#শালিক_পাখির_অভিমান
#পর্ব_১২
#অধির_রায়
প্রখর রোদে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সমস্ত ছাঁদ। তেজস্বী সূর্য থেকে নিজের ত্বক বাঁচানোর জন্য ওড়না টেনে আমার মুখমণ্ডল ঢেকে নিলাম৷ মাথা নিচু করে ছাঁদের দরজার কাছে আসতেই বিশাল দেহী কারোর সাথে ধাক্কা খাইলাম৷ মুখপ্রাণে চেয়ে দুই কদম পিছিয়ে আসলাম৷ পিশাচের মতো হাসি দেখে আমি শুকনো ঠুক নিলাম৷ আমতা আমতা করে বললাম,
“ইমন ভাইয়া আপনি এখানে কি করছেন? অসভ্যর মতো আমার পথ আটকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”
ইমন ভাইয়ার চোখে মুখে ভয়ংকর হাসি৷ বাসায় তেমন কেউ নেই৷ তার উপর ইমন ভাইয়ার চোখে মুখে ক্ষিধে দেখতে পাচ্ছি । আমার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছেন৷ আমি চিৎকার করে বললাম,
“ভাইয়া আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না৷ আমি সব সময় আপনাকে নিজের ভাইয়ার নজরে দেখেছি। সেদিনের মতো ভুল করার চেষ্টা ভুলেও করবেন না৷”
পিশাচের মতো মুচকি হেঁসে বলল,
“পৃথিবীর সবাইকে বোনের চোখে দেখলে নিজের চাহিদা মেটাবো কাকে দিয়ে? নিজের চাহিদা মেটানোর জন্যই তোমাকে আমি বোনের নজরে দেখি না৷ আমার চোখে তুমি সব সময়ের জন্য হ*টি৷”
আমি ধীরে পায়ে পিছিয়ে যাচ্ছি ইমন ভাইয়ার আমার দিকে এগিয়ে আসছেন৷ আমি ভেজা গলায় বললাম,
“ভাইয়া আমি আপনার পায়ে পড়ি৷ আমাকে ছেঁড়ে দেন৷ আপনি তো বিবাহিত। কেন আপনি এক নারীতে সন্তুষ্ট নয়? অন্যের দিকে নজর দেওয়া মহাপাপ।”
“শ্রুতি আমার বিয়ে করা বউ৷ শ্রুতিকে কাছে টানতে কোন সংকোচ নেই৷ সে নিজের ইচ্ছায় কাছে আসে৷ আমার তো পছন্দ জোর করে কাউকে পাওয়ার৷ জোর করে কাছে পাওয়া বরাবরই আমার ভালো লাগে৷”
ভাইয়ার কথা শুনে ঘৃ*ণা*র নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে৷ পিছনে তাকিয়ে দেখি আমি একদম ছাঁদের কিনারায় চলে আসছি৷ আকাশের প্রাণে তাকিয়ে বললাম,
“হ্যাঁ আল্লাহ আমি নিজেকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করলাম৷ আমি কিছুতেই নিজের জীবন নরপশুর হাতে তুলে দিতে পারব না৷”
ছাঁদ থেকে লাফ দেওয়ার আগেই ইমন ভাইয়া আমাকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেন৷ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলে আমার ঘাড়ে জোরে কা’ম’ড় বসান৷ আমি চিৎকার করে উঠতেই মুখ চেপে ধরেন৷ ঘৃণা মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
“আমার কাছে আসতে তোমার কিসের আপত্তি? আমি তোমাকে সব সময় সুখে রাখব৷ টাকার কোন অভাব পড়বে না৷ চোখে সব সময় সোনা দেখবে৷”
“ছি ভাইয়া! আপনি এতো নিচ মনের মানুষ। শ্রুতি ভাবীর মতো এতো সুন্দর বউ থাকতে আপনি অন্য মেয়ের দিকে কিভাবে নজর দেন? আপনার মতো স্বামী পেয়ে সবার গর্ব করা উচিত৷ কিন্তু আপনাকে নিয়ে গর্ব করতে পারবে না শ্রুতি ভাবী৷ আমার তো কষ্ট হচ্ছে শ্রুতি ভাবীর জন্য৷ যখন জানতে পারবে তার স্বামী এমন জ*গ*ণ্য কাজ করেন৷
আমার কথায় ভাইয়া আরও রেগে যান৷ ঠাস করে কয়েকটা থা*প্প*ড় বসিয়ে দেন৷ মাথা ভনভন করে ঘুরতে থাকে৷ চোখ ঝাপসা হয়ে আসে৷ ঠোঁট কেটে যাওয়ার ফলে মুখ থেকে রক্ত ঝরছে৷ সামনে শুধু ইমন ভাইয়াকে দেখতে পাচ্ছি৷ চোখ দু’টো লাল টাকবক করছে৷ ইমন ভাইয়া আমার গাল চেপে ধরে বলল,
“আমি কিছুই বুঝি না৷ ইহানের সাথে তোর মেলামেশা কিছুই বুঝতে পারব না৷ যুবক ছেলে কেন তোর প্রতি দুর্বল আমি বুঝতে পারিনা? সব ছেলেরাই দেহের উপর দুর্বল৷ তুই ইহানের কাছে দেহ উৎসর্গ করতে পারিস আমার কাছে কেন নয়?”
“আপনার মস্তিষ্কে খারাপ চিন্তা ভাবনা ছাড়া কিছুই নেই৷ ফুলের মতো মানুষের সাথে আমাকে জড়িয়ে তাকে খারাপ করছেন৷ আপনাকে যতটা খারাপ ভাবতাম তার থেকেও আপনি বেশি খারাপ। অযথা কাউকে কাঁদা ছিড়ালেই সে নোংরা হবে না৷”
আমার চুলের মুড়ি ধরে বলল,
“খারাপের কি দেখছিস? তোকে জোরপূর্বক ভোগ করব৷ তারপর কতটা খারাপ তার প্রমাণ তুই নিজের পাবি৷”
চোখ থেকে অশ্রু অনবরত গড়িয়ে পড়ছে৷ ভাইয়ার এমম ব্যবহারে আমি খুবই লজ্জিত। আমি কিছুতেই নিজের সম্মান ভাইয়ার কাছে বিলিয়ে দিব না৷ জীবন দিতে প্রস্তুত সম্মান নয়৷ ভাইয়া নেশা ভরা কন্ঠে বলল,
“তোর মতো শত শত ভার্জিন মেয়ে আমার পিছনে ঘুর ঘুর করে৷ আমি তাদের এড়িয়ে চলিনা৷ তাদের ভোগ করে যাস্ট ছেড়ে দেয়৷ কিন্তু তোর মতো কাউকে পাইনি৷ তোকে আমার খুব ভালো লাগে৷ তুই যে শ্যাম সুন্দরী।”
ভাইয়ার কুৎসিত কথাগুলো নিজের কাছে বিষের তীরের মতো লাগছে৷ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না৷ যে পরিবারে সবাই ভালো মনের মানুষ৷ সেখানে কেন এমন নি*র্ল*জ্জ বে*হা*য়া*র জন্ম হলো? চোখ থেকে রক্তের নালা বয়ে যাচ্ছে৷ আমি ভাইয়ার মুখে থু থু দিয়ে বললাম,
“তোর মতো লোকদের জন্য আজ মেয়ে জাতি ছেলেদের বিশ্বাস করতে ভয় পাই৷ তোর মতো কিছু ছেলের জন্য মেয়েদের চোখে ছেলেরা ভাগকারী৷ কখনও মেয়ে জাতিকে সম্মাম করতে পারে না৷ তুই ভুলে যেতে পারিস৷ কিন্তু আমি আমি কখনও ভুলে যাইনি। তোর জন্ম কোন মেয়ের গর্ভ থেকেই হয়েছে। তোর বুক একবারও জন্য কাঁপে না নারী জাতিকে অসম্মান করতে। তোর মতো… ”
কিছু বলার আগে আরও কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দেন৷ এখন দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলছি৷ ভাইয়া গলা চেপে ধরল৷ শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে৷ আজই ভাইয়া আমাকে মে*রে ফেলবে৷ বিশাল দেহী মানুষের সাথে পেরে উঠা মুশকিল হয়ে উঠল৷ আমার গলা ছাড়তেই আমি হাফ ছেড়ে বসে পড়লাম৷ কাশির জন্য কথাও বলতে পারছি না৷ বারবার জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি৷ আর একটু এভাবে থাকলে ম*রাই যেতাম৷ ভাইয়ার আমার মুখ উঁচু করে বলল,
” আমাকে নীতি কথা বলতে আসবি না৷ তোকে এমন অবস্থায় খুব হ’ট লাগছে৷ একদম খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে৷ ইহানের সাথে বিছানা শেয়ার করতে ভালোই পারিস৷ আজ না হয় আমার সাথে ছাঁদ শেয়ার কর।”
ভাইয়ার কথা আর মেনে নিতে পারছি না৷ চোখ মেলে পাশে একটা লাঠি দেখতে পেলাম৷ নিজেকে বাঁচানোর একমাত্র হাতিয়ার পেয়ে গেছি৷ চোখের পলকেই লাঠি হাতে তুলে নিলাম৷ ছয় নয় না ভেবে এলোপাতাড়ি ভাবে পি*টা*তে থাকি৷ ভাইয়া চিৎকার করতে থাকে। ঘৃণার কারণে আমার হাত থামছে না। উচ্চ স্বরে বললাম,
“তোর মতো শয়তানকে শায়েস্তা করার জন্য এক শালিকই যথেষ্ট। আজ তোর এমন অবস্থা করব তুই কোনদিন অন্য মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতে ভয় পাবি৷ আমার তো ইচ্ছা করছে তোর *** কেটে দিতে৷”
দরজার কাছে আসতেই দরজা খুলে দৌড়ে ছাঁদ থেকে চলে আসলাম৷ এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলাম৷ ওয়াসরুমের ঝরনা ছেড়ে ফ্লোরে বসে অঝোরে কান্না করতে থাকলাম৷ আমি কোন নরকে এসে পড়লাম৷ কেন আল্লাহ আমার কপালে এসব লিখে রেখেছেন? প্রায় দুই ঘন্টা ঝরনার জলে ভিজলাম৷ গালে হাত দিতে পারছি না৷ ব্যথায় চিনচিন করছে। ফুপির ডাকে বাহিরে আসলাম৷ ইহান ভাইয়া বাড়িতে থাকলে আজ আমার সাথে ছাঁদে যেতেন৷ আমি কখনও এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতাম না৷ আমি ছাঁদে কখনও একা যায়না৷ আমার সাথে ভাইয়া যান নাহলে মায়া ফুপি যান৷ আজ ভাইয়া বাড়িতে নেই৷ মায়া ফুপি রান্নার কাজে বিজি৷ সেজন্য নিজে একাই ছাঁদে গেলাম৷ কখন ভাইয়া ছাঁদে চলে আসছে জানি না?”
মায়া ফুপি আবারও হাক ছাড়লেন। বিরক্ত স্বরে বলল,
“কখন থেকে ওয়াসরুমে তুই৷ এতো ভিজলে জ্বর আসবে৷”
ভেজা কাপড়ে কাঁপতে কাঁপতে রুমে আসলাম৷ দাঁড়ানোর শক্তি নেই৷ আমি ধপাস করে বিছানায় বসে পড়লাম৷ কোন দিকে খেয়াল নেই৷ বিছানায় শুয়ে পড়লাম৷ পরের দিন সকাল বেলা পিন পিন করে চোখ মেলে তাকালাম৷ ধীর পায়ে ডাইনিং রুমে গেলাম। কানে ভেসে আসছে বিয়ের কথা৷ কার বিয়ের কথা হচ্ছে? ইহান ভাইয়ার বিয়ের কথা চলছে নাকি৷ আমি ডাইনিং রুমে আসতেই ইমন ভাইয়ার নজরে পড়লাম৷ ইমন ভাইয়া মুচকি হেঁসে বলল,
“আমাদের বাড়ির মেয়ে চলে আসছে৷ আপনারা কথা বলতে পারেন৷ রুপে গুণে লক্ষী৷ শালিকের মতো শ্যাম সুন্দরী কেউ নেই৷”
আমি ভাইয়ার কথা কিছুই বুঝতে পারলাম না৷ চোখের সামনে ভেসে উঠছে ভাইয়ার বা*জে দৃষ্টি। দেহের প্রতি লোভ৷ কাউকে কাছে পাওয়ার জন্য তীব্র আকাঙ্খা। ঘৃণায় গা ঘিন ঘিন করছে। আমি ধীর পায়ে সামনে গিয়ে বললাম,
“আপনারা বসে গল্প করেন। আপনাদের জন্য আমি চা বিস্কুট নিয়ে আসছি৷”
চলে আসতে নিলেই এক বৃদ্ধ মহিলা আমার হাত ধরে ফেলেন৷ মধুর কন্ঠে বলল,
“তোমার নামই শালিক! আমি তোমার কথা অনেক শুনেছি৷ তোমাকে সবাই খুব ভালোবাসে।”
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। যার অর্থ আমার নামই শালিক৷ আমার হাত ধরে নিজের পাশে বসালেন৷ তারপর উনার মুখ থেকে যা শুননাম তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না৷
চলবে…..
শুক্রবার সব কিছু বন্ধ থাকে৷ শুয়ে বসে থাকতে থাকতেই লেখার কথা মনে ছিল না৷ কাল বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করব৷