#মম_চিত্তে
#পর্ব_২০
#সাহেদা_আক্তার
আদ্রিতাদের সন্ধ্যায় ফ্লাইট। ওকে নিয়ে নিজের বাড়ি গিয়েছিল আলিফ। গিয়ে বাবাকে পায়নি। তালা মারা ছিল বাসায়। আশেপাশে জিজ্ঞেস করে বুঝতে পেরেছে রাতের আগে ফিরবে না। তাই অপেক্ষা না করে রওনা দিয়েছে এয়ারপোর্টের দিকে। বের হওয়ার সময়ই বলে গিয়েছিল ওরা ওখান থেকে সোজা এয়ারপোর্টে চলে যাবে। এয়ারপোর্টে গিয়ে দেখল অনেকে এসেছে ওদের বিদায় জানাতে। ভাই বোন সবগুলো উপস্থিত। আলিফের সবাইকে ছাড়িয়ে আগে মমর দিকে নজর পড়ল। রিয়ানের পাশে মুখ লাল করে দাঁড়িয়ে আছে। সাদা শাড়িতে ওকে অন্য রকম সুন্দর লাগছে। ভাবনাটা মাথায় আসতেই আলিফ প্রিয়ান্তুর দিকে মনযোগ দিল। ওর কোলে আপন মনে খেলছে বাচ্চাটা। এসব ভাবাটা এখন তার জন্য বিষের মতো যার প্রভাবে ধীরে ধীরে মরে যায় মানুষ।
প্রিয়ান্তুর সাথে খেলতে খেলতে হঠাৎ রিয়ান আর মমর হাতের দিকে নজর পড়ল। এত মানুষের মাঝেও রিয়ান শক্ত করে মমর হাত ধরে আছে। এখন মমর লজ্জায় থাকার কারণ বুঝল। দেখে আলিফ হালকা হেসে মনে মনে ভাবল, ভালোই আছে তাহলে। ও আদ্রিতাকে তাড়া দিয়ে বলল, চলো, লেট হয়ে যাচ্ছে। আদ্রিতা সবার থেকে বিদায় নিয়ে নিল। সবাই ওকে আবার দেশে আসার কথা বলল। প্রিয়ান্তুকে আদর করল। তারপর দুজনে এয়ারপোর্টের ভেতরে রওনা দিয়ে দিল।
সবাই ওদের বিদায় দিচ্ছে; এই ফাঁকে রিয়ান মমর কানে ফিসফিস করে বলল, চলো আজকে আমরা ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করি। মম কিছু বলার আগেই ওদের পেছন থেকে নিক্বণ বলল, খালি তোরা একলা একলা করবি? আমাদেরও করা। ওর কথা শুনে সবাই জানতে চাইল, কি? নিক্বণ ঘোষণা দিয়ে বলল, আজকে রিয়ান ওর বিয়ে উপলক্ষে আমাদের ডিনার করাবে। শুনেই সবাই খুশিতে লাফালাফি শুরু করল। কে কি খাবে এখন থেকেই ঠিক করা শুরু করে দিল। রিয়ান মুখ গোমড়া করে তাকাল নিক্বণের দিকে। নিক্বণ একটা কিলার হাসি দিল। মম মুচকি হেসে এয়ারপোর্টের দিকে তাকালো। আদ্রিতার জন্য মন খারাপ লাগছে। আজ আলিফ না থাকলে হয়ত ও সবার মাঝে থাকতো!
সবাই জোর করে রিয়ানকে নিয়ে ফাইভ স্টার একটা রেস্টুরেন্টে চলে এসেছে। রিয়ান আর মম বসল এক কোণায়। আর ভাইবোনগুলো একসাথে একজায়গায় বসেছে। রিয়ান অর্ডার বই হাতে নিয়ে মমকে জিজ্ঞেস করল, কি অর্ডার করব? মম প্রতিউত্তরে বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার যেটা ভালো লাগে। ও অর্ডার বইয়ে চোখ বুলাতে বুলাতে মমর দিকে চোখ গেল। মম ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাই বোন সবগুলো একসাথে মজা করছে। রিয়ান ব্যাপারটা লক্ষ্য করে বলল, ওদিকে কি দেখছো?
– সবাই কত মজা করছে!
– তোমার সামনে তোমার জামাই বসে আছে। ভালো লাগছে না?
মম নিচের ঠোঁট কামড়ে টেবিলের দিকে তাকালো। তোমার জামাই করতে করতে লোকটা পাগল হয়ে যাচ্ছে। ওকেও একদিনে পাগল বানিয়ে ফেলছে। রিয়ান অর্ডার বই থেকে ভাইবোনগুলোর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এত জোরে ফেলল যে মম স্পষ্ট শুনতে পেল। তাই জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে? রিয়ান সোফায় হেলান দিয়ে বলল, কি হয়নি তাই বলো। ভাইবোন গুলো রাক্ষসের মতো খাবার অর্ডার দিচ্ছে। যেন কয় বছর খায়নি। মম ওর কথা শুনে হেসে বলল, হয়তো আপনি কিপটামি করে কখনো খাওয়ান না। তাই আজকে সবাই ভুঁড়িভোজ করছে।
– মোটেই না। এই শোনো, তোমার জামাই এতটাও কিপটা না। বইটা নাও। কি খাবে অর্ডার দাও৷
– আপনি দিয়ে দিন যেটা খুশি।
– কি আর দিবো! আমাদের ক্যান্ডেলের লাইট তো ওরা ফুঁ মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। এখন ফকির হওয়ার অপেক্ষা।
মম একটা নকল হাসি দিল। হঠাৎ মনে পড়েছে এমন ভাবে রিয়ান বলল, আচ্ছা, ভালো কথা। কিছু খাবার পার্সেল নিতে হবে তো। আমি তো জানি না তোমার বাসার কে কি খায়। আমাকে বলে দাও। আমি পার্সেল করতে বলে দেই। মম মানা করে দিয়ে বলল, লাগবে না। আব্বুর তো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বাইরের কোনো খাবার খাবে না। খালা খালুও খাবে না। জিজ্ঞেস করেছিলাম ফোন দিয়ে। বলল আমরা খেয়ে আসতে।
– ওকে। এখন অর্ডার তো দাও। খিদে পেয়েছে।
মম একটা সেট মেন্যু অর্ডার দিলো। ওরা খাবারের জন্য বসে আছে আর এদিকে সবাই হাসি ঠাট্টা করছে। মমর হাত দুটো টেবিলের উপর। বাম হাতের অনামিকা আঙ্গুলে চকচক করতে থাকা ছোট সোনার আংটিটার দিকে তাকিয়ে আছে। বিয়েটা নিতান্তই বাবার ইচ্ছায় করা। কিন্তু একদিনেই যেন সুখের সাগরে ভেসে গেছে ও। যার হাত ধরে সংসারে পা রাখা তাকে পাশে পাওয়ার সৌভাগ্য মনে হয় এত আনন্দের। মমর নিজেকে এত সৌভাগ্যবতী ভাবতে ভয় হয়। কখন আবার ক্ষণিকের ঝড়ে নতুন সাজানো বাগানটা তছনছ হয়ে যায়!
খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে সাড়ে দশটার উপরে বাজল। সবাই ওদের বাড়িতে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। ওদের ছাড়া নাকি ভালো লাগছে না। কিন্তু রিয়ান মানা করে দিয়ে বলল সে আগে ভালোমতো শ্বশুর বাড়িতে ভুঁড়িভোজ করবে তারপর বাড়ি ফিরবে। ওরা কলিংবেল বাজতে মাধুরী খালা দরজা খুলে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেছেন। রায়হান সাহেব নাকি খেয়েই শুয়ে পড়েছেন।
রিয়ানের কথাটা শোনার পর থেকে মম সারা রাস্তা ওর দিকে চোখ সরু করে তাকিয়ে ছিল। রুমে এসেও একইভাবে তাকিয়ে আছে। রিয়ান কোটটা খুলতে খুলতে বলল, তোমার কি হয়েছে বলো তো। সেই রেস্টুরেন্ট থেকে আমার দিকে গোয়েন্দাদের মতো তাকিয়ে আছো। ব্যাপার কি? মম কিছু বলছে না দেখে কাছে এসে গালে হাত দিয়ে বলল, আজকে কত সুন্দর করে সেজেছি। একবারও তো বললে না সুন্দর লাগছে। মম পলকহীনভাবে ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে। মুহুর্তে ওর অজান্তে চোখের কোণা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। রিয়ান সাথে সাথে বলল, আরে, কাঁদছো কেন? আমি কি তোমাকে বকেছি? আচ্ছা আর মজা করব না। সরি। রিয়ানকে অবাক করে দিয়ে মম হঠাৎ জাপটে জড়িয়ে ধরল ওকে। বুকে মুখ গুঁজে রইল। কোনো শব্দ নেই। কিন্তু রিয়ান টের পাচ্ছে ওর শার্ট একটু একটু করে ভিজছে মমর চোখের পানিতে। হঠাৎ কান্না করার কোনো কারণ ও খুঁজে পেল না। জড়িয়ে ধরা মমর মাথায় সযত্নে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, আমি কি কষ্ট দিয়েছি? মম উপর নিচে মাথা নাড়ল। তারপর ওর বুক থেকে মাথা তুলে জলভরা চোখে তাকিয়ে বলল, তোমার ভালোবাসায় খুব কষ্ট হচ্ছে। আগে কেন আসোনি? কেন সবার আগে এসে আগলে রাখোনি? তাহলে এত কিছু সহ্য করতে হতো না আমাকে। বলে আবার মুখ গুঁজে দিল ওর বুকে। রিয়ানও এবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। অকারণেই ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, সরি, দেরি করে ফেলেছি তোমাকে খুঁজে পেতে, মম। ওর ফিসফিসানি এত কান্নার মাঝেও মমকে কাঁপিয়ে দিল। অজানা কারণে ও রিয়ান থেকে সরে এল। কি যে হল ওর! বোকার মতো হঠাৎ কান্না করার মানে নিজেও খুঁজে পেল না। মনের ভেতরের পাথরটা গলিয়ে ফেলেছে একদিনে। ঝর্ণার পানি বেরিয়ে এসে ওর মন বাগানটাকে তরতাজা করে দিয়েছে। সেই প্রভাব হয়তো দুই চোখেও পড়েছে৷ তাই তাল সামলাতে পারেনি।
রিয়ান ওর মুখ উঁচু করে দুই হাত দিয়ে পানি মুছে দিয়ে বলল, দেখো তো। আমার পরীর মতো বউটা কান্না করে কাজলের কালোয় পেত্নী হয়ে গেছে। ইস! বউটা আমার! মম ওকে সরিয়ে দিয়ে বাকি পানিটুকু মুছে বলল, হয়েছে, আর ঢং করতে হবে না। পোশাক বদলে নিন। আমিও যাই। কালকে অফিস যেতে হবে। আর তো ছুটি কাটানো যাবে না। রিয়ান বিরক্তির সুরে বলল, ধুর, বিয়ের কথা সবাই জানলে আরাম করে ছুটি কাটাতে পারতাম। মম আলমারি থেকে একটা থ্রিপিস নিয়ে বলল, ক’দিন থাকবে এখানে?
– তুমি যতদিন থাকবে।
– পাগল নাকি!? সবাই কি বলবে! কালকেই বাড়ি চলে যাবেন।
– আমি গেলে তুমিও যাবে। আমি আমার বউকে ফেলে যাবো না। আমার বউ তো আমাকে একটুও ভালোবাসে না। ছেড়ে চলে গেলে আমাকে ভুলেই যাবে।
– হয়েছে। কোথায় থেকে যে এত পাগলামি শিখেছেন!
রিয়ান দাঁত বের করে হাসি দিল। মম ওয়াশরুম চলে গেল। রিয়ান একটা নাইটড্রেস পরে নিল পোশাক বদলে। প্রচুর খাওয়া দাওয়া করে শরীরটা ক্লান্ত। কিন্তু মম বের হওয়া পর্যন্ত ওর শুতে ইচ্ছে করছে না। মমকে জ্বালাতে ভালো লাগে। লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখটা ওর সবচেয়ে পছন্দ। কতদিন এই মুখটা দেখার অপেক্ষায় ছিল! ভাবতে ভাবতে রিয়ানের দেয়ালের ছবিটার দিকে আবার চোখ পড়ল। দুটো বাচ্চার রঙিন হাতের ছাপ বাঁধায় করা। এক জোড়া সামান্য বড় অপর জোড়া থেকে। তাই আলাদা বোঝা যায়।
“ওটা আমাদের দুই বোনের”। কথাটা শুনে রিয়ান মমর দিকে তাকালো। একটা পাতলা পিচ কালারের সুতি জামা পরেছে। ভালো লাগছে দেখতে। মম বারান্দায় গিয়ে শাড়ি মেলে দিয়ে এল। একবার ভেবেছিল চুলটা খুলবে। কিন্তু পরমুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করল। ভালোবাসায় বেঁধে দেওয়া জিনিসটা না হয় আরেকটু থাকুক। বিছানায় উঠতে উঠতে বলল, শুয়ে যাননি কেন? রিয়ান ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তোমার যে বোন আছে বলোনি তো। মম বালিশে মাথা রেখে বলল, আছে না ছিল। রিয়ান অভিযোগ করে বলল, কালকেই বালিশ একটাকে মামা বাড়ি পাঠিয়ে দেবো। মম অবাক হয়ে বলল, কেন? রিয়ান ওর মাথার নিচ থেকে বালিশটা কেড়ে নিয়ে ওটাতে নিজে শুয়ে পড়ল। তারপর ওর মাথা বুকে রেখে বলল, কারণ আমার বউয়ের মাথা আমার। বালিশের না। মম হেসে বলল, হিংসুটে।
– হুম, অনেক৷ আচ্ছা, ছিল কেন বললে? এখন কোথায়?
– বেঁচে নেই। রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে। জানেন, আমরা জমজ বোন ছিলাম। ও আমার থেকে এক মিনিটের বড় ছিল। কত স্মৃতি আছে ওকে নিয়ে! কত ঝগড়া করতাম! আব্বু আম্মু বিরক্ত হয়ে যেত। আমি যখন বজ্রপাতে ভয় পেতাম, আম্মু কাছে না থাকলে ওর বুকে মুখ লুকিয়ে শুয়ে থাকতাম। ও ছিল ডানপিটে। হাজার দুষ্টুমি ওর মাথায় গিজগিজ করতো।
– আর এখন থেকে আমার লক্ষ্মী বউটা আমার বুকে মুখ লুকাবে।
– ধুর, গল্পের মাঝে দিলেন তো বাম হাত ঢুকিয়ে? লাইটটা অফ করেন গিয়ে।
– থাক না। অফ করলে তোমার লজ্জাভরা মুখটা মিস করব। দেখতে পাবো না।
মম ওর পেটে ছোট করে গুঁতো মেরে বলল, যান বলছি। আলোয় আমার ঘুম হবে না। রিয়ান বাধ্য হয়ে আলো নিভিয়ে এল৷ মম বুকে মাথা রাখতে রিয়ান এমনভাবে ধরে রইল যেন ও হারিয়ে যাবে ছেড়ে দিলে। ওর বুকে মাথা রেখে এত শান্তি লাগল যে কখন ঘুমিয়ে গেল টের পেল না।
সাতটার দিকে মমর ঘুম ভাঙল। বাইরের আলো জানালা দিয়ে রুমে ঢুকছে। রিয়ান এখনো ওকে জড়িয়ে ধরে আছে আগের মতো। ঘুমে থাকায় বাঁধন আলগা হয়ে আছে। মম সরিয়ে উঠতে লাগল রিয়ান নড়ে উঠে চিৎ হয়ে শুলো। মম সাবধানে নেমে এল বিছানা থেকে। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানাতে গেল। এর মাঝে মাধুরী খালাও এসে হাত লাগালেন।
রিয়ান আরাম করেই ঘুমাচ্ছিল। এর মাঝে মুখে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে হাতটা ধরে টান দিয়ে বলল, মম আরেকটু ঘুমাতে দাও। তুমিও ঘুমাও৷ হঠাৎ নাকে সুড়সুড়ি লাগলে আবার বলল, নাকে সুড়সুড়ি দিচ্ছো কেন? উঠবো তো। আরেকটু ঘুমিয়ে নেই। বলতে বলতে একটা হাঁচি দিয়ে দিল। সাথে সাথে মেও করে উঠল বুকে জড়িয়ে থাকা মম৷ রিয়ান তাকাতেই এক চিৎকার দিয়ে উঠল। মম রান্নাঘরে রুটি শেকছিল। ওর চিৎকার শুনে দৌঁড়ে এসে বলল, কি হয়েছে? ওর পাশ দিয়ে নিনি ভয়ে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেল। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মম রিয়ানকে ওষুধ এগিয়ে দিল। রিয়ানের হাঁচতে হাঁচতে নাক দিয়ে পানি পড়ছে। টিস্যু দিয়ে নাক মুখে ওষুধটা খেয়ে নিয়ে বলল, তোমার এটা বিড়াল না বাদর? এসে আমার মুখে হাত ঢলছে। ভাবলাম তুমি। টান দিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুম দিতে যাচ্ছিলাম।
– ভালো করেছে। ও আমার আদরের নিনি। একদম বাদর বলবে না।
– আর আমি যে তোমার আদরের জামাই। তোমার নিনি যে আমার বেহাল দশা করছে।
– বলেছিই তো বাড়ি চলে যাও। কথা না শুনলে কার দোষ? এইরে, আমার রুটি!
মম রান্নাঘরে দৌঁড়ে গেল। আরেকটুর জন্য রুটিটা পুড়েনি। রিয়ান হতাশ ভঙ্গিতে নিজেকে বলল, মম আমাকে একটুও পাত্তা দেয় না। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে তখনই নিনি মেঁও করে একটা করুণ সুরে ডাক দিল। ওকে দেখে তড়িঘড়ি করে ওয়াশরুম চলে গেল রিয়ান। না হলে হাঁচতে হাঁচতে আবার অবস্থা কাহিল হয়ে যাবে।
#মম_চিত্তে
#পর্ব_২১
#সাহেদা_আক্তার
নাস্তা সেরে দুইজনই তৈরী হয়ে নিল অফিসে যাওয়ার জন্য। মম ওর আগের পোশাকে ফিরে গেল। একটা ছিমছাম সুতি থ্রিপিস, মাথায় বেণী, হাতে সেই পুরাতন ঘড়ি, কানে ছোট দুল। মম ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলে রিয়ান বলল, কোথায় যাচ্ছো? মম বলল, অফিসে। আর কোথায় যাবো? রিয়ান টাই হাতে নিয়ে বলল, দেখছো তোমার জামাই এখনো তৈরী হয়নি। আর তুমি তাকে ফেলে চলে যাচ্ছো? টাইটা বেঁধে দাও। মম ব্যাগ বিছানায় রেখে এসে টাই বেঁধে দিতে দিতে বলল, বিয়ের আগে কে বেঁধে দিতো শুনি?
– কে আর বেঁধে দেবে। নিজে নিজেই করতে হতো।
– তাহলে এখন আমাকে লাগছে কেন?
– বউ তো ভালোবাসছে না তাই কিভাবে ভালোবাসতে হয় শেখাচ্ছি।
– আসছে আমার শিক্ষক। নিন বেঁধে দিলাম।
– এটা কি!?
মম ব্যাগ নিতে নিতে বলল, টাই। রিয়ান জিজ্ঞেস করল, এভাবে বেঁধেছো কেন? মম কোনোমতে গিট্টু দিয়ে টাই বেঁধে দিয়েছে। রিয়ানের কথা শুনে মম এসে ওর মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলল, সরি জামাই, তোমার বউ সিনেমার নায়িকাদের মতো টাই বাঁধতে জানে না। রিয়ান মুখ চেপে রাখলেও পরে হাসতে হাসতে বলল, যাক এতক্ষণ পর একটা মনের মতো কথা বলেছো। দেখো কিভাবে টাই বাঁধতে হয়। আজ শিখিয়ে দিচ্ছি। কাল থেকে কিন্তু তোমাকে করতে হবে। প্রথমে টাইটা অসমান করে ঝোলাবে গলায়। ডান পাশটা বাম পাশ থেকে একটু বড় রাখবে। তারপর বাম অংশের নিচ দিয়ে ডান অংশটা ঘুরিয়ে আনবে। এবার উপরের ডান অংশের সাথে গিঁট দেবে পিছন দিক দিয়ে এনে। বাম পাশটা সামনে এনে ডান পাশটা টেনে শক্ত করে দেবে। এরপর গিঁট দেওয়া অংশটা গলা পর্যন্ত টেনে দেবে। ব্যাস, হয়ে গেল। এবার বেঁধে দাও। রিয়ান মমকে বলে দিতে লাগল। মম টাই বেঁধে দেওয়া শেষ হলে রিয়ান ওর ডান হাতটা ধরে বুকের বাম পাশে রেখে বলল, এভাবে সারাজীবন বেঁধে দেবে তো? মম মুচকি হেসে বলল, হুম। এখন চলুন দেরি হচ্ছে। রিয়ান বলল, কোট পরিয়ে দেবে না? মম এক পলক তাকিয়ে কোটটা নিয়ে পরিয়ে দিতে দিতে বলল, এই এক কোট কয়দিন পরবেন?
– তুমি চাইলে প্রতিদিন পরতে পারি।
– এত ভালো ফ্লার্ট করতে পারেন জানতাম না তো।
– আরো কত কিছু জানতে পারবে! সারাটা জীবন তো রইল।
সারাজীবন শব্দটা ওর কাছে কত বড় পাওনা তা একটা মেয়ে কেবল জানে৷ সারাজীবন একই রকম ভালোবাসতে কয়জন পারে? ওর কপালে এমন থাকতে পারে ভাবতেই মমর ভেতরটা কেমন শান্ত হয়ে এল। রিয়ানের ছোঁয়া পেতেই ও বাস্তবে ফিরে এল।
– যাবে না?
– হুম, চলুন।
দুইজনেই বেরিয়ে এল বাসা থেকে। রিয়ান গাড়ি বের করতেই মম বলল, আপনি চলে যান। আমি আব্বুর স্কুটি করে চলে যাবো। রিয়ান মুখ ভার করে জানালা দিয়ে মাথা বের করে বলল, কেন? জামাইর সাথে গেলে কি হবে? মম নাকটা টেনে দিয়ে বলল, জামাইর সাথে গেলে সবাই সন্দেহ করবে। কয়েকমাস যাক, তারপর তোমার সাথে যাবো। রিয়ান তাও মুখ গোমড়া করে বেরিয়ে গেল। মম হালকা হেসে স্কুটি স্টার্ট দিল।
রিয়ানের জন্য আজ পাঁচ মিনিট লেট হয়ে গেল ওর। কি যে বাচ্চাদের মতো আবদার করে বসে। মম চেয়ারে বসতেই তৌসিফা জিজ্ঞেস করল, কালকে এলি না যে? মম ব্যাগ রাখতে রাখতে বলল, একটা জরুরি কাজে ছুটি নিয়েছিলাম। তৌসিফা ওর হাত দেখে বলল, মেহেদী দিয়েছিস! ব্যাপার কি বল তো। তলে তলে বিয়ে করে ফেলিসনি তো? মম হেসে বলল, খালাতো বোন লাগিয়ে দিয়েছে। মানা করে ছিলাম শোনেনি৷ মম কোনোভাবে কাটিয়ে গেল। বৃষ্টি জোর করে বিয়ের আগের দিন লাগিয়ে দিয়েছে। অফিসে আসলে যে কেউ হাতভরা মেহেদী দেখলে সন্দেহ করবে। কিন্তু কিছু করারও নেই। অনেকটাই উঠে গেছে। তাও যতটুকু আছে তাও সন্দেহ জাগাতে পর্যাপ্ত। মম নিজের কাজে মন দিল। কম্পিউটার আর ফাইল দেখে বলল, নতুন ডিলের ফাইলগুলো কোথায়?
– ও, তোকে ত বলাই হয়নি। কালকে কাজ শেষ হয়ে গেছে।
– তাহলে তো ভালো।
– হুম।
ওদের কথার মাঝেই ফারিজা এসে সবার মনোযোগ নিয়ে বলল, আমরা সবাই এতদিনের পরিশ্রম সার্থক করে নতুন ডিলের কাজটা গতকালকে শেষ করেছি। এই ডিলটা কোম্পানির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই কোম্পানির পক্ষ থেকে একটা বিশাল ট্রিট দেওয়া হয়েছে। যারা এই ডিলের সাথে যুক্ত ছিল তারা আগামী শুক্র এবং শনিবার সেন্টমার্টিন একটা ট্যুর করতে যাচ্ছে। শুবে সবাই খুশিতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগল। ফারিজা ওর দিকে আড়চোখে তাকাল। মম সেদিকে পাত্তা না দিয়ে তৌসিফার সাথে কথা বলতে লাগল। ফারিজার তাকানোটা ভালো লাগে না ওর। কিন্তু কিছু করার নেই। একই জায়গায় কাজ করলে ঠোকাঠুকি লাগবেই।
কাজ শেষ হতে হতে মমর সাড়ে নয়টা বাজল। এর মধ্যে অনেকে চলে গেছে। অফিস আওয়ারও শেষ নয়টায়। কাজ শেষ করে কম্পিউটার অফ করতে করতে নিজেকে বলল, আর ছুটি নেওয়া যাবে না। ছুটি নিলেই কাজ ঘাড়ের উপর এসে পড়ে৷ ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বের হতেই পেছন থেকে ডাক পড়ল। মম দাঁড়িয়ে গিয়ে পেছন ফিরে দেখল রিয়ান ওর রুমের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিয়ান এগিয়ে এসে বলল, আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছো? মম বলল, আলাদা এসেছি, আলাদাই তো যাবো। কাজ শেষ হয়নি আপনার?
– হয়েছে অনেক আগে। তোমার জন্য বসে ছিলাম। আলাদা এসেছি বলে আলাদা যেতে হবে এটা কোন কথা?
– ঠিকই তো বললাম। কেউ দেখলে সন্দেহ করবে।
– তাহলে সবার শেষে যাই।
– পাগল নাকি!? বাসার সবাই অপেক্ষা করবে না?
– করুক। তুমি আমার সাথে যাবে। ব্যাস।
– তাহলে স্কুটিটার কি হবে?
– ওটা থাক। কাল নিয়ে যেও।
দুইজনে কথা বলতে বলতে অফিস থেকে বেরিয়ে এল। রিয়ান মমকে কিছুতেই ছাড়ল না। জোর করেই গাড়িতে বসিয়ে বাসায় নিয়ে এল। বাসায় এসে দেখল মাধুরী খালা খাবার টেবিলে নিয়ে এসেছেন। ওরা ফ্রেশ হয়ে সোজা চলে এল টেবিলে৷ রায়হান সাহেব টুকটাক জিজ্ঞেস করলেন খেতে খেতে। খাওয়া শেষে উনি রিয়ানকে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে গল্প জুড়ে দিলেন। মম মাথা বেঁধে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ল। তাও এদের গল্প শেষ হয় না। কথার আর হাসির আওয়াজ আসছে।
মমর চোখটা লেগে গিয়েছিল। হঠাৎ মাথার তলা ফাঁকা হয়ে যেতে ভেঙে গেল। রিয়ান ওর মাথা নিজের বুকের উপর রাখছিল। ওকে জেগে যেতে দেখে বলল, ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম! মম ঘুম ঘুম চোখে বলল, বালিশে কি ঘুমানো যায় না!? কেন যে বাচ্চামো করো! রিয়ান ওর কপাল একটা আদর এঁকে দিয়ে বলল, না যায় না৷ তোমাকে অভ্যাস করাতে হবে না? না হলে দেখবো আমাকে ছেড়ে বাপের বাড়িতে এসে শান্তি মতো ঘুমাবে আর আমার নির্ঘুম রাত কাটবে।
– ওরে বুদ্ধি রে! এত বুদ্ধি নিয়ে ঘুমান কেমনে?
– বউকে জড়িয়ে ধরে।
রিয়ান মমকে জড়িয়ে ধরল। মমও আষ্টেপৃষ্টে রইল ওর সাথে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাজ্যের ঘুম নেমে এল চোখে।
সকালে ঘুম ভাঙতে দেখল ও বালিশে। রিয়ান ওর আগে উঠে গেছে। ও চোখ কচলে দেখল রিয়ান আলমারীর সামনে দাঁড়িয়ে। উঠে এসে জিজ্ঞেস করল, এত তাড়াতাড়ি তৈরী হচ্ছেন। কোনো কাজ আছে? রিয়ান ওর পোশাক কিছু বের করে লাগেজে নিয়ে বলল, বাড়িতে যাবো আজকে। মম আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলল, তাহলে আপনি শেষমেশ যাচ্ছেন। রিয়ান ওকে শুধরে দিয়ে বলল, আপনি না আমরা। ও আড়মোড়ার মাঝে থেমে বলল, আমরা মানে। আমি তো এখন যাবো না। রিয়ান জামাকাপড় ঢুকিয়ে লাগেজের চেইন বন্ধ করতে করতে বলল, আব্বু কালকে যেতে বলেছেন। বলেছেন যদি না যাও ধরে বেঁধে নিয়ে যেতে।
– মানে কি?
রিয়ান দুই বাহু ওর কাঁধের উপর রেখে পেছনে দুইহাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলল, মানে তুমি আমার সাথে যাবে৷ মম ওর বাহুর নিচ দিয়ে বাঁধন থেকে বেরিয়ে এসে বলল, জ্বি না। আমি আব্বুকে ফেলে কোথাও যাচ্ছি না।
– যাবে না তো?
– না।
– সত্যি তো। যাবে না?
– উহু।
মম অন্যদিকে ফিরে রইল। রিয়ান হুট করে ওকে কোলে নিয়ে বলল, এই আমি বাইরে পা বাড়ালাম। মম সাথে হাত পা ছুড়ে বলল, এই না না। আমাকে নামাও। বাসার সবাই দেখলে কি বলবে? নামাও আমাকে। রিয়ান আরো শক্ত করে ধরে বলল, দুইটা শর্তে নামাবো। এক, আমাকে এভাবেই তুমি করে বলতে হবে। আর দুই, যেহেতু আব্বু অনুমতি দিয়েছেন; আমার সাথে বাড়ি ফিরতে হবে। মম অন্যদিকে ফিরে বলল, আমি যাবো না।
– তাহলে এই পা বাড়ালাম।
– এই, যাবো যাবো। নামান।
– আবার আপনি?
– নামাও। প্লিজ।
রিয়ান মমকে নামিয়ে দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। কাঁধে চিবুক দিয়ে বলল, আবার যদি মত পরিবর্তন করেছো তো যেখানে থাকবে সেখান থেকেই কোলে করে নিয়ে যাবো। এবার যদি অফিসেও থাকো তো, বুঝতেই পারছো। মম কাঁপতে কাঁপতে বলল, হবে না। হবে না। ছাড়ুন। রিয়ান সরে দাঁড়িয়ে বলল, জিনিস গুছিয়ে নাও এখন। মম জিজ্ঞেস করল, কেন?
– ড্রাইভার আমাদের লাগেজ নিয়ে যাবে। আমরা অফিস থেকে সোজা বাড়ি যাবো।
মম মুখ ফুলিয়ে একবার রিয়ানের দিকে তাকাল। রিয়ান হাসছে৷ টোলপড়া হাসিটাতে কেন এত কিউট লাগে ওকে মম বুঝে পায় না। এমনিতে ভেতরে ভেতরে মিচকে বাদর। মম কাপড় গোছানোয় মন দিল। আধা ঘন্টায় লাগেজ গুছিয়ে ঘড়ি দেখে ওর চোখ কপালে উঠল৷ আটটা বেজে গেছে। রান্নাঘরে গিয়ে দেখল মাধুরী খালা নাস্তা বানিয়ে ফেলেছে। ওকে দেখে বলল, তুমি উঠসো মা? হাত মুখ ধুইয়া আসো। আমি টেবিলে খাওয়া দিতেসি।
– আজকে চলে যাবো খালা। তাই গোছগাছ করতে করতে দেরি হয়ে গেল। তোমাকে সাহায্য করতে পারিনি।
– আইজকাই যাবা গা? বলো নাই যে?
– তোমাদের জামাই তো আমাকে বলেনি। সকালে উঠে ব্যাগ গোছাতে বলল।
– কারো কোনো বিপদ হয় নাই তো?
– আরে না খালা। এমনিই চলে যাবো। আব্বুও তো জানে। তোমাদের জামাই বলল।
– অ, খালু জানলে ঠিক আছে। তুমি তৈরী হই নাও। আমি খাবার দিতেসি।
– আচ্ছা খালা।
মম রুমে এসে দেখল রিয়ান লাগেজ দুটো নিয়ে গেছে। বারান্দা দিয়ে উঁকি মারতেই ওকে দেখা গেল। ড্রাইভারের হাতে লাগেজগুলো দিয়ে দিচ্ছে। কোথায় ভেবেছিল রায়হান সাহেবের সাথে থেকে সেবা যত্ন করবে। তা না তিনিই চলে যেতে উৎসাহ দিচ্ছে। আরেক পাগল তো ওকে ছাড়ছেই না। কেমন বেঁধে রাখছে। এত পাগল কি করে হয় বুঝে পায় না মম। কেউ কারো জন্য এত পাগল হতে পারে! মম একটা জামা নিয়ে তৈরী হতে গেল।
বেরিয়ে এসে দেখল রিয়ান অর্ধেক তৈরী হয়ে বসে আছে৷ মম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টাইটা হাতে নিয়ে ওর গলায় বাঁধা শুরু করল। তারপর কোট পরাতে রিয়ান ওর দুই গাল আলতো করে ধরে কপালে একটা চুমু এঁকে বলল, এটা তোমার বকশিস। মম ওকে সরিয়ে বলল, বকশিস না ছাই। আসো নাস্তা করতে। দেরি হয়ে গেছে এর মধ্যে। তোমার সাথে বিয়ে হয়ে এখন রোজই কেন যেন লেটে উঠি৷ ঘুমটাই ভাঙে দেরিতে।
– আমার বুকে ঘুমাও তো তাই।
মম কিছু না বলে বেরিয়ে গেল। আরো কিছু বললে আরো কথা বাড়িয়ে ওর লেট করাবে। গিয়ে নাস্তার টেবিলে বসতেই রায়হান সাহেব ওর কথা জিজ্ঞেস করলেন। মম উত্তরে বলল, আসছে। রিয়ান এসে চেয়ারে বসতে বসতে বলল, আজকে যাচ্ছি আব্বু। তোমার মেয়ে তো যেতেই চায় না। জোর করে নিয়ে যাচ্ছি। রায়হান সাহেব হাসলেন। মম খেতে খেতে বলল, তুমি নাকি যেতে বলেছো আব্বু?
– হ্যাঁ। কালরাতে জামাইকে বলেছিলাম। দুই দিন তো হচ্ছে। তুই নাকি শর্ত দিয়েছিস এখানে থাকার।
– হুম। কিন্তু থাকতে দিলে কই?
– দেখ আমি সুস্থ। মাধুরী আর জাবেদ তো আছে। তুই শান্তিতে একটু সংসার কর। তাহলেই আমি ভালো থাকব।
মম চুপচাপ খেয়ে উঠে গেল। ওর পেছন পেছন রিয়ানও শেষ করে উঠল। রুমে গিয়ে দেখল মম চোখ মুছছে। ওকে দেখে ব্যাগে হাত দিয়ে বলল, চলো। রিয়ান ওকে থামিয়ে মুখ উঁচু করে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল, আরে আমি কি আসতে মানা করছি নাকি? যখন মনে হবে চলে আসবে। কিন্তু এভাবে থাকলে কত মানুষ কত কথা বলবে। মম জিজ্ঞেস করল, কে কি বলবে? কেউ তো জানেই না বিয়ের কথা।
– ওমা! পরে জানবে না? এখানে থেকে অভ্যাস করলে পরে তো আমার কাছে যেতেই চাইবে না।
মম ওকে সরিয়ে দিয়ে বলল, হয়েছে ফাজলামো? এখন চলো। মম রুম থেকে বেরিয়ে রায়হান সাহেব থেকে বিদায় নিয়ে নিল। রিয়ানও এসে হাজির হলো। রায়হান সাহেব ওর পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন, আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো বাবা। রিয়ান অভিযোগের সুর করে বলল, আমি তো দেখেই রাখতে চাই৷ আপনার মেয়েই তো দেয় না। মম চোখ গরম করে ওর দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে গেল। রায়হান সাহেব হাসলেন। রিয়ানও তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে বলল, আসি আব্বু। দোয়া করবেন। তিনি বিদায় দিতেই ও বেরিয়ে গেল।
অফিসে আসার পর থেকে মমর আর দেখাই মিলল না। নিজের টেবিলে বসে রইল টানা। রিয়ান কয়েকবার ডেকে পাঠালেও সাড়া মিলল না। ফোন করল, ম্যাসেজ করল। তাও পাত্তা দিল না। অফিস ব্রেকে এসে দেখল মম নেই। তারপর ব্যস্ততায় আর খোঁজ নেওয়া হল না। রাত নয়টা বাজতেই রিয়ান একটা ম্যাসেজ দিল, আজকে বাড়িতে যাবো। একসাথে বের হতে হবে না হলে সবাই খারাপ ভাববে। ম্যাসেজটা সেন্ড করে অফিস থেকে বেরিয়ে এসে ভবনের নিচে দাঁড়াল। তার দশ মিনিটের মাথায় মমকে দেখা গেল। ও এসে পাশে দাঁড়িয়ে বলল, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে!
– হুম। ম্যাসেজ দেখেছিলে তাহলে।
মম চুপ করে রইল। রিয়ান বলল, সারাদিন এত ম্যাসেজ দিলাম, ডাকলাম, ফোন দিলাম। পাত্তাই দিলে না। মম রাগের সুরে বলল, আব্বুর সামনে ওসব না বললে চলছিল না? কি ভাবলো? দুইজনেই সামনের দিকে তাকিয়ে কথা বলছে। রিয়ান ওর কাছে হালকা ঘেঁষে নিজের কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে ওর হাতের কনিষ্ঠ আঙুল ধরে বলল, বউকে ভালোবাসার কথা বললে সেটা নিয়ে কে কি ভাবলো না ভাবলো তাতে কিছু যায় আসে না আমার। কারণ আমি জানি আমি আমার বউকে ভালোবাসি।
চলবে…
চলবে…