মন যাকে চাই পর্ব ১২+১৩

#মন_যাক_চায়
#পর্ব_১২
#সুবর্ণা_আক্তার_জুথি✍️✍️

[…কাল্পনিক গল্পে বাস্তবতা খুঁজতে যাবেন না।
গল্প আর বাস্তবতা এক নয়।…]

“যে জিনিসটা কাছে থাকে না মানুষ সেটাই পেতে চাই।
আর যেটা থাকে সেটাকে অবহেলা করে।”

“এটাই বাস্তব!!”

ইশিতা কে উদ্দেশ্য করে আনোয়ারা বেগম বললেন তার পেছনে শায়লা হক আর ঈশান এসে দাড়ালো।

“আনিসুল হক এবার বেশ কড়া গলায় বলল, তুমি কি বলতে চাইছো মা?স্পষ্ট করে বলো।”

আমি কি বলছি তা সবাই খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছে। শুধু তোর ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না।

“আর তুই আমাকে একটা কথার জবাব দে,কেন ইশিতার পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছিস?”

“সন্তান ভুল করলে তাকে সঠিক টা শিক্ষা দেওয়া বাবা মায়ের দায়িত্ব।” তাই আমি ইশিতা কে……. আনিসুল হকের কথা শেষ হবার আগেই তাকে হাতের ইশারায় থামতে বলে আনোয়ারা বেগম বলা শুরু করলো,

তাহলে এই যে এবার আমি তোর পথ আটকে দাড়ালাম (ইশিতা আর আনিসুল হকের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে থেকে) কারন, “এখন তুই ভুল করছিস আর মা হিসেবে তোকে সঠিক শিক্ষা দেওয়া আমার দায়িত্ব।”

আনিসুল হক মেয়ের দিকে তাকিয়ে একবার দেখলেন ইশিতার চোখে তিনি অনুরাগের জন্য মায়া দেখতে পেলেন। “বাবা কে তাকাতে দেখে ইশিতা মাথা নিচু করে নিলো।

আনোয়ারা বেগম আনিসুল হকের হাত ধরে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে গেল আর ইশারায় ইশিতা কে অনুরাগের কাছে যেতে বললো।

“ঈশান বলল, জানো আপু আমার মনে হয় অনুরাগ ভাইয়া সত্যি তোমাকে ভালোবাসে!”নাহলে আমেরিকা থেকে আসা একটা ছেলে এরকম পাগলামি করতে পারে বলে আমার মনে হয় না।

আমি বলি কি আপু তুমি অনুরাগ ভাইয়া কে একটা সুযোগ দাও।

শায়লা হক ইশিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, তোকে আমরা কেউ জোর করবো না। “তবে একটা কথাই বলব নিজের মনের কথা শুনতে।”

তোর মন যা চাইবে সেটাই করবি। আমি সব সময় তোর পাশে আছি ইশিতা।

“আমি নিজেই জানি না আমার মন কি চাইছে তবে এটুকু বুঝতে পারছি আমি অনুরাগের এই অবস্থা দেখতে পারছি না।”বিরবির করে বললো ইশিতা।

আর দেরি না করে ইশিতা ছাতা মাথায় দিয়ে বেরিয়ে গেল।

ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে।

এক আকাশ বৃষ্টি মাথায় করে অনুরাগ হাঁটু গেড়ে বসে ছিল, “হঠাৎই কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠল ।”

___________

বৃষ্টির বেগ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।

ইশিতা অনুরাগ কে বাড়ির ভেতরে নিয়ে এসেছে। বৃষ্টিতে ভিজে বেচারার নাজেহাল অবস্থা দেখে আনিসুল হক আর বাধা দেয়নি।আনোয়ারা বেগম অনেক বুঝিয়েছেন তাতে তার মন আগের চেয়ে নরম হয়েছে।

ঈশানের দেয়া শার্ট প্যান্ট পরে ঘরে ঢুকলো অনুরাগ। শায়লা হক এক গ্লাস গরম দুধ দিয়ে গেলেন।
তাড়াতাড়ি দুধটা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়ে গেছে।

অনুরাগ বাধ্য ছেলের মতো শাশুড়ির কথা মতো কাজ করলো।

শায়লা হক চলে গেল।

“কেন করছো এইসব?”
“তোমার জন্য।”
“মানে আমি কি তোমাকে বলেছি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে?”

তা বলো নি কিন্তু……….

“আর কোন কথা নয়!”
সকাল হলেই তুমি এখান থেকে চলে যাবে আর কোন দিন আমার সামনে আসবে না।

“তুমি আমাকে ভালোবাসো না?”
ইশিতা নিশ্চুপ হয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।
“কি চুপ করে আছো কেন?”

আমি এসব বিষয়ে কথা বলতে চাই না।
“তারমানে তুমি আমাকে ভালোবাসো!”
“আমি কি সে কথা বলেছি?”

তুমি বলো নি কিন্তু আমাদের বেবি টা বলেছে।
“ইশিতা ভ্রু কুঁচকে বললো কি?”

আরে তুমি শুনতে পেলে না এইমাত্রই তো বললো, “মায়ের নাকি লজ্জা করছে তাই ওই বলে দিল মা তার বাবাকে খুব ভালোবাসে।”

অনুরাগের এমন কথা শুনে ইশিতা হাসতে শুরু করলো।

অনুরাগ দুচোখ ভরে ইশিতা কে দেখছে। কতদিন পর তার হৃদয় জুড়ে শান্তি এলো।

জানো ইশিতা তোমার হাসিটা অনেক সুন্দর। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, “তুমি হাসলে তোমার চারপাশ হাসে”

হাসি থামিয়ে ইশিতা বললো ঘুমাও আমি আসছি। মানে কোথায় যাবে তুমি?

তুমি কি ভেবেছো আমি তোমাকে মাফ করে দিয়েছি।
না অনুরাগ এতো সহজে আমি তোমাকে মাফ করতে পারবোনা।

তুমি আমার মন নিয়ে খেলেছো। আমার সাথে মিথ্যা ভালোবাসার অভিনয় করেছ।

ইশিতা আমি পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে এমন করতে বাধ্য হয়েছি।

থাক অনুরাগ আমি নতুন করে তোমার কোন কথা শুনতে চাই না।

তুমি যদি আর কোন দিন আমার বাড়িতে আসো তাহলে আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।

ইশিতা গটগট করে বেরিয়ে গেল।

আমি জানি ইশিতা তুমি আমাকে ভালোবাসো কিন্তু বলছো না।

অনেক টায়ার্ড লাগছে তাই অনুরাগ বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
মাঝরাতে খুব শীত লাগতে শুরু করলো।গা কাঁপিয়ে জ্বর আসলো।

ইশিতার মন ছটফট করছে কিছুতেই ঘুম আসছে না। তাই বিছানা ছেড়ে উঠে এলো।

দরজা খোলায় ছিল ভিতরে এসে দেখলো জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে অনুরাগ।

ইশিতা ফিরে যাবে ভাবলো তখনই কিছু অস্পষ্ট আওয়াজ ভেসে আসলো।

অনুরাগের কাছে এগিয়ে গিয়ে দেখলো থরথর করে কাঁপছে সে।
অনুরাগের এই অবস্থা দেখে ইশিতা অনেক ভয় পেয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ গায়ে হাত দিয়ে দেখলো।

তারপর দ্রুত একটা কাঁথা গায়ে জড়িয়ে দিল। থার্মোমিটারের জ্বর মেপে দেখলো।

“অনেক রাত হয়ে গেছে তাই কাউকে না ডেকে ইশিতা নিজেই অনুরাগ কে ঔষধ খাইয়ে দিল। আর পাশে বসে জলপট্টি করে দিল।”

অনুরাগের অস্পষ্ট কথা গুলো ইশিতা মন দিয়ে শুনলো,

আমি তোমাকে ঠকাই নি ইশিতা। আমি তো তোমাকে চিনতাম না। নিজের আসল পরিচয় জানার পর প্রথম আমি অনুভবের সাথে কন্টাক্ট করি।যেদিন আমি দেশে আসি সেদিন তোমার আর অনুভবের বিয়ে ছিল।

আমি আর অনুভব একসাথে আসছিলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য। কিন্তু একটা এক্সিডেন্ট আমাদের তিন জনের জীবন ওলট পালট করে দিলো।

“আমি অনুভবকে কথা দিয়েছি সারাজীবন তোমার খেয়াল রাখবো।”

আমার কোনো ইচ্ছা ছিল না তোমাকে বিয়ে করার বরং আমি তো রেগে ছিলাম তোমার ওপর।
অনুভব গাড়ি ড্রাইভ করছে আর তুমি বারবার ওকে কল করছিলে।আর এইজন্যই এক্সিডেন্ট হয়েছে।

বাবা আমাকে ইমোশোনালী ব্লাকমেইল করে। আর এটা বলে অনুভবের মৃত্যুর খবর শুনলে তুমি নাকি সুইসাইড করবে। “তখন আমি কি করতাম বলো যেখানে একটু আগে অনুভব কে কথা দিলাম তোমার খেয়াল রাখার। সেখানে কি করে তোমাকে মরতে দেবো।”

তাই বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম।
আর ধীরে ধীরে তোমার প্রেমে পড়তে শুরু করলাম। আমার কোনো দোষ নেই ইশিতা।
আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি।

প্লিজ আমাকে দুরে সরিয়ে দিও না। আমি তোমার আর আমাদের বেবির সাথে থাকতে চাই। তোমাদের দুজনকে ভালোবাসতে চাই।

ইশিতার চোখ বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। তবে যে ডায়না বলেছিল অনুরাগ ইচ্ছে করেই সবকিছু করেছে আমার ওপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। আমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য।

“আমি কি এতোদিন অনুরাগ কে ভুল বুঝেছি।”
“কে দেবে আমার সব প্রশ্নের উত্তর?”

আরো কিছুক্ষণ জলপট্টি দেয়ার পর অনুরাগের জ্বর কমে এলে ঈশিতা চলে গেল।

ইশিতার ঘুম ভাঙল সকাল ১০টাই।
ঘুম থেকে উঠেই অনুরাগের কাছে গেল। কিন্তু ঘরে গিয়ে অনুরাগ কে কোথাও খুঁজে পেলোনা। বিছানায় একটা চিরকুট পেল।

আমি আর কোনদিন তোমার সামনে আসবো না।প্লিজ তুমি বাড়ি ছেড়ে যেওনা। আমি নাহয় দুর থেকেই তোমায় দেখবো।

রাতে এতো জ্বর ছিল। অসুস্থ শরীর নিয়ে চলে যাওয়ায় অনুরাগের ওপর ইশিতার খুব রাগ হলো। চিরকুট টা ছিঁড়ে কুটি কুটি করে ফেলে দিলো।

তুই তো বলেছিস চলে যেতে তাহলে এখন আবার রাগ করছিস কেন?
আনোয়ারা বেগম বললেন।

ইশিতা কোন কথা বলছে না।
শায়লা হক এবার ইশিতার সামনে এসে দাড়িয়ে বলল ছেলেটাকে দেখে খুব অসুস্থ মনে হচ্ছিল কতো করে বললাম নাস্তা করে যাওয়ার জন্য। কিছুতেই কথা শুনলো না।

ও থাকলে নাকি তোর ভালো লাগবে না। তাই বলে চলে গেল।

নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে ইশিতার।
সে নয় বলেছে চলে যেতে তাই বলে সত্যি সত্যি চলে যাবে।

কলিং বেলের শব্দ শুনে সবার আগে ইশিতা দরজা খুলতে চলে গেল।

আর দরজা খুলে দেখলো কাঙ্ক্ষিত মানুষ টা দাঁড়িয়ে আছে তবে তাকে দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে না। আর তার পাশে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

“ইশিতার খুব ইচ্ছে করছে তাকে জড়িয়ে ধরতে আর জিজ্ঞেস করতে কেন তাকে না বলে চলে গেছে?”

“নিজেকে সংযত করে ইশিতা বলল, না বলে কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি?”

সামনে থাকা মানুষটি হেসে বললো আমি জানতাম আমার ইশু পাগলী আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

কথাটা শুনে ইশিতা দুকদম পিছিয়ে গেল।

।#মন_যাকে_চায়
#পর্ব_১৩
#সুবর্ণা_আক্তার_জুথি

“নাতজামাই কে দরজায় দাড় করিয়ে রাখবি নাকি ভেতরে আসতে বলবি?”

আনোয়ারা বেগম বললেন।

ইশিতার চোখে মুখের অবস্থা দেখে সামনে থাকা মানুষটি হেসে বললো,”আরে ইশিতা কি হয়েছে তোমার?”
“আমাকে দেখে খুশি হওনি?”

“কি বলবে বুঝতে পারছে না ইশিতা সেই চেনা হাসি, সেই কথা বলার ধরন ,সেই অঙ্গভঙ্গি কিন্তু এসব তো অনুরাগের জানার কথা নয়।”

“আর সেই ডাক যা শুধু অনুভব বলতো। তবে কি এ অনুভ…….??”

না না না এটা কি করে হতে পারে?”অনুভব তো কার এক্সিডেন্টে মারা গেছে।”

তাহলে অনুরাগ আমার রাগ ভাঙাতে অনুভব কে নকল করছে।যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আজকে অনুরাগের খবর আছে।

আরে দুলাভাই কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন আসুন ভেতরে। “আসলে আপনাকে ফিরে আসতে দেখে আপু খুশির ঠ্যলাই শকড হয়ে গেছে বোধহয় হেসে বলল ঈশান।”

সবাই মিলে ভিতরে এসে বসলো। জামাই ফিরে এসেছে শুনে আনিসুল হক আর শায়লা বানু আসলেন। আনিসুল হক অনুরাগের ওপর এখন আগের মতো রেগে নেই।

তাই হাসি মুখে তার সাথে কথা বলেছেন।

“তুমি ফিরে এসেছো বাবা আমি এক্ষুনি তোমার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছি তখন তো না খেয়ে চলে গেলে।শায়লা হক আনন্দ সহকারে বললেন।”

আরে আরে আন্টি এতো ব্যস্ত হবার দরকার নেই কতদিন পর আপনাদের দেখছি। “আপনার হাতের রান্না তো খাবো তবে এখন নয় আগে বসুন একটু গল্প করি।”

“তুমি আমাকে আন্টি করে কেন বলছো?” দেখ তোমার সাথে ইশিতার রাগারাগী হতে পারে তা বলে আমাকে আন্টি ডাকা একদম চলবে না।

আমার আর ইশিতার রাগারাগী কখন হলো।?আমি আজকেই ফিরলাম।

“এবার বুঝেছি আমার ইশু পাগলী আমার ওপর অভিমান করেছে তাই কথা বলছে না।”

আচ্ছা এই দেখ আমি কান ধরছি। এমন ভুল আর কখনো হবে না। কি করতাম বলো আমার জ্ঞান ফিরেছে কিছুদিন আগে। তারপর শুধু তোমার নামটাই মনে ছিল। নিজের নাম ঠিকানা কিছুই মনে করতে পারছিলাম না। অনেক চেষ্টা করে ধীরে ধীরে সবকিছু মনে পড়েছে। আমি যে বেঁচে আছি এই খবর তোমরা আরো আগেই পেতে কিন্তু ঐ যে বললাম কিছুই মনে পড়ছিলো না।

সবকিছু মনে পড়তেই বাড়িতে না গিয়ে সোজা তোমার কাছে ছুটে এসেছি। আর এদিকে তুমি আমার ওপর অভিমান করে বসে আছো। “আমাকে ফিরে আসতে দেখে তোমার মনে কোন আনন্দ নেই কেন ইশিতা?”

ইশিতার হাত ধরে কথা গুলো একনাগাড়ে বলে থামলো অনুভব।

এইসব শুনে সবাই হতবাক হয়ে গেল।

“আপনাদের সবার চোখ মুখের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে কেউই আমাকে ফিরে আসতে দেখে খুশি হয়নি?”

“এমনকি আপনাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে আমি কখনো হারিয়ে যায়নি সবসময় আপনাদের সাথেই ছিলাম।”

আনিসুল হক বললেন তুমি তাহলে অনু.. অনুভব?

যাক তাহলে অন্তত আংকেল আমাকে মনে রেখেছেন।
জি আংকেল আমি অনুভব আপনার হবু জামাই।

ইশিতার হাত পা থরথর করে কাঁপছে। মাথা ঘুরছে। এখন তার কি করা উচিত? কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না।

অনুভব ফিরে এসেছে আমার তো খুশি হওয়ার কথা। আনন্দে জড়িয়ে ধরার কথা তাহলে আমি এমন করছি কেন। কেন আমি কিছু বলতে পারছি না।

ও মাই গড তার মানে আপনি অনুভব ভাইয়া। সেদিনের এক্সিডেন্টে আপনি মারা যাননি?

না ঈশান তোমাদের সবার ভালোবাসা জোরে আমি বেঁচে ফিরেছি(ইশিতার দিকে তাকিয়ে বললো)

তারপর দিশার দিকে তাকিয়ে বললো ও ড.দিশা।
দিশা আমাকে বাঁচিয়েছে।
তারপর দিশা সবাইকে সবকিছু খুলে বললো।

সবাই এবার পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে গেল এটা অনুভব।

দিশা উঠে গিয়ে ইশিতার পাশে বসে বললো যানো ইশিতা তুমি খুব ভাগ্যবতী।
ইশিতা দিশার দিকে একনজর দেখলো। গোলগাল চেহারায় শ্যামবর্নের মিষ্টি একটা মেয়ে।

জ্ঞান ফেরার পর থেকে অনুভব শুধু তোমার গল্প করেছে। তোমার পছন্দ অপছন্দ তোমার প্রিয় সবকিছু আর তোমাদের লাভস্টোরি।

ইশিতার মনে হচ্ছে দিশার বুকের ভিতর কষ্ট চেপে রেখে কথা বলছে।

ইশিতা এবার কিছুটা স্বাভাবিক হলো। তারপর বললো অনুভব তুমি বাড়িতে যাও আমি পরে তোমার সাথে কথা বলব।

আমি এখন একটু একা থাকতে চাই।

আর দিশা তোমার সাথে কথা বলে অনেক ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ অনুভবের জীবন বাঁচানোর জন্য।অন্য আরেকদিন অনেক গল্প করবো তোমার সাথে।

আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ইশিতা ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।

ইশিতার এমন আচরণে অনুভবের কাছে বোধগম্য না হলেও ইশিতার বাড়ির লোকেরা ঠিকই বুঝতে পেরেছে।

কিছু মনে করো না অনুভব ইশিতার শরীর ভালো নেই তাই হয়তো পরে কথা বলতে চাইছে?

ইশিতার কি হয়েছে বেশ উত্তেজিত হয়ে বললো অনুভব?

আসলে ইশিতা প্রে…….!!

হালকা সর্দি জ্বর হয়েছে। তুমি চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।

তুমি এখন বাড়িতে যাও।

দিশা আর অনুভব বেরিয়ে গেল।
অনুভব কে চিন্তিত হতে দেখে দিশা বললো তুমি কিন্তু এখনো পুরোপুরি সুস্থ নও। তাই একদম স্ট্রেস নেয়া যাবে না। তোমার বারবার করে অনুরোধ করার জন্য তোমাকে নিয়ে এসেছি।

না আসলেই বোধহয় ভালো হতো।

“এমন কথা কেন বলছো অনুভব?”

ইশিতা কে অচেনা লাগছে আমি তো ভেবেছিলাম আমাকে ফিরে আসতে দেখে ও আনন্দে পাগল হয়ে যাবে কিন্তু এমন একটা আচরণ করলো যেন আমাকে চেনেই না ।

রিল্যাক্স অনুভব সব ঠিক হয়ে যাবে। ইশিতা কে একটু সময় দাও। তুমি তো দু বছর পরে থেকেছো ইশিতার পেছনে। আবারো না হয় তাই করো।

অনুভব আর কথা না বাড়িয়ে দিশাকে নিয়ে নিজেদের বাড়িতে চলে গেল।

অনুরাগ মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।

রাশেদা বেগম, রাজীব চৌধুরী অনুরাগ কে নিয়ে বেশ চিন্তায় আছেন।

লিজা টেনশনে পায়চারি করছে। কারণ ঈশান একটু আগে ফোনে তাকে সব জানিয়েছে।

এমনিতেই তাদের সম্পর্ক ঝুলে আছে। তার উপর আবার অনুভব ফিরে এসেছে।

এতো দিন লিজা আর ঈশান অনেক চেষ্টা করছে ইশিতা আর অনুরাগ কে মিলিয়ে দিতে।

দুই পরিবারের মধ্যে মিলমিশ করতে। কিন্তু অনুভব ফিরে আসায় তাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল।
এমন নয় যে অনুভব ফিরে আসায় তারা খুশি হয়নি।

“লিজা প্রায় ধরে নিয়েছে ঈশানের সাথে তার সম্পর্ক আর কেউ মেনে নেবে না।”

কলিং বেলের শব্দে লিজা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল।

অনুভব আর দিশা ভিতরে আসলো।
তাদের কে ঢুকতে দেখে রাজীব চৌধুরী আর রাশেদা বেগম দাঁড়িয়ে গেল।

অনুভব গিয়ে ফুপুকে জড়িয়ে ধরল। লিজা তার খালামনি আর অনুরাগ কে ডেকে নিয়ে আসলো।

অনুরাগ আর রাজীব চৌধুরী অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে অনুভবের দিকে। তাহেরা বানু এসে অনুভব কে জড়িয়ে ধরলো।তার আজ বড় আনন্দের দিন।

অনুভব এবার অনুরাগ কে জড়িয়ে ধরলো। অনুরাগ মুর্তি হয়ে গেছে।তার নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না।
হুঁশ ফিরতেই অনুভব কে জড়িয়ে ধরলো আর সেকি আনন্দ দুই ভাইয়ের।

অনুরাগ খুব খুশি হলো অনুভবের ফিরে আসাতে।

অনুভব এবার দিশার সাথে সবাই কে পরিচয় করিয়ে দিল তারপর তার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বললো।

এবার দিশার ফিরে যাবার পালা।

অশ্রুসিক্ত নয়নে দিশা সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ল আপন ঠিকানায়।

“দিশা এক পা একপা করে হাঁটছে আর অনুভবের সাথে কাটানো সময় গুলো মনে করছে।”

“ইশিতা নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করছে আর নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছে তার এখন কি করা উচিত?”

“অনুরাগ মনে মনে ভাবলো সে অনুভব আর ইশিতার মাঝে থেকে সরে যাবে।”তবে ইশিতা কে কোনো দিন ভুলতে পারবো না।

“এই কয় মাসে কি এমন হয়েছে ইশিতা যার জন্য তুমি আমাকে এতোটা পর করে দিয়েছো?” (অনুভব)

💔—————–💔

মন যাকে চায় তাকে পায়না,
স্বপ্ন আমার ভাঙ্গা আয়না।

“ক্লান্ত দুচোখ শুধু খুঁজে ফেরে
হৃদয়ের গানে বেদনার সুরে”

হাহাকার………

একা এই ঘরে স্মৃতি আর আমি

একাকার……..

ভাবিনি এমন হবে
এ ব্যাথা আমায় পাবে
কেড়ে নিবে সব অধিকার

নীরবে……..

Come to me come again
Fell my heart once again🤎

জানিনা কিসের ভুলে এভাবে আমায় ফেলে
ছেড়ে গেলে এতো পিছুটান

কি পেলে……

Come along fell my pain
be my smile once again💙

Come along fell my pain
be my smile once again💜

#চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here