মম চিত্তে পর্ব -২২+২৩

#মম_চিত্তে
#পর্ব_২২
#সাহেদা_আক্তার

বাড়িতে আসতেই সবাই ঘিরে ধরল। দুইজনকে টাওয়াল এনে দিল। বৃষ্টিতে অনেকটা ভিজে গেছে। গাড়িতে করে আসার পরও ভেজার কারণটা খুব একটা অস্পষ্ট রইল না। তাই দেখে ভাইবোনরা মুচকি হাসতে লাগল। রিতু হেসে বলল, বুদ্ধিটা কার ছিল ভাবি? মম কিছু বলতে পারছে না। টাওয়ালের আড়ালে মুখ রেখে মাথা ঘষতে লাগল লজ্জা ঢাকতে। আসার সময় বৃষ্টিটা বেড়েছিল। তখনই হুট করে রিয়ান গাড়ি থামিয়ে বলল, চল ভিজি। মম রাজি ছিল না। কিন্তু রিয়ান জোর করে ওকে বের করে আনল গাড়ি থেকে। আর যাইহোক ভালোবাসার মানুষের সাথে একসাথে বৃষ্টি ভেজাটা খারাপ না। বরং ভালো লাগার একটা স্মৃতি। মম বুঝে ওঠার আগেই ওদের দুইজনের একটা ছবি তুলে নিল রিতু৷ মিনহাজ বলল, বেচারারা ভিজে চুপসে আছে আর তোরা পড়লি ছবি নিয়ে। অনিমা বলল, তোমার সময় মনে আছে ভাইয়া?

– মনে থাকবে না? একটা বছর কি জ্বালানটাই না জ্বালিয়েছিস৷ তোদের জন্য একটু শান্তি পাইনি।

– বারে, কতগুলো মোমেন্টের ছবি তুলে দিলাম। রেখেছো তো সব এ্যালবাম ভরে৷

– হ্যাঁ, সব ছবিতেই আমার নাজেহাল অবস্থা। কখন রান্না করতে গিয়ে গায়ে হলুদ নুন মাখিয়ে নিজেই ভাজার জন্য প্রস্তুত ছিলাম আর কখনো বেড়াতে গিয়ে নীলতিমির মতো হা করে ছিলাম। তুলেছিস তো সব এই ধরণের ছবি।

– তবে রিয়ান ভাইয়ার মেমরিগুলো জোস। তাই না রে নীলি?

– হুম, বিয়ের দিন ভাবিকে খাইয়ে দেওয়া, আজকে দুইজন একসাথে বৃষ্টিতে ভিজে আসা।

ওদের কথার মাঝে টাওয়ানলের আড়ালে রিয়ান আর মমর চোখাচোখি হয়ে গেল। মম লজ্জায় অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। ফেরদৌসী এসে বললেন, হয়েছে তোদের? ছেলেমেয়ে দুটো ভিজে আছে আর তোরা গল্প করতে বসলি। ঠান্ডা লেগে যাবে তো। যা তো, উপরে গিয়ে বদলে আয়। মম সাথে সাথে উপরে চলে এল। আলমারী খুলে একটা শাড়ি বের করে দরজাটা বন্ধ করতে আয়নায় নিজেকে দেখতে পেল। ভিজে আছে। মুখের পাশের ছোট চুলগুলো থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে এখনো। টাওয়ালটা দিয়ে আলতো করে মুছতে মনে হল এই নিয়ে দুইবার রিয়ানের সাথে বৃষ্টি ভেজা। এত সুখ যদি বিয়ের দুই দিনে পাওয়া হয়ে যায় বাকি দিনগুলোর জন্য থাকবে তো!? ওর ভাবনার মাঝে রিয়ান এসে রুমে ঢুকল। আয়নায় রিয়ানকে দেখে ওয়াশরুমে চলে গেল। যাওয়ার আগে রিয়ান ওকে জিজ্ঞেস করছিল, কি পরছো বলে তো যাও। আমিও পরতাম। মম ওয়াশরুমে ঢোকার সময় আস্তে করে বলল, পাগল একটা।

পোশাক বদলে নিচে চলে আসতে হলো। সবাই একসাথে ডিনার করতে হবে। ওরা টেবিলে বসতেই নিক্বণ দুই কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি টেবিলটায় রেখে বলল, খেয়ে নে। যা ভেজা ভিজেছিস জ্বর না উঠে যায়। দুইজনেই একসাথে কপির কাপে চুমুক দিতেই ক্লিক করে একটা শব্দ হলো। সবাই জড়ো হলো নীলিমার তোলা ছবি দেখতে। রিতু ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, কি স্মৃতি রে ভাই! সারাজীবন মনে রাখবি। রিয়ান একটা হাসি দিয়ে বলল, দেখতে হবে না কে? মম দ্রুত কফি শেষ করে রান্নাঘরে চলে এল সাহায্য করতে। ভাইবোন গুলোর মাঝে থাকলে লজ্জায় কান দিয়ে ধোঁয়া বের হওয়া শুরু হবে ওর। ওকে দেখে নাহার বললেন, তুমি এলে যে? যাওয়া সবাই গল্প করছে, তুমিও করো।

– না বড় চাচি, আমি ঠিক আছি।

– চাচি না। রিয়ান আমাকে বড় আম্মু বলে ডাকে। তুমিও ডেকো। আর কনককে ছোট আম্মু।

– আচ্ছা।

কনক চাচি ভর্তা বানাচ্ছিলেন। মম এসে বলল, আমি করে দেবো? তিনি বললেন, এত কিছু করা লাগবে না, তুমি শুধু আমাকে বেগুণটা এনে দাও। ওখানে উপরে শেলফের লবণটা দিলেই হয়ে যাবে। নাহার চাচি ফেরদৌসীকে সাহায্য করছেন। ফুলি খাবার টেবিলে নিয়ে যেতে লাগল। মম কি করবে বুঝতে না পেরে ফুলিকে কাছে ডেকে কিছু জিনিস চেয়ে নিল। ফেরদৌসী কাজ শেষ করে ওর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, কি করছো মম? মম হাতের কাজ শেষ করে বলল, কিছু তো করতে পারিনি তাই ভাবলাম একটু ডেজার্ট বানাই। ফেরদৌসী হেসে ওকে টুকটাক সাহায্য করে দিলেন।

খাবার আসতেই সবাই টেবিলে বসে গেল। টেবিলে আরো একটা চেয়ার যোগ হল। রওশন আরা বললেন, বাবা রাকিব, টেবিলটাকে তো আরো বড় করতে হবে। ভবিষ্যতে আমার নাত জামাই বউয়েদের জায়গা করতে হবে তো। এই কথা শুনে নিক্বণ বলল, সে তোমার নাত জামাইরা আসলে দেখা যাবে। এখন আগে তোমার নাত বউ জায়গা পেয়েছে কি না দেখো। মম হেসে বলল, আমার হয়ে গেছে। চাচিরা খাবার বেড়ে দিলেন। মম উঠতে চাইলেও সবার মানার কারণে চুপচাপ খেতে বসে গেল। খাওয়া বেড়ে দেওয়ার পর সবাই যে যার মতো নিয়ে খাওয়া শুরু করল।

খাওয়া শেষে সবাইকে বসতে বলে ফুলিকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে এল মম। দুই ট্রে করে দুইজনে ডেজার্ট এনে রাখল টেবিলে। অনিমা নীলিমা দুইজনে একসাথে বলল, ডেজার্ট! ইয়াম্মি। মম হালকা হেসে সবাইকে সার্ভ করতে লাগল। রিতু মুখে দিয়ে বলল, উম্, কি মজা! তুমি বানিয়েছো ভাবি? মম বলল, কিছু তো করতে পারিনি তাই ভাবলাম ছোটখাটো কিছু করা যায় কি না। নিক্বণ খেয়ে বলল, অনেক ভালো হয়েছে। রওশন আরারও খুশি মুখ করে খেতে লাগলেন। চাচা চাচিরাও অনেক প্রসংশা করলেন। খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই কিছুক্ষণ গল্প করল। রওশন আরা মমকে নিজের পাশে বসিয়ে বললেন, দাও তো নাত বউ একটা পান বানিয়ে। মম পান বানাতে লাগল। রিয়ান গল্পের মাঝে কিছুক্ষন পর পর মমর দিকে তাকাতে লাগল। মম পান বানিয়ে তাঁর হাতে দিতেই তিনি বললেন, তোর জামাইর তো তর সইছে। যা যা গিয়ে পাশে বোস। না হলে এই বুইড়া মানুষটারে পরে দোষ দিবে। মম কথাটা শুনে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। ও বলল, থাক দিদুন। লাগবে না। তোমার কাছেই ভালো আছি। মম চুপচাপ পানের বাটা সাজাতে লাগল।

রাতে গল্প শেষে যখন রুমে আসলো, রিয়ান অভিযোগ করে বলল, আজকে নিচে একবারও আমার দিকে তাকালে না কেন? মম ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে বলল, তাকালে কি করতে? রিয়ান বিছানায় শুয়ে একহাতের উপর মাথা রেখে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দিতাম। মম এসে কান মলে দিয়ে বলল, আমিও কিসটাকে টোকা মেরে উগান্ডায় পাঠিয়ে দিতাম। রিয়ান কানে থাকা মমর হাতটা ধরে বলল, ইহ্। কত বড় সাহস। জামাইর ভালোবাসাকে উগান্ডায় পাঠাবে। মম ওর বুকে মাথা রেখে শুয়ে বলল, জামাই বলেই তো সাহস দেখাচ্ছি। খুব ঘুম পাচ্ছে। একটু ঘুমাতে দাও৷ রিয়ান চুপ করে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগল। আরামে মম ঘুমের সাগরে ডুব দিল।

মম ব্যাগ হাতে মিনিবাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে সবাই ওঠার পর কোনো সিট ফাঁকা নেই ওর জন্য। তাই নিয়ে মিনহাজ বকাবকি করছে ফারিজাকে। ওকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ট্যুরের। ফারিজা বার বার করে বলছে ওকে নাকি চব্বিশজনের কথা বলা হয়েছে। সেই হিসাবেই ব্যবস্থা করেছে। এখন বুঝতে পারছে মোট পঁচিশ জন যাবে। বলতে বলতে কান্না করে দিচ্ছে। মিনহাজ আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল৷ রিয়ান থামিয়ে দিয়ে ফারিজাকে বলল, তুমি বাসে গিয়ে বসো। ও নাক টানতে টানতে বাসে উঠে গেল। রিয়ান মিনহাজকে বলল, এককাজ করো। তোমরা রওনা দিয়ে দাও। কালকে নয়টায় লঞ্চ। পৌঁছানো লাগবে তার আগে। আমরা আমার কারে করে চলে যাবো। মিনহাজ মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ওকে, বেস্ট অফ লাক। বলে ড্রাইভারের পাশের সিটটায় বসল। গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে দেখে ফারিজা তড়িঘড়ি করে বলল, স্যার যাবেন না? মিনহাজ পিছন ফিরে বলল, যাবে। তুমি বসো সিটে। বাস ছেড়ে দিয়েছে। পড়ে যাবে।

– আরে, স্যার গেলে বাস ছাড়ছে কেন?

– তোমাকে এত কথা চিন্তা করতে হবে না। ঝামেলা তো করে রেখেছো এখন চুপচাপ বসো।

ফারিজা মিনহাজের কড়া কথায় চুপ করে বসে পড়ল। পাশের সিটটা রিয়ানের জন্য খালি রেখেছিল। কিন্তু সিটটা ফাঁকা যাচ্ছে। ভেবেছিল একসাথে যাবে। কিন্তু তা হল না মমর জন্য। ভেবেছিল ওকে রেখেই ট্যুরটায় যাবে। কিন্তু তা না হয়ে বরং মমর সাথেই রিয়ান রয়ে গেল। আর ও বাসে একা। একবার সুযোগ পেলে মমর নামটা মুছে দিতে পারলে ও শান্তি পেত।

বাস রওনা দিতেই রিয়ান ফোন করল ড্রাইভারকে গাড়ি আনতে। মম ব্যাগ হাতে তখনো দাঁড়িয়ে। রিয়ান ওর হাত থেকে ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে বলল, কতবার বললাম লাগেজ নিতে। সেই একটা পোটলা নিয়ে আসলে। ভারি লাগছে না? মম মনে মনে শিকার করল। সব জিনিস ঢোকানোর পর শেষ মুহুর্তে যখন ব্যাগটা ওঠালো তখনই ভারটা টের পেয়েছে ভালোমতো। দেরি হয়ে যাবে দেখে কিছু বলেনি। সাতটা বাজছে। অফিস ভবনের সামনে দুজনে দাঁড়িয়ে গাড়ির অপেক্ষায়। মম আকাশের দিকে তাকালো। পরিষ্কার আকাশে জ্বলজ্বল করছে তারাগুলো। ধ্রুবতারাকে সহজেই চেনা যাচ্ছে। রাতের আকাশটা দিনের আকাশ থেকে কেন যেন একটু বেশিই সুন্দর লাগে৷ হাজার নক্ষত্রের জ্বলজ্বলে চাহনির রূপ দিনের এক নক্ষত্রের কাছে হার মেনে যায়। মমকে অপলক আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিয়ান আলতো করে ওর হাত ধরল। মম হাতের দিকে তাকালো। ওর অন্ধকার আকাশে রিয়ান একমাত্র তারা। যে ওর অন্ধকারকে অন্যরকম সুন্দর করে তুলছে দিনের পর দিন। উহু, আরো তারারা ওর আকাশে জ্বলজ্বল করছে। রিয়ানের পুরো পরিবার। এই ক’দিনে ওকে এত আপন করে নিয়েছে যেন এটাই ওর আসল বাড়ি। এখানেই ওর বেড়ে ওঠা। এখানেই ওর ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখা পুতুলের সংসার।

দু’জনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। গাড়ি আসতেই মম হাত ছেড়ে দিল। রিয়ান ব্যাগগুলো গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে ড্রাইভারকে বিদায় দিয়ে দিল। মম একটু অবাক হয়ে বলল, তুমি গাড়ি চালাবে!? রিয়ান প্রতিউত্তরে হ্যাঁ জানিয়ে বলল, আমাদের লং ড্রাইভে কি ড্রাইভার নিয়ে যাবো নাকি!? ওঠো গাড়িতে। রিয়ান উঠে বসল। মমও উঠে দরজা বন্ধ করল। রিয়ান এগিয়ে এসে সিট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে বলল, তোমাকে না আজকে মেরুন জামাটায় একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। একটু এদিকে আসো তো। মম কাছে এগিয়ে আসতেই রিয়ান ওর গলায় একটা লকেট পরিয়ে দিয়ে বলল, ভুলেই গিয়েছিলাম দিতে। এখন মনে পড়ল। মুক্তো বসানো লকেটটা ভীষণ পছন্দ হল মমর। রিয়ান গাড়ি স্টার্ট দিয়েই সাই করে অফিস থেকে বেরিয়ে গেল। মম লকেটটা নাড়াচাড়া করতে করতে বলল, লকেটটা খুব সুন্দর। রিয়ান বলল, তোমার পছন্দ হয়েছে? মম মাথা নাড়ল। রিয়ান ওর দিকে ফিরে একটা হাসি দিয়ে আবার ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিল।

ওদের গাড়ি থামিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা আগে থেকে নির্ধারণ করা ছিল। মিনহাজরা ওখানে পৌঁছাতেই রিয়ানকে একটা ফোন দিল। রিয়ান গাড়ি চালাতে চালাতে বলল, ফোনটা ধরো তো মম। মম ফোন রিসিভ করে স্পিকার অন করে দিল। মিনহাজ জিজ্ঞেস করল, তোরা কোথায়? রিয়ান গাড়িতে ম্যাপ দেখে বলল, এইতো আরো দশ মিনিট লাগবে। তোমরা পৌঁছে গেছো রেস্টুরেন্টে।

– হ্যাঁ, আচ্ছা তাহলে আয়।

মিনহাজ ফোন কেটে দিল। দশ মিনিটের মাথায় রিয়ানের গাড়ি একটা রেস্টুরেন্টের সামনে থামল। গাড়ি থেকে বের হতেই ওদের মিনিবাসটা নজরে পড়ল দুজনের। মিনহাজ এসে বলল, পৌঁছেছিস তাহলে। রিয়ান হাতের আড়মোড়া ভেঙে বলল, তুমি তো যাচ্ছো আরামে। ড্রাইভিং করতে কি যে বিরক্ত লাগছে৷ কোথায় ভাবলাম বউয়ের পাশ…। মমর পাশে থেকে চিমটি কাটতেই রিয়ান ব্যথায় ককিয়ে উঠে বলল, এটা কি ঠিক হল? সারা রাস্তা ড্রাইভিং করে এখন চিমটি দিচ্ছো? মম গলা নামিয়ে বলল, সবাই শুনতে পেলে কি বলবে? একটু চুপ থাকতে পারো না? বলে ও সবার দিকে তাকাল। ওদের দিকে কারো এত মনোযোগ নেই। কিন্তু একজনকে তাকিয়ে থাকতে দেখল ও। ফারিজা ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। হাতে কফির ওয়ান টাইম কাপটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাড়াচ্ছে। মম ভেতরে অস্বস্তি অনুভব করতে লাগল। ফারিজা যেন ওদের দিকে তাকিয়ে হাজার জিনিস চিন্তা করছে। মমও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়ান মিনহাজের সাথে কথা বলতে বলতে রেস্টুরেন্টের দিকে এগিয়ে আবার পিছন ফিরে বলল, মম? আসবে না? মম চমকে উঠে বলল, হুম, আসছি। মম রিয়ানের পেছন পেছন রেস্টুরেন্টে ঢুকল। ফারিজাকে কাটিয়ে আসার সময়ও মনে হল ও পলকহীন ভাবে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।

সকাল আটটায় এসে পৌঁছালো টেকনাফ। লঞ্চের টিকেট নিয়ে বিপত্তি হল। ফারিজাকে কিছু বলাও গেল না। ভুল মানুষের হতেই পারে। এখন টিকেট পাওয়াটা মুশকিল। যে পরিমাণ ভীড়। তাও চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। রিয়ান টিকেট কাউন্টারে গিয়ে বহুকষ্টে একটা টিকেট কেটে এনে মমর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, নাও। মম রিয়ানের দিকে তাকাল। কেমন ক্লান্ত দেখাচ্ছে ওকে। সারারাত জার্নি করে যেন চুপসে গেছে। মম কাঁধের ব্যাগ থেকে পানির বোতল এগিয়ে দিতেই ফারিজা এসে ঠান্ডা পানির একটা বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল, স্যার পানি। রিয়ান মমর বোতলটা নিয়ে বলল, আমি ঠান্ডা পানি খাবো না। ফারিজা বোতল রেখে একটা বক্স এগিয়ে দিয়ে বলল, স্যার, বাসা থেকে পিঠা এনেছিলাম। খাবেন? রিয়ান বক্সটা নিয়ে মমর দিকে এগিয়ে একটা নিতে ইশারা করল। মম হাসিমুখে একটা নিল। তারপর রিয়ান নিয়ে ফারিজাকে বক্স ফেরত দিয়ে মমকে বলল, ঐদিকে ছায়া আছে। ওখানে দাঁড়ালে ভালো হবে। রিয়ান ওকে নিয়ে ছায়ার নিচে দাঁড়ালো। রিয়ান সামনে থাকায় কিছু বলতে পারল না ফারিজা। বক্সটা শক্ত করে খাঁমচে ধরে দাঁড়িয়ে থেকে ওদের দিকে তাকিয়ে রইল। #মম_চিত্তে
#পর্ব_২৩
#সাহেদা_আক্তার

লঞ্চে ওঠার সময় অনেক মানুষের ভীড়ে কে কোন দিকে হারিয়ে গেল খুঁজে পাওয়া গেল না। সবাই মানুষের মাঝে মিশে গেল। পাছে হারিয়ে যায় এই ভেবে মমর হাত শক্ত করে ধরে রইল রিয়ান। লঞ্চে উঠে হাফ ছাড়ল ওরা। নিচে বসার জায়গা নেই। সব ভর্তি। তাই দুইজনেই উপরে লঞ্চের ছাদে চলে এল। সেখানে অনেকজনকে পাওয়া গেল ওদের অফিসের। ওদের দেখে মম রিয়ানের হাত ছেড়ে দিল।

তৌসিফা ওকে ডাকল। ছাদে ইঞ্জিনের এত শব্দ যে কিছুই শোনা গেল না। ওর হাত নাড়ানো দেখে মম এগিয়ে গেল ওর দিকে। লঞ্চের ছাদের কিনারায় রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে ওরা। ওখান থেকে চারপাশের দৃশ্য সুন্দর দেখা যায়। বেশ কয়েকটা উঁচু পাহাড় ঘেরা জায়গার পাশ দিয়ে পার হয়ে গেল লঞ্চ। একটু পর কেবল পানিই দেখা গেল। চারদিকে পানির ঢেউগুলো দেখতে বেশ ভালো লাগছে। পাখিরা উড়ে বেড়াচ্ছে লঞ্চের চারপাশে। অনেকে বিস্কিট ছুড়ে দিচ্ছে। সেই বিস্কিট পাখিগুলো লুফে নিচ্ছে। কিন্তু লঞ্চে থাকা লোকেরা মানা করল বিস্কিট ছুড়ে দিতে। মমর ইচ্ছে করছিল পাখিদের খাওয়াতে কিন্তু মানা করায় আর করল না।

তৌসিফা আর মম নিজেদের মধ্যে গল্প করতে লাগল। নতুন কিছু দেখলেই দেখাতে লাগল একে অপরকে। ওদের পেছনে কখন ফারিজা এসে দাঁড়ালো টের পেল না। মমর খুব কাছ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে ও। একটা ধাক্কা দিলেই পানিতে পড়ে যাওয়ার মতো বিপদ ঘটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু কিছু করার আগেই কোথায় থেকে রিয়ান এসে মমর পাশে এসে দাঁড়ালো। ফারিজা রিয়ানকে দেখে অপর পাশে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল। রিয়ানকে দেখলেই ওর খুশিতে মন ভরে ওঠে। ও হেসে হেসে কথা বলতে লাগল রিয়ানের সাথে। রিয়ান হু হা করল কিন্তু তেমন একটা পাত্তা দিল না। ও বিরক্ত হচ্ছে টের পেয়ে ফারিজা কতক্ষণ কথা বলে চুপ করে গেল। তারপর মুখ গোমড়া করে ভীড়ের মাঝে হারিয়ে গেল। যেতে যেতে ঘন্টা দুয়েক লাগবে। তাই মম একবার রিয়ানকে চেয়ারে বসে বিশ্রাম নিতে বলেছিল কিন্তু এত মানুষের মাঝে বসার জায়গা পেল না।

দুই ঘন্টা জার্নি শেষে ওরা সেন্টমার্টিন পৌঁছালো। রিয়ান আর মম লঞ্চ থেকে নেমে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে সবার জন্য। জায়গাটা সুন্দর। মিনহাজ লঞ্চ থেকে নেমে ওদের পাশে এসে গলার সর খাদে নামিয়ে রিয়ানকে বলল, ব্রো, হানিমুনটা না হয় এখানেই সেরে ফেলো। বলে হাঁটা দিল। কথাটা আস্তে বললেও মমর কানে গিয়ে ঠেকেছে। তাই না চাইতেও কান অবধি লাল হয়ে গেছে লজ্জায়। সত্যি বলতে বিয়ের পর এটাই ওদের একসাথে কোথাও বেড়াতে আসা।

সবাইকে খুঁজে নিয়ে হোটেলের দিকে হাঁটা ধরল ওরা। রুম নেওয়া হয়েছে ছয়টা। তিনটা মেয়েদের, দুটাে ছেলেদের আর একটা রিয়ানের জন্য। সবাই সবার মতো সেটেল হয়ে গেল। কিন্তু মম রুম পেল না। এক রুমে চারজন করে মেয়ে। ওরা মোট তেরজন মেয়ে। তাই মম বাকি রয়ে গেল। যে যার মতো রুমে চলে গেছে৷ মম তৌসিফাকে খুঁজল কিন্তু পেল না৷ মিনহাজ এসে জিজ্ঞেস করল, কি হল? দাঁড়িয়ে আছো?

– জায়গা নেই ভাইয়া৷ সব রুম ব্লক।

– আমার সাথে এসো।

মিনহাজ ওর ব্যাগ নিয়ে দোতলায় চলে এল। মম ওকে অনুসরণ করল। একটা রুমে ব্যাগটা রেখে বলল, এই রুমে থাকো তাহলে। মম কাঁধের ব্যাগ রেখে বিছানায় বসতে বসতে বলল, এটা কার রুম? মিনহাজ একটা গোয়েন্দা হাসি দিয়ে বলল, জানতে পারবে। রেস্ট নাও। আমি যাই। মিনহাজ বেরিয়ে গেল। ওয়াশরুমে শব্দ শোনা যাচ্ছে। কেউ আছে রুমে। মম ঝুঁকে ব্যাগটা রাখতেই লাগেজটা চেনা চেনা লাগল। পেছন থেকে কেউ বলল, তুমি? মম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। এবার বুঝতে পারল মিনহাজ এভাবে হাসার কারণ। মম পিছন ফিরে দেখল রিয়ান ভেজা গায়ে দাঁড়িয়ে আছে। চুলগুলো এখনো মোছেনি৷ মম বলল, কোনো রুমে জায়গা ছিল না। তাই মিনুভাই আমাকে এখানে দিয়ে গেল।

রিয়ান ওর দিকে এগােতে লাগল। মম পেছাতে পেছাতে দেয়ালে গিয়ে ঠেকল। রিয়ান ওর কানে ফিসফিস করে বলল, হানিমুনটা তাহলে হয়েই যাচ্ছে। কি বলো? মম ওকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বলল, আমি অন্য রুমে চলে যাচ্ছি। কেউ বুঝতে পারলে জানাজানি হয়ে যাবে। রিয়ান ওর হাত ধরে বাঁধা দিয়ে বলল, কিচ্ছু হবে না। এদিকে আসো তো। নাও, মাথা মুছে দাও। রিয়ান টাওয়ালটা এগিয়ে দিল। মম অন্যদিকে ফিরে ওর মাথা মুছে দিতে লাগল। রিয়ান অভিযোগ করে বলল, অন্য দিকে তাকিয়ে আছো কেন? যেন অন্য কারো জামাইকে দেখছো? নিজেরই তো। মম টাওয়ালটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, হয়ে গেছে মোছা। যাও ঘুমাও, সারারাত গাড়ি চালিয়েছো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। বলে মম ওয়াশরুম চলে গেল।

ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখল রিয়ান বিছানায় হেলান দিয়ে ফোন টিপছে। মম মাথার চুল মুছতে মুছতে বলল, ঘুমাও নি? রিয়ান ফোনটা রেখে বিছানায় আস্তে আস্তে বাড়ি মেরে বলল, এখানে এসে বসো। মম জিজ্ঞেস করল, কেন?

– আহা, আসো না। বসো।

মম এসে বসলে রিয়ান ওর কোলে মাথা রেখে বলল, তোমার কোলে ঘুমানোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম৷ এখন ঘুমাবো। রিয়ান চোখ বন্ধ করল। মম হালকা হেসে ওর মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যেই রিয়ানের চোখ ভেঙে ঘুম চলে এল। ষোল সতের ঘন্টার টানা জার্নি ওকে ক্লান্ত করে দিয়েছে। রিয়ান ঘুমিয়ে গেলে মম বালিশে ওর মাথাটা আস্তে করে রেখে দিল। তারপর পাশে শুয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। ওকে যত দেখে মন যেন ভরতে চায় না মমর। রিয়ানকে দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল টের পেল না।

দরজায় শব্দ হতেই মমর ঘুম ভেঙে গেল। নড়তে গিয়ে দেখল ও রিয়ানের বুকে। রিয়ান ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে৷ রিয়ান কখন এমন করল টেরই পেল না ও। রিয়ানের বাঁধন থেকে সরে এসে ফোন হাতে নিল। প্রায় দুটো বাজে। একটানা তিন ঘন্টা ঘুমিয়েছে। দরজায় আবার নক হলো। মম উঁকি মেরে দেখল ফারিজা দরজা নক করছে। ও কি করবে বুঝতে পারল না। এখন যদি ওকে রিয়ানের রুমে দেখে তাহলে সবাইকে বলে দেবে। আবার রিয়ানকেও জাগাতে ইচ্ছে করছে না। খুবই ক্লান্ত ও। মম পায়চারি করতে লাগল আর ভাবতে লাগল কি করা যায়। তারপর বাইরে কারো কথা শুনতেই ওয়াচ গ্লাসে চোখ রাখল। দেখল মিনহাজ এসেছে। ওকে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল মম। মিনহাজ ফারিজা বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিল নিচে। তারপর নক করতে মম দরজা খুলে দিল। মিনহাজ জিজ্ঞেস, কি অবস্থা? সব ওকে? খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছি। রিয়ান কোথায়? মম পিছনে বিছানায় ঘুমন্ত রিয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে বলল, ঘুমাচ্ছে। মিনহাজ ওকে দেখে বলল, তাহলে খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি সময় করে খেয়ে নিও দুজনে। মম মাথা নাড়ল। মিনহাজ চলে গেলে মম দরজা মেরে দিল।

বিশ মিনিট পর ওদের দুটো প্লেট দিয়ে গেল। মম প্লেট টেবিলে রাখতেই রিয়ান ঘুম ঘুম চোখে উঠে বলল, খাবার দিয়ে গেছে?

– হুম, উঠে গেছো? ঘুম হয়েছে?

– হয়েছে মানে? তোমাকে জড়িয়ে ধরে যে ঘুম দিলাম! সারারাতের ঘুম উসুল হয়ে গেছে।

মম ওর হাতে প্লেট ধরিয়ে দিয়ে বলল, এখন খাবারটা খেয়ে পেট ভরিয়ে নাও৷ রিয়ান অস্বীকার করে বলল, খাইয়ে দাও৷ আজকে তুমি আমাকে খাইয়ে দেবে। আমি তোমাকে খাইয়ে দেবো৷ দাঁড়াও হাত মুখ ধুয়ে আসি। রিয়ান ওয়াশরুম থেকে মুখ হাত ধুয়ে এসে বসল মমর পাশে৷ প্লেট থেকে খাবার নিয়ে মমর মুখের সামনে ধরল। উপায় না দেখে মম খেয়ে নিল। রিয়ান বলল, এবার আমাকে দাও। আ……। মম ওকে লোকমা ধরে খাইয়ে দিল। খাওয়া শেষে প্লেটগুলো রেখে দু’জনে হাত ধুয়ে এল। রিয়ান বিছানায় বসে বলল, তোমার হাতে খেয়ে আমার পেট কত বড়ো হয়ে গেছে দেখো। ভুঁড়ি দেখা যাচ্ছে। মম ওর পেটে হালকা একটা ঘুষি দিয়ে বলল, তাহলে আর খাইয়ে দেবো না। রিয়ান ওর হাত দুটো ধরে বলল, ইস্। দেবে না মানে? একশবার দেবে। ভাবছি এবার থেকে তোমার হাতে খাবো। মম বলল, পাগল নাকি? রিয়ান ওর মুখের পাশে হাত দিয়ে বলল, তোমার জন্য। মম কিছু বলল না। দুইজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল।

ফোনের রিংটোন বাজতেই দু’জনে চমকে উঠল। রিয়ান বলল, ফোন বাজছে, ওয়েট। মম লজ্জামিশ্রিত সম্মতি জানিয়ে সরে বসল। রিয়ান ফোন রিসিভ করে বলল, হ্যাঁ বলো ভাইয়া। মিনহাজ অপর পাশ থেকে বলল, সন্ধ্যার সব রেডি হয়ে গেছে।

– ওকে। তাহলে বিকালের পরে সবাইকে সমুদ্র পাড়ে চলে আসতে বোলো।

– আচ্ছা। খেয়েছিস? শরীর কেমন আছে?

– হুম খাওয়া হয়ে গেছে। শরীর এখন ফ্রেশ ঝরঝরে। থ্যাংক ইউ ব্রো।

– হঠাৎ।

রিয়ান একটা হাসি দিল। মিনহাজ বুঝতে পেরে বলল, ওটা তোর ভাগ্য। যাক, হানিমুনটা হয়ে গেল ফাঁকে দিয়ে তোদের। না হলে কোথাও হয়ত যাওয়াও হতো না। আচ্ছা আরেকটু বিশ্রাম নে। আমি বাকি কাজগুলো সেরে নেই। রিয়ান রাজি হয়ে ফোন কেটে দিল। মম জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে? রিয়ান আড়মোড়া ভেঙে বলল, আজকে সন্ধ্যার পর সবাই সমুদ্র পাড়ে বসবে। সেখানে আড্ডা হবে, রাতের খাওয়া দাওয়া হবে।

– ও আচ্ছা।

রিয়ান মমর কাছে এসে ওর কাঁধে মাথা রেখে বলল, ইস্ কেউ না থাকলে তুমি আর আমি একসাথে সমুদ্র পাড়ে হাত ধরে হাঁটতাম। একসাথে ঝিনুক কুড়তাম। ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করতাম। মম?

– বলো।

– চলো না সবাইকে বলে দেই। তাহলে আর কিছু লুকাতে হবে না। নিজেদের ইচ্ছে মতো থাকতে পারব।

– তারপর যে সবাই তোমার বউকে কথা শোনাবে, টিটকারি করবে। ভালো লাগবে?

রিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই সমাজের সব কিছুতে সমস্যা। ভালো করলে একজনকে প্রসংশা করবে আর অপরজনকে দেখিয়ে বলবে তুমি পারোনি। আর খারাপ করলে তো কথাই নেই। তাকে বাজে মন্তব্য করতে করতে ডিপ্রেশনে নিয়ে ফেলে। এই নষ্ট সমাজের মানুষ দুইদিন আগের করা ভালো কাজের কথা মনে রাখে না৷ কিন্তু দশদিন আগের করা খারাপ কাজ ঠিকই মনে রাখে।

বিকালবেলা মম তৈরী হয়ে রিয়ানের আগে বেরিয়ে গেল। রিয়ানের চাইছিল না। কিন্তু সন্দেহের তালিকায় পড়ার কোনো ইচ্ছে নেই মমর। মিনহাজকে ফোন করে জানতে পারল ওরা কয়েকজন সমুদ্র পাড়ে আছে। মম ওখানে চলে গেল। ও একটা হালকা নীল আর সাদা রঙে কাজ করা সুতির শাড়ি পড়েছে। হাতে মুক্তার ব্রেসলেট। গলায় রিয়ানের দেওয়া মুক্তোর লকেটটা। কানে সাদা দুল জোড়া। রিয়ান থেকে অনেক বলে উদ্ধার করেছে। দিতেই চাইছিল না। পরে আবার ওকে দুলটা ফেরত দিতে হবে এই শর্তে দিয়েছে। কি যে পেয়েছে দুলটাতে! কোমর পর্যন্ত চুল খোলা রেখেছে। ওকে দেখে অনেকে তাকিয়ে ছিল। মম তৌসিফাকে দেখে ওর কাছে গিয়ে বসল। তৌসিফা ওকে বলল, তোকেই মানিয়েছে এই সাগরপাড়ে। আমরা সবাই বেমানান।

– ধুর।

– সত্যি। সুন্দর লাগছে। সাগরের সাথে মিলে গেছে। আচ্ছা ভালো কথা। তোকে দেখলাম না যে। আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। তারপর বেরিয়ে সবাইকে জিজ্ঞেস করলাম তোর কথা। কেউ বলতে পারল না। উঠেছিস কোথায়?

– অন্য রুমে।

– ও আচ্ছা। আমি ভাবলাম রুম পেলি কি না। বাস আর লঞ্চে যা করল! তা স্যারের সাথে যে এলি কেমন লাগল?

– কেমন আর লাগবে? সে ড্রাইভার আর আমি প্যাসেঞ্জার।

মম আর তৌসিফা হাসতে লাগল। ওদের কথার মাঝে রাসেল মমর পাশে এসে বসল। খেয়াল করেনি ওরা৷ কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে মম তাকিয়ে দেখল রাসেল ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। হাতটা কাঁধেই রয়েছে ও তাকানোর পরও৷ মম কাঁধ সরিয়ে বলল, কিছু বলবেন ভাইয়া?

– সমুদ্র পাড়ে এভাবে চুল খোলা রেখো না। বেঁধে ফেলো।

বলে উঠে গেল। মম খোঁপা করে নিল। লোকটাকে মোটেই ভালো লাগে না। কিন্তু সিনিয়র তাই কিছু বলতেও পারে না। কিছুক্ষণ পর রিয়ান এসে উপস্থিত হলো। গায়ে আকাশি রঙের শার্ট আর নীল জিন্স। শার্টের বোতাম খোলা। ভেতরের সাদা টি শার্ট দেখা যাচ্ছে। ওর নায়কের মতো হেঁটে আসা দেখে মমর হাসি পেল। রিয়ান মিনহাজের কাছে এসে দেখতে লাগল কি কি কাজ হয়েছে। এখানে অন্যান্য গাছ থেকে নারিকেল গাছ বেশি। তাই আগুন জ্বালানোর কাঠ পেতে বেগ পেতে হয়েছে। খাবার দাবারের ব্যাপারটাও হ্যান্ডেল হয়ে গেছে। কাছের একটা হোটেল থেকে খাবার আনা হবে। নিজেরা রান্না করবে ভেবেছিল। পরে ব্যাপারটা বাদ দিয়ে দিল।

সন্ধ্যা নামতে সবাই কাঠ জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে গোল হয়ে বসল। রিয়ান আগেভাগে মমর পাশে এসে বসে পড়ল। ফারিজা গিয়ে বসল ওর পাশে। তৌসিফা মমর অপর পাশে বসল। রাসেল কয়েকবার ঘুর ঘুর করেও যখন মমর পাশে জায়গা পেল না তখন তৌসিফার পাশে বাধ্য হয়ে বসে বার বার মমর দিকে তাকাতে লাগল। মিনহাজ একটা গোল বোতলে অনেকগুলো কাগজের টুকরো নিয়ে হাজির হলো। বলল, খেলা প্রথমে কাকে দিয়ে শুরু করব বলো তো? সবাই রিয়ানের নাম বলল। মিনহাজ রিয়ানের কাছে গিয়ে বলল, ওকে ব্রো, নাও, সবার সম্মতি নিয়ে তোমার থেকেই শুরু করি। রিয়ান একটা কাগজ তুলে ওকে দিল। মিনহাজ কাগজটা খুলে বলল, কবিতা।

চলবে…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here