#শালিক_পাখির_অভিমান
#পর্ব_১৭
#অধির_রায়
বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেল৷ কখনও আশা করেনি আমাকে৷ সবাই ভেবে নিয়েছে আমি মা*রা গেছি৷ শাকিলা এতোটা জোরে চেপে ধরে আছে শ্বাস নিতে পারছি না৷ অপর প্রান্তে অপরাধী চোখ মেলে তাকিয়ে আছেন আমার ভাই আরাফ৷ চোখ ভেজা মুখে উজ্জ্বল হাসি৷ প্রিয় জিনিস বহু বছর পর ফিরে পেয়েছেন৷ বাবা ধীর পায়ে আমার সামনে আসেন৷ আমাকে এক পলক দেখে বলল,
“শাকিলা ওকে আমার সামনে থেকে চলে যেতে বল! আমি তার মুখও দেখতে চাইনা৷ আমার এক মেয়ে এক ছেলে৷ তার কোন জায়গায় নেই এ বাড়িতে৷”
বাবার রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। শুধু একবার কথা বলার জন্য কতোই না ছটফট করছেন৷ মালী কাকা বাবার প্রসঙ্গ তুললেই ভীষণ রেগে যেতাম৷ আমার মনে এতোটাই অভিমান জমেছে আমার মায়ের সাথেও একবার কথা বলিনি৷ যদিও মা এসব কিছু জানতেন না৷ তিনিও সকলের মতো জানেন আনন্দপুরে শালিক নামে কেউ নেই৷ শালিক দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে৷ মা আঁচলে মুখ ঢেকে কান্না করছেন৷ আমার পাশে বিরক্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ইহান ভাইয়া। তার দিকে কারো নজর নেই৷ শালিকা নজর পড়ল ইহান ভাইয়ার উপর৷ শাকিলা ভেজা কান্না জনিত কন্ঠে প্রশ্ন করল,
“আপু তোমার পাশে সুন্দর ছেলেটা কে? তোমার সাথে এখানে এসেছে কেন?”
“উনার নাম ইহান। উনার সাথে কিছুদিন আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি৷”
কথা শেষ করার আগেই শাকিলা ওড়না ঠিক করে ঘরের দৌড় দেয়৷ শাকিলার এমন কান্ডে ঘাবড়ে গেলাম কিছু মুহুর্তের জন্য। দৌড়ে চেয়ার নিয়ে আসে ইহান ভাইয়ার জন্য৷ মুচকি হেঁসে বলল,
“দুলাভাই আপনি খুব সুন্দর। আমার একটা প্রশ্ন ছিল আপনার কাছে?”
ইহান ভাইয়ার আমার দিকে তাকান৷ তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না৷ আমি আশ্বাস দিয়ে চোখের ইশারায় বললাম,
“আমার বোন শাকিলা৷ একটু চঞ্চল টাইপের মেয়ে৷ মনটা খুব ভালো৷”
ইহান ভাইয়া মুচকি হেঁসে বলল,
“কি জানতে চাও?”
শালিকা নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারল না৷ আনন্দে উচ্ছাসে বলল,
“আপনি দেখতে অনেক সুন্দর। সেটা ঠিক আছে৷ কিন্তু আপনার মাথার চু*ল লাল কেন? আপনি কি ১৯৭১ সালের পাক সেনাবাহিনী। দাদীর কাছে শুনেছি তাদের চুল লাল ছিল৷”
এমন প্রশ্নে ইহান ভাইয়া ভালোভাবে ভ্যাবাচেকা খান৷ তিনি অহেতুক এমন প্রশ্নের কখনও সম্মুখীন হননি৷ কি উত্তর দিবে ভেবে পাছে না? বড় খালা দৌড়ে চিৎকার করতে করতে আসেন৷ উনার মুখে এখনও সেই ত্যাজ৷ আমাকে অগ্নি দৃষ্টিতে প্রখর করছেন৷ যেন এখনই জ্বা’লি’য়ে পু*ড়ি*য়ে মা*র*বে৷ হুংকার দিয়ে বলল,
“আপয়া শালিককে এই বাড়িতে ঢুকতে দিল? আরও একবার সোনা চু*রি করতে এসেছে৷ তোরা কেউ অপয়াকে বাড়ি থেকে বের করতে পারবি না৷ আমি নিজেই একে বাড়ি থেকে বের করছি৷ এমন শাস্তি দিব জীবনেও ভুলতে পারবে না৷”
বড় খালার হুংকারে বাড়িতে কোলাহলের রোল পড়ে গেল৷ আমি এখানে আসছি বিশ মিনিটও হয়নি। বড় খালাকে খরব কে দিল? আর যেই বড় খালাকে খরব দেখ খবর দিয়ে ভালোই করছে। আজ আমি বড় খালাকে ছাড়ব না৷ আমি বুঝিয়ে দিব আমি কে? বড় খালা আমার গায়ে থা*প্প*ড় মারার জন্য হাত তুলতেই আমি হাত ধরে ফেলি৷ উল্টো দুইটা থা*প্প*ড় বড় খালার গালে বসিয়ে দেয়৷ লোকজন আমার দিকে তেড়ে আসতে নিলেই পাশে রাখা দা নিয়ে বড় খালার গলায় ধরি৷ চিৎকার করে বললাম,
“আমি আমার নিজের ভাগ্য লিখতে জানি৷ আমার কি হবে আমি জানি না? যে আমার গায়ে হাত তুলার চেষ্টা করবে তাকে আমি দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিব৷”
নিজেকে নিঃদোষ প্রমাণ করার জন্য এ সুযোগ কাজে লাগালাম। আহ্লাদী স্বরে বললাম,
“খালা ও খালা৷ সেদিন আমার ড্রয়ারে আর ফুপির ব্যাগে সোনা কে রাখছিল?”
বড় খালা আমতা আমতা করে বলল,
“আমি জানি না৷ তোর ফুপির সাথে নাকি তুইও সেদিন চু*রি করছিলি৷”
চিৎকার চেঁচামেচিতে সাদাফ ভাইয়া দৌড়ে আসে৷ হুংকার দিয়ে বলল,
“শালিক আমার মাকে ছেড়ে দে৷ আমার মায়ের কিছু হলে তোকে আমি খু’ন করে ফেলব৷”
আমার দিকে তেড়ে আসতেই ইহান ভাইয়া সাদাফ ভাইয়াকে পা বাজিয়ে ফেলে দেন৷ ইহান ভাইয়া শান্ত গলায় হুমকি দিয়ে বলল,
“আমার স্ত্রীর সাথে উঁচু গলায় কথা বললে আমি সব তছনছ করে দিব৷ শ্বাস নেওয়ার মতো কেউ বেঁচে থাকবি না৷ শালিক তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও৷ নিজেকে আজই নিঃদোষ প্রমাণ করো।”
আমি একটু জোরে চেপে ধরি৷ খালার গলার চামড়া কেটে যায়৷ রাগী গলায় বললাম,
“সত্যি বলবি নাকি তোকে মে*রে ফেলব৷”
খালা কান্না করতে করতে বলল,
“আমি সত্যি কথা বলছি৷ আমাকে মে*রো না৷ সেদিন আমিই ড্রয়ারে আর ব্যাগে সোনা রাখছি৷ তোকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়ার জন্য আমিই সবাইকে বলছি পাথর নিক্ষেপ করতে৷”
মায়ের এমন কথা শুনে সাদাফ ভাইয়া চমকে যায়৷ তিনি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷ দুই কদম পিছিয়ে যান শাকিলা দৌড়ে সাদাফ ভাইয়া ধরে৷ আমি লাথি দিয়ে বড় খালাকে উঠানে ফেলে দিলাম৷ আমি কখন অমানুষ হয়ে গেছি জানা নেই । সকলের উদ্দেশ্য বললাম,
“আসল চো*র আপনাদের সামনে৷ আমার কাছে আমার খালা সেদিন মা*রা গেছে যেদিন আমাকে মে*রে ফেলার জন্য নদীতে ফেলে দিয়েছিল৷ সেজন্য উনার প্রতি কঠোর হতে আমার একটুও ভয় করল না৷ আমি আগের ভীতু শালিক নয়৷ আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বললে তার জিহ্ব কে*টে দিব৷”
হনহন করে আমি আমার স্মৃতিময় দাদীর ঘরে চলে আসলাম। এখনো সেই চৌকি অযত্নে পড়ে আছে৷ বুক ফেটে কান্না আসল৷ ওদিকে ওদিক তাকিয়ে নিজের কান্না থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি৷ কিছুই চোখ থেকে জল পড়া বন্ধ হচ্ছে না৷ ইহান ভাইয়া আমার কাঁধে হাত রাখেন৷ চকিত হয়ে উনার দিকে তাকায়। আহত কন্ঠে বলল,
“আল্লাহর কাছে দোয়া করো তাদের জন্য৷ আল্লাহ তাদের জান্নাত দান করবেন৷”
নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না৷ উনাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলাম৷ ইহান ভাইয়ার বুকটা আমার কাছে সবথেকে বড় আশ্রয়ের স্থান মনে হলো৷ ইহান ভাইয়া আমার মাথায় বিলি দিয়ে বলল,
“আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই৷ রাখবে আমার কথা?”
আমি ভেজা চোখে ইহান ভাইয়ার মায়াভরা মুখটার দিকে তাকালাম৷ ভেজা গলায় বললাম,
“আপনার কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করব৷”
“তোমাকে যে বাড়িতে অপমানিত হতে হয়েছে আমি তোমাকে সেই বাড়িতে আর রাখতে চাইনা৷ দিনের আলো ফুটতেই আমরা গ্রাম ছেড়ে ঢাকা চলে যাব৷”
ইহান ভাইয়ার কথায় বুকটা ধুমরে মুচড়ে উঠল৷ নিজের জন্মস্থান ছেড়ে যেতে কেমন জানি ভয় হলো৷ বুকের কোণে সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভব করলাম। তবুও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম৷ শাকিলা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
“আপু তোমাদের খাবারের জন্য ডাকছেন৷ বাবা বসে আছে তোমাদের জন্য৷ ডাক্তার উনাকে ঠিক সময়ে খাবার খেতে বলছে৷”
আমি ইহান ভাইয়ার হাত ধরে ভাইয়ার ঘরে নিয়ে গেলাম৷ ভাইয়ার ঘরে টেবিলে খাবারের ব্যবস্থা করেছে৷ খাওয়া শেষ করে আমাদের ঘুমাতে দেওয়া হলো ভাইয়ার ঘরে৷ হাঁটতে হাঁটতে ইহান ভাইয়া ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন৷ উনি বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়েছেন৷ ঘুম নেই চোখের পাতায়৷ আমি নদীর ঘাটে এসে বসলাম৷ এতো গরমে ইহান ভাইয়া কিভাবে ঘুমাল? নদীর ঘাটে শীতল হাওয়া বইছে৷ এক মনে বয়ে চলা নদীর পানি দেখছিলাম৷ শালিকা আমার ঘা ঘেঁষে বসল৷ আগের মতো চঞ্চল নেই শালিকা৷ মুখে নেমে এসেছে মলিনতা৷ হাসতে ভুলে গেছে৷ মলিন কন্ঠে বলল,
“আপু তোকে আমি খুব মিস করি৷ তোর শূন্যতা বারবার চোখে পড়ে৷ তুই চলে আয় গ্রামে৷ তোকে ছাড়া আমি ভালো নেই৷”
আমি শালিকার গায়ে আলতো করে হাত রাখতেই শাকিলা “আউচ” করে উঠল৷ সন্ধ্যায় বেলা অভিমানে বোনটাকে জড়িয়ে ধরতে পারিনি৷ ব্যস্ত গলায় বললাম,
“কি হয়েছে তোর পীঠে৷ এমন চিৎকার করে উঠলি কেন?”
শালিকা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল৷ ভেজা গলায় বলল,
“বড় খালা গরম পানি পীঠে ঢেলে দিয়েছে৷ বাবার কাছে সব সময় যৌতুকের টাকা চান৷ বাবা যৌতুকে টাকা দিতে না পারায় আমাকে উঠতে বসতে কথা শুনান৷ কথায় কথায় মা*রে*ন৷ বাড়ির সমস্ত কাজ আমাকে দিয়ে করান৷ তবুও বড় খালার মন জয় করতে পারলাম না৷ সাদাফ ভাইয়া কিছুই বলে না৷ আমাকে বলে ‘মা বললে আরও একটা বিয়ে করব।’ আমি সাদাফ ভাইয়াকে খুব ভালোবাসি। আমি উনাকে ছাড়া বাঁচবো না৷ সেদিন মা ছেলে মিলে পাত্রী দেখতে গিয়েছিল৷ দুই লক্ষ টাকা যৌতুক চেয়েছেন৷”
শালিকার আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কান্না করছেন৷ আমার চোখ থেকে রক্তের বন্যা বয়ে গেল৷ আমি প্রতিজ্ঞা করলাম বড় খালাকে নিজের হাতে খু’ন করব৷ নদীতে ভাসিয়ে দিব৷ কোন প্রমাণ থাকবে না৷ শালিককে জড়িয়ে ধরতেও পারলাম না৷ অগ্নি মূর্তি ধারণ করে বললাম,
“তুই ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়৷ আমি তোর সাথে সকালে কথা বলব৷ ইহান ঘুম থেকে উঠে আমাকে না দেখলে ভয় পাবে৷
আমি রুমে এসে ভাইয়ার সারাঘর তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগলাম৷ একসময় পেয়ে গেলাম রাম দা৷ আমার কথা না ভেবে রাম দা বেরিয়ে পড়লাম খালার বাড়ির উদ্দেশ্য। খালা উঠানে মাদুর বিছিয়ে ঘুমাচ্ছেন। ফিসফিসে খালার ঘুম ভাঙালাম। লোভ দেখিয়ে খালাকে নদীর ঘাটের দিকে নিয়ে আসলাম৷ এখানে লুকিয়ে রাখা হয়েছে রামদা৷ খালার হাতে দশ হাজারের মতো টাকা দিয়ে করুন স্বরে বললাম,
“খালা শাকিলাকে আর মে*রো না৷ আমি তোমাকে প্রতিমাসে টাকা পাঠাবো৷”
খালা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে৷ চাঁদের আলোয় টাকাগুলো দেখতে থাকে৷ সুযোগ বুঝে রাম দা দিয়ে খালাকে কু*পা*নো শুরু করলাম৷ খালা অনেক জোরে চিৎকার করল৷ খালাকে নদীতে ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে দৌড়ে চলে আসি৷ রামদা ভালোভাবে ধৌত করে যথাস্থানে রেখে দিলাম৷ সারা দেহে কম্পন শুরু হয়ে গেছে৷ আমি এ কি করলাম? বারবার নদীতে গোসল করছি৷ একের পর এক ঢোপ দিচ্ছি।
জামা পাল্টিয়ে শুয়ে পড়লাম৷ আর ঘুম হলো না৷ সকালে খবর এলো কে যেন খালাকে কু*পি*য়ে হত্যা করেছে? স্বাভাবিক ভাবেই আমার বুক কাঁপতেছে৷ কান্না করে যাচ্ছে সবাই৷ আমার চোখে বিন্দুমাত্র পানি নেই৷ সবাই খালাকে দেখতে গেছে৷ আমি রয়ে গেছি একা৷ আশেপাশে টাকা পড়ে থাকার জন্য কেউ কেউ বলছেন ডা*কা’তদের কাজ এটা৷ টাকা দেননি বলে এমন কাজ করেছে৷ সবার চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও ইহান ভাইয়া বুঝে গেছেন এটা আমি কারছি৷ আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরেন৷ আমাকে টেনে রুমে নিয়ে আসেন৷ কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল,
“বোরকা পড়ে নাও৷ আমরা এখনই চলে যাব। আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলে নিচ্ছি৷”
বাবা সকালে উঠেই বাজারে চলে গেছেন৷ যতই আমাকে অপমান করেন আমার জন্য উনার মন কাঁদে৷ এই মাত্র বাজার থেকে মাছ কিনে বাড়ি ফিরলেন৷ তিনি রাস্তায় এসে জানতে পারেন৷ ইহান ভাইয়াকে বাবাকে বলল,
“আমরা ঢাকা ফিরে যেতে চাই৷ কাল থেকে শালিকের পরীক্ষা। আপনার শরীর খারাপের কথা শুনে শালিক এসেছে৷ না হলে শালিক কোনদিনও বাড়িতে আসতো না৷”
বাবার মুখ শুকিয়ে গেল৷ মলিন কন্ঠে বলল,
“তোমরা খেয়ে যাবে না৷ সকাল বেলা না খেয়েই চলে যাবে৷”
“আমাদের ট্রেনের টিকেট কাটা হয়ে গেছে অনেক আগেই৷ দেরি হলে ট্রেন মিস করব৷ শালিকের পরীক্ষা শেষ হলে আমরা আসবো৷ তখন অনেক দিন থাকব৷”
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলাম৷ আমারও খুব ভয় হচ্ছে৷ পুলিশ যদি আমাকে ধরে নিয়ে যান৷ আমি গলা বাড়িয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,
“আপনি চলে আসেন৷ আমি কাউকে বলতে বলছি, আমরা চলে যাব। আমি জানতাম সাদমান আহমেদ মা*রা গেছেন৷ উনাকে মাটি দিতে আসছিলাম। মাটি দেওয়া শেষ৷ এখন আমরা চলে যাব৷”
আমার কথা বাবা ভীষণ কষ্ট পেল৷ চোখ দুটো চিকচিক করে উঠল৷ উনাকে উপেক্ষা না করে ইহান ভাইয়ার হাত ধরে বাহিরে চলে আসলাম৷ রাস্তায় বের হতেই ভ্যান পেয়ে গেলাম৷ ভ্যানে করে বড় সড়কের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম৷ পিছন থেকে মা ডেকে যাচ্ছেন কিন্তু কান অব্ধি পৌঁছাল না। শাকিলা ওঁ বাড়িতে চলে গেছে৷ ভ্যানের গতি দ্রুত করায় আমরা কোথাও বিলীন হয়ে গেলাম৷ বাসে উঠতেই মাথা থেকে বুঝা সরে গেল। ইহান ভাইয়ার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলাম৷ বাসের জানালা দিয়ে হাওয়া বইয়ে৷ তবুও ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছি৷ অস্থিরতা কাজ করছে৷ কখন ইহান ভাইয়া কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছি জানা নেই৷ চোখ মেলে নিজেকে ভাইয়ার রুমে আবিষ্কার করলাম৷ সারা রাত ঘুম হয়নি সেজন্য কিছুই জানতে পারিনি৷ ভাইয়া আমার ঘুম ভাঙায় নি৷ দুইটা গাড়ি পাল্টাতে হয় চৌধুরী ভিলায় আসতে।
চলবে….
শালিক নিজ হাতে শাস্তি দিয়েছে ইহান ছাড়া অন্য কেউ কি জানতে পারবে? জানতে পারলে আইন শালিককে শাস্তি দিতে পারে৷