ঘর বাধার স্বপ্ন পর্ব -০২

#ঘর_বাধার_স্বপ্ন
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:২

অবনি ভেজা কন্ঠে বললো ‘ আবিদ ভাইয়া তুমি একজন প্রতারক। তোমাকে আমি কখনোই ক্ষমা করবো না কখনোই না।’ এই বলে অবনি ফ্লোর থেকে উঠে আবিদের দেওয়া ডাইরি ছিড়ে ফেলতে লাগলো। অবনির মন চাচ্ছে সব কিছু ভেঙ্গে ফেলতে নিজেকে শেষ করে দিতে। অবনি ফ্লোরে বসে ডাইরিটা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলতে লাগলো
‘ কেনো কেনো আমার সাথে এই রকম হয়? যেটা আমি খুব করে চায় সেইটাই আল্লাহ্ আমার থেকে কেড়ে নেন। আমি যে আর পারছি না।’

পেয়ে হারিয়ে ফেলার অনুভূতিটা খুব বাজে। হাহাকারটা কাউকে বোঝানো যায় না। অবনির নাকের ডগা লালচে রুপ ধারন করেছে। চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। কিছুখন পর অবনি ফ্লোর থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখ মুখে পানি দিয়ে আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে বললো
‘ আমি ওই বিশ্বাসঘাতকের কথা ভেবে চোখের জল ফেলবো না আর। আমি নিজের পড়ালেখায় মনোযোগ দিবো। নিজের পায়ে দাড়াবো ওকে দেখিয়ে দিবো।’
অবনি এইগুলো বলতেছে হঠাৎ অবনির মা অবনিকে বললো
‘ অবনি কোথায় তুই?

অবনি তখন ওয়াশরুম থেকে বেড় হয়ে বললো
‘ কি হয়েছে বলো?

অবনির মা তখন অবনির কাছে এসে অবনির হাতে একটা বাক্স দিয়ে মলিন কন্ঠে বললো
‘ অবনি এইটা আবিদের মা দিয়েছে তোকে।’

অবনি তখন ভ্রু কুচকে বাক্সটা খুলে দেখে ক্রিমের বাক্স। অবনি তাচ্ছিল্য সুরে তার মাকে বললো
‘ মা আমি কালো এতে আমি অনেক খুশি জানো কেনো? কারনটা হচ্ছে আল্লাহ তো আমার গায়ের রংটা কালো দিয়েছে আমার শরীরের কোনো অংশ তো অপূর্ণ দেয়নি। তাহলে কেনো আমি ক্রিম নিবো।’

অবনির মা তখন বললো
‘ আমি কি করবো বল? তোর দাদির উপরে তো একটাও কথা বলতে পারি না।’

অবনি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ক্রিমটা টেবিলে রাখলো। নিচ থেকে অবনির দাদি অবনির মাকে ডাকতেই অবনির মা চলে গেলো।

বিকেলে
অবনি রুমে বসে আফিহার সাথে কথা বলছে। আফিহা খুশি হয়ে অবনিকে বললো
‘আপুই জানিস আবিদ ভাইয়ার বিয়ের জন্য একটু পর শপিং করতে যাবে।’

কথাটা শুনে অবনির চোখ মুখ বিষাদে ছেয়ে গেলো। অবনি বললো নাহ্। অবনি আর আফিহা কথা বলছে অবনির দাদি অবনির রুমে এসে আফিহার দিকে তাকিয়ে বললো
‘ আফিহা রুম থেকে যাতো।’

আফিহা বললো
‘ দাদু তুমি আপুকে বকবে না কিন্তু।’

অবনির দাদি তখন বিরক্ত কন্ঠে বললো
‘ যা এইখান থেকে।’
আফিহা অবনির দিকে তাকিয়ে চলে গেলো। আফিহা চলে যেতেই অবনির দাদি অবনির কাছে এসে চোখ মুখ শক্ত করে বললো
‘ শুন মাইয়া আবিদের বিয়ের শপিং করার জন্য যাইবো। তোকে যদি ওরা নিতে চাই তবুও তুই যাইবি না। আমি চায়না আমার সোনার টুকরো দাদু ভাইয়ের বিয়ের কেনাকাটায় কোনো অলক্ষি যাক।’

অবনি তখন তার দাদির কথা শুনে তাচ্ছিল্য সুরে বললো
‘ আমি কোনোদিন তোমার কোনো কথা অমান্য করিনি আজও করবো না।’

অবনির দাদি মুখ বাকা করে অবনির রুম থেকে চলে গেলো। অবনিকে যতই কষ্টদিক না কেনো তবুও কেনো জানি অবনির দাদির শান্তি লাগে না। অবনির দাদি অবনিকে সব সময় তার ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী করে।

অবনি তার দাদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
‘ দাদি কি কখনোই আমাকে ভালোবাসবে না নাকি সব সময় অপছন্দ করবে। আমি কি সত্যিই অ’লক্ষি অবনি এইগুলো ভাবতেছে হঠাৎ নিচ ডেকে ডাকার শব্দে অবনি ড্রয়িং রুমে আসলো। অবনিকে দেখে আবিদের মা বললো
‘ অবনি আমাদের সাথে তুইও শপিং এ যাবি। যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়েনে। ‘

অবনি তখন তার দাদির মুখের দিকে তাকিয়ে থমথমে গলায় বললো
‘ না কাকি তোমরা যাও আমি বাড়িতে থাকি।’

আবিদের মা তখন বললো
‘ না তোকে যেতেই হবে।’

আবিদের মায়ের জোরাজরিতে অবনি আচ্ছা বলতেই আবিদ বলে উঠলো
‘ আম্মু ও যেহুতু যেতে চাচ্ছে না আর জোড় করো না।’

আবিদের কথায় অবনি সিড়ির দিকে তাকাতেই দেখে আবিদ আর মাইশা একে অপরের হাত ধরে নিচে নামনতেছে। অবনি মাইশা আর আবিদের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। অবনির বুকের ভিতরটা ছ‍্যাঁত করে উঠলো। অবনির চোখ দিয়ে টপ করে পানি পরলো। অবনি আবিদের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। অবনির কেনো জানি প্রচুর রাগ হচ্ছে মনে চাচ্ছে মাইশার চুল ছিড়ে দিতে। অবনি দাতে দাত চেপে সহ‍্য করছে।আবিদের মা আবিদের কথা শুনে বললো
‘ অবনি তো রাজি হয়েছে তুই মানা করতেছিস কেনো?

এদিকে
অবনির দাদি তো রক্তচোখে অবনির দিকে তাকিয়ে আছে। তার কথা অবনি অমান্য করেছে। অবনির দাদি বললো
‘ অবনি যাবে না তোমরা যাও।’

অবনির দাদির কথায় সবাই আর কথা বললো না। সবাই যেতেই অবনির দাদি অবনির হাত ধরে রান্নাঘরে এনে ফুটন্ত গরম পানির ভিতরে অবনির হাত চেপে ধরে ছেড়ে দিলো। অবনির মা বললো’ কি করছেন আম্মা মেয়েটা তো মরে যাবে আপনার অত‍্যাচারে।’

অবনির দাদি তখন রূঢ় কন্ঠে বললো
‘ ওকে বলেছিলাম না ও যাওয়ার জন্য যেনো রাজি না হয় তবুও কেনো গেলো ও?

অবনির মা চুপ করে আছে। অবনি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে হাতে। চলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। অবনি কেদেঁ দিলো। অবনির মা ঠান্ডা পানি এনে অবনির হাতে দিলো। অবনি হাত সরিয়ে নিলো। তারপর নিজের রুমে চলে আসলো। অবনির মা বুঝতে পারলো অবনি রেগে গেছে তার উপরে সত্যি তো এই রকম অত‍্যাচার কে সহ‍্য করতে পারে। অবনির মা অবনির পিছু পিছু অবনির রুমে এসে বললো
‘ অবনি হাতে মলম লাগিয়ে নে ভালো লাগবে।’

অবনি তার মায়ের কথায় কিছু বললো না। অবনি মেডিসিন লাগিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো। অবনি ডুকরে কেদেঁ বললো
‘ কেনো আমার সাথে এই রকম হচ্ছে? এতো অত‍্যাচার সহ‍্য হচ্ছে না আর।’

বেশ কিছুক্ষণ পর
অবনি ড্রয়িং রুমে আছে হঠাৎ কলিং বেল এর শব্দে দরজা খুলে দেখে আবিদ দাঁড়িয়ে আছে। অবনি আবিদের দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হতেই অবনি চোখ নামিয়ে দরজার কাছ থেকে সরে ধারালো। আবিদ ভিতরে প্রবেশ করে ওর দাদির কাছে এসে বললো
‘ দাদু তোমার জন্য শাড়ি এনেছি।’

অবনির দাদি তখন বললো
‘ আর সবাই কই?

আবিদ তখন বললো
‘ আসতেছে।’

তারপর সবাই শপিং শেষ করে আসলো। আবিদের মা সবাই কে জামা কাপড় দিলো। অবনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আবিদের মা আফসোস সুরে বললো
‘ তোর জন্য আনতে পারিনি। অন্য সময় তোর জন্য কিনে দিবোনি।

অবনির দাদি তখন ফোড়ন কেটে বললো
‘ অবনির জন্য কিছু কিনতে হবে না ওর জামাকাপড় আছে।’

অবনি ওর দাদির কথায় তাচ্ছিল্য সুরে বললো
‘ আমার জন্য কিছু আনতে হবে না।’

আবিদ শয়তানি এসে অবনির হাতে একটা ব‍্যাগ ধরিয়ে দিয়ে অবনির কিছুটা কাছে এসে আস্তে করে বললো
‘ আমার বিয়েতে আমার এক্সের জন্য কিছু আনবো না এইটা কি হয়।’

অবনি আবিদের কথায় চোখ মুখ শক্ত করে আবিদকে বললো
‘ তোমার শপিং তুমিই নাও।
এই বলে অবনি নিজের রুমে চলে গেলো। অবনি নিজের রুমে এসে চুপচাপ বসে রইলো।

রাতে অবনি আবিদের দেওয়া জামা নিয়ে আবিদের রুমে প্রবেশ করলো। অবনি সোজা আবিদের সামনে দাঁড়িয়ে আবিদের দিকে জামা ছুড়ে মেরে বললো
‘ সবাই কে তোমার হবু বউয়ের মতো ভাববে না। তোমার লজ্জা করে না এই রকম একটা ড্রেস আমায় দিতে?

আবিদের দেওয়া ড্রেসটা ছিলো খুব ছোট যা অতিরিক্ত মডার্ন মেয়েরা পরে। আবিদের দেওয়া ব‍্যাগ খুলতেই অবনির মাথা গরম হয়ে যায়।

আবিদ অবনির কাজ দেখে অবনির ঠোটের কাছে নিজের নক দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললো
‘ আমার ড্রেসটা বুঝি পছন্দ হয়নি।’

অবনি আবিদের থেকে দূরে সরে আঙুল আবিদের মুখের দিকে উঠিয়ে বললো
‘ তোমার লজ্জা করে না আমাকে ছোয়ায়।

আবিদ তখন হোহো করে হেসে অবনিকে বললো
‘ না লজ্জা করে না।’

অবনি রূঢ় কন্ঠে বললো
‘ তুমি আমাকে ঠকিয়েছো। কিভাবে আমাকে স্বপ্ন দেখিয়ে অন্য কারো সাথে ঘর বাধছো। আমি তা সবাই কে বলে দিবো।’

আবিদ তখন পৈশাচিক হাসি দিয়ে বললো
‘ তুই যদি এই কথা কাউকে বলিস তাহলে তোর প্রান প্রিয় বোন আফিহা আর থাকবে না এই পৃথিবীত।’

অবনি আবিদের কথায় ভয় পেলো। অবনি তার বোনকে অনেক ভালোবাসে। অবনি ভাবতে পারছে না আবিদ এতোটা খারাপ। অবনি বললো,,

#চলবে….

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।সামনে কি হতে চলেছে অনুমান করুন। গল্প কেমন হয়েছে অবশ্যই বলবেন। হ‍্যাপি রিডিং।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here