অন্তঃসন্তা_মেয়েকে_বিয়ে পর্বঃ ১৬

0
1840

অন্তঃসন্তা_মেয়েকে_বিয়ে
পর্বঃ ১৬
লেখকঃ #রাইসার_আব্বু
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .

কথা রাজের শাটটা গায়ে দিয়ে রয়েছে। বুকে ডাইরি, আর ফুপিয়ে কাঁদছে। বার বার রাজের ডাইরিটাকে চুমু খাচ্ছে। রাজের ডাইরিটা এবং তার শার্টটা গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে যায়।
.
হঠাৎ রিত্ত দৌঁড়ে এসে কাঁদতে কাঁদতে বললো ভাবী ও ভাবী” ভাইয়া মারা গিয়েছে”। ভাবী আমার ভাইয়াকে আর কি ভাইয়া ডাকতে পারবোনা?”
.
রিত্তের কথা শুনে কথার পায়ের নিচে মাটি সরে যাচ্ছে। পৃথিবীটা কেমন যেন অন্ধকার মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর এমবুলেন্স করে রাজের লাশ নিয়ে আসলে কথা গিয়ে দেখি কফিনের ভিতরে রাজকে খুব সুন্দর লাগছে। আর কখনো রাজ তাকাবেনা সেই ভালবাসার দৃষ্টি নিয়ে “কখনো বলবেনা ” কথা তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে”! তুমি সত্যিই মায়াকাননী, রৃপবতী,। তুমি কল্পনায় রাণি কখনো বলতে পারবেনা”।
.
রাজের ঘুম আর কোনোদিন ভাঙবে না। কত সুন্দর ভাবে ঘুমিয়েছে! মনে হয় কেউ পাশ থেকে একটু চিল্লানি দিলে রাজের ঘুম ভেঙে যাবে। সবাই কাঁদছে, রিত্ত সবচেয়ে বেশি কাঁদছে। কিন্তু আমি কাঁদতে পারছি না। শুধু চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে গাল থেকে টুপ-টুপ করে পড়ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে! বুকের ভেতরে কলিজার ঠিক মাঝ বরাবর কেউ ছুড়ি চালিয়ে দিচ্ছে মনে হয়। একটু পর কেউ এসে রাজের মুখটা ডেকে দিলো। মায়াভরা মুখটা ডেকে দেওয়ার আগে মনে হচ্ছে রাজ চুপিসারে বললো” এই পাগলী কাদঁছো কেন? তুমি কাঁদলে যে আমার কষ্ট হয়, তুমি বুঝনা? ”
আমি আর এখন থাকতে পারছিনা জোরে চিৎকার করে কাঁদছি! রাজ আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে খুন করেছি। আমার মতো অভাগীকে ক্ষমা করে দাও,যে পাহাড়সম ভালবাসা পেয়েও ভালবাসা টা হারিয়ে ফেললো অবহেলায়। কি করে বাঁচবো নিজেকে যে নিজেই শেষ করে দিয়েছি। এভাবে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে পরে গেলাম। এদিকে রাজকে সবাই দাফন করতে নিয়ে যাচ্ছে। সবাই রাজকে নিয়ে যযাচ্ছে।আর রাজকে দেখতে পারবো না।
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
রাজকে আর চরিএহীন বললেও সে আর চোখের পানি ফেলবেনা। মনে হচ্ছে কলিজাটা কেউ ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি চিৎকার করে কাঁদছি,আর সবাইকে বলছি ” তোমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমার কলিজার টুকরা কে। আমার স্বামীকে অনেক কষ্ট দিয়েছি অন্তত্য একটু ভালবাসতে দাও আমাকে বুকে নিতে দাও আমার কলিজার টুকরাটাকে! নিয়ো না ওকে, রাজকে নিয়ো না, আমাদের রাইসা কাকে বাবা ডাকবে। প্লিজ তোমরা নিয়ে যেয়োনা রাইসার বাবাটাকে।আমার মেয়েটার মুখে বাবা ডাক না শুনিয়েই তোমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? প্লিজ নিয়ো না আমি বাঁচবোনা ” আমার স্বামীকে ছাঁড়া।কেউ আমার কথা শুনছে না সবাই রাজকে নিয়ে চলে যাচ্ছে, আমি পারছিনা আর, এত কষ্ট হচ্ছে কেন আমার।আল্লাহ্ এত বড় শাস্তি দিয়োনা আমায়। এদিকে
রিত্ত, মা- বাবা সবাই বুঝাচ্ছে কিন্তু পারছিনা আমি নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
.
এই কথা কি হয়েছে? কাঁদছিস কেন এভাবে? আর কী সব বলছিস ঘুমের মাঝে !
.
মা রাজ মারা গিয়েছে, রাজকে ওই যে দাফন করতে নিয়ে যাচ্ছে। মা আমি রাজকে ছাড়া বাঁচবোনা! সবাইকে আকঁটাও মা, রাজকে নিয়ে যেতে দিয়ো না।
.
মা গ্লাসে করে পানি নিয়ে এসে কয়েক ফোঁটা পানি মুখে ছিটিয়ে দিলো। কথা মা তুই দুঃস্বপ্ন দেখছিস। রাজ বেঁচে আছে মা, তুই আর কান্না করিসনি। কান্না করলে তোর গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হবে যে, তোর গর্ভে যে রাজের সন্তান। রাজের স্বপ্ন যে তোর গর্ভে বড় হচ্ছে মা।
.
এদিকে আম্মুর কথায় আর বুঝতে বাকি রইলো না আমি দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম। মা’কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলাম” মা আমি রাজকে ছাড়া বাঁচবোনা। সত্যি মরে যাবো, রাজ যে আমার স্বামী আমার বেঁচে থাকার একমাএ অবলম্বন।”
.
হুম জানিরে মা! রাজের মতো ছেলে হয় না। রাজ নিজস্ব টাকায় একটা এতিম খানা পরিচালনা করতো। কিন্তু রাজের মা – বাবা পর্যন্ত জানতো না। কিন্তু রাজের অসুস্হতার জন্য, এতিমখানার অধ্যক্ষ এসে সব বলেছে। এতিম ছেলেরা হাসপাতালে বসে কাঁদছে। তাঁদের কান্নায় হাসপাতালের ডাক্তার রা পর্যন্ত কেঁদে দিয়েছে। এতিম ছেলেরা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে রাজের কেবিনের বাহিরে বসে আছে। মা’রে রাজের কিছুই হবেনা মা চিন্তা করিস না মা! রাজের মতো ছেলে যে মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়েছে সে মা বড় ভাগ্যবতী সে, বাবা বড় ভাগ্যবতী। মা’রে আমি সত্যি অনেক ভাগ্যবতী মেয়েটা’কে একজন সুপাএের হাতে তুলে দিতে পেয়েছি। আর হ্যাঁ রাজের শার্ট পড়ে শুয়ে না থেকে ফ্রেশ হয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর। ( কথাগুলো বলে মা চলে গেল)
.
মা’র কথা গুলো কানে বাজচ্ছে।চোখদিয়ে টপ-টপ করে পানি পড়ছে। সত্যি পৃথিবীতে এত ভালো, মহান মানুষ হতে পারে?আর এত বড় মহান মানুষটাকে কত অবহেলা করেছি।স্বামীর অধিকার দেয়নি কখনো। স্ত্রী হয়ে স্বামীর গায়ে হাত তুলেছি। শুধু নীরবে কেঁদেছে। ইসলামে স্বামীর খেদমত করে জান্নাত হাসিল করতে বলেছে মহান আল্লাহ্ তায়ালা। কিন্তু আমি তো, তাকে অবহেলা, ঘৃণা অপমান ছাড়া কখনো ভালবাসতে পারিনি। পারিনি ভালবেসে বুকে টেনে নিতে। কখনো এক বিছানায় থাকিনি পর্যন্ত। কখনো কপালে ভালবাসার স্পর্শ একেঁ দিতে পারিনি। এতোটা ভালবাসা পাওয়ার পরও শুধু অবহেলায় করে গেছি। কখনো বুঝিনি, রাজের চোখ থেকে ঝড়ে পড়া প্রতিটি অশ্রুকণার কতটা ভালবাসা লুকায়িত। আমি হীরাকে কাঁচ ভেবে কত বড় ভুল করে ফেলেছি। যে মা এতো ভাগ্যবতী, যে ছেলেটা এতটা উদার মনের মানুষ, তাঁকে আমি জারজ সন্তান পর্যন্ত বলেছি। চোখটা আর বাঁধা মানছেনা! ” আল্লাহ্ তুমি আমার জীবন নিয়ে রাজকে বাঁচিয়ে দাও”! রাজের শার্টটাতে এখনো রাজের গায়ের গন্ধ লেগে আছে! শার্টটা গায়ে দিয়েই রয়েছি। রাজের লেখা ডাইয়িটা বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছি। সমানে ডাইয়ির লেখা গুলোতে চুমু খাচ্ছি। বুকটা কেঁপে কেঁপে ওঠছে।
.

**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

কিছুক্ষণ পর বাবা আসলো। বাবা এসে রেডি হতে বলল।
.
বাবা রেডি হয়ে কী করবো?
.
হসপিটালে জামাই বাবাজীর কাছে যাবো রে মা তুই রেডি হয়ে নে প্লিজ। আর তোর ও চ্যাকাপ করতে হবে।
.
বাবার কথাতে ওয়াশরুমে গিয়ো শাওয়ার নিয়ে, আসরের নামায পড়,হসপিটালে রওয়ানা দিলাম। মনটা কেমন কেমন করছে। মনে হচ্ছে যদি রাজকে বুকে নিতে পারতাম,তাহলে বোধহয় অশান্ত মনটা শান্ত হতো। মায়াবী মুখটা দেখার জন্য পরাণটা জ্বলে যাচ্ছে। হাসপাতালে পোঁছানোর পর, রাজের কেবিনের সামনে আসতেই বুকঁটা ভেতর কেমন যেন চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করতে লাগলাম। হঠাৎ রাজের কেবিনের বাহিরে অনেকগুলো বাচ্চা ছেলে – মেয়ে দেখলাম তাঁদের সবার মাঝে একটা মেয়েকে কেমন যেন পরিচিত লাগছে খুব। মেয়েটা খুব কাঁদছে তাই আস্তে আস্তে মেয়েটার কাছে যেতেই মনে পড়ে গেল। এটা তো সেই মেয়ে যে কিনা গাড়িতে,গাড়িতে ফুল বিক্রি করতো। রাজ এই মেয়েটার কাছ থেকেই বকুল ফুলের মালা কিনেছিল।
.
মেয়েটার কাছে গিয়ে কিছু বলার আগেই বলতে লাগলো” আপনাকে রাজ ভাইয়ার সাথে নিউ মার্কেট মোড়ে গাড়িতে দেখেছি না? ”
হ্যাঁ আমাকেই দেখেছিলে, আমি তোমার ফুল কিনিনি সেদিন।
.
না ম্যাম সেদিন রাজ ভাইয়া আমার সব ফুল কিনেছিল। আর বলেছিল গাড়িতে যে মেয়েটা বসে আছে বকুল ফুলের মালাতে মেয়েটাকে কেমন লাগবে?
.
আমি সেদিন হেঁসে দিয়ে বলেছিলাম অনেক সুন্দর লাগবে ভাবীকে! আচ্ছা ম্যাম ক্ষমা করবেন আপনি বড় লোক আপনাকে ভাবী ডাকার জন্য।
.
আরে না না কি বলছো? আমি তোমাদের ভাবীন,রাজই যে আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন।
.
আচ্ছা ঠিকআছে! জানো ভাবী, সেদিন সারাদিনে একটা ফুলও বিক্রি করতে পারছিলাম না। তোমাকে কিনদে বলেছিলাম তুমি আরো বকা দিয়েছো। জানো, আমি না সত্যি দুইদিন কিছু খায়নি। প্রথম দিন ফুল বিক্রির সবটাকে দিয়ে মা’র জন্য ঔষদ কিনে নিয়েছিলাম। তার পরের দিন সারাদিনে যখন একটা ফুলও বিক্রি করতে পারছিলাম না তখন, আপনাকে বলেছিলাম আপনি তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ভাইয়া সব ফুল কিনে আমার মায়ের চিকিৎসার সব খরচ নিয়েছিল। জানো আমরা গরীব কুঁড়ে ঘরে থাকি, তার পরেও ভাইয়া আমার মাকে মা বলে ডাকতো। কিন্তু একদিন মা মারা যায় ভাইয়া খুব কেঁদেছিল! আমিও তার পর থেকে ভাইয়া আমাকে তাঁর এতিম খানায় নিয়ে যায়। আমার মতো এদের অনেকের জীবনের গল্প এমনই। ভাবী আপনার কাছে একটা অনুরোধ করবো?
.
মেয়েটার কথায় চোখ দিয়ে অঝরো পানি আসছে, একটা মানুষের সাথে ৬ মাসের মতো ঘর করেও চিনতে পারলাম না। নিজেকে আজ বড়ই অভাগী মনে হচ্ছে।
.
আমার অনুরোধ টা কী করো ভাবী?
.
আচ্ছা বলো কী এমন অনুরোধ?
.
রাজ ভাইয়াকে কেউ দেখতে দিতে দিচ্ছে না আমাদেরকে। দয়া করে ভাইয়ার চাঁদমাখা মুখটা কী আমার মতো গরীব এতিম বোনটাকে কী দেখতে পারবে।
.
মেয়েটার কথায় নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। আজ বুঝতে পারছি, মানুষকে ভালবাসতে পারলে কতটা শান্তি পাওয়া যায়। মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম হ্যাঁ রে তোর ভাইয়াকে দেখাবো! দেখাতেই যে হবে।
.
ডাক্তারকে বলে আমার কলিজার টুকরা, আমার রাইসার আব্বুটাকে দেখতে রুমেতে প্রবেশ করলাম। পিনপিনে নীরবতা, কিছুক্ষণ পর পর টিট- টিট শব্দ হচ্ছে। মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগানো। কিছুক্ষণ পর ছোট মেয়েটা রাজের কপালে একটা পাপ্পি দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে গেল। নার্সকে বের হয়ে যেতে বললাম কিছুক্ষণের জন্য। নার্স প্রথমে না করলেও পরে আর অনুরোধে না করতে পারেনি।
.
নার্স চলে গেলে রাজের বুকেতে নিজের মাথাটা রাখলাম। চোখের পানিতে কাঁপড় ভেঁজে যাচ্ছে।বুকটাতে মাথা রেখে কেঁদে কেঁদে বলছি প্লিজ রাজ আমাকে ছেঁড়ে যেয়োনা। আমি বাঁচবোনা। তোমার বুকে না পারো এই অপরাধী মেয়েটাকে তোমার পায়ের নিচে একটু জায়গা দিয়ে। তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে? তুমি নি বলেছিলে বাঁচতে হয় একসাথো মরতে যতি হয় একসাথে মরবে। তাহলে কেন আমাকে ছেঁড়ে চলে যাচ্ছো। আমি পবিএ কুরআন নিয়ে কসম করেছি, তোমাকে আর কষ্ট দিবো না। তুমি, আমাকে আর দূরে সরয়ে দিয়োনা। তুমি না আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে চেয়েছ। বৃষ্টির রিম ঝিম ফোঁটার সাথে, কথা বলতে চেয়েছো আমার হাত ধরে। ধরবে না আর আমার হাত। কদম ফুল হাতে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে বলবে না আমাকে ভালোবাসো? তুমি না আমার কুলে শুয়ে জ্যোস্না দেখতে চেয়েছিলে,দেখবে না? কথা বলছো না কেন। আমি জানি আমি বড্ড বেশি অপরাধী, তবুও বলছি তোমায় আমাকে রেখে যেয়োনা। তিল তিল করে তোমার জন্য ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছি। একটিবার শুধু আমাকে বউ বলে ডাকো! কি হলো ” কলিজার টুকরা” কথা বলছো না কেন? মরার আগে আমাকে গলা টিপে মেরে যাও।কাঁদতে কাঁদতে, সমানে রাজের মুখে, কপালে বুকে চুপু খাচ্ছি। আর কাঁদছি।

**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

কলিজাটা ফেঁটে বের হয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে জীবনটা কেউ টেনে বের করে নিচ্ছে। বুকের মাঝে চিনচিনরে ব্যথাটা আরো তীব্র হচ্ছে। হঠাৎ পিছনে তাঁকিয়ে দেখি নার্স কাঁদছে।
.
ম্যাডাম প্লিজ রোগীর সাথে এমন করবেন না। এতে রোগীর ক্ষতি হবে। আপনাকে না করার ক্ষমতা নেই আমার। আমাদের মনেও ভালবাসা রয়েছে। কিন্তু আপনি যা করছেন তাতে পেশেন্টের ক্ষতি হবে।প্লিজ আপনি পেশেন্টকে একা থাকতে দেন।
.
নার্সের কথায় কিছু বলতে পারছিনা। রিত্ত পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে কিছু বলছেনা। শুধু কেঁদেই যাচ্ছে।
.
রিত্ত তুমি কাঁদছো কেন?
.
ভাবী একটু বাহিরে আসবেন, কথা আছে আপনার সাথে।
.
আচ্ছা চল, কি যেন বলতে চেয়েছিলে? এখন বল।
.
ভাবী কীভাবে যে কথাটা বলি,তবুও বলতে হবে। জানো, ভাবী আমার ভাইয়াটা যে ভিতরে ভিতরে এতটা কষ্ট পাচ্ছে তা আগেই বুঝতে পেয়েছিলাম।এটাও বুঝতে পেয়েছিলাম,যে তুমি ভাইয়াকে অবহেলা ছাড়া কিছু দিতে পারনি। কারণ আমিও একটা মেয়ে ছেলেদের মুখের দিকে তাকালে ভিতরের কষ্টটা আঁচ করতে পারা যায়। আর আমার তো ভাইয়া, দুই দেহের এক আত্মা। জানো ভাবী, ভাইয়া মৃত্যুর ক্ষণ গুনছে, শুধু মৃত্যু বরণ করেছে এ কথাটা ডাক্তারের কাছ থেকে শুনা বাকী! আর আমি এটাও জানি যে, ভাইয়ার এ অবস্হায় জন্য তুমি দায়ী। আহ সকালে তোমার আলমারীতে ভাইয়ার লেখা সুসাইড নোটের মতো আরেকটা সুসাইড পায়। ওটা দেখে বুঝতে বাকি থাকে না যে, ভাইয়াকে তুমি নিজের হাতে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে খাওয়েছো। ভাইয়া সত্যিটা জেনেও হাসি মুখে মৃত্যুটা মেনে নিতে তোমার দেওয়া দুধটুকু খেয়ে নিয়েছে। ছিঃ ভাবী ছিঃ লজ্জা করছে আজ মেয়ে বলে পরিচয় দিতে, লজ্জা করছে তোমাকে ভাবী বলে পরিচয় দিতে। একটা মেয়ে স্বামীর বাড়িতে আসে কেন জানো? সবাই জানলেও তুমি জানো না জানবে কীভাবে যে মেয়ে স্বামীকে মারার প্ল্যান করতে পারে তাঁর কাছে জানতে চাওয়াটা বোকামী। আচ্ছা আমি বলছি শোন; প্রতিটা মেয়ে লালশাড়ী পড়ে স্বামীর বাড়িতে আসে। প্রতিটি মেয়ে যখন, কবুল! কবুল! কবুল! তিনবার পড়ে নেয় তখন তাঁর মনে এক প্রকার ভালবাসা সৃষ্টি হয়। কারণ বিয়ে পবিএ সম্পর্ক মহান আল্লাহ্ তায়ালার বিধানগুলির একটি। তিনবার কবুল একটা মেয়েকে নতুন জীবন দান করে। সারাজীবন পাশে থাকার জন্য আশ্রয় হিসেবে একটা বটবৃক্ষ পায় একটি মেয়ে। বাবার বাড়িতে যেমন সে বটবৃক্ষটি থাকে বাবা তেমনি বিয়ের পরে বটবৃক্ষটি হলো তাঁর স্বামী। স্বামী যতই খারাপ হয়, স্বামীর খেদমত করেই জান্নাত হাসিল করতে হয়। স্বামীকে বুঝাতে হয় কোনটা ভাল কোনটা খারাপ, স্বামীর হৃদয় জয় করে নিতে হয় ভালবাসা দিয়ে। আর প্রতিটা মেয়ে যেমন লালশাড়ী পড়ে স্বামীর বাড়িতে আসে তেমনি বের হয় সাদা পোষাক পড়ে। আর আপনি সেই স্বামীকে নিজে হাতে খুন করার জন্য এসব করেছেন। আমার ভাইয়ার কি অন্যায় ছিলো, আপনাকে পাগলের মতো ভালবাসা, নাকি আপনার জন্য লুকিয়ে কান্না করাটা আমার ভাইয়ার অপরাধ ছিলো।

**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

জানি বলতে পারবেন না, জানেন আপনার গর্ভের সন্তান যখনি শুনতে পেয়েছে মেয়ে হবে সেদিন থেকে প্রতিদিন একটা করে পুতুল কিনে নিয়ে এসে, কণা আপুর রুমের আলমারিতে রেখে দিতো। আর আপনি সেই পুতুল বাহিরে ফেলে দিয়েছেন। বাহ্ খুব মহৎ আপনি, খুব মহৎ, ভালবেসে বকুল ফুলের মালা নিয়ে এসেছিল আর আপনি পায়ের নিচে ভালবসসে আনা ফুল গুলো পিষ্ঠ করেছেন। কানের ঝুমকো জোড়া আপনি ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছেন। ভাইয়ার ভালবাসা কি এতই অপবিএ ছিল যার জন্য ডাস্টবিনে জায়গা হয়।লজ্জা করে মেয়ে বলে পরিচয় দিতে যে কিনা নিজের ভালবাসার মানুষটিকে চিনতে পারেনা। আপনি নারী জাতির কলঙ্ক। আপনার পাপের ছাঁয়া যেন ভাইয়ার উপরে না পড়ে। আমি চাইনা আপনার জন্য ভাইয়া নতুন করে কষ্ট পাক। আপনার জন্য আমি আমার ভাইয়াকে হারিয়ে ফেলছি। কি চান আপনি, আপনার জন্য আমাদের সুখের সংসারের হাসি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর হ্যাঁ আপনাকে ভাইয়া ডির্ভোস দিয়ে দিয়েছে। আপনি আর আমাদের পরিবারের কেউ নাহ্। আপনাকে কখনো যেন আর ভাইয়ার পাশে না দেখি। আপনি ভাইয়ার পবিএ মুখটা পর্যন্ত দেখতে পারবেন না। আপনি একটা খুনী! শুধু খুনি না স্বামীর খুনি। আমার ভাইয়ার কিছু হয়ে গেলে আমি আপনাকে ছাঁড়বোনা। ( কেঁদে কেঁদে কথা গুলো বলল রিত্ত)
.
রিত্তের কথা শুনে টপ-টপ করে পানি পড়ছে চোখ থেকে। কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছে। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। চোখের সামনে বারবার রাজকে অপমান করার অবহেলা করার, ঘৃণা করার, রাজকে ঘুমের ওষধ খাওয়ানোর দৃশ্য মনে পড়ছে। কি করবো, রিত্তের কাছে কী বলবো। আমি যে সত্যিই অপরাধী। রাজকে দেখার অধিকারটুকুও হারালাম। একবার রিত্তকে বলতে চেয়েছিলাম রাজ আমাকে ডির্ভোস দিলেও আমি ডির্ভোস পেপারে সাইন করেনি। কিন্তু কোন মুখ নিয়ে বলবো। কান্না ছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই।
.
রিত্ত চলে গেলে, কাঁদছি, আর ভাবছি রাজকে শেষ বারের মতো একবার দেখে চলে যাবো। আর আমার অভিশপ্ত ছাঁয়া নিয়ে পাশে দাঁড়াবো না আর। এদিকে ঠিকমতো হাঁটতে পারছিনা। রাজের কেবিনে ডুকতেই দেখি “”””””

#_____________চলবে________________


#কোনো গল্পের পর্ব খুজে না পেলে সর্বশেষ পোস্ট কমেন্ট করে জানাবেন।



#আপনাদের উৎসাহ পেলে পরবর্তী পার্ট দিবো। আসা করি সবাই লাইক কমেন্ট করে সাথেই থাকবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here