্থির। আমি যত সম্ভব হাতকে আড়াল করে ওনার সাথে কথা বলছি। তারপর উঠে পড়লাম ওনাকে কম্বল পরিয়ে বের হয়ে গেলাম। কেউ যদি খেয়াল করত, তবে দেখতে পেত ফুফির চোখের কোনে জল গড়িয়ে পড়ছে। আমি রুমে গিয়ে বসতেই রুপাঞ্জন স্যার আমায় ডাইনিং এ ডাকতে লাগলেন। উনার রান্না শেষ উনি কি আমায় সার্ব করতে ডাকছেন। হয়ত এটাই, গিয়ে দেখে আসি। ডাইনিং এ গিয়ে দেখি রুপাঞ্জন স্যার টেবিলে বসে আছেন। আমি ওনাকে সার্ব করার জন্য হাত বাড়াতেই,
,
:– এই কি করছো কি??
,
:– স্যার আপনাকে সার্ব করে দিচ্ছি।
,
:– বোকা মেয়ে, পোড়া হাত নিয়ে তুমি সার্ব করবে?? বেশি কাজ দেখাচ্ছো??
,
;– তাহলে আমি যাই।
,
,,
:–কোথায় যাচ্ছো??
,
:– কিচেনে রান্না করতে।
,
:– এই মেয়ে এই!! তোমার হাতের সাথে কি চোখ ও পুড়েছে?? এখানে এতো খাবার কে খাবে?
,
:– ওগুলা আপনি খাবেন, আমি আমার জন্য রান্না করব।
,
:-; সাট আপ!! চুপচাপ বসো চেয়ারে।
,
দমক শুনে বসে পড়লাম। উনি আমার প্লেটে খাবার নিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু খাবো কিভাবে বুঝতেছিনা হাতে তো ব্যেন্ডেজ।
স্যার আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভেবে বললেন,
:– হা করো!
,
:– কেন স্যার??
,
:– এই তুমি কি প্রশ্ন করা ছাড়া কিছু পারোনা? চুপচাপ হা করো।
,
আমি হা করলাম আর উনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন। আমি অবাক দেখছি ওনাকে। বাবা আমাকে ঠিক এইভাবেই খাইয়ে দিত। আজ কেন জানিনা সামনে থাকা মানুষ টা কে ফেরেস্তার মতো সুন্দর মনে হচ্ছে। ওনার জোড়া ব্রু দুইটি অনেক সুন্দর। উনি আমাকে জিজ্ঞাস করলেন,
:– ওমন হা করে তাকিয়ে থাকলে খাবে কখন? আমার অনেক কাজ আছে।
,
আমি ওনার কথায় লজ্জা পেলাম খুব। কি করছিলাম আমি? ওনাকে তো ঘৃন্না করি তাহলে এতো কিছু ভাবছি কেন?…..
খাওয়া শেষে মেডিসিন খেয়ে নিলাম। আর উনি ওনার রুমে ল্যেপটপ নিয়ে কাজ করছেন।সন্ধ্যা হয়ে এলো উনি কোথাও যেন বের হয়ে গেলেন। আমার খুব শীত করছিল তাই কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। শরিল টা খুব উইক লাগছে। মনে হচ্ছে জর আসছে! উফফ, মাথা ও অনেক ব্যথা করছে। কি যে করি। আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। এইভাবে কতক্ষন পড়েছিলাম জানিনা। হঠাৎ আমার মনে হলো আমার রুমের দরজা ফাক হলো কেউ যেন এগিয়ে আসছে আমার দিকে। আরে এটা তো সালমান খান, কাছে আসতেই বুঝলাম না উনি রুপাঞ্জন খান। জরে পাগল হয়ে যাব মনে হয়……..
,
,
,

# ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here