#এক_রক্তিম_আলো
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব৭
অবনি কাপা কাপা গলায় বললো ‘ রাইমা তুমি?
রাইমা নামক মেয়েটা বললো ‘ হ্যাঁ আমি কিন্তু আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে?
অবনি মুখে মাক্স পরা যার কারনে রাইমা অবনিকে চিনতে পারেনি। রাইমা হচ্ছে রাহির পিএ। অবনি মাক্স খুলে চোখ মুখ কঠোর করে বললো ‘ ছিহ্ তোমার লজ্জা করে না এই রকম কাজ করতে?
অবনিকে দেখে রাইমা অবাক হয়ে গেলো। রাইমা বললো ‘ তুমি সি আইডি? অবনি মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বললো। রাইমা কান্না করে বললো ‘ আমাকে ছেড়ে দাও প্লিজ।’
আনিসুল আহমেদ পুলিশ অফিসারদের বললো ‘ ওনাকে ধ’রে নিয়ে যাও এখন।’ আনিসুল আহমদের কথায় কিছু মেয়ে পুলিশ অফিসাররা রাইমাকে ধরে নিয়ে গেলো। অবনি থমথমে গলায় আনিসুল আহমেদ কে বললো ‘ স্যার ওই শিশুদেরকে ওই রুম থেকে ছাড়াতে হবে।’ অবনির কথায় আনিসুল আহমেদ আচ্ছা বলে শিশুদেরকে ওই গোডাউন থেকে বের করে থানায় নিয়ে আসলো।
কিছুক্ষন পর
অবনি শ্বাস নিয়ে বললো
‘ স্যার আমি এখন বাসায় যায়?
আনিসুল আহমেদ বললো ‘ কাজের সময় কেউ আপন নয় কিন্তু যে যা করেছে তার শাস্তি কিন্তু তাকে দিতেই হবে ঠিক আছে।’ অবনি নিচু কন্ঠে বললো ‘ হুম স্যার। তারপর অবনি ওইখান থেকে বাসায় চলে আসলো। অবনি বাড়ির দরজার কাছে এসে কলিং বেল বাজাতেই ধ্রুব দরজা খুলে দিলো। অবনি ধ্রুবকে দেখে কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে গেলো। ধ্রুব অবনির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো ‘ এর আবার কি হলো?
এই বলে ধ্রুব অবনির পিছু পিছু অবনির রুমে এসে দেখে অবনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। ধ্রুব অবনিকে বললো ‘ কোথায় গিয়েছিলি তুই? এতো দেরি হলো কেনো?
প্রতি উত্তরে অবনি কিছু বললো না কারন কথা বলার শক্তি পাচ্ছে না। অবনিকে চুপ করে থাকতে দেখে ধ্রুব বললো ‘ আচ্ছা তুই রেষ্ট নে আমি আসছি এই বলে ধ্রুব যাবে তার আগেই অবনি বলে উঠলো ‘ একটা কাজ করবে?
ধ্রুব অবনির দিকে ঘুরে বললো ‘ কি কাজ? অবনি ঠোট উল্টে বললো ‘ এক গ্লাস পানি এনে দেও। পানি পিপাসা লাগছে।’
অবনির কথায় ধ্রুবের খুব মায়া হলো ধ্রুব শ্বাস নিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে অবনির রুমে যাবে তার আগেই রাহি ধ্রুবের হাতে পানি গ্লাস দেখে বললো ‘ দাও তো পানি।’ এই বলে ধ্রুবের থেকে পানির গ্লাস নিয়ে নিজেই খেয়ে ফেললো। এতো তাড়াতাড়ি ঘটনাটা ঘটলো যে ধ্রুব কিছু বলতে পারলো না। ধ্রুব বিরক্ত কন্ঠে রাহিকে বললো ‘ কি করলে? অবনির জন্য পানি নিয়ে যাচ্ছিলাম আর তুমি খেয়ে নিলে?
ধ্রুবের কথা শুনে রাহি তেতো কন্ঠে বললো ‘ তুমি ওর জন্য পানি নিয়ে যাচ্ছো কেনো? ওর পানি পিপাসা লেগেছে ওই এসে খেতে পারে না? ধ্রুব তুমি ওকে ভালোবেসে ফেললে নাকি?
রাহির কথা শুনে ধ্রুব রেগে বললো ‘ জাষ্ট সেট আপ রাহি। তুমি আমার সাথে যেমন ব্যবহার করছো আমার মনে হয় তুমি আমাকে ভালোবাসো না। কেউ কখনো তার ভালোবাসার মানুষের সাথে এই রকম আচরন করে না যতটা তুমি করো।’
রাহি তখন মাথা নিচু করে বললো ‘ আই এম সরি ধ্রুব। আমি আর কখনো তোমার সাথে এই রকম আচরণ করবো না।’
এই বলে রাহি ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরলো।
এদিকে
ধ্রুবকে আসতে না দেখে অবনি নিজেই উঠে ড্রয়িং রুমে এসে দেখে রাহি ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে আছে এই দৃশ্য দেখে অবনির চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেলো। অবনি রাহির থেকে ধ্রুবকে ছাড়িয়ে দিয়ে ধ্রুবকে বললো ‘ লজ্জা করে তোমার? বাড়িতে বউ থাকতে তার বোনকেই জড়িয়ে ধরতে। তোমাদের সম্পর্ক ছিলো তা সবাই জানে কিন্তু তাই বলে যে এই এই রকম করবে ছিহ্..
রাহিকে ধাক্কা দেওয়ার ফলে রাহি নিচে পরে গেছে। ধ্রুব অবনির কথা শুনে মাথা নিচু করে আছে। রাহি ফ্লোর থেকে উঠে রেগে অবনিকে থাপ্পড় দিতে যাবে তার আগেই ধ্রুব রাহির হাত ধরে বললো ‘ ও আমার বউ হয়। আমার সামনে তুমি ওর গায়ে হাত দিতে পারো না।’ এই বলে ধ্রুব রাহির হাত ছেড়ে দিলো। অবনি ধ্রুবের কাজ দেখে বেশ অবাক হলো কারন ধ্রুব তার হয়ে প্রতিবাদ করেনি কখনো। রাহি তেতে উঠে ধ্রুবকে বললো ‘ ও আমাকে ইনসাল্ট করছে ধ্রুব আর তুমি ওর হয়ে কথা বলছো?
ধ্রুব তখন শান্ত কন্ঠে বললো ‘ হ্যাঁ কথা বলছি। কারন ও আমার বউ যে করেই হোক বিয়েটা হয়েছে তো।’
এই বলে ধ্রুব নিজের রুমে চলে গেলো। রাহি অবনির দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিজের রুমে চলে গেলো। অবনি মুচকি হেসে পানি খেয়ে ধ্রুবের রুমে গেলো।
ধ্রুব রুমে দু হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে আছে। ধ্রুবের চোখ বন্ধ করলেই অবনির মুখ ভেসে উঠতেই হার্টবির্ট যেনো বেড়ে গেলো। ধ্রুব চোখ খুলে বললো ‘ এই চোখ বন্ধ করলেই কেনো অবনির মুখ ভেসে উঠে?
‘ তোমার মনে আমার জন্য ভালোবাসার সৃষ্টি হচ্ছে সেই জন্যই।’
মুচকি হেসে বললো অবনি।
‘ ধ্রুব থমথমে গলায় বললো ‘ আমি তো রাহিকে ভালোবাসি। তোকে কেনো বাসতে যাবো।’
অবনি তখন মুচকি হেসে বললো ‘ সেটা নিজের মনকেই প্রশ্ন করো।’
অবনির কথায় ধ্রুব উঠে বেলকনিতে যাবে তার আগেই অবনি ধ্রুবের সামনে আসতেই কিছুতে বেজে ধ্রুবের উপরে পরে গেলো। ধ্রুব আর অবনি সোজা বেডে পরে গেলো। ধ্রুব বিরক্ত হয়ে অবনিকে বললো ‘ ওঠ এতো ভারি তুই বাবাগো আমার হাড় সব ভেঙে গেলো।’
ধ্রুবের কথা শুনে অবনি রেগে ধ্রুবের বুকে কি’ল ঘু’সি দিয়ে বললো ‘ তুমি একটা পচা।’
ধ্রুব ভ্রু উল্টে বললো ‘ হ্যাঁ জানিতো।’
অবনি তখন ঠোট উল্টে বললো ‘ তুমি যা জানো তার থেকেও বেশি পচা তুমি?
ধ্রুব শান্ত চাহনিতে বললো ‘ আচ্ছা আমি এতো এতো পচা হয়েছে এইবার উঠেক?
অবনি মুচকি হেসে ধ্রুবের থেকে উঠলো।
”বিকেলে বেলায়
অবনি রুমে বসে আছে। আনিসুল আহমেদ কল দিয়ে বললো ‘ অবনি তুমি একটু তাড়াতাড়ি অফিসে আসো।’
অবনি চিন্তিত কন্ঠে বললো ‘ জ্বি স্যার আসছি।’এই বলে অবনি তাড়াতাড়ি করে অফিসে গেলো। অবনি অফিসে এসে দেখে আনিসুল আহমেদ গম্ভীর হয়ে আছে। অবনি বললো ‘ কি হয়েছে স্যার? সব ঠিক আছে তো?
আনিসুল আহমেদ অবনির দিকে তাকিয়ে বললো ‘ অবনি শিশু পাচার কারীর লিডারকে কিন্তু এখনো ধরিনি। ওনাকে দ্রুত ধরতে হবে।’
অবনি শান্ত চাহনিতে বললো ‘ হুম স্যার, এই বলে অবনি রাইমার কাছে এসে বললো ‘ রাইমা শিশু পাচার কারীর লিডার কে?
রাইমা ভয় পেয়ে বললো ‘ আমি জানিনা।’
অবনি শান্ত কন্ঠে বললো ‘ সত্যি বলো এতে তোমার শাস্তি কিছুটা হলেও কমতে পারে।’
রাইমা ভিতু কন্ঠে বললো ‘ কালকে ** এই জায়গায় শিশু পাচার হবে। আর ওইখানেই লিডার আসবে আমি যতটুকু জানি।এর বেশি আমি আর কিছু বলতে পারবো না।’
রাইমার কথা শুনে অবনি দীর্ঘ শ্বাস আড়াল করে বললো’ আচ্ছা।’
অবনি আনিসুল আহমেদ কে কালকের প্লান বললো। সব শুনে আনিসুল আহমেদ মুচকি হেসে বললো ‘আচ্ছা।’
পরের দিন
অবনিদের টিম সবাই ** এই জায়গায় আসলো। অবনি তার টিম সহ গোডাউনের ভিতরে আসলো। তারপরই শুরু হলো গো’লা গো’লি। ইতিমধ্যে শিশু পাচার কারীর দলের বেশ কয়েকজন নিহিত হয়েছে। অবনি একটা বাক্সের পাশে দাঁড়িয়ে আছে হঠাৎ পিছন থেকে কেউ অবনির মাথায় বন্ধুক ধরে বললো ‘ সবাই থামো না হলে একে উপরে পাঠিয়ে দিবো।’ কন্ঠটা শুনেই অবনি ঘামতে লাগলো। অবনি নিজেকে শান্ত করে পিছনে ঘুরে হাত উচু করে সবাই কে বললো ‘ Stop..!
অবনির কথায় সবাই থেমে গেলো। অবনি আনিসুলের দিকে তাকালো। কালো মাক্স পরা মেয়েটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে বললো ‘ তোরা কেউ যদি আমাকে ধরতে আশিস তাহলে কিন্তু একে সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো।’
মেয়েটার কথা শুনে অবনি মুচকি হেসে মেয়েটার আড়ালে আস্তে করে পা দিয়ে মেয়েটার পায়ে লা’থি দিতেই হাত থেকে বন্ধুকটা নিচে পরে গেলো। অবনি মেয়েটার পেটে ঘু’সি দিতেই মেয়েটা নিচে পরে গেলো। অবনি মেয়েটাকে উঠিয়ে রাগী কন্ঠে বললো ‘ সি আইডির হাত থেকে বাঁচা অসম্ভব। তোদের মতো মানুষদের ধরার জন্যই আমরা।’
মেয়েটা রেগে বললো ‘ ছাড় বলছি।’ অবনি মুচকি হেসে মেয়েটার মাক্স খুললো। মেয়েটার মুখ দেখে আনিসুল আহমেদ অবাক হয়ে বললো ‘ রাহি চৌধুরী?
অবনি মুচকি হেসে বললো ‘ হ্যাঁ। রাহি বললো’ হ্যা আমিই সেই।’ রাহির কথা শুনে অবনি নিজের মাক্স খুলে বললো ‘ তোকে বলেছিলাম এমন কোনো কাজ করিস না যাতে মানুষ তোকে ঘৃণা করে।’
অবনি মুখ দেখে রাহি অবাক হয়ে গেলো। রাহির যেনো মাথা ঘুরতেছে। অবনি হেসে বললো,,
#চলবে….
( ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। পড়ে মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো। হ্যাপি রিডিং।)