একথোকা কৃষ্ণজোড়া ও তুমি পর্ব -৯+১০

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৯
‘ইশি তুমি কি সেদিন কিছুই দেখো নি?মানে তুমিও তো ছিলে গাড়িতে তাইনা?তাহলে তুমি আগে থেকেই কি কোন আন্দাজ করতে পারো নি,বা এমন কোনকিছু মনে হয়নি যে তোমাদের আগে থেকেই কেই ফলো করছে?’ অর্থ’র প্রশ্নে ইশি না বোধক মাথা নাড়ালো।আস্তে করে বলে, ‘ আসলে ভাইয়া গাড়িতে উঠে তো আর কেউ পিছন দিকে তাকিয়ে থাকে না,তাইনা?আমার ক্ষেত্রেও তাই।তবে প্রাহি’রা যখন আমাকে আমার বাসায় ড্রোপ করে দিয়ে চলে আসছিলো।আমি ওদের গাড়ির পিছনে আমি একটা ট্রাক দেখেছিলাম।আমাদের বাড়ির রাস্তা অনেক সরু।ওখান দিয়ে ট্রাক যাওয়া আসা করে না। করলেও যদি আমাদের এলাকায় কেউ দরকারি জিনিসপত্র আনে তখন আসে।তবে ওইসময় এতো রাতে সেখানে ট্রাক আসা একটা সন্দেহের মধ্যে পড়ে।এটা আমার ব্যর্থতা যে ভাইয়া আমার মাথায় একটুও খেয়াল আসেনি যে ওই ট্রাকটাই ওদের গাড়ি এক্সিডেন্ট করাতে পারে।’

অর্থ দীর্ঘশ্বাস ফেললো।ইশি বললো, ‘ ভাইয়া আমি একটু প্রাহিকে দেখি আসি।’

অর্থ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।তারপর আরাফকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ ওই ট্রাক ড্রাইভারটাকে যে করেই হোক ধরতে হবে।কোন খোঁজ পেয়েছিস ওই লোকের?’

আরাফ ব্যর্থ শ্বাস ফেললো।হতাশ কন্ঠে বলে, ‘ অনেক চেষ্টা করছি খোঁজার কিন্তু পাচ্ছি না। ওই জয়েরও কোন খোঁজ নেই।আমার মনে হয় দুটোই গা ঢাকা দিয়েছে একসাথে।নাহ এইভাবে হবে না।আমাদের আরো করাভাবে আমাদের লোকদের কাজে লাগাতে হবে।’

অর্থ রাগি কন্ঠে বলে, ‘ ঘোড়ার ঘাস কাটছে নাকি ওরা।দু’দিন যাবত খুজে চলেছে কিন্তু কোন ইনফোর্ম আমাদের জানাতে পারছে না।ড্যাম ইট!’

রাগে চেয়ারে জোড়ে একটা দেয়ালে ঘুশি মারলো অর্থ। আরাফ অর্থকে রেগে যেতে দেখে বললো, ‘ রাগিস না প্লিজ।আমরা জলদি খুজে পাবো ওদের।পুলিশও তো তাদের কাজ করছে। জলদি ওই কু’কুরের বাচ্চাদের ধরতে পারবো আমরা।’

‘হুম তাই কর।যতো দ্রুতভাবে পারিস।’ অর্থ’র কথায় আরাফ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।তারপর চলে গেলো।অর্থ তাকালো কেভিনের কাচের দরজার দিকে সেখানে দেখা যাচ্ছে প্রাহি চুপচাপ বসে আছে।আর ইশি এবং হেমন্ত ওকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে।আজ দুদিন হয়ে গিয়েছে সেই ঘটনার।সেদিন যখন প্রাহির জ্ঞান ফিরে আসে মেয়েটা সেদিন থেকে একটা কথা অব্দি বলেনি কারো সাথে।চুপচাপ বসে থাকে নিস্তেজ মানুষদের মতো।মনে হয় মেয়েটা বেঁচে তো আছে কিন্তু ওর ভীতরে কোন রূহ নেই।কেমন নিষ্প্রান হয়ে থাকে সবসময়।প্রায় আধাঘন্টা চেষ্টার পরেও যখন প্রাহিকে কিছুই খাওয়াতে পারলো না হেমন্ত তখন কেবিন থেকে বের হয়ে আসলো।ওর সহ্য হচ্ছে না প্রাহির এই অবস্থা দেখে।হেমন্ত বাহিরে আসতেই অর্থ বললো, ‘ কিছুই খায়নি?’

হেমন্ত ছলছল চোখে ভাইয়ের দিকে তাকালো।ধরা গলায় বলে, ‘ এভাবে আর কতোদিন চলবে ভাই?ওকে এই অবস্থায় দেখতে যে আমার একটুও ভালো লাগে না।কিছু খায়নি দুদিন যাবত।শুধু স্যালাইন চলছে ক্যানালার মাধ্যমে।এইভাবে তো ও বেশিদিন বাঁচবে না ও।মরে যাবে ও।’

অর্থ বললো, ‘ ওকে কাঁদাতে হবে হেমন্ত।এইভাবে কষ্ট নিজের মনের মাঝে রেখে গুমড়ে গুমড়ে মারা যাবে।ওকে মেনে নেওয়া শিখাতে হবে।সত্যিটা মেনে নিতে হবে।তুই চিন্তা করিস না। আমি যাচ্ছি ভীতরে।দেখি কিছু করতে পারি কিনা!’

হেমন্ত চোখ মুছে সম্মতি জানালো।অর্থ প্রাহির কেবিনে গেলো।ইশি ইশারা করলো চলে যেতে।তাই ইশি চলে গেলো।অর্থ আস্তে করে প্রাহির পায়ের কাছে বসলো।মেয়েটা এই দুদিনেই কেমন শুকিয়ে গেছে।চোখের নিচে কালি পরেছে।চেহারার লাবন্যতা যেন হারিয়েই গিয়েছে।মাথায় ব্যান্ডেজ হাতে ক্যানোলা লাগানো। বামপা’টা ব্যান্ডেজ করা।প্রাহিকে এই অবস্থায় দেখে অর্থ’র ঠিক কতোটা কষ্ট হচ্ছে তা বলে বুঝাতে পারবে নাহ।ভীতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে ওর।অর্থ আরেকটু এগিয়ে বসলো প্রাহির কাছে।শান্ত কন্ঠে বলে, ‘ কেমন আছো প্রাহি?’

প্রাহির কোন জবাব নেই।অর্থ আবারও বলে, ‘ এইভাবে আর কতোদিন মৌনতা পালন করবেন প্রাহি?এইভাবে চললে তো আপনি মরে যাবেন?আপনি মারা গেলে আপনার মায়ের কি হবে সেই কথা একবারো চিন্তা করেছেন আপনি?আপনার বাবা আর নেই। আপনি তাদের একমাত্র সন্তান।এখন আপনাকেই সবার দায়িত্ব নিতে হবে।আপনার মা’কে বাঁচাতে হবে। আপনার বাবা কি আপনার এই অবস্থা দেখে খুব খুশি হচ্ছেন আপনি মনে করছেন? না একদম ভুল ভাবছেন আপনি।আপনাকে এই অবস্থায় দেখে তিনি মরেও শান্তি পাচ্ছেন নাহ।এভাবে হার মেনে নিলেন?এইভাবে চলবে কিভাবে প্রাহি?আপনাকে যে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর সাথে লড়তে হবে।আপনার বাবার হত্যাকারিকে খুঁজে বের করতে হবে।তাকে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে।আপনার মায়ের এই অবস্থার পিছনে যে দায়ি তাকে তার সর্বোচ্চ শাস্তি দিবেন আপনি।কিন্তু আপনার মাঝে সেরকম কোন মনোবলই আমি দেখছি না।কেমন সন্তান আপনি?আপনার বাবা মায়ের এই অবস্থার জন্যে তাকে শাস্তি না দিয়ে আপনি নিজেকে নিজে শাস্তি দিয়ে গুমড়ে মরছেন এই হাসপাতালে।এইভাবে হবে না প্রাহি আপনাকে শক্ত হতে হবে।আপনার মায়ের জন্যে আপনাকে বাঁচতে হবে।নিজের মায়ের জন্যে আজীবন লড়তে হবে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর বিরুদ্ধে।’

কথাগুলো বলে অর্থ তাকালো প্রাহির দিকে প্রাহির চোখজোড়া ছলছল করছে।অর্থ এগিয়ে গিয়ে প্রাহির বাহু ধরে ওর মুখোমুখি হলো।গম্ভীর কন্ঠে বললো, ‘ কাদুঁন প্রাহি।আজ প্রানভরে কাঁদুন।আজই যেন আপনার শেষ কান্না হয়।নিজের সবটুকু কষ্ট উজাড় করে কেঁদে ভাসিয়ে দিন।যেন আজকের পর থেকে আর কেউ আপনাকে কাঁদাতে না পারে।নিজেকে এতোটা পাথর মনে রূপান্তর করবেন।কেঁদে নিন প্রাহি।কাঁদুন আপনার বাবা আর নেই প্রাহি।আপনার মা হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন তাদের জন্যে আজ শেষ কান্না কেঁদে নিন।’

অর্থ’র কথা শেষ হতে দেরি।প্রাহির হাইমাউ করে কাঁদতে দেরি নেই।মেয়েটা পাগলের মতো কান্না করছে।অর্থ হ্যাচঁকা টানে প্রাহিকে নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরলো।কাঁদার জন্যে কারো ভরসা যোগ্য প্রসস্থ বুকটা পেয়ে যেন আরো কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো প্রাহি।নিজের সবটুকু কষ্ট আজ কেঁদেকেটে অর্থ’র বুক ভাসিয়ে দিবে।প্রাহি কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘ আমার বাবা আর নেই।আমার বাবা।আমি এরপর থেকে কার কাছে নালিশ দিবো।কার কাছে হেমন্ত’র নামে বিচার দিবো।কে আমাকে তারপর আদুরেভাবে বুকে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে।আমার আম্মুও তো আর কোনদিন আমাকে বকা দিবে না।কেন এমন হলো আমার সাথে?কি এমন পাপ করেছি আমি?যে আমি সব হারিয়ে শূন্যের কোঠায়।আমার বাবাকে মেরে ফেললো ওরা।আমার ভরসার জায়গাটুকু ওরা কেরে নিলো আমার কাছ থেকে।আমাকেও কেন মেরে ফেললো না ওরা।আমাকে কেন বাঁচিয়ে রাখলো।আমি আমার বাবার কাছে যাবো।আমার বাবাকে দেখবো।বাবার বুকে মাথা রাখবো।নিয়ে চলুন আমার বাবার কাছে।বাবা যাবো আমি।’

অর্থ’র চোখজোড়া লাল হয়ে আসছে।কন্ঠনালিতে কান্না আটকে রাখার জন্যে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।এই মেয়েটার বুকফাটা আজাহারি শুনে ওর নিজের কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। অর্থ প্রাহির মাথা হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে, ‘ হুস! কাঁদে না আর কাঁদেনা।নিয়ে যাবো আঙ্কেলের কাছে। একটু সুস্থ্য হয়ে উঠুন আপনি!’

প্রাহি উঠে বসলো।চিৎকার করে বলে, ‘ নাহ! আমি এখনি যাবো বাবার কাছে নিয়ে চলুন বাবার কাছে।আমি বাবার কাছে যাবো।প্লিজ নিয়ে চলুন।আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসছে।আমি পাগল হয়ে যাবো।’

‘ ওকে ওকে আপনি হাইপার হবেন নাহ।আমি এখনি নিয়ে যাচ্ছি।’

অর্থ কেবিনের বাহিরে এসে দেখলো ইশি আর হেমন্ত’র চোখে পানি।অর্থ ওদের উদ্দেশ্যে বলে, ‘ কাঁদিস না প্লিজ তোরা।এখন গাড়ি বাহির কর।প্রাহি পাগলামি করছেন অনেক।উনাকে এখন আঙ্কেলের কবরের কাছে না নিয়ে গেলে হিতে বিপরীত হবে।উনার মাথায় আঘাত পেয়েছেন তাই উনাকে এতোটা হাইপার হতে দেওয়া ঠিক হবে না।’

হেমন্ত বলে, ‘ আচ্ছা ভাই।আমি গাড়ি বাহির করছি তুমি ওকে নিয়ে আসো। ইশি চল।’

ওরা যেতেই অর্থ আবারও প্রাহির কাছে আসলো।কোন কিছু না ভেবেই হুট করে কান্নারত প্রাহিকে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলো।প্রাহি ভয় পেলেও পরক্ষনে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো অর্থ’র দিকে। দুনিয়াতে এখন প্রাহি বেঁচে থাকবে চারজন মানুষের আশায় এখন প্রথম ওর মা,দ্বিতীয় অর্থ,তৃতীয় হেমন্ত আর চতুর্থ ইশি।অর্থ ওকে ভালোবাসুক আর না বাসুক প্রাহি অর্থকে চিরজীবন ভালোবেসে যাবে। প্রাহি অর্থ’র গলা জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে মাথা রেখে ফুঁফিয়ে উঠলো। প্রাহির গরম নিঃশ্বাসগুলো অর্থ’র গলায় এসে লাগছে।অদ্ভূত ভালোলাগায় মনটা ছেঁয়ে গেলো অর্থ’র।প্রাহিকে আরেকটু ভালোভাবে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।মেয়েটাকে এইভাবেই আগলে রাখতে চায় নিজের বাহুডোরে অর্থ।কেন চায়?তা জানে না অর্থ।শুধু ও এটাই চায় প্রাহি ওর কাছে থাকুক। ওর সাথে থাকুক।আর ও প্রাহিকে নিজের সবটা দিয়ে আগলে রাখবে।কখনও প্রাহির হাত ছাড়বে না এটা মনে মনে নিজের কাছেই নিজে ওয়াদা করলো অর্থ।যেকোন পরিস্থিতিতে প্রাহি ঢাল হয়ে থাকবে ও সারাজীবন।কোন দুঃখ কষ্ট যেন প্রাহিকে ছুতে না পারে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে ও।
#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১০
‘ এইভাবে একটা যুবতি মেয়েকে নিজেদের বাড়িতে রাখার কোন মানে আছে ভাবি?বাড়িতে দু দুটো জোয়ান ছেলে আছে আপনার। বলা তো যায়না ছেলে মানুষের মন কখন ভুলভাল কিছু করে ফেলে।আর সেইভাবেও অন্যের মেয়েকে আর কতোদিন নিজের কাছে রাখবেন?মেয়েটার আত্মীয়স্বজন থাকলে তাদের কাছে দিয়ে আসুন।’

আজ এরশাদ সাহেবের জন্যে মিলাদ রেখেছেন শিকদার বাড়িতে।দশদিন কেটে গিয়েছে সেই ঘটনার পরে।আর এই মিলাদেই অর্থ’দের এলাকার অনেক মানুষদের নিমন্ত্রন করা হয়েছে।সেইখান থেকেই একজন মহিলা কথাগুলো বললো।প্রাহি হিয়ার সাথে কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো।এতিম খানায় তোবারক পাঠাবে সেই বিষয়ে।কিন্তু আচমকা এমন কথা শুনে ওর কথা থেমে যায়।বাকরুদ্ধ হয়ে যায় প্রাহি।সত্যি তো এইভাবে তো কোনদিন ভাবিনি প্রাহি।দশদিন যাবত এই বাড়ির মানুষদের উপর নির্ভর করে চলছে প্রাহি।কিন্তু এইভাবে আর কতোদিন?ঠিক কতোদিন তারা ও এইভাবে এই মানুষগুলোর কাঁধে বোঝা হয়ে থাকবে?নাহ,এইভাবে আর চলবে না।প্রাহি এখন অনেকটাই সুস্থ্য। শুধু মাথার আঘাত গুরুতর হওয়ায় একটু আধটু ব্যাথা হয়।এ আর তেমন কিছু না।প্রাহি ভাবলো আজ মিলাদ শেষ হলেই নিজের বাড়ি চলে যাবে প্রাহি।অনেক তো হলো আর কতো করবেন তারা।তাছাড়া নিজের জীবনের আগামী পথটুকু তো ওর একাই পাড়ি দিতে হবে তাই নাহ?তাহলে এখন থেকেই নাহয় সেটা শুরু হোক।

এদিকে মহিলাটার সেই তিক্ত কথাগুলো শুনে রায়হানা বলেন, ‘ আসলে কি ভাবি জানেন?মেয়েটার মা ছাড়া আর কেউ নেই।মা তো থেকেও নেই।তাই মেয়েটা সুস্থ্য না হওয়া অব্দি আর নিজের আগামি পথচলার জন্যে কিছু একটা না করা পর্যন্ত ওকে আমি এখানেই রাখবো।আর আমরা এতো নির্দয় আর পাষাণ হৃদয়ের মানুষ না ভাবি যে মানুষের বিপদের সময় মুখ ফিরিয়ে নিবো।আর আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদেরকেও সেই শিক্ষা দেইনি।যে অল্প কিছু হলেই ওরা ভুল কাজে লিপ্ট হবে।আমরা ওদের তেমনভাবেই মানুষ করেছি যাতে আমাদের সন্তানদের নিয়ে কেউ বিন্দুমাত্র দোষ না বাহির করতে পারে।আর দেখুন আমরা সফল।আমাদের ছেলে মেয়ে তিনটাই মাশা-আল্লাহ। সবদিক থেকে পার্ফেক্ট।’

মহিলাটার মুখ একটুখানি হয়ে গেলো কথাগুলো শুনে কোনরকম তালবাহানা করে ওখান থেকে উঠে চলে গেলো।রায়হানা বেগম তাকালেন প্রাহির দিকে। তারপর প্রাহির কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, ‘ একদম মন খারাপ করবে না এইসব মহিলাদের কথা শুনে।এদের কাজই হলো কুটনামি করা।তুমি নিশ্চিন্তে এখানে থাকবে।আমরা আছি তো তোমার সাথে।’

প্রাহি মলিন হেসে মাথা নাড়ালো।বাহির থেকে হেমন্ত’র ডাক শোনা যাচ্ছে।প্রাহি আর হিয়াকে ডাকছে ও।রায়হানা বলেন, ‘ যাও হেমন্ত ডাকছে তোমাদের।সাবধানে যাবে।’

প্রাহি আর ইশি চলে গেলো বাহিরে।ওরা এখন এতিমখানায় যাবে। এদিকে নিজের লোকদের ভালোভাবে কাজ করাচ্ছিলো অর্থ।গাড়িতে ভালোভাবে যেন রাখা হয় সেদিকে খেয়াল রাখছিলো। কাজের মাঝে হঠাৎ ওর চোখ যায় সদর দরজার দিকে।সাথে সাথে ওর দৃষ্টি থেমে যায় একজনের উপর।।রক্ত চলাচল দ্রুতগামীতে ছুটতে থাকে।এখনি বোধহয় ও হার্ট এট্যাক করবে।ওর সামনে যে একটা সাদাপরি এগিয়ে আসছে।সাদা ফোতুয়া,সাদা স্কার্ট,সাথে মাথায় সাদা উড়না দেওয়া।মুখমন্ডলে কোন প্রসাধনীর ছাপ নেই।একদম স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে মেয়েটাকে।আর কতোভাবে এই মেয়েটা অর্থকে ঘায়েল করবে?এই দশদিনে প্রতিনিয়ত এই মেয়ের রূপে নিজেকে ডুবিয়েছে অর্থ।এই মেয়ের মায়ের সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছে।সেই সমুদ্রের কোন কূলকিনারা নেই।হেমন্ত’র ডাকে হুশ ফিরে অর্থ’র, ‘ ভাইয়া?যাবে নাহ?সেই কখন থেকে ডাকছি।’

অর্থ কোনরকম বলে, ‘ হ্যা খাবার গুলো পিক-আপে তোলা শেষ।এইবার আমাদের রওনা হওয়া উচিত।’

অর্থ গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো।পাশে বসেছে হেমন্ত।পিছনে হিয়া আর প্রাহি। প্রাহি রিনরিনে কন্ঠে হেমন্ত’র উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়লো, ‘ ইশি কোথায় রে হেমন্ত?’

হেমন্ত সিটবেল্ট বাধঁতে বাধঁতে বলে, ‘ ও সোজা এতিমখানায় এসে পৌছাবে আমাদের চলে যেতে বলেছে।’

প্রাহি আর কথা বললো না চুপ করে রইলো।অর্থ খুব সাবধানে লুকিংগ্লাসটা প্রাহির দিক করে দিলো।তারপর গম্ভীর গলায় বললো, ‘ আপনি ঠিক আছেন প্রাহি?’

আকস্মিক অর্থ’র এমন কথায় ধড়ফড়িয়ে উঠে প্রাহি।লোকটার কন্ঠস্বর যতোবার শুনে ওর অবস্থা ঠিক এমনি হয়।লোকটার গলার স্বরেও যেন মাদকতা আছে।মুহূর্তেই কিভাবে যেন প্রাহির ভীতর শুদ্ধ কাঁপিয়ে দেয়।প্রাহি জোড়ে শ্বাস ফেলে নিজের স্বাভাবিক করলো।অতঃপর বললো, ‘ হুম! আমি ঠিক আছি।’

‘ বসতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো?আই মিন পায়ে বা মাথায় ব্যাথা লাগছে?’

প্রাহি অবাক হলো ভীষন।লোকটাকে এমন অস্থির দেখাচ্ছে কেন? প্রাহি অবাক কন্ঠেই বলে, ‘ আমি ঠিক আছি।আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না।’

অর্থ একটা সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে গাড়ি স্টার্ট দিলো।সারাদিনের কাজের ঝামেলায় মায়াময়ীর সাথে দু-দন্ড কথা বলতে পারিনি ও।মেয়েটার সাথে কথা না বলতে পেরে কেমন যেন অস্থির লাগছিলো।এখন কথা হওয়ায় একটু ভালো লাগছে। এই ক’দিনে মেয়েটা ওর অভ্যাসে পরিনত হয়েছে একপলক একে না দেখতে পারলে অর্থ’র কেমন যেন দম আটকে আসে।এদিকে অর্থ’র দিকে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে হেমন্ত।বুঝার চেষ্টা করছে ওর ভাইয়ের মতিগতি।গত দশদিন যাবত ভাইকে অন্য একরূপে আবিষ্কার করেছে হেমন্ত।যেই অর্থ মেয়েদের দেখতেই পারেনা।মেয়েরা কাছে আসলেই রেগে জোয়ালামুখি হয়ে যায়।আজ কিনা সেই ভাই সেধেসেধে একটা মেয়ের সাথে কথা বলে, হুট-হাট মেয়েটাকে কোলে তুলে নেয়।মেয়েটার ব্যাথায় অস্থির হয়ে উঠে।তবে কি ও যা ভাবছে সেটা কি সত্যি হতে চলেছে?অবশেষে কি ওর ভাই প্রেমে পড়েছে?হ্যা, প্রেমেই তো পরেছে।হেমন্ত’রও তো এমন লাগে ইশির জন্যে।ইশির কথা মনে পড়তেই আনমনে হাসে হেমন্ত।মেয়েটা যে কখন আসবে আজ সারাদিনে কাজের চাপে একটু কথা হয়নি ইশির সাথে ওর।এদিকে গাড়ি ড্রাইভ করার ফাঁকে ফাঁকে বার বার লুকিংগ্লাসে প্রাহির দিকে তাকাচ্ছে অর্থ।প্রাহি জানালার সাথে হেলান দিয়ে বসে বাহিরে তাকিয়ে আছে।দমকা হাওয়ার কারনে ওর ঘোমটা অনেক আগেই পরে গিয়েছে।সামনের ছোট ছোট চুলগুলো সারা চোখেমুখে বিচড়ন করছে ওর।অর্থ’র ইচ্ছে করছে নিজ হাতে ওই চুলগুলো প্রাহির কানের পিঠে গুজে দিতে।কিন্তু আপাততো সেটা সম্ভব না।মনে মনে নিজেকে শান্তনা দিয়ে নিজের ইচ্ছেটাকে দমন করে নিলো অর্থ।আবারও প্রাহিকে দেখায় মত্ত হলো ও।

_____________
রেডি হয়ে সিড়ি দিয়ে নামছিলো ইশি।হঠাৎ ওর মামির কর্কশ কন্ঠে থেমে যায় ও।

‘ আজ শুক্রবার তোর তো ভার্সিটিও নেই।তাহলে তুই কোথায় যাচ্ছিস?ঘরে কতো কাজ পরে আছে দেখছিস না?’

ইশি বিরক্ত হলো।রাগ হলো ওর প্রচুর।শুভ কাজে রওনা হয়েছিলো কিন্তু শুরুতেই এই অশুভ মহিলার মুখটা ওর দেখতে হলো।নিজের রাগটাকে দমন করে নিয়ে ইশি বলে, ‘ এরশাদ আঙ্কেলের জন্যে আজ মিলাদ রাখা হয়েছে।এতিমখানায় তোবারক্ত দেওয়া হবে। সেইখানেই যাচ্ছি আমি।আর ঘরের কাজ?সেটা আমার কাজ না।ঘরে কাজের লোক আছে ওইগুলা তারা করবে।’

ইশির মামি যেন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন ইশির কথা শুনে।রাগে কটমট করে বলে, ‘ মুখে মুখে কথা শিখেছিস।তোকে কি এখানে বসে বসে খাওয়ার জন্যে রেখেছি?এখানে আমরা খেটে মরবো আর তুই বাহিরে ঢেং ঢেং করে ঘুরে বেড়াবি?’

ইশি রাগী চোখে তাকালো ওর মামির দিকে।কন্ঠে তেজ ঢেলে দিয়ে বলে, ‘ আমি তোমাদের উপর বসে বসে খাইনা মামি।আমার বাবা কিন্তু মাসে মাসে তোমাদের একাউন্টে আমার জন্যে মোটা অংকের টাকা পাঠান।সেইগুলো দিয়ে তো ভালোই ফুর্তি উল্লাস করো।ওইগুলো আমারই টাকা।আমার টাকা তোমরা খরচ করো।আর আমি এখানে দুবেলা দুমুঠো ভাত খাই।হিসেব তো এতেও বরাবর হয়না মামি।তোমাদের খাবার খরচ থেকেও আমার টাকা তোমরা তার থেকে দ্বিগুন নেও।তাহলে আমি বসে বসে তোমাদের ঘারের উপর কিভাবে খাই মামি? আর একটা কথাও শুনতে চাইনা আমি।আসছি আমি।’

ইশি চলে গেলো।আর ওর দুই মামি গালাগাল করতে শুরু করলেন ওকে।কিন্তু ইশি ওসব কানে নেয়নি।সে চললো নিজের গন্তব্যে।

____________________

সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।ড্রয়িংরুমে বসে আছে সবাই।এরশাদ সাহেবের দোয়া মাফফিরাতের আয়োজন ভালোভাবে হয়েছে।এখন সবাই বিশ্রাম নিচ্ছে।বাকিরা নিজেদের মতো কথা বললেও অর্থ গম্ভীর মুখে বসে চুপচাপ ল্যাপটপে নিজের কাজ করছে।আর কতোক্ষন পর পর প্রাহির রুমের দিকে তাকাচ্ছে।মেয়েটা এসে বললো ও ফ্রেস হতে যাবে।সেইযে গেলো আর আশার খবর নেই।অস্থির লাগছে অর্থ’র।কিছু হলো নাতো আবার মেয়েটার?পরেটরে ব্যাথা পায়নি তো আবার?আচ্ছা অর্থ কি একবার উঠে দেখে আসবে?পরক্ষনে সবার দিকে তাকিয়ে নিজের ইচ্ছা দমন করলো অর্থ।

এরই মাঝে হঠাৎ ল্যাগেজ হাতে প্রাহিকে সিড়ি নামতে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেলো।হেমন্ত দাঁড়িয়ে গেলো।অবাক হয়ে বলে, ‘ প্রাহি?তুই এইভাবে?আর ল্যাগেজ হাতে কেন তোর?’

প্রাহি একপলক সবার দিকে তাকালো। ধীর কন্ঠে বলে, ‘ আমি চলে যাচ্ছি হেমন্ত নিজের বাড়িতে।’

হিয়াজ সিকদার নরম কন্ঠে বলেন, ‘ কেন মা?হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেন?এখানে থাকতে কি তোমার কোন অসুবিধা হচ্ছে?আমাদের কারো ব্যবহারে কি তুমি কষ্ট পেয়েছো মা?’

‘ না, না আঙ্কেল এইভাবে বলবেন না।এইভাবে বললে আমি নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে যাবো।আপনারা তো আমার জন্যে যথেষ্ট করেছেন।কিন্তু একদিন না একদিন তো আমাকে আমার পথ একাই চলতে হবে তাই না আঙ্কেল? তাহলে সেটা আজ থেকেই শুরু করি!’

হেনা বেগম বলেন, ‘ কিন্তু তুমি তো এখনো অসুস্থ!’

প্রাহি মলিন হাসলো বললো, ‘ ও কিছুনা আন্টি আর দু তিনদিনেই ঠিক হয়ে যাবো আমি।’

রায়হানা বেগম এসে প্রাহির গালে হাত রাখলেন।মমতাময়ী কন্ঠে বলেন, ‘ এইভাবে চলে যাবে মা?আর কটা দিন থাকো মা।’

প্রাহি রায়হানা বেগমের হাত ধরলো।ধরা গলায় বলে, ‘ এইভাবে বলবেন না আন্টি।আমি আসবো তো আবার মাঝে মাঝে।’

প্রাহি এগিয়ে এসে হিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।হিয়া কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলে, ‘ আমি মিস করবো তোমায়!’

‘ আমি তোমায় খুব মিস করবো।’

প্রাহি এইবার হেমন্ত আর অর্থ’র দিকে তাকালো।দুজনেই রাগি চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।প্রাহি শুকনো ঢোক গিললো।আশ্চর্য এই দুইভাই এইভাবে তাকিয়ে আছে কেন?যেন ওকে কাচা গিলে খেয়ে ফেলবে।প্রাহি ভয়ে ভয়ে হেমন্তকে বললো, ‘ হেমন্ত পৌছিয়ে দিয়ে আসবি না আমাকে?’

হেমন্ত কিছু না বলে হনহন করে চলে গেলো।ইশি বললো, ‘ প্রাহি শোন আজ থেকে আমি তোর সাথেই থাকবো।মামারা রাজি হয়ে গিয়েছে।তাছাড়া ওই বাড়িতে আমারও থাকতে ভাল্লাগে না। তুই একা থাকবি।তাই ভাবলাম আজ থেকে আমিও তোর সাথে থাকবো।’

প্রাহি খুশি হয়ে ইশিকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর দুজনে সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।যাওয়ার আগে প্রাহি অর্থ’কে ফিসফিসিয়ে বলে গেছে, ‘ ধন্যবাদ।আমাকে সাহায্য করার জন্যে।আপনি না থাকলে আমি নিজেকে এতো সহজে সামলাতে পারতাম না।ভালো থাকবেন।আসি।’

অর্থ কিছুই বলেনি।শুধু দাঁতে দাঁত চিপে প্রাহির কথাগুলো হজম করে নিয়েছে।সে কি এই সামান্য ধন্যবাদ পাবার আশায় প্রাহির জন্যে এতো কিছু করেছে?উহুম না মোটেও না।এই মেয়েটাকে অর্থ’র চাই।খুব করে চায় ও।কেন চায় জানে না শুধু চায়।তবে আজ প্রাহি যেই দুঃসাহস দেখালো এর শাস্তি ওকে পেতে হবে।এতোদিন অর্থ’র শান্ত রূপটা ও দেখেছে।এইবার অর্থ’র রাগ আর পাগলামি দেখবে প্রাহি।

এদিকে প্রাহি যেতেই রায়হানা বেগম থপ করে সোফায় বসে পরলো।আহত কন্ঠে বলে, ‘ মেয়েটা বোধহয় ওই সায়মের মা’র কথাগুলো শুনেই চলে গিয়েছে।অনেক কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা।তাই তো এইভাবে চলে গেলো।’

মায়ের কথায় ভ্রু-কুচকে ফেললো অর্থ।গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, ‘ কে কি বলেছে আম্মু?কার কথায় প্রাহি চলে গেলেন?’

রায়হানা ছেলের দিকে তাকালেন।তারপর সকালের ঘটনা সব খুলে বললেন।সবটা শুনে সবাই আশ্চর্য। হিয়া রেগে বললো, ‘ উনার মেয়ে যে রাজমিস্ত্রী পোলার লগে ভাইগা গেছে তখন কি আমরা কিছু বলেছি ওই মহিলারে?ওই বেয়াদপ মহিলা এখানে আইসা কুটনামি মার্কা কথা কইতে আসছে।ইচ্ছে তো করছে এখনি গিয়ে চুলগুলো সব ছিড়ে দিয়ে আসি।’

আরাফ হিয়ার মুখে এমন কথা শুনে মুখ টিপে হাসলো।রেগে গেলে মেয়েটাকে কিউট লাগে।মনে মনে হাসলো আরাফ।

মায়ের কথা শুনে রাগে থরথর করে কাঁপছে অর্থ
পারলে এখুনি গিয়ে ওই মহিলার বাড়ি শুদ্ধ ও সেই মহিলাকে উড়িয়ে দিতো।।সবাই নিজেদের মতো কথা বলছে।কিন্তু অর্থ রাগে বোম হয়ে আধা ঘন্টা যাবত একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবছে।এরই মাঝে হেমন্ত প্রাহিদের পৌছে দিয়ে এসেছে।এসেই ধোপ করে সোফায় বসে রাগে ফোসফোস করছে।অর্থ হেমন্ত আসতেই সবার দিকে তাকালো।তারপর আকস্মিক অর্থ বললো, ‘ কাল তৈরি থেকো সবাই।আমি কালই যাবো প্রাহিদের বাড়িতে।সবাই কান খুলে শুনে রাখো প্রাহি হবে তোমাদের বাড়ির বড় পূত্রবধু।আমরা কাল গিয়ে আমাদের বাগদান সেরে আসবো।মা তুমি তো আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্যে পাগল হয়ে গিয়েছো।এখন প্রাহি নিজের পূত্রবধু হিসেবে গ্রহন করে নেও।আমি প্রাহিকেই বিয়ে করবো।’

কথাগুলো শেষ করে অর্থ হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।এদিকে সবাই হা কি বললো এটা অর্থ।অর্থ বিয়ে করবে প্রাহিকে?অতি আশ্চর্য বিষয়।এদিকে হেমন্ত অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো অর্থ’র কথা শুনে।এইবার খুশির চোটে এক চিৎকার দিয়ে ও তৎক্ষনাত সেইখানেই জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লো।

#চলবে__________
?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here