অন্তঃসন্তা_মেয়েকে_বিয়ে
পর্বঃ ১৮
লেখকঃ #রাইসার_আব্বু
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
রিত্ত নার্সের কথা শুনে বের হয়ে গেল। আমিও পিছন পিছন বের হয়ে গেলাম। রিত্ত ডাক্তারের রুমে গিয়ে বসলো। আমি জানালা দিয়ে তাকাঁতেই দেখলাম ডাক্তারের রুমে, রাজের মা- বাবাও।
.
ডাক্তার কে যেন বলতেছে।
.
পর্দাটা সরিয়ে শুনতে লাগলাম ডাক্তার কি বলে। ডাক্তার যা বললো তা শুনার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। মনে হচ্ছে হসপিটালের ছাঁদ থেকে ঝাপ দেয়।”” ডাক্তার সবাইকে বললো,দেখেন আপনারা আমাদের যা করার সবকিছুই করলাম। এখন আর আমাদের হাতে কিছু করার নেই। পেশেন্ট কুমোতে চলে গেছে। জানিনা আল্লাহ্ কি করবে,তবে আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে পেশেন্ট মারা যাবে আগামী ১২ ঘন্টার মাঝে। সত্যিটা অপ্রিয় হলেও এটাই সত্যি। আমাদের আর কিছু করার নেই। মৃত্যু সংবাদ শুনার জন্য প্রস্তুত হতে বলা ছাড়া আপনাদের কিছু বলার নেই।
হঠাৎ নার্স দোঁড়ে আসলো,রিয়া মেয়েটা কাঁদছে,।নার্স ডাক্তারের কাছে এসে বলতে লাগল ” ম্যাডাম ২১ নাম্বার কেবিনের পেশেন্টের স্যালাইন পার্স হচ্ছে না! আর অক্সিজেন টাও নিচ্ছে না।
.
ডাক্তার দৌঁড়ে গেল রাজের কেবিনে। সবাই তাকিয়ে আছে। কেউ কোন কথা বলছে না। ডাক্তার বললো পেশেন্ট কুমায় চলে গেছে। আপনারা সবাই আল্লাহ্কে ডাকেন।
.
আল্লাহ্ চাইলে সব করতে পারেন আমাদের কিছু করার নেই।যা করার উপর ওয়ালার হাতে।
.
জানালায় দাঁড়িয়ে রাজকে দেখছি। হঠাৎ পিছন থেকে রিত্ত বলে উঠলো” এখানে কী চান আর? আমার ভাইয়াটা বাঁচবে না হয়তো আপনার জন্যই! আপনার পাপী মুখ দেখতেও ঘৃণা লাগে।আপনাকে বলছি না আপনার এ অশুভ ছাঁয়া নিয়ে আমাদের আশেপাশে না আসতে।”
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
.
রিত্তের কথাগুলো শুনে কিছু বলার ভাষা নেই। আমার জন্যই আমার স্বামী মৃত্যুর প্রহর ঘুনছে। এতিম বাচ্চারা অভিভাবকহীন হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। তাদের চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। রিয়া মেয়েটা কাঁদছে।
.
হঠাৎ দেখি রিয়া মেয়েটা একটা জায়নামায নিয়ে পাশের রুমে চলে গেল। আমি তাঁর পিছন পিছন গিয়ে দেখি মেয়েটা নামাযে দাঁড়িয়ে গেছে।
.
নিজের অজান্তেই চোখে পানি এসে ভিড় করছে। রাজকে মনে হয় সত্যি হারিয়ে ফেলবো। মনে হচ্ছে মেয়েটা রাজকে সত্যি কেড়ে নিবে।
.
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে বাসায় চলে যাচ্ছি। রিত্ত দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। রাজের মুখটা একটি বারের জন্য দেখতে দিলো না।খুব কষ্ট প্রাণটা বের হয়ে যাবে।মনে হচ্ছে। এদিকে পেপে প্রচন্ড ব্যাথ্যা করছে।
.
আপু, আপু আমাদের রাজ ভাইয়া কী আর আমাদের সাথে কথা বলবে না আমাদেরকে আর কখনো বুকে জড়িয়ে নিবে না? আমরা যে ভাইয়ার জন্যই বেচে আছি মা -বাবা হারিয়ে।ভাইয়াই যে আমাদের মা-বাবা ছিল।( এতিম মেয়েটি কাঁদদে কাঁদতে বললো)
.
নারে বোন কাঁদিস না, তোর ভাইয়ার কিছুই হবে না! তোর ভাইয়া যে বড্ড বেশি ভালমানুষ যে।( কথাগুলো বলে চোখের পানি মুছে দিয়ে বুকে টেনে নিলাম)
.
এদিকে বাসায় এসে পড়লাম! বাবা হসপিটালে,রাজের খবর নিলাম,বাবার কাছে। বাবা বলল” মা’রে আল্লাহকে ডাক “!
.
মনে মনে ভাবছি আমি যে বড় পাপী আমার ডাক আল্লাহ্ শুনবে? শুনেছি আল্লাহ্ মহান তাই অযু করে এশার নামায পড়ে কুরআন তেলাওয়াত করে। তসবিহ পড়তে লাগলাম।ঘড়ির কাঁটা জানান দিল, রাত ১ টা বাজে।
তাই আর দেরি না করে তসবিহ টা চুমু দিয়ে রেখে দিলাম।
মাঝরাতে দাঁড়িয়ে গেলাম নামাযে দু’রাকাত নামায শেষ করে দু’খানা হাত আসমানের দিকে তুলে বলতে লাগলাম” হে পরওয়ার দেগার!
আমার আল্লাহ্।
হে রহমান আর রাহিম, এ বিশ্ব জাহানের মালিক!
আমি গোনাহ্গার এক বান্দী মাঝরাতে নিজের স্বামীর জন্য দু’খানা হাত তুলে ধরেছি আল্লাহ্।
জানিনা কী নামে ডাকলে তুমি সাড়া দিবে, সে নামের অর্থ আমার জানা নেই।
হে আল্লাহ্ তুমি না বলেছে বান্দা যতই গুনাহ করুক, সে যদি কেঁদে দিয়ে আমার কাছে হাত উঠাই তাহলে আমি বান্দার সব গুনাহ্ মাফ করে দেয়। ও ধরদী আল্লাহ্ কোন দিন তোমার কাছে হাত তুলে কিছু চায়নি!
আল্লাহ্ একজন ফকির বেশে তোমার দরবারে দু’টি হাত তুলে ধরেছি , আমার স্বামীর জীবন তুমি ভিক্ষা দাও।
ও আল্লাহ্, আমার আল্লাহ্ তুমি কী তোমার গুনাহ্গার বান্দীর মাঝরাতের আতৎনার্দ শুনতে পারছো?
ওহ্ আল্লাহ্ আমার যে চাওয়ার আর কোন জায়গা নেই! ওহ্ ধরদী আল্লাহ্! আমার স্বামীর পায়ের নিচে একটু জায়গা চায়।
আমার স্বামীর বুকে মাথা রেখে তৃপ্তির ঘুম ঘুমাতে চায়! আল্লাহ্ আমার স্বামীকে বাঁচিয়ে দাও, তাকে ছাড়া আমি যে বাঁচবো নাহ্।
আল্লাহ্ তুমি তোমার রহমান আর রহিম নামের রহমতে আমার স্বামীকে বাঁচিয়ে দাও। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্বামীর খেদমত করতে পারি এই তৌফিক দান করো!ওহ্ আল্লাহ্ এই গভীর রাতে সবাই যখন গভীর ঘুমে মগ্ন তখন তোমার দরবারে দু’খানা হাত তুলে ধরেছি কাঙ্গালের বেশে। আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও আমার স্বামীকে বাঁচিয়ে দাও।
আমার স্বামীর কুলে মাথা রেখে মরার ইচ্ছাটা পূরণ করো। আর কিছু চাইনার! সন্তান যখন মা বলে ডাক দেয় ” মা তখন সব রাগ অভিমান ভুলে সন্তানকে কুলে তুলে নেয়” ও ধরদী আল্লাহ তুমি তো দুনিয়ার মায়েদের চেয়ে তোমার বান্দাকে লাখো কোটি গুণ বেশি ভালবাসো।
আমার করুণ আর্তনাদে সাড়া দাও! তুমি ছাড়া যে নেই কেউ যার দরবারে হাত উঠাবো! আল্লাহ্ আমার দোয়াকে কবুল করে নাও।
আমার স্বামীকে বাঁচিয়ে দাও। আমার স্বামীর কোলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার ব্যবস্হা করে দাও ইয়া মাবুদ!
আমার পরম করুণাময়। আল্লাহ্ তুমি কি এ অভাগী মেয়েকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিবে? ও আমার আল্লাহ্, আমি সত্যি কী তোমায় কাছে ক্ষমার অযোগ্য? আল্লা!!
হে রহিম-রহমান ক্ষমা করে দাও আমায় ম তোমার করে নাও।
আমার জীবনটাকে বাঁচিয়ে দাও।কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বললাম!
প্রার্থনা করলাম আল্লাহ্ তায়ালার কাছে মাথাটা সিজদায় দিয়ে আল্লাহর কাছে আমার স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চাইলাম।
জায়নামাযটা চোখের পানিতে ভিঁজে যাচ্ছে।
কখন যে ঘুমিয়ে গেছি জানিনা।
সকালে মা এসে দেখে এখনো আমি জায়নামাযের সিজদা অবস্হায় ঘুমিয়ে আছি।
.
মা আমাকে দেখে কান্না করে দেয়। মা আমাকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়। বাবা সারারাত হাসপাতালেই ছিলো!
.
বাবা আমাকে দেখে বললো” মা’রে তোর মাঝে আরেকটা জীবন যে রয়েছে! তুই কী তোর ওই জীবনটার ক্ষতি করবি! তোর মায়ের কাছে সব শুনেছি।”
.
বাবা আমি রাজকে ছাড়া বাঁচবো না ওর জন্য হাসতে হাসতে জীবনও দিতে পারি।ওই যে আমার নিঃশ্বাসে ওই যে আমার বিশ্বাসে।
বাবা তুমি জানো? আমি চোখটা বন্ধ করতে পারি না যদি জীবনকে হারিয়ে ফেলি। আমার জীবনের চাঁদমাখা মুখটা সবসময় ভেসে ওঠে।
.
বাবা আমি জানি আমি আমার স্বামীর সাথে যা করেছি, পৃথিবীর কোন মেয়ে তার স্বামীর সাথে তা করতে পারবে না! বাবা কিন্তু এখন আমি যে আমার স্বামীকে ছাড়া বাঁচবো না।
রাজের কিছু হয়ে গেলে আমি হয়তো আর বাঁচতে পারবো না। হঠাৎ চোখ গেলো মেয়েটার দিকে মেয়েটা আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
মেয়েটার চোখটাও লাল হয়ে আছে।.
.
আপনি কেন এখানে আসছেন? ( রিত্ত)
.
আমি রিত্তের কথা শুনে মাথা নিচু করে আছি, আর কাঁদছি।কি বলবো রিত্তের চোখে আমি অপরাধী।
.
কি হলো কিছু বুঝেন না? আপনাকে না বলছি আমার ভাইয়ার ছায়াটাও মারাবেন না? (রিত্ত)
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
.
রিত্তের কথা শুনে চোখের জল বাঁধা মানছেনা।
.
মা পাশ থেকে বলে ওঠলো” দাড়া কথা একটু পরে যা।
আর রিত্ত মা আমি জানি, কথা অপরাধ করেছে।
তবে জানো মা? আমার মেয়েটা কিছুই জানতো না! মেয়েটা না বুঝে এসব করছে তার জায়গায় তুমি হলে হয়তো তুমিও এমন করতে।
জানো মা, আমার মেয়েটা অন্তঃসন্তা তোমরা জান। কাল সারারাত কুরআন তেলাওয়াত করেছে।
রাতে নামায পড়ে মোরাজাতে কেঁদেছে।
আমি মা মেয়ের কষ্ট সইতে পারিনাই তাই বললাম। জানো,আমার মেয়েটা একটা রাতও ঘুমায়না, রাজের সার্ট তার লেখা ডাইয়িটা বুকে নিয়ে কাঁদে। মাঝ রাতে নামায পড়ে কাঁদো আমার মেয়েটা সত্যি অভাগী।
মা কাল রাতেও মেয়েটা নাসাযের সিজদায় কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যায়।
মা আমাদের মা মেয়ের কথায় কষ্ট পেলে ক্ষমা করবে।
.
এদিকে রিত্ত কাঁদছে, আমি চোখ মুছতে মুছতে বললাম মা চল। আমি চাই আমান স্বামী ভালো থাকুক বেঁচে থাকুক। আমি দূর থেকে না হয় আমার কলিজার টুকরার সংসার টাকে দেখবো।
যখনি হসপিটাল থেকে বের হতে যাবো”
তখনি দেখি,রিত্ত পিছন থেকে হাতটা টেনে ধরেছে।
যেয়োনা তোমরা কি করবো বলো আমার ভাইয়াটার জন্য কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছে।
দোয়া করি, আমার ভাইয়া যেন আগের মতো হয়ে যায়।
.
রিয়া মেয়েটা এসব শুনে আরো বেশি কাঁদতে লাগল পাশ থেকে।
বুঝতে বাকি রইলো না মেয়েটা রাজকে ভালোবাসে! এখন রাজ তো আমাকে কোনদিন গ্রহণ করবে না, সে তো আমাকে ডির্ভোস দিয়েছে! ভাবতেই আবারো চোখটা ছলছল করে ওঠলো।
মনে মনে ভাবলাম রাজ যার বুকেই থাকুক সো জন সুখে থাকে আর বেঁচে থাকে তাঁর সুখটা না হয় দূর থেকেই দেখবো।
এসব ভাবছি অার কাঁদছি। রিয়া মেয়েটার দিকেই চেয়ো থাকতে বড্ড মায়া লাগছে। মেয়েটা চোখ লাল করে ফেলছে।
.
হঠাৎ ডাক্তার রাজের রুম থেকে বের হয়ে আসলো! ডাক্তারের চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে!
.
আঙ্কেল কী হয়েছ ভাইয়ার?
.
মামনী, পেশেন্ট স্যালাইন একদম নেওয়া বাদ দিয়েছে।এখন অক্সিজেন নেওয়া ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। মামনি এতিম বাচ্চাদের স্বান্ত্বনা দেওয়ার বাসা হারিয়ে ফেললাম। কী বলে স্বান্ত্বনা দিবো রাজ যে আর “””””
#_____________চলবে________________
।
।
#কোনো গল্পের পর্ব খুজে না পেলে সর্বশেষ পোস্ট কমেন্ট করে জানাবেন।
।
।
।
#আপনাদের উৎসাহ পেলে পরবর্তী পার্ট দিবো। আসা করি সবাই লাইক কমেন্ট করে সাথেই থাকবেন।