#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
৩৬+৩৭
#WriterঃMousumi_Akter
নিজেকে ওনার থেকে ছাড়িয়ে দেওয়াল হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,”আপনি তাহলে জানতেন যে ওই চিঠি আমার লেখা?”
ওনি বেশ গর্ববোধ করে বললেন,
‘ইয়েস ম্যাডাম আমি জানতাম।’
‘কীভাবে?’
‘কারণ আমি এই পৃথিবীতে মাত্র একজন নারীর জীবনের শ্যামসুন্দর পুরুষ।আর কারো সাহস নেই আমাকে শ্যামসুন্দর পুরুষ নামে ডাকার।এই কালামানিককে একমাত্র তার বউ-ই এমন সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে ।’
‘আর কেউ ডাকে না বুঝি?তাহলে তো কপাল খুব খারাপ আপনার!পৃথিবীতে এত সুন্দরী রমণীর ভীড়ে শুধু আমার মুখেই শুনলেন।দূর্ভাগ্য আপনার!’
‘দূর্ভাগ্য! নিঃসন্দেহে আমি একজন ভাগ্যবান পুরুষ সারাহ।যাকে তার সুন্দরী বউ কালো হওয়ার সুবাদে শ্যামসুন্দর পুরুষ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে।বউয়ের ভালবাসা বোধহয় উপরওয়ালা খুব যত্ন করে আমার ভাগ্যে লিখে দিয়েছেন।নিজেকে নিয়ে খুব প্রাউড ফিল করছি,নিজেকে অত্যন্ত সুখী মানব মনে করছি।’
ওনার মুখে কালামানিক,কালো কথাটা শুনে বেশ খারাপ লাগল। ওনি কি বোঝেন না আমার চোখে ওনি কত সুন্দর!গাল ফুলিয়ে এক আকাশ সমান অভিমান নিয়ে বললাম,”দেখুন নিজেকে কালামানিক,কালো এসব বলবেন না।শব্দগুলো আমার কর্ণকুহরে খুব বিশ্রী শোনায়।আপনি কি কালো না-কি?”
ওনি আমার হাত ধরে টেনে ওনার সামনে এনে বললেন,
‘এই অভিমানিনী তোমাকে কোথায় লুকিয়ে রাখি বলো তো?আমার তো খুব ভ* য় হচ্ছে তোমাকে নিয়ে।’
‘কেন ভ**য় হচ্ছে?’
‘মানুষ যদি জেনে যায় আমার বউ আমাকে এত ভালবাসে তাহলে তাদের হিংসা হবে।অবশ্য হিংসা করার যথেষ্ট কারণ আছে।তখন তোমার অমূল্য ভালবাসার লোভে অন্য কেউ তোমাকে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।’
‘চাইলেও বা কী?আমি কি যাব নাকি?’
ওনি আমার দুই গাল টেনে দিয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ হাসি দিয়ে বললেন,
‘ইশ রে! আমার আদুরে বউটা!’
আমি মুহূর্তেই বড়ো বড়ো চোখ করে তাকালাম ওনার দিকে। একজন পুরুষ এমন সুন্দর হাসি তখনই হাসে যখন সে নিজেকে শ্রেষ্ঠ সুখী বলে মনে করে।ওনার মুখে এইভাবে বউ ডাক শুনে কী সাংঘাতিক লজ্জাটা পেলাম!এইভাবে কেউ গাল টেনে আদর করে বউ বলে ডাকে!আমার বুঝি লজ্জা করে না।আমার লজ্জামিশ্রিত মুখপানে দৃষ্টি আরোপ করে বললেন, ‘গিফটটা কখন পাচ্ছি?’
লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে বললাম,”দিচ্ছি।”
ঘরের দরজার দিকে এগোতে দেখে ওনি ভাবলেন আমি বোধহয় পালাচ্ছি।হাত টেনে ধরে বললেন,
”কই পালাচ্ছ প্রনয়িণী?এত পালিয়ে বেড়াতে পারে মেয়েটা।বড্ড অস্থির!”
আস্তে করে বললাম, ”দরজা লাগাতে হবে না ঘরের।”
ওনি নিজেও এবার একটু লজ্জা পেলেন।নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মাথার পেছনে চুলকাতে চুলকাতে বললেন,
”আমি দরজা লাগাচ্ছি।”
ওনি ঘরের দরজা লাগিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন, ”দাও কুইক।”
‘একটু অপেক্ষা করুন।জানালা লাগাতে হবে।রুমটা অন্ধকার করতে হবে।না হলে গিফট দিয়ে সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে না।’
ওনি বেশ ভাবুক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ”আজ বোধহয় আমার হার্টফেইল হয়ে যাবে প্রনোয়িণী!”
ওনি কী ভাবছেন আমি তা বুঝতে পারছি।কিন্ত ওনার জন্য আমি অন্য সারপ্রাইজ রেখেছি। আলমারি খুলে ছোট্ট একটা কেক বের করে নিয়ে আসলাম।যা আমি সকালে অনলাইনে অর্ডার করেছিলাম।
লাভ আকৃতির কেক,লাল রং-এর।কেকের উপর লেখা “জন্মদিনের শুভেচ্ছা শ্যামসুন্দর পুরুষ।” কেকটা ওনার সামনে ধরতেই ওনি বেশ কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন কেকের দিকে।ওনার মনে হাজারও প্রশ্ন। আমি কেক কোথায় পেলাম।চারদিকে দরজা-জানালা লাগানোতে রুমটা বেশ অন্ধকার দেখাচ্ছে।রুমটা একটু অন্ধকার হওয়ার প্রয়োজন ছিল।না হলে মোমবাতির মৃদু আলোয় ওনার মুখটা দেখতে পাব না।কেকটা টেবিলের উপর রেখে কেকের বাহিরে চারদিকে চারটা কালারফুল মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলাম।ওনি কতটা অবাক হয়েছেন তা ওনার মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যাচ্ছে।যতটা না অবাক হয়েছেন তার থেকে বেশি আনন্দিত হয়েছেন আমার এই ছোট্ট আয়োজনে।আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, ”এসব! মানে কীভাবে কী করলে? আর কখন?”আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।’
‘করতে হয়, বুঝলেন?’
‘তুমি তো বাইরে যাওনি।’
একটা চকলেট কালারের ফিতার ঘড়ি ওনার হাতে পরিয়ে দিতে দিতে বললাম, ‘প্রয়োরিটি আর ইচ্ছাটাই মেইন বুঝলেন?কারো কাছে কারো গুরুত্ব থাকলে সে যেভাবেই হোক তাকে খুশি করতে ব্যস্ত থাকবে।ওই যে মানুষ বলে না,”সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই।”এসব ভুল কথা।ইচ্ছা থাকলে নিজ সামর্থ অনুযায়ী সামান্য কিছু দিয়েও খুশি করা যায়।মেইন কথা হচ্ছেঃ”প্রয়োরিটি।”
‘নিজেকে আজ ভাগ্যবান মনে হচ্ছে,আমি সেই নারীকে পেয়েছি যে নারী তার সবটুকু উজাড় করে আমাকে ভালবেসেছে।’
‘নিন কেকটা কাটুন।’
কেক কাটা শেষে আমার মুখে এক টুকরো কেক দিয়ে বললেন,
“আর গিফট?”
‘পরীক্ষার পরে দিই?’
‘আবার অপেক্ষা! পরীক্ষা বলে ছেড়ে দিলাম।চলো পড়াতে বসাই তোমাকে।’
ঘরোয়া ভাবে ছোট্ট একটা আয়োজনে দারুণ কিছু সময় পার করলাম দু’জনে।যা ছিল একান্তই আমাদের
বিকাল থেকে সারারাত বই আর অংক নিয়ে বসে আছি।পাশাপাশি ওনিও সারারাত জেগে বসে রইলেন আমার জন্য।দ্যা বেষ্ট কেয়ারিং হাজবেন্ডের উপাধিটা ওনাকেই দেওয়া উচিত।
_______________________________
এরই মাঝে কেটে গিয়েছে বেশ কিছুদিন।পরীক্ষাও শেষ প্রায়।আর একটা পরীক্ষা বাকি আছে।মাঝে তিনদিন গ্যাপ।একটা থিওরি সাবজেক্ট তাই বেশি একটা চাপ নেই।এই গ্যাপের মাঝেই তরীর কাছে যাচ্ছি।শহরের সব চেয়ে বড়ো দোকানটা মৃন্ময়ের বাবার।কসমেটিকস সাথে বিয়ে গায়ে হলুদের সমস্ত রকম আইটেম পাওয়া যায়।ঢাকা থেকে পাইকারী রেটে নিয়ে এসে বিক্রয় করে।তরী মোটামুটি কিছু গহনা বানানো শিখে গিয়েছে।গহনার সমস্ত ম্যাটেরিয়ালস আমি কিনে দিয়েছিলাম।সবটা হয়েছে মৃন্ময় আর মৃন্ময়ের বোন পিহুর সহযোগিতায় ।মৃন্ময় যাবতীয় টিউটোরিয়াল কালেক্ট করে দিয়েছে যা দেখে সহজেই তরী সব বুঝতে পারবে।পিহু হাতে ধরে, পাশে থেকে যাবতীয় সাহায্য করেছে। তরী অনেক কিছু শিখে গিয়েছে এখন।এন্ড্রয়েড ফোনের প্রায় যাবতীয় ফাংশন পারে এখন।আগে ইউটিউব কী তাই বুঝত না।এখন তরী ফোনে ফেস লক দিতে শিখে গিয়েছে।নিজে ফেসবুক আইডি খুলতে শিখেছে,শিখেছে পেজ ক্রিয়েট করতে,ইউটিউবে যাবতীয় সব সার্চ করতে শিখেছে।আটপৌরে শাড়ি ছেড়ে থ্রি পিছ পরছে। অনেকটা পরিবর্তন করে ফেলেছে নিজের।পিহুর সাহায্য অনলাইনে ইংলিশ কোর্স করছে।ইংলিশ যে সে মোটে জানে না তা নয়।সে যা জানে আমিও তা জানি না,অনেকেই জানে না বলা যায়।আসলেই ওর ভিত্তিটা ভাল।রিয়েল খাঁটি সোনা বলে যাকে।মেধা আল্লাহর একটা বিশেষ দান,যা সবাই পায় না।রোশান স্যার ওর স্কুলে ক্লাস এইটের সার্টিফিকেট আনতে গেলে ওর স্কুলের প্রধান শিক্ষক খুব আফসোস করে বলেছিলেন ,
”ইশ!খাটি রত্ন ছিল মেয়েটা।শুধু গাইডের অভাবে ঝরে গেল।একটা ভালো ফ্যামিলির অভাবে মেয়েটা নিজের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারল না।এমন একটা রত্ন যদি আমাদের ঘরে থাকত,পরিশ্রম করে দেখতাম কিছু করা যায় কিনা।যেমন শান্তশিষ্ট ছিল ওর চাহনি তেমন ভদ্র স্বভাবের ছিল মেয়েটা।সবার খুব প্রিয় ছিল।এত বেশি মেধা ছিল! ওর লেখাপড়ার সব খরচ আমরা শিক্ষকরাই বহন করতাম।হুট করে ওর ফ্যামিলি ওর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।ওর ফ্যামিলি বলতে ওর চাচারাই ছিল।ওর মা-বাবা তো খু**ন হয়েছিল যখন তরীর বয়স মাত্র সাত দিন।ওর বাবার যা সম্পত্তি ছিল নিজের ছেলে না থাকায় ফারায়েজ অনুযায়ী চাচা সেটুকু পেয়ে যায়।তা ওর বাবা মারা যাওয়ার মাস দুয়েকের মধ্যেই দখলে নিয়ে নেয়।বাকি যা ছিল তা ওর বোনদের বিয়ে দিয়ে যা খরচ করেছে সেই হিসাব করে নিজের নামে করে নেয়।এভাবেই ওর বিয়ের কথা একদিন কানে আসল।শুনেছিলাম বিয়ের আগে কথা ছিল মেয়েটাকে লেখাপড়া করাবে কিন্তু আর করাল না।সেই যে বিয়ে হলো আর কোনদিনও মেয়েটার মুখ দেখতে পেলাম না।বিয়ের পর যে কী হলো কেউ জানতেও পারল না।আগে যদি জানতাম এমন হবে ওর বিয়ে দিয়ে আর পড়াবে না তাহলে তখনই আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতাম।আইনি পদক্ষেপের কথা শুনে রোশান স্যার অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, কেন স্যার আইনি পদক্ষেপ কেন?প্রধান শিক্ষক জানালেন,তরীর চাচা বাড়িতে তরীর চাচাতো ভাইয়ের সাথে ওশান গেছিল।তরীর চাচাতো ভাইয়ের সাথে ওশানের পরিচয় ছিল।গ্রামের মানুষের মুখের নানাবিধ কথা শোনা যায়।কেউ-কেউ বলে তরী আর ওশানের আগে থেকে সম্পর্ক ছিল।ওশানের ও বাড়িতে যাতায়াতের মধ্য দিয়ে নাকি সম্পর্ক হয়ে যায়।তারপরই নাকি তরীর সাথে কিছু একটা অসভ্য আচরণ করে ওশান।সেটা নিয়ে গ্রামে অনেক কাহিনি রটে যায়।তবে জিনিসটা তরীর চাচা ধামা চাপ দিয়ে দেয় এক প্রকার।গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল ওশান নাকি রে*প করতে গিয়েছিল।তরীর চিৎকারে কিছু মানুষ জড়ো হয়েছিল। কিন্তু তরীর চাচা সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বিয়ে দিয়ে সম্মান বাঁচানোর কথা ভাবেন।গ্রামের মানুষ যখন একটা স্টেপ নিতে চাইল ওশান আর ওশানের মা পুলিশি ঝামেলা থেকে বাঁচতে কিছু টাকা অফার করে তরীর চাচাকে।কিন্তু তরীর চাচা আরেক সেয়ানা,সে জানিয়েছিল বিয়ে না করলে সে আইনের সহায়তা নেবে।আজকাল রে**প- এর অভিযোগের শাস্তি সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত।ভেতরের অনেক কাহিনি অজানা আমাদের।লোকমুখে যা শোনা তাই বলছি।পরে তাদের মাঝে কী সমঝোতা হয়েছিল জানি না। তরীকে লেখাপড়া শেখাবে বিভিন্ন কথা বলেছিল কিন্তু পরে নাকি তরী নিজেই আর লেখাপড়ে করতে চায়নি।তরীর চাচাও বেঁচে গেল ঘাড় থেকে বোঝা নেমে গেল।সাপও মরল লাঠিও ভাঙল না।ব্যাপারটা ঠিক সেরকম।বিয়ের পর তরীর চাচা জানিয়েছিল তরীকে নিয়ে তার অনেক সম্মান নষ্ট হয়েছে তরী যেন আর তার বাড়ি কোনদিন না যায়।’
সেদিন থেকে রোশান স্যারের মনটা আরও বেশি খারাপ।যেন কোনো সিনেমার ট্রাজেডি রোশান স্যার দেখলেন।স্যার বলছিলেন আর ওনার চোখে কল্পনায় সেসব দৃশ্য ফুটে উঠছিল।জীবন এত ভয়াবহ হতে পারে!সমাজ কত কঠিন!যার কেউ নেই তার জন্য জীবন কত কঠিন!এই কথাটা রোশান স্যারকে বলতেই ওনি বললেন, ”যার কেউ নেই তার জন্য যেন একটা সারাহ’র জন্ম হয়।”
এত ভাল স্টুডেন্ট রোশান স্যারের বাড়িতে এসে ঝরে গেল।ওনি যেন নিজেকে কেমন অপরাধী ভাবছেন।ওই সময়ে ওনি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করছিলেন পারিবারিক ব্যাপার কিছুই জানতেন না।নিজের আম্মা যা বলতেন ওটাই বিশ্বাস করতেন।মন আমারও খারাপ তরীর জন্য। মাঝে মাঝে এত খারাপ লাগে আমার,ভেতর টা অদ্ভুত ভাবে জ্বলে পুড়ে যায়।যেখানে ওশানকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া উচিত ছিল সেখানে কিনা জেনে শুনে একটা লম্পটের সাথে বিয়ে দিয়ে দিল!এর শাস্তি ঠিক একদিন ওশান পাবে।আমাদের সমাজ এমন কেন?অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার থেকে মান সম্মানের কথা বেশি ভাবে।তরীকে যতটুকু পারছি নিজের মতো করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।
তরী এখন বেশ কয়েকটা গহনা রেডি করে ফেলেছে।গহনাগুলো মৃন্ময়দের দোকানে দেওয়ার কথা।সেল হলে লাভের কিছু অংশ মৃন্ময়দের বাকিটা তরীর।গহনাগুলো আজ ডেলিভারি দেওয়ার কথা।
এরই মধ্য আম্মুর ফোন এলো।ফোন রিসিভ করতেই আম্মু উত্তেজিত কন্ঠে বলল, “কী সমস্যা তোমার?”
বেশ অবাক হয়ে বললাম,’ কেন আম্মু?’
‘তোমাকে না বলেছি শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে বেশি অশান্তি করবে না!তোমার শাশুড়ির সাথে বেয়াদবি করেছ কেন?তোমার বাবার কাছে নালিশ দিয়েছে।তোমার বাবা আমাকে এসে যাচ্ছে তাই কথা শোনাচ্ছে।’
‘অদ্ভুত আম্মু!বাবা তোমাকে বকছে কেন?’
‘কারণ তার আদরের মেয়েকে সে কিছু বলতে পারবে না।তুমি জানো না তোমার বাবা তোমাদের দু’বোনকে কিছুই বলে না।যা বলার আমাকে বলে।তুমি গুরুজনদের সম্মান দিচ্ছ না, তোমার বিয়ের পর তাদের সংসারে ভাঙন ধরেছে এসব শুনতে ভালো লাগে?’
‘তুমি আমাকে এক্সজ্যাক্টলি কী জন্য ফোন দিয়েছ?’
‘তুমি বুঝতে পারছ না কী জন্য ফোন দিয়েছি? আজ তোমার ভাই থাকলে আমাদের সাথে এমন বেয়াদবি করলে তোমার ভালো লাগত?শাশুড়ির কাছে ক্ষমা চাইবে তুমি আজ।তোমাকে বিয়ে দিয়েছি ও বাড়ির দুনিয়ার অশান্তি তোমার ঘাড়ে নিতে নয় বুঝেছ?প্রতিটা জয়েন্ট ফ্যামিলিতে কিছু না কিছু ঝামেলা থাকে।তুমি নতুন বউ এত কিছুর ভিতর কেন যাচ্ছ?”
‘তাহলে এই তোমার শিক্ষা আম্মু?তুমি আমাকে শাশুড়ির কাছে ভালো হতে বলছ আর জায়ের সাথে অশান্তি করতে বলছ?তুমি কি তোমার জা-দের সাথে ঝ গ ড়া করতে আম্মু?”
‘তুমি জীবনে দেখেছ আমাকে ঝ গ ড়া করতে?’
‘তুমি ঝ গ ড়া করোনি অথচ আমাকে শিখিয়ে দিচ্ছ আমার জা-এর সাথে অশান্তি করতে?’
‘তোমাকে কখন শেখালাম আমি সেসব?’
‘এ বাড়িতে শাশুড়ির সাথে মানিয়ে চলা মানে জা-এর সাথে অশান্তি করা,বুঝেছ?এ বাড়ি আর অন্য বাড়ির হিসাব অনেক আলাদা।তুমি এসব বুঝবে না।’
‘না এতসব বুঝতে চাইছি না।তুমি তোমার শাশুড়ির সাথে আর কোনো ঝামেলায় জড়াবে না বুঝেছ?দু’দিন পর রোশানও তোমার প্রতি বিরক্ত হবে এসব নিয়ে।ছেলেরা বউয়ের প্রতি খুশি থাকে তার মায়ের সাথে তার বউয়ের ভাল সম্পর্ক দেখলে।তার মা যদি ছেলের কাছে বউয়ের প্রশংসা করে তাহলেই খুশি হয়।বুঝতে পেরেছ?সংসার করা অত সোজা নয়।ভেবো না পুরুষ মানুষ মিষ্টি হেসে কথা বলছে বলে সব উজাড় করে দিচ্ছে।পুরুষের মন বোঝা অত সহজ নয়।দেখা যাবে ঘুরে এসেই বলবে তোমাকে পরীক্ষা করছিলাম আমি।অনেক দেখা আছে জীবনে।’
‘আম্মু তোমার বয়স কত?’
‘আমার বয়স দিয়ে কী হবে?’
‘না বলো দরকার আছে?’
‘৪৪-৪৫ হবে।’
‘খুব একটা বয়সও হয়নি আম্মু।আমাদের তো ভাই নেই।ভাইয়ের আফসোস আমাদের থেকেই গেল আম্মু।প্লিজ একটা চান্স নাও।প্লিজ ট্রাই আম্মু।একটা বেবি নিয়ে নাও।আমাদের একটা ভাই হোক,তোমার একটা ছেলে হোক।সেই ছেলে বড়ো হলে তাকে বিয়ে দিয়ে আমার শাশুড়ি মানে তোমার বেষ্ট ফ্রেন্ডকে সাথে নিয়ে যু*দ্ধ কোরো বুঝলে? রাখলাম।আর বাবাকে যা বলার তার জামাই কে বলতে বোলো।’
এমনি মেজাজ খারাপে।তার উপর আম্মুর অকারণ উপদেশ।রাগে কী অসহ্য লাগছে তা বলার মতো নয়।এরই মাঝে ফোন ভুম ভুম করে উঠল।ফোনের স্ক্রিনে রোশান স্যারের নাম্বার ভাসছে।রাগী মুডেই ফোন রিসিভ করে বললাম, ”যা বলার দ্রুত বলুন।”
‘আমি শাওয়ারে ঢুকেছি সারাহ!তোমাকে না বলেছি আমি শাওয়ারে ঢুকলে টাওয়াল নিতে ভুলে যাই।আমার শাওয়ার শেষ না হলে তুমি কোথাও যাবে না।রুমেই থাকবে।আজও শাওয়ারে গিয়ে দেখি টাওয়াল নিইনি।তুমি তো বেরিয়ে গিয়েছ।এসে আমাকে বকাবকি করবে না একটুও।পুরা রুম ভিজিয়ে ফেলছি।’
‘এই আপনার সমস্যা কী?সেই নির্জন প্রহরের পর একদিন ও গোসলে গিয়ে টাওয়াল নেননি।অর্ধেক গোসল করে দরজায় উঁকি দিয়ে টাওয়াল চাওয়ার অভ্যাস কবে থেকে হলো আপনার?’
‘যেদিন থেকে বউ হয়েছে।’
‘আপনার উদ্দেশ্য আমি বুঝি।এসব বলে বলে টাওয়াল চাওয়ার নামে আমাকে নিয়ে……!আর বললাম না থাক।’
‘এত ক্ষে*পে আছো কেন?আবার কার সাথে ঝ গ ড়া করলে?’
‘আপনার কী মনে হয় আমি খালি ঝ গ ড়া করি?এসে যেন রুমে পানি না দেখি বুঝেছেন?রাখলাম, আমি যেহেতু ঝ গ ড়া করি সেহেতু ফোন দিবেন না আর।’
আবারও রাগ করে ফোন কেটে দিলাম।ভীষণ রাগ হচ্ছে!এই রাগের মাঝেই নেত্র সম্মুখে সুন্দরতম একটি দৃশ্য ফুটে উঠল।তন্ময় ছোঁয়ার চোখের ছবি কভার ফটোতে দিয়েছে। তাতে ক্যাপশন লিখেছে,
“প্রহর শেষে আলোয় রঙা
সেদিন চৈত্রমাস।
তোমার চোখে দেখেছিলাম
আমার সর্বনাশ!”
———–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।