রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই অবনি শুনতে পেলো তিনদিন পর তার চাচাতো ভাই আবিদের বিয়ে। অবনি কথা শুনে থমকে গেলো। অবনির চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে ফ্লোরে পরলো। অবনি যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারতেছে না। অবনির মনে মনে বললো আবিদ ভাইয়ার বিয়ে এটা হতে পারে না। অবনি ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। অবনিকে এইভাবে সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবনির বোন বললো ‘কিরে আপু পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? আম্মু ডাকছে তো ওইখানে চল
ছোট বোনের কথায় অবনির হুস ফিরলো। অবনি থমথমে গলায় বললো
‘ যাচ্ছি বলেই অবনি তার মায়ের কাছে আসলো। অবনির দাদি অবনিকে দেখে মুখ বাকা করে বললো
‘ এসে গেছে অল’ক্ষী।’
অবনি মাথা নিচু করে রইলো। আবিদের মা বললো
‘ শুন অবনি এক মাস পর আবিদের বিয়ে তুই এই কয়দিন মুখটাকে একটু ফর্সা করিস ক্রিম নিয়ে।তোর চেহারা দেখে মানুষ আমাদেরকে অপমান না করে।’
অবনি মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলতে লাগলো। অবনির গায়ের রং কালো যার কারনে আবিদের মা অবনিকে ফর্সা হতে বলেছে।
অবনি মুখ ফুসকে বললো
‘ আবিদ ভাইয়ার বিয়ে তোমরা আমাকে কিছু বললে না?
অবনির কথা শুনে অবনির দাদি কিছুটা রাগি সুরে বললো
‘ তোকে কি সব কথা বলতে হবে নাকি?
‘ মা মেয়েটার সাথে এমন করছেন কেনো?
অবনির মা বললো।
অবনির দাদি তখন বললো
‘ তোমার মেয়ের সাথে আর কিভাবে কথা বলবো। আমাকে কি এখন তোমাদের থেকে শিখতে হবে নাকি?
অবনির দাদির কথায় সবাই চুপ করে রইলো। আবিদের মা হেসে বললো
‘ আবিদের ফ্রেন্ড হয় মেয়ে। আবিদ আর মাইশা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। মাইশা দেখতে অনেক ফর্সা আমার ছেলের সাথে ভালো মানাবে।’
অবনি কথাটা শুনে বুঝতে পারলো কিসের জন্য আবিদ তাকে ঠকালো। অবনি তাচ্ছিল্য হাসি দিলো। অবনি ভাবতে পারছে না আবিদ মাইশাকে ভালোবাসে। অবনি মনে মনে বললো
‘ তাহলে আমাকে যে ভালোবাসে সেটা কি?
অবনি নিজের রুমে যাবে হঠাৎ পিছন থেকে আবিদ এসে বললো
‘ অবনি তোর ভাবিকে দেখবি না?
অবনি কথাটা শুনে কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। অবনি নিজের রুমে এসে নিজেকে আর আটকাতে পারলো না ডুকরে কেদেঁ উঠলো।
অবনি কান্নারতো কন্ঠে বললো
‘ আবিদ ভাইয়া কেনো আমার সাথে প্রতারণা করলো? সে তো আমাকে ভালোবাসে তাহলে কিভাবে অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারে? তাহলে কি আমার সাথে এতোদিন নাটক করেছে?
অবনি আর কিছু ভাবতে পারছে না মাথাটা কেমন যেনো করতেছে। অবনি ফ্লোর থেকে উঠে টেবিলে এসে ডাইরিটা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলো কিছুদিন আগের কথা। একদিন সকালে আবিদ অবনিকে বলেছিলো পাখি তোর জন্য একটা গিফট আছে।’
অবনি তখন ভ্রু কুচকে বললো
‘ কি গিফট
আবিদ মুচকি হেসে অবনিকে বললো
‘ দিবো তবে আগে আমার কপালে চুমু দিতে হবে।’
অবনি আবিদের এমন আবদার শুনে না করেনি। আবিদের কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়েছিলো। আবিদ অবনিকে একটা ডাইরি দিয়ে বলেছিলো
‘ অবনি এই ডাইরিটায় আমাকে নিয়ে তোর মনের অভিযোগ গুলো লিখবি। আমাদের যখন বিয়ে হবে তখন আমি ডাইরিটা খুলে দেখবো কত অভিযোগ আছে আমার নামে।’
অবনি তখন মুচকি হেসে বলেছিলো
‘ তোমাকে নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই আবিদ ভাইয়া।’
অবনি কথাগুলো ভাবতেই কান্না করে দিলো। অবনির ছোট বোন আফিহা বোনের কান্না দেখে নিজে কেদেঁ দিলো। অবনি আফিহার কান্নার শব্দ শুনে হাটু গেড়ে নিচে বসে আফিহার চোখের পানি মুছে বললো
‘ কান্না করতেছিস কেনো বোনু?
আফিহা তখন বললো
‘ তুই কান্না করতেছিস সেই জন্য।’
অবনি তখন মুচকি হেসে চোখের জল মুছে বললো
‘ এই দেখ কান্না করছি না।’
আফিহা অবনিকে জড়িয়ে ধরে বললো
‘ আপুই তুই একদম ওই ঠকবাজ ভাইয়াকে নিয়ে ভাববি না। তোকে ভাইয়া কষ্ট দিয়েছে একদিন ভাইয়া তোর থেকে বেশি কষ্ট ভোগ করবে দেখিস।’
অবনি তখন আফিহার মুখে হাত দিয়ে বললো
‘ না বোনু এই কথা বলে না সে আমাকে কষ্ট দিক কিন্তু আমি তো তাকে ভালোবাসি।’
আফিহা তখন বললো
‘ আপুই তোকে নিচে ডাকছে। আবিদ ভাইয়ার হবু বউ এসেছে।’
অবনি প্রতি উত্তরে কিছু বললো না।
এই বাড়িতে অবনিকে কেউ কিছু বললে আফিহা অবনির হয়ে বকা দেয়। অবনিকে কান্না করতে দেখলে আফিহা কেদেঁ দেয়। অবনি অনেক লাকি এমন একটা বোন পেয়ে।
কিছুক্ষন পর
অবনি ড্রয়িং রুমে এসে দেখে সবাই মাইশাকে নিয়ে মেতে আছে। অবনি ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। মাইশা অবনিকে দেখে আবিদের মাকে বললো
‘ আন্টি এই মেয়েটা কি এই বাড়ির কাজের লোক?
আবিদের মা তখন মাইশাকে বললো
‘ না ও হচ্ছে আমাদের বাড়ির মে, আরেকটুক বলতে যাবে তার আগে অবনির দাদি বললো কাজের লোক।’
অবনি তার দাদির কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো। অবনি ভাবতে পারেনি তার দাদি তাকে এই কথা বলবে। অবনি যানে তার দাদি তাকে দেখতে পারে না কারন টা হচ্ছে অবনির যেদিন ১৪তম জন্মদিন হয় ঠিক সেইদিন অবনির বাবা অবনিকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে যায় ঠিক সেই দিনই এক্সিডেন্টে অবনির বাবা মা’রা যায় যার কারনে অবনির দাদি অবনিকে অল’ক্ষি বলে। অবনিকে তিনি দু চোখে সহ্য করতে পারে না। সব সময় অবনিকে অপমান করে। অবনি ছোট সময় কান্না করতো দাদির কথা শুনে তবে এখন সহ্য করে নিয়েছে।
মাইশা বললো
‘ ওহ আচ্ছা।’
উপর থেকে আবিদ জোড়ে বলে উঠলো
‘ আমার রুমে এক গ্লাস পানি দাও তো।’
আবিদের মা তখন অবনিকে বললো
‘ যা তো ওর রুমে পানি নিয়ে।’
অবনি দ্রুততার সঙ্গে আচ্ছা বললো। অবনি তো এই সুযোগের অপেক্ষা করেছিলো কখন আবিদের সাথে তার দেখা হবে এবং তার সব প্রশ্নের উত্তর পাবে। অবনি পানি নিয়ে আবিদের দরজার সামনে আসতেই আবিদ অবনির হাত টান দিয়ে পানির গ্লাস টেবিলে রেখে অবনির কোমরে হাত রাখলো। অবনি কেপে উঠলো। অবনি আবিদের কাজ দেখে রেগে বললো
‘ কি হচ্ছে কি আবিদ ভাইয়া। তোমার ওই নোংরা হাত দিয়ে আমায় ছুঁবে না। তুমি একটা ঠকবাজ, প্রতারক। তুমি না আমাকে ভালোবাসো? আমাকে তোমার সাথে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখিয়ে এখন তুমি অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করতেছো ছিহ্।’
এক রাশ ঘৃণা নিয়ে বললো অবনি। অবনির কথা শুনে আবিদ অবনির হাত জোড়ে চেপে ধরে রেগে বললো
‘ তোর মতো মেয়েকে এই আবিদ কখনো ভালোবাসেনি। আমি তোর সাথে অভিনয় করেছি।’
আবিদ জোড়ে হাত ধরাই অবনি ব্যথায় শব্দ করে কেদেঁ উঠলো। অবনি বললো’ লাগছে ছাড়ো আমাকে।’
অবনির কথায় আবিদ তখন হাত ছেড়ে দিলো। আবিদের প্রতিটা কথা অবনির বুকে তিরের মতো বিঁধছে। অবনি দৌড়ে আবিদের রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে এসে বালিশে মুখ গুজে বললো
‘ কেনো আবিদ ভাইয়া আমাকে ঠকালে? আমি তো তোমার মায়ায় থাকতে চাইনি মুক্তি তো দিয়েছিলাম তোমাকে তারপর তো তুমি আমাকে তোমার সাথে ঘর বাধানোর স্বপ্ন দেখালে আর এখন কিনা তুমি আমাকে ঠকিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতেছো।’
” অবনি যখন ক্লাস নাইনে পড়ে সেই সময় থেকে অবনি আবিদকে ভালোবাসে। অবনির কিশোরী বয়সে আবিদ তার প্রথম ভালোবাসা। অবনি যখন ইন্টার ফাষ্ট ইয়ারে উঠলো তখন ও বুঝতে পারলো আবিদ কখনোই তাকে ভালোবাসবে না কারন তার চেহারা যে কালো। সে যে স্মার্ট না। আস্তে আস্তে অবনি আবিদের মায়া থেকে বেড় হতে লাগলো কিন্তু একদিন আবিদ তাকে পপ্রোজ করলো। অবনি আবিদকে বললো
‘ আবিদ ভাইয়া তোমার সাথে আমাকে কেউ মানবে না।
আবিদ প্রতি উত্তরে তখন বলেছিলো
‘ আমি তোর রুপ দেখে ভালোবাসিনি। অবনি আমি চাই তুই মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্ত পযন্ত আমার সাথে থাক। প্লিজ আমায় না করিস না।’
আবিদের আকুল ভরা কন্ঠে অবনি সেইদিন আবিদকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়নি। অবনি সেই দিন তার মনের সুপ্ত অনুভূতি গুলো আবিদকে বলেছে।
তারপর থেকে অবনি আবিদকে নিয়ে নতুন করে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখলো। কিন্তু আবিদ তাকে এই ভাবে ঠকালো অবনির যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না। অবনি কান্না করতেছে। হঠাৎ অবনির দাদি অবনির রুমে এসে অবনির চুলের মুঠি ধরে বললো’ শুন অল’ক্ষি তোর মনে আবিদকে নিয়ে যা আছে সব মুছে ফেল। আমার সোনার দাদু ভাইকে নিয়ে আর স্বপ্ন বাধিস না। তোর জন্য যদি আবিদের বিয়ে ভেঙ্গে যায় তাহলে তোকে এই বাড়ি থেকে বের করে দিতে বাধ্য হবো।’
এই বলে চুল ছেড়ে রুম থেকে চলে গেলেন।
চুল ধরাই অবনি ব্যথায় আহ্ করে উঠলো। অবনির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে অবনি বললো
‘ কেনো আমার সাথে এই রকম করছো তোমরা? আমি কি মানুষ না?
কাদতে কাদতে অবনির চোখ ফুলে গেছে। অবনি বেলকনিতে এসে বাহিরে তাকিয়ে কান্না করছে হঠাৎ আকাশে বৃষ্টি শুরু হলো। অবনি হঠাৎ পাশের বেলকনিতে তাকাতে দেখে আবিদ আর মাইশা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে। অবনি বুকে তিব্র ব্যথা অনুভব করলো। আজ নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে অসহায় মানুষ মনে হচ্ছে। আবিদ মাইশার হাতে চুমু দিতে লাগলো। অবনি আর সহ্য করতে পারলো না। ফ্লোরে বসে চোখের জল ফেলতে লাগলো। অবনি বললো,,
#ঘর_বাধার_স্বপ্ন
#সূচনা_পর্ব
#আরোহী_ইসলাম
#চলবে…