অন্যরকম তুই পর্ব ১৭

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃDoraemon
অনন্ত খুব জোরে থাপ্পড় দেওয়ার কারণে অহনা শব্দ করে কেঁদে যাচ্ছে। দুই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বাচ্চাদের মতো কেঁদেই যাচ্ছে। অহনার কান্না দেখে অনন্তের বুকটা কস্টে ফেটে যাচ্ছে৷ অনন্ত অহনার কাছে বসে অহনার মাথায় রাখতেই অহনা অনন্তের হাত সরিয়ে নেয়৷ অনন্ত মনে মনে বলল
–এটা আমি কি করলাম! একই তো মেয়েটার জ্বর আবার হার্ট দূর্বল তারওপর আমি ওকে এভাবে মারলাম। আমি আসলেই একটা অমানুষ। নাহলে অহনাকে এভাবে মারতে পারতাম না।
অহনা কাঁদতে কাঁদতে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনি খুব পঁচা। আপনি আমাকে এভাবে মারতে পারলেন? আমার গালে খুব ব্যথা লাগছে।
অনন্ত লক্ষ্য করল অহনার গালটা থাপ্পড়ের ফলে লাল হয়ে আছে। অনন্ত অহনার আরো কাছে এসে অহনার লাল হওয়া গালে একটা চুমু দিয়ে দিল। অহনা অবাক হয়ে অনন্তের দিকে তাকিয়ে রইল। অনন্ত অহনার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
–সরি অহনা আমাকে তুই ক্ষমা করে দে৷ কিন্তুু তুই আর কোনোদিন তোর মরার কথা বলবি না। কেন আমাকে এভাবে রাগিয়ে দিস তুই? আমার এসব কথা শুনতে ভালো লাগে না তুই জানিস না?
অহনা এবার আরো কাঁদতে লাগল। আবারও অনন্তকে জাপটে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। অহনার আবারও জড়িয়ে ধরায় অনন্ত আবারও অবাক হয়। অনন্ত অহনার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কান্না কি থামাবি নাকি আবার থাপ্পড় খাবি?
অহনা তাও কেঁদেই যাচ্ছে। অনন্তকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অহনা কেঁদেই যাচ্ছে। অহনা এবার কাঁদতে কাঁদতে অনন্তকে বলল
–আমি মনে হয় আর বেশিদিন বাঁচব না স্যার। আমার শ্বাস নিতে ভীষণ কস্ট হয়৷ আপনি পারলে আমাকে ভুলে অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী থাকবেন। আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না। তাহলে শুধু শুধু আমার জন্য কস্ট পাবেন না। আমি জানি আপনি আমাকে ভুলতে পারবেন।
অনন্ত এবার ধমক দিয়ে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই একদম চুপ থাক। তোর কিছু হতে দিব না আমি। সবচেয়ে ভালো ডাক্তার দিয়ে আমি তোর চিকিৎসা করাব। তোর কিছু হবে না। তুই আমাকে ভালো না বাসতে পারিস কিন্তুু আমি তোকে ভালোবাসি।
অহনা শান্ত গলায় অনন্তকে বলল
–আমার মতো একটা হার্টের রোগীকে কেন আপনি এত ভালোবাসেন স্যার?
অনন্ত এবার থমকে গেল। অনন্ত মনে মনে বলল
–তারমানে অহনা যানে ওর অসুখের কথা! কিন্তুু কেন আমাকে অহনা কিছু বলল না? কেন?
অহনা অনন্তকে জড়িয়ে থাকা অবস্থাই বলল
–কি হলো বলুন না কেন আমাকে এত ভালোবাসেন?
অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–ভালোবাসতে কোনো কারণ লাগে না অহনা। হঠাৎই আমার মনের ভিতর তুই ঢুকে পড়েছিস। আমার তোকে খুব ভালোলাগত। কিন্তুু ভালোলাগাটা যে কবে ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়েছে তা আমার নিজেরই অজানা।
অনন্ত অহনাকে নিজের থেকে ছাড়াতে চাইলে অহনা আবারও অনন্তকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে৷ অহনার কান্ড দেখে অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–যে তুই আমাকে আগে সহ্য করতে পারতি না সে তুই কিনা আমাকে এখন এভাবে বার বার জড়িয়ে ধরছিস! আমি কি এটা সপ্ন দেখছি নাকি বাস্তবে আমার সাথে এমন হচ্ছে?
অহনা মুচকি হেসে অনন্তকে বলল
–আপনাকে জড়িয়ে ধরেছি তারমানে এই না যে আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমি আপনাকে খুব ঘৃণা করি৷ কিন্তুু আপনার বুকে মাথা রাখতে আমার কেন জানি না খুব ভালো লাগছে।
প্লিজ আমাকে আরেকটু আপনার বুকে থাকতে দিন৷ আমাকে আবার পাগল বেহায়া মেয়ে মনে করবেন না কিন্তুু হুম।
অনন্ত অহনার কথায় হেসে ফেলল৷ অনন্ত অহনাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অনন্ত নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল৷
অহনা অনন্তের বুকের ভিতরের কস্টটা অনুভব করতে পারছে। অহনা উপরে তাকিয়ে দেখল অনন্ত কাঁদছে। অহনা অনন্তের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে অনন্তকে বলল
–কি হলো আপনার চোখে পানি কেন? এত রাগী মানুষের চোখে জল মানায় না। কাঁদবেন না প্লিজ।
অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই একদিনে বদলে গেলি কি করে অহনা? আমার সাথে নাটক করছিস নাতো?
অনন্তের কথায় অহনা খুব জোরে হাসতে লাগল৷ হাসতে হাসতে অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–হ্যা আমি নাটকই করছি। আপনার মতো রাগী দানব স্যারকে কি ভালোবাসা যায় নাকি? আপনিও না কত বোকা। হা হা হা আমি বদলাই নি৷ আর আপনাকে ভালোওবাসি নি। এটা তো আমি একটু আগেই আপনাকে বললাম। এখন যান আমার জন্য খাবার নিয়ে আসুন। আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে।
অনন্ত অহনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে অহনার জন্য খাবার আনতে চলে গেল। অনন্ত সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনে মনে বলল
–আমি এখনও জীবিত আছি আর আমি ভাবতেও পারি নি জীবিত থাকা অবস্থায় আমি তোর চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পাব অহনা। হ্যা তুই আমাকে ভালোবাসিস। কিন্তুু তুই তা স্বীকার করতে চাস না। কতদিন আমি বেঁচে থাকব জানি না কিন্তুু যতদিন বেঁচে আছি মরার আগে আমি তোর মুখে একবার ভালোবাসি কথাটা শুনতে চাই। জানি না তুই মুখ ফুটে কোনোদিন আমায় ভালোবাসি বলবি কিনা কিন্তুু মন জিনিসটা কিছুতেই মানতে চায় না। যে আমি ভালোবাসা বিশ্বাস করতাম না সে আমিই কিনা অহনার মুখে ভালোবাসি শুনার জন্য পাগল। নিয়তি কি আমাদের কোনোদিনও এক হতে দিবে?
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই অনন্ত অহনার জন্য খাবার নিয়ে চলে আসে। অনন্ত ঘরে এসে দেখল অহনা আবার কাঁদছে। অহনাকে কাঁদতে দেখে অনন্ত খুব রেগে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই আবারও কান্না শুরু করে দিলি? তোকে না আমি বললাম এভাবে কাঁদবি না।
অনন্তের ধমকে অহনা চুপ হয়ে গেল। অনন্ত হাতে প্লেট নিয়ে ভাত আর মাছ নিয়ে মেখে অহনার মুখের কাছে খাবার নিয়ে বলল
–এবার খুব বড় করে হা কর তো দেখি? ছোট করে হা করলে মার খাবি কিন্তুু৷
অনন্তের কথায় অহনা একটু হেসে চোখের জল ফেলে হা করল এবং অনন্ত অহনাকে খাইয়ে দিতে লাগল৷ খাওয়া শেষ করার পর অহনা অনন্তের কোলে শুয়ে পড়ল। অনন্ত মুচকি হেসে অহনার মাথায় হাত বুলাতে লাগল৷ অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনি আবার শিক্ষক জীবনে ফিরে আসুন স্যার। আপনাকে কলেজের ক্লাসে আবার আমি দেখতে চাই৷ আপনাকে ছাড়া কলেজটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে৷ আপনি আবার কলেজে ফিরে আসবেন তো স্যার?
অহনার কথায় অনন্ত থমকে যায়।



#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here