#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-২২ (ভালোবাসার সূচনা)
কোরবাণীর ঈদের কারণে সবাই একসাথে হয়েছিল একদিনের জন্য। ছেলেরা অনেক দূরের থেকে মুসলিম কসাইয়ের থেকে গরুর মাংস সংগ্রহ করেছিল। তানজিনার সাথে ইনায়ার ঈদের দিন কথা হয়েছিল, তখন তানজিনা বলে তার সাথে ডাক্তার আরিফের রিলেশনের কথা। ইনায়া আগেও ডাক্তার আরিফের কথা শুনেছে তানজিনার মুখে। ইনায়া তাই সব কিছু মেনে নিচ্ছে।
ইনায়ার চোখে ইদানিং তূর ও মিহালের একে অপরের সাথে কথা বলা, কিছুটা হাসাহাসি করা ও সন্ধ্যার পর গার্ডেনে একসাথে দুজনে একা বসে থাকা গুলো কেমন যেন ভাবাচ্ছে! কিন্তু তানজিনার থেকে সব ক্লিয়ারলি শোনার পর সে বুঝেছে তানজিনা ডাক্তার আরিফের উপর কিছুটা উইক বিয়ের আগে থেকে ছিলো আর ডাক্তার আরিফের ব্যাবহার গুলোকে তানজিনা ভাবতো, হয়তো সে ব্রাইট স্টুডেন্ট তাই কেয়ার করে। এরপর তো কতো কিছু হয়ে গেলো। ইনায়া তাই তূরের জন্য কিছুটা খুশি! যে যার পছন্দ নিজের বেছে নিয়েছে তাই।
( মিহাল ও তানজিনার ডিভোর্সের মাধ্যমে কিন্তু অন্য কারো কোনো ক্ষতি হয়নি কারণ মিহাল ও তানজিনার কোন বেবি নেই। কোন ছেলে মেয়ে যদি একসাথে থাকতে না চায় তাহলে তাদের বিয়ে না করা উত্তম। আর যদি বিয়ের পর এরকম মনে হয় যে তারা একসাথে থাকতে পারছে না! তাহলে বেবি কনসিভ হওয়ার আগে বিচ্ছেদে চলে যাওয়াই ভালো কিন্তু ধোঁকা না দিয়ে। বেবি হবার পর বিচ্ছেদের গেলে বেবিটার লাইফটা নষ্ট হয়ে যায়।
ডিভোর্স কারো একান্ত ইচ্ছায় হয় না! দুই পক্ষের সম্মতি লাগে। যদি কোন ছেলে বা মেয়ে পরিবারের চাপে এসে বিয়ে করতে রাজি হয় তাহলে বলবো আগে ভেবে নিন তার সাথে সারা জীবন থাকতে পারবেন কিনা! যদি মনে হয় তার সাথে সারাজীবন থাকতে পারব না! তাহলে বিয়েটা না করাই উত্তম। অনেকে আছে বিয়ের পাঁচ বছর দশ বছর পরে ডিভোর্স নেয় তখন কি তারা একবারও ভেবে দেখে তাদের বাচ্চাদের কি হবে?? পরিবারের চাপে যদি একান্ত বিয়ে করতে বাধ্য হন তাহলে তাকে মেনে নেন, না হয় তাকে প্রথমেই ছেড়ে দিন যাতে সেই মানুষটা নিজের জীবনে ভালো কাউকে পায়। আর রইল দ্বিতীয় বিয়ের কথা! ইসলামের পুরুষদের চারটি বিয়ে করা জায়েজ বলা হয়েছে কিন্তু প্রতিটি স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতা বজায় রাখতে বলেছেন। আপনার যদি প্রথম স্ত্রীকে ভালো না লাগে তাহলে আপনি তাকে বিনা দোষে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করবেন এটা কিন্তু জায়েজ নয়! সাধারনত ছেলেরাও দুই স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতা রক্ষা করতে না পারার ভয় পায় এক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিয়ে করার কোন প্রয়োজন তাদের নেই। কিন্তু অনেকে প্রথম স্ত্রীকে বিনা দোষে ডিভোর্স দিয়ে দেয় বা পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে প্রথম স্ত্রীর উপর অত্যাচার করে। )
_________
আজ তূরের জন্মদিন। সবাই আজকে সন্ধ্যার দিকে একটা ছোটখাটো পার্টি আয়োজন করেছে এলেক্স, এরিক, এলিনা ও ম্যাক্স এতে আমন্ত্রিত। নাদিয়া,শাফকাত, তাওহিদ ও আসফি এরাও ক্যালিফোর্নিয়া থেকে বাংলোতে এসেছে।
তূরকে পার্টির ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। সকালে সবাই তাকে জন্মদিনের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে আর তূর তার পরিবারের সাথেও কথা বলেছে। লিরা তূরকে এদিক ওদিক ব্যস্ত রাখায় বাকিরা সবাই মিলে প্ল্যান করেছে। এই প্লানে ওদের ভিনদেশী বন্ধুরাও যুক্ত ছিল তাই তারাও তূরের থেকে দূরে ছিল। বন্ধুদের সবার জন্মদিন বছরের প্রথমার্ধে শুধু নাদিয়া, মিহাল, তূর ও অর্কর জন্মদিন বছরের শেষার্ধে।
মিহাল আজকে তূরের জন্য কিছু সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছে।
সন্ধ্যার সময় মেয়েরা সবাই মিলে তূরকে একটা রেড ফুল স্লিভের অনেক ঘেরালো লম্বা গাউন পড়তে দেয় যা মূলত মিহাল তূরের জন্য নিজে পছন্দ করে কিনেছে। তূরের চুলগুলো এখন কাঁধ ছাড়িয়েছে তাই সে গুলোকে হালকা করে পনিটেল করে বেঁধে নিয়েছে। গাউনের সাথে একটা রেড নেটের ওড়না নিয়েছে যেটা এক সাইডে ছড়ানো ভাবে রেখে অন্য সাইড দিয়ে হাতের কব্জিতে উঠিয়ে দিয়েছে। খুব হালকা মেকআপ করেছে শুধু হালকা ব্লাশন, আইলাইনার, মাশকারা, হাইলাইটার ও লিপ্সটিক! কোন ফাউন্ডেশন, কনসিলার, এগুলো ইউজ করেনি। রেড হোয়াইট স্টোনের ইয়ারিং ও হাতে রেড হোয়াইট স্টোনের ব্রেসলাইট।
বাংলোর সিঁড়ি দিয়ে যখন সবাই তূরকে নিয়ে নিচে নামছে তখন ছেলেরা সবাই উপরের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তূরকে রাজকন্যার মতো লাগছে! মিহাল নিজের চোখ সরাতে পারছে না তূরের দিক থেকে। বান্ধবীরা সবাই তূরের মতো করেই নরমালি সেজেছে তবে ওরা সবাই হোইট ড্রেস পড়েছে। আর ছেলেরা সবাই ব্লাক সুট।
এলেক্স ইউনিভার্সিটিতে ক্লাসের সময় তূরকে বার্থডে উইশ করেনি, তাই এখন সিড়ি দিয়ে নামার পর তূরকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বার্থডে উইশ করে! সেটা দেখে মিহালের কিছুটা রাগ হয় কিন্তু পরিস্থিতির সাপেক্ষে রাগটা কন্ট্রোল করে।
তূর এলেক্সের এভাবে হুট করে জড়িয়ে ধরায় খুব অসস্থিতে পড়ে যায়, এদিকে মিহালের দিকে তাকিয়ে দেখে মিহালের মুখটা রাগে থমথমে হয়ে আছে।
এরপর সবাই মিলে কেক কাটে ও হালকা স্ন্যাক্স নেয়।
এরিক আজকে লিরাকে দেখে যেন তার হৃদপিন্ডের গতি কিছুটা হলেও বেড়ে যায়। হোয়াইট ড্রেসের সাথে অর্নামেন্টস সব হোয়াইট এবং নরমাল সাজে লিরাকেও অসাধারণ সুন্দরী লাগছে।
হঠাৎ করে বাংলোর সব লাইট অফ হয়ে যায়। তূর তখন কোল্ড ড্রিংস খাচ্ছিলো। সব লাইট অফ হয়ে যাবার পর একটা স্পটলাইট ডাইনিং ও ড্রইং রুমের মাঝেমাঝিতে পড়ে, সেখানে একজন ছেলে পিঠ করে দাঁড়িয়ে আছে।
মিহাল সামনে ঘুরে ও সবাই মিহালকে দেখে হাততালি দিতে থাকে। অবাক হওয়ার তালিকায় আছে, তূর, ইনায়া, এলেক্স, এরিক, এলিনা ও ম্যাক্স।
আসফি একটা ব্যাকগ্রাউন্ড সফট মিউজিক সং লাগিয়ে দিয়েছিলো যেনো মুহূর্তটা স্বর্গীয় মনে হয়।
” হাম তেরে বিন আব রেহ নেহি সাকতে…….”
( এই গানটার সফট মিউজিক🎶🎶)
________
মিহাল হাতে একটা গোলাপ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এরপর সে বলে,
মিহাল: ” আমি জানি তূর, তোমার সব কষ্টের কারন আমি! এক খনিকের ভুল মানুষের মোহে ও তার প্রতি থাকা জেদের কাছে আমি তোমার সত্যিকারের ভালবাসাকে হেলা ফেলা করে দিয়েছি। এর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী ( কথাটা বলে মিহাল গোলাপ ফুল হাতে মাথা নিচু করে ফেলে )। আমি এতদিনে বুঝে গেছি, কেনো তোমার চোখের দিকে তাকাতে পারতাম না ও তোমাকে সবসময় অবহেলা করার মূল কারণটা কি! করনটা হলো,
“তোমার প্রতি আমার সুপ্ত অনুভূতি কাজ করতো।
তোমার প্রতি থাকা আমার সুপ্ত অনুভূতি আমি কখনো পাত্তা দেয়নি কারন ভেবেছি আমি তানজিনাকে সত্যি ভালবাসি আর তার প্রতি লয়াল থাকতে হবে। কিন্তু নিয়তি দেখো! এমন একজনের প্রতি আমার লয়ালিটি ছিলো যে আমার হয়েও হয়নি। তাই তাকে মুক্তি দিলাম কিন্তু তোমায় আমি মুক্তি দিতে চাই না। সবসময় তোমার ভালোবাসার জালে আবদ্ধ থাকতে চাই। চাই আমার #শেষ_অধ্যায়ে_তুমি ময় করতে।
” উইল ইউ বি মাই পার্টনার ফর লাইফ টাইম!” ______
মিহাল কথা গুলো বলে গোলাপ হাতে মাথা নিচু করে আছে। তূর মিহালের বলা প্রতিটা শব্দে এতোটা অভিভূত যে স্পট লাইট কখন যে ওর উপর পরেছে ওর খেয়াল নেই! তূরতো মিহালের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে অশ্রুবর্ষণ করছে।
হঠাৎ করে নাদিয়ার ধাক্কায় বাস্তবে ফিরে আর দৌড়ে গিয়ে মিহালকে জড়িয়ে ধরে। তূর যখন মিহালকে জড়িয়ে ধরেছে তখন মিহাল নিজের মনে যেন প্রশান্তির দোল অনুভব করে, সেও তূরকে নিজের বুকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে যেন মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে।
ওদের এতো সুন্দর মোমেন্টে সবাই করতালির মাধ্যমে স্বাগতম জানায়।
ইনায়া অবাক হয়ে ভাবছে,
ইনায়া: তানজিনার সাথে ডিভোর্স হলো মাত্র দুই মাস আর এখনি তূরকে ভালেবাসার কথা বলে দিলো!! অবশ্য আমিই বা কি ভাবছি মিহাল তো দুই মাস দেরি করেছে কিন্তু তানজিনা তো সাথে সাথেই!
এগুলো ভেবে একটা দীর্ঘ শ্বাস নেয় ইনায়া।
এলেক্স যখন দেখলো তূর মিহালের প্রোপোজাল গ্রহন করেছে তখন সে অবাক হয়ে গেছে। মিহাল প্রপোজটা বাংলায় করেছে তাই এলেক্স প্রেপোজের কথা গুলো বুঝে নি। কিন্তু যখন বুঝতে পারে এরা একে অপরকে ভালোবাসে তখন সেও খুব খুশি হয়।
______
রাত দশটায় পার্টি শেষে যে যার বাড়িতে চলে যায়।
তূর নিজের রুমে যেয়ে ফ্রেশ না হয়েই বিছানায় শুয়ে পরে আর একটু আগের ঘটনা গুলা কল্পনা করতে থাকে—–
” তূর যখন মিহালকে দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে, এরপর প্রায় দশ মিনিট হতে চলল তূর এখনো জড়িয়ে ধরেই আছে! মিহাল একবার ছাড়ানোর চেষ্টা করেছে সবার নজর থেকে বাচার জন্য, কারণ সবাই মিটমিট করে হাসছিল ওদের এতক্ষণ এভাবে দেখে। এরপরও যখন তূর ছাড়ছে না তাই সবাই গার্ডেনের দিকে চলে যায়। সবাই চলে যাবার পর মিহাল তূরের ডান হাতটা সামনে এনে সেটাতে একটা চুমু দেয় আর তূর এক ঝটকায় মিহালের থেকে দূরে সরে যায়।
তূর কিছুটা দূরে সরে গিয়ে লজ্জায় লাল-নীল হচ্ছে🙈। ইতিমধ্যে স্পট লাইট অফ হয়ে লাইট চলে এসেছে। মিনিট দুয়েক দূরে দাঁড়িয়ে থেকে তূর যখন পিছ মুরে চলে যেতে নেবে তখন মিহাল এসে তূরের হাত ধরে আটকায়। এরপর তূরকে নিজের দিকে ফিরিয়ে কপালে আলতো করে চুমু দেয়।
মিহাল যখন তূরের হাত ধরে আটকিয়েছে তখন তূর সাথে সাথে নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয় আর শরীর মৃদু কাঁপতে থাকে। কপালে কারো ঠোঁটের স্পর্শে তূর ঝট করে চোখ খুললে মিহালের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায় আর দেখে মিহাল মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। যা দেখে তূর আরো লজ্জা পেয়ে মিহালের হাত ছাড়িয়ে দৌঁড়ে নিজের রুমে চলে যায়। এরপর একে একে গেষ্টরা বিদায় নেয়।”
কিছুক্ষণ আগের ঘটা ঘটনা গুলো ভেবে তূর লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নেয়। জারিন ওয়াশরুমে গেছে ফ্রেশ হতে, হঠাৎ করে তূরের মোবাইলের মেসেজ টোন বেজে ওঠে।
#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব- ২৩
মেসেজ টোনের শব্দে তূর ফোনটা হাতে নেয়। মিহাল মেসেজ করেছে, রাত এগারোটার পর গার্ডেনের বাম পাশে যেতে। রাফি ও ইনায়ার রুমটা বাংলোর নিচতলার ডানপাশে আর মিহালের একার রুমটা বাংলোর নীচতলার বাম পাশে, বাকিদের রুমগুলো দোতালায়।
তূর একটা আকাশি সাদার মিশেলে হাটু পর্যন্ত গোল জামা ও সাদা প্লাজো পরে সাদা ওড়না দিয়ে গা ঢেকে বাহিরে যায়।
” ধন্যবাদ, জীবনে আসার জন্য! ধন্যবাদ, এতটা ভালোবাসার জন্য! ধন্যবাদ, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করার জন্য! ধন্যবাদ, আমাকে অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে পথ চলার সঙ্গী হওয়ার জন্য! ধন্যবাদ, এতটা অবহেলা করার পরেও আমার দিক থেকে মুখ না ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য!
সবশেষে ভালোবাসি “মেঘ রাজকন্যা”! যার চোখের রহস্য তে না পরার জন্য তাকে এড়িয়ে চলতাম! সেই তাকেই হাসপাতালের সাদা বেডে হালকা নীল পোশাকে মলিন অবস্থায় দেখে মনে আছে মেঘ রাজকন্যার মনে কালো মেঘেরা আজ জমাট বেধেছে। ঠিক তখন ইচ্ছে করছিল তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে। সেই দেখো আজ তুমি আমার “অর্ধাঙ্গিনী”।”
কথাগুলো বলে মিহাল সামনে থাকা টেবিলের ক্যান্ডেল জ্বালায়। তূর আসার পরে তূরের চোখের দিকে তাকিয়ে মিহাল কথা গুলো বলা শুরু করেছিল আর গার্ডেনের আবছা আলোয় দুজন দুজনার চোখ দেখছিল।
একটা ছোট গোল টেবিলের উপর ক্যান্ডেল ও গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো আর একটা ছোট রিং বক্সে গোল্ডের রিং এর উপর ছোট ডায়মন্ড পাথর বসানো রিং।
মিহাল টেবিল থেকে রিংটা নিয়ে হাটুগেড়ে বসে তূরের দিকে রিংটা বাড়িয়ে দেয়।
আজকে তূর সারপ্রাইজের ওপর সারপ্রাইজ পাচ্ছে! মিহালের বলা কথাগুলো শুনে তূরের চোখ দিয়ে টুপ করে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে, চোখের জল মুছে নিজের বাম হাতটা মিহালের দিকে বাড়িয়ে দেয় আর মিহালও হাসিমুখে তূরের বাম হাতের রিং ফিঙ্গারে রিং টা পরিয়ে দেয়।
দুজনে টেবিলের দুই পাশে বসে। মিহাল চেয়ার থেকে একটু উঠে দূরে রাখা আইস বক্স থেকে একটা আইসক্রিমের বক্স বের করে নিয়ে আসে। আইসক্রিমের বক্স দেখে তূর অনেক খুশি হয়। এক বক্স কাজু কিসমিস দিয়ে ভরা মালাই আইসক্রিম😋।
_________
যেতে থাকে সময় বাড়তে থাকে ওদের প্রনয়ের আকুলতা। হাসিখুশিতে সবার সাথে সময়টা কেটে যাচ্ছে। এলেক্সের এক্স গার্লফ্রেড ওলিভার সাথে তূরের ফ্রেন্ডশিপ হয়েছে কারন তূরের জন্মদিনের পরের দিন এলেক্স তূরকে তার প্রথম ভালোবাসার মানুষটি মানে ওলিভার কথা বলেছে আর এটাও বলেছে এতদিন তূরকে সে অনেক ভালো ফ্রেন্ড মনে করে কখনও গার্লফ্রেন্ড ভাবেনি। এলেক্স এখনো ওলিভা কে ভালোবাসে। ওলিভা চায় এলেক্স মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করা বন্ধ করে দিক আর এলেক্স চায় ওলিভা বুঝুক তার ফ্লার্ট করতে ভালো লাগে কিন্তু ভাল তো সে ওলিভা কেই বাসে!
তূর এগুলো শুনে এলেক্সকে বলেছিলো, ফ্লার্ট করা কমিয়ে দিতে আর ওলিভাকে বোঝার চেষ্টা করতে।
তূরের জন্মদিনের পনেরো দিন পর মিহালের জন্মদিন। তাই তূর মিহালের জন্য নিজের হাতে ডার্ক চকলেট কেক বানাচ্ছে যা মিহালের অনেক পছন্দের। কেকের সাথে সাথে মিহালের পছন্দের কাচ্চি বিরিয়ানি ও চিকেন ফ্রাই রান্না করছে আর আজকে এসব কাজ তূর নিজে একা করছে কাউকে সাহায্য করতে দিচ্ছে না।
সৌভাগ্যবশত মিহালের জন্মদিনটা পড়েছে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তাই তূর সব রকম প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করে নিজেই কোমর বেঁধে রান্না করতে নেমে গেছে।
প্রতি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেয়েরা ও ছেলেরা মিলে বাংলোর আসবাবপত্রগুলো পরিষ্কার করে আর নিজেদের কাপড়চোপড় ধোয়াধুয়ি করে। কাপড়চোপড় ধোয়ার পর মেয়েরা রান্নাবান্না করা ছেলেরা বাজার করে। কিন্তু আজকে যেহেতু তূর একা রান্না করবে তাই জারিন, লিরা ও ফাইজাকে বলেছে যদি একটু কষ্ট করে তার কাপড়চোপড় গুলো ধুয়ে দিতে পারে। ছেলেরা নিজেদের ভাগ্যের কাজ শেষ করে গার্ডেনে ক্রিকেট খেলছে। এলেক্স, এরিক, ম্যাক্স, এলিনা ও ওলিভা এরাও এসেছে দুপুর বারোটার দিকে।
এলিনা ও ওলিভা তূরের কাছে রান্নাঘরের কেবিনেটের উপর বসে বসে তূরের কাজ গুলো দেখছে।
ওরা দুজন আজকে প্রথম বাঙালি স্টাইলে কাচ্চি বিরিয়ানি করতে দেখছে। বিরিয়ানির খুশবুতে পুরো বাংলাতে মৌ মৌ করছে।
দুপুরে সবাই একসাথে খাবার খায় এরপর সবাই মিলে অনেক আড্ডা দেয়। বিকেলের দিকে নাস্তা হিসেবে চিকেন ফ্রাই দেওয়া হয় ও সন্ধ্যার দিকে কেক কাটা হয়।
মিহালের বাবা, মা, বোন ও বোন জামাই অনেক খুশি মিহালের আর তূরের হাসিখুশি মুখ দেখে। তূরের জন্মদিনের পরেরদিন তূরকে শুভেচ্ছা জানায় আর ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা। কায়রা মনে মনে খুব খুশী হয় মিহালের তূরকে ভালোবাসাতে কিন্তু মিহালকে যে বিয়ের জন্য জোর করেছিল এজন্য সেদিন মিহালের কাছে শুভকামনা জানাতে পারেনি।
তূরের পরিবারও এখন চিন্তামুক্ত। তূর ও মিহালের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর দিন তূর ও মিহাল আবার আমেরিকাতেই বিয়ে করবে। আবার বিয়ে করার আগ পর্যন্ত ওরা প্রেমিক-প্রেমিকার মত সময় কাটাবে এরপর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে যাবে।
—-নীরার সাথে ডাক্তার ইফতির বিয়ে ঠিক হয়েছে। নীরা দুই মাস ডাক্তার ইফতিকে পর্যবেক্ষণ করে বিয়েতে মত দিয়েছে কিন্তু বলে দিয়েছে তূর ও মিহালের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর পরে ওরা বিয়ে করবে কারন নীরা নিজের বোনের সংসার দেখে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চায়! অবশ্য নীরা ও ইফতির বিয়েটা শুধু ঘরোয়াভাবে আকদ ও কাবিন হয়ে থাকবে।
_________
দেখতে দেখতে এসে গেছে ডিসেম্বর মাস। আমেরিকাতে এখন তুষার পরে। নাদিয়া ও অর্কর জন্মদিন এই ডিসেম্বর মাসেই। আর সপ্তাহখানেক পর ওদের সবার সেমিস্টার ফাইনাল। আর সেমিস্টার ফাইনাল এর পরেই আসবে অর্ক ও নাদিয়ার যৌথ জন্মদিন! কারণ ওদের দুজনের জন্মদিন একই দিনে।
______আজ এমন একটা দিন যেদিন তূরের হৃদয় ভঙ্গ হয়েছিল মিহালের বিয়ের খবর শুনে! মানে আজকের দিনে তূর জানতে পেরেছিল মিহাল ও তানজিনার বিয়ে হয়েছে। গতকাল ছিল মিহাল ও তানজিনার ভেঙে যাওয়া বিয়েটার প্রথম বিবাহ বার্ষিকী!
তূর আজকের দিনটা নিজেকে ঘর বন্দি করে রেখেছে কারণ আজকের দিনেই সে হেরে যেতে দেখেছিল তার দশ বছরের ভালোবাসা যার এখন এগারো বছর হলো।
গতকাল মিহালের অবশ্য মনে ছিল না যে তার ভেঙে যাওয়া বিয়েটার প্রথম বিবাহবার্ষিকী! শুধু ইনায়ার মনে ছিল, কিন্তু ইনায়া সবার মনোভাব দেখে আর বলেনি। আজকে যখন তূর নিজেকে রুম বন্দি করে রেখেছে তখন ইনায়া সবাইকে বলে, গতকাল ছিল মিহালের আর তানজিনার প্রথম বিবাহবার্ষিকী যা ভেঙে গেছে।
অর্ক ইনায়ার কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
অর্ক: আর আজকের দিনটাই তূরের জন্য কষ্টকর দিন। তূর খবরটা পেয়ে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলো।
তাওহিদ: মেয়েটা মিহালকে এতটাই ভালবাসে যে এই ধাক্কাটা ও নিতে পারেনি।
( তাওহিদ, আসফি, নাদিয়া ও শাফকাত দুইদিন আগেই বাংলাতে এসেছে।)
নাদিয়া: এই আজকের দিনটাতে আমি আমার ভালোবাসাকে পাবো বলে জেনেছিলাম। আর দেখো ঠিক এই দিনটাই তূর তার ভালবাসাকে হারিয়ে ফেলেছিল! তখন নিজের আনন্দ থেকেও তূরের দুঃখ দেখে সব আনন্দ যেন বিষাদে রূপ নিয়েছিল।
নাদিয়া কথাগুলো বলার সময় শাফকাত এসে নাদিয়ার কাঁধ ধরে আরে নাদিয়া শাফকাতকে জড়িয়ে ধরে।
মিহাল ওদের কথাগুলো শুনে নিজের মনে নিজেকেই প্রশ্ন করছে, কেন সে আরো আগে বুঝতে পারল না! কেন সে তানজিনাকে জেদ ধরে ওদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিল!
মিহালের ভাবনার মাঝেই রণক বলে ওঠে,
রণক: তূরের মন ভালো করতে চলো কোথাও ঘুরে আসি!
রণকের কথাটা সবার পছন্দ হয়। এছাড়া আর তিনদিন পর নাদিয়া ও অর্কর জন্মদিন। নাদিয়া ও শাফকাত এখানে এক সপ্তাহের জন্য এসেছে। নাদিয়ার ছুটি থাকলেও শাফকাতের ছুটি নেই। পার্ট টাইম জব গুলোর জন্য তাওহিদ, আসফি ও নাদিয়ার যেখানে যেতে হয় সেখানে বাংলো থেকে গাড়িতে করে এক ঘণ্টা বা দেড় ঘন্টার পথ।
_________
দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই “গোল্ডেন গেট পার্কের” উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। ওদের সাথে এলেক্স রাও যোগ দেয়।
সান ফ্রান্সিসকোর বৃহত্তম পার্ক, গোল্ডেন গেট পার্ক। পার্কটি শহরের কেন্দ্রস্থলে চলে এবং বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ রয়েছে। এর অভ্যন্তরে, সান ফ্রান্সিসকো একাডেমি অফ সায়েন্সেস আছে। যা একটি প্ল্যানারিয়ারিয়াম, অ্যাকোয়ারিয়াম এবং রেইন ফরেস্টের প্রদর্শনী সহ প্রাকৃতিক ইতিহাস যাদুঘর। রাস্তা জুড়ে ডি ইয়ং মিউজিয়াম অফ আর্ট আমেরিকান, আফ্রিকান এবং মহাসাগরীয় শিল্পের সাথে আরও ভাস্কর্যের একটি বিস্তৃত সংগ্রহের সাথে আরও পরিশীলিত অভিজ্ঞতা সরবরাহ করে।
1894 সালে নির্মিত এটি। এর কাছাকাছি জাপানি চা উদ্যানগুলির প্যাগোডাস এবং লীলা উদ্ভিদগুলির মধ্য দিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য এক মনোরম জায়গা।
ওরা “গোল্ডেন গেট পার্ক পুরো পুরি ঘুরতে পারেনি, সন্ধ্যা নামার কিছুক্ষণ পর ওরা চলে আসে কারন একটু পরেই তুষার পড়া শুরু করবে।
চলবে,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিচেক করা হয়নি। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। হ্যাপি রিডিং❤
চলবে,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিচেক করা হয়নি। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। হ্যাপি রিডিং❤