#গল্প_কিচিরমিচির
#লেখিকা_আদিয়া_মির্জা_সানা(জ্যোতি)
#ক্যাটাগেরি_রোম্যান্টিক
১৩.
বিছানার উপর বসে বসে পা দোলাচ্ছি। আপু ওয়াশরুমে।হলুদের শাড়ি আরও যা যা পরা ছিলাম।তা এখনো গায়ে আছে কিছু খোলা হয়নি।বসে বসে পর্বভাইয়ের থ্রি-কোয়াটার প্যান্টের সাথে পাঞ্জাবি পরার কথা ভাবছি আর মুখে হাত দিয়ে নিজের মনে মনে হাসছি।এর মধ্যে ওয়াশরুমের দরজা খুলে আপু বেরিয়ে আসলো।আমাকে হাসতে দেখে বললো,
” কিরে হাসছিস যে? ”
আমি হাসি বন্ধ করে আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
” উমম না তা না মানে ঐ পর্ব..!”
আমাকে আর বলতে না দিয়ে আপু টেনে টেনে বললো,
” ওওওওও পর্ব জানি তো পর্বের কথায় ভাবছিস…ভাব ভাব বেশি করে ভাব তোরই তো জামাই..”
আমি রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
” আপু….!এবার যাও তো অসহ্য উল্টাপাল্টা কথা শুধু যাও এবার আমি ঘুমাবো..!”
আপু বের হতে হতে বললো,
” হুম হুম যাচ্ছি.. তোমার ভাবনায় ডিসর্টাব করবো না তুমি ভাবো…”
বলে আপু দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে বের হয়ে গেল।কিছু সময় পর দরজা থেকে রুমের ভিতর মাথা ঢুকালো। আমি তাকাতেই বললো,
” খাবি না তুই?”
আমি নাকমুখ কুঁচকে পেটে হাত দিলাম।বোঝালাম পেট ভরা। আপু একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে চলে গেল।আমি মুখে হাত দিয়ে একটা হাসি দিলাম।
আচমকা দরজা লাগানোর শব্দে আমি দরজার দিকে তাকালাম।পর্বভাই পিছনে দুইহাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি পর্বভাইকে দেখে মাথা নিচু করে ফেললাম।খুব লজ্জা লাগছে তার দিকে তাকাতে।আমাকে লজ্জা পেতে দেখে পর্বভাই বললো,
” আয় হায় ইশুপাখি তোর গাল দুটো এমন লাল হয়ে গেল কেন?দেখি!দেখি!”
আমি সাথে সাথে মুখে হাত দিলাম।তা দেখে পর্বভাই হেসে দিলো।আমার দিকে এগিয়ে এলো।আমি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। সে আমার কোমর ধরলো ডান হাত দিয়ে।আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।তা দেখে পর্বভাই আমার মুখে ফুঁ দিলো।আমি কেঁপে উঠলাম।কোমেরর বাম পাশে ঠান্ডা কিছু অনুভূব করতেই চমকে চোখ মেলে তাকালাম।পর্বভাই আমার দিকে মুচকি হেঁসে তাকিয়ে আছে।আমি তার দিকে তাকাতেই সে সিক্ত কন্ঠে বলে উঠলেন,
” হ্যাঁ জানি শারীরিক আকর্ষণে আমরা বেশি আকর্ষিত হই। তবে চাইলেই তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি আবার।কিন্তু!কিন্তু একবার ঐ হৃৎপিণ্ডের সাথে আকর্ষণ হলে তা থেকে আমরা চাইলেও বেরিয়ে আসতে পারিনা!”
আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে। হালকা ড্রিম লাইটের আলো কি অসম্ভব সুদর্শনই না লাগছে তাকে!আমি স্থীর কন্ঠে বললাম,
” ভালোবাসি!”
পর্বভাই চমকে আমার দিকে তাকালো।বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।চোখ লাল হয়ে গিয়েছে।ধপ করে আমাকে জরিয়ে ধরলো সে।শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরলো।আমার ঘাড়ে তরল পদার্থের অস্তিত্ব পাচ্ছি। আমি পর্বভাইয়ের পিঠে হাত দিলাম।তাকে আমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে তার চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছে দিলাম।সে আমার হাত দুটো ধরে শব্দ করে চুমু খেলো।আমি তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি কেন যেন তাকে দেখতে খুব ভালো লাগছে।সে আমার মুখের দুপাশে ধরে উঁচু করে আমার সারা মুখে চুমু খেলো।
আমি তার টি-শার্টের কলার ধরে তার ঠোঁট দুটো নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলাম।পর্বভাই সকড হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।তারপর আমার কোমর একটু উঁচু করে ধরলো।
দুইজন কপালে কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।আমি বাম হাত আমার কোমরে দিলাম।ক্রিমের মতো কিছু।সামনে এনে দেখলাম হলুদ।তাহলে তখন হলুদ দিয়েছিল আমার কোমরে।পর্বভাই আমাকে ছেড়ে আমার চুলগুলো সরিয়ে আমার কপালে একটা চুমু দিলো।শান্ত স্বরে বললো,
” আজ বোধ হয় প্রাণটা নিয়েই নিবি।বিয়ের আগেই বিধবা হওয়ার সখ?!”
আমি চমকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম বললাম,
” ছিঃ এগুলো কি কথা এগুলো কেউ বলে?!”
পর্বভাই হাসলো।ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে একটা বাটি নিয়ে আসলো।সেখান থেকে হলুদ নিয়ে আমার মুখে দিলো।আমি একটা স্মিত হাসি দিলাম।সে মুখ থেকে হলুদের হাত নিচের দিকে নামাতে লাগলো।গলার পর বিউটি বন আরেকটু নিচে নামবে তার আগেই আমি হাত ধরে ফেললাম।পর্বভাই হেসে দিলো।হাসতে হাসতে বললো,
” সমস্যা নেই আর মাত্র একটাই তো রাত তারপর তো এমনিতেও…”
আমি আর কিছু বলতে দিলাম না তাকে।বললাম,
“চুপ..!”
সে আরও জোরে হেসে দিলো।পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে বললো,
” লাইটটা জ্বালিয়ে দে তো!”
আমি গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখি পর্বভাই আমার দিকে ফোন ছবি তুলার মতো করে আছে।আমাকে তার দিকে তাকাতে দেখে বললো,
” স্মাইল..”
আমি একটা মিষ্টি হাসি দিলাম। পর্বভাই কয়েকটা ছবি তুলে নিল।তারপর বললো,
” এবার লাইট অফ করে দে..”
আমি লাইট অফ করে তার দিকে এগিয়ে এলাম।সে ফোনে ছবি দেখতে দেখতে বললো,
” শুঁয়ে পড় অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।আমিও যায়..”
বলতে বলতে সে দরজার দিকে চলে গেল।আমি মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছি। সামনে তাকিয়ে দেখি পর্বভাই আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।আমি একটা কিউট হাসি দিলাম।সে আমার কাছে এসে আমার ডান হাত ধরে আমার গলায় পর পর দুটো চুমু খায়।আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো।আমি তার বুকের কাছটায় শার্ট খামচে ধরলাম। সে আমার কানে ফিসফিস করে বললো,
” এবার চেঞ্জ করে শুঁয়ে পড়..”
বলে আমার কানে ছোট্ট একটা চুমু খেলো।আমি মাথা নিচু করে বাম হাত দিয়ে সামনের চুলগুলো কানের গুঁজলাম। সে একটা হাসি দিয়ে চলে গেল।আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলাম।হঠাৎ মনে হলো আমার বারান্দায় কিছু একটা পড়লো।আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
ওয়াশরুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আগের কথা ভাবি।নিজের করা কাজের কথা ভেবে লজ্জায় আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকাতেও লজ্জা করছে।পর্বভাই যেখানে যেখানে হলুদ লাগিয়েছে সেখানে সেখানে একে একে ছুঁয়ে দিলাম।দুই গালে,গলায়,কোমরে এবং সব শেষে ঠোঁটে। ঠোঁটে হাত দিয়েই নিজের মুখ ঢেকে ফেললাম দুই হাত দিয়ে।একে একে সব অলংকার গা থেকে খুলে ফেললাম।সব কিছু চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলাম।বাইরে থেকে ওয়াশরুম লক করে পিছনে ফিরতেই একটা তরল পদার্থ আমার মুখে গায়ে এসে পড়লো।আর আমি গগনবিহারী চিৎকার দিয়ে উঠলাম।সারামুখ জ্বলে যাচ্ছে। গলার কাছেও জ্বলছে।আমি দুই হাত মুখে দিয়ে চিৎকার করে যাচ্ছি। এক পর্যায়ে নিচে পড়ে গেলাম।মুখে হাত দিয়ে চিৎকার করছি আর ছটফট করছি।তারপর!
#গল্প_কিচিরমিচির
#লেখিকা_আদিয়া_মির্জা_সানা(জ্যোতি)
#ক্যাটাগেরি_রোম্যান্টিক
১৪.
” তারপর?!”
গভীর নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে চিকন স্বরে বলে উঠলো ফাইজা।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা টুলটায় বসে আছে ইশু। অনুভূতিহীনভাবে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে।চোখের কোণা দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো!
ফাইজা কাউচ থেকে উঠে এসে একটা টুল নিয়ে ইশিতার সামনে বসলো।ইশিতা আয়নায় তাকিয়ে নিজের ক্ষত বিক্ষত মুখে হাত দিয়ে অনুভূতিহীনভাবে বললো,
” আবির এমনটা না করলেও পারতো!”
ফাইজা ডান হাত দিয়ে নিজের চোখের কোণে জমা হওয়া পানিটা মুছে নিলো।নিজের অজান্তেই কখন যে চোখের কোনে পানি এসে জমা হয়েছে তা সে নিজেও জানে না।
ইশিতা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।তারপর আবার বলতে শুরু করলো,
———
আমি যখন চোখ খুলি তখন নিজেকে হাসপাতালের একটা বেডে আবিষ্কার করি।চোখটাও খুলতে পারছিলাম না!কারণ এসিড চোখের পাতায়ও লেগেছে।সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেওয়ায় চোখের কোনো ক্ষতি হয়নি।চোখ খুলে চিৎকার চেচামেচির শব্দ শুনতে পেলাম।পর্বভাই চিৎকার করে বলছে,
“আমাকে আমার ইশুপাখির কাছে যেতে দাও। আমি একবার দেখবো আমার ইশুপাখিকে!তোমরা আমায় যেতে কেন দিচ্ছো না?”
ঢোক গিলতে কষ্ট হচ্ছে খুব।সারামুখে,হাতে,গলায়,বুকে ব্যান্ডেজ করা।গা থেকে পোড়া গন্ধ বের হচ্ছে তা টের পাচ্ছি।পিঠেও ব্যাথা করছে খুব।পর্বভাইকে শান্ত করার জন্য চাচিমণিকে বলতে শুনলাম,
“পর্ব একটু শান্ত হ বাবা। দেখিস ইশুর কিছু হবে না।সকাল থেকে কিছু খাসনি এখন রাত সাড়ে দশটা বাজে কিছু একটু খেয়ে নে।”
পর্বভাই আবার তার কাঁপা কাঁপা কন্ঠে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
“হ্যাঁ তাই তো আমার তো এখন খাওয়ার কথা আনন্দ করার কথা উল্লাস করার কথা আমার ইশুপাখি ওখানে শুয়ে শুয়ে যন্ত্রণা পাচ্ছে আর তুমি এখন খাওয়া দেখছো?তুমি খাও বেশি করে খাও পেট ভরে খাও!আমি একশোবার বলেছি আমার ইশুপাখিকে আমাকে দিয়ে দাও।কিন্তু তোমরা!তোমরা বার বার শুধু বয়সের দোহাই দিয়ে আমাকে দাওনি আমার ইশুপাখি। আজকে ইশুপাখি আমার কাছে থাকলে ওর এতোবড় ক্ষতি হতো না!”
বাইরে থেকে আর কোনো সাড়াশব্দ কানে এসে পৌঁছালো না।সবকিছু একদম ভুতুড়ে নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।কিছুক্ষণ পরই কেভিনের দরজা জোরে বারি দিয়ে খুলে পর্বভাই রুমের ভিতর আসলো।
আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। তাকে দেখে আমার ভেতরটা যেন কেঁদে উঠলো।
চুলগুলো রুক্ষ। সাদা শার্টটা ঘামে ভিজে গিয়েছে। চোখের বড় বড় ঘন কালো পাপড়িগুলো ভেজা।হয়তো কেঁদেছে!আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে তড়িঘড়ি ডাক্তারকে ডেকে আনলো।ডাক্তার আমাকে চেক করে বললো,
“হুম সব আলহামদুলিল্লাহ ঠিকঠাকই আছে শুধু ক্ষতগুলো দ্রুত শুকিয়ে গেলে হয়।”
পর্বভাই কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ডাক্তারকে বললো,
” কতদিন সময় লাগবে? ক্ষত শুকাতে?এর দাগ কি যাবেনা?”
ডাক্তার পর্বভাইকে নিয়ে বাইরে চলে গেল।আমার সামনে হয়তো বলতে চায়না।তবে আমার এসিড সম্পের্ক একটু আধটু জ্ঞান আছে।তাই আমি জানি এই ক্ষত চার মাসের আগে শুকাবে না।আর দাগ!
প্লাস্টিক সার্জারি করে কিছুটা বিকৃতি ঠিক করা যেতে পারে। তবে ১০০% এটা ঠিক করার সাধ্য নেই কারও।
এসবভাবতেই আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।পর্বভাই ডাক্তারের সাথে কথা বলে ভিতরে এলো।আমার পাশে বসলো।চোখগুলো লাল হয়ে গিয়েছে।জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। মূহুর্তেই ডুকরে কেঁদে উঠলো।আমার কিছুই বলার শক্তি নেই এই মূহুর্তে। আমি আমার হাত দিয়ে তার চোখের জল মুছে দিয়ে বলতে পারছি না “কেঁদো না প্রিয়তম!আমি ঠিক আছি….”
কিন্ত আমার এতোটুকু বলার শক্তিটাও নেই।অসহায়ের মতো তার চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরে যেতে দেখছি।
পর্বভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
” এই এই ব্যান্ডেজের জন্য তোকে দেখাই যাচ্ছে না।এগুলো কবে খুলবে কে যানে?”
আমার চোখ থেকে আবারও পানি গড়িয়ে পড়লো।সে পানি মুছে দিতে গিয়েও থেমে গেল।উঠে চলে গেল আমার পাশ থেকে!
এর মাঝে চলে গেল একমাস।এখন একটু আধটু মুখ নাড়িয়ে কথা বলতে পারি।পর্বভাই ঐদিনের পর কয়েকবার এসেছে তবে অনেকদিন পর হঠাৎ করে আসতো।কিন্তু প্রতিরাতে আমি আমার পাশে বসে কেউকে ফুফাতে শুনতাম।জানি না সে কে?
নার্স আমার ক্ষতগুলোই ড্রেসিং করছে আমি ব্যাথায় চোখমুখ কুঁচকে বসে আছি।এমন সময় পর্বভাই রুমে ঢুকলো।
অনেকদিন পর দেখলাম তাকে।একটা কালো শার্ট আর জিন্স পরা।শার্টের হাতা বরাবারের মতোই ফোল্ড করা।চুলগুলো হয়তো সামান্য কেটে ফেলেছে।তবে তাও যেন সে অসম্ভব সুদর্শন যুবক।
আমার খোলা ক্ষতগুলো দেখে পর্বভাই চোখবন্ধ করে নিলো।কিছুক্ষণ পর পেটে এক হাত দিয়ে আর এক হাত মুখে দিয়ে ওক টানতে টানতে বাথরুমে চলে গেল।আর আমি ডুকরে কেঁদে উঠলাম।নার্স একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দ্রুত ব্যান্ডেজ করে দিলো।
আমি বিছানায় শুয়ে পড়লাম আর কাঁদতে থাকলাম।পর্বভাই মুখ মুছতে মুছতে বাইরে বের হয়ে আমাকে কাঁদতে দেখে দৌড়ে আমার কাছে এলো।উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
“ইশুপাখি..!কি হয়েছে? ব্যাথা করছে?কষ্ট হচ্ছে? ডাক্তারকে ডাক দিবো?”
আমি কিছু বললাম না চুপ করে থাকলাম।কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ থেকে পর্বভাইকে বললাম,
“আমাকে একটা আয়না এনে দিবেন? ”
পর্বভাই চমকে গেল।হঠাৎ এমন কথা হয়তো আশা করেনি।সে আমতা আমতা করে বললো,
“উম… আচ্ছা দিবো যখন তুই পুরো পুরি সুস্থ হয়ে যাবি তখন দিবো।”
আমি আবারও কেঁদে উঠলাম। পর্বভাই অসহায়ের মতো মাথা নিচু করে বসে আছে।আমি পর্বভাইকে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
” আপনি আমাকে ভুলে যান।আমি চাই না আপনার মতো এমন নিখুঁত একজন মানুষের আমার মতো এমন বিকৃতি চেহারার জীবনসঙ্গী হোক। অতীতে কি হয়েছে তা ভুলে যান!আমাকে ভুলে যান।”
পর্বভাই নিজের চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছে ধমক দিয়ে বললো,
” বেশি পাকনা…! তোকে এতে বেশি বুঝতে হবে না আমার মন কাকে মনে রাখবো আর কাকে ভুলে যাবো সেটা আমার ব্যাপার। তুই বেশি বেশি খেয়ে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যা।”
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
“আমি তো খেতে পারি না…”
পর্বভাই চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো।আমি আমার নাকে দেওয়া নলের দিকে ইশারা করলাম।সে সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিজের মাথার চুলগুলো টেনে মাথা নিচু করে ফেললো।আমি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বললাম,
” কেন সুস্থ হলে কি হবে?”
পর্বভাই মাথা উঠিয়ে আমার দিকে তাকালো।বললো,
” পুলিশ আবিরকে ধরেছে তবে ওকে কাউন্সিলিং এর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।ও মানসিকভাবে সুস্থ না।তারপর ওর রায় দেওয়া হবে আর তোকে সাক্ষী দিতে যেতে হবে।”
আমি আবিরের নাম শুনতেই শিউরে উঠলাম। আমি বললাম,
” ও ও এসিড কোথায় পেল?”
পর্বভাই স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিলো,
” ইশুপাখি তুই ভুলে গেছিস?ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।ও নাকি ভিসির কাছে গিয়েছিল।ল্যাব থেকে সালফিউরিক এসিড নেওয়ার পারমিশন নেওয়া জন্য কিন্তু ভিসি পারমিশন দেয়নি…”
আমি ছোট একটা ঢোক গিললাম গলায় প্রচন্ড ব্যাথা হয়েছে নল দেওয়ার কারণে।তারপর আস্তে আস্তে বললাম,
” তাহলে কোথায় পেল?”
পর্বভাই চেয়ার ঠেলে উঠে গেল।দাঁড়িয়ে আমার মাথা হাত দিয়ে বললো,
” চুরি করেছে ল্যাব থেকে…আচ্ছা আমি এখন আসি একটু পরই ছোটমা আসবে তোর জন্য খাবার নিয়ে নাফিসারাও এসেছে বাড়িতে।”
আমার একটু মন খারাপ হলো আমি বললাম,
” মাত্রই তো আসলেন কতদিন পর আসলেন এখনই চলে যাবেন?”
পর্বভাই আবার চেয়ারে বসলো। বললো,
” কেন আমার ইশুপাখি কি আমাকে মিস করেছে?”
আমি কিছু বললাম না।তার জবাবে অন্য প্রশ্ন করলাম তাকে
” আপনি আমাকে আর বিয়ে করবেন না তাই না?”
পর্বভাই কিছু বললো না আসি বলে উঠে চলে গেল।আমি দরজা থেকে মুখটা ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে আকাশের দিকে তাকালাম।
———
পাঁচমাস পর বাড়িতে এলাম।সার্জারি করিয়ে।এখন পুরো পুরি সুস্থ। তবে এর ভিতর আমি আমার চেহারা একবারও দেখিনি। জানিনা সার্জারি আমার বিকৃতি চেহারা কতটা ভালো করতে পেরেছে।নাফিসা আপুর হাত ধরে রুমে যাচ্ছি। পিছনে আম্মু আর আব্বু হাসপাতালের সব জিনিসপত্র নিয়ে আসছে।রুমে ঢুকে আমার ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় একটি কাপড় দেওয়া দেখলাম।আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম সেদিকে আপু বললো,
” শোন তুই বই আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নিই ঠিক আছে।কোথাও যাস না এখানেই থাক…”
আমি আপুকে বললাম,
” পর্বভাই কই?”
আপু ওয়াশরুমে যেতে যেতেও থেমে গেল।তাপর আমার দিকে ঘুরে বললো,
” আব…ও তো মনে হয় বড়বাবার ব্যবসার জায়গায় আছে…ঐ বড়বাবা এখন একা ওতকিছু সামলে উঠতে পারে না তো তাই ও একটু সাহায্য করে।”
আমি মাথা নাড়ালাম। আপু ওয়াশরুমে চলে গেল।আমি বিছানা থেকে উঠে ড্রেসিং টেবিলের কাপড়টা সরিয়ে দিলাম…!
কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ থেকে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম।
তারপর চিৎকার দিয়ে পাশে ড্রয়ারের উপর রাখা ফুলের দানিটা নিয়ে আয়নায় ছুঁড়ে মারলাম।মূহুতেই আয়নার কাঁচ ঝন ঝন শব্দ করে ভেঙে গেল।নিচ থেকে আম্মু আব্বু, চাচিমণি দৌড়ে এলো।ওয়াশরুম থেকে আপু দৌড়ে এলো।আমি চিৎকার করে কাঁদছি। আম্মু এসে আমাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো।আব্বু চোখ মুছতে মুছতে বাইরে চলে গেল।এখানে থাকলে হয়তো নিজে আর সামলে রাখতে পারতো না।আম্মু আমাকে জরিয়ে ধরে বলতে লাগলো,
” কাঁদিস না মা কাঁদিস না সব ঠিক হয়ে যাবে শান্ত হ”
আমি হেঁচকি তুলতে তুলতে বললাম,
” আম্….আম্মু এর থেকে আবির আমাকে প্রাণে মেরে দিতো তাহলে তো আমাকে এমন বিকৃতি চেহারা নিয়ে বেঁচে থাকতে হতো না আম্মু…!”
চাচিমণি আমাদের পাশে এসে বসলেন।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
” কাঁদিস না মা আল্লাহ হয়তো এটা চেয়েছে। তাই তো এমনটা হলো নয়তো বিয়ের আগের দিন গায়ে হলুদে এমনটা কেন হবে বল?!”
আমি আম্মু কল থেকে উঠে চোখ মুছে বললাম,
” ভালোই হয়েছে বিয়ের আগে এমনটা হয়েছে।এখন তুমি একটা ভালো সুন্দরী মেয়ে দেখে পর্বভাইয়ের বিয়ে তার সাথে দাও…”
কথাটা শেষ করতে না করতেই আমার গালে ঠাস করে একটা চড় পড়লো আমি গালে হাত দিয়ে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তির দিক তাকাতেই তার চোখ দেখে চমকে উঠলাম।
#চলবে..
(