প্রণয়প্রেমিকের নেশাক্ত প্রণয়োণী পর্ব -১০ ও শেষ

#প্রণয়প্রেমিকের_নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#অন্তিম_পর্ব

‘শোন এই মেয়েকে তুই নিবি ভালো কথা। আমার রাস্তা অর্ধ পরিষ্কার। তবে মেয়েকে তো আর এমনি নেওয়া যাবে না। মেয়ে বিক্রি মানে বুঝিস। এর উপর রেট প্রায় ত্রিশলাখ। বল রাজি দিতে!’

মোকলেস ট্রি টেবিলের উপর নিজের জন্য পান বানাতে থেকে কথাগুলো খায়েরকে বলে উঠে। খায়ের শয়তানি বুদ্ধি কাজে না লাগাতে পারলেও আহিফাকে সে একরাত্রির জন্য হলেও নিজের সঙ্গে নিতে ইচ্ছুক। ফলস্বরুপ পূর্ব পরিকল্পনা করে সে ও সামনে বসারত ব্যক্তি মোকলেস সাহেব মিলে আশফির হবু বউকে অপহরণ করার ন্যায্য কল্পনা সাজায়। তারা ভাবছে তারা পরিণয়ে জয়ী হয়েছে। তবুও এদের থেকে সাতগুণ সামনে গমন করে আশফি। খায়ের মোকলেসের পাল্টা প্রশ্নের উপর যুক্তিস্বরুপ বলে,

‘শোন ডিলের প্রথমদিকে শুধু অপহরণের কথা ছিল। তুই বলে ছিলি হরণ হতেই হাতে তুলে দিবি। কিন্তু সেটা তুই করলি না। বরং মেয়েটারে তুই নিজের কাছে রেখে এখন পল্টি খেলি।’

মোকলেস শুনে হেসে দেয়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)পান মুখে পুরে চিবুতে থেকে বলে,

‘কাঁচা কথা বলব না। মেয়েটা কিন্তু আশফি ফাওয়াজের হবু বউ! রেট কম না বরং তোর সাধ্যের বাহিরে। নখের যোগ্যও নস তবু রেট কমে রেখেছি। ত্রিশলাখ তোর কাছে কোনো ব্যাপার নাকি!’

অনায়েসে খায়ের তার বুকপকেট থেকে চেক বই বের করে ত্রিশলাখের এমাউন্ট হাতে ধরিয়ে দিল মোকলেসের। পেয়ে যেন চোখজোড়া চকচক করে উঠে তার। একহাতে মেয়েকে হরণ করতে গিয়ে টাকা কয়েছে। উল্টো পিঠে পুনরায় টাকা পেল আহা! খায়ের মাথা নিবিড় রেখে বলে,

‘মেয়েকে তৈরি কর। প্রথম রাত্রিকে চাঁদের রাত্রি বলে নিশ্চয় জানিস! ওরে রেডি কর আমি কাজ শেষে আসছি।’

মোকলেস খায়েরকে বিদেয় দিতে বাহিরে গেল। তাদের অগোচরে আহিফার নেত্রপল্লব দিয়ে অশ্রুসিক্ত হলো। সে পুনরায় ভুল করেছে! আশফি বলেছিল, ‘সে বিহীন অন্য কোনো ছেলের দিকে আকৃষ্ট বা তাদের কথা গ্রাহ্য না করতে, সে হিনা সকলের নজর খারাপের দিকে যেতে বিন্দুমাত্র সময় নেবে না।’ ভুল মানুষকে বিশ্বাস করে সে রেস্টুরেন্টে গিয়ে ছিল। আশফি যেতে চাইলে সে অহেতুক ক্রোধ দেখিয়ে বেরিয়ে গেল। অথচ ভাবল না আশফির অসহায়ত্বের কষ্টটা! ঢোকরে কেঁদে ফেলল হাটুমোড়ে বসে। বিড়বিড়ে বলে,

‘তবুও সে আমায় বাঁচাতে আসবে। পূর্বে যেমন বাঁচিয়ে ছিল তেমনি আজও সে আমার সঙ্গে নিজেকে নিয়ে যাবে।’

ক্ষীণ আশা রাখলেও তা নিমিশেষে মিটে যায় এক দুঃসাধ্য খবর শুনে। খায়ের নাকি বিয়ের আমেজ গড়তে বলেছে। তাকে বিয়ের শাড়িতে বধূবেশে তৈরি করতে বলার আদেশ দিয়েছে বলে উঠল মোকলেস সাহেবের কাজের মহিলা। শুনে যেন আহিফার পায়ের নিচ থেকে জমিন সরে গেল! সে ‘না’ করে চিৎকার করে পালিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু মোকলেস এসে চড়ে লাল করে দেয় তার গাল! তীব্রভাবে থুতনী চেপে কাঠিন্য গলায় বলে,

‘তুই রেডি হবি তোর ঘাড় শুধু হবে। ঐ মাইয়ারা আয় রেডি কর এরে।’

ছুঁড়ে দেয় মেঝেতে। আহিফা কেঁদেকেটে প্রায় নাজেহাল দশা। সে গিয়ে তার ব্যাগ হাতড়ে দেখে কোনোভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে কিনা! ফোন পেয়ে যেন তৎক্ষণাৎ কল দেয় আশফিকে। আশফি বাইকের পর হেলান দিয়ে অপেক্ষা করছিল ফোনের। ফোন ধরে হামি দিতে থেকে বলে,

‘হ্যালো কে!’
‘আশফি প্লিজ বাঁচান। ঐ খায়ের আমাকে বিয়ে করে ফেলবে। আমি শুধু আপনাকে ভালোবাসি।’

বলে হুহু করে কেঁদে দেয়। আশফি শুনে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

‘যখন খায়েরের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে হেসেমেতে কথা বলছিলে তখন এ কথা মনে ছিল না!’

শুনে যেন থমকে যায় আহিফা। কাঁপান্বিত গলায় জিজ্ঞেস করে।

‘মা মানে!’
‘মানে তুমি যা বুঝছো তাই। এবার কি আর করবে নিজের প্রেমকে বিসর্জন দিলাম। যাও খায়ের কে বিয়ে করে সুখের সংসার করো। আমি তো তোমার প্রেমে অন্ধ হয়ে হাবুডুবু খেয়ে ছিলাম। এখন চোখ খুলে গেছে। এক হটিনটি টাইপ মেয়েকে পটিয়ে তাকেই সংসারের রাণী করব।’

আহিফা বাকরুদ্ধ। সে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগটাই কি তবে হারিয়ে ফেলল! ক্রন্দনরত আকুতিভরা গলায় বলে,

‘জানো আজ আমার সেদিনের কথা মনে পড়ছে যেদিন পাপ্পা ইংল্যাণ্ডে নিয়ে যেতে চেয়ে ছিলেন। অথচ আমি যেতে রাজি নয়। আপনার কাছ থেকে উৎসাহ ও উদ্দিন অনুভূতি পেয়ে ছিলাম বলে সেদিন সহজে গেলাম ইংল্যাণ্ডে। তবে মন পুড়েছে বহুবার। তার উপর আপনার বলা এককথায় যেন আমার পৃথিবী উজার হয়ে গিয়ে ছিল। কখনো ভেবেছেন আমার অহং,রুক্ষ ব্যবহারের কারণ কি! কারণ একটাই ভালোবাসি বলে দূরে ছিলাম। ভাবতাম কপালে আপনি থাকলে আপনি আসবেন স্বেচ্ছায়। কিন্তু মনের ভুল ছিল! যা আজ আপনি প্রমাণ করে দিলেন।’

কট করে ফোনটা কেটে মেঝেতে ছুঁড়ে দেয় আহিফা। আশফি ‘ইয়েস’ বলে বাইকের উপর বসে পড়ে। গন্তব্য এখন সুনির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছা। আহিফা নিঃশব্দে বিয়ের শাড়ি ও গহনাগাটিঁ নিয়ে বিছানায় সাজায়। সে বধূ সাজবে তাও আবার মনপুরুষের নয়। যে শুধু একরাত্রির অপেক্ষায় এটুকুর রঙতামাশা রচানোর আক্ষেপ করেছে। তাচ্ছিল্যের হেসে দুফোটা অশ্র গড়ায় তার গাল বেয়ে। শাড়ি পরে সিম্পল সেজে নেয়। ইশ! এমনি এক স্বপ্ন আশফির বউসেজে বিয়ের পীরিতে বসে দুজনার চোখে গভীর চাহনী নিক্ষেপ করবে, একে অপরের চাওয়ায় ‘কবুল’ শব্দটি আওড়াবে। অথচ ভিন্ন সব!
মোকলেস খায়েরের ফোনে অপেক্ষায় ছিল। তার কথামতে বধূকে সাজানো শেষ, কাজিও এসে হাজির! শুধু বরবেশে খায়েরকে লাগবে। তার ফোন আসায় তড়িঘড়ি কল ধরে অকথ্য ভাষায় গা’লি দিয়ে বলে,

‘ভা’তার কবে আসবি! মেয়েকে বসিয়ে কাজি এনে রাখছি।’

অপরপাশ্ব থেকে ভাবলেশহীন শব্দ আসায় চমকে যায় সে। তবুও দৃঢ় গলায় আওড়ায়।

‘খায়ের আছস তুই!’
‘হুম ঝিমুচ্ছিলাম গাড়িতে আসি। আসছি কয়েক মিনিটে।’

শুনে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল মোকলেস। নেহাৎ খায়েরের সুপারি খেয়েছে ! নাহলে কথামত কাজ করার মত ব্যক্তি সে নন।
আহিফার চোখ-মুখ ফুলে ফেপে গেছে। নিশ্চুপ,গলা কাঁপছে তার,মুখশ্রীতে লাবণ্য হারিয়ে গেছে কিঞ্চিৎ পূর্বেই। কিছুক্ষণ পর শুনা গেল কাজের মহিলারা হৈচৈ করে বলছে, ‘বর এসেছে, বর এসেছে’! শান্তি উবে গেল আহিফার। চোখ বুজে ঢোক গিলল শুকনো একখান। বরের সাজে খায়েরকে কেমন লাগছে দেখার বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই আহিফার। খায়ের এসে বসার পর সে আহিফার ডানহাত খুব শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। ব্যাপারটায় আহিফার কষ্ট লাগে সে হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করল! অপরপাশ্বের ব্যক্তি নাছোড়বান্দার ন্যায় আঁকড়েই রাখল। কাজি সাহেব বরের নাম ‘আশফি ফাওয়াজ’ বললে থমকে যায় আহিফা। বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তার পাশে বসা ব্যক্তির দিকে তাকায়। বর পাগড়ি পড়ে রেখেছে। ফুলের কারণে তার চেহারা পরোখ করা মুশকিল। কিন্তু আহিফা অতি নিকটস্থ হওয়ায় বরের চোখজোড়া দেখতে পেয়ে তার চোখ বেয়ে শীতল অশ্রু গড়ায়। বর নামক আশফি কে দেখে কি প্রতিক্রিয়া করবে যেন সে ভুলে গেল। আশফি বাঁকা হেসে চোখ টিপ দেয়। মুখ ফিরিয়ে নেয় আহিফা। আশফি বুঝেছে তার প্রণয়োণীর বড্ড অভিমান হয়েছে। সে অবশ্য ভাঙ্গাবে এই মান! মোকলেসের বাসায় গান বাজনা হওয়ার কারণে কাজির মুখে বরের নাম শুনতে পেল না মোকলেস। শুধু কনের নাম শুনেই তুষ্ট হয়ে যায়। বিয়ে হওয়ায় কাজি সন্তপর্ণে বিদেয় হলো। অপরপক্ষ হিসেবে পুলিশ ফোর্স ভেতরে এলো। মোকলেস যেন সাত আসমান থেকে টুপ করে পড়েছে। আহিফাকে তার বাবা-মা দেখে নিকটস্থ হয়ে আগলে নেয়। মোকলেস বরকে খায়ের ভেবে বলে,

‘ঐ আহিফাকে ধর এখনি পালাতে হবে। নাহলে জ্যান্ত বাঁচমু না।’
‘সিংহের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে বুক কাঁপছে না তোর।’

গম্ভীর,হিংস্র কণ্ঠ শুনে মোকলেসের শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল। সে ঢোক গিলে ঘাড় ঘুরিয়ে বরের ছন্দবেশের দিকে তাকায়। আশফি পাগড়ি খুলে মুচকি হেসে বলে,

‘শ্বশুরমশাই হা করে আছেন কেন! বিয়েটার জলদি ছিল আমার। তাই আপনি করে দিলেন এর শোকরিয়া নিশ্চয় আমি না করে ছাড়ব না। ওহ আপনার সাথী পূর্বেই জেলবন্দি হয়ে আছে। তারে আচ্ছামত ধোলাই দিয়ে বিয়ে করতে এলাম। তোকে বিয়ের ব্যবস্থা একারণেই করতে বলা হাহা।’

কথাটুকু বলে মোকলেসের মুখের উপর ঝুঁকে তাদের পরিকল্পনার কথা জানায়। শুনে স্তদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার যাওয়ার ও বাঁচার কোনো চান্স নেই। এমনকি তাকে সভাপতি হতেও বহিষ্কার করা হয়েছে তার কর্মফলের লাইভ টেলিকাস্টের জন্য। ধপ করে পড়ে যায় সে। আশফি অদেখা করে বউয়ের কাছে যায়। পুলিশ কনস্টেবল মোকলেসকে ধরে উঠায়। যেই না হ্যান্ডকাফ পরাবে ক্ষণিকে সে ভয়াবহ এক কান্ড করে বসে। কনস্টেবলের পকেটে থাকা পি’স্তল নিয়ে আশফির মাথা বরাবর বুলেট চালায়।

ঠাসসস….
বুলেটের শব্দে আহিফা চিৎকার করে ‘আশফিই’ ডেকে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরিবেশ নিস্তদ্ধ হয়ে গেল। আরভীকরা এসেছিল তারাও নিবিড়ে কেঁদে ফেলল। মিসেস নাইফা মেয়েকে ধরে আদাফাতের সঙ্গে গাড়িতে বসল।

______

পাঁচঘণ্টা পর হুঁশ আছে আহিফার। এসেই পাগলামী শুরু করে ‘আশফিকে এনে দাও’ বলে চিৎকার চেঁচামেচি করতে আরম্ভ করে। হঠাৎ কোথার থেকে এক পুরুষেলী হাত এসে তার কোমর জড়িয়ে ধরে বিছানায় শায়িত করে। আহিফা চমকে তাকায়। আশফিকে সহিসালামতে দেখে সে গলা ফাটিয়ে কেঁদে উঠল। তার বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে জম্মের কান্না ত্যাগ করায় ব্যস্ত হয়। আশফিও থামায়নি নিশ্চুপে তার প্রণয়োণীর ক্রন্দন ও হার্টবিট গুণতে লাগে। আহিফা কি মনে যেন ধাক্কা দিয়ে সরে দেয় আশফিকে। কিন্তু চুল পরিমাণ দূরে সরল না সে। তার মত বডির সঙ্গে ইঁদুরের মত আহিফার শরীর লড়ে যাওয়ার কোনো পথ নেই। আহিফা কান্নারত গলায় বকে গেল। ডিটারজেন্ট ছাড়াই আচ্ছামত ধুয়ে দেয়। আশফি শুনে বলে,

‘বউ বকা হলে আসো বাসর করি।’

লাজুক হেসে তাকায় সে। আহিফা অগ্নিশর্মার দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। পাত্তাহীন আশফি জাপ্টে ধরে ওষ্ঠের মিলনে নিজের ভর ছেড়ে দেয় আহিফার উপরে। সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না আশফির কর্মে। কিন্তু দুজনার নেশা ও ঘোর লেগে গেল। কতবছরের সাধনা আজ পূরণ হবে আশফির। ফলে সে সুযোগ হাতছাড়া করল না। রুম অনুজ্জ্বলতার মাঝেও চাঁদের রশ্নিতে ভরে গেল,চার দেওয়ালের মাঝে শুধু ঘন নিঃশ্বাসের মাত্রা ভারি হলো।

পরের দিন সকালে নাস্তার টেবিলে আজীব অশান্ত কণ্ঠে তার বাবাকে বলে,

‘আব্বু আমি ফারিনকে ভালোবাসি তাকে বিয়ে করতে চাই।’

সকাল থেকে বাসায় মেহমানের আনাগোনা চলছে। নাস্তার টেবিলে আহিফার পরিবারের সঙ্গে ফারিন ও তার দাদিও ছিল। ফারিনের তো লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে পড়তে মন চাইছে। আজীবের কথা শুনে সকলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে উঠল। থতমত খেল আজীব। নির্বোধ,গর্দভের মত চেয়ে বলে,

‘কি হলো আমার কথা কি বুঝেননি আপনারা!’
‘আরে গাধা তোর বিয়ে অলরেডি ফিক্সড ফারিনের সঙ্গে। এতদিন খালি অভিনয় হচ্ছিল তোকে ভালোবাসাটা কি বোঝানোর জন্য। আর এই সৎ বুদ্ধি একমাত্র তোর দাদি শ্বাশুড়ির।’

আজীব শুনে ফাটাফাটা দৃষ্টিতে ফারিনের দাদির দিকে তাকায়। তিনি আজীবকে তাকাতে দেখে অগোচরে চোখ টিপুনি দেয়। ভেবাচ্যাকা খেয়ে চোখ পিটপিটাল আজীব। তবে তার বিয়ে ফারিনের সঙ্গে বুঝা হলে শয়তানি হাসি দিয়ে সে তার দিকে তাকায়। ইশারায় বলে,
‘বাসরে বুঝাব তোকে কত অভিনয়ে কত ভালোবাসা!’

ফারিন ঢোক গিলে আনমনে বলে,’কপালে মনে হয় কঠিন শনি আছে বাসর রাত্রে। জনাবের মুখশ্রী দেখে এখনি গা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে যেন।’
আশফি এসে ‘হাই গাইস গুডমনিং’ বলে নাস্তার টেবিলে তার আরভীক বাবাইয়ির পাশে বসে পড়ে। আহিফাকে না দেখে তিনি জিজ্ঞেস করার পূর্বেই আহিফাকে আসতে দেখে মিসেস আনজুমা তৃপ্তির হেসে বলে,
‘বউমা এসো বসো।’

বড় আম্মুর কণ্ঠে সে তৎক্ষণাৎ শাড়ি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয়। মিসেস আনজুমা আহিফার গলায় আঁচড় দেখে কেশে উঠল। আরভীক পানি এগিয়ে দিলে তিনি চোখ গরম করে তাকায়। এতে আরভীক চোখ পিটপিটিয়ে বলে,

‘ওমন বাঘিনীর মত তাকাও কেন বউ! বুকটা ছেৎ করে উঠে তো নাকি।’
‘তোমার ফাজিল ছেলেকে বলো শোধরে যেতে। নাহলে বিয়াত্তা হয়েও বউছাড়া জীবন কাটানোর শাস্তি দেব।’

শুনে যেন আশফির পরোটা গলায় আঁটকে যায়। আহিফা চমকে লজ্জায় নতজানু হলো। সে বুঝেছে তার বড় আম্মু কিছু না কিছু দেখে ফেলেছে। তার এমুর্হুতে আশফির মাথা ফাটাতে মন চাচ্ছে। ইশ! রাত্রে কত না প্রণয়ঘটিত হত্যাচার করেছে যার ফলস্বরুপ গোসলের পরপর দৃষ্টিগোচর হয় শরীরের প্রতিটা অঙ্গকোণে নখ ও কামড়ের আচড়। আশফি পানি খেয়ে তার মাম্মাকে জিজ্ঞেস করে।

‘বুঝলাম না আমাকে বলছো না আজীবকে বলছো মাম্মা।’
‘কেন তুই কি অবুঝ দেখাস। এই যে আপনি ছেলেকে সৎ বুদ্ধি দেন। না হলে কোনদিন তিন বাপ-বেটার মাথায় ফ্রাইপেনের বা’রি দেয় অজানা আমার।’
‘বউ ছেলেমেয়ে আমার। তো বাবার দুষ্টুমি পাবেই স্বাভাবিক। তোমার কাছ থেকে পেয়েছে না আজীব। পুরুটাই বেরসিক,নিরামিষ। বউকে একা পেলেই টাইড দেবে। সকলের সামনে ভেজা বিড়াল। জাস্ট লাইক মি ইন প্রেজেন্ট। অথচ আশফিকে দেখে সে রুমেও এক বাহিরেও এক। জাস্ট লাইক মাই পাস্ট টাইম স্পেন্ডিং উইড ইউ।’

আনজুমা পড়ল ভীষণ লজ্জার কাতারে। বেটা খবিশ! বাচ্চাগণের সামনে ইজ্জত ধুয়ে দিল। আদাফাত হেসে বলে,

‘যাক পরিশেষে সব শান্ত এখন খালি বিয়ের আসর বসবে।’

আহিফা ইতস্ততঃ গলায় জিজ্ঞেস করে।
‘বাবাইয়ি গতরাতে গু’লি কার লেগেছিল।’

আশফি ও তার বাবা আরভীক একে অপরের দিকে তাকায়। আরভীক আহিফাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘কর্ম যার ফল তার। বু’লেট মোকলেস চালালেও লাগেনি আশফির শরীরে। তার নিশানা ভুল ছিল। কিন্তু আমার নিশানা বেকার যায়নি।’

আহিফা চোখ বড় করে বলে,

‘আপনি শু’ট করতে জানেন বড় আব্বু।’

শুনে আশফি, আজীব ও আরভীক সাহেব, তার স্ত্রী আনজুমা হেসে দেয়। সেই সঙ্গে মিটমিটিয়ে হাসে আদাফাত সাহেব ও তার স্ত্রী নাইফা। শুধু নাঈম,আহিফা,ফারিন ও তার দাদি বেক্কলের মত চেয়ে ছিল।

সাতমাস পর…..

টেবিলে হরেক রকমের আয়োজন করেছে বাসার দু’বউ। আহিফা ও ফারিন একে অপরের হেল্পহ্যান্ড! আহিফাকে ছোট বোনের ন্যায় ভালোবাসে ফারিন। মিসেস আনজুমা ছোট-বড় বলে পরখ করেনা। তার দু’বউমাই যথেষ্ঠ ভালোগুণে চরিত্রবতী। আজ আয়েশার এনগেঞ্জমেন্টের কথা পাকাপাকি হবে। আয়েশার সবকিছু স্বপ্ন লাগছে। এতটা মাস সে দূরে ছিল পরিবার থেকে। তার পড়াশুনার জন্য হোস্টেলে চলে যেতে হয়ে ছিল। একদম এইচএসসি শেষ করে এসেছে। দুইভাইয়ের বিয়েতে সে অনুপস্থিত ছিল বলে তার বেশ মন খারাপ হয়। তবুও সে তার বিয়েটা তৎক্ষণাৎ সম্পূর্ণ করতে চায় না। ভালোবাসার মানুষটার সঙ্গে এনগেঞ্জমেন্ট করে রাখবে। বিয়েটা না হয় তার অনার্স পাশের পর হবে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখে বাপ ও ছেলেরা। কবিরের পরিবার এসে হাজির। কবির অতীব আগ্রহে আয়েশাকে নজরে হারাচ্ছে। আহিফাকে দেখে আশফি সকলের অগোচরে চোখ টিপ দেয়। দেখেও অদেখার ভান করে আহিফা। আশফি ঠোঁট আক্রোশের ন্যায় করে দৃষ্টিতে চাই।
আজীবও বারংবার ফারিনের দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু রমণী বিশেষ পাত্তা দিচ্ছে না দেখে তার মেজাজ রাগে ফেটে যাচ্ছে। ঠোঁট ফুলিয়ে তিক্ষ্ণ গলায় আওড়ায়। কিন্তু তার আওড়ানোর সঙ্গে আশফিও একই কথা বলায় দুজন চমকে একে অপরের দিকে। কেননা তারা একই বাক্য একসঙ্গে বলেছে।

‘খালি একবার রুমে পায় বুঝাব মজা।’

আশফি ও আজীব একে অপরের দিকে বেকুবের মত চেয়ে অট্টহাসি দিয়ে উঠে। সকলের দৃষ্টি দুজনের উপর পড়লে তারা দুজনে হাসি থামিয়ে থতমত খায়। আশফি হাসি নিয়ন্ত্রণ করে আমতা আমতা করে বলে,

‘আরে মিষ্টিমুখ করুন বিয়ে পাকা।’

আরভীক ছেলেদের আচরণে নিজেকে খুঁজে পায়। ভীড়ের মাঝ থেকে উঠে নিজ রুমে চলে এলো সে। ওযু করে এসে এশারের নামাজের জন্য দাঁড়ায়। আনজুমাকে কাছে পেয়ে অবাক হলো। সেও যে তার স্বামীকে অনুসরণ করে এসেছে বুঝতে পারেনি। আনজুমা বলে,

‘চলেন একসঙ্গে আবারো আল্লাহকে ডাকি।’
আরভীকের চোখজোড়া হতে অশ্রু ঝরল। যা শীতল হাত দিয়ে মুছে দেয় আনজুমা। স্বামীর ললাটে চুমু খায় সে। আরভীকের হাত ধরে নামাজে দাঁড়ায়।

অন্যদিকে,
আজীব রুমে এসে ফারিনের কোলে শুয়ে পড়ে। ফারিন রুমে বিছানায় বসে কাপড় গুছিয়ে রাখছিল। হঠাৎ আজীবের আগমনে ব্যতিব্যস্ত হলো তাকে নিয়ে।

‘কি হয়েছে শরীর খারাপ নাকি!’
‘বউ আদর দেয়!’

লজ্জায় নেতিয়ে উঠে ফারিন। আজীব নেশাবুদ দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,

‘সাতমাস হয়ে গেল বিয়ের। বাসরে তোমার প্রমিজ মোতাবেক গল্পগুজবে কাটিয়ে ছিলাম। এবার তুমি চাইলে এগোবো।’

ফারিন আজীবের বুকে মুখ লুকায়। মৌনতা সম্মতির লক্ষণ ধরে আজীব দরজা লাগিয়ে ব্যস্ত হলো তার প্রণয়োণীর সঙ্গে। আয়েশা ব্যস্ত তার কবিরের আখিঁজোড়ায় তাকিয়ে দিনবিলাস করতে।
নাঈম সকলের সঙ্গে হেসে মেতে চলছে। তার বন্ধু তাকে পিঠ চাপড়ে বলে,

‘তোর পরিবারের সবাই বিয়েশাদি করে স্যাটেলেড তুই প্রেম করবি না।’

নাঈম তার বন্ধুকে ধরে বলে,

‘সবাই বিয়েশাদি করছে বলে আমিও কেন সেখানে ঝাপ দেব হুম! আমি তো আমিই বিন্দাস। আজীব ভাইকে প্রেমের স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য যে খাটুনি গেল অভিনয়ে। হুদাই অভিনয়ে বিএফের ক্যারেক্টার আমাকে শিক্ষা দিছে। জীবনেও প্রেমপিরিত করতে নেই। করলেই জিএফের ঠ্যালায় জীবন তেনা তেনা হবে। আমি সিঙ্গেল বেশ আছি।’

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে আহিফা। কাজের শেষে সুযোগ পেয়ে ক্লান্তি দূরীকরণে রুমে এসেছে। আকস্মিক কোমড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে। হাতজোড়া যে তার স্বামীর বুঝতে বেগ পেতে হয়নি আহিফার। নিবিঘ্নে মিশে রইল আশফির বুকে। আশফি স্ত্রীর ললাটে চুম্বন দিয়ে বলতে আরম্ভ করে।

‘নীলঅভ্রে যখন দেখেছিলাম তোমায়,
তুমি ছিলে সদ্য এক পুষ্পকন্যা।
জানো হে,রমণী তোমার হৃদয়ের মাঝে
জন্য হয়ে ছিলাম পাগল।
তোমার গাওয়া সুরে নিজেকে হারিয়ে ছিলাম।
তোমার চেনা শহরে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার আসক্তি জম্মায়।
তুমি আমার এককালীন নয়, পরকালের একান্ত সঙ্গীনি তোমার প্রণয়প্রেমিকের এক নেশাক্ত প্রণয়োণী।’

আহিফা শুনে তার বুক বরাবর হয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,

‘ক্ষমা করেছেন আপনার এই অবুঝ প্রণয়োণীকে!’
‘হুস ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই। পূর্বে যা কথা হয়ে ছিল ভুলে যাও। তা একসময়ের ঝড় ছিল বলে ভবিষ্যৎ ভাবো। তবে এমুর্হুতে তোমার জামাইয়ের প্রেম পাইছে। তাই চট করে আসো একটু প্রেমখেলা খেলি।’

আহিফা চট করে ধাক্কা দিয়ে দেয় আশফিকে। সে ধাক্কায় সরলেও আহিফা দরজা খুলে পালায়। আরভীক সাহেব ও তার স্ত্রী আনজুমা রুমের দরজা খুলে সিড়ির কাছে এসে রেলিং ধরে দেখতে লাগল তাদের বাচ্চাদের ছুটাছুটি। আশফি সকলের মাঝে হেসে খেলে আহিফার পেছনে ছুটছে। আরভীক আনজুমার হাত ও আনজুমা স্বামীর হাত ধরে ওষ্ঠের ছোঁয়া দুজনার হাতের উল্টো পিঠে দেয়। আরভীক ওষ্ঠের ছোঁয়া দিতে থেকে বলে ,

‘আমার নেশাক্ত_প্রণয়োণীর সংসার সফল গো প্রণয়োণী। এই তো তৃপ্তি পাচ্ছি প্রণয়োণী। আমাদের ছেলেমেয়ে হাসছে খেলছে যেন প্রারম্ভিক সময়ে চলে এসেছে তারা।’

আনজুমা নিশ্চুপে আরভীকের মত একে অপরের দিকে হাতের উল্টোপিঠে ওষ্ঠ চেপে দাঁড়িয়ে রইল। এই সংসারে কারো নজর যেন আর না পড়ুক এই প্রত্যাশা মহান আল্লাহর কাছে। দুঃখের পর পেয়েছে সুখ তাই তো বড় কিছু। দুঃখ আসবে যাবে শুধু প্রণয়পুরুষের হাত শক্ত করে ধরতে পারলে এমন শত দুঃখ পেতেও রাজি।

সমাপ্ত……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here