জীবনের থেকেও বেশি পর্ব -০১

তুমি শুধু আমার তোমাকে আমার হয়েই থাকতে হবে সারাজীবন। যদি কোনোদিন আমাকে ছাড়া অন‍্য কেউ তোমার কল্পনায় ও আসে তাহলে সেইদিনই তোমার শেষ দিন হবে। আগে তোমাকে মারবো তারপর নিজেকে শেষ করে দিবো। একটা মেয়ের ছবি হাতে নিয়ে কথাগুলো মনেমনে বিরবির করছে তামিম চৌধুরী।

তামিম চৌধুরী একজন বড়মাপের বিজনেস ম‍্যান। সে খুব কঠিন একজন মানুষ। যে তার বিশ্বাস ভাঙ্গে তাকে সে কখনই ক্ষমা করে না। সে একটা মেয়েকে অসম্ভব ভালোবাসে। নাম ঐশী ইশরাত আহিয়া।

তামিম ছবিটা পাশের টি টেবিলে রেখে ফোনটা হাতে নিয়ে কল করলো ঐশীকে। চোখ বন্ধ করে সোফায় হেলান দিয়ে কানে ফোন ধরে রইলো।

ঐশী তামিমের কল পেয়ে কাপাকাপা হাতে ফোনটা নিয়ে কানে ধরে কাপাকাপা গলায় বলল “হেলো আসসালামু আলাইকুম।”

তামিমের নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে শুধু ও কোনো কথা বলছে না। বেশির ভাগ সময়েই তামিম এমনটা করে কল করে কোনো প্রকার কথা বলে না চুপ করে থাকে।

অনেকক্ষণ পর তামিম গম্ভীর কন্ঠে বলল

“কি করো”

ঐশী আবার কাপাকাপা কন্ঠে বলল “কিছু না এমনি বসে আছি। আপনি কি করেন?”

তামিম বলল “আমি ও বসে আছি। দিন কেমন কাটলো আজ! আর খাবার খেয়েছো রাতে।”

ঐশী বলল “এই তো আলহামদুলিল্লাহ্ ভালোই কেটেছে হুম খেয়েছি আপনি খেয়েছেন?”

তামিম বলল “না খাইনি একটু আগেই অফিস থেকে আসলাম খুব ক্লান্ত লাগছে তাই খেতে মন চাচ্ছেনা।”

ঐশী বলল “ক্লান্ত লাগছে যখন তাহলে না হয় কথা বলা বাদ থাক অল্প কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পরেন। আর নামাজ পরছেন।”

তামিম ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল “না পড়িনি আর ঘুমাবোনা আমি তোমার সঙ্গে কথা বলবো।”

ঐশী ভয়ে ভয়ে বলল “কিন্তু আমার তো খুব ঘুম ধরছে।”

তামিম বলল “তো ঘুমাও না করেছে কে? খালি কল কাটবে না।”

ঐশী আর কিছু বলল না তামিমের সঙ্গে টুকটাক কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে গেলো। তামিম খেয়াল করলো ঐশী আর কথা বলছে না। তামিমের ঠোঁটে একটা বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো। ঐশী ঘুমিয়ে পড়েছে।

তামিম বেডে শুয়ে পরলো ফোন কানে নিয়েই।

সকালবেলার মিষ্টি আলো ঐশীর চোখে পরতেই ওর ঘুম ভেঙে গেলো। সে উঠে বসে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো কল এখনো চলছে। ঐশী কানের কাছে ফোনটা নিয়ে বলল হেলো

তামিমের গম্ভীর কন্ঠে ভেসে এলো “শুভ সকাল জান। অনেক সকাল হয়েছে এখন উঠে পড়ো খেয়ে একটু বাসার বাহিরে আসো তো। আজ তোমাকে নিয়ে ঘুরবো।”

ঐশীর আনন্দে চোখ চিকচিক করে উঠলো ও লাফ দিয়ে দাড়িয়ে বলে উঠলো “সত্যিই!”

ঐশীর এমন উৎসাহ দেখে তামিম মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলল “হুম সত্যি যাও এখন রেডি হয়ে খেয়ে আসো।”

কল কেটে দিলো তামিম। ঐশী খুশিতে নাচতে নাচতে চলে গেলো ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে।

ঐশী একটা সাদা লং টপস লেডিস জিন্স আর গলায় একটা স্কাফ পেচিয়ে নিয়ে চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে লিপ বাম দিয়ে হাসি মুখে রুম থেকে বেরিয়ে পরলো। হালকা কিছু খেয়ে বেরিয়ে পরলো সে তার বাসা থেকে।

বাসা থেকে বেরিয়ে কিছুদূরে চোখ পরতেই দেখলো সেই চিরপরিচিত গাড়ি। ঐশী খুশি মুখে চলে গেলো গাড়ির দিকে। ও গাড়ির সামনে যেতেই গাড়ির দরজা খুলে গেলো। ঐশী উঠে পরলো গাড়িতে। ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা তামিমের দিকে একপলক তাকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।

তামিম গাড়ি স্টাট দিলো। কিছুক্ষণ পর গাড়ি এনে থামালো বড় একটা বাড়ির সামনে। ঐশী বাহির থেকে চোখ সরিয়ে তামিমের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই তামিম গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলল

“চলো বাড়ির ভিতরে”

ঐশী গাড়ি থেকে নেমে পরলো। তামিম হনহন করে ভিতরে যেতে লাগলো আর ঐশী ওর পিছু পিছু যেতে লাগলো। তামিম পিছনে তাকিয়ে দেখলো ঐশী অনেকটা পিছনে রয়েছে। ও আবার পিছনে পিছিয়ে এসে ঐশীর হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো।

তামিমের এমন হুট করে হাত ধরায় ঐশী কেঁপে উঠলো। তামিম বাড়িতে ঢুকে সোফায় এসে বসতেই সব সার্ভেন্ট এসে হাজির। তামিম গম্ভীর কন্ঠে বলল

“আজ তোমাদের ছুটি তোমরা তোমাদের বাসায় চলে যাও।” সব সার্ভেন্ট একেএকে চলে গেলো। ঐশী চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে বাড়ির চারপাশে। তামিম বলল

“কি খাবে গরম না ঠান্ডা”

ঐশী বলল “না এখন কিছু খাবো না। এটা কার বাড়ি।”

তামিম বলল “কেন আমার!”

ঐশী বলল “আচ্ছা আপনার আম্মু আব্বু কোথায় থাকে। আপনার সঙ্গে থাকে না।”

তামিম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “আব্বু আমার জন্মের আগেই মারা যায় কিন্তু আম্মু এখনো আমার সঙ্গে আছে জানো।”

ঐশী বলল “কোথায় দেখছিনা তো তাকে ওনি কি বাড়ির বাহিরে গিয়েছে?”

তামিম বলল “না বাসায় আছে তুমি দেখবে।”

ঐশী তামিমের দিকে তাকিয়ে বলল “হুম দেখবো”

তামিম মুচকি হাসি দিয়ে ঐশীকে নিয়ে একটা রুমের কাছে নিয়ে গেলো। রুমে তালা দেখে প্রশ্নবিদ্ধ নজরে তামিমের দিকে তাকালো। তামিম পকেট থেকে একটা চবি বের করে দরজাটা খুলল। তামিম রুমে ঢুকে গেলো ঐশী ও পিছু পিছু গেলো। পুরো রুমটা সাদা রঙের আর মাঝখানে একটা কবর।

এমন দৃশ্য দেখে ঐশী কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো পিছন থেকে তামিমের শার্ট আকরে ধরলো। তামিম ঐশীকে নিজের সামনাসামনি এনে কাধে দুই হাত রেখে বলল

“কি হয়েছে জান তুমি ভয় পাচ্ছো কেন?”

ঐশী কাপাকাপা হাতে ওই কবরের দিকে ইশারা করে ভয়ে ভয়ে বলল “বাসায় এমন করে কবর দিয়ে রাখছেন কেন মানুষ তো বলে আপনি নাকি আপনি কি ওনাকেও খু….” বলেই ফুপিয়ে উঠলো

তামিম ছিটকে সরে গেলো ঐশীর থেকে আর চেচিয়ে বলতে লাগলো “না আমি এতটা খারাপ না। আমি মারিনি আমার আম্মুকে। মারিনি আমি।” বলেই দেয়াল ঘেসে মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো তামিম।

ঐশী কাপাকাপা পায়ে তামিমের দিকে এগিয়ে গেলো ওর পাশে বসে কান্না আটকানো চেষ্টা করে তামিমের কাধে হাত রাখলো।

তামিম ঐশীর হাত শক্ত করে ধরে ফেললো। চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে তার। তামিমের এমন রূপ দেখে ঐশী আরো ভয় পেয়ে গেলো। তামিম হাত শক্ত করে ধরায় ব‍্যথায় কুকরে উঠলো ঐশী। তামিম ঐশীকে তার অনেকটা কাছে নিয়ে এসে বলল

“তুইও আমাকে অন‍্যদের মতো অবিশ্বাস করিস। তুই মনে করিস আমি এতোই খারাপ। আমি নিজের হাতে নিজের আম্মুকে খুন করবো। ওহ তাই তো হ‍্যাঁ আমি খারাপ সবাই তাই বলে আমি ও তাই ভাবি কিন্তু এতটা। আমি তোকে আপন মনে করে আমার বাসায় নিয়ে এসেছিলাম। তারপর আর আমার সব মনের কথা বলতে চেয়েছিলাম। কষ্টের পাহাড়ে কিছুটা শান্তির জন‍্য তোকে এখানে নিয়ে এলাম। আর তুই প্রথমেই বলে দিলি আমি আমার আম্মুকে……!” বলেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো ঐশীকে। তার চেচিয়ে বলল

“চলে যাহ আমার সামনে থেকে। আমার কাছে আসবিনা চলে যাহ। বেরিয়ে যা এখান থেকে। যাবি নাকি আমি অন‍্য ব‍্যবস্থা করবো।”

তামিমের এমন রাগী কন্ঠে বলা কথা শুনে কেঁপে উঠছে ঐশী। তার চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে। সে কিভাবে বলে ফেললো যে তামিম তার আম্মুকে। মুখে হাত গুজে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো ঐশী। মেইন গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় দেখলো তামিমের ফ্রেন্ড ও পিএ নিলয় ভিতরে ঢুকছে। ঐশীর চোখ পানি দেখে নিলয় উত্তেজিত হয়ে বলল

“কি হয়েছে ঐশী। তুমি কান্না করছো কেন আর তামিম কোথায়?”

ঐশী কিছু না বলে দৌড়ে চলে গেলো।

নিলয়……

(চলবে)

#জীবনের_থেকেও_বেশি
#সূচনা_পর্ব
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here