একথোকা কৃষ্ণজোড়া ও তুমি পর্ব -৫+৬

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৫
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে হেমন্ত আর হিয়াজ শিকদার।হিয়াজ শিকদার হলেন অর্থ’র বাবা।হিয়াজ শিকদার আর হিয়ান্ত শিককদার হলেন আপন দুই ভাই।হিয়াজের দুই ছেলে মেয়ে অর্থ আর হিয়া।আর হিয়ান্ত’র একটাই ছেলে হেমন্ত।সবার বড় অর্থ তারপর হেমন্ত আর সবার ছোট হিয়া।বড় আদরের সবার ও।
অর্থ’র জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ওরা দুজন।অবশেষে অপেক্ষা শেষ হলো। অর্থ ফার্স্ট টার্মিনাল দিয়ে এগিয়ে আসছে।সাথে আছে আরাফ।অর্থ আর আরাফ সালাম জানালো।হিয়াজ জড়িয়ে ধরলেন ছেলেকে।

-‘ কেমন আছিস বাবা?’

-‘ ভালো আব্বু।তুমি কেমন আছো?’

-‘ এইযে তোকে দেখেছি না? এখন একদম ভালো আছি।’

হিয়াজ এইবার আরাফকে জিজ্ঞেস করেন,

-‘ আরাফ কেমন আছো?’

আরাফ হাসিমুখে বলে,

-‘ ভালো আঙেল।আপনি কেমন আছেন?’

-‘ আলহামদুলিল্লাহ!’

হেমন্ত অর্থকে জড়িয়ে ধরে আছে।অর্থও ভাইয়ের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিলো।ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা করা হলো।আরাফের সাথেও কথা হলো।হিয়াজ এইবার বলে উঠেন,

-‘ এইবার বাড়ি চলো।অনেক হলো।রায়হানা আর হেনা সেই কখন থেকে বসে আছে তোমার জন্যে বার বার ফোন করে জিজ্ঞেস করছে অর্থকে নিয়ে আসছি না কেন?’

অর্থ আর আরাফ হিয়াজের কথায় সম্মতি জানিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।কি জানি একটা অনুভব করে অর্থ আবারও গাড়ির জানালা দিয়ে তাকালো।ওর কেন যেন মনে হচ্ছিলো কে যেন ওকে দেখছে।গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করে দেখছে।হয়তো মনের ভুল হবে ভেবে অতোটা ধ্যান দিলো না।শা করে ওদের গাড়িটা ছুটে চলে গেলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। এদিকে অর্থ’রা যেতেই লুকানো অবস্থা থেকে বেড়িয়ে এলো প্রাহি।আর একটু হলেই দেখে ফেলতো অর্থ ওকে। চোখে জল মুখে হাসি।কতো বছর পর দেখলো অর্থকে ও।লোকটা আগের থেকে আরো বেশি সুদর্শন হয়ে গিয়েছে।প্রানটা জুড়িয়ে গিয়েছে প্রাহির।চারদিকে ভালোলাগা আর ভালোবাসার রঙিন প্রজাপতিরা উড়ে বেড়াচ্ছে ওর মনে। অর্থ আজ আসবে আর প্রাহি তাকে দেখবে না?এটা অসম্ভব।সবার আগেই এয়াপোর্টে এসে হাজির হয়েছে প্রাহি।প্রিয় মানুষটিকে একপলক দেখার জন্যে।অশান্ত হৃদয়কে শান্ত করার জন্যে।অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার ইতি টানা হলো।এখন শুধু সময় অর্থ’র কাছে নিজের ভালোবাসা ব্যক্ত করার।
_____________

বাড়ি ফিরতেই অর্থকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেকেটে অস্থির রায়হানা আর হেনা।হেনা অর্থ’র চাচি হলেও ওর মা থেকে কোন অংশে কম ভালোবাসেন না তিনি।এই দুই মাকে বহু কষ্টে সামলিয়ে কান্না থামিয়েছে অর্থ।টুকাটাকি কথা বলে ফ্রেস হতে চলে যায় অর্থ আর আরাফ।ফ্রেস হয়ে এসে ড্রয়িংরুমে এসে দাড়াতেই বাড়ির সদর দরজা দিয়ে প্রায় একপ্রকার ভুমিকম্প সৃষ্টি করে হঠাৎ একটা মেয়ে এসে অর্থকে জড়িয়ে ধরে।অর্থ নিজেকে সামলে নিলো আকস্মিক ধাক্কায়।তারপর নিজেও মৃদ্যু হেসে দুহাতে জড়িয়ে ধরে মেয়েটাকে।মেয়েটা প্রায় চিৎকার করে বলে উঠে,

-‘ আই মিস্ড ইউ সো মাচ ভাইয়া।’

-‘ আমিও আমার পুচকিকে অনেক মিস করেছি।তা আমার পুচকিটা কি ভালো আছে?’ বলে অর্থ।

মেয়েটা অর্থকে ছেড়ে দিয়ে হাসি মুখে বলে,

-‘ নিজেই দেখে নেও।আমি একদম ফিট এন্ড ফাইন আছি।’

হেমন্ত মাঝখান থেকে বলে,

-‘ হ্যা সারাদিন হাতির মতো খেলে তো ফিট এন্ড ফাইন থাকবিই।আর কয়দিন পর পুরাই একটা আটার বস্তার মতো লাগবে।’

-‘ ভাইয়া এই হেমন্ত ভাইয়াকে কিছু বলবা?সারাদিন আমার সাথে ঝগরা লাগানোর ধান্দায় থাকে।’ কাঁদো কন্ঠ মেয়েটার।

অর্থ হেমন্তকে একটু মিথ্যে রাগ দেখালো।বিনিময়ে হেমন্তও ভয় পাওয়ার অভিনয় করলো।
এদিকে এতোক্ষন ভ্রু-কুচকে সবটা দেখছিলো আরাফ।এইবার বলেই ফেললো,

-‘ অর্থ? এটা কি সেই বাচ্চা মেয়ে তোর বোন হিয়া?’

অর্থ হ্যাসূচক মাথা নাড়ালো।আরাফ হেসে দিয়ে বলে,

-‘ আগে যেমন বাচ্চাদের মতো ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদতো এখনো দেখি সেভাবেই কাঁদে।’

হিয়া রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আরাফের দিকে।তেজ নিয়ে বলে,

-‘ এসব ভালো হচ্ছেনা কিন্তু আরাফ ভাইয়া।’

বলেই হনহন করে চলে গেলো মা, কাকি আর বাবা,কাকাদের সাথে দেখা করতে।এদিকে হিয়ার এতো রাগ দেখে মুচঁকি হাসলো আরাফ।মনে মনে বলে,

-‘ আজও রাগলে তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে হিয়া।আর আমি বার বার তোমার এই রূপে ঘায়েল হয়ে যাই। মন হারিয়ে বসে আছি তো সেই কবেই তোমার কাছে।এইবার পালা তোমার মন চুরি করার।শীঘ্রই সেটা করে নেবো।’

রায়হানা বেগমের ডাক শোনা গেলো।তিনি সবাইকে ডাকছেন ডিনার করার জন্যে।সবাই আজ কতোদিন পর একসাথে ডিনার করবে।পুরো শিকদার পরিবার আজ হাসিতে খুশিতে ভরপুর।

——————

খাবার টেবিলে হিয়াজ শিকদার হঠাৎ বলে উঠেন,

-‘ অর্থ’র আসার উপলক্ষে কাল আমি একটা পার্টির আয়োজন করবো।কি বলো অর্থ?’

অর্থ খাওয়া থামিয়ে দিলো।ভ্রু-কুচকে গম্ভীর কন্ঠে বলে,

-‘ এসবের কোন দরকার নেই বাবা।’

হিয়া চেঁচিয়ে উঠলো,

-‘ তোমার দরকার নেই। আমার দরকার আছে।আমি আমার সব ফ্রেন্ডদের ইনভাইটেশন দিয়ে দিয়েছি।ওরা কাল আসবে।আমার ভাইয়া এসেছে আর আমি সেলিব্রেট করবো না। এটা কি হয়?’

-‘ কিন্তু……!’

-‘ কোন কিন্তু না ভাইয়া কাল পার্টি হবে ব্যস।’

বোনের জেদের কাছে হার মানে অর্থ।সম্মতি দিয়ে দেয় সে।রায়হানা বেগম অর্থ’র প্লেটে খাবার দিচ্ছেন।এইবার হেমন্ত’র উদ্দেশ্যে বলে,

-‘ হেমন্ত?প্রাহি আর ইশি মেয়ে দুটোকেও ইনভাইটেশন দিয়ে দিস পার্টির।তোর আর কোন ফ্রেন্ড থাকলে তাদেরকেও বলিস।’

-‘ আচ্ছা বড় মা!’ বলল হেমন্ত।

এদিকে প্রাহি আর ইশি নামটা কেমন যেন একটু চেনা চেনা লাগছে ওর কাছে।কিছু একটা মনে করেই খাওয়া থামিয়ে হেমন্তকে বললো,

-‘ প্রাহি আর ইশি?এরা দুজন তোর ওই মেয়ে ফ্রেন্ড দুটো না?’

হেমন্ত চাঁদ হাতে পেলো।এইতো সুযোগ প্রাহির একটু গুনগান গাওয়া যাক ভাইয়ের সামনে।এতে ক্ষতি কি?
হেমন্ত উচ্ছাসিত কন্ঠে বলে,

-‘ হ্যা ভাইয়া।জানো ওরা খুবই ভালো।প্রাহির তো কোন জবাবই নেই।একদম শান্ত, ভদ্র,নম্র একজন মেয়ে। আমার ফ্রেন্ড্সদের মাঝে প্রাহি আর ইশিই সবচেয়ে বেশি ক্লোজ মানে বেষ্টফ্রেন্ড।আর জানো প্রাহি তো একেবারে আমাদের আপনজনের মতো।আমাদের ফ্যামিলির সবাইকে প্রচুর ভালোবাসে মেয়েটা।আর…….!’

-‘ ব্যস! অনেক হয়েছে।আমি শুধু একটু জিজ্ঞেস করলাম।ওমনি তুই তো পুরো জন্মসষ্টি নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিলে!জাস্ট লিসেন ওয়ান থিংক আই ডোন্ট লাইক টু টক টু মাচ মাইসেল্ফ।এন্ড আই এলসো ডোন্ট লাইক এনিওয়ান টু টক টু মি টু মাচ।’

কথাগুলো শেষ করেই খাবার টেবিল হতে উঠে চলে গেলো অর্থ।হেমন্ত’র মনটা খারাপ হয়ে গেলো।কিভাবে যে ভাইয়ের মনে প্রাহির জন্যে জায়গা তৈরি করবে। ইসস,এতোটা বোকা কেন হলো ও?আগে তো ওদের দুজনকে একসাথে করতে হবে।দুজনের প্রথম সাক্ষাৎটা যেন একটু রোমাঞ্চকর হয় এমন ব্যবস্থা করবে হেমন্ত।চেষ্টায় কোন কমতি রাখবে না ও।যে করেই হোক প্রাহিকেই ওর ভাইয়ের বউ করে আনতে হবে।
_______________
-‘ স্যার ইলফা ম্যাম ইস প্লানিং টু কাম টু বাংলাদেশ টুমোরো।’

অর্থ’র আন্ডারে কাজ করা একজন লোকের মুখে এমন কথা শুনে রাগে কপালের শিরা উপশিরা ফুলে উঠলো। রাগে চোখজোড়া লাল হয়ে উঠলো।মনে মনে বিশ্রি গালি দিলো ইলফাকে ‘ দ্যাট ব্লাডি বিচ।’ চোয়াল শক্ত করে গম্ভীর স্বরে বলে উঠে অর্থ,

-‘ স্টোপ দ্যাট ক্রেজি গার্ল এনিওয়ে।আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু হিয়ার এনি এক্সকিউসেস।ব্লক হার পাসপোর্ট নো ম্যাটার হাও মাচ ইট কোস্টস্!’

ফোনটা কেটে দিয়ে সজোড়ে পাশে টেবিলে রাখা ফুলদানিটা আছার মারলো অর্থ।এই মেয়েটা জানলো কিভাবে ওরা দেশে এসেছে।ওইটাকে না জানানোর জন্যে লুকিয়ে চুরিয়ে কতো প্লানিং করে ও আর আরাফ এসেছে বাংলাদেশে।আর সেই মুসিবত কিনা সয়ং এখানে এসে হাজির হওয়ার পায়তারা করছে।না এটা কিছুতেই হতে দেয়া যাবে না।মেয়েটা আস্ত একটা ঝামেলা।আর অর্থ নিজেকে কোন ঝামেলায় জড়াতে চায়না।আর এইসব ঝামেলাদের কিভাবে নিজের কাছ থেকে দূরে সরানো যায় তা খুব ভালো করেই জানে অর্থ।মনে মনে কথাগুলো ভেবে বাঁকা হাসলো অর্থ।
#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#বোনাস_পর্ব

আজ কালো গ্রাউন পড়ে সেজেছে প্রাহি।প্রাহি আজ নিজেকে পুরোপুরি নিজেকে অর্থ’র ব্লাক প্রিন্সেস রূপে সাজাবে।সুন্দর করে সেজেছে প্রাহি।টানা চোখজোড়ায় গাঢ়ো কালো কাজল দিয়েছে, ঠোঁটে লাল লিপ্সটিক।চুলগুলো কার্লি করে ছেড়ে দিয়েছে পুরো পিটময়। এতেই যেন অসম্ভব সুন্দর লাগছে দেখতে ওকে।রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে হাজির হয় প্রাহি। নিচে এসে দেখে ওর বাবা আর মা দুজনেই রেডি।এরশাদ সাহেব বলেন,

-‘ রেডি মামুনি তুমি? বাহ কি সুন্দর লাগছে আমার মা’টাকে।’

রাবেয়া বেগম প্রাহির কানের পিছনে কালো কাজল লাগিয়ে দিলেন।তারপর তারা রওনা দিলেন শিকদার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
___________
আজ শিকদার বাড়ি খুব সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে।অসম্ভব সুন্দর লাগছে পুরো বাড়িটা।গাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো প্রাহি।শিকদার বাড়ির সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো।প্রাহিকে দেখে ইশি আর হেমন্ত এগিয়ে আসলো।ইশি আর হেমন্ত প্রাহির মা বাবাকে সালাম জানালো।টুকটাক কথা প্রাহিকে নিয়ে চলে গেলো। প্রাহি ইশি আর হেমন্ত’র এমন টানাটানি দেখে বেশ বিরক্ত হলো।বললো,

-‘ আশ্চর্য এমন টানাটানি করছিস কেন তোরা?ছিড়ে ফেলবি নাকি আমায়?’

হেমন্ত প্রাহির কথায় পাত্তা না দিয়ে বলে,

-‘ আরে শোন তুই আজকে পার্টিতে একটা ড্যান্স পারফরমেন্স করবি!’

প্রাহি থ হয়ে গেলো।চেঁচিয়ে উঠে বলে,

-‘ কি?কি বলছিস এসব?ড্যান্স তাও আমি?নো নেভার।এটা আমি করতে পারবো না।’

ইশি নিজের চোখের চশমা ঠেলেঠুলে ঠিক করে নিয়ে বলে,

-‘ প্রাহি লিসেন না। তুই তো অনেক ভালো নাচ পারিস।একটা নাচই তো করবি এতে এমন করার কি আছে?’

প্রাহি মুখটা একটুখানি করে বললো,

-‘ কিন্তু কিভাবে?এতোগুলো মানুষের সামনে?’

হেমন্ত বেশ বিরক্ত হলো।ধমকে উঠে বলে,

-‘ ঢং মারাইস না ছেম্রি।নাচ করতে বলেছি করবি ব্যস।আর আমার পরিবারের সবাই জানেন তুই অনেক ভালো নাচ পারিস।স্কুলে থাকতে প্রতিটা অনুষ্ঠানে তুই নাচ করতি। আমার পরিবারের সবার তোর নাচ অনেক পছন্দ।’

প্রাহি আর কিছু বললো না।কিন্তু আজ অর্থ এখানে আছে।আর অর্থ’র সামনে কিভাবে কি করবে প্রাহি?অর্থ’র সাথে চোখাচোখি হলেই তো ওর দম বন্ধ হয়ে আসে।হাত পা উত্তেজনায় থরথর কাপে।অর্থ’র ছবি যতোবার দেখে ততোবারই এমন হয়।সেখানে আজ ও সরাসরি অর্থ’র সামনে লাইফ ড্যান্স করবে। ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসে প্রাহির।উপায় না পেয়ে রাজি হয়ে যায় প্রাহি।
_______________

অর্থকে আজ ভীষন সুদর্শন দেখাচ্ছে।ব্লাক স্যুটে অনেক আকর্ষনীয় দেখাচ্ছে ওকে।আশেপাশের মেয়েরা অর্থ’র এটেনশন পাওয়ার জন্যে কতোশতো চেষ্টা করছে কিন্তু অর্থ কিছুতেই সেদিকে পাত্তা দিচ্ছে না।আশাহত একেকজন মেয়ের মুখ লটকে যাচ্ছে। হঠাৎ মাইকে হেমন্ত’র কন্ঠ শুনে সেদিকে নজর দেয় অর্থ।

-‘লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান।আজ পার্টিটা শুরু করতে যাচ্ছি একটা অমায়িক ড্যান্স পার্ফোর্মেন্স এর মাধ্যেমে।তো সবাই তৈরি তো?’

সবাই চিৎকার করে উঠে।ঠিক তখনি চারদিকের লাইট ওফ হয়ে যায়।স্টেজে বিভিন্ন রঙের আলো জলে উঠে।আর ফোকাস লাইতটটা এসে পরে প্রাহির মুখে।প্রাহি চোখ তুলে তাকায় সামনের দিকে।ঠিক একেবারে অর্থ’র দিকে।এদিকে প্রাহির চোখের ওই চাহনী অর্থ’র মনে হচ্ছে ওর হৃদয়ে কিছু একটা প্রচন্ড জোড়ে আঘাত করেছে।অসম্ভব মায়াবী মুখশ্রীটা দেখে যেন ওর অন্তর জুড়িয়ে গিয়েছে।টানা টানা কাজলকালো চোখ, চিকন জোড়াভ্রুদ্বয়,লাল লিপ্সটিকে আবৃত ঠোঁটজোড়া,কোমড় অব্দি ছড়ানো চুল,কোমল নারিদেহের বাঁক।সবকিছু যেন তীব্রভাবে আকর্ষক করছে অর্থকে।হৃদস্পন্দন দ্রুতগতীতে উঠানামা করছে।সারাশরীরে অদ্ভূত শিহরণ অনুভব করছে।এ কেমন অজানা অনুভূতি।অর্থ’র জীবনে প্রথম সে এমন অদ্ভুত অনুভূতির সাথে পরিচয় হলো।আগে তো কোন মেয়েকে দেখে এমন অদ্ভূত অনুভূতি হয়নি।তবে আজ কেন?কেন আজ এই মেয়েটা তার চোখের চাহনী চোখের দেখায় অর্থকে পুরো এলোমেলো করে দিলো?কেন?

এদিকে প্রাহি অর্থ’র ওমন চাহনী দেখে দ্রুত নিজের চোখ সরিয়ে নিলো।হৃৎপিন্ডটা এতো জোড়েজোড়ে লাফাচ্ছে যে মনে হচ্ছে এক্ষুনি বেড়িয়ে আসবে।না এমন হলে হবে না ওকে স্ট্রোং থাকতে হবে।নিজের অনুভূতিগুলোকে সামলাতে হবে। গান স্টার্ট হতেই প্রাহি নিজের নাচের দিকে ধ্যান দিলো। মিউজিক বক্সে জোড়ালো শব্দে গান বাজছে সেই সাথে অত্যন্ত সুন্দরভাবে নাচ প্রদর্শন করছে।এদিকে প্রাহির এক একটা মুভমেন্ট যেন অর্থ’র মনের ভীতর তোলপাড় সৃষ্টি করছে।

Jab tak hai zameen
Jab tak hai aasmaan
Tum mere hi raho
Bus itna hi armaan

Tujhe baandh loon mera chaina
Jaise chaand rahe baadal mein
Hum jachte hain aise jaise
Saje nain kaajal mein

Mehbooba main teri mehbooba
Mehbooba main teri mehbooba
Mehbooba main teri mehbooba
Mehbooba ho main teri mehbooba

Shuru ho rahi hain nayi manzilein
Nai zindagi ka safar
Sham rok de jahan chaandni odh kar
Dhoop bikhri rahe jis jagah reth par

Is jahan se pare aa kahin hum chalein
Raat leti rahe apni chadar tale

Main gudia ban jaaungi
Mere sath tu khelte rehna
Kabhi baaho main jhula jhulana
Kabhi dil se laga lena

Mehbooba main teri mehbooba
Mehbooba main teri mehbooba
#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৬
গাঢ়ো অনুভূতিতে পিষ্ট হয়েছে মন।অদ্ভূতভাবে কেমন যেন এলোমেলো লাগছে সবকিছু অর্থ’র।হৃৎস্পন্দের গতি অধীর দ্রুততার সাথে বাড়ছে।মস্তিষ্ক আর মন দুটো স্থানেই একটাই মুখশ্রী বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে।কেন এমন হচ্ছে অর্থ’র সাথে?কিসের এতো ব্যাকুলতা?কেন এতোটা টান অনুভব করছে সে ওই মেয়েটার প্রতি?এ কেমন যন্ত্রনা?মেয়েটার নাঁচের প্রতিটা মুহূর্ত কিছুতেই ভুলতে পারছে না অর্থ।কি সুন্দর অমায়িকভাবে নাঁচছিলো।কালো গাউনে যেন কোন হুরপরী লাগছিলো।একটা মেয়ের প্রতি এতোটা আকৃষ্ট কোনদিন হয়নি অর্থ?তবে আজ কেন? নিজের প্রতি নিজেরই অসম্ভব রাগ লাগছে অর্থ’র।যে অর্থ কিনা এতো বড় একটা বিজন্যাস সামলাচ্ছে।সেখানে নিজের মনের অনুভূতি,ব্যাকুলতা,অস্থিরতা সামলাতে পারছে।কিন্তু আদৌ কি বিজন্যাসের সাথে এইসব কিছুকে তুলনা করা কি বোকামি নয়?বিজন্যাস তো টাকায় চলে।কিন্তু? কিন্তু অনুভূতিগুলো কি টাকার ইশারায় চলে?নাহ! একদম না?তারা তো নিজেদের মন মর্জি মতো চলে।তাদের উপর কেউ নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা।কেউ না।কিন্তু আজ এতো বুদ্ধিমান অর্থ এই অনুভূতির পরিক্ষায় একেবারে শূন্যের কাঠায় দাঁড়িয়ে।নিজেকে সামলাতে না পেরে ড্রিংস সেক্টরে চলে যায় অর্থ।ওয়েটারকে একটা রেড ওয়াইন দিতে বলে মাথা চেপে ধরে বসে থাকে সেখানে।এদিকে অর্থকে অনেক্ষন ধরে খুজে চলেছে প্রাহি।অবশেষে অর্থকে দেখতে পেয়ে নিজেও সেদিকে এগিয়ে গেল।অর্থ’র থেকে খানিক দূরত্ব রেখেই বসলো।তারপর অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে লাগলো ওর ভালোবাসার মানুষটিকে।লোকটাকে কালো রঙে ভীষন সুদর্শন দেখাচ্ছে।আজ যেন প্রাহির চোখ ফেরানো দায় হয়ে পরেছে।লোকটার নেশাক্ত চোখ যেন গভীর এক সমুদ্রে। ওই সমুদ্রে নিজের খেই হারিয়ে বসে আছে প্রাহি তো সেই কবেই। কালচে লাল ঠোঁটজোড়ার দিকে তাকালেই তীব্রেভাবে ঝংকার তুলে ওর মনে।সারা শরীরে অদ্ভুৎ শিহরন অনুভব হয়। ঘনকালো সিল্কি চুলগুলো ঘন্টার পর ঘন্টা হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে লোকটাকে। প্রাহি যখন নিজের মতো অর্থকে নিয়ে ভাবনায় ব্যস্ত।ঠিক তখনই ওর সামনে এসে থপ করে বসে পড়ে কেউ।ধ্যান ভাঙ্গতে সামনে তাকাতেই।হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে প্রাহির।এ কাকে দেখছে সে? এতোক্ষন যে ভালোলাগার নেশায় মত্ত ছিলো প্রাহি। সেটা কেটে গিয়ে এখন একরাশ ভয়েরা এসে দানা বাধলো ভীতর ঘোরে।ঘোলাটে হয়ে আসলো দু-চোখ। আবার? আবার এই লোক ফিরে এসেছে?কেন এসেছে? ভয়ের তাড়নায় প্রাহি নড়তেও ভুলে গিয়েছে।সামনের ব্যাক্তিটি প্রাহিকে এতোটা ভয় পেতে দেখে ক্রুর হাসলো।অশ্লীলভাবে প্রাহির পা হতে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে নিয়ে বললো,

-‘ কিরে প্রাহি?আগের থেকে আরো বেশি সুন্দর হয়ে গিয়েছিস।ইউ আর লুকিং সো হট ইন ব্লাক ড্রেস।’

কথাগুলো আবারও প্রাহিকে বাজে নজরে দেখতে লাগলো।প্রাহির চোখ থেকে একফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো।চোখ মুছে জলদি সেখান থেকে যেতে নিলেই হাত চেপে ধরে প্রাহির ব্যাক্তিটি।প্রাহি কলিজায় পানি শুকিয়ে যায়।ব্যাক্তিটির হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।শেষে না পেরে কেঁদে দেয় প্রাহি।ক্রোদন স্বরে বলে উঠে,

-‘ জয় ভাইয়া।প্লিজ ছেড়ে দেও আমায়।কেন এসেছো আবার ফিরে?কেন এসেছো আবারও আমার কাছে?আবার কেন আমাকে জ্বালাতন করছো?প্লিজ ছাড়ো আমাকে।’

জয় শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,

-‘ কেন ফিরে এসেছি?জানিস না কেন ফিরে এসেছি?তুই খুব ভালোভাবেই জানিস আমি কেন এসেছি আর ঠিক কি চাই আমি। ‘

জয়ের প্রতিটি কথায় কেঁপে উঠে প্রাহি।কাঁদতে কাঁদতে বলে,

-‘ ছেড়ে দেও হাতটা!’

জয় আবারও হাসলো।হেঁসে আরেক হাত প্রাহিzর দিকে বাড়েতে নিলেই একটা শক্ত পুরুষালি হাত এসে আটকে দেয় জয়কে।জয় বিরক্ত হয়ে বললো,

-‘ আরে কে রে?কেন বিরক্ত করতে এসেছিস?’

কথাগুলো বলে তাকাতেই।হালকা ভয় পায় জয়।আস্তে করে প্রাহির হাত ছেড়ে দেয়।প্রাহি ছাড়া পেয়েই সেই লোকটার পিছনে গিয়ে লুকায়।লোকটা আর কেউ না অর্থ। অর্থ’র রাগে চোখ লাল হয়ে উঠেছে,কপালের রগগুলো ফুলে উঠেছে।অনেক্ষন যাবত দেখছিলো মেয়েটাকে এই ছেলে ডিস্টার্ব করছে।রাগ তো লাগছিলোই কিন্তু যখন দেখলো মেয়েটার হাত চেপে ধরেছে। আর মেয়েটা বার বার হাত ছেড়ে দেওয়ার জন্যে বলছিলো এতেই বুঝেছে অর্থ।ছেলেটা ওকে জ্বালাতন করছে।রাগে ভারি নিশ্বাস নিতে লাগে অর্থ।ছেলেটা আবারও হাত বাড়াতে নিতেই দ্রুত গিয়ে বাধা দেয় ও।

জয় দাঁতেদাঁত চিপে বলে,

-‘ হেই মিষ্টার হোয়াটএভার। হুয়াই আর ইউ ডিস্টার্বিং হার!’

জয় হাসলো।প্রাহির দিকে বাঁকা নজরে তাকাতেই প্রাহি ভয়ে আরো সিটিয়ে গেলো অর্থ’র দিকে। সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে জয় বলে,

-‘ সি’জ মাই কাজিন।আ’ম নট ডিস্টার্বিং হার মিষ্টার শিকদার।’

ভ্রু-কুচকে আসে অর্থ’র।ছেলেটা ওকে চিনে তাহলে।আর এই মাত্র কি বললো মেয়েটার কাজিন হয় এই ছেলে?তাহলে কেন বারবার ওকে ছেড়ে দেওয়ার কথাগুলো বলছিলো কাঁদতে কাঁদতে।ওই চোখের অশ্রুরা কেন এসে ভীর জমিয়েছিলো।কেন সেই চোখে অসীম ভয় দেখতে পেয়েছিলো অর্থ।
রাগ আরো বারলো অর্থ’র।ঘুরে প্রাহির দিকে তাকালো।মেয়েটার চেহারা ভয়ে একটুখানি হয়ে আছে।অর্থ রাগি কন্ঠে বলে,

-‘ এই ছেলে কি কাজিন হয় আপনার?’

এই প্রথম।এই প্রথমবার প্রিয় মানুষটি কথা বললো প্রাহির সাথে।প্রাহি কি অনেক খুশি হবে?হ্যা খুশিই তো হওয়ার কথা।কিন্তু জয়ের উপস্থিতি ওকে এতোটাই ভয়ে কাবু করেছে যে ও ওর খুশিটা প্রকাশ করতে পারছে না।অর্থ প্রাহিকে কথা বলতে না দেখে প্রচুর বিরক্ত হলো।প্রায় ধমকের স্বরে বলে উঠে,

-‘ কি হলো কথা বলছেন না কেন?আই আস্কড ইউ সামথিং আন্সার দ্যাট ড্যাম ইট!’

কেঁপে উঠলো প্রাহি অর্থ’র ধমকে।কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

-‘ হ্যা আমার কাজিন হয়।কিন্তু……!’

প্রাহিকে মাঝপথে থামিয়ে দিলো জয় আর কিছু বলতে দিলো না।জয় আগ বারিয়ে বলে উঠলো,

-‘ দেখেছেন মিষ্টার শিকদার।আমি বলেছি আপনাকে ও আমার কাজিন হয়!’

-‘ তাহলে উনি কাঁদছিলেন কেন?কাজিন হলে কাঁদছিলেন কেন উনি?’

অর্থ’র কথায় হাসলো জয়।কিন্তু মনে মনে প্রচুর বিরক্ত হলো।মনে মনে বলে, সালা কি জাসুসিগিরি শুরু করলো। জয় কিছু বলতে নিবে।তার আগেই হেমন্ত কোথা থেকে এসে জয়কে টেনে দুগালে এলোপাথাড়ি চড় দিতে লাগলো।জয়ও রেগে পালটা আঘাত করতে লাগলো।কিন্তু হেমন্ত’র সাথে পারছে না।হেমন্ত দিগ বেদিগের হুশ হারিয়ে জয়কে মারছে।এদিকে অর্থ অবাক?হলো কি এটা।হেমন্ত কোথা থেকে এমন উল্কাপিণ্ডের মতো এসে জয়কে মারা শুরু করলো কেন?হচ্ছেটা কি?অনুষ্ঠানের এরশাদ সাহেব আর রাবেয়া বেগম জয়কে দেখে আৎকে উঠলেন।জলদি প্রাহিকে খুজতে লাগলেন। দেখে প্রাহিকে ইশি ধরে আছে।সেখানে অর্থও আছে।এদিকে শিকদার বাড়ির প্রতিটা মানুষ স্তব্ধ।হেমন্ত’র এমন আচড়নে।হেমন্ত জয়কে মারতে মারতে বলে,

-‘ তোর সাহস কিভাবে হলো কুত্তারবা**।জা*নোয়ার তোর হাত কেটে দিবো আমি।তোর সাহস কিভাবে হলো প্রাহির দিকে হাত বাড়ানোর।তোকে মেরে ফেলবো আমি আজ।কুকুরের জাত কোনদিন ভালো হয়না।তুইও ঠিক তেমন।তোকে না মেরে আজ শান্তি পাবো না।’

জয়ের প্রায় অবস্থা নাজেহাল।নাক মুখ দিয়ে রক্ত পরছে।হিয়াজ শিকদার আর হিয়ান্ত শিকদার হেমন্তকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু কিছুতেই পারছে না।এদিকে অর্থ ভ্রু-কুচকে সবটা দেখছে।ওর ভাইতো এমন না অকারনে কাউকে তো ওর ভাই মারে না।তাহলে আজ কেন এই এমন করছে?নিশ্চয়ই এর পিছনে কোন কারন আছে।তাই অর্থ এগিয়ে যাচ্ছে না হেমন্ত’র কাছে।এদিকে প্রাহি আর এইসব সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে চলে যায় হেমন্ত’র কাছে।হেমন্ত’র একহাত জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

-‘ হেমন্ত প্লিজ ছেড়ে দে ওকে।প্লিজ হেমন্ত ছেড়ে দে।তোকে আমার কসম ছেড়ে দে।’

থেমে গেলো হেমন্ত রাগি চোখে তাকালো প্রাহির দিকে।ঠাস করে চর লাগিয়ে দিলো প্রাহির গালে।বাড়ির সকলে আকস্মিক হেমন্ত’র প্রাহিকে মারতে দেখে অবাক হয়ে যায়।এদিকে চর খেয়ে গালে হাত দিয়ে ফুঁফিয়ে কেঁদে দিলো প্রাহি।প্রাহিকে কাঁদতে দেখে হেমন্ত চিল্লিয়ে বলে,

-‘ সাট -আপ। জাস্ট সাট-আপ।একদম কাঁদবি না আমার সামনে একদম কাঁদবি না।তোর সাহস কি করে হলো এই কুত্তারবা*চ্চার জন্যে কসম দেওয়ার।তোর জিহ্বা টেনে ছিড়ে ফেলবো আমি।’

-‘ আমার কথা একটু শুন হেমন্ত….’।

প্রাহি বলতে পারে না তার আগেই হেমন্ত রাগি গলায় বলে,

-‘ কথা বলবি না আমার সাথে।কথা বলবি না।’

রাগে হনহন করে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো হেমন্ত।প্রাহির কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে।আজ ওর আনন্দের দিন ছিলো।কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো এটা? রাবেয়া বেগম দৌড়ে এসে প্রাহিকে জড়িয়ে ধরলেন।মেয়েকে বুকের সাথে ঝাপ্টে ধরলেন।মায়ের সান্নিধ্য পেয়ে মা’কে ঝাপ্টে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠে প্রাহি।কাঁদতে কাঁদতে বলে,

-‘ আম্মু ও আবার কেন এসেছে আম্মু।ওকে চলে যেতে বলো আম্মু।আমার সকল আনন্দ, খুশিকে এই লোকটা এক মুহূর্তে সব ধ্বংস করে দেয় আম্মু।ওকে যেতে বলো আম্মু।যেতে বলো! আমার সহ্য হচ্ছে না ওকে আম্মু। সহ্য……!’

আস্তে আস্তে শরীরের সমস্ত ভর ছেড়ে দেয় প্রাহি।রাবেয়া বেগমের গায়ের উপরেই জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পরে।এরশাদ সাহেব মেয়ের এমন অবস্থা দেখে দিশেহারা হয়ে গিয়েছেন।জয়কে টেনে তুলে রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে,

-‘ আবার কেন এসেছিস চলে যা এখান থেকে।নিজের ভালো চাইলে চলে যা।নাহলে তোকে এক্ষুনি আমি পুলিশে দিবো চলে যা।’

জয় উঠে দাড়ালো।সবার বাড়ির প্রতিটা মানুষের দিকে তাকিয়ে দেখলো।তারপর যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালো।সদর দরজার সামনে গিয়ে আবারও পিছনে ফিরে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,

-‘ ভালো করলি না তোরা কেউ এসব।পস্তাতে হবে তোদের বড্ড পস্তাতে হবে।মনে রাখিস আমার এই অপমানের হিসাব আমি সুদে আসলে উশুল করে নিবো।’

অর্থ রাগি চোখে তাকালো জয়ের দিকে।গার্ড্সদের উদ্দেশ্য করে বললো,

-‘ গার্ড্স কুকুরদের রাস্তায় মানায়।তাই এই কুকুরটাকেও রাস্তায় ফেলে আসো।’

গার্ড্সরা কথামতো তাই করলো।জয়কে নিয়ে চলে যেতেই।অর্থ রাবেয়া বেগমের দিকে এগিয়ে গেলো।গলার স্বর নরম করে বললো,

-‘ আন্টি উনাকে আমার কাছে দিন।রুমে দিয়ে আসি।উনার উপর অনেক ধকল গিয়েছে।উনার রেস্ট দরকার।’

রাবেয়া বেগম মাথা নাড়ালেন।অর্থ এগিয়ে এসে প্রাহিকে কোলে তুলে নিলো।সাথে সাথে সারাশরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেলো।শিরশির করে উঠলো দেহটা।ভালোলাগার ছোয়ায় মাখোমাখো হলো।শীতলতায় হৃদয়টা ছেয়ে গেলো।মেয়েটার শরীরটা কি নরম! কি খায় এই মেয়ে তুলোটুলো খায় না-কি?নাহলে এমন নরম কেন?প্রাহির ছোট্ট দেহখানা যেন অর্থ’র প্রসস্থ বুকের মাঝে ঢুকে যাচ্ছে।অর্থ প্রাহির মুখের দিকে তাকালো।কি স্নিগ্ধ মায়াবি মুখখানা। কান্নার কারনে চোখের কাজলগুলো লেপ্টে আছে এতে যেন চেহারাটায় মায়া আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।অর্থ দৃষ্টি সরালো। নিজেকে সংযত করলো।তারপর প্রাহিকে নিয়ে গেস্টরুমে সুইয়ে দিয়ে ডক্টরকে ফোন করে আসতে বললো।আবারও একপলক প্রাহির দিকে একপলক তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। এখন ওকে জানতে হবে কেন হেমন্ত ওই ছেলেটাকে মারলো।হেমন্ত এখন রুমবন্দি করে আছে এখন আর ওকে পাবে না অর্থ।এখন উপায় অর্থ’র আরেকটা বেষ্টফ্রেন্ড।ওর থেকেই জানতে হবে সব।তাই অর্থ খুজতে চলে গেলো ওকে।

#চলবে__________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here