কিচিরমিচির পর্ব -০৬+৭

#গল্প_কিচিরমিচির
#লেখিকা_আদিয়া_মির্জা_সানা(জ্যোতি)
#ক্যাটাগেরি_রোম্যান্টিক

৬.

আবির আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসছে।আমি ঢোক গিলে কিছু বলতে যাবো তার আগে পর্বভাই দৌড়ে এসে আমাকে ঘাড়ে তুলে নেয়।আমি বিস্ময়ে নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছি।যখনই বুঝতে পারলাম হাত পা ছুঁড়া ছুঁড়ি করতে লাগলাম আর বললাম,

“আরে আরে পর্বভাই কি করছেন নামান আমাকে..”

পর্বভাই কোনো কথা না বলে সামনের দিকে হাটা দিলো কিছু দূর যেতে আবির এসে সামনে দাঁড়ায় আবিরকে দেখে পর্বভাই বিরক্তি নিয়ে চোখমুখ কুঁচকে বললো,

“দেখো আবার সামনে এসে হাজির মানে এর প্রাণে বাঁচার কোনো সখ নেই..এই সামনে থেকে সর..”

পর্বভাইয়ের কথায় আবির বাঁকা হেসে নাকের রক্ত মুছতে মুছতে বললো,

“আরে এপিসোড ব্রো তোমার তো দেখছি কোনো কমন সেন্স নেই মানে থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার হয়ে আমাদের মাঝে ঢুকে পরছো কেন ভাই?”

আবিরের কথায় পর্বভাই বাম হাত দিয়ে আবিরের পেটে আরও একটা ঘুষি মারে পর্বভাইয়ের ডান হাত আমার পায়ের থায় ধরে আছে আর আমি উপুর হয়ে পর্বভাইয়ের কাঁধ থেকে এদের মারামারি ঝগড়া ঝাটি দেখছি।পর্বভাই ঘুষি মারতেই আবির নাক মুখ কুঁচকে আবার মাটিতে বসে পরে।আবিরের দিকে তাকিয়ে পর্বভাই বলে,

“থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার কে সেটা একটু পর দেখা যাবে।ওয়েট এন্ড ওয়াচ…”

বলেই পর্বভাই আমাকে কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে গেল।আমি এক হাত বুকে গুঁজে অন্য হাত মুখে দিয়ে আছি।বিরক্ত নিয়ে বললাম,

“আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলেননা..”

পর্বভাই করিডর দিয়ে হাটতে হাটতেই বললো,

“কি বলতি তুই?যে, তুই ওকে সত্যি ভালোবাসিস?তাও আবার আমার সামনে আর আমি তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম তুই এটা ভাবলি কি করে…?”

আমি এবার একটু উঁচু স্বরেই বললাম,

“আরে ধূর ওকে ভালোবাসি বলতে যাবো কেন…?”

পর্বভাই হাটা থামিয়ে দিলেন তারপর আমাকে আস্তে নামিয়ে দিলেন।আমি শাড়ি ঠিকঠাক করছি তা দেখে পর্বভাই বললেন,

“তারমানে তুই ওকে ভালোবাসিস না? ”

আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,

“ধূর বাবা এককথা বার বার বলছো আমি কি জীবনেও বলছি যে ঐ লুচ্চা আবিরকে আমি ভালোবাসি..”

“এসব কি বলছো ইশু বেবি তুমিই তো আমাকে কিস করতে বললে তোমার নাকি সব রিলেশন কিস দিয়ে শুরু হয় তাই তো আমিও আর আপত্তি করলাম না”

হঠাৎ আবিরের কন্ঠ স্বর শুনে পর্বভাই আর আমি দুইজনই পিছনে ঘুরে আবিরের দিকে তাকালাম আবির একদম নিষ্পাপ মুখ করে কথা গুলো বললো।আমি কড়া গলায় বললাম,

“স্টপ ইট! আবির তোমার এসব তামাশা আমি অনেকক্ষণ থেকে সহ্য করছি।নাও স্টপ ইট!বাজে কথা বলার জায়গা পাওনা এই কথা তো তুমি বলছো আমি কখন বলছি এসব কথা…”

আবির আমাকে পাত্তা না দিয়ে পর্বভাইয়ের দিকে এগিয়ে গেল। পর্বভাই শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে। আবির আবারও নিষ্পাপ কণ্ঠে বললো,

“বিলিভ মি এপিসোড ব্রো ইশু বেবিই আমাকে বলেছে যে ওর সব রিলেশন নাকি কিস দিয়ে শুরু হয়…”

পর্বভাই আমার দিকে তাকালো একবার তারপর কঠিন ও স্থির কন্ঠে বললো,

“বিশ্বাস আর তোকে? ইউ নো হোয়াট ইউ আর এ সাইকো ম্যান…. ”

আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে দুজনের শান্ত যুদ্ধ দেখছি আবির রক্ত চোখ করে তাকালো পর্বভাইয়ের দিকে হাত দুটো মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো।ফোস ফোস করতে করতে আচমকাই পর্বভাইয়ের মুখে ঘুষি মারলো।পর্বভাই অপ্রতিভ থাকায় কয়েক পা পিছিয়ে গেলেন। আমি মৃদু চিৎকার দিয়ে বললাম,

“পর্বভাই…”

দৌড়ে পর্বভাইয়ের কাছে গেলাম।পর্বভাই অবাক চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে আবিরকে কখনো এতো ভয়ংকর রূপে দেখিনি আমি বা পর্বভাই কেউই।আবির হুংকার দিয়ে বললো,

“খুন করে ফেলবো তোকে আমাকে পাগল বললে।আমি পাগল না বুঝেছিস? আমার যা চাই তা চাই তাতে আমাকে পাগল মনে হলে আমার কিছু করার নেই….আমার ইশুকে চাই মানে চাই… ব্যাস! ”

আমি আবিরের এমন অস্বাভাবিক আচারণ দেখে ভয়ে কাঁপছি। পর্বভাই আমাকে এক হাতে জরিয়ে নিলো। বাড়ির সবাই আবিরের চিৎকার শুনে উপরে চলে এলো।আবিরের মা আবিরকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।আমি আর পর্বভাই নিচে নেমে এলাম।আবিরকে ওর মা একটা রুমে নিয়ে গেল।আবির যেন কি বিড়বিড় করতে করতে গেল।

পর্বভাই মুখে হাত দিয়ে বসে আছে আব্বু বাইরে বিয়ের প্যান্ডেল থেকে ভিতরে এসে সবকিছু শুনে পর্বভাইয়ের পাশে বসলো।আমি পর্বভাইয়ের সামনে একটা সিঙ্গেল সোফায় বসে আছি।পর্বভাই আব্বুকে বসতে দেখে মুখ থেকে হাত সরিয়ে আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললো,

“চাচ্চু তুমি চলে আসলে নাফিসা একা একা আছে ওর হয়তো নার্ভাস লাগবে।”

আব্বু পর্বভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বললো,

“তোর চাচিমা আছে ওর সাথে…ইশশ ঠোঁটের কাছে দেখি একটু কেটে গিয়েছে…”

পর্বভাই আব্বুর কথা শুনে ঠোঁটে হাত দিলো তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

“ইশুপাখি তুই একটু ভিতরে যা তো চাচ্চুর সাথে আমার কিছু কথা আছে….”

আমি একটু উশখুশ করতে করতে গেলাম মূলত আমার যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই।কি কথা আমিও শুনতে চাই কিন্তু পর্বভাই যখন বলছে তখন তো যেতেই হবে।তাই একটু ধীর পায়ে হাঁটছি তা দেখে পর্বভাই উঁচু স্বরে বললো,

“কিরে তাড়াতাড়ি যা পায়ে মেহেদী লাগিয়েছিস এতো ধীরে যাচ্ছিস কেন..? আশ্চর্য!

কথাটা আমার বেশ ইগোতে লাগলো আমি বিরবির করতে করতে জোর পায়ে হাঁটলাম আসতে আসতে শুনতে পেলাম পর্বভাই বলছে,

” চাচ্চু আমি আর দেরি করতে চাই না এতো দিন অপেক্ষা করেছি কারণ ইশুপাখি ছোট ছিল।এখন ইশুপাখি যথেষ্ট বড় তাই আমি কাজটা যত দ্রুত সম্ভব সেরে ফেলতে চাই…”

আসতে আসতে এটুকুই কানে পৌঁছালো আমার।যদিও কথাটা শোনার ইচ্ছে ছিল আমার তবে পর্বভাইয়ের হাতে ধরা পরলে মান সম্মান আর থাকবেন না। তাই আর দাঁড়ানোর সাহস করলাম না।

নাফিসা আপুর ঘরটা নিচে।আমি আপুর ঘরে বিছানার উপর বসে বসে পা দোলাচ্ছি আর ভাবছি কি নিয়ে কথা বলছে পর্বভাই আর আব্বু ঠিক তখনই রুমে পর্বভাইয়ের খালাতো বোন এলমি এলো আর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বললো,

“আরে ইশু সুখবর আছে সুখবর আছে আরে ইশু..”

আমি কানে হাত দিয়ে বললাম,

“উফ্ এলমি না চেঁচিয়ে বলবে কি হয়েছে?”

এলমি কয়েকটা শ্বাস নিয়ে বললো,

“আরে পর্বভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে…..”

আমি আমার কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছি না মানে পর্বভাইয়ের বিয়ে। মানে শেষ পর্যন্ত চিপকু খারুসটা আমার পিছু ছাড়বে।আমি খুশিতে চোখ বন্ধ করে একটা চিৎকার দিলাম,

“ইয়ে……আরে এলমি কি সংবাদ শুনালে আমার জন্মে আমি এতো বড় সুসংবাদ শুনিনি…ওরে আল্লাহ্ অজ্ঞান হয়ে যাবো আমি… ওয়েট ওয়েট দাঁড়াও দাঁড়াও মিষ্টি নিয়ে আসি…”

আমি এক দৌড়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে আবার ফিরছিলাম ফেরার পথে পর্বভাই সামনে এসে দাঁড়ালো আমি হাতের মিষ্টির প্যাকেট থেকে একটা মিষ্টি নিয়ে পর্বভাইয়ের মুখে পুরে দিলাম পুরোটা তারপর খুশিতে গদগদ হয়ে বললাম,

“কংগ্রাচুলেশনস…. কংগ্রাচুলেশনস….!খবরটা শুনে এতো খুশি হয়েছি তা আর কি বলবো..মানে ফাইনালি আপনি আমার পিছা ছাড়াবেন আহ্ ভাবতেও কতো শান্তি শান্তি লাগে…”

পর্বভাই আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলো তারপর ভ্রুকুটি করে তাকালো আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে আপুর রুমের দিকে দৌড় দিলাম।
#গল্প_কিচিরমিচির
#লেখিকা_আদিয়া_মির্জা_সানা(জ্যোতি)
#ক্যাটাগেরি_রোম্যান্টিক

৭.

বিছানার এক কোণায় বসে একটার পর একটা মিষ্টি মুখে পুরে যাচ্ছি।প্যাকেটে আর মাত্র চারটি মিষ্টি অবশিষ্ট আছে। আমি মিষ্টি তেমন খায় না তবে আজ বেশ ভালোই লাগছে।এলমি আমার পাশে বসে সেও খাচ্ছে ও একটু বেশিই খাচ্ছে হেলদি মানুষ তো সব কিছুই একটু বেশি বেশি খায়।কিন্তু কিছু একটা মনে হচ্ছে খালি খালি মানে সবকিছু জেনেও যেন কিছুই জানি না আমি এমন মনে হচ্ছে। মাথাটা একটু খাটাতেই মনে পড়লো পর্বভাইয়ের যে মেয়ের সাথে বিয়ে হবে তার সম্পর্কেই তো কিছুই জানি না।আমি হাতে থাকা মিষ্টিটা পুরোটা মুখে পুরে দিলাম তারপর এলমি কে জিজ্ঞেস করলাম। “হতভাগীটা কে গো?”
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো একটা শব্দও বোঝা গেল না শুধু উম…উম…ছাড়া তা শুনে এলমি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,

“কি উম..উম…করছো? কি বলছো?মুখেরটা শেষ করে বলো..”

আমি মুখের মিষ্টি ঢোক করে একটা শব্দ করে গিলে ফেললাম।তারপর এলমির দিকে আসন করে বসলাম আর বললাম,

“আচ্ছা ঐ হতভাগীটা কে গো?”

এলমি ভ্রু কুচকে বললো,

“কোন?”

আমি মুখে হাত দিয়ে একটা হাসি দিলাম তারপর বললাম,

“আরে যার সাথে পর্বভাইয়ের বিয়ে হবে..থুক্কু পর্বভাই যাকে বিয়ে করবে?আর যার পর্বভাইয়ের সাথে বিয়ে হবে?কে গো?সে কি যানে পর্বভাই কি হাড়ে চিপকু…রাগী..?”

এলমি হা হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে তারপর মুখের খাবার গিলে কিছু বলতে যাবে তারআগেই বাইরে থেকে আম্মু ডাক দিলো।নাফিসা আপুকে নিয়ে যাচ্ছে এতসব ঝামেলায় আমি আপুর বিয়েতেই ঠিক করে থাকতে পারলাম না।আমি এলমির কথা শোনার জন্য অপেক্ষা না করেই এক দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে লাগলাম।দৌড়ে শেষ সিড়ি পাড় করে নিচে নামতেই আমার পেট জাপটে ধরলো কেউ।পাশে তাকিয়ে তার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।

পর্বভাই পাঞ্জাবি বদলে একটা কালো শার্ট পরেছে।হাতা বরাবরের মতো ফোল্ড করা কনুইয়ের কাছে।বুকের ধারে দুইটা বোতাম খোলা যার দরুন তার শ্যামলা তবে লাবণ্য চকচকে লোমহীন বুকের কিছু অংশ উঁকি দিচ্ছে আমার মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে মনে হচ্ছে বুকটা যেন আমায় হাত বাড়িয়ে ডাকছে পর্বভাইয়ের চোখের দিকে তাকাতেই আমার হুশ ফিরলো।এসব আমি কি ভাবছি।এই মানুষটা তো আমার না তাহলে এমন অদ্ভুত আকাঙ্খা কেন জাগছে আমার।এসব ভাবতেই নিজের অজান্তেই আমার ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হলো।চোখ থেকে দুই ফোটা অবাধ্য অশ্রু ঝরে পড়লো। পর্বভাই উত্তেজিত হয়ে আমার গাল ধরে উঁচু করে আমার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো,

“ইশুপাখি! ইশুপাখি!কাদঁছিস কেন তুই?বল আমাকে.. বল কলিজা পাখি আমার কাদঁছিস কেন তুই?”

আমি কোনো কথা না বলে পর্বভাইয়ের হাত আমার গাল থেকে সরিয়ে এক দৌড়ে বাইরে চলে এলাম আসার সময় মৃদু আওয়াজে পর্বভাইয়ের ডাক শুনলাম কয়েকবার।

ভীড়ের মধ্যে এক পা এক পা করে এগিয়ে আমার দ্বিতীয় মায়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। হ্যা বড় বোন তো ভাগ্যের বিষয় কয়জন পাই দুই মা? দুইজনের সমান ভালোবাসা?ছোটবেলায় আপুর সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত যে প্রামাণ্য চিত্রের মতো চোখের সামনে ধরা দিচ্ছে। আপুর সাথে করা দুষ্টুমি, আপু বই নিয়ে বাবু বানিয়ে খেলা,নিজের ভাগের খাওয়া তাড়াতাড়ি শেষ করে আপুর ভাগের দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকা, আর আপু আমাকে তার ভাগ থেকে অর্ধেকরও বেশি দিয়ে দিতো সাথে মাথায় একটা গাট্টাও,আপুর চুল ধরে ঝুলে পরা আবার মাঝ রাতে যখন বাথরুমে যেতে ভয় হতো তখন এই আপুই নিজের ঘুম হারাম করে বাথরুমের সামনে দাড়িয়ে একাধারে বলতে থাকতো,

” হলো?”

আর আমি বাথরুম থেকে বিরক্তি নিয়ে চেচিয়ে বলতাম,

“উফ্ আপু ঠিক করে হিশুটা করতে তো দাও”

সব সব যেন আজ বড় পর্দায় দেখানো হচ্ছে এমনভাবে আমার চোখের সামনে ফুটে উঠছে..!

আস্তে আস্তে ভীড় ঠেলে আপুর সামনে গিয়ে দাড়ালাম চোখ থেকে অনবরত পানি পরেই যাচ্ছে। আপু নিজে মেহেদীতে রাঙা হাত দিয়ে আমার চোখটা মুছিয়ে দিলো তারপর আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো হেঁচকি তুলে কান্না করতে করতে বলতে লাগলো,

“কোথায় ছিলি তুই এতক্ষণ? তুই জানিস তোকে আমার এইসময় পাশে অনেক দরকার ছিল..আর তুই সারা অনুষ্ঠানে একবারও আসলি না…”

আমি এবার শব্দ করে কেঁদে দিলাম।আপুকে শক্ত করে নিজের সাথে জরিয়ে বলতে লাগলাম,

“আপু আমি আমি…. ”

কিছু বলতে পারছি না গলাটা আটকে যাচ্ছে। আপু আমাকে ছেড়ে আবার আমার চোখের পানি মুছে দিলো তারপর বললো,

“আর বলতে হবে না শুনেছি আমি…তুই সবধানে থাকবি আর এখন একটু বড় হ কারণ এরপর তোর পালা শেষে দেখা যাবে তোর বর বাচ্চা পালার সময় তোকে পালছে আর বাচ্চা পালার বয়স শেষ…!”

আমি নাক টেনে টেনে চাপা কন্ঠে বললাম,

“আপু থামবি তুই…!”

আপু একটা মেকি হাসি দিল তারপর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

“আর তো বলবো না এটাই তো শেষ..তুই কিন্তু নিজের খেয়াল নিবি আব্বু আম্মুর খেয়াল রাখবি..”

আমি কিছু বললাম না শুধু মাথাটা ঢান দিকে কাত করলাম। তারপর দুলাভাইয়ের দিকে তাকালাম বেচারা কেমন অস্থির অস্থির করছে।ভাবছে বোধহয় বাসরের সময় পার হয়ে যাচ্ছে। আপু আমাকে ছেড়ে আব্বু আম্মুকে আরেক দফা বিদায় দিয়ে গাড়িতে বসলো। এক পরিবার ভেঙেই তো আরেকটা নতুন পরিবারের তৈরি।আপুও আজ এক নতুন পরিবার তৈরি করতে মিস্ত্রি হয়ে যাচ্ছে সেই পরিবারে…মেয়েরা এমনই ভাসমান নৌকার মতো যেখানে ঠায় হয় সেটাকে নিজের মনে করে আসলে যে এদের নিজের বলতে কিছুই নেই..!

আমি দাড়িয়ে একদৃষ্টিতে গাড়ি যতদূর দেখা যায় তাকিয়ে আছি।পর্বভাই আমার কানের কাছে এসে বললো,

“এতো হতাশ হওয়ার কিছু নেই আমাদের বাসরও খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে..!”

আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পর্বভাইয়ের দিকে তাকালাম সে একটা নিষ্পাপ হাসি দিয়ে জিন্সের পকেটে হাত ঢুকিয়ে চলে গেল।আমি ভ্রু কুঁচকে তার যাওয়ার দিক তাকিয়ে আছি।তারপর পাশে আব্বু আম্মুর দিকে তাকালাম আম্মু কান্না করে চলেছে একাধারে।তারপাশে আম্মুকে চাচিমণি শান্তনা দিচ্ছে আব্বু চোখ ডলতে ডলতে ভিতরে চলে গেল।চাচিমণি আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,

“ইশু এখানে এখনো দাড়িয়ে আছিস কেন তোর মাকে আমি নিয়ে আসছি তুই একটু কষ্ট করে পর্বকে ভাত বেড়ে ওর রুমে দিয়ে আয় না..দুপুর থেকে খাওয়া হয়ে ওঠেনি ছেলেটার…!”

আম্মুও নাক টানতে টানতে বললো,

“যা ছেলেটা সেই সকাল থেকে খেঠে মরছে।আমারও খেয়াল নেই তুই গিয়ে পর্বকে খেতে দে আর তুইও খা আমি আসছি বাইরের খোলা হাওয়া ভালো লাগছে…”

আমি মাথা নাড়িয়ে ভিতরে চলে এলাম রান্না ঘরে রাখা খাবার থেকে প্লেটে খাবার সাজালাম তারপর পর্বভাইয়ের রুমে চলে গেলাম।

পর্বভাই বেডে হেলান দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে মোবাইল দেখছে আর মু্ঁচকি হাসছে।হয়তো হবু বউয়ের সাথে কথা বলছে।আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে দরজা খোলা থাকার সত্ত্বেও দরজায় দুইটা বাড়ি দিলাম।পর্বভাই ফোন থেকে মুখ উঠে দরজার দিকে তাকালো তারপর বললো,

“আয় ভিতরে..”

আমি খাবার থালা হাতে ভিতরে ঢুকলাম।পর্বভাই একটা সাদা গেঞ্জি আর থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পরা।খাট থেকে উঠে আমার দিকে আসলো আমার চারপাশে গোল গোল ঘুরলো দুবার আমি আবুলের মতো দাড়িয়ে আছি থালা হাতে। পর্বভাই বেডে গিয়ে বসলো তারপর বিরক্তি নিয়ে বললো,

“এখনো চেঞ্জ করিসনি?আমার মৃত্যুর দায়ীভার নিতে চাস নাকি? ”

আমি হাবার মতো তাকিয়ে আছি পর্বভাইয়ের দিকে।পর্বভাই আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে বললো,

“উফ্ এভাবে তাকিয়ে থাকিস না তো..আমি জানি আমি সুন্দর! তাড়াছাড়া তোর নজর ভালো না… আমি কত কিউট আমার নজর লেগে যাবে।”

আমি মুখ ভেঙচি দিলাম তারপর নিজে নিজে বির বির করে বললাম,

“এহ্ নিজে ঢোল নিজে বাজাচ্ছে খারুস একটা…”

পর্বভাই কান খাড়া করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

“কি বলছিস রে?জোরে বল আমিও তো শুনি তোর মুখে প্রশংসা! জানিস পুরুষদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কারণ সুন্দরী নারী! তা তুই কি আমার মৃত্যুর দায় নিবি?”

আমি আবার মুখ ভেঙচি দিয়ে বললাম,

“আমি কেন নিবো নিবে তো ঐ হতভাগী যার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে…এসব বাজে কথা বাদ দিয়ে খাবার খাও এইযে খাবার…!”

পর্বভাই দুই ভ্রু উঁচু করে আমার দিকে তাকালো তারপর পুরো ঘর কাঁপিয়ে হাসতে শুরু করলো।কি সুন্দর সেই হাসি হাজারো মাদকতা যেন এই হাসিতে আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে হাসি সেবন করছি।পড়বভাই হাসতে হাসতে পেটে এক হাত দিয়ে আরেক হাত মাছি তাড়ানোর মতো করে বললো,

“হতভাগী..!”

হাসি থামিয়ে বেড থেকে উঠে এলো সে।আমার সামনে এসে আমার চোখের সামনে পরে থাকা চুলগুলো ফু দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো তবে চুল সরলো না।তাই এবার হাত দিয়ে সরিয়ে দিলো আর শান্ত স্বরে বললো,

“হতভাগী না বল..সৌভাগ্যবতী কারণ তাকে তো আমি আমার বুকের ভিতর রাখবো খুব যত্নে….! ও তো আমার কলিজা…!”

আমি কোনো কথা না বলে খাবারের থালা বিছানার পাশে রাখা টেবিলের উপর রাখলাম।তারপর চলে আসতে যাবো তখনই পর্বভাই আমার হাত ধরে বললো,

“তুই খেয়েছিস?”

আমি মাথা ডানে বায়ে নাড়িয়ে না জানালাম।পর্বভাই আমাকে নিয়ে খাটের পাশে দাড় করিয়ে নিজে বিছানায় আসন হয়ে বসলো আমাকে টান দিয়ে নিজের কোলে বসালো।খাবার মেখে আমার মুখের সামনে এনে বললো,

“হা কর ইশুপাখি.. ”

আমি কোনো কথা না বলে চুপচাপ হা করলাম মুখের খাবার শেষ করে বললাম,

“আচ্ছা পর্বভাই মেয়েটা কে?”

পর্বভাই আমার গালে খাবার তুলে দিতে দিতে বললেন,

“আমার বিয়ের খবর তোকে যে দিয়েছে তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবি ঠিকআছে..!”

আমি বিনাবাক্য ব্যয়ে খাচ্ছি খুব ইচ্ছে করছে পর্বভাইয়ের সামনে আসা চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিই তারপর কপালে আলতো একটা চুমু খায়।তবে হঠাৎ এমন উদ্ভট ইচ্ছে কেন জাগছে তা সম্বন্ধে আমি অবজ্ঞাত নই!

#চলবে…

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here