–এইরকম কুৎসিত একটা মেয়েকে আমি বিয়ে করেছি মা?তোমাদের কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে এই মেয়েকে তোমরা আমার সাথে বিয়ে দিয়েছো।আমি এখন আমার ফ্রেন্ড সার্কেল এর কাছে মুখ দেখাবো কি করে?
তিশান এর চেচিয়ে বলা কথা গুলো তীরে মতো গিয়ে নুসাইবার বুকে বিধলো।নুসাইবা আঁচলে মুখ গুঁজে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে। কাল বিয়ে করে আজ স্বামীর মুখে এইসব কথা শুনে ও অনেক টা পাথরের ন্যায় শক্ত মুখ করে দাড়িয়ে আছে।কান্না গুলো নুসাইবার গলায় ঝট পাকিয়ে আছে।কাল সারারাত ও তিশান রুমে আসেনি।তখনেই নুসাইবা বুজে গিয়েছিলো তিশান নিজের ইচ্ছায় এবিয়ে করেনি।তাহলে কেনো বিয়েটা করলো তিশান?নুসাইবার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে তিশান পূর্নরায় চেচিয়ে বললো..
_আমি এ মেয়েকে আজেই ডিভোর্স দিব।
বলেই তিশান রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে তিশানের মা বললো,,,
–আমি কি বিয়ে করিয়েছি নাকি তোর বাবা তো আমার কথার দামেই দেয় না।কি করব বল?
তিশান ওর মায়ের কথা শুনে দাত কড়মড় করতে করতে বলে উঠলো,,
—তাই বলে এইরকম একটা কালো মেয়ের সাথে আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলের তোমরা বিয়ে দিয়ে দিলে।তুমি জানো মা ভার্সিটির কত মেয়ে আমার জন্য পাগল আর আমার বউ নাকি একটা কালো,কুৎসিত মেয়ে।আমি…..
তিশান আর কিছু বলার আগেই দরজার সামনে থেকে কেউ উচ্চস্বরে বলে উঠলো,,,।
–এটা ভদ্র লোকের বাড়ি এত উচ্চস্বরে কথা বলা এখানে শোভা পায়না সেটা নিশ্চয়ই তুমি জানো তিশান। তাছাড়া তোমার সদ্য বিয়ে করা বউয়ের নামে এইসব বলতে তোমার মুখে বাধছে না সেই মেয়েটা শুনতে পেলে কতটা কষ্ট পাবে একবার ভেবে দেখেছো।
তিশান আর ওর মা দরজার দিকে তাকাতেই চুপ হয়ে গেলো।তিশানের বাবা এগিয়ে এসে তিশানের সামনে দাড়িয়ে বলে উঠলো,,
—তুমি নিশ্চয়ই জানো কাল কি পরিস্থিতিতে তোমাদের বিয়ে হয়েছে তাহলে আজ এত প্রশ্ন কেনো করছো তুমি?
তিশান যেমনেই হোক ওর বাবার উপর ও কখনো উচ্চস্বরে কথা বলতে পারেনা।তাই নিচু স্বরেই বলে উঠলো…
—দেখো বাবা যেখানে তোমার ভাই আর ভাইয়ের ছেলে তোমার সম্মানের কথা ভাবলো না সেখানে তাদের সম্মান বাঁচানোর জন্য তুমি নিজের ছেলেকে বলি দিলে।একবার ও ভাবলে না তোমার ছেলের পছন্দের কেউ থাকতে পারে।তাও যদি মেয়েটা দেখতে সুন্দর হতো আমি মেনে নিতাম কিন্তু বাবা ওইরকম একটা মেয়ে কে আমি কেনো কোনো ছেলেই মেনে নিতে পারবে না।
তিশানের বাবা চোখ গরম করে তিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,,
—যাকে বিয়ে করেছো তাকে সম্মান দিতে শিখো তিশান।নুসাইবা খুব ভদ্র শান্ত আর ভদ্র পরিবারের মেয়ে তুমি ওর সাথে সুখে থাকবে।হ্যাঁ হয়তো ওর গায়ের রঙ শ্যাম বর্ন বলে তুমি ওকে বার বার কালো বলে আখ্যায়িত করতে পারোনা।
তিশানের রাগে শরীর ফেটে যাচ্ছে।তাই একপ্রকার চেচিয়ে বলে উঠলো,,
—আমি কিছুতেই ওই মেয়েটাকে মেনে নিতে পারবনা বাবা।আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।তাই ওই মেয়েটাকে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
বলেই তিশান হনহন করে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।তিশান বেড়িয়ে যেতেই তিশানের মা বলে উঠলো,,,
—তিশানের বাবা তুমি কিন্তু আরেক বার ভেবে দেখতে পারতে ঠিকি তো ওই মেয়েটাকে কি আমার হিরের টুকরো ছেলের সাথে মানায় নাকি।তু……
তিশানের বাবা রাগী চাহনী দেখে তিশানের মা চুপ করে রুম ত্যাগ করলো।সবাই চলে যেতেই তিশানেত বাবা নিজে নিজেই বলে উঠলো,,,
–আজ তোমরা শুধু মাত্র গায়ের রঙের জন্য যেই মেয়েটাকে এত নিন্দা এত অপমান করছো একদিন তোমরাই বলবে”কালোই জগতের আলো”আর সেদিন বুঝবে আমি এই মেয়েটাকে ঘরের বউ বানিয়ে ভুল কাজ করিনি।সেদিন খুব শিঘ্রই আসবে।
____________________________________________নুসাইবা এত ক্ষন ধরে পাশের রুম থেকে ওদের সবার কথাই শুনছিলো আর চোখের জল ফেলছিলো।কারোর পায়ের শব্দ শুনে নুসাইবা তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিয়ে খাটের কোনায় গুটিশুটি মেরে বসে পড়লো।তিশান রুমে ঢুকেই নুসাইবাকে ওর রুমে দেখে রাগে ফেটে পড়লো।তিশান রাগে নুসাইবার সামনে গিয়ে নুসাইবার হাত টা জোরে চেপে ধরে বলে উঠলো,,,
—আমার রুমে ঢোকার পারমিশন তোমাকে কে দিয়েছে।এক্ষুনি বেড়িয়ে যাও তুমি আমার রুম থেকে। বেড়িয়ে যাও বলছি।
বলেই নুসাইবাকে কোনো কথা বলতে না দিয়ে তিশান ওর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে দরজার সামনে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলো।নুসাইবা পড়ে যাওয়ার আগেই কেউ ওকে ধরে ফেললো।নুসাইবা অশ্রসিক্ত চোখে সামনে তাকাতেই একটা ২৬-২৭ বয়সী মেয়েকে চোখে পড়লো।মেয়েটাকে নুসাইবাকে ধরে শান্ত চোখে জিজ্ঞেস করলো….
–তুমি ঠিক আছো তো।তোমার কোথাও লাগে নি তো।
নুসাইবা প্রতিউওরে মাথা নাড়াতেই মেয়েটা রাগী চোখে তিশানের দিকে তাকালো।তিশান অসময়ে তৃষাকে চোখে সামনে দেখে একটু অবাক হলো বটে।
—আপু তুই এইসময় এখানে?
তৃষা আর কিছু না বলে সোজা তিশানের সামনে গিয়ে সজোরে তিশানের গালে একটা থাপ্পড় মেরে বসলো।এই প্রথন তৃষা ওর প্রানের প্রিয় ভাইয়ের গায়ে হাত তুললো।তিশান গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে তৃষার দিকে তাকাতেই তৃষা রাগী স্বরে বলে উঠলো,,,
–একটা মেয়েকে কি করে সম্মান করতে হয় সেটা বোধহয় তুই ভুলে গেছিস আর নয়তো নিজের সাদা চামড়ার অহংকারে তোর বিবেক বুদ্ধি লোপ পেয়েছে তাইনা তিশান।
তিশান তৃষার দিকে অবাক চাহনী নিক্ষেপ করে বলে উঠলো,,,
–বাইরের একটা মেয়ের জন্য তুই আমার গায়ে হাত তুললি আপু।
—যেই শাসন টা তোকে আমার মায়ের করার কথা সেই শাসন টা আমিই করলাম কারন আমার মা তো তোকে শাসন করার বদলে উসকে দিচ্ছে।
—তৃষা নিজের মায়ের সম্পর্কে ভালো করে কথা বলো।
তিশার মা সবাই চেচামেচি শুনে তিশানের রুমের সামনে আসতেই তৃষার কথা শুনে উপরোক্ত কথাটা বলে উঠলো।তিশান ওর মাকে দেখে আর কিছু না বলে রেগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।তৃষা মায়ের কথা শুনে শান্ত কন্ঠেই বলে উঠলো….
—দেখো মা তোমাদের কাছে অনুরোধ এমন কিছু করোনা যাতে বাবার সম্মান ধুলোয় মিশে যায়।
বলেই নুসাইবার হাত ধরে তৃষা তিশানের রুমে ভেতরে নিয়ে এসে খাটের উপর বসিয়ে বলে উঠলো….
–আমার ভাইয়ের হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি।আসলে হুট করে বিয়েটা হয়েছে তো আর তিশান এর সাথে তোমার বিয়েটা কি পরিস্থিতে হয়েছে সেটা তুমি ও জানো তাই তিশান বিয়েটা মেনে নিতে পারছেনা কয়েকদিন যেতে দাও সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।
নুসাইবা প্রতি উওতে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে উঠলো….
–আমি কিছু মনে করিনি আপু উনার জায়গায় আমি থাকলেও হয়তো সেম কাজ টা করতাম।
____________________________________________
তিশান সোজা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সাহেরিকার বাসায় চলে আসলো।কয়েক বার বেল বাজতেই সাহেরিকা দরজা খুলতেই তিশানের অবস্থা দেখে অবাক হয়ে চেয়ে আছে।এলোমেলো চুল গুলো কপালের উপর ছড়িয়ে আছে,চোখ দুটো লাল হয়ে আছে,বেশি ফর্সা হওয়ায় নাকের ডগা জবা ফুলের মতো লাল হয়ে আছে।হঠাৎ তিশানের এই অবস্থা দেখে সাহেরিকা কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।সাহেরিকাকে কিছু বলার সুযোগ না দিলে তিশান সোজা রুমের ভেতর ঢুকে সোফার মধ্যে হেলান দিয়ে বসে পড়লো।তিশান সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।সাহেরিকা ওর পাশে বসে ওর মাথায় হাত রাখতেই তিশান চোখ খুলে সাহেরিকার দিকে তাকাতেই সাহেরিকা বলে উঠলো,,,,
— মিস্টার তাহসান আহম্মেদ তিশান এর এই অবস্থা কেনো শুনি?একটা মেয়েকে নিয়ে তিশান এর অবস্থা ওহ মাই গড।লাইক সিরিয়াসলি।
তিশান কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠলো,,
— দেখ সারু স্টুপিড কথা বন্ধ করে একটা বুদ্ধি দে আমাকে যে ওই মেয়ে টাকে আমি কি করে আমার ঘাড় থেকে নামাবো।
#চলবে….
#অবশেষে_তুমি_এলে_কাছে
#লেখিকা_জেনিফা_চৌধুরী(ছদ্মনাম)
#সূচনা_পর্ব