#ঘর_বাধার_স্বপ্ন
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:৩
অবনি ঘৃণার দৃষ্টিতে আবিদকে বললো’ ছিহ্ তুমি এতোটা খারাপ সেটা জানলে কখনোই তোমার মতো শয়’তান’কে ভালোবাসতাম না।’
আবিদ তখন হেসে বললো
‘ ভালো যখন বেসে ফেলেছিস এখন তো তোকে কষ্ট পেতে হবেই।’
আবিদ আবার অবনির কিছুটা কাছে এসে বললো
‘ জানিস তোকে কষ্ট দেওয়াতে আমি অনেক খুশি হয়। তোর চোখে পানি দেখলে কেনো জানি আমার মুখে হাসি চলে আসে।’
অবনি আবিদকে ধাক্কা দিয়ে কিছুটা জোড়ে বললো
‘ এতোই যখন ঘৃণা করো তাহলে কেনো ভালোবাসার অভিনয় করেছিলে?
আবিদ তখন বললো ‘ তোকে কষ্ট দেওয়ার জন্য।’
অবনি ভেজা কন্ঠে বললো’ তুমি আমাকে কষ্ট দেওয়ার ফল ভোগ করবেই একদিন। আমি তোমাকে ছেড়ে দিলেও প্রকৃতি ঠিকই তোমার কর্মের ফল দিবে।’
এই বলে অবনি নিজের রুমে চলে আসলো। অবনি ধাক্কা দেওয়াই আবিদ নিচে পরে গেছে। আবিদ উঠে শয়তানি হেসে বললো
‘আমাকে ধাক্কা দেওয়ার ফল তুই পাবি।’
অবনি নিজের রুমে এসে দেখে আফিহা বিছানায় বসে কি জেনো ভাবছে। অবনি আফিহার কাছে গিয়ে বললো
‘ কিরে তুই এইখানে কেনো?
আফিহা তখন বললো
‘ আপুই তোকে দাদু কষ্ট দিয়েছে তাই না?
অবনি তখন হাতের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে বললো
‘ বাদ দে।’
আফিহা মলম নিয়ে অবনির হাতে লাগিয়ে দিলো। অবনি আফিহাকে জড়িয়ে ধরে মুচকি হাসলো। দরজার বাহির থেকে দুই বোনের ভালোবাসা দেখতেছে অবনির মা। অবনির মা মুচকি হেসে বললো
‘ তোদের দুইবোনের ভালোবাসা যেনো সব সময় অটুট থাকে।’ এই বলে তিনি চলে গেলো।
————
তিন দিন পর
” আজ আবিদের মেহেদী অনুষ্ঠান। বাড়িতে মানুষে গিজগিজ করতেছে। অবনির এতো মানুষের মধ্যেও নিজেকে একা লাগছে। কড়া রোদের মধ্যে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে অবনি। আর একদিন পর আবিদ মাইশাকে বউ করে আনবে যেখানে ওর থাকার কথা ছিলো সেইখানে মাইশা থাকবে ভাবতেই অবনির বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠছে। চোখ দিয়ে বৃষ্টির ফোটার মতো পানি পরতেছে। অবনি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো
‘ আপনি নামক মায়া এসে।বিষাক্ত করে দিয়েছে এই জীবন। আমি তো চায়নি এই বিষাক্ত জীবন।
চেয়েছি শুধু ফুলের মতো সুন্দর জীবন।’
আফিহা হাপাতে হাপাতে ছাদে এসে অবনিকে বললো
‘ আপুই তোকে দাদি ডাকছে।’
অবনি তখন ভ্রু কুচকে বললো
‘ কেনো?
আফিহা অবনির কথা শুনে বললো
‘ জানিনা তুই চল।’
আফিহার কথায় অবনি ওর দাদুর রুমে আসলো। অবনির দাদি অবনির হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বললো
‘ এইটার মধ্যে তোর নতুন জামা আছে।’
অবনি অবাক হয়ে গেলো। কারন অবনিকে তার দাদি নিজে হাতে কোনো কিছু দেননি অবনির যতটা মনে পরে। অবনিকে অবাক হতে দেখে অবনির দাদি চোখ মুখে বিরক্ত এনে বললো
‘ এতো অবাক হওয়ার কিছু নাই। সবাই নতুন জামা পরবো তুই যদি পুরান জামা পরিস তাহলে এই বাড়ির সম্মান নষ্ট হয়ে যাইবো যার লাইগা আমি তোর লিগা এইটা আনছি। এখন যা রুম থেইকা।’
অবনি তার দাদির কথায় মাথা নিচু করে আফিহাকে নিয়ে চলে গেলো। অবনি দাদির রুম থেকে বেড় হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দেখে আবিদের মা কান্না করতেছে। অবনি দ্রুততার সঙ্গে আবিদের মায়ের কাছে এসে বললো
‘ কি হয়েছে কাকি?
আবিদের মা তখন বললো
‘ আজ আবিদের মেহেদী অনুষ্ঠান কিন্তু এই অনুষ্ঠানে আমার বড় ছেলে নাই। সবাই যদি জিজ্ঞেস করে তোমার বড় ছেলে কোথায় তখন আমি কি উত্তর দিবো বল?
আবিদের মায়ের কথায় অবনির আবিদের বড় ভাইয়ের কথা মনে পরলো। আবিদের বড় ভাই আমেরিকায় পড়াশুনা করতে গেছে। আবিদ আর আবিদের বড় ভাই দশ মিনিটের ছোট বড়।
অবনি বললো
‘ কাকি কান্না করো না।তাহলে তোমার মুখের মেকআপ ধুয়ে যাবে।’ অবনির কথায় আবিদের মা কান্না বন্ধ করলো। অবনি তা দেখে ফিক করে হেসে দিলো। অবনিদের বাড়িটা ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে। ডেকোরেটরের একটা ছেলে আবিদের মায়ের কাছে এসে বললো
‘ আমাদের একজন লোক লাগবে স্টেজে ফুলগুলো লাগানোর জন্য।’
আবিদের মা তখন বললো
‘ ছেলে কোথায় পাবো?
অবনি ডেকোরেটরের ছেলেটাকে বললো
‘ কি করতে হবে বলুন আমায় আমি করে দিচ্ছি।’
ছেলেটা তখন অবাক হয়ে বললো
‘ আপনি পারবেন আপু?
অবনি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো
‘ হুম পারবো।’ তারপর অবনি চেয়ারে উঠে ফুল লাগাতে লাগলো। অবনি তাচ্ছিল্য হেসে মনে মনে বলতে লাগলো কত ভাগ্য আমার নিজের ভালোবাসার মানুষটার বিয়ের স্টেজে নিজে ফুল লাগাচ্ছি।’
ফুল লাগানো শেষ করে অবনি নিজের রুমে আসলো।
রাতে অবনি নিজের রুমে বসে আছে মন খারাপ নিয়ে। অবনির মা এসে অবনিকে বললো অবনি রেডি হয়ে নে। ইচ্ছা না থাকা সর্তেও অবনি তার মায়ের কথায় আচ্ছা বলে রেডি হতে লাগলো। কিছুক্ষন পর অবনি রেডি হয়ে আফিহাকে নিয়ে রুম থেকে বের হতে যাবে হঠাৎ মাইশা অবনিকে দেখে বললো
‘ অবনি দাড়াও এক সাথে যায়।’
মাইশার কথায় অবনি দাঁড়িয়ে গেলো। আবিদের বাড়িতে আবিদ আর মাইশার মেহেদী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অবনি আর মাইশা সিড়ি দিয়ে নামতে লাগলো।
এদিকে আবিদ তার ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে হঠাৎ আবিদের সিড়ির দিকে চোখ পরতেই আবিদ এক দৃষ্টিতে অবনির দিকে তাকালো। অবনি লাল রঙের লেহেঙ্গা পরেছে। চুল গুলো মাঝখানে সিথি কেটে ছেড়ে দেওয়া। ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক নিয়েছে। অবনিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। অবনির হঠাৎ আবিদের দিকে চোখ পরতেই দেখে আবিদ তার দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে মাইশা আবিদের দিকে তাকাতে দেখে আবিদ অবনির দিকে তাকিয়ে আছে তা দেখে মাইশা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। মাইশা তাড়াতাড়ি করে নেমে আবিদের কাছে এসে আবিদের হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করে বললো
‘ আবিদ কেমন লাগছে আমাকে?
আবিদ মাইশার কথায় অবনির দিকে তাকিয়ে বললো
‘ পরির মতো সুন্দর লাগছে।’
আবিদের কথায় মাইশা খুশি হয়ে গেলো। আবিদ একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। আবিদের ফ্রেন্ড আবিদকে ডাকাই আবিদ ঘোর থেকে বের হয়ে থমথমে গলাই বললো কি হয়েছে?
আবিদের ফ্রেন্ড অবনিকে দেখিয়ে বললো
‘ মামা এই মাইটারে তো হেব্বি লাগছে কে হয় তোর?
আবিদের ফ্রেন্ড এর কথায় আবিদের কেনো জানি রাগ হচ্ছে। আবিদ ফ্রেন্ড কে বলল ‘ ও তোর বোন হয় সো বোনের নজরে দেখবি।’
এই বলে আবিদ ওইখান থেকে চলে গেলো। আবিদ মাথার চুল হাত দিয়ে চেপে ধরে বললো অবনিকে দেখে আমি ঘোরের মধ্যে ডুবে গিয়েছি। না আমাকে অবনির মায়ায় পরা যাবে না। আমি শুধুমাত্র মাইশাকে ভালোবাসি।’
কিছুক্ষন পর
” অনুষ্ঠানে সবাই খুব ইনজয় করতেছে। অবনির এই সব আর সহ্য হচ্ছে না। অবনি ড্রয়িং রুম থেকে নিজের রুমে এসে আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে লাগলো নিজের ভাগ্যের কথা ভেবে। হঠাৎ কেউ পিছন থেকে এসে অবনিকে বললো অবনি ডাকছে তোকে আবিদের মা। অবনি পিছনে তাকিয়ে দেখে অবনির মা। মায়ের কথা শুনে অবনি বললো
‘ আচ্ছা তুমি যাও?
অবনির মা তখন মলিন কন্ঠে বললো
‘ আচ্ছা তাড়াতাড়ি আশিস।’
অবনি মা চলে যেতেই অবনি দীর্ঘ শ্বাস আড়াল করে নিচে যেতে লাগলো। অবনি নিজের রুম থেকে বের হয়ে সিড়িতে পা রাখবে ঠিক সে সময় দেখে আবিদের রুম থেকে কিছুর শব্দ আসছে। অবনি আবিদের রুমের সামনে এসে দেখে আবিদ মাইশার সাথে অপত্তিকর অবস্থায় আছে। অবনি চোখ বড়বড় করে তাকালো সেই দিকে। অবনি যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না। অবনির শ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে আসছে। অবনি ওইখান থেকে ড্রয়িং রুমে আসতে আসতে বললো
‘ কিছু করার নেই অবনি তোর। সব সময় তো ভুল কাজটাই করেছিস। যেয় মানুষটা তোর জন্য ঠিক না তুই তাকেই ভালোবেসেছিস। এখন তো তোকে কষ্ট পেতে হবেই।’ অবনি এইগুলো বলতেছে হঠাৎ কিছুতে বেজে ভরা মানুষের মধ্যে ঠাস করে পরে গেলো। অবনি কে দেখে সবাই,,
#চলবে…
(