মম চিত্তে পর্ব -২৪+২৫

#মম_চিত্তে
#পর্ব_২৪ (স্পেশাল পর্ব)
#সাহেদা_আক্তার

এক একজন বোতলটা থেকে এক একটা কাগজ তুলল আর যা লেখা ছিল তাই পারফর্ম করে দেখালো। কেউ গান, কেউ ছড়া, কেউবা কৌতুক আর ধাঁধা। বিভিন্ন রকমের খেলা খেলল ওরা। বেশ ভালো সময় কাটল ওদের। এমন করতে করতে সময়ের কাঁটায় কখন রাত নয়টা বেজে গেল কেউ টের পেল না।

মিনহাজ আরো তিন চারজনকে নিয়ে খাবার আনতে চলে গেল। এই সুযোগে কেউ কেউ উঠে এদিক ওদিক গেল। মম রিয়ানকে দেখতে পেল না। পাশেই ছিল। চট করে কোথায় চলে গেল খেয়াল হল না। দশ মিনিট পর হঠাৎ ওর ফোনে ম্যাসেজ এল। কিছুদূর বাম পাশে একটা হোটেল আছে। ওটার কাছে যেতে বলেছে রিয়ান। মম একটা এক্সকিউজ দিয়ে উঠে গেল। হোটেলটার পাশে আসতেই রিয়ান টান মেরে আড়ালে নিয়ে এল ওকে। মম হঠাৎ টান পেয়ে বলল, কি করছো? হঠাৎ এখানে ডাকলে? রিয়ান বলল, ডান হাতটা দাও। মম ডান হাত বাড়িয়ে দিল। রিয়ান এক ডজন সাদা আর নীল কাচের চুড়ি ওকে পরিয়ে দিল। মম চুড়িগুলো দেখে বলল, এগুলোর জন্য তুমি উঠে এসেছো?

– হুম। তোমার ডান হাতটা কেমন খালি খালি লাগছিল। তাই ভরিয়ে দিলাম। তোমার পছন্দ হয়েছে?

– হুম।

– চলো। সবাই অপেক্ষা করছে।

ওরা দুইজন একসাথে এসে বসল। তৌসিফা ফিসফিস করে ওকে জিজ্ঞেস করল, স্যারকে পেলি কোথায়? মম আস্তে করে বলল, আসার সময়। মমর হাতের চুড়ি খেয়াল করে বলল, চুড়ি কিনলি কবে? মম আমতা আমতা করে বলল, ঐ দিকে গিয়েছিলাম তো আসার সময় দোকানে ভালো লাগল। তাই আর কি। মম কোনোমনে পাশ কাটিয়ে গেল কিন্তু তৌসিফা বিশ্বাস করল কি না বোঝা গেল না।

খাওয়া দাওয়া শেষে যে যেখানে খুশি ঘুরে বেড়াতে লাগল। মম আর তৌসিফা সমুদ্রের কাছে এসে দাঁড়ালো। এখানের ঢেউ কক্সবাজারের মতো উত্তাল আর হিংস্র নয়। একের পর এক শান্ত ঢেউ আছড়ে পড়ছে পায়ে আর পায়ের তলার বালি ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। কেমন একটা শান্তি আছে ঢেউগুলোয়। মম দাঁড়িয়ে রইল সাগরের দিকে ফিরে। বাতাসে ওর চুল উড়ছে। ইচ্ছে করছে হাত দুটো দুপাশে বাড়িয়ে দাঁড়াতে। ওরা দুইজন সবার থেকে কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল। তৌসিফা একটু এগিয়ে গেল সমুদ্রের দিকে কথা বলতে বলতে। মম ওর কথা শুনে হাসছিল।

হঠাৎ কে যেন ওকে জড়িয়ে ধরল পেছন থেকে। অপরিচিত স্পর্শে সরে যেতে গিয়ে টাল সামলাতে পারল না মম। পড়ে গেল সাগরের পানিতে। উপরের দিকে তাকিয়ে দেখল রাসেল। কেমন একটা হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সে হাঁটু ভাঁজ করে বসে মমর দিকে ঝুঁকে গিয়ে বলল, তোমার স্মেল তো সুন্দর। কি পারফিউম ইউজ করো? মমর এবার মেজাজ খারাপ হলো। চড় বসিয়ে দিল রাসেলের গালে। অনেক সহ্য করেছে। সবকিছুর একটা লিমিট আছে। শুধরে যাওয়ার সময় দিয়েছে। কিন্তু সে না শুধরে বরং ওর আরো সুযোগ নিচ্ছে।

তৌসিফা পিছন ফিরে রাসেলকে চড় মারতে দেখল। সাথে সাথে মমর কাছে চলে এল ও। রাসেল গালে হাত দিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলল, তোর তো সাহস কম না। সিনিয়রের গায়ে হাত তুলিস। রাসেল মমর ডানটা হাতটা শক্ত করে ধরে ওকে এক টান দিয়ে উঠে দাঁড় করালো। ওর হাতের চাপে মমর কয়েকটা কাচের চুড়ি ভেঙে হাতে ঢুকে গেল। রাসেল তাতে ভ্রুক্ষেপ করল না। হিড়হিড় করে টানতে টানতে সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে আরো দূরে চলে যেতে লাগল। তৌসিফা বাঁধা দিতে চাইছিল কিন্তু ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল রাসেল। ওর মাথায় রক্ত চড়ে আছে। মম হাতটা ছাড়তে চাইছিল কিন্তু সাড়াশির মতো হাত ছাড়তে পারল না। উপায় না দেখে রিয়ান বলে একটা চিৎকার মারল৷ রাসেল সাথে সাথে টান দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরল। মম ব্যাথায় ককিয়ে উঠল। হাতে কাচের অংশ আরো বেশি ঢুকে গেছে চাপে। গল গল করে রক্ত পড়তে লাগল সমুদ্রের পানিতে। কিন্তু ওরা কিছুটা দূরে থাকায় কেউ ডাকটা শুনতে পেল না।

কেউ খেয়াল করছিল না। সাগরের দিকটা অনেকটা অন্ধকারই৷ কয়জন মিলে গান ধরেছে। সবাই সেখানেই জড়ো হচ্ছে। রিয়ান ওদের মাঝে বসে আছে। গানের মাঝেও মমকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু ওকে নজরে পড়ল না। তৌসিফা ভেজা শরীরে হাঁপাতে হাঁপাতে কোথায় থেকে হুট করে এসে ওদের সামনে ধপাস করে বসে পড়ল। কয়েকজন মেয়ে ওর কাছে এসে বলল, কি রে? কি হয়েছে? বালিতে দৌঁড়াতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে ওকে। কোনো রকম কষ্ট করে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল, রাসেল ভাই… মম…। সবাই ভাবল ওদের কোনো বিপদ হয়েছে। মমর নাম শুনে রিয়ান দৌঁড় দিল সবার আগে। ওদের যত কাছাকাছি যেতে লাগল তত রিয়ানের কাছে ব্যাপরটা স্পষ্ট হতে লাগল। সাথে সাথে ওর দৌঁড়ানোর গতি আরো বেড়ে গেল।

মমকে মুখ চেপে ধরে নিতে কিছুটা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে রাসেলের। অতিরিক্ত নড়াচড়া করছে। ওর গাল বেয়ে চোখের পানি রাসেলের হাতে এসে ঠেকেছে। মিশকাও ওর মতো ছিল। বেশি তেজ। পার্টির সবার সামনে চড় বসিয়ে দিয়েছিল। ওকে শাস্তি দিয়েছে। মমকেও দেওয়া দরকার। কিন্তু সেটা অন্যভাবে। জয়েনের পর থেকে ওর উপর আলাদাভাবে নজর পড়েছে রাসেলের। সবার মাঝে সাধারণ কিন্তু অন্য রকম সৌন্দর্য। যা ওকে বার বার টেনেছে৷ আজকে ওকে দেখে ভেতরটা পাগল পাগল হয়ে গেছে ওকে কাছে পাওয়ার জন্য। তাই সামলাতে পারেনি নিজেকে। গিয়ে জড়িয়ে ধরেছিল। তাই বলে চড় মারবে?

হঠাৎ পেছন থেকে কেউ রাসেলের শার্টের কলার খাঁমচে ধরল। ও পেছন ফিরে দেখল কেউ একজন ওর শার্ট খাঁমচে ধরে মাথা নিচু করে হাঁপাচ্ছে। রাসেল ত্যাড়া গলায় বলল, ওই, আর কিছু নেই? আমার শার্ট খাঁমচে শ্বাস নিচ্ছিস? দেখছিস না ব্যস্ত? মম মুখ দিয়ে শব্দ করতে চাইল কিন্তু সে এতটা চেপে ধরেছে যে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। রাসেল হাতটা সরাতে যেতেই একটা ঘুষি পড়ল ওর মুখে। মম হাত থেকে ছিটকে পড়ল সামনে। রাসেল বামে সরে গেল ঘুষির কারণে। পড়তে পড়তেও বেঁচে গেল। তেড়ে আসতেই রিয়ানের হিংস্র চোখ ওর চোখে পড়ল। রিয়ান কাছে এসে ওর কলার চেপে ধরে চিৎকার করে বলল, হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ মাই ওমেন? তারপর একের পর এক ঘুষি দিতে লাগল।

সবাই আসতে আসতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেল। ততক্ষণে রাসেলের নাক মুখ ঘুষিতে ফুলে গেছে। বাঁধা দিয়েও বিশেষ লাভ হয়নি। বাঁধা দিতে দিতে উল্টো মারার সময় পায়নি খুব একটা। দুই তিনটা মেরেছে তার পরও। রাসেলের আংটির ঘষায় রিয়ানের গালের খানিকটা অংশ কেটে গেছে। কিছুটা রক্ত গড়িয়েও পড়েছে। তাও মারা বন্ধ হয়নি। মম মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে রিয়ানের দিকে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। রিয়ানকে এমন রাগতে আগে দেখেনি ও।

মিনহাজ আর সাদাফ এসে রিয়ানকে রাসেল থেকে সরিয়ে আনল। রাসেল ঠোঁটের কাছের কাঁটা অংশে হাত দিল। জ্বলে উঠল সাথে সাথে। এমনভাবে রইল যেন কিছু করেইনি। রাসেলের মুখোভঙ্গি দেখে রিয়ান আবার তেড়ে আসতে চাইল। কিন্তু দুইজনের জন্য পারল না। রিয়ান সাদাফকে ঠেলে সরিয়ে দিল। মিনহাজের হাত ছাড়িয়ে যেতে লাগলে মিনহাজ ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল, কি হয়েছে? রিয়ান চিৎকার করে বলল, আমার স্ত্রীকে স্পর্শ করার সাহস হয় কি করে ওর?

আমার স্ত্রী শব্দটা বোমার মতো পড়ল সবার মাঝে। সবাই এক প্রকার শক খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ফারিজা শুনে ধপ করে বসে পড়ল বালিতে। তাকালো মমর দিকে। ও এখনো বসে আছে বালিতে মুখে হাত দিয়ে। কান্না বন্ধ হয়নি। রিয়ান কিছুটা শান্ত হয়ে মিনহাজের হাত সরিয়ে নিল। গায়ের শার্ট খুলে মমর ভেজা শরীর আবৃত করে দিল। মম ভেজা গায়ে বালিতে একাকার হয়ে গেছে। রিয়ান ওকে উঠিয়ে সবার দিকে ফিরে বলল, ও আমার স্ত্রী। শুনতে পেয়েছো সবাই? ভালো করে শুনে রাখো। আর মি. রাসেল, তোমার বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ ছিল। তখন প্রমাণ পাইনি। তোমাকে আজকে থেকে বরখাস্ত করলাম। এখান থেকে যাওয়ার পর পরই আমি যাতে রিজাইন লেটার পেয়ে যাই। তোমাকে যেন অফিসের আশেপাশে না দেখি আর। যদি কোনো রকম উল্টোপাল্টা কিছু করেছো তো সেক্সুয়াল হ্যারেসমেন্টের কারণে এফায়ার করে আসবো থানায়। মাইন্ড ইট। সবাই তখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে। রিয়ান মমকে নিয়ে হাঁটা ধরল। মমর জুতা ছিঁড়ে গেছে। হাঁটতে পারছে না। রিয়ান ওর জুতো জোড়া নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল একদিকে। তারপর ওকে কোলে নিয়ে হাঁটা ধরল হোটেলের উদ্দেশ্যে।

রুমের সামনে এসে মমকে নামিয়ে দিল রিয়ান। মম জড়সড় হয়ে দাঁড়ালো একপাশে। রিয়ান রুমে ঢুকে বলল, ফ্রেশ হয়ে নাও দ্রুত। ব্যাগ থেকে এক সেট জামা বের করে দিল। মম বাম হাত দিয়ে নিতেই রিয়ান জিজ্ঞেস করল, ডান হাতে কি হয়েছে? মম তাড়াতাড়ি বলল, কিছু না। রিয়ান ওর ডান পাশে তাকাতেই শাড়িতে লাল রক্ত দেখতে পেল। মম দেখাতে চাইছিল না। রিয়ান জোর করে হাত টেনে এনে দেখল অনেকটা রক্ত জমাট বেঁধে আছে। দেখে রিয়ান রাগে ফেটে পড়ল। আবার বাইরে চলে যাচ্ছিল। মম বাঁধা দিয়ে বলল, প্লিজ। অনেক মেরেছো। তোমার গালটাও কেটে গেছে৷ রিয়ান কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থেকে রাগটাকে দমন করল। তারপর ওকে ওয়াশরুমে এনে সাবধানে ভাঙা কাচগুলো বের করে হাতের কাটা জায়গাটা ধুয়ে দিল। বেশ খানিকটা রক্ত বের হলো। মম ব্যাথায় চোখমুখ কুঁচকে ফেলল কিন্তু টু শব্দ করল না। না হলে রিয়ান আবার কি না কি করে বসে। রিয়ান সাবধানে হাত ধুয়ে দিয়ে বলল, তাড়াতাড়ি গোসল করে বের হও। আমি ওষুধ আর ব্যান্ডেজ নিয়ে আসছি। সাবধানে করবে। দেখো আবার হাতে ব্যাথা পেও না। বলে রিয়ান বেরিয়ে গেল।

মম গোসল সেরে বেরিয়ে এল। হাতটা অনেকটাই কেটেছে। নড়াচড়া করলেই ব্যাথা করছে। একটু পর রিয়ান এসে ঢুকল রুমে। হাতে ব্যান্ডেজ আর ওষুধ। মমর পাশে এসে ওর হাতটা টেনে ধরে বলল, খুব ব্যাথা করছে, না? ওষুধ খুলে লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে বলল, এবার ব্যাথা কমে যাবে। মম ওর মুখ দুহাত দিয়ে ধরে বলল, তোমার মুখও তো কেটে গেছে৷ দেখি। ও ওষুধটা হাতে নিয়ে রিয়ানের গালে লাগিয়ে দিয়ে বলল, ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ আনোনি। এখন কি দেবো কাটা জায়গায়? রিয়ান হঠাৎ ওর কোলে শুয়ে বলল, কিছু লাগবে না। মম? মম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, হুম?

– আজকে থেকে আর লুকাতে হবে না।

মম হুম বলে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। রিয়ান ওর দিকে কিছুক্ষণ পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থেকে ওকে কাছে টেনে নিল।

মম ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভাঙল। পাশে রিয়ান গভীর ঘুমে রয়েছে। মম হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু এঁকে দিল। তারপর ফ্রেশ হতে চলে গেল। বেরিয়ে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে মাথা মুছতে লাগল। আজকের দিনটাই অন্য রকম সুন্দর লাগছে। যেন নতুন করে দেখছে সবকিছু। এতদিনের মাথার ভার এক রাতেই নেমে গেছে। বিয়েটার মধ্যে দিয়ে ওর জীবনটা আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। অতীতের পোড়া স্মৃতি ভুলে গেছে। এখন কেবল ওর জগত জুড়ে রিয়ানের আনাগোনা। টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে মুচকি হাসল ও। রিয়ান পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল, খুব হাসি হচ্ছে মহারাণীর?

– মহারাজার ঘুম ভেঙেছে তাহলে?

রিয়ান ওর কাঁধে মাথা রেখে বলল, উহু, আরো ঘুমাতে চাই। মম মাথায় হালকা বাড়ি মেরে বলল, সকাল সাড়ে আটটা বাজে। এখনো ঘুমাবেন উনি। যাও ফ্রেশ হও। নাস্তা করতে যেতে হবে না? রিয়ান ওকে ছেড়ে নড়ছেই না৷ ওর কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে। হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, তোমার হাতের কি অবস্থা? মম চোখের সামনে ধরে বলল, ভালোই। ব্যাথা কমেছে। তোমার গাল?

– খুব ব্যাথা।

– তাই নাকি? দেখি দেখি।

মম ওর দিকে ফিরল। রিয়ান ওকে বাহুতে আবদ্ধ করে বলল, একটা কিস দিয়ে দাও গালে ব্যাথা কমে যাবে। মম ওকে ঠেলে সরিয়ে বলল, ধ্যাত। যাও তো। মম জোর করে ওকে ওয়াশরুম পাঠিয়ে দিল।

মম সব গোজগাছ শুরু করে দিল। বিকাল পাঁচটায় লঞ্চ। দুপুরের খাবার খেয়ে তৈরী হয়ে যেতে হবে ফেরত যাওয়ার জন্য। রিয়ান ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দরজায় নক পড়ল। ও গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে বলল, এনেছো? মিনহাজ নাস্তার প্লেট দিয়ে বলল, কেমন আছিস তোরা?

– ভালো।

– ভালো হলেই ভালো। আমি চাচাকে সব জানিয়েছি। রাসেল এতটা ইরোগেন্ট হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি।

– ঐ বাস্টার্ডের নাম শুনতে চাই না মিনু ভাই।

– ওকে। তোরা রেস্ট কর। আমি যাই।

মিনহাজ বিদায় নিয়ে চলে গেল। রিয়ান নাস্তার প্লেট এনে মমর সামনে বসল। মম হাত দিতে লাগলে রিয়ান ওর হাতে হালকা চাপড় মেরে বলল, তোমার না হাতে ব্যাথা? জামাই খাইয়ে দিতে চাইছে পছন্দ হচ্ছে না? মম ওকে দেখে হাসল। রিয়ান খাবার মুখের সামনে ধরতেই মম বড় হা করে খেয়ে নিল। ওকে খাইয়ে দিতে দিতে বলল, আমার বউ এত বড় হা করতে পারে জানতাম না তো! মম মিথ্যে রাগ করে বলল, তাহলে আর খাবোই না।

– না খেলে কিন্তু শাস্তি আছে।

মম জিজ্ঞেস করল, কি শাস্তি? রিয়ান ওর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে কিছু বলল। তাতেই ও লজ্জাবতী লতার মতো লজ্জায় গুটিয়ে গেল।
#মম_চিত্তে
#পর্ব_২৫
#সাহেদা_আক্তার

রিয়ান মমকে নিয়ে সকালবেলা বাড়িতে ঢুকল। ঐ দিনের পর দুইজনে নিজের মতো করে ঘুরে বেড়িয়েছে। কেউ কাছে এসে কিছু বলেনি। বলতে গেলে অনেকটা ফ্রি স্পেস পেয়েছে দুজনে। বাড়িতে ঢুকতেই রিতু দৌঁড়ে এসে বলল, সেই কখন থেকে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি আর তোমরা এখন এলে? রিয়ান বোনের গাল টিপে দিয়ে বলল, রাস্তায় জ্যাম ছিল। তা না হলে দেখতি ভোরবেলা এসে তোকে ভূতের ভয় দেখাতাম। রিতু মুখ ফুলিয়ে বলল, দেখলে ভাবি, কেমন ভাই? খালি বোনকে ভয় দেখানোর ধান্দা। মম হাসল। রিয়ান এসে সোফায় বসল। ফেরদৌসী কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, ভালো আছিস বাবা? রিয়ান হাসিমুখে বলল, হুম আম্মু। তিনি ওর গালের কাঁটার দিকে তাকিয়ে বললেন, ব্যাথা করছে?

– না। আমি ভালো আছি। তোমার বউমাকে দেখো। হাত কেটে কি করেছে।

রিতু জিজ্ঞেস করল, দুইজনে কি ডাকাত ডাকাত খেলেছো নাকি? কাটল কি করে? রিয়ান কান টেনে দিয়ে বলল, তোর মতো নাকি? ডাকাতরানী একটা। রিতু কান ছাড়িয়ে বলল, আম্মু কিছু তো বলো। ফেরদৌসী রান্নাঘরে যেতে যেতে বললেন, দুজনে ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। নাস্তা করবি। রিয়ান মমকে নিয়ে রুমে চলে এল।

ব্যাগ রেখে হাত মুখ ধুয়ে এসে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে বসল। মম বের হয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল, এটা দিয়ে কি করবে? রিয়ান ওকে কাছে টেনে এনে বসালো। ওর ডান হাতটা নিয়ে আগের ব্যান্ডেজ খুলে নতুন ব্যান্ডেজ পরিয়ে দিল। মমও একটা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ রিয়ানের গালে লাগিয়ে দিয়ে বক্সটা রেখে এল।

রিয়ান ও আসার আগেই বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ল। মম পাশে বসে বলল, নিচে যাবে না? রিয়ান চোখ বন্ধ করে বলল, হুম। নিজের বাসার শান্তি আর কোথাও নেই মম। মম হুট করে রিয়ানের পেটে কাতুকুতু দিয়ে বলল, আমাকে তো থাকতে দিলে না নিজের বাসায়। হুহ্। এখন শান্তি করতে এসেছে। এই? তোমার কাতুকুতু নেই? রিয়ান ডাকাতের মতো হেসে ওকে বিছানায় ফেলে বলল, নোপ৷ তারপর ওকে সুড়সুড়ি দিতে লাগল। মম হাসতে হাসতে বলল, আমার আছে। আর দিও না। প্লিজ থামো। কিন্তু রিয়ান থামল না। মম হাসতে হাসতে লাল হয়ে গেল।

দরজায় কেউ নক দিতেই রিয়ান থামল। রিতু এসেছে। আবার নক করে বলল, কি রে ভাই? খাবি না? রিয়ান উত্তর দিল, আসছি৷ ও বিছানা থেকে নেমে গেল। মম উঠে বসে বড় করে একটা শ্বাস নিল৷ সুড়সুড়ি দিয়ে একেবারে কাহিল করে দিয়েছে। রিয়ান দরজা খুলে ওর দিকে এমন একটা লুক দিয়ে বের হলো তা দেখে মম ঢোক গিলল৷ সুযোগ পেলে আবার কখন সুড়সুড়ি দেয় কে জানে।

নাস্তা করে এসে রিয়ান শুয়ে গেল বিছানায়। গাড়ি চালিয়ে হাত ঘাড় সব ব্যাথা হয়ে গেছে। মম আসছে না দেখে একটা কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করল। কোথায় থেকে মম এসে কোলবালিশটা কেড়ে নিয়ে বলল, এই তোমার কয়টা লাগে? আমাকে দিয়ে হয় না? আবার কোলবালিশও লাগবে? রিয়ান বলল, তুমি রুমে নেই তাই…। মম রিয়ানকে শেষ করতে না দিয়ে বলল, হ্যাঁ, এখন আমি রুমে নেই তাই কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমাচ্ছো। আর যখন আমি একদম থাকবোই না তখন…। রিয়ান ওকে টেনে এনে শুয়ে দিয়ে মুখে হাত দিয়ে বলল, এমন কথা বললে তোমার খবর আছে। মম হাত সরিয়ে বলল, আমার যখন বালিশে শোয়া নিষিদ্ধ তোমারও কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমানো নিষিদ্ধ। রিয়ান হেসে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। মম ওর বুকে মুখ গুঁজে দিল। দুইজনেই মুহূর্তে ঘুম।

মমর ঘুম ভাঙল একটার দিকে। মুখ তুলে রিয়ানের দিকে তাকাল। আসতে আসতে ওর মতো হয়ে যাচ্ছে। বলে না সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। মম মুচকি হাসল। সাবধানে হাত সরিয়ে নিজেকে বাঁধন মুক্ত করে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে এল। দুপুরের খাবারের আয়োজন চলছে। মম মাথার চুলে খোঁপা করে বলল, আম্মু আর কি বাকি আছে? আমি করে দেই। ফেরদৌসী বলল, ওমা! চলে এসেছো! আরেকটু বিশ্রাম নিতে। মম কাজে হাত লাগিয়ে বলল, আর লাগবে না আম্মু, আমি ঠিক আছি। আর কি বাকি আছে করা? নাহার বললেন, সব হয়ে গেছে। বাকি টুকটাক আমরা করে নিতে পারব। তোমার হাত ঠিক আছে? মম মাথা নাড়ল। কনক চাচি বললেন, তুমি এক কাজ করো। গোসল সেরে নিচে চলে এসো। মম অভিযোগ করে বলল, বিয়ের পর থেকে তো কিছুই করতে পারলাম না। কনক চাচি বললেন, আচ্ছা আজকে তুমি খাবার পরিবেশন করো। হবে তো? মম হেসে বলল, খুব হবে। তাহলে আমি গোসল সেরে আসি। মম চলে গেল উপরে। ফেরদৌসী হেসে বললেন, মেয়েটা আসলেই ভালো।
.
.
.
.
অফিসে ঢুকতেই চারদিকের গুঞ্জন মমকে অস্বস্তিতে ফেলল। সবাই হয়ত ওদের নিয়ে কথা বলছে। ও চুপচাপ নিজের ডেস্কে গিয়ে বসল। তৌসিফা পাশেই ছিল। মম ডেস্কটপ খুলতেই ও বলল, ফারিজার সাথে তোর কোনো কিছু হয়েছে? মম ওর দিকে একবার তাকিয়ে পাশে থাকা ফাইলগুলোর দিকে হাত বাড়ালো। বলল, হঠাৎ ওর সাথে ঝামেলা হতে যাবে কেন?

– গতকাল বড় স্যারের কাছে দুটো রেজিগনেশন লেটার জমা পড়েছে। একটা রাসেল ভাইয়ের আর দ্বিতীয়টা ফারিজার।

মম একটু অবাক হয়ে বলল, সে চলে গেছে কেন? তৌসিফা বলল, জানি না। সবাই এটা নিয়ে কানাঘুষা করছে। কেউ বলছে রিয়ান স্যারের সাথে তোর বিয়ের কথা জানতে পেরে মনের কষ্টে চলে গেছে। আবার কেউ বলছে তোর সাথে কোনো ঝামেলা হওয়ায় সে তার পজিশন ছেড়ে চলে গেছে। আরো কত কথা বাতাসে উড়ছে। ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ব্যাপারটা কেমন যেন ঘোলাটে। হঠাৎ এভাবে চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ার মেয়ে ফারিজা না। এটা মম এত দিন থেকে বুঝেছে। তাহলে হঠাৎ ছেড়ে যাওয়ার কারন কি!?

কিছুক্ষণ পর রিয়ানের রুম থেকে ডাক পড়ল মমর। মম ফাইল নিয়ে ঢুকল ওর রুমে। সাথে সাথে রিয়ান অন্য কারো প্রবেশ বন্ধ করে পর্দা টেনে দিল। মম ফাইল রেখে চেয়ারে বসে বলল, আপনার মাথায় কি ঘুরছে মি. রিয়ান? রিয়ান চেয়ার ঘুরিয়ে ওর দিকে ঝুঁকে বলল, তোমাকে ভালোবাসার চিন্তা ঘুরছে। মম হালকা সরিয়ে বলল, ফাজলামি না করে বলো কি জন্য ডেকেছো। রিয়ান মুখ গোমড়া করে বলল, ধুর, বউটা একটা পঁচু। মম দাঁত দেখিয়ে হাসল। রিয়ান চেয়ারে বসে ওর দিকে একটা ভাঁজ করা কাগজ এগিয়ে দিল। মম নিয়ে বলল, এটা কি?

– খুলেই দেখো।

মম খুলে দেখল। পার্সনাল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে জয়েনের লেটার। রিয়ান দুই হাত ভাঁজ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল, বউ থাকতে আর অন্যকাউকে কেন জয়েন দেই? সুযোগ পেলে একটু রোমান্সও করা যাবে।

– এই ব্যাপার? মাথায় শুধু এগুলো ঘোরে এখন।

রিয়ান হাসল। মম বলল, আমি উঠি। রিয়ান জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাচ্ছো? মম উত্তরে বলল, কাজ করতে। তোমার সাথে এখানে বসে বসে রোমান্স করলে আমার সব কাজ ঘাড়ের উপর এসে পড়বে। রিয়ান এক চোখ টিপে একটা ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দিল। মম হাসতে হাসতে ওর রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

দুই সপ্তাহ পর,
মম সকালে ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভাঙল। রিয়ান নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে ওর পাশে। ও গোসল সেরে তৈরী হয়ে নিল। আজকে ওদের বিয়ের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। সেই কারণে কাল রাতে রিয়ান বলেছে ওকে নিয়ে ঘুরতে যাবে। তাই একটা খয়রী শাড়ি ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছে পরতে যাওয়ার সময়। এখন সেই শাড়ি সুন্দর কুঁচি করে পরে নিল। গলায় ওর দেওয়া লকেটটা। কানে ছোট ঝুমকা। হাতে চুড়ি পরল। মাথার চুল খোলা। চোখে কাজল দেওয়া শেষে নিজেকে একবার দেখে নিল কেমন লাগছে। তারপর বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখল রিয়ান এখনো ঘুমাচ্ছে। মম কোমরে দুই হাত দিয়ে আস্তে আস্তে বলল, আজকে ঘুরতে যাওয়ার কথা আর আজকেই মহারাজ মহিষের মত ভস ভস করে ঘুমাচ্ছে। ও কাছে গিয়ে রিয়ানকে ডাকতে লাগল, কি হলো? উঠবে না? দেখো ক’টা বাজে। আটটা বেজে গেছে। এই? রিয়ান আস্তে করে বলল, একটু পর। মম আরেকটু জোরে ধাক্কা দিয়ে বলল, আর একটুও না। ওঠো বলছি। রিয়ান ওকে একটান দিয়ে বিছানায় ফেলে জড়িয়ে ধরে বলল, ঘুমাও। ও বাঁধন ছেড়ে বলল, কষ্ট করে সুন্দর করে সাজলাম বাইরে যাওয়ার জন্য। দিলে তো নষ্ট করে? রিয়ান এবার চোখখুলে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখল ওকে। তারপর কপালে একটা চুমু দিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে বলল, সমস্যা নেই। সুন্দর থাকলেও আমি দেখবো, কাকের বাসা হলেও আমি দেখবো। সো ইট’স ওকে। এখন ঘুমাও তো। রিয়ান এমনভাবে ধরেছে যে নড়তে পারছে না। শেষমেশ হাল ছেড়ে দিয়ে রিয়ানের মাঝে মুখ লুকিয়ে ফেলল। এই একটা জায়গায় আসলে মমর এত ঘুম পায়! কি যে আছে জায়গায়টায় বুঝতে পারে না।

আধা ঘন্টা ঘুমিয়ে তারপর উঠল দুজনে। অনিমা ডাকতে এসেছে নাস্তার জন্য। রিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল। মম মুখ ভার করে বলল, একদম হাসবে না। তোমার জন্য আমার সাজটা নষ্ট হয়ে গেছে। রিয়ান মুখে হাত দিয়ে বলল, আচ্ছা আচ্ছা। তারপর ফ্রেশ হতে চলে গেল। মম আবার আয়নার সামনে এসে মাথার চুল আঁচড়াতে লাগল। সব জট পাকিয়ে গেছে। শাড়িটাও এদিক ওদিক কুঁচকে গেছে। সব ঠিকঠাক করে মম রিয়ানের টিশার্ট আর জিন্স বের করে রাখল। রিয়ান বের হলে বলল, এগুলো পরে তৈরী হয়ে নাও। আমি নিচে যাচ্ছি। রিয়ান কিছু বলার আগেই ও নিচে চলে এল।

সবাই টেবিলে বসে আছে। নাস্তা রান্নাঘর থেকে এনে দিচ্ছে ফুলি। মম গিয়ে হাত লাগালো। তুলি ভাবি ওকে মানা করে বলল, কি করছো? কোথায় বের হবে; গিয়ে নাস্তা করবে। তা না করে কাজে লেগে যাচ্ছো। মম মানা করে দিয়ে বলল, আমি ঠিক আছি। একটুই তো। রিয়ান এর মাঝে তৈরী হয়ে চলে এল। নাস্তা সব আনা শেষ হলে সবাই বসে পড়ল খেতে। রিতু জুস নিতে নিতে বলল, কোথায় যাবি ভাইয়া? রিয়ান স্যান্ডুয়েচে কামড় দিতে দিতে বলল, মৈনট যাবো ভাবছি। বর্ষা প্রায় চলে এল। বৃষ্টিও হয়েছে মাঝে মধ্যে। ভালো লাগবে। তারপর দেখি টুকটাক ঘুরবো। নীলিমা বলল, লং ড্রাইভে যাবে তাহলে। রিয়ান বলল, কারেক্ট। তারপর সবাই টুকটাক কথা বলে খাওয়া শেষ করল।

রিয়ান আর মম বেরিয়ে পড়ল। ওদের অন্তত দুই তিন ঘন্টা লাগবে মৈনটে যেতে। মম জানালা খুলে রেখেছে। বাতাসে ওর চুল উড়ছে। ও উৎসুক হয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। রিয়ান বলল, আমাকে কেমন লাগছে বললে না তো? মম ওর দিকে ফিরে বলল, মহারাজাকে তো প্রতিদিনই ভালো লাগে। রিয়ান একটা হাসি দিল। মম বলল, জানো, আব্বু আমাদের দুই বোনকে নিয়ে অনেক আগে একবার মৈনটে এসেছিল। কি যে মজা হয়েছিল!

– আসলেই তো। এতদিন হয়ে গেল এখনো আমার সাথে তোমাদের দুই বোনের গল্প করোনি।

– আজকে করব তাহলে। যেদিন গিয়েছিলাম সেদিন সকালবেলা ও ঘুম থেকে উঠেছিল আগে। তাই আম্মু ওকে আগে তৈরী করে দিয়েছিল। আমি যখন উঠে দেখলাম ও তৈরী হয়ে গেছে। আমার সেকি কান্না। ভেবেছিলাম আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছে। আম্মু এসে অনেক বুঝালো। তাও কান্না থামে না। তারপর আব্বু এসে একটা চকলেট দিতেই নাক টানতে টানতে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। আম্মু আমাকে তৈরী করে দিয়ে নিজে তৈরি হয়ে নিল।

– তোমাকে কেমন লাগছিল বলতো? চিন্তা করলে কেমন লাগবে? চোখ দিয়ে আর নাক দিয়ে পানি পড়ছে।

ভেবেই হেসে ফেলল রিয়ান। মম রিয়ানকে আসতে করে একটা চাপড় মেরে হাসতে লাগল।

ওরা তিন ঘন্টা পর মৈনটে এসে পৌছালো। গাড়ি থেকে নামতেই বাতাসে মন জুড়িয়ে গেল। মম জুতা খুলে পানির কাছে এসে দাঁড়ালো। নদীর ঢেউয়ে পা ভিজে যাচ্ছে। রিয়ানও এসে ওর পাশে দাঁড়াল। মম বলল, আমি আর আমার বোন ঘাটের কাছে এসে পানিতে পা ভিজিয়ে ছিলাম। কিন্তু জুতা না খুলে। সেজন্য যা বকুনি খেয়েছিলাম আম্মুর কাছে! আমি তো পিছলে পড়েও যেতাম নদীতে। আব্বু থাকায় সময়মতো ধরে ফেলেছিল। রিয়ান ওর হাত ধরে বলল, তুমি পড়ে গেলে আমার বউ কে হতো? মম হেসে ওর নাক টেনে দিল।

দুইজনে হাঁটা ধরল। কায়াকিং পয়েন্টে যাবে। দুপুর হয়ে গেছে। রিয়ান ওকে নিয়ে গেল ভাসমান রেস্টুরেন্টে। সেখান থেকে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বের হতেই মম বায়না ধরল নৌকায় চড়বে বলে। আর কি করা। ওকে নিয়ে নৌকা চড়তে গেল। দুইজনে উঠে অনেকটা দূর গেল নৌকা বেয়ে। মম রিয়ানকে বলল, জানো, আমরা দুইজনেই নৌকা চড়ার জন্য বায়না ধরেছিলাম। আব্বু টিকেট নিতে আমার আর ওর মধ্যে প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে গেল কে আগে উঠবে। আমাদের এমন করা দেখে আম্মু দিল বকা। তখন এত মানুষের মাঝে নাকের চোখের পানি এক করে এমন কান্না দিলাম দুজনে। মম হাসল। রিয়ান ওকে বলল, ও এর নামটাই এখনো জানলাম না৷ মম মাথায় হাত দিয়ে বাড়ি দিয়ে বলল, এত কিছু বললাম আর নামটাই বলিনি!? মৌনী। আমার বোনের নাম ফারজানা আফরিন মৌনী।

মৌনী নামটা শুনে এক বড় ধাক্কা খেল রিয়ান। নৌকা চালানো থেমে গেল। মম একলা চালাতে পারছে না। পানিতে গোল হয়ে ঘুরছে। মম জিজ্ঞেস করল, কি হলো? নৌকা চালাও। পাড়ে যেতে হবে তো। আমি একলা পারছি না। তাও রিয়ানের কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। পাঁচ মিনিট পর রিয়ান নৌকা বেয়ে পাড়ে চলে এল। নৌকা থেকে উঠে এল দুজনে। রিয়ান হাঁটা ধরল সামনের দিকে। মম তাল মিলাতে পারছে না ওর গতির সাথে। হঠাৎ রিয়ানের কি হলো মমর মাথা কাজ করছে না। ও ভীড় সামলে দেখল রিয়ান গাড়িতে গিয়ে বসে আছে।

মমও গাড়িতে গিয়ে বসল। রিয়ানকে জিজ্ঞেস করল, আমরা কি ব্যাক করব? রিয়ান উত্তর না দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। সারারাস্তা কোনো কথা হলো না ওদের। বাড়িতে এসেও সোজা রুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়েও বিছানায় শুয়ে রইল। সন্ধ্যায় নাস্তা করতেও নামল না। রুম অন্ধকার করে শুয়ে রইল। রাতে ঘুমানোর সময়ও ওর জন্য অপেক্ষা করল না। ঘুমিয়ে গেল ওর আগে। মম বালিশে মাথা রেখে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। রিয়ান চোখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে আছে। মম মন খারাপ করে অন্য দিকে ফিরে শুয়ে গেল। হুট করে রিয়ানের এমন পরিবর্তনে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল।

চলবে…
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here