#গল্প—-
#সখি ভালোবাসা কারে কয়?
পর্ব—-৮
কানিজ ফাতেমা
এই নিধি কি হয়েছে তোর? কাঁদছিস কেনো? শুভ এই শুভ কই তুমি এদিকে আসোতো- বলে মিথিলা আপু শুভকে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো।
তক্ষুণি শুভ আর শোয়েব ভাই অস্থিরতা নিয়ে দরজার সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো -কি হয়েছে?
এই শুভ নিধি কাঁদছে কেনো? কি বলেছো ওকে?
শুভ অবাক চোখে আমার দিকে তাকালে আমি দ্রুত চোখের পানি মুছে ফেলে মিথিলা আপুকে বললাম -“আমার কিছু হয়নি আপু । আর আমাকে কেউ কিছু বলেনি। চলো তোমাদের বাড়িতে যেতে হবে।” – বলে হাত ধরে টেনে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় মিথিলা আপু অবাক চোখে ইশারায় শুভকে জিজ্ঞেস করলো -“কি হয়েছে?”
আপুর ইশারা করার সময় আমারও চোখ পড়লো শুভর দিকে। মুখটা মলিন হয়ে গেছে মুহুর্তেই। দেখেও চোখ ফিরিয়ে মিথিলা আপুকে ঘরে রেখেই সদর দরজার দিকে চলে গেলাম আমি।
আমাকে চলে যেতে দেখে মিথিলা আপুও দ্রুত পা চালিয়ে
আমার সাথে বাড়ির বাইরে চলে এলো।
বড় খালামনিরা ঢাকা যাবে বলে বিকেলে আম্মু খুব তাড়াহুরো করে সাথে দেওয়ার জন্য খাবার গোছাতে লাগলো। এদিকে আমিও যে ঢাকা যাবো সে কথা কাউকে বলার সুযোগ করে উঠতে পারলো না অথবা চেষ্টা করলো না শুভ। যেটা দেখে আমিই নিজে থেকে হুট করে বড় খালামনির সামনে গিয়ে বলে উঠলাম – “খালামনি আমিও তোমার সাথেই যাবো।”
হঠাৎ বসার ঘরে সবার সামনে এসে বড় খালামনিকে কথাটা বলতেই পাশে নাস্তা পরিবেশন করতে থাকা আমার আম্মু চোখ বড়বড় করে তাকালো আমার দিকে। বাবাও একদম চুপ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
তবে বড় খালামনি হাসি মুখে উত্তর দিল “সত্যি যাবি?”
“আমার পরশু থেকে ক্লাস শুরু হবে। আমি প্রথম ক্লাসটা অ্যাটেন্ড করতে চাই খালামনি।”
“কিন্তু এখনো বিয়ে উঠানো হলো না। এলাকার লোকজন শুনলে কি বলবে?” – আম্মু অস্থিরতা নিয়ে আমার কাছে এগিয়ে এসে কথাটা বলতেই সোফায় বাবার পাশে বসা বড়খালু বলে উঠলো- “নাজমা লোকে কি বলবে ওসব নিয়ে ভেবো না। আর যেহেতু নিধির ক্লাস শুরু হবে সেহেতু নিধিকে তো ঢাকা যাওয়াই লাগবে। পরে একা যাওয়ার চেয়ে আমাদের সাথেই যাক।”
“বড় খালামনি আমি ঢাকায় গিয়ে হলে উঠবো।”
আমি হলে উঠার কথা বলতেই নির্ঝর ভাইয়া ডাইনিং থেকে এসে বসার ঘরে ঢুকেই বিরক্তি দেখিয়ে বলল- “হলে থাকবি মানে?”
“মানে কিছু না নির্ঝর ভাইয়া আমি এখন হলে থেকেই ক্লাস করতে চাই। আর তাছাড়া এখনো আমার বিয়ে উঠানোর অনুষ্ঠান হয়নি তাই আমি এভাবে হুট করে বড় খালামনিদের বাসায় যেতে চাই না।”- কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই আমি বসার ঘর থেকে ডাইনিং দিয়ে নিজের ঘরে যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম শুভ নাস্তার টেবিলে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রয়েছে।
যাই হোক, আমার হঠাৎ ঢাকা যাওয়ার আবদারে বাড়ির সবাই একটু অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। বাবা-মাও বড় খালা খালুকে কিছু বলতে পারছে না। আবার তারাও এই সমস্যার সমাধান কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না । কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল।
ফলশ্রুতিতে যেটা হলো বড় খালামনিরা যাবার সিদ্ধান্ত বদলে পরদিন সকালে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু কেউই আমাকে হলে রাখার সিদ্ধান্তে সম্মত হতে পারছে না দেখে আমি একটু অস্থির হয়ে উঠলাম। আমি শুভর সাথে সংসার করতে চাই না। তাই তেদের বাড়িতে গিয়ে থাকার প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু এখন কি করবো কেউ যদি রাজি না হয়?
রাত দশটার সময় সবাই একসাথে রাতের খাবার খেতে বসেছে। এর মধ্য ডাইনিংয়ে খেতে বসেই শুভ সবার সামনে বলে উঠলো নিধির যেহেতু হলে থাকার ইচ্ছা আমার মনে হয় কাল ঢাকা গিয়ে
“নিধিকে হলে তুলে দিয়ে আসবো আমি। আর বাসাতো দূরে না শ্যামলীতে।প্রয়োজন হলে যে কোনো সময় বাসায় চলে আসতে পারবে।”
ঘরের বিছানায় বসে শুভর কথাগুলো কানে আসতেই দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি সবাই কি বলে সেটা জানার জন্য।
সবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছি মা বড় খালামনি অস্বস্থি নিয়ে শুভর দিকে তাকিয়ে রয়েছে । নির্ঝর ভাইয়া চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে তবে বুঝতে পারলাম শুভর কথা শুনে বড়খালুর সাথে আমার বাবাও বিরক্ত হচ্ছেন।
বড়খালু বলে উঠলেন-“ বিয়ের পর নিজের বাড়ি ছেড়ে বাড়ির বৌ হলে থাকলে মানুষ কথা বলবে?”
“আব্বু আমিওতো এতদিন হলে থেকেই পড়াশোনা করেছি। তখন তো কেউ কিছু মনে করে নি।”
“তুমি ছেলে মানুষ তাছাড়া নিধি এখন বিবাহিত।”
“জানি আব্বু সেই জন্যই বলছি নিধির যেহেতু হলে থাকার ইচ্ছা সেহেতু ওকে হলে দিয়ে আসি। তারপর যদিন নিধির মনে হবে সে বাসায় থাকলে সুবিধা চলে আসবে”-বলে অর্ধেক খাবার খেয়েই চেয়ের থেকে উঠে আসলো শুভ। বেশিনে এসে হাত ধোয়ার সময় শুভ আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিয়ে দ্রুত হাত ধুয়ে নির্ঝর ভাইয়ার ঘরে চলে গেলো।
শুভ চলে গেলে আমিও নিশ্চিন্তে নিজের ঘরে এসে পড়ার টেবিলের সামনের চেয়ারটা টেনে বসে নিজের কাগজপত্রের ফাইলটা খুলে কাগজগুলো আবার উলটে পালটে দেখতে শুরু করলাম।
এর মধ্যে আম্মু ঘরে এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে রাগে রাগে বলল- “এটা কি ধরণের ব্যবহার নিধি?”
“আবার কি করলাম আম্মু?”
“শুভ নির্ঝরের ঘরে ঘুমতে যাচ্ছে কেনো?”
“তো কোথায় ঘুমাবে আম্মু?”
“দেখ নিধি তুই এতোটাও ছোট নোস যে এটা বুঝিস না বিয়ের পর শুভ এ ঘরে থাকবে।”
“শোনে আম্মু স্বাভাবিক ভাবে বিয়ে হলে সব কিছুই স্বাভাবিক ভাবে চলতো।”
“কিন্তু আমার বিয়েতো সুপার অস্বভাবিক একটা বিয়ে। তাই সব কিছুই অস্বাভাবিক দেখছো।”
“শোন নিধি এতো জেদ ভালো না পরে পস্তাতে হবে তোকে মনে রাখিস”-বলে আম্মু রাগ দেখিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে আমি আম্মুর কথায় কান না দিয়ে আবার আমার ভর্তি সংক্রান্ত কাগজগুলো উলটে দেখতে শুরু করলাম।
চলবে——