#বৃষ্টির_পড়ে
#নুসাইবা_ইসলাম_লেখিকা
#পর্ব_১০_অন্তিম
সকাল হতেই বিয়ের তোরজোর খুব সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয়েছে অনিচ্ছাকৃতভাবে মেহুলের বাবাও বিয়ের সব কজে যোগ দিচ্ছে। মেহুলের মাকে খুব খুশি দেখা যাচ্ছে শুধু হাসি নেই ফুপির মুখে।
মেহুলকে আর মিরা কে সাজানো হচ্ছে মেহুল মিরাকে জোর করে তার মতো সাজাচ্ছে কারণ এটা মেহুলের স্বপ্ন। মেয়েরা মিরাকে সাজাচ্ছে আর ও কান্না করে নষ্ট করে দিচ্ছে। সব ঠিকঠাক মেহুলদের নিচে নামানো হলো তখন আয়াত গিয়ে মেহুলকে নিয়ে সোফায় বসালো। সবাই আইজান কে তার বউ আনতে বলছে আইজান মুচকি হেসে মিরাকে টেনে এনে সোফায় বসালো। সবাই অবাক হয়ে দেখছে শুধু মিরা তো আরো বেশি অবাক।
আমি মিরাকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসি এর মাঝে আমাদের একটু ঝগড়া হয় তাই আমি অকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এতো নাটক করি। কিন্তু বিয়েটা আমার মিরার সাথেই হচ্ছে। (আইজান)
মিরার বাবা অবাক এর থেকে আরো বেশি খুশি হলো আয়াত না হোক আইজান ই শই দুইটাই ঘোরার ডিম পারা হাস। যাইহোক ব্যাপারটা মন্দ হয় না কিন্তু এবার কি হবে দুলাভাই এসে যদি সব শেষ করে দেয় না তাকে থামাতে হবে।
আইজান বাবা আমাকে বলতে আমি আরো ধুমধাম করে বিয়ের ব্যাবস্থা করতাম একটা মাত্র মেয়ে আমার। (বাবা)
বাবার মুখ ফসকে বলা কথায় আমি কষ্ট পেলাম একটা মাত্র মেয়ে মানে আমিও তো ওনার মেয়ে উনি আমাকে অশ্বিকার করলো। আয়াত আমার বাম হাতের উপর তার হাত রেখে ভরসা দিলেন।
একমাত্র মেয়ে মানে আংকেল মেহুল কি আপনার সন্তান নয়? (আইজান)
আরেদূর বাবা মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে যাইহোক চলো বিয়ের কাজ শুরু করি। (বাবা)
তখন পিছ থেকে কারো আওয়াজ ভেষে আসছে,
মুখ ফসকে সত্যি কথা বের হয় আমি জানতাম তাহলে কি এটাই সত্যি নাকি? (মিস্টাত সিকদার)
মিস্টার সিকদার কে দেখে সবাই অবাক হচ্ছে আজকে কি সবার অবাক করার দিন আজিব। ফুপি আর বাবা ফুপাকে দেখে অবাক হচ্ছে।
হায় ওয়েলকাম মিস্টার সিকদার ইউ আর মোষ্ট ওয়েলকাম। ( আয়াত)
তুমি আমাকে ওয়েলকাম না করলেও আসতাম কারণ এই সিকদার বাড়ি আমার আর আমার সন্তান দেখেই তোমরা এখানে। ( মিস্টার সিকদার)
তাই নাকি মিস্টার সিকদার আমার জানামতে এই সব সম্পত্তির একমাত্র মালিক মাহিম সিকদার আর তার মৃত্যুর পড়ে এসব এর মালিক হবে তার একমাত্র কন্যা মেহুল সিকদার। (আয়াত)
আয়াতের কথায় সবার মাথায় ব্জ্রপাত হলো বিশেষ করে মেহুলের। আয়াত কি সব বলছে ওর বাবা মাহিম সিকদার কেন হবে সেই বা কে। ছুটে আয়াতের কাছে চলে আসলো সে।
আপনার মাথা ঠিক আছে আয়াত কিসব বলছেন আপনি আমার বাবা তো উনি অন্য কেউ কিভাবে হবে। মা কিছু বলছো না কেন। ( মেহুল)
মেহুলের মা মুখে আচল দিয়ে কান্না করে যাচ্ছে।
আজ তাহলে কিছু কথা আমি ক্লিয়ার করি কি বলেন মিস্টার সিকদার?
আমার দাদির দুই ছেলে বড় ছেলে মাহিম সিকদার আর ছোট ছেলে আসিম সিকদার মানে আমার জম্মদাতা। মাহিম সিকদার ছিলেন খুব সৎ আর নিষ্ঠাবান একজন ব্যাক্তি এইজন্য দাদা আর দাদুর কাছে সব সময় বড় আম্মু প্রায়োরিটি বেশি পেতেন। মিস্টার সিকদার ছিলেন অহংকারী লোভি সে অসৎ মানুষদের সাথে বেশি চলাচল করতেন। বড় আব্বুর সাথে বড় আম্মু মানে মেহুলের মায়ের বিয়ে হয় এরপর বড় আব্বু তার বন্ধু মানে মিরার আব্বুর বোনকে আমার মা কে বিয়ে দেন মিস্টার সিকদারের কাছে। মিস্টার সিকদার বরারবর ই নারী বলতেও মায়ার ঘৃনা লাগছে যাইহোক তার চরিত্র ভালো ছিলোনা সে সব সময় আমার মা কে মারতো। আমাদের তখন যৌথ পরিবার ছিলো এভাবে অনেক বছর কেটে যায় আমাদের ব্যাবসা বড় আব্বু খুব ভালোভাবে সামলাচ্ছিলো আমার বয়স তখন ১২ বছর আর আইজান এর ১০ মেহুলের ৩ বছর। মিরার আব্বা বড় আম্মুর প্রতি নজর ছিলো প্রথম থেকেই শুধু বড় আব্বুর জন্য সুযোগ পায় নাই। একদিন মিস্টার সিকদার মেহুলকে ছাদের কিনারে একদম রেখে এসে বড় আব্বুকে মিথ্যে বলে পাঠায় যখন বড় আব্বু ছাদের কিনারে গিয়ে দাঁড়ায় পিছ থেকে মিস্টার সিকদার ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় বড় আব্বুকে আর তা দেখে ফেলে মিরার আব্বু। যখন সবাই খবর পায় তখন ছুটে চলে যায় ওখানে আর দোষ পড়ে মেহুলকে আনতে গিয়েছিলো আচমকা মেহুলে পড়ে যেতে নিলে ওকে বাচাতে গিয়ে বড় আব্বু পড়ে যায়। ৩ বছরের বাচ্চার ওপর এমন ঘৃন্য আচরন সবাই দোষ দিয়ে দেয় মেহুলকে সে অলক্ষি উপাধি পায়। বড় আব্বুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু বাচানো সম্ভব হয়নি যদিও ডাক্তার তা বলছেন। বড় আব্বুকে হারানোর পড় সবাই এই ছোট মেয়েটাকে অবহেলা করতে শুরু করে বিশেষ করে বড় আম্মু মেহুলকে দু চোখে দেখতে পারতেন না। এর কিছুদিন পর মিস্টার সিকদার আম্মুর ব্রেইন ওয়াসকরে তার ভাইর সাথে বড় আম্মুর বিয়ে দিয়ে দেন মেহুলের উছিলায় সে বাবা পাবে। অথচ মেয়েটাকে কেউ দেখতে পারতো না। দাদু আর আমি যতোটুকু পারতাম ওকে আগলে রাখতাম তার বছর খানেক পড়ে মিরা হয়। আমি কি ভুল কিছু বলছি মামা আর মিস্টার সিকদার।
(আয়াত)
আয়াত এতো কিছু কিভাবে জানলো ঘামছে বাবা আর মিস্টার সিকদার একদন স্বাভাবিক আছে। আয়াতের মুখে এসব শুনে মেহুল এক ঘোরের মধ্যে আছে যাকে বাবা জানতো সে তার বাবা না আর যে তার বাবা তাকে তার ই চাচা মেরে ফেলছে। ফ্লোরের উপর বসে পড়ে সে, ফুপু মুখে আচোল দিয়ে কান্না করছে। আর মা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তার বিশ্বাস হচ্ছে এতো কিছু।
আরো বাকি আছে মিস্টার সিকদার আপনার পাপের বোঝা তো বেরেই চলেছে দিনকে দিন তাই নয় কি? এরপর যখন জানলেন আমি মেহুলকে ভালোবাসি তখন আবার আপনার ষরযন্ত্র শুরু হলো, এক মেয়েকে দিয়ে মেহুলকে আমার নামে ভুল বুঝিয়ে আমাদের আলাদা ক রে দিলেন। আমিই রাগে দেশ ছাড়লাম আর আমার মা কে দিয়ে মেয়েটার উপর অত্যাচার শুরু করলেন। আর মা যার সম্পত্তির উপর আয়েশ করে খেলে তাকেই কাজের মেয়ে বানিয়ে কিভাবে এতো অত্যাচার করলে আমার মা-বাবা কেনো এতোটা ঘৃনিত? (আয়াত)
আয়াত এর চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে , ছেলেদের শক্ত থাকতে হয়,তাই হয়তো সে এতো শক্ত।
আমাকে কে শাস্তি দিবে তুমি আয়াত? পারবে হাহ সবাই ভিতরে আসো তো তাড়াতাড়ি। (মিস্টার সিকদার)
মিস্টার সিকদার এর এক ডাকে অনেক মানুষ চলে আসলো সবার হাতে পিস্তল আয়াত আমাকে উঠিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিচ্ছিলো। মিস্টার সিকদার কাউকে বুঝে উঠতে দেওয়ার আগে আমার দিকে গুলি ছুড়লেন৷ আম্মু আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার ফলে পরপর তিনটা গুলি আম্মুর বুকে এসে লাগলো। আম্মু ধীরে ধীরে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো৷ আইজান এসে মিস্টার সিকদার এর হাত থেকে পিস্তল কেড়ে নিলো। আর আইজান এর ইশারায় সব গার্ড মিস্টার সিকদার আর বাবার দিকে বন্দুক তাক করলো৷ এবার মিস্টার সিকদার ভয় পাচ্ছে। আয়াত নিজের পকেট থেকে পিস্তল বের করে পালটা গুলি ছুড়লো। আয়াতের গুলিতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে রইলো মিস্টার সিকদার। গুলিটা একদম মাথার মধ্যে লেগেছে। পরিবেশ থমথমে হয়ে আছে মিরা আম্মুকে চেপে ধরে কাদছে। মেহুল পাথর হয়ে বসে আছে।
আমাকে ক্ষমা করে দিস মা আমি অনেক অন্যায় করেছি তোর প্রতি আল্লাহ আমাকে মাফ করবেনা। (আম্মু)
আম্মু তোমার কিচ্ছু হবে না এসব বলেনা আয়াত গাড়ি বের করেন আম্মুকে হাসপাতালে নিতে হবে প্লিজ। (মেহুল)
আমাকে হাসপাতালে নিলে কিছু হবে না আমি জানি আমার সময় শেষ। (আম্মু)
তখন কেউ এসে পাশে বসলো তাকিয়ে দেখলাম একজন লোক আমি চিনিনা অথচ আম্মু চিনতে পেরেছে। লোকটার হাত আম্মু ধরে বললো,
মাহিম তুমি বেচে আছো? তাহলে এতোদিন কেনো আসো নাই আজ আমার শেষ সময় এলে। (আম্মু)
হ্যাঁ সেই অজ্ঞাত ব্যাক্তি আর কেউ নয় মাহিম সিকদার,হসপিটালে যাওয়ার পর যখন ডক্টর অপারেশন করবে তখন মিস্টার সিকদার ডাক্তার কে অফার করে তাকে মেরে ফেলার জন্য। ডাক্তার ছিলেন মাহিম সিকদার এর বন্ধু সব বুঝতে পেরে লন্ডন পাঠিয়ে দেয় তাকে আর তার আব চিকিৎসা করায়। মাহিম সিকদার দীর্ঘ কয়েক বছর কোমায় ছিলেন দেশে ফিরে সব জেনে সে আশ্চর্য হয়্র যায় যখন শুনে তার স্ত্রী বিয়ে করছে সেই ঘড়ে সন্তান আছে। আয়াত ওর বড় আব্বুকে দেখে চিনে এরপর শুরু হয় তাদের একসাথে চলা এর কিছু বছর পর আইজান কেও সব জানায়।
এক ঝড় দুনিয়া তছনছ করে দিলো সেই ঘটনার আজ পেরিয়ে গেলো ৫ টি বছর। সেইদিন মেহুলের মা মারা যায়। সব প্রমাব এর সাপেক্ষে মিরার বাবা এবং ফুপিকে যাবরজিবন কারাদন্ড দেয়। আয়াত আইজান মেহুল মিরা আর ওদের দাদু বাবাকে নিয়ে লন্ডবে সেটেল্ড হয়ে যায়। এখন খুব শুখে আছে মেহুল। আয়াতে মেহুলের ৩ বছরের একটা ছেলে মাইজান সিকদার। আইজান আর মিরার ৩ মাসের মেয়ে আয়েনা সিকদার এদের নিয়েই খুব শান্তিতে দিন কাটছে তাদের। দোয়া করবেন তাদের জন্য।
সমাপ্ত
(