শেষ অধ্যায়ে তুমি পর্ব -২৪+২৫

#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-২৪

অর্ক ও নাদিয়ার জন্মদিনে বাংলো সব সময়ের মতোই ডেকোরেশন করা হয়েছে কিন্তু খাবারগুলো বাহির থেকে কিনে আনা হবে। ওরা আজকে ফাইজা, জারিনদের ইউনিভার্সিটিতে ঘুরতে যাবে কারন ওরা সব বন্ধুরা একসাথে ইউনিভার্সিটি অফ সান ফ্রান্সিসকোতে যায়নি, আলাদা আলাদা ভাবে গিয়েছে। এছাড়া আজকের সকাল আটটায় রণক, জারিন, ফাইজা ও তাইজুলের রেজাল্ট দিয়েছে কারন ওদের পরীক্ষা বাকিদের থেকে দুইদিন আগে শেষ হয়েছিল।

ক্যাম্পাসে পৌঁছানোর পর ফাইজা অর্কের মধ্যে ঝগড়া লেগে যায়। ওদের ঝগড়ার কারণ হচ্ছে প্রফেসর ওজিল!! প্রফেসর মোহাম্মদ ওজিল যেদিন ফাইজাকে প্রপোজ করে, তার এক সপ্তাহ পর ফাইজা তার পরিবারকে বিষয়টা জানায়া তার পরিবার বলেছে,
“ফাইজা যা করবে ভেবে চিন্তে করবে তোমার উপর আমাদের সবার বিশ্বাস আছে ঠিক তেমনি তোমার পছন্দের ওপরও আমাদের বিশ্বাস আছে। কোন ছেলেকে যদি তোমার পছন্দ হয় আর ছেলে যদি ভাল হয় তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবেনা। কিন্তু কখনো খারাপ কে প্রশ্রয় দেবে না।”

পরিবারের কাছ থেকে পজিটিভ কথাবাত্রা শুনে ফ্রেন্ডদেরকে এগুলো শেয়ার করে আর তার পর থেকেই কেউ না কেউ ফাইজাকে খোঁচাতেই থাকে কিন্তু জমে ভালো অর্কর সাথে।

সবাই যে যার মত হাঁটছে। মিহাল ও তূর সবার থেকে একটু আলাদা হয়ে ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ দিকে চলে গেছে। ইউনিভার্সিটি দক্ষিণ দিকটায় বড় বড় ঝাউ গাছ আছে। তূরের সবসময় ঝাউ গাছ অনেক পছন্দের তাই ঝাউ গাছ দেখতে পেয়ে মিহালকে বলল ওখানে যাবে তাই তারা একসাথে ওইখানে যায় আর বাকিদের বলে কিছুক্ষণ পর ওরা ওদের সাথে এসে যোগ দেবে সামনের ইয়ার্ডে।

অর্ক ও ফাইজা এই দুইজনের মধ্যে তো ক্যাটফাইট লেগেই আছে! তাওহীদ ও আসফি কিছুক্ষণ ওদেরকে থামতে বলে যখন দেখে থামে না তাই তারা নিজেদের মতো হাঁটতে থাকে। নাদিয়া শাফকাতের হাত জড়িয়ে ধরে এটা ওটা বলছে ও কিছুটা সামনে বাম দিক দিয়ে হাঁটছে। রাফি একহাত পকেটের গুঁজে অন্য হাত দিয়ে ইনায়ার বাম হাত ধরে হাঁটছে। রণক ও জারিন একটু পিছিয়ে গিয়ে হাঁটছে। রণক একটু পরপর জারিনের শীতের কাপড়ের উল ধরে টানাটানি করছে। লিরা ও এরিক পাশাপাশি হাঁটছে দুজনেই নিশ্চুপ। এরিক দুইহাত পকেটের সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে আর লিরার দৃষ্টি সামনের দিকে থাকলেও মাঝে মাঝে চোরা চোখে এরিকের দিকে তাকাচ্ছে! অবশ্য এরিক এই দিকটা বুঝতে পারছে তাই তার ঠোঁটে ঝুলে আছে বাঁকা হাসি। এলেক্স ও ওলিভা নিজেদের মতো কথা বলছে আর হাঁটছে, তূর ওদের মধ্যে সবকিছু ঠিক করে দিয়েছে। এলেক্সও এখন আগের তুলনায় ফ্লার্ট করা কমিয়ে দিয়েছ ওলিভাও এলেক্সের সাথে ওসব বিষয় নিয়ে কথা বলে না। মোটকথা দুজন দুজনকে স্পেস দিচ্ছে এবং একে অপরের ইচ্ছার খেয়াল রাখছে। ম্যাক্স ও এলিনা দুজনে একই হেডফোন দিয়ে গান শুনছে আর হাঁটছে।

ডিসেম্বর মাস, ঘড়িতে সময় দুপুর এগারোটা। চারদিকে হিমশীতল আবহাওয়া থাকলেও রোদের হালকা উত্তাপ আছে। রোদের এই হালকা উত্তাপের কারণে গায়ে হালকা শীতের কাপড় জড়িয়ে হাঁটতে দারুন লাগে। জানুয়ারি মাসে এখানে এই রোদের হাত হালকা তাপটাও থাকবে না।
ক্যাম্পাসে ক্লাস বন্ধ থাকায় ক্যাম্পাসটা ফাঁকা! ফাঁকা ক্যাম্পাসটা অনেক সুন্দর লাগছে এ অবস্থায়। সবুজের সমারোহে ঘেরা ইউনিভার্সিটি অফ সান ফ্রান্সিসকো। এটাকে “গ্রীন ক্যাম্পাস” ও বলা হয়। ক্যাম্পাস ফাঁকা বলতে পুরো ফাঁকা না! অল্প বিস্তর কিছু মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যা অন ক্যাম্পাস তুলনায় নগণ্য। অর ওরা যেদিক দিয়ে হাঁটছে এখানে হাতে গোনা দুই তিনজন ছাড়া কেউ নেই।

অর্ক ও ফাইজার ঝগড়া থামায় রিজভী ও তাইজুল মিলে। তাইজুল অর্ককে আর রিজভী ফাইজাকে সরিয়ে নিয়ে আসে।

ফাইজা: শয়তান পোলা! সমস্যা কি তোর?
অর্ক: আমার সমস্যা তো একটাই! মিস্টার ওজিলের মত একটা ভালো ছেলে কিনা শেষ পর্যন্ত তোর মত ডাইনীকে পছন্দ করলো!!

অর্কর কথায় ফাইজা আবার ফুসে উঠে রিজভীর হাত ছাড়িয়ে যেতে নেবে কিন্তু রিজভী ওকে আটকে রেখেছে দুই হাত দিয়ে।

ফাইজা একটু গুলুমুলু ও উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের অধিকারী এক মিষ্টি মেয়ে। ফাইজাকে মাঝে মাঝে সবাই আদর করে “টেডি বিয়ার” বলে ডাকে আর অর্ক ডাকে “হতির বাচ্চা” বলে😕। বান্ধবীদের মধ্যে লিরা ও ইনায়া ন্যাচারাল ফর্সা আর নাদিয়া হচ্ছে রক্তবর্ণের ফর্সা। বাকি তিনজন তো উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের।

ওরা সবাই হাঁটতে হাঁটতে প্রায় টিচার্স রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। ফাইজা ও অর্ক এখনো ক্ষণে ক্ষণে ফুঁসে উঠছে আর রিজভী ও তাইজুল ওদের সামলাচ্ছে। দূর থেকে একজন তীক্ষ্ম নজরে এই সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে।

হ্যাঁ, ওজিল! সে ফাইজাকে একটা ছেলের সাথে ঝগড়া করতে ও আরেকটা ছেলে ফাইজাকে ধরে রেখেছে এটা দেখে তার ভ্রু আপনাআপনি কুঁচকে আসে। সে এভাবে আর দেখতে না পেয়ে ওদের কিছুটা সামনে যেয়ে ফাইজাকে ডাক দেয়।

কারো গম্ভীর কণ্ঠে ডাক শুনে সবাই সে দিকে তাকায় কিন্তু ম্যাক্স ও এলিনা এবং নাদিয়া ও শাফকাত কিছুটা দূরে নিজেদের মতো করে থাকায় তারা শুনতে পায় না।

আচমকা হাতে টান পড়ে সেদিকে ছুটে যেতে থাকে ফাইজা। ওজিল ফাইজার ডান হাতের কব্জিতে ধরে একটা ফাঁকা ক্লাসরুমে নিয়ে যায়, এই ফাঁকা ক্লাসরুমে একটু আগে কিছু স্টুডেন্ট ছিল। ক্লাসরুমে নিয়ে এসে ওজিল ফাইজার হাতটা ছেড়ে দেয়। ফাইজা এতক্ষণ ওজিলের হাত ধরা অবস্থায় প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছিল কারন ওজিল অনেক জোরে চাপ প্রয়োগ করে হাত ধরেছিল।

ফাইজাকে এভাবে নিয়ে যেতে থেকে ওরা সবাই পিছুপিছু যায়। নাদিয়া ও শাফকাত কিছুক্ষণ পর পিছে ঘুরে দেখে সবাই একটা ক্লাস রুমের দিকে যাচ্ছে তাই তারাও সে দিকে রওনা করে।

_________
মিহাল ও তূর বসে আছে একটা ঝাউ গাছের তলে ঘাসের উপর। ঘাসের উপর এখনও হালকা শিশিরবিন্দু জমে আছে। তূর মিহালের কাঁধে মাথা হেলিয়ে ঘাসের উপর জমে ঢাকা শিশিরবিন্দু হাত দিয়ে স্পর্শ করছে। তূরের ডান হাত মিহালের বাম হাত দিয়ে মুঠোবন্দী করা।

তূর আজকে একটা সাদা রঙের কুর্তি যেটার সামনে দিয়ে হাঁটু সমান ও পিছন দিয়ে হাটুর নীচে পর্যন্ত, সাথে ব্ল্যাক লেগিংস, ব্লাক গোড়ালি উপর পর্যন্ত সু, কুর্তির ওপর সাদা উলের কটি টাইপ সোয়েটার, সাথে একটা সাদা পশমী শাল। তূরের চুল গুলো এখন পিঠে পড়ে। সাদা শাল টাকে তূর মাথা সহ পেচিয়ে দুই মাথা সামনে এনে রেখেছে। মোটকথা আজ তূর শুভ্র মেঘের রঙে সেজেছে!!!
মিহাল একটা হোয়াইট জ্যাকেটের নিচে হোয়াইট শার্ট, জ্যাকেটের জিপ খোলা ও শার্টের ২টা বতাম পর্যন্ত খোলা। সাথে ব্ল্যাক জিন্স হোয়াইট কেডস পড়েছে।

মিহাল তূরের হাতে একটা চুমু দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে তূরের পিছন দিয়ে বাম হাতটা নিয়ে আগলে জড়িয়ে ধরে আর তূরের মাথাটা মিহালের বুকের বা পাশে এসে পড়ে। মিহাল ডান হাত দিয়ে তূরের মুখের উপর পড়ে থাকা কিছু ছোট ছোট চুল যা চুল বাধার পরেও কপাল থেকে শুরু করে কানের নিচে পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে! সেগুলোকে আলগোছে সরিয়ে দেয়।

হঠাৎ করে মিহাল তূরের পেছন থেকে হাতটা সরিয়ে এনে বুকের উপর থেকে তূরের মাথাটা তুলে দুই হাতে ওর মুখটাকে আঁজলা ভরে নেয় আর আচমকা মিহাল তূরের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়😶। তূরের শিরদাঁড়া বেয়ে হিম শীতল স্রোত বয়ে যায়। প্রকৃতি এখন এমনিতেই হিমশীতল তার ওপর মিহালের আচমকা এভাবে ঠোঁটে স্পর্শ যেনো শরীরে কাঁটা দেওয়ার মতো অবস্থা।

প্রায় তিন মিনিট পর মিহাল তূররের ঠোঁট যুগল ছেড়ে দেয় আর দুজনেই হাঁপাতে থাকে। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে তূর নিচের দিকে তাকিয়ে আছে! এর আগে মিহাল ঠোঁটে কখনো আক্রমণ করেনি, টুপ করে গালে চুমু দিতো আচমকা আর কপালে ও হাতে ঠোঁটের আলতো স্পর্শ করতো।

তূরের লজ্জায় আড়ষ্ট ভঙ্গি দেখে মিহাল বলে,
মিহাল: আপনার এই চোখ দুটো দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আমায় ধন্য করুন রাজকন্যা!

তূর এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে। মিহাল একটু মাথাটা নাড়িয়ে দেখে দূরের দু গালে কেমন লাল আভা ছড়াচ্ছে, তা দেখে মিহাল ঠোঁট কামড়িয়ে বাঁকা হাসে।

মিহাল: জাস্ট লিপকিস করাতেই এই অবস্থা! তাহলে তুমি আমাদের বাসর রাতে কি করবে!

তূর বুঝে গেছে এখন এখানে থাকলে মিহাল তাকে লজ্জা দিয়ে দিয়ে একেবারে মেরে ফেলবে, তাই তূর বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। তূরের হঠাৎ করে দাঁড়ানো দেখে মিহালও দাঁড়িয়ে যায়। তূর পেছোন ঘুরে চলে যেতে নিবে তখনি মিহাল ওর হাত ধরে টান দিয়ে নিজের বুকের উপর ফেলে আর কোমর পেচিয়ে নিজের সাথে আবদ্ধ করে নেয়।

তূর একবার মিহাল এর দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে মিহালের বুকের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে। মিহালের মসৃণ সাদা বুক তূরকে প্রবল ভাবে আকৃষ্ট করছে। মিহাল তা লক্ষ করে একটু বাঁকা হাসে এরপর বলে,

মিহাল: আমি জানি আমি সুন্দর! এভাবে নজর দেওয়ার কি আছে? পুরোটাই তো তোমার!

মিহালের এমন লজ্জা দেওয়ার মতো কথা শুনে এবার তূর ছাড়া পাওয়ার জন্য মুচরামুচড়ি করছে। তূরের এমন অস্থির ভাব দেখে ওর লাল হয়ে যাওয়া নাকের ডগায় মিহাল টুপ করে একটা চুমু দিয়ে বসে। এইবার আর তূর নিজের লজ্জা সংবরণ করতে না পেরে মিহালের বুকে মুখ লুকায় আর মিহাল তার মেঘকন্যাকে আবেশে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে।❤
#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-২৫ (বোনাস)

ফাইজা ওজিলের কাজে খুবই বিরক্ত। ফাইজা ওজিলকে বলে,
ফাইজা: কি হয়েছে স‍্যার? আপনি আমাকে এখানে এভাবে কেনো নিয়ে এসেছেন?
ওজিল: তুমি বুঝতে পারছো না কি হয়েছে?
ফাইজা: না বললে বুঝবো কিভাবে কি হয়েছে!

ওজিল নিজের চুলের মধ্যে হাত চালিয়ে হাত ঘারে নিয়ে নিজেকে শান্ত করে হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে তীক্ষ্ম স্বরে বলে,
ওজিল: তোমাকে আমি প্রপোজ করেছিলাম তিন মাস হয়ে গেল। আমাকে যদি তোমার ভালো না লাগে সরাসরি বলে দিবে, এভাবে আমাকে ঘোরানোর মানে কি? আর তোমার যদি অন্য কাউকে ভালো লাগে সেটাও তো বলে দিতে পারো! তাহলে আমি নিজেকে সামলিয়ে নিতে ও তোমার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে পারব।

ফাইজা ওজিলের দিকে গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে। “সে আবার কবে কাকে ভালোবাসলো!!” এটাই ভাবছে ফাইজা।
ফাইজাকে একটু অন্য মনস্ক দেখে ওজিল ওর সামনে চুটকি বাজায় এতে ফাইজা ভাবনা চিন্তা বন্ধ করে সরাসরি ওজিলের দিকে তাকায়। ফাইজা বলে,
ফাইজা: আমি কি একবারও বলেছি আমার কারো সাথে সম্পর্ক আছে? বলিনি তো! তাহলে এগুলো ভেবে নেওয়ার মানে কি? আমি কি আমার বন্ধুদের সাথে একটু হেসে খেলে কথাও বলতে পারব না!!

ওজিল কিছু না বলে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে ফাইজার দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে ফাইজা আবার বলে,
ফাইজা: আপনি আমাকে যার সাথে ঝগড়া করতে দেখেছেন সে আমার বন্ধু অর্ক আর যে আমাকে আটকে রেখেছিল সে রিজভী। আমরা সবাই একসাথে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকাতে পড়াশোনা করতে এসেছি এমনকি আমরা সবাই একই বাড়িতে থাকি।

ওজিল নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফাইজাকে ক্যাজুয়ালি সরি বলে। এরপর আবার ওজিল বলে,
ওজিল: এবার কি তুমি আমাকে উত্তরটা দিবে? হ্যাঁ বা না যাই হোক শুধু জানতে চাই তোমার উত্তরটা।

ফাইজা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
ফাইজা: দেখুন আমার ফ্যামিলি আমাকে নিজের ভালো মন্দ বোঝার জন্য বলেছে। আর যা করব ভেবেচিন্তে করব যাতে ভবিষ্যতে এর জন্য আমায় পস্তাতে না হয়।

ওজিল: অবশ্যই, তুমি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেবে। দেখো তোমার আর আমার ধর্ম কিন্তু একই তাই ধর্মের দেয়াল আমাদের মধ্যে নেই। আল রইল, আমাকে তোমার জানা!

ওজিল একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবার বলা শুরু করলো,
ওজিল: ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর একটা মেয়েকে আমার ভালো লেগেছিল। মেয়েটা আমার ক্লাসমেট ছিল আর মেয়েটা ছিল অনাথ। মেয়েটা অনাথ হওয়ায় এখানে কাছেই একটা চার্চে থাকতো। হ্যাঁ! মেয়েটা ছিল খৃষ্টান। তখন আবেগের বয়স ছিল, তাই আবেগে পড়ে মেয়েদের প্রেমে পড়ে যাই কিন্তু এটা ভেবে দেখি না দুজনেই ছিলাম দুটি ভিন্ন ধর্মের। মেয়েটার সাথে আমার অনেক ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়ে যায়। মেয়েটারও হয়ত আমাকে ভালো লাগত কিন্তু একপর্যায়ে মেয়েটি ধর্মের দোহাই দিয়ে চলে যায়।

ফাইজা খুব শান্ত মনে ওজিলের কথাগুলো শুনলো। আর ভাবলো, “কজনইবা পারে নিজের জীবনের সত্যি গুলো বলে দিতে!” ফাইজারও ওজিলকে ভালো লাগে কিন্তু দুটি ভিন্ন দেশ হওয়ায় চিন্তায় ছিল তার ওপর ওদের কালচার ভিন্ন।

ফাইজা ওজিলকে উত্তরটা পরে জানাবে বলে সেখান থেকে চলে আসে।

এতক্ষণ ওদের মাঝে হওয়া কথাবার্তা ক্লাসের বাইরে থেকে সবাই শুনে। লিরার মনটা খারাপ হয়ে যায় কারণ এরিক ও তার ধর্ম আলাদা। তাদের মধ্যে ধর্মের দেওয়াল স্পষ্ট। লিরা একবার এরিকের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে ফেলে। সে এখন থেকে নিজের অনুভূতি কন্ট্রোল করার চেষ্টা করবে এটাই ভাবতে থাকে।

_________
দুপুর দেড়টার দিকে সবাই বাংলোতে এসে পৌঁছায়। এরিক, এলেক্সরাও এসাথে এসেছে। দুপুর দুইটা বাজার কিছুক্ষণ আগে ডেলিভারি বয় এসে কেক, লাঞ্চের খাবার দিয়ে যায়। বিকালের জন্য স্ন্যাকসটা ওরা ইচ্ছা করে অর্ডার করেনি কারণ ওরা নিজেরা কিছু বানিয়ে নেবে স্ন্যাকসের জন্য।

বিকেলের নাস্তার জন্য স্যুপ নুডুলস ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বানালো। সন্ধ্যার দিকে কেক কাটে আর ডিনারে ফ্রুট সালাদ খায়। সবাই আনন্দ মাস্তি করে দিনটা চালিয়ে দিয়েছে। আজকের রাতটা এরিক, এলেক্স, ওলিভা, এলিনা ও ম্যাক্স এখানেই থাকবে। অনেক রাত অব্দি জেগে থেকে পরে, এক রুমে- এলিনা, লিরা ও ওলিভা। আরেক রুমে- তূর, নাদিয়া ও জারিন। আরেক রুমে- ইনায়া ও ফাইজা।
ছেলেদের মধ্যে, এক রুমে- শাফকাত, রাফি, ম্যাক্স ও রিজভী। আরেক রুমে- মিহাল, এরিক, এলেক্স ও রণক। আরেক রুমে- তাইজুল, আসফি, অর্ক ও তাওহিদ।
_________

এসে গেছে নতুন বছরের আগমনী বার্তা। থার্টি ফার্স্ট নাইটের জন্য এলেক্সের বাড়িতে একটা পার্টি অ্যারেঞ্জ করা হয়েছে। এলেক্সের বাড়িটাও বাংলা টাইপ, এখানে এলেক্স, এলেক্সের বাবা ও এক বয়স্ক গ্রানি যে কিনা এলেক্সের দাদি বেঁচে থাকাকালীন থেকেই কাজ করে, সে থাকে সাথে কিছু সার্ভেন্ট। এলিনা মাঝে মাঝে এসে এখানে থাকে। এরিক ও এলিনা এলেক্সের বাড়ি থেকে মিনিট পাঁচেক দূরে একটা ফ্ল্যাটে থাকে। এই বাড়িটাতে এরিকেরো সমান ভাগ আছে কিন্তু এরিকের বাবার একটা নিজস্ব ফ্ল্যাট ছিলো যা এরিকের নামে সেটাতেই এরিক ইউনিভার্সিটির থার্ড ইয়ারে উঠে শিফট হয়ে যায় সাথে এলিনা। কেউ ওদের যেতে বলেনি কিন্তু এরিক চেয়েছে নিজের মত করে বাঁচতে।

থার্টি ফাস্ট নাইট পার্টিতে সবার জন্য থিম ড্রেস “ব্ল্যাক”। মেয়েরা সবাই ব্ল্যাক গাউন ও ছেলেরা ব্ল্যাক জ্যাকট পরেছে।

তূর তো মিহালের দিক থেকে চোখ সরাতে পারছে না। মিহালকে হোয়াইট, ব্ল্যাক ও ব্লু রঙের যাই পড়ুক অনেক বেশি সুন্দর লাগে! অন্যান্য রঙেও মিহালকে সুন্দর লাগে কিন্তু এই তিনটা রঙ পড়লে ওর দিক থেকে চোখ ফেরানো দায়!

তূর গিয়ে মিহালের হাত খপ করে ধরে কপাল কুঁচকে মিহালের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ খপ করে হাত ধরায় মিহাল তূরের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে তূরকে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে!!

তূর জবাব না দিয়ে আশেপাশে তীক্ষ্ণ নজর বুলিয়ে যাচ্ছে। এই দেখো নজর বুলানোর কারণ, একটু আগে ওর পাশে দাঁড়ানো দুইটা মেয়ে নিজেদের মধ্যে মিহালকে নিয়ে গসিপ করছিল! এই কারণে তূর এখন মিহালকে নিজের সাথে সাথে রাখবে আর চারদিকে নজর বুলাবে যেন কোন শাকচুন্নি এসে তার জামাইকে তার কাছ থেকে কেড়ে নিতে না পারে।

মিহাল যখন তূরের এই নজরদারি ও হঠাৎ হাত ধরার কারণটা বুঝতে পারল তখন মিহাল তূরের দিকে চেয়ে মিট মিট করে হাসতে লাগলো। কিছুক্ষণ আশেপাশে নজর বুলিয়ে তূর যখন মিহালের দিকে তাকিয়ে দেখে সে হাসছে তখন মিহালের বাহুতে দুম করে একটা কিল দিয়ে বলে,

তূর: খুব হাসি পাচ্ছে তাই না!! আশেপাশে এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখে তোমার ভিমরি উঠে গেছে তাই না!! শোনো, তোমাকে একটুও সুন্দর লাগছে না! তোমাকে অনেক বিচ্ছিরি লাগছে দেখতে!

মিহাল ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে বলে,
মিহাল: হুম, জানি তো আমাকে বিচ্ছিরি লাগছে! আমার থেকে পঁচে দুর্গন্ধ বয়ে যাচ্ছে! আর তুমি তো জানোই পঁচা জিনিসে মাছি বেশি ভনভন করে।

কথা গুলো শুনে তূর রাগিত ফেস নিয়ে মিহালের দিকে তাকিয়ে কটমট করছে। তূরের এই রাগে ভরা ফেস দেখে মিহালের খুব হাসি পাচ্ছে কিন্তু সে হাসি চেপে রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে কাকে যেন “হাই!” বলে মাথার চুলগুলো ঠিক করছে।
মিহালের কাউকে “হাই!” বলা দেখে তূর সেদিকে তাকায় আর দেখে এক বাদামী চুল আলা বিদেশি সুন্দরী পরনে হাটুর উপর পর্যন্ত শর্ট স্লিভলেস টপস, সেই মেয়েটা যে কিনা মিহালকে নিয়ে গসিপ করছিলো তার এক ফ্রেন্ডের সাথে। তূর এটা দেখে রাগে কান্না করে দেওয়ার মত অবস্থা। তূর মিহালের হাত ছেড়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে নিলে মিহাল ওর হাত ধরে ফেলে আর টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে তূরের নাকের ডগায় চুমু দেয়। রেগে গেলে, কান্না করলে ও লজ্জা পেলে তূরের নাকের ডগা লাল হয়ে যায়।
এরপর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,
মিহাল: তুমি কোমাতে থাকা অবস্থায়ই আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমি তোমার সাথেই আমার জীবনের শেষ অধ্যায় কাটাবো। তখন তোমার প্রতি শুধু মায়া ছিলো আয় ছিল অপরাধবোধ কারন আমি ভাবতাম আমার কারণেই তুমি অতিরিক্ত কষ্টে ওই অত বড় অসুখটা বাধিয়ে ফেলেছো। আর এখন তো আমি তোমাকে ভালোবাসি❤। তাহলে কিভাবে তোমাকে ছাড়া থাকবো আমি বলো!!!

তূর মিহালকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হালকা কেঁপে কেঁপে উঠছে। বোঝা যাচ্ছে যে মেয়েটা কাঁদছে। মিহাল এটা বুঝতে পেরে দুষ্টামির স্বরে বলে,
মিহাল: দেখো কাঁদলে কিন্তু তোমার সব মেকআপ গলে যাবে তখন তোমাকে পেত্নীর মত লাগবে! আর সবাইকে সুন্দরী লাগবে☺।

তূর এটা শুনে মাথা তুলে কান্নারত অবস্থায় মিহালের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে আর মিহালের বুকে কিল বসিয়ে দেয়। মিহালও তূরের হাসি দেখে হেসে ফেলে। এরপর ওরা দুজনে গিয়ে সবার সাথে যুক্ত হয়।

চলবে,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিচেক করা হয়নি। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। হ্যাপি রিডিং❤
চলবে,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিচেক করা হয়নি। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। হ্যাপি রিডিং❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here