সখি ভালোবাসা কারে কয় পর্ব -০৭

#গল্প—
#সখি ভালোবাসা কারে কয়?
পর্ব—-৭
কানিজ ফাতেমা

রাত নয়টা বাজে আম্মু আর বড়ফুপু আমাদের বাসায় একলা রেখে বড়চাচীদের বাসায়ে চলে গেল। ও বাড়িতেও কেউ নেই । মিথিলা আপুদের নিয়ে আসার পর খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে তাই আম্মু আর বড়ফুপু রান্নাঘরের সব কাজ গুছিয়ে আমাকে ডেকে বলল -“ আমরা এখন মিথিলাদের বাড়ি যাচ্ছি, তোরাও না হয় চল।”
“আমি কোথাও যাবো না আম্মু”-আমার রুক্ষ জবাবা শুনে এবং বিরক্ত হয়ে কথা বলতে দেখে কিছুটা ধমকের স্বরেই বলল- “কি হয়েছে তোর নিধি? সব কিছুতে এতো জেদ দেখানো ভালো না।
সেই কখন থেকে দেখছি শুভ একা একা নির্ঝরের ঘরে বসে আছে। অথচ তোর কোনো বিকার নেই।”
“হ্যাঁ নেই আম্মু, কোনে সমস্যা?”

“এমন করে কথা বলছিস কেনো নিধি?”-বড় ফুপু কিছুটা আদর মাখা করে বললে- বড় ফুপুর মুখের উপর বলে দিলাম –
“তোমরা আমাকে এখন থেকে এভাবেই কথা বলতে দেখবে বড় ফুপু।”
“এই নিধি তোর কি মাথা খারাপ গয়ে গেছে নাকি? বড় ফুপুর সাথে এভাবে কথা বলছিস?”
“সত্যি আম্মু আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমার কারো সাথেই কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তোমরা যাওতে আম্মু”- বলে ডাইনিংয়ের চেয়ারে গিয়ে বসে পরলাম আমি।
বড় ফুপু আম্মু সত্যি বলছে আমি কখনো কারো সাথে বেয়াদবি তে দূরে থাক রাগ করে কথা বলিনি পর্যন্ত। অথচ এক দিনের মধ্যেই কত বদলে গেছি আমি।

আমার ব্যবহারে আম্মু হতবাক চেহারা দেখে বড় ফুপু আম্মুর চোখে চোখ রেখে চুপ করতে ইশারা করল। তারপর বলল – “ওরা দুজন এখন বাড়িতেই থাক। তাছাড়া টেবিলেতো খাবার সব দেওয়ায় আছে। নিধি তুই শুধু শুভকে সাথে করে খেয়ে নিস মা।”
আমি কেনো উত্তর দিলাম না।
আম্মু আমাকে নিয়ে কিছুটা চিন্তিত দেখে বড়ফুপু বলল- “নাজমা মেয়ের বিয়ে কি বিনা কথায় হয়? এতো ভাবিস না তো একসাথে থাকতে থাকতে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
বলে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল- “আমরা আসছি রে নিধি, জামাইকে ডেকে খেয়ে নিস” বলে আম্মুকে সাথে করে সদর দরজা পেরিয়ে বাইরে থেকে দরজা ভিরিয়ে দিয়ে চলে গেলো।

আম্মু আর বড়ফুপু চলে যাওয়ার পর শুভকে নির্ঝর ভাইয়ের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও না দেখার ভান করে চেয়ার থেকে উঠে আমার ঘরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে লক আটকে দিলাম।
তারপর কোনো কারণ ছাড়া বিছানায় বসে রইলাম কিছুক্ষণ। হঠাৎ চিঠির ব্যগটার কথা মনে হলো তাই গুছিয়ে রাখা লাগেজটা খুলে পার্সটা বের করে আবার বিছানায় এসে বসলাম।
পার্স থেকে দুইটি চিঠি বের করে আজ আবার পড়লাম।নীল প্রজাপ্রতি আকানো কাগজের একটিতে লেখা-
“মেয়ে বলবে আমায়
ভালোবাসা কারে কয়?
প্রমের দহনে তুমি বিহনে
কেনো সে যতনা ময়”?

পরের চিঠিটা খুলতেই আর একটি কবিতা-
“মেয়ে আমার হবে
করবে অভিমান
আমি তোমার জন্য
কবি হবো
লিখবো প্রেমের গান।”

চোখে পানি চলে আসলো আমার। এমন অনূভুতি কখনে আমার মনে আসেনি। কেনো আমার সঙ্গে এমন হচ্ছে ? ভেবে চিঠি দুইটি মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে কেঁদে ফেললাম আমি।
হঠাৎ দরজায় নক শুনে কে বলতেই শুভ ডেকে বলল -“একটু দরজাটা খুলবে?”
বিরক্ত লাগলো তবুও উঠে এসে দরজা খুলতেই শুভ বলল- “খাবে না? খালামনি অনেক কিছু রান্না করেছে।তুমি তো দুপুরেও কিছু খাওনি।”
শুভর ন্যকামি দেখে এতো রাগ হলো যে রাগে রাগে বলে উঠলাম – “আপনি বুঝতে পারছেন না আমি আপনাকে এড়িয়ে চলছি। আর আপনার খালামনি সব কিছু আপনার জন্য করেছে। এ বাড়িতে আমার কথা ভাবার জন্য কেউ নেই, বুঝতে পেরেছেন?
আর আমাকে বিরক্ত করতে আসবেন না”-বলে দরজাটা শুভর মুখের উপর বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পরলাম।

কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি এক ঘুমে সকাল। সারা রাত কেউ ডাকেওনি তাই টেরও পাইনি। সকালে মীরা আপু নাস্তার জন্য ডাকতে আসলে ঘর থেকে বেরিয়ে বুঝতে পারলাম বাসার সবাই সারা রাত মিথিলা আপুদের বাসাতেই ছিল। রাত জেগে আনন্দ করেছে।
মীরা আপু ঘরে ঢুকেই জিজ্ঞেস করলো- শুভ ভাইয়া কোথায়?
পেছন থেকে শুভ এসে বলল “আমি তো এখানেই ছিলাম মীরা তুমিই দেখতে পাওনি।”
“বা বা নতুন জামাইয়ের সকাল সকাল এতো ভালো মুড দেখে তো মনে হচ্ছে রোমান্স ভালোই চলছে। আচ্ছা এক কাজ করো দুজনে সুন্দর করে সেজে গুজে বাসায় চলে এসো তো । সবাই মিলে আড্ডা দিব । তাছাড়া বড়খালু বলছিলেন বিকেলে নাকি ঢাকা রওনা হবেন?”

মীরা আপুর মুখ থেকে ঢাকা যাওয়ার কথা জানতেই শুভর দিকে তাকিয়ে বললাম “আমিওতো যেতে চেয়েছিলাম॥ ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু হবে দুদিন পর থেকে।”
“ও হো নিধি শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিস মনে হচ্ছে। ঠিক আছে তোরা রেডি হয়ে নাস্তা করতে চলে আয় আর আমি গিয়ে ছোটচাচীকে বলছি তুইও শুভদের সাথেই ঢাকা যেতে চাস।”
মীরা আপু চলে যাবার পর শুভ আমার দিকে তাকিয়ে বলল- কি এখন মীরাদের বাড়িতে যাবে?
কিছু না বলে নিজের রুমে যাওয়ার সময় পেছন ফিরে শুভকে বললাম – “ঢাকা গিয়ে হলে উঠতে চাই।এভাবে হুট করে কারও বাসায় যেতে চাই না আমি। আপনি দোষ করেছেন সবার সাথে কথা বলে আমাকে হলে থাকার ব্যবস্থাও আপনিই করবেন।বুঝতে পেরেছেন?”
শুভ দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল- “হুম”
বলে ডাইনিংয়ের একটা চেয়ার টেনে হেলান দিয়ে বসে বলল ঠিক আছে কিন্তু কিছু খেতে তো দিবে? সারা রাত না খেয়ে আছি , এভাবে থাকলে তো প্রেশার লো হয়ে যাবে তখন সবাইকে বলবো কি করে নিধি হলে উঠবে বলে ঢাকা যেতে চাই- বলে আমার দিকে তাকিয়ে অসহায় চেহারা করে হাসলে রাগে শরীর জ্বলে গেলো আমার। শুভকে কোনে উত্তর দেওয়ার ইচ্ছে নেই আমার তাই ডাইনিংয়ে একলা রেখে রুমে চলে গেলাম।

কিছুসময় পর মিথিলা আপু শোয়েব ভাইয়াকে সাথে করে খুব হইচই করতে করতে নিধি শুভ বলে ডাকতে ডাকতে বাসায় ঢুকলে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে হালকা হাসি মুখ করে মিথিলা আপুর সামনে এসে দাঁড়াতেই আমাকে জোড়িয়ে ধরে বলল –
“আমি যে কি খুশি হয়েছি নিধি, তোর আর শুভর বিয়ের কথা শুনে। কই শুভ কোথায়? বিয়ের আগে এতো মিথিলার কাছে বুদ্ধি চেয়ে চেয়ে অস্থির আর যেই বৌ পেয়ে গেছে তখন আমার কথা মনেও হলো না?”
“কই তোর শুভ কই। শুভর নামে ফাইন করা হবে”-বলে শোয়েব ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো মিথিলা আপু।
এর মধ্যে শুভ বসার ঘর থেকে বাইরে এসে দাঁড়ালে মিথিলা আপু রাগ দেখানোর মত করে বলল – “কি ডাক্তার সাহেব কাজের সময় কাজি আর কাজ ফুরালেই পাজি তাইনা?”
“আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা করার তর সইলো না তোমাদের?”

মিথিলা আপু শুভর সাথে মজা করে কথাগুলে বলছে ঠিকই কিন্তু আমার শুভকে হাসিমুখে খুশি মনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্ত লাগছে।
এর মধ্যে মিথিলা আপু হঠাৎ বলে উঠলো- “কি সব বলে দিয়েছো নিধিকে?”
মিথিলা আপু কথাটা বলতেই শুভ ইশারা করে মিথিলা আপুকে কি যেনে বলতে মানা করলো। আমি ও শোয়েব ভাইয়া অবাক চেখে বোঝার চেষ্টা করছি “কি কথা?”
যাইহোক শুভর কোনে কথা শোনার আগ্রহ এই মুহুর্তে আমার নেই। যেটুকু কথা বলছি সেটা এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে হলে উঠার ব্যবস্থা করার জন্য।

শুভর ইশারায় মিথিলা আপু কথা বদলে বলল- “আচ্ছা থাক ওসব কথা পরে হবে । এখন চলতো সবাই একসাথে নাস্তা করে আড্ডা দেবো।”
“আপু আমি এখন যাবো না।”
“কেনো যাবিনা শুনি।”
“এই শুভ যাওতো একটা সুন্দর পাজ্ঞাবী পড়ে তৈরী হয়ে নাওয় আর নিধি তুইও চল শাড়ি পরবি। একদিন মাত্র বিয়ে হয়েছে আর কি সেলোয়ার কামিজ পরে আছিস। চল তোকে সাজিয়ে নিয়ে আমরা দুই নতুন বৌ জামাইদের সাথে ছবি তুলবো। সুন্দর স্মৃতি হয়ে থাকবে॥”
“হুম আর আমার কি হবে মিথিলা?” শোয়েব ভাই মুখ ভেটকে কথাটা বলতেই মিথিলা আপু হেসে বলল-“বসে থাক পাঁচ মিনিটে নিধিকে রেডি করে নিয়ে আসছি। এই শুভ যাওতে রেডি হয়ে নেওয়।”
এর মধ্যে মীরা আপু বাড়ির দরজায় এসে বাইরে থেকেই চিৎকার করে ডেকে বলল – “সবাই তোমাদের ডাকছে । নিধি মিথিলা আপু কেই তোমরা তাড়াতাড়ি আসোতো।”
“তুই বাসায় গিয়ে বল আসছি আমরা” বলে মিথিলা আপু আমার শাড়িতে সিপটিপিন লাগিয়ে বলল -“তাড়াতাড়ি গয়না গুলে পরে ফেল।”
“আমি আর কিছুই পরবে না আপু- আমার ভালে লাগছে না”- ছলছল চোখে মিথিলা আপুক্ কথাটা বলতেই অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো -“কি হয়েছে তোর নিধি?”
চলবে———-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here