#অবশেষে_তুমি_এলে_কাছে
#লেখিকা_জেনিফা_চৌধুরী(ছদ্মনাম)
#পর্ব_চতুর্থ
—বাবা হওয়ার অভিনয় আর কতদিন করবেন।মেয়েটার থেকে সব কেড়ে নিয়ে আজ আপনি ওর সামনেই ওর ভালো বাবা হওয়ার নাটক করে যাচ্ছেন।
তিশানের কথা শুনে নুসাইবার বাবা বার বার কপালে জমে থাকা ঘাম ঝাড়ছে।তিশান আর কিছু না বলে সোজা নুসাইবার বাবার কলার চেপে ধরে চেচিয়ে বলে উঠলো…….
—কেনো করলেন আপনি এইসব?একটা ৭-৮ বছরের মেয়ের জীবন থেকে আপনি ওর বাবা-মা কে কেড়ে নিয়েছেন।আমার থেকে কেড়ে নিয়েছিলেন আমার ভালোবাসা।কেনো করেছিলেন এসব আপনি?আজকে আপনাকে সমস্ত প্রশ্নের উওর দিতেই হবে মিস্টার রায়হান মির্জা।
নুসাইবার বাবা তিশানের রাগ দেখে ভয়ে বার বার ঢোক গিলছে।তারপর ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উঠলো, ,
—তুতুতুমি এসব কি বলছো?আমি কিছু করিনি।আমি নুসার নিজের বাবা।আ।….
নুসাইবার বাবাকে পুরো কথা টা শেষ করতে না দিয়ে তিশান জোরে চিৎকার করে বলে উঠলো,,
—-স্টপ।আই স্যা স্টপ। আর কত মিথ্যা বলবেন আপনি?আমার কাছে সব প্রমান আছে মিস্টার রায়হান মির্জা।আমি চাইলে এক্ষুনি এই প্রমান গুলো পুলিশ এর হাতে জমা দিতে পারি।
—ককককি প্রমান আছে তোমার কাছে?
নুসাইবার বাবা প্রশ্ন করতেই তিশান ল্যাপটপ টা বের করে একটা ভিডিও প্লে করতেই রায়মান মির্জার চোখ দুটো বেড়িয়ে আসার উপক্রম। বার বার ঢুক গিলতে লাগলো।ভিডিও টা শেষ হতেই তিশান ঘুরে নুসাইবার বাবার সামনে এসে একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে উঠলো,,,
—ভাবছেন তো এত বছর পর আমি এইসব প্রমান কোথা থেকে পেলাম।একটা কথা আছেনা”চোর চুরি করলে একটা না একটা প্রমান রেখে যাবে”ঠিক তেমনি আপনি এই ভিডিও গুলো রেখে অনেক বড় ভুল করেছেন।
নুসাইবার বাবা ভয়ে কথা বলতে ও পারছেনা। তিশান ল্যাপটপ টা বন্ধ করে নুসাইবার বাবার সামনে এসে একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে উঠলো,,,
—এখনো অনেক খেলা বাকি রায়হান মির্জা যে খেলা আপনি অনেক বছর আগে শুরু করেছিলেন সেটা শেষ করব আমি।খুব শিঘ্রই আমাদের দেখা হবে হয়তো সেদিন আপনার শেষ দিন ও হতে পারে মাইন্ড ইট।
বলেই তিশান বেরিয়ে গেলো।তিশান বেড়িয়ে যেতেই রায়মান মির্জা চোখে থেকে চশমাটা খুলে একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,,,
–যে খালা আমিই শুরু করেছিলাম সে খেলা আমিই শেষ করব।আর তিশান এত বছর পর তুমি আমার আসল রুপ টা বের করে এনে কত বড় ভুল করলে সেটা তুমি নিজেও জানোনা।
বলেই রায়হান মির্জা হা হা করে হাসতে লাগলো।
____________________________________________
বাড়ি ফিরেই তিশান সোজা নুসাইবার রুমে চলে গেলো।হঠাৎ তিশান কে নুসাইবার রুমে দেখে নুসাইবা খানিক টা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
তিশান নুসাইবার রুমে ঢুকে নুসাইবার সামনে গিয়ে নুসাইবাকে আচমকা জড়িয়ে ধরলো।নুসাইবা তিশানের এহেতুক কান্ডে আকাশ থেকে পড়লো।কি বলবে বুঝতে পারছেনা।তিশান নুসাইবাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,,,,
—আমাকে ক্ষমা করে দাও শ্যামকর্ন্যা।প্লিজ ক্ষমা করে দাও।তুমি আমার এত কাছে ছিলে আর আমি তোমাকে চিনতে পারিনি এত বছর কত বোকা আমি।এই যে দেখো আজ তোমার তিশানদা তোমার সামনে।
নুসাইবা তিশানের কথা কিছু বুঝতে পারছেনা।কি বলছে তিশান এসব?কেনই বা বলছে।কে শ্যামকর্ন্যা,কে তিশান-দা আর কেনই বা তিশান এসব নামে ডাকছে।এসব কিছু ভাবতেই নুসাইবা জোর করে তিশান এর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।নুসাইবা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কড়া কন্ঠে জিজ্ঞেস করে উঠলো,,,
—কি করছেন আপনি?মাথা ঠিক আছে আপনার,পা’গল হয়ে গিয়েছেন।এসব কি বলছেন?কে শ্যামকর্ন্যা আর আপনিই বা আমাকে কেনো বলছে এত বছর পর আমাকে চিনতে পেরেছেন কে আমি?
নুসাইবার এমন প্রশ্নে তিশান অবাক চোখে নুসাইবার দিকে তাকিয়ে আছে।তিশান কিছু ক্ষন চুপ থেকে নুসাইবার দুই গালে হাত রেখে অসহায় কন্ঠে বলে উঠলো,,,
—তোমার তিশান-দার কথা তুমি ভুলে গেছো শ্যামর্কন্যা। দেখো আমাদের শৈশবের স্মৃতি তোমার কিছু মনে পড়ছে না।
শৈশবের স্মৃতি কথা টা মনে উঠতেই নুসাইবার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো।নুসাইবাকে কান্না করতে দেখে তিশান থতমত খেয়ে গেলো তিশান নুসাইবার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলো,,,,
—কি গয়েছে শ্যামর্কন্যা।কাঁদছো কেনো?আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি তাইনা।আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ তাও কেঁদো না।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।আমাকে যা খুশি শাস্তি দাও তাও কেদোনা প্লিজ।
তিশান কে এমন ভাবে উত্তেজিত হতে দেখে নুসাইবা ছলছল চোখে তিশানের দিকে তাকিয়ে আছে।নুসাইবা তিশানের থেকে খানিক টা দূরে গিয়ে চোখের পানি মুছে নিয়ে বললো….
—আপনার এহেতুক আচরনের কারন আমি বুঝতে পারছিনা তিশান।হঠাৎ করে আমার প্রতি একটু বেশিই কেয়ার দেখাচ্ছেন এইসব কি?
তিশান অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে নুসাইবার দিকে সত্যি কি নুসাইবা চিনতে পারছেনা তিশান কে?
—তুমি সত্যি কি আমাকে চিনতে পারছো না নুসা……
নুসাইবা নামটা বলতে গিয়েও তিশান থেমে গেলো।হঠাৎ করেই মনে পড়লো ওর নাম তো নুসাইবা ছিলোনা।তিশান মনে মনেই ভাবতে লাগলো….
—আমার শ্যামকর্ন্যার নাম তো নুসাইবা ছিলোনা।তাহলে কি আমি কোনো ভুল করছি।আমি কি কিছু এলোমেলো করে ফেলছি?এই মেয়েটা কি আমার শ্যামকর্ন্যা না?
ভাবতে ভাবতেই তিশান একপা একপা করে পিছিয়ে যেতে যেতে বাইরে বের হয়ে গেলো।
তিশান চলে যেতেই নুসাইবা ধপ করে খাটের উপর বসে পড়লো।এসব কি হচ্ছে নুসাইবা কিছু বুঝতে পারছেনা।
____________________________________________
“পরের-দিন”
একটা ভাঙা বিল্ডিং এর এক কোনার রুমে হাত পা বাধা অবস্থায় একটা ২৪-২৫ বছরের ছেলে পড়ে আছে।তিশান ভেতরে ঢুকেই এক জগ পানি ছেলেটাত মুখে মারতেই ছেলেটার হুশ ফিরে আসলো।হুশ ফিরেই নিজেকে এমন অবস্থায় দেখে ছেলেটা চেচামেচি করতে লাগলো।ছেলেটার চেচামেচি শুনে তিশান একটা ছুড়ি বের করে ছেলেটার গলার সামনে ধরতেই ছেলেটা ভয়ে চুপ করে গেলো।
-আমি যা যা প্রশ্ন করব সব প্রশ্নের উওর আমার চাই।যদি একটা ও আউট শব্দ বের হয়েছে তাহলে তোর ঘাড় থেকে মাথাটা আলাদা করে দিতে আমার ১ মিনিট সময় লাগবেনা।
ছেলেটা তিশানের হুমকি বার্তা শুনে ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়াতেই তিশান প্রশ্ন করে বসলো….
—রায়হান মির্জা কে?নুসাইবার সাথে রায়হান মির্জার কি সম্পর্ক?
—রায়হান মির্জা হচ্ছে রাশেদ মির্জার বড় ভাই সম্পর্কে নুসাইবার চাচা হয়।
রাশেদ মির্জা নাম শুনতেই তিশান আকাশ থেকে পড়লো।তাহলে তিশান যেসব প্রমান পেয়েছে সেগুলো সত্যি। তারমানে নুসাইবাই তিশানের শ্যামর্কন্যা।তিশান দেরি না করে আবারো প্রশ্ন ছুড়ে মারলো…..
—নিশিতার। কিন্তু ওর নাম তো নিশিতা ছিলো।নুসাইবা বলে ওর কোনো নাম ছিলনা।
— হ্যা আপনি ঠিক বলেছেন নুসাইবা ওর আসল নাম না।
—তাহলে? ঠিক করে বলবি নাকি…..
বলেই তিশান ছুড়িটা ছেলেটার গলায় আবারো ধরতেই ছেলেটা ভয়ার্ত কন্ঠে বললো…..
—বববলছি!বলছি!বলছি!এটা নামান প্লিজ আমার ভয় করছে। আমি সব বলব আপনাকে।এর মধ্যে অনেক বড় খেলা চলছে।অনেক বড় যেটা আপনি ভাবতেও পারবেন না।
—কি খেলা চলছে?আমার সব টা জানা খুব প্রয়োজন। প্লিজ সবটা খুলে বলো আমাকে?
—রায়হান আর রাশেদ মির্জা হলো দুই ভাই।রায়হান মির্জা বিভিন্ন খারাপ ব্যবসা আর কাজ কর্মের সাথে যুক্ত ছিলেন।এইসব কিছু রাশেদ মির্জা যেনে যাওয়ায় রায়হান মির্জা নির্মম ভাবে খুন করে রাসেদ মির্জা আর উনার স্ত্রীকে।নিশিতা ম্যাম তখন ৭-৮ বছরের ছিলেন রায়হান মির্জা নিশিতা ম্যামকেও খুন করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু নিশিতা ম্যাম আহত হয়ে যখন হসপিটালে ভর্তি হলো তখন জানা গেলো মাথায় আঘাতের ফলে নিশিতা ম্যাম কোমায় চলে গেছে। রাশেদ মির্জার যত সম্পত্তি ছিলো তা সব নিশিতা ম্যামের নামে থাকায় রাশেদ মির্জা নিশিতা ম্যামের চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে গেলো। সেখানে দীর্ঘ ১ বছর পর কোমা থেকে ফিরে আসলো ডাক্তার জানান নিশিতা ম্যামের শৈশবের সমস্ত স্মৃতি মুছে গেছে।এই সুযোগ টাই রায়হান মির্জা কাজে লাগিয়ে নিশিতা ম্যামর এর কাছে নিজেকে তার বাবা বলে পরিচয় দিয়ে দিলেন।ব্যাস সেখান থেকেই রায়হান মির্জা হয়ে গেলো নিশিতা ম্যামের বাবা আর নিশিতা ম্যামা হয়ে গেলো নুসাইবা।
এতসব কথার মাঝে তিশানের মাথায় শুধু একটাই কথা ঘুরছে”নিশিতার সমস্ত শৈশবের স্মৃতি মুছে গেছে”তিশান জোরে চিৎকার করে বলতে লাগলো……
—নাহহ।কিছুতেই নাহ।আ.আ.আ.আমার শ্যামর্কন্যা কিছুতেই আমাকে ভুলে যেতে পারেনা।কিছুতেই না…..
#চলবে
(