শেষ অধ্যায়ে তুমি পর্ব -২০+২১

#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব- ২০ ( কিছুটা প্রকাশিত )

সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল কেউ ইউনিভার্সিটিতে যায়নি পার্ট টাইম জবের জন্য বিকালের দিকে ওরা বের হয়েছিল কিন্তু রণক ও জারিনের মুড এখনো খারাপ! কেউ কারো সাথে কথা বলছে না। রণক কথা বলতে গেলেও জারিন কথা বলছে না।
আজকে ইউনিভার্সিটিতে ক্যাম্পাসে আসার সময় রণক জোর করে জারিনের হাত ধরে নিয়ে এসেছে। জারিন নিজের হাত অনেকবার ছড়ানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু রণক ছাড়েনি। ফাইজা রণককে ঐ মেয়েটার কথাগুলো বলেছিল তাই রণক আজকে ডিসিশন নিয়েছে আজকে একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে।
ক্যাম্পাসে আসার পর ওই মেয়েটা আবার এসে রণককে জড়িয়ে ধরে জারিনের সামনেই! রণক তখনও জারিনের হাত ধরা অবস্থায় ছিল।

এবার রণক রেগে গিয়ে ওই মেয়েটাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে নেয়। ধাক্কাটা একটু জোরেই ছিল ওই মেয়েটা মাটিতে পড়তে পড়তে নিজের ব্যালেন্স ঠিক করে দাঁড়িয়ে যায়। মেয়েটা হতবাক হয়ে রণকের দিকে তাকিয়ে আছে।

মেয়েটা তাকানো দেখে রণক বলে,
রণক: হ্যালো আপু, ও জারিন আমার গার্লফ্রেন্ড এবং ফিউচার ওয়াইফ।
( ইংরেজিতে কথাগুলো বাংলায় কনভার্ট করে দিয়েছি বোঝার সুবিধার্থে)

মেয়টা হতভম্ব চোখে রণকের দিকে তাকিয়ে আছে।
মেয়েটা: আমি তোমার আপু হইনা রনো! আই লাভ ইউ রনো! আমি জানি তুমি মিথ্যে কথা বলছো এই মেয়েটা তোমার কিছুই হয়না শুধু ফ্রেন্ড হয়!
মেয়েটার কথাই রণক হেসে ফেলে আর হেসে জবাব দেয়,
রণক: দুঃখিত আপু! আপনি ভুল ভাবছেন ও আমার গার্লফ্রেন্ড এবং আমরা বিয়ে করবো খুব জলদি।

মেয়েটা এই কথাগুলো শুনে জারিনের দিকে তাকায় জারিনের পাশে ফাইজা কেও দেখে ফাইজা ওর দিকে তাচ্ছিল্যভরা হাসি হেসে তাকিয়ে আছে, এইরকম হাসি দেখে মেয়েটার ফাইজার বলা পরশু দিনের কথা মনে পড়ে যায়! মেয়েটার এবার আত্মসম্মানবোধে লাগে সে জারিন ও ফাইজাকে নিচু করতে রেগে বলে,

মেয়েটা: তোমার কিভাবে এই মেয়েটাকে পছন্দ হতে পারে আমি ভাবতেও পারছি না! তোমার চয়েজ এত লো ক্যাটাগরিতে কিভাবে যেতে পারে! কোথায় ও আর কোথায় আমি! আমাকে বিয়ে করলে তুমি আমেরিকার সিটিজেনশিপ ও গ্রীন কার্ড পেয়ে যাবে। তাছাড়া আমার বাবার অনেক বড় বিজনেস আছে, যেটা আমেরিকা ছাড়া ইউরোপেও ছড়িয়ে আছে।

মেয়েটার কথাগুলো শুনে জারিন লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। জারিন উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের, ফর্সা না! কিন্তু আমেরিকানদের কাছে ওরা কালো চামড়ার। রণক তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,

রণক: জারিন যেমনই হোক আমি তাকে ভালোবাসি। আমি ওর রূপ বা বাবার টাকা দেখে ওকে ভালোবাসিনি। জারিন আমার ভাঙ্গা মন জোড়া লাগিয়েছে সাথে আমার মনের কষ্টগুলো দূর করেছে। একটা কথা আছে জানেন,
” যে গড়তে পারে সে লরতেও পারে।”
আপনার হয়তো মনে হচ্ছে জারিন চুপ করে আছে দেখে ও কিছু বলতে পারেনা! জারিন শুধু দেখছে আপনি কতটুকু নিচে নামতে পারেন! যখন ওর দেখা শেষ হবে তখন আর আপনার রক্ষা নেই। আপনার বাবা যেহেতু বিলোনিয়ার তো আপনি বিলোনিয়ার দেখেই ভালোবাসেন বা বিয়ে করুন। আমি লোভী নয়, যে আপনার বাবার টাকা দেখে আপনাকে ভালবাসবো এমন কাউকে খুঁজে নিন যে আপনার বাবার টাকা দেখে আপনাকে ভালোবাসবে।

কথাগুলো বলা শেষ হবার পর দেখা গেল আশেপাশের কিছু স্টুডেন্টরা আস্তে আস্তে হাতে তালি দিচ্ছে। আসলে ওই মেয়েটা আজকে ক্যাম্পাসের মাঝে রণককে জড়িয়ে ধরেছিল কারণ তার উদ্দেশ্য ছিল আজকে রণককে প্রপোজ করবে। আস্তে আস্তে তালির শব্দ বাড়তে লাগলো। রণক এরপর সবার উদ্দেশ্যে জারিনের হাত ধরে হাঁটু গেড়ে বসে বলে,

রণক: আমি কখনও তোমাকে এভাবে পাবলিক প্লেসে প্রপোজ করিনি, কিন্তু আজকে তোমাকে আমি পাবলিক প্লেসে প্রপোজ করব।
” উইল ইউ বি মাই লাইফ লাইন, জারিন!”😘😘

রণকের প্রপোজ করা দেখে আশেপাশের সবাই সিটি বাজাতে শুরু করলো। দুই একজন ইয়াং টিচার, তারাও এতে সামিল হয় স্টুডেন্টেদের সাথে। ফাইজা খুশিতে জারিনকে জড়িয়ে ধরে। এরপর জারিন রণককে উঠিয়ে জড়িয়ে ধরে সাথে সাথে রণকও জড়িয়ে ধরে।
একজন স্টুডেন্ট এগুলো এতক্ষণ সব কিছু ভিডিও করছিল। সেই স্টুডেন্ট জারিন ও রণকের কাছে এসে ভিডিওটা দেখায়, তার কাছ থেকে ভিডিওটা নিয়ে তাকে বলে যেন ভিডিওটা ইন্টারনেটে শেয়ার না করে।

_________

তানজিনার সাথে এক সপ্তাহ যাবৎ তার পরিবারের সাথি ছাড়া আর কেউ ঠিকমত কথা বলছেনা। তাহমিদ ইতিমধ্যে ডিভোর্স পেপার উকিলের কাছে জমা দিয়ে দিয়েছে। উকিল ডিভোর্সের জন্য দুই পরিবারকে আসতে বলেছে এবং স্বামী-স্ত্রী দুইজনকেও। তানজিনা স্বশরীরে উপস্থিত থাকলেও মিহাল ভিডিও কলে ছিল। আর কয়েকদিন পর দেনমোহরের টাকা সহ ডিভোর্স কনফার্ম করা হবে।

তানজিনা হসপিটালে নিজের কাজ করলেও এখন আরিফের সাথে কাজ ব্যাতিত আর কোনো কথা হয় না। আরিফ এটা খেয়াল করে আজকে তানজিনাকে নিজের কেবিনে আর্জেন্ট কাজ আছে বলে ডেকেছে। তানজিনা কাজের কথা শুনে আরিফের কেবিনে যায়। তানজিনা কেবিনের নক করে ঢুকার পর আরিফ দরজার আড়াল থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজা বন্ধ করার শব্দে তানজিনা হকচকিয়ে যায়।
আরিফ: তানজিনা,তোমার কি হয়েছে? কোন কিছু নিয়ে টেনশনে আছো মনে হচ্ছে? তোমাকে প্রপোজ করেছিলাম এটা নিয়ে কি টেনশনে আছ?

তানজিনা আমতা আমতা করে বলে,
তানজিনা: না স্যার! আমি টেনশনে নেই এমনি কাজের চাপ একটু বেশি তো তাই!

আরিফ মলিন হেসে বলে,
আরিফ: তোমার যদি আমাকে ভালো না লাগে বলে দাও, আমি কিছু মনে করব না। তাও তুমি এভাবে আপসেট হয়ে থেকোনা।

তানজিনা: আসলে স্যার…
আরিফ: হ্যাঁ, আমি বুঝতে পেরেছি তুমি কি বলতে চাইছো! চিন্তা করো না আমি তোমাকে জোর করব না।

তানজিনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
তানজিনা: না স্যার! আপনি যা ভাবছেন তা না! আমারও আপনাকে ভালো লাগে কিন্তু আমার অতীত!

আরিফ: ব্যাস, তানজিনা! আমি তোমার অতীত জানতে চাইনা! তোমার আমাকে ভালো লাগে আর আমার তোমাকে ভালো লাগে, এইটুকু যথেষ্ট আমার জন্য।
তানজিনা: কিন্তু স্যার, আমার অতীতটা আপনার জানা জরুরি।
আরিফ: কিসের অতীত তোমার? যে তোমার ধর্ষণ হয়েছে এরকম অতীত! তাহলে বলব এটার জন্য আমি তোমাকে ছেড়ে দেব না। আমি তোমার শরীরের মোহে পরি নি। হাই ধর্ষণ তো কেউ ইচ্ছা করে হয়না তাইনা!

তানজিনা ডাক্তার আরিফের কথা শুনে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে আছে।
তানজিনা: স্যার আমার ধর্ষণ হয়নি। এমন কোন কিছু আমার সাথে হয় নি।
আরিফ: তাহলে আর কিছু বলবেনা কারণ আমি শুনতে চাই না এখন আর।

তানজিনা আরিফের কথায় একটু স্বস্তি পায়।
আরিফ: তবে তানজিনা আমি চাইনা এখন আমাদের রিলেশনশিপ পাবলিক হোক। আমরা যখন বিয়ে করবো তখন সবাইকে জানাবো। এর আগে হসপিটালের কেউ জানতে পারোক সেটা আমি চাই না! তাহলে আমাকে আর তোমাকে নিয়ে কুৎসা রটানো হবে।

তানজিনাও হেসে সম্মতি দেয়। শুরু হয় আরিফ তানজিনার নতুন ভালোবাসার কাহিনী।

__________
বাংলোতে ফিরে সবাই মিলে জারিন ও রণকের ওই ভিডিওটা দেখে। ভিডিও দেখে সবাই কি পরিমাণ খুশি তা বলার বাহিরে। তূর গিয়ে জারিনকে জড়িয়ে ধরে আর বলে,

তূর: আমি জানতাম তুই রণকের জন্য পারফেক্ট ম্যাচ! তোর মনে আছে তোকে একবার বলেছিলাম, “রণক একদিন তোকে আমাকে সে যেটুকু ভালোবাসত তার থেকে দ্বিগুন ভালবাসবে।” মিললো তো আমার কথা!😁😁

তূরের কথায় জারিন ও রণক মুচকি হাসে। রণক বলে,
রণক: ধন্যবাদ দোস্ত! তোর জন্যই আমি আমার জীবনের সত্যিকারের ভালোবাসাকে পেয়েছি। তুই যদি সেদিন আমাকে না বোঝাতি তাহলে আজকে আমি জারিনকে পেতাম না।

রণকের কথায় তূর হেসে ওকে একটা কিল মেরে বলে,
তূর: তোর এই শুকনো ধন্যবাদের চিঁড়া ভিজবে না,
কিছুতো খাওয়া!

সবাই মিলে অনেক অনেক আনন্দ করছে। আর মিহাল এক দৃষ্টিতে তূরের দিকে তাকিয়ে আছে! মিহাল ভাবছে,
মিহাল: এই মেয়েটা কিভাবে সবার প্রবলেম সলভ করে! নিজের মনে এতটা কষ্ট রেখেও কিভাবে সবার কষ্টকে দূর করতে সাহায্য করে! যত সময় গড়াচ্ছে আমি ততই তূরের মায়ায় নিজেকে আবদ্ধ করছি! হয়তো ভালোবেসে ফেলেছি! কিন্তু এখনো উপলব্ধি করার অপেক্ষায় আছি।
#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব- ২১ (অবসান)

মিহাল ও তানজিনার ডিভোর্স কনফার্ম হয়ে গেছে। উকিলের সামনে সব দেনা পাওনা মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। আজ থেকে ওরা দুজনে যে যার রাস্তায়। এক ভালবাসাহীন বাধ্যবাধকতার সম্পর্ক এখানেই ইতি ঘটলো।

কেটে গেছে এক মাস ওদের ক্লাস শুরু হবার, এরমধ্যে অনেক কিছু হয়েছে। নাদিয়া ও শাফকাত ক্যালিফোর্নিয়াতে তাদের নতুন ভাড়া করা ফ্ল্যাটে চলে গেছে। তাওহিদ ও আসফি ইউনিভার্সিটির হোস্টেলে উঠেছে ক্যালিফোর্নিয়াতে। এখন বাংলোর ছয়টার রুমে থাকে, রাফি ও ইনায়া, রিজভী ও তাইজুল, অর্ক ও রণক, লিরা ও ফাইজা, জারিন ও তূর এবং মিহাল এক রুমে একা।

যেদিন ডিভোর্স কনফার্ম হওয়ার খবর মিহাল সবাইকে জানায় সেদিন,
ইনায়া মিহাল কে দোষারোপ করা শুরু করে।

ফ্ল্যাশব্যাক,—————☆
সাপ্তাহিক ছুটির দিন রাত দশটার সময় সবাই ডাইনিংয়ে এসেছে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। সকালের ব্রেকফাস্ট ও রাতের ডিনার ওরা নিজেরা রান্না করেই খায়, সবাই টুকটাক সাহায্য করে রান্না করে।
রাতের খাবার খাওয়া শুরু করার ঠিক আগমুহূর্তে মিহালের কাছে ভিডিও কল আসে বাংলাদেশ থেকে। ভিডিও কলের ওপাশে মিহালের পরিবার তানজিনার পরিবার ও উকিল আছে। ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে মিহাল ভিডিও কল অ্যাটেন্ড করে আর বাকিরা এসে দেখে মিহাল কারো সাথে কথা বলছে তাই তারা কথা শেষ হবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। উকিলের সামনে বিনা ঝামেলায় সবকিছু মিটমাট করে যে যার মত চলে যায় আর মিহাল কল কেটে দেয়। মিহাল কল কেটে সামনে তাকিয়ে দেখে সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে কারণ তারা কিছুটা হলেও শুনেছে। ছেলেরা আন্দাজ করে ফেলেছে যে ডিভোর্স কনফার্ম হয়েছে কিন্তু মেয়েরা তো জানে না এ ব্যাপারে তাই তারা উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে।

এরপর মিহাল সবাইকে বলে তানজিনার সাথে ডিভোর্স হয়ে গেছে। ইনায়া বাদে সবাই খুশি হয় তূর তো বিশ্বাস করতে পারছে না! কিভাবে কি হলো! ছেলেরা এসে মিহালের কাঁধ চাপড়ে যার যার জায়গায় চলে যায়।

ইনায়া রেগে গিয়ে মিহালকে বলে,
ইনায়া: ডিভোর্স যেহেতু দিবে তাহলে বিয়ে কেন করেছিলে মিহাল? কেন আমার বান্ধবীকে ডিভোর্সি ট্যাগ দিলে? তুমিতো তানজিনাকে ভালবাসতে তাহলে কই গেলো তোমার ভালোবাসা!

মিহাল শান্তস্বরে ইনায়ার কথার জবাব দেয়,
মিহাল: ইনায়া, তুমি অনেক কিছুই জানো না! কিন্তু তুমি এইটা তো জানতে তানজিনা আমাকে এক বিন্দুও ভালোবাসে না! তাও সেদিন যখন আমি তোমাকে কথাগুলো শেয়ার করেছিলাম, তুমি কেন আমাকে বলোনি?

ইনায়া রাগে ফুসে উঠে বলে,
ইনায়া: সেদিন বলিনি বলেই তো আজকে আমার এই দিনটা দেখতে হচ্ছে! আমি ভেবেছিলাম তানজিনা একটা ভালো ছেলেকে নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে পাবে! কিন্তু না সেই ছেলে তাকে ডিভোর্সি ট্যাগ দিয়ে ছেড়ে দিল!

রাফি কথার মাঝে ফোড়ন কেটে বলে,
রাফি: একটা ভালো ছেলে কি একটা ভালো মেয়েকে ডিজার্ভ করে না! তুমি তোমার বান্ধবীর দোষ গুলো না দেখেই সবকিছু বিচার করছো! তোমার বান্ধবীর দোষগুলো তো আগে শুনে নাও!

ইনায়া ভ্রু কুঁচকে বলে,
ইনায়া: তাহলে তোমরাও সব কিছু জানতে? জেনেশুনে এটা হতে দিলে? হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি তো ভুলেই গেছি তুমি তোমার বান্ধবীর দিকটা দেখবে! তুমি কেন আমার বান্ধবী দেখবে দেখবে তাই না!

ইনায়ার কটাক্ষ করে কথাগুলো অর্ক সহ্য করতে না পেরে বলে,
অর্ক: যেমনটা তুমি ছয় মাস আগে দেখেছিলে তাই না ইনায়া! তুমি শুধু তানজিনার কথা চিন্তা করছো! একমাত্র তানজিনাই মনে হয় তোমার ফ্রেন্ড! তূর তো তোমার ফ্রেন্ড না তাই না! ছয় বছর এমনি এমনি কেটে গেল কোন ফ্রেন্ডশিপ ছাড়া! ছয় বছরে কি তুমি তূরকে একবারও নিজের বান্ধবী ভাবতে পারোনি!

ইনায়া: কেন ভাবতে পারবো না আমি অবশ্যই তূরকে নিজের বান্ধবী মনে করি।

রণক: যদি ভাবতে তাহলে আজকে তুমি রাফিকে এটা নিয়ে খোটা দিতে না।

রিজভী: এ সবকিছু বাদ দেও। সবার আগে মিহাল ওই অডিও রেকর্ডারটা অন কর তাতেই আসল কারণটা বুঝতে পারবে। ওই রেকর্ডিংটা থাকার কারণেই তানজিনার পরিবার খুব শান্তিতে বিষয়টা মেনে নিয়েছে না হলে প্রথমে তো মিহালকে একেবারে নাস্তানাবুদ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল!!
কথাটা বলে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে রিজভী।

সবার উদ্দেশ্যে রেকর্ডিংটা শোনানোর পর, যারা জানত না তারাও জানতে পারে তানজিনার কাহিনীটা। ইনায়াও এবার বুঝতে পারে ডিভোর্সের দোষটা মিহালের না তানজিনার ছিল। কিন্তু ইনায়ার মনে মনে একটা কথা বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে, “এই ছিল মিহালের ভালোবাসা! এটুকুতেই হার মেনে নিল! মিহাল কি পরতোনা তানজিনাকে কয়েকদিন ইগনোর করে ওকে ভালোবাসা বোঝাতে! বা অতিরিক্ত কেয়ার করে ভালোবাসা বোঝাতে!”

রাফি চেয়েছিল ইনায়া কে আজকে জানিয়ে দিতে তূরের সাথে মিহালের বিয়ের কথা। কিন্তু তূর চোখের ইশারায় রাফিকে আগেই মানা করে দেয়, সাথে বাকিদেরও ইশারায় বুঝিয়ে দেয় যাতে ইনায়াকে এ বিষয়ে কিছু না বলে।

ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড”——————-☆

মাস্টার্স করতে মূলত এক বছর লাগে কিন্তু প্রতিটা সাবজেক্টে ভালো রেজাল্ট করার জন্য একটু আস্তে আস্তে দুই বছর সময় নিয়ে ওরা করবে। এলেক্স ও ম্যাক্স ওরাও তূরদের সাথে আস্তে আস্তে মাস্টার্স করবে কিন্তু এরিক চাচ্ছে এক বছর বা দেড় বছরের মধ্যে মাস্টার্স শেষ করে ফেলতে।

ওদের চারজনের সাথে তূরদের বেশ ভালই বন্ডিং হয়ে গেছে।

কিছুদিন পর,
তূর, লিরা, রাফি, অর্ক, এলেক্স ও ম্যাক্স ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিল। আজকে ওদের ব্রেক টাইমের সময় ইনায়ার ক্লাস আছে কিন্তু মিহালদের ক্লাস নেই। তূর কিছুটা অন্যমনস্ক ছিলো তাই সামনে যে কিছুটা উঁচু জায়গা আছে সেটা সে খেয়াল করেনি, পড়ে যেতে নিলে এলেক্স তার কোমড় পেচিয়ে আগলে ধরে! এই দৃশ্যটা মিহাল দেখে ফেলে! কারণ মিহাল তখন সাইড করিডোর দিয়ে আসছিল।
এলেক্স ও তূরকে এভাবে কোমর আগলে ধরাতে মিহালের ভালো লাগেনি। মুখটা থমথমে করে ওদের সবার কাছে যায়।
রাফি: কি ভাবছিলে তুই তূর! সামনে যে কিছুটা উঁচু ছিলো দেখতে পাস নি?
তূর: খেয়াল ছিলোনা।

এলেক্স ওদের কথা বুঝতে না পারলেও একটু বুঝতে পারছে রাফির তূরকে বেখেয়ালে হাঁটার কারন জিজ্ঞাসা করছে।

অর্ক: না, কিছু তো কারণ আছে! তুই শুধু শুধু অন্যমনস্ক কেন থাকবি?

মিহালের মুখ এতক্ষণ থমথমে থাকলেও এখন তূরের কি হয়েছে তা জানার জন্য উৎসুক হয়ে চেয়ে আছে।
তূর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
তূর: আসলে সকালে বাবা মেসেজ করেছিল ফোন করতে তারপর আমি ফোন করি। নীরার তো আর এক মাস পর অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা তৃতীয় বর্ষ উঠবে। আমার সার্জারি যে করেছে ডাক্তার ইফতি সে নীরাকে পছন্দ করেছে! সে বাবার কাছে প্রস্তাব দিয়েছে কিন্তু বাবা এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না! কারণ আমার বিয়ের খবরটা আমার আত্মীয়-স্বজন সবাইকে জানানো হয়নি! মামা ও খালারা জানে কিন্তু আব্বুর চাচাতো, ফুফাতো ও মামাতো ভাই বোনরা জানেনা। সাথে এলাকা বাসিও জানেনা। এই অবস্থায় বড় মেয়ের বিয়ে ছাড়া মেঝো মেয়ের বিয়ে দেওয়াটা সমীচীন মনে করছেননা।

সবাই সব বুঝলেও এলেক্স ও ম্যাক্স হ্যাবলার মতো ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
মিহাল বলে,
মিহাল: আঙ্কেলকে বলে দাও সবাইকে জানিয়ে দিতে, যে তোমার বিয়ে হয়েছে বিদেশে যাবার আগে। আকদ ও কাবিন হয়েছে। এখনই কার সাথে আকদ ও কাবিন হয়েছে সেটা জানানোর দরকার নেই কারণ এখনও বিষয়টা পুরোপুরি মিটে নি।
উনাকে এটা বলতে বলো যে, যার সাথে বিয়ে হয়েছে সেও তোমার সাথে বিদেশে গেছে। তাহলেই মনে হয় নীরার বিয়ে দিতে কোন ঝামেলা হবে না! কিন্তু অবশ্যই নীরাকে জিজ্ঞাসা করে নেবে নিরা বিয়েতে রাজি কিনা!

তূর: আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে বাবাকে বলি। আর ও কে তো এখনই উঠিয়ে নেবে না শুধু আকদ ও কাবিন করে রাখবে বলেছে।

এতক্ষণ এদের কথাবাত্রা কিছুই বুঝতে না পেরে এলেক্স বলে,
এলেক্স: তোমরা কি বিষয়ে কথা বলছ? তোমরা কি বাংলাতে কথা বলছ?
রিজভী: হ্যাঁ ভাই! আমার বাংলাতে কথা বলছি আর এটা তোমার না জানলেও হবে কারণ কোন গুরুত্বপূর্ণ কথা নয় ফ্যামিলি বিষয়ক।

এলেক্স ও ম্যাক্স সায় দিয়ে আবার ওদের সাথে চলতে থাকে।

___________
ফাইজাকে ওর ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি ডিপার্টমেন্টের একজন ইয়াং টিচার “মোহাম্মদ ওজিল” খুব সাধারণভাবে নিজের পছন্দের কথা জানিয়েছে।

“মোহাম্মদ ওজিল” একজন আমেরিকান মুসলিম। ২৯ বছরের যুবক। ইউনিভার্সিটি অফ সানফ্রান্সিসকোতে সে জয়েন করেছে ছয় মাস হলো, সে এই ইউনিভার্সিটি থেকেই অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করেছিল এরপর ওয়াশিংটন ডিসির একটা ইউনিভার্সিটি থেকে মাত্র দুই বছরে পিএইচডি কমপ্লিট করে। বাবা নেই মা আছে।

ফাইজা কি করবে বুঝতে পারছে না! বন্ধুদের বললে বন্ধুরা “হ্যাঁ” বলতে বলবে। কিন্তু ও এখনই এসব ডিসিশন নিতে চায় না তাই তার পরিবারকে আগে সেটা জানাবে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here